দাম্পত্য_জীবন #মেহু_আপু #পর্ব_২৭

0
224

#দাম্পত্য_জীবন
#মেহু_আপু
#পর্ব_২৭

এখন আমি প্যাম্পার করি। আচ্ছা সারারাত কোথায় ছিলা একটি বার বললে এমন কি হয়?

এই তুমি আমার সাথে অত্যাচার করা বন্ধ করো। আমার কিছু ভালো লাগছে না। এরপরে আকাশ শার্ট টা খুলে নীলাকে দিয়ে বললো এটা পরিষ্কার করে আনো।

নীলা দেখতে পেলো আকাশের বুকে কারো লিপস্টিকের দাগ দুই ঠোঁট স্পর্শ উঠেছে। এইটা দেখে নীলার বুঝতে বাকি রইলো না। আকাশ কোনো মেয়ের সাথে রাত কাটিয়েছে। ছি! আকাশ তুমি শেষে কিনা অন্য মেয়ের সাথে ডেট করছো।

নীলার এই কথা শুনে আকাশ অবাক হয়ে যায়। আকাশ মনে মনে বলতে লাগলো নীলা কিভাবে টের পেলো। তাহলে কি তারা নীলাকে পিক গুলো সেন্ট করেছে?

বলো কোন মেয়ে সে, যে তোমার স্ত্রী থাকা সত্বেও তোমার সাথে ডেট করতে রাজি হইছে।

আকাশ কিছু ভাবতে পারেনা, নীলার বলা কথা গুলো মাথায় চাপ দেয়। আকাশ চিৎকার করা শুরু করে। হ্যা আমি রাতভর অন্য মেয়ের শরীর উপভোগ করছি। সত্যিটা জেনেছো এখন আমার সামনে থেকে যাও।

নীলা এইবার কেঁদে ফেলে, এসব কি বলছো তুমি। আমি তোমাকে অনেক ভালোবাসি আকাশ। তুমি আমার সাথে এইটা কিভাবে করলে। তোমার স্ত্রী থাকা সত্বেও তুমি অন্য মেয়ের সাথে 😓

আকাশ বেডে বসে পড়ে। রাগের মাথায় নীলাকে এসব কি বলে ফেললাম। এখন যদি নীলা আমাকে ভূল বুঝে। আচ্ছা আমি কি নীলাকে সবটা বুঝিয়ে বলতে পারতাম না। নিশ্চিত সবটা বুঝিয়ে বললে নীলা আমাকে বিশ্বাস করতো। আচ্ছা আমি কি তারার শরীর আসলেই ভোগ করেছি নাকি ও আমাকে ভাসানোর চক্রান্ত করছে আমারতো কিছুই মনে পড়তেছে না। এসব কথা আকাশ মনে মনে বললো।

নীলা রুম থেকে বেড়িয়ে যায়। ড্রয়িংরুমে বসে বসে কাঁদতে থাকে। এরপরে দেখে তার শাশুড়ী মা নিচে আসতেছে, তখন সে নিজেকে স্বাভাবিক করে। আর্জিনা চৌধুরী বলে এত সকালে উঠছো ক্যান বউমা। পার্টি থেকে কখন ফিরছো তোমরা।
নীলা সবটাই স্বাভাবিক উত্তর দিয়ে উপরে আসে। রুমে যায় শাওয়ার নিতে।

শাওয়ার নেওয়ার সময় ভাবে নীলার কি করা উচিত? যেহেতু আকাশ অন্য মেয়ের সাথে ডেট করছে তাহলে আকাশ মেবি আমার সাথে সুখী নয়। তাই নীলা সিদ্ধান্ত নেয় সে আকাশকে মুক্তি দিয়ে দিবে। নীলা শাওয়ার নিয়ে বেড়িয়ে দেখতে পায় আকাশ নেই রুমে। নীলা তার প্রয়োজনীয় সব কাপড় – চোপড়, কসমেটিক ল্যাগেজে গুছিয়ে নিয়ে সুন্দরমতো একটা চিঠি লেখে কাউকে কিছু না বলে পিছন দরজা দিয়ে আকাশের বাড়ি থেকে চলে যায়।

তারা আকাশকে ফোন দেয়, আকাশ তারার সাথে কথা বলার জন্য রুম থেকে বাইরে চলে আসে, তারা আকাশকে বলে যেভাবেই হোক তোমার স্ত্রী কে তিনদিনের মধ্যে তোমার বাসা থেকে বের করতে হবে নাহলে আমি আমার তোমার রাতের কথা ভাইরাল করবো। আর নিউজ পোর্টালে যেয়ে বলবো এই ছেলেটি সারারাত আমার শরীর ভোগ করছে। নিউজ পোর্টালের লোক খবর ভাইরাল করলেই তোমার কোম্পানি কে ব্যান করা হবে। সাথে তোমার স্ত্রী এমনিতেও তোমাকে ভূল বুঝে চলে যাবে। আর তুমি নিঃশ্ব হয়ে যাবা। তাই ভালোই ভালোই যা বলছি তাই করো।

দেখো তুমি এসব করতে পারো না তারা, আমি তোমাকে ভালোবাসি। আর তোমাকে ভালোবেসে কি আমি ভূল করেছিলাম ।

নীলা নিচে এসে আকাশের ফোনের কথার আড়ালে শোনার চেষ্টা করে। নীলা শুনতে পায় আকাশ যে মেয়ের সাথে কথা বলছে সে আসলে তারা। তার অতীতের ভালোবাসা। তারমানে আকাশের লাইফে তারা ফিরে এসেছে, সেকি তারার সাথে রাত কাটিয়েছে। নীলা একটা বড়সড়ো শক পায়। নীলা মনে মনে বলে আমার এখানে থাকা আসলে ঠিক না। যেহেতু তারা ফিরে এসেছে তার জন্য আকাশ আমার সাথে এরকম করছে। নীলা এবার ল্যাগেজ নিয়ে পথ হাটা শুরু করে।

দেখো তারা তুমি কি চাও? বাড়ি, গাড়ি,টাকা_পয়সা সব দিতে রাজি আমি। তবুও তুমি আমাকে মুক্তি দাও আমি তোমাকে আগে ভালোবাসতাম এখন বাসি না। কারণ আমার স্ত্রী কে আমি অনেক ভালোবাসি।

আমার বাড়ি গাড়ি টাকা পয়সার অভাব আছে নাকি। আমি তোমাকে নিজের করে পেতে চাই। আমি আমার ভালোবাসাকে হারাতে চাইনা।

দেখো পনেরো বছর পর ভালোবাসা এক জায়গায় দাড়িয়ে থাকেনা। আর তুমিতো আমাকে ভালোবাসতা না তাহলে পনেরো বছর পর এমন কি হলো যে আমাকে দেখেই তোমার ভালোবাসা উতলে উঠলো। আমার বউকে আমি খুব ভালেবাসি আমাকে মুক্তি দাও।

কারন তুমি আমার গোপন সম্পত্তি সব ভোগ করেছো। অনেক বাধা দিয়েছিলাম তুমি আমাকে ছাড়ো নাই। এখন আমি ক্যান তোমাকে মুক্তি দিবো। এই শুনো তোমার সাথে আমি এসব বিষয় নিয়ে প্যাচ প্যাচ করতে পারবো না। যা বলেছি তাই করো নাহলে তোমার এখন যা রেপুটেশন আমি ০৪ দিন পর সব পাবলিসিটি করে ইংল্যান্ড রওনা দিবো। এখন তুমি ভেবে দেখো তোমার মান সম্মান নাকি ভালোবাসা। এই কথা শেষ করে ফোন কেটে দেয় তারা।

আকাশ ফোনের উপর রাগ ঢালে। ফোনটাকে আছাড় মারে রাস্তায়। ফোনের ডিসপ্লে চলে যায়। আকাশ আবার ফোনটা নিয়ে নিজের রুমে আসে। এসে আকাশের চোখে পড়ে আলমারি খোলা, আকাশ আলমারি লাগাতে যেয়ে দেখে নীলার কাপড় _ চোপড় কিছু নাই। আকাশ নীলার ল্যাগেজ দেখতে যেয়ে ল্যাগেজ নাই এবারে টেবিলের কাছে গেলে দেখে এক চিঠি ক্লাসের নিচে চাপা দেওয়া। আকাশ চিঠিটি হাতে নেয় তারপরে পড়তে শুরু করে।

প্রিয় স্বামী
প্রথমে আমার সালাম নিবা। আসসালামু আলাইকুম। আমি জানিনা তুমি কাল নাইট ক্লাব পার্টির পর কি করছো? আমি আর ঈশান ভাইয়া তোমাকে রাত তিনটা পর্যন্ত কোম্পানির আশে পাশের অলিতে গলিতে, মার্কেটের সব জায়গায় খুঁজেছি । কিন্তু তোমাকে কোথাও পাই নাই। তোমায় বার বার ফোন দিচ্ছিলাম ফোন শুধু সুইচ অফ পেয়েছিলাম। সারারাত দু চোখের পাতা এক করতে পারি নাই। আমি ভেবেছিলাম তুমি কোনো বিপদে পড়লে নাতো, এর জন্য ঈশান ভাইয়াকে বলেছিলাম পুলিশে জিডি করতে। ঈশান ভাইয়া বলেছে তুমি যদি সকালে না ফিরো, তাহলে আমরা পুলিশে জিডি করতাম। অনেকবার মনকে শান্ত করেছি তোমার কিছু হয় নাই। কিন্তু আজকে তুমি ভোরবেলা বাসায় ফিরে আমাকে এতটাই দুঃখ দিয়েছো আমি নিতে পারছিনা। আমি তোমাকে খুব ভালোবাসি। এর জন্য আমি কি তোমাকে জিজ্ঞেস করতে পারিনা সারারাত কোথায় ছিলা? প্রতি উত্তরে তুমি শুধু আমাকে অপমান করছো। এর আগে তোমার এরুপ আমি কখনো দেখি নি। যখন তুমি শার্ট খুলে আমাকে দিলা তখন তোমার বুকে কোনো কোনো মেয়ের লিপস্টিক মিশ্রিত ঠোঁট স্পর্ষ্ট দেখতে পেয়েছিলাম। তুমি বলছো যেখানেই তুমি থাকো সারারাত শান্তিতে ছিলা। এরপরে আমি শাওয়ার নিয়ে ভাবলাম আমি তোমার সেই স্ত্রী নই। যেভাবে অন্যমেয়ে তোমাকে সুখ দেয় আমি বোধহয় সেভাবে সুখ দিতে পারি নাই। আমি ব্যার্থ হয়েছি আকাশ। আমাকে ক্ষমা করিয়ো। তোমাকে সেই সুখের জগতে ছেড়ে গেলাম। এসবের পর তো আমি ওবাড়ি ফিরতে পারবো না। আমাকে খোজার চেষ্টা করিয়ো না। আমি তোমাকে ডির্ভোস দিতে পারবোনা। তাই তুমিয়ো এই বৃথা চেষ্টা করোনা। সমস্যা নেই আমি কখনো তোমার কাছে এসে স্ত্রীর অধিকার চাইবো না। তোমার ভালেবাসার স্মৃতি নিয়ে বাকিজীবন পার করে দিবো। ভালো থেকো তুমি। খুব সুখী হয়। আল্লাহ হাফেজ।

ইতি তোমার বউ
নীলা।

আকাশ এই চিঠি পড়ে নিজের চোখের পানি আটকাতে পাড়েনা দ্রুত গাড়ি বের করে নীলাকে খুজতে বের হয়।

নীলা রাস্তা দিয়ে হাটছে আর ভাবছে অতীতের ভালোবাসা ফিরে আসলে মানুষের বাহ্যিক রুপ চেনা যায়। এতদিন শুধু আকাশ আমার শরীর ভোগ করার জন্য ভালোবাসার অভিনয় করছে। যেই অতীত ফিরে আসলো তাতেই আমাকে ভূলে গেলো। এরকম অভিনয় তুমি না করলেও পারতা আকাশ। তোমার অভিনয়ে আমিয়ো তোমার ভালোবাসার মোহ নিজেকে জড়িয়ে নিছি। আমি তোমাকে দুঃখ দিতে চাই না ভালো থেকো তুমি তারার সাথে। আমার সাথে নাহয় তোমার দেওয়া ভালোবাসা গুলো স্মৃতি হয়ে থাকবে।

এমন সময় রাস্তা দিয়ে গাড়ি চলছিলো। নীলা রাস্তার মাঝখান দিয়ে ল্যাগেজ টেনে টেনে হাঁটছে। গাড়ি হর্ণ দিচ্ছিলো কিন্তু সেই হর্ণ নীলার কান অবধি পৌঁছালো না। এমন সময় নীলাকে কেউ গাড়িতে তুলে। এই কে আপনারা আমাকে গাড়িতে তুলছেন কেনো এভাবে। কিডন্যাপার কোনো কথা না বলে, মুখে আর চোখে কালো কাপড় বেধে কিডন্যাপ করে নিয়ে যায় নীলাকে ।

আকাশ গাড়ি নিয়ে এদিক সেদিক ঘোরছে নীলাকে কোথাও না পেয়ে গাড়ি থেকে নেমে রাস্তার লোকদের নীলার ছবি দেখাচ্ছে আর বলছে এ আমার স্ত্রী একে কোথাও দেখেছেন আপনারা। সবাই শুধু না না বলতেই থাকে। আকাশ ঘেমে একাকার হয়ে যায়। সাদা শার্ট ঘামের পানিতে শরীরে চিপকে গেছে। মাথার ঘাম চোখে পড়ছে। নীলাকে খুঁজতে খুজতে আকাশ হাফিয়ে যায়। এমন সময় কাউকে জিজ্ঞেস করলেই হ্যা এই মেয়েটিকে তো ঘন্টা খানেক আগে দেখলাম রাস্তায় হাটতে। কিন্তু একটা গাড়ি এসে দুজন লোক এসে মেয়েটিকে তুলে নিয়ে গেলো।

একথা শুনা মাত্রই আকাশের পৃথিবী স্মিত হয়ে যায়। কানে শুধু একটা কথাই বাজে আমার ভালোবাসা কি তবে হারিয়ে গেলো।

চলবে,,,,

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here