আমার_ভাঙা_ক্যানভাসে (১৮) #তানজিলা_খাতুন_তানু

0
229

#আমার_ভাঙা_ক্যানভাসে (১৮)
#তানজিলা_খাতুন_তানু

নাসরিনের মুখোমুখি বসে আছে রুহি, পাশে সোহান একমনে কফি খেয়ে যাচ্ছে। রুহি তীক্ষ্ণ দৃষ্টিতে নাসরিনকে পর্যবেক্ষণ করে চলেছে, আগের মতো সৌন্দর্য, স্টাইল কোনটাই নেই। পরনে সাধারণ সালোয়ার কামিজ, মুখটা কিরকম একটা ফ্যাকাশে হয়ে আছে, নাসরিনকে দেখে বোঝার উপায় নেই একসময়ে এই মেয়েটাই নিজের সৌন্দর্য নিয়ে ব্যস্ত থাকত। কিন্তু নাসরিনের এই পরিবর্তনের কারন কি??

নিরবতা ভেঙে নাসরিন বলল,

– ‘কেমন আছো রুহি?’
– ‘আছি ভালোই। তুমি?’
– ‘আর ভালো। নিজের কাজের শাস্তি পাচ্ছি প্রতিনিয়ত।’
– ‘মানে?’
– ‘ভালোবেসে একজনকে বিয়ে করেছি কিন্তু সে আমাকে আর ভালোবাসে না। পর নারীকে আসক্ত হয়েছে, আমার উপর প্রতিনিয়ত অত্যাচার করে।’
– ‘ভালোবেসে বিয়ে করেছো মানে‌ কি? তোমার না জয়ের সাথে সম্পর্ক ছিল?’
– ‘না রুহি। সবটাই মিথ্যা ছিল, জয় কখনোই আমাকে ভালোবাসেনি সেইখানে সম্পর্ক থাকার কথাও নয়।’
– ‘তাহলে চারবছর আগে!!’
– ‘সবটা আমার সাজানো প্ল্যান। জয়কে আমি পছন্দ করতাম, কিন্তু জয় পাত্তা দিত না। একটা সময় পরে বুঝেছিলাম জয় তোমাকে ভালোবাসে, সেইদিন তোমার উপর প্রচন্ড রাগ হয়েছিল। সিদ্ধান্ত নিয়েছিলাম সে করেই হোক তোমাদের দুজনকে আলাদা করব। আর এই জন্যই এতকিছু।’

রুহি কথাগুলো বিশ্বাস করল বলে মনে হলো না। একদৃষ্টিতে নাসরিনের দিকে তাকিয়ে আছে, আর নাসরিন মাথা নিচু করে বসে আছে।

– ‘আমি কিভাবে বুঝব তুমি সত্যি কথা বলছো?’
– ‘মানে!’
– ‘কালকেও জয় তোমার সাথে দেখা করতে এসেছিল, হতেই তো পারে তুমি ওর ভয়ে আমাকে এইগুলো বানিয়ে বলছ।’
– ‘এইসব কি বলছো রুহি? হ্যাঁ মানছি জয়ের সাথে বর্তমানে আমার যোগাযোগ আছে, কিন্তু বিশ্বাস করো আগে ছিল। তুমি যেদিন রাগ করে চলে গেলে সেইদিন জয় আমাকে সবার সামনে থাপ্পর মেরে অপমান করছিল যাতে ওর ধারে কাছে না যায় ওহ শুধু তোমাকেই ভালোবাসে আর তোমাকেই ভালোবাসবে। তখন আমার রাগটা আরো বেড়ে গিয়েছিল ঠিক করেছিলাম যে করেই হোক তোমাদের আলাদা করব কিন্তু তখন সোহান আমাকে বুঝিয়েছিল তোমাদের বিয়ে আগে থেকেই ঠিক করা আছে, আর সেটা তোমার সাথে।’

কথাগুলো বলে নাসরিন থামল, চোখের কোনে পানি চিকচিক করছে। রুহি কিছুটা শান্ত হয়ে বসে সোহানকে প্রশ্ন করল,

– ‘ঘটনা কি সত্যি?’
– ‘হ্যাঁ। আমি চাইনি তোর আর জয়ের মাঝে কোনোরকমের ঝামেলা হোক তাই নাসরিনকে বুঝিয়ে ছিলাম আর ও বুঝেও ছিল কিন্তু তুই বুঝলি না। গাধার মতো সবকিছু ছেড়ে চলে গেলি।’

রুহি সোহানের দিকে কটমট করে তাকাল গাধা বলার কারনে।

– ‘সোহান আমাকে বলার পর আমি অনেক সিদ্ধান্ত নিয়ে কলেজ বদল করে চলে যায়। তারপর আর এইসব নিয়ে ভাবিনি। নতুন কলেজ নতুন পরিবেশ। এক সিনিয়র দাদার সাথে আমার সম্পর্ক গড়ে ওঠে, পরিবারের সম্মতি নিয়েই দেড়বছর আগে আমাদের বিয়ে হয়। প্রথম কিছু মাস ভালোই কাটছিল তারপর হঠাৎ করেই তার মধ্যে পরির্বতন লক্ষ্য করি, দিনকে দিন অত্যাচারের মাত্রা বাড়তে শুরু করে। একদিন বাজার থেকে আসার সময় মাথা ঘুরে পড়ে যায় আর সেখান থেকে জয় আমাকে হাসপাতালে নিয়ে আসে। সেই থেকেই ওর সাথে আমার যোগাযোগ। বিশ্বাস করে রুহি আমাদের মাঝে না আগে কিছু ছিল আর না এখন কিছু আছে।’
– ‘ওকে বিশ্বাস করলাম এখন কিছু প্রশ্নের উত্তর দাও। অনুষ্ঠানের দিন জয় তোমাকে জড়িয়ে ধরেছিলে কেন? কলেজে কিভাবে ছড়িয়ে গেল তুমি আর জয় রিলেশনে আছো?’

নাসরিন রুহির দিকে তাকিয়ে আছে সাথে সোহানও। এ কোন রুহিকে দেখছে, এত সত্যি বলার পরেও কিছুতেই মন গলছে না। কই আগে তো রুহি এইরকম ছিল না, আবেগপ্রবণ একটা মেয়ে ছিল কিন্তু এখন!! কন্ঠে নিষ্ঠুরতা, সত্যি জানার আগ্রহ। এই চারবছরে মেয়েটার মাঝে এত পরিবর্তন হবে সেটা ওদের ধারনার বাইরে ছিল। সোহানও এতদিনে বুঝতে পারেনি তার পাগলী বোনটা কঠিন হয়ে গেছে।

– ‘সেইদিন আমি ইচ্ছা করে নিজের বিপদের কথা বলে জয়কে ডেকে ছিলাম। আমার বিশ্বাস ছিল তুমি জয়কে খোঁজ করতে করতে ঠিকই আসবে আর সেই সময়েই আমি জয়কে জড়িয়ে ধরে কাঁদতে থাকি। সেই পরিস্থিতিতে জয় আমাকে সরিয়ে দিতে পারেনি। তুমি ওইটুকু দেখেই চলে গিয়েছিলে। আর জয় আর আমার জড়িয়ে ধরার ছবিটা কলেজ গ্রুপে শেয়ার করা হয় তাই সকলে জেনে যায় আমরা সম্পর্কে আছি।’

রুহির মাথা ঘোরাচ্ছে, সেইদিন যদি শুধু চোখের দেখা দেখে সবটা না বিশ্বাস করত তাহলে হয়তো আজকে জীবনটা অন্যরকম হতো। আবেগ, জেদের বর্শীভূত হয়ে রুহি ভুলভাল কাজ করে চলেছিল এখন রুহির ঠিক কি করা উচিত সেটা বুঝতে পারল না।

নাসরিন কান্না আটকে রেখে কোনোরকমে বলল,

– ‘তোমাদের ভালোবাসা নষ্ট করেছিলাম তাই হয়তো উপরওয়ালা আমার কপালে ভালোবাসা রাখেননি। পারলে মাফ করে দিও রুহি।’

রুহি নাসরিনের হাতে হাত রেখে শান্ত কন্ঠে বলল,

– ‘অতীতে যা হয়েছে ভুলে যাও নাসরিন। তোমার করা ভুলের জন্য আমি,জয় আমার পরিবার এমনকি তুমিও কম কষ্ট পাওনি। কি লাভ হলো এতকিছু করে সেই জয় আমার ছিল আর আমারই থাকল। মাঝখান থেকে শুধু চার চারটে বছর নষ্ট হয়ে গেল। তাই সবকিছু ভেবে করতে হয়, তুমিও ভুল করেছিলে আর আমিও। সেইদিন না যদি চোখের দেখাটা বিশ্বাস করতাম, সত্য মিথ্যা যাচাই করতাম তাহলে হয়তো আমাদের আলাদা হতে হত না। এতটা কষ্টও পেতে হত না।’

নাসরিন মাথা নীচু করে কেঁদেই চলেছে, তার ভুলের শাস্তি এখন প্রতিনিয়ত পাচ্ছে। না জানি আর কতটা কষ্ট আছে ভাগ্যে।

– ‘নাসরিন ছোট বোন হিসাবে একটা পরামর্শ দিচ্ছি, অতীত ভুলে নিয়ে বর্তমানকে সময় দাও। স্বামীর মন জয় করার চেষ্টা করো, আর যদি পারো একটা বেবি নিয়ে নাও। আমার মনে হয় একটা বাচ্চা আসলে হয়তো সে পরির্বতন হয়ে যাবে।’

নাসরিন মাথা নাড়ল। আরো কিছু কথাবার্তা শেষে নাসরিন চলে গেলে সোহান বলল,

– ‘সবকিছু ক্লিয়ার হয়েছে?’
– ‘হুমম। নিজের বোকামীর জন্য বড্ড খারাপ লাগছে।’
– ‘মনখারাপ করিস না। যেটা হয় সেটা ভালোর জন্যই হয়, হয়তো তুই চলে যাবার পর আমরা সবাই কিরকম একটা আলাদা হয়ে গিয়েছিলাম। তুই, জয় সহ বাড়ির বাকিরা কষ্ট পেয়েছে কিন্তু এই সবকিছুর মাঝে একটা ভালো জিনিসও আছে।’
– ‘কি?’
– ‘দূরত্ব কিন্তু ভালোবাসা বাড়ায়। সত্যি করে বলত, এই চারবছরে কি একবারের জন্যও জয়কে ভুলতে পেরেছিস?’

রুহি উত্তর না দিয়ে চুপ করে আছে। সোহান মুচকি হেসে বলল,

– ‘পারিস নি, উল্টে আরো বেশি ভালোবেসে ফেলেছিস। আর একটাও ভালো হয়েছে।’
– ‘কি?’
– ‘তুই আগের মতো আবেগপ্রবণ নেই। শক্ত হয়ে উঠেছিস , সমস্ত পরিস্থিতির সাথে মোকাবিলা করার মনোবল তৈরি হয়েছে। আর হয়তো এই পরিস্থিতির শিকার হয়ে ছিলিস বলেই নিজের স্বপ্ন আঁকা’কে নিজের পেশা হিসাবে নিতে পেরেছিস।’

রুহি চুপ করে থাকল। কিছু ঘটনা খারাপের পাশাপাশি আমাদের জীবনে ভালোও নিয়ে আসে আর সেইটাই রুহির সাথে হয়েছে। হয়তো অনেকগুলো মানুষ কষ্ট পেয়েছে,রুহি নিজেও কষ্ট পেয়েছে তবুও এই সবকিছুর জন্যই রুহি নিজের শখকে পেশা হিসাবে নিতে পেরেছে। এইবার জয়ের সাথে সবকিছু মিটিয়ে ফেলার পালা।

#চলবে…

আশা করি বিষয়টি সকলের কাছে পরিস্কার। এতটা অনিয়ম হবার পর আপনাদের সার্পোট আমার কাছে শক্তি স্বরূপ।

অসুস্থতা, পরিবারিক সমস্যা সবমিলিয়ে অনিয়মিত হয়ে উঠেছি। তবুও গল্পটার ক্ষেত্রে কোনোরকমের তাড়াহুড়ো করতে চাই না,গল্প নিজের গতিতেই আগিয়ে যাবে। তবে হয়তো অনিয়মিত ভাবেই পাবেন।

যাইহোক আমার জন্য দোয়া করবেন। আসসালামু আলাইকুম।

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here