দাম্পত্য_জীবন #মেহু_আপু #পর্ব_২২

0
207

#দাম্পত্য_জীবন
#মেহু_আপু
#পর্ব_২২

আমাকে মাফ করে দাও তোমরা সবাই। সেদিন যদি আমি হামজাকে বের করে দিতাম আমার লাইফ থেকে তাহলে আজকে আর এই দিনটি দেখতো হতো না। কি করো নাই আমার সুখের জন্য। উল্টো আমি শুধু তোমাদের কষ্ট দিলাম। আজকে সবার সামনে আমি এই কথাটা বলতে বাধ্য হচ্ছি। যেই ছেলে আমার পরিবারের মান সম্মানের খেলায় ম্যাতে উঠেছে, আমি তার সাথে সংসার করতে চাইনা। আমি তাকে ডিভোর্স দিবো। এই বিষয়ে তোমরা কিছু বলবে না আমাকে। ___ মেঘ বললো সবাইকে।

এসব যদি তোমার মনের কথা হয়, তাহলে আমরাও তোমাকে বাধা দিবো না।__ শুকর বললো

হুম বাবা এসব আমার মনের কথা। করতে চাইনা এক লোভী সার্থন্বেষী মানুষের সংসার। আমাকে তোমরা মাফ করে দিয়ো আমার জন্য আজকে এইরকম পরিস্থিতির স্বীকার নীলা ভাবি।

তুমি উপরে যাও, নিজের মনকে হালকা করো। এসবে তোমার হাত ছিলো না। এসব আমার অতীতের কর্মফল।

এরপরে সবাই যার যার রুমে চলে গেলো।

নীলা তার রুমে যেয়ে তার মাকে ফোন দেয়। এরপরে বাড়ির সবার খোঁজ নেয়। মা বাবা কি এখনো রাগ করে আছে আমাদের উপর?

হ্যা তোর বাবা রাগ করে আছে, তাইতো তোদের দুবোনের সাথে কথা বলেনা। একদিন তোরা চলে আয়, তোর বাবাকে সারপ্রাইজ দে। দেখবি সব রাগ গলে জ্বল হয়ে গেছে।

হুম মা এই কথা বলার জন্য ফোন দিছি তোমাকে। কাল ও বাড়ি যাচ্ছি আমি আর রিয়া।

সব কিছু ঠিক আছেতো! আকাশ, ইমরান আসবে না।

মা ওদের কথা ঠিক জানিনা! ওকে এখনো এই বিষয়ে কিছু বলি নাই। জানিনা ওর সময় হবে কিনা, তাই আগে এসব বলতে পারছিনা।

কেনো তোমাদের কি কিছু হয়েছে?

না মা আমরা ভালো আছি একটা দীর্ঘশ্বাস ফেলে বললো। কাল আসছি বাকি কথা পরে হবে, আল্লাহ হাফেজ। এই বলে ফোন কেটে দিলো।

নীলা ফোন রেখে আকাশের মুখ পানে চায়। এরপরে আকাশের পা থেকে জুতা, হাত থেকে ঘড়ি খুলে দিলো। এরপরে আকাশকে বিছানা থেকে তুলে শার্ট খুলে দিলো। মনে মনে বললো কেনো তুমি এরকম করলা আকাশ। তুমি আমার আর মানুষের শরীরের প্রভেদ বুঝতে পারলা না। অবশ্য তুমিতো নেশায় বুদ ছিলা। তাই তোমাকে ঘৃণাও করতে পারছিনা। কারণ আমি তোমাকে অনেক ভালোবেসে ফেলেছি। তোমাকে ছাড়া কিছু ভাবতে পারি না এখন। কিভাবে নিঃপাপের মতো ঘুমোচ্ছো। আকাশের মাথায় হাত বুলোতে থাকে নীলা।

আমাদের কলুষিত করতে চেয়েছিলো হামজা। তুমি কি জানতা এসব আগে থেকে __ রিয়া বললো

না রিয়া এসব আমি জানতাম না। আজকেই জানলাম __ ইমরান বললো।

আচ্ছা ও আমাদের এভাবে সবার সামনে ছোট করে কি পেতো? ক্যান ও এরকম করলো।

আমি জানিনা রিয়া আসলে ও আমাদের ভালো চায়না। দেখলা না একটার পর একটা অপকর্মে লিপ্ত হচ্ছে ও।

আমি খুব খুশি হয়েছি ইমরান। অবশেষে আমাদের দোষী শাস্তি পাবে। কিন্তু মেঘের জন্য খুব কষ্ট হচ্ছে। মেয়েটার কি দোষ ছিলো, হামজা শুধু ওখে ইউজ করলো। জানিনা মেঘের মন আজ কি বলছে?

ও আমাদের বোন যেহেতু ও হামজাকে শাস্তি দিছে তারমানে মন থেকে ওর স্মৃতি মুছে ফেলেছে। মেঘ একবার যা চায় তাই করে। ও খুব স্ট্রং ও নিজেকে সামলিয়ে নিতে পারবে।

আচ্ছা কাল তোমার সময় হবে। ও বাড়িতে যেয়ে সবটা বুঝিয়ে এক্সপ্লেশন করলে বড়আব্বু আমাকে মাফ করে দিবে। আমার খুব গিল্টি ফিল হচ্ছে।

হুম নিয়ে যাবো। এখন ঘুমাও তো।

সকাল হলো, আকাশের ঘুম ভেঙ্গে গেলো। চোখ খুলে দেখতে পেলো। নীলার তার মাথায় হাত বুলিয়ে ঘুমাচ্ছে। নিজেকে এই রুম দেখে, কালকের ঘটনা মনে করার চেষ্টা করলো। পার্টিতে ক্লোড ড্রিংস নেওয়ার পর এক মেয়ের সাথে যেনো কি করছে আবছা আবছা মনে পড়ছে। স্পষ্ট মনে পড়ছে না 😿

নীলার ঘুম ভেঙ্গে গেলো। আকাশ কে সজাগ দেখে বললো কেমন ঘুম হলো তোমার।

আকাশ বিছানা থেকে উঠে বসলো। আ্যা আমার মাথাটা খুব ধরেছে নীলা। গতকালকে কি হয়ছে নীলা। আমি কি এমন কিছু করেছি যা তোমার মনকে আঘাত করেছে।

কালকে তুমি ক্লোড ড্রিংস নিয়ে একটা মেয়ের সাথে এই কথা শেষ করার আগেই নীলা কেঁদে দেয়।

আকাশ বুঝতে পারলো, এমন কিছু হয়েছে যা নীলার মনকে ব্যথিত করছে। আকাশ বললো দেখো নীলা কেউ ইচ্ছে করে আমাকে ক্লোড ড্রিংসের নেশায় বুদ করেছিলো। আমি যদি কিছু করে থাকি আমার সেন্সের মধ্যে ছিলোনা নীলা। তুমি কাদবা না বলছি, তুমি কাঁদলে আমার খুব কষ্ট হয়। আর জানো হামজাই প্রথমে আমাকে ক্লোড ড্রিংস দিছিলো। আমার তো মনে হচ্ছে ও এসব করছে নাকি।

হুম হামজাই সব কিছুর অঘটন। ওকে বাড়ির লোকের সামনে গতকালকে জাহির করেছি। মেঘ এসে ওকে পুলিশে ধরিয়ে দিছে।

এই কথা শুনে আকাশ চমকিয়ে উঠে। বলো কি এতো কিছু হয়েছে গতকাল। অনেক ভালো হয়েছে,জেলে পচুক এবার। এই তুমি কাঁদছো ক্যান? বলো না কালকে কি আমি ওই মেয়ের সাথে খারাপ কিছু করেছি।

তুমি ওই মেয়েকে কিস করছো। অর্ধনগ্ন অবস্থায় তার বুকে ঠোঁট স্পর্শ করেছো। যা দেখে আমার খুব খারাপ লেগেছে। তুমি শুধু আমার, তুমি অন্য মেয়ের সাথে এসব করছো!

আকাশ এই কথা শুনে হাউমাউ করে কেদে উঠে। কি বলছো এসব? আমি এসব করিনাই নীলা। যে মেয়ের সাথে এরকম করলাম ও আমাকে ছাড়বে না নীলা। আমি তোমাকে ভালোবাসি।

মেয়েটি ছিলো হামজার গুটি করা চাল। ও মেয়েটিকে ভাড়া করেছিলো।

ছি! এইরকম জঘন্য মেয়েকে পুলিশের হাতে দাও নাই।

না আকাশ, ও ওর ভূল বুঝতে পারছে।

এইরকম মেয়ে হয় জঘন্য মেয়ে কোথাকার। আমি তার মুখটি দেখতে চাই নীলা। যে টাকার জন্য অন্য পুরুষের সাথে শুইতে রাজি হয়।

মানুষ যতই শুইতে রাজি হোক। তুমি কেনো ওর সাথে ছি! আমাকে রেখে মানুষের সাথে এসব করার আগে তুমি আমার কথা ভাবলা না।

আকাশ নীলার হাত ধরে কান্নাজড়িত কন্ঠে বলে, আমি আমার ভিতরে থাকলে কখনো এইরকম করতাম না বউ। আমাকে মাফ করে দাও। আমি শুধুমাত্র তোমার।কান ধরছি জীবনেও এরকম হবেনা আমাকে মাফ করে দাও বউ। আমার এতো সুন্দরী বউ থাকতে অন্য মেয়ের দিকে তাকাবো। যদি কখনো তাকিয়ে থাকি আমার এই দুই চোখ নষ্ট হয়ে যাবে।

নীলা আকাশের ঠোটে আঙুল চেপে ধরে,কখনো এরকম কথা বলবানা। তোমার চোখ নষ্ট হয়ে গেলে আমার সৌন্দর্য কে দেখবে। আমি জানি তুমি স্বইচ্ছায় এই কাজ করতে পারোনা। শুধু গিল্টি ফিল হচ্ছিলো তুমি অন্য কারো সাথে আমার ভালোবাসার ভাগ দিয়ে দিছো।

আমার ভালোবাসা শুধু তোমার জন্য রাখা বউ। কখনো তীল পরিমাণ ভালোবাসা কমবে না। আমি শুধু তোমার। আমাকে ক্ষমা করো বউ কথা দিলাম কখনো ক্লোড ড্রিংস নিবো না আর।

মনে থাকে যেনো তোমার।

হুম মনে থাকবে। বলো আমাকে মাফ করছো।

ক্ষমা করতে পারি এক শর্তে।

আমি তোমার সব সত্বে রাজি। বলো বউ একবার কি শর্ত।

আজকে তোমাকে আমার সঙ্গে ও বাড়ি যেতে হবে।

এইটা শর্ত হলো। এইটাতো আমি স্থির করে রেখেছি 😍

এরপরে পরিবারের সবাই মিলে সকালের নাস্তা করে। মেঘকে দেখে আকাশ উৎসাহ দেয়। মেঘ স্বাভাবিক হয়ে খাওয়া দাওয়া শেষ করে। মেঘ বলে লোভীর জন্য ক্যান কষ্ট করবো।

পরিবারের অনুমতি নিয়ে আকাশ, নীলা,রিয়া ও ইমরান ও বাড়িতে যায়। বাড়িতে এসে শাশুড়ী মাকে সালাম দেয়। তানিয়া বেগম অনেকদিন পর দুই মেয়েকে পেয়ে আবেগে কেঁদে ফেলে।

কান্নার আওয়াজ শুনে লিটন সাহেব নিচে আসে। রিয়াকে দেখে মেজাজ বিগড়ে যায় ও ক্যান এখানে এসেছে তানিয়া ও আমার জন্য মরে গেছে।

রিয়া এই কথা শুনে হাউমাউ করে কান্না করে ফেলে। তখন কেয়া এসে রিয়াকে শান্তনা দেয়। নীলা বলে বাবা যা কিছু হয়েছে তাতে রিয়ার কোনো হাত নেই।

দেখ নীলা তুই কি চাস তোর সাথেও আমি এরকম করি। যদি না চাস তাহলে ওখে সাপোর্ট করা বন্ধ কর।

আকাশ এবার মুখ খোলে বাবা আপনাকে শুনতে হবে।

কি এমন কথা যে শুনতেই হবে। ও যদি একবার বলতো ও ইমরানকে ভালোবাসে তাহলে আমি নিজেই তোমাদের বাড়িতে প্রস্তাব নিয়ে যেতাম। কিন্তু লোক সমাজে এইরকম পরিস্থিতি তৈরি করার খুব দরকার ছিলো।

বাবা ওরা নিরুপায় ছিলো 😿। আসলে ঘটনা টা যেভাবে বিবৃত হয়েছো ঠিক সেরকম না। এই কাজ গুলো ঘটার পিছনে রহস্য ছিলো। একটা নিখুঁত প্লান ছিলো।

কে করেছে এরকম।

নীলা তখন সব বললো। সব জানার পর লিটন সাহেব ভেঙে পড়লো। রিয়া লিটন সাহেবকে জড়িয়ে ধরলো। দুজনে হাউমাউ করে কান্না করলো।

এসব দেখে তানিয়া বলে হইছে অভিমান ভাঙলে এবার জামাইদের জন্য বাজার করে নিয়ে আসো।

লিটন সাহেব চোখের পানি মুছে,বাজার করে আনলো। এরপরে দুই জামাই মিলে শশুড় সহ একসাথে খেলো। এরপরে একরাত ওখানেই থাকলো তারা।

এরপরে বিদায় নিয়ে চলে আসলো, নীলা ও রিয়া চৌধুরী ম্যানশনে।

চলবে,,,,

গঠনমূলক মন্তব্য করবেন। পর্বটি কেমন লাগলো জানাবেন। আসলেই আমার ছোটবেলা থেকে লেখার প্রতি ঝোঁক ছিলো। আমি কিন্তু লেখিকা না যার ভালো লাগবে না গল্পটা দয়া করে তাড়া এভোয়েড করিয়েন। নিজেকে লেখিকা হিসাবে জাহির করি নাই কখনো। আল্লাহ হাফেজ

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here