স্মৃতির_শেষ_অধ্যায়ে_তুমি #পর্ব_২৫(বিচ্ছেদ)

0
442

#স্মৃতির_শেষ_অধ্যায়ে_তুমি
#পর্ব_২৫(বিচ্ছেদ)
#লেখিকা_Fabiha_bushra_nimu

থালাবাসন পড়ে যাবার ঝনঝন আওয়াজে চমকে উঠলো স্মৃতি। নিজের কেবিনে আনমনে বসে আছে। দু’দিন হসপিটালে ছিল সে। আজকে বাসাস যাবে মুনতাসীর আর আবিদ রহমান হসপিটালের বিল পরিশোধ করতে গিয়েছে। দু’টো দিন একই হসপিটালে থেকে দেখা হলো না মা-মেয়ের। মুনিয়া বেগম রুম থেকে বের হয়েছেন। স্মৃতিকে নিয়ে যাবার জন্য তখনই স্রুতির সাথে দেখা হয়। মাকে হসপিটালে দেখে স্রুতি বিস্ময় নয়নে মায়ের দিকে দৃষ্টিপাত করে রেখেছে। মায়ের দিকে কিছুটা এগিয়ে এসে বলল,

–তুমি হসপিটালে কি করছো আম্মু? আব্বুর শরীর ঠিক আছে তো? কার কি হয়েছে? আমাকে জামাওনি কেনো? মেয়ের প্রশ্নে মুনিয়া খান কিছুটা থমথমে মুখশ্রী করে বলল,

–বৃষ্টির পানি স্মৃতির শরীর সহ্য করতে পারে না। এটা নিশ্চয়ই তোকে বলে দিতে হবে না। সেদিন কলেজে থেকে ভিজতে ভিজতে বাসায় এসেছে। শরীর সহ্য করতে পারেনি। গুরুতর অসুস্থ হয়ে পড়েছিল। পরে আমি তোর বাবা আর মুনতাসীর মিলে স্মৃতিকে হসপিটালে নিয়ে আসি। মায়ের কথা কর্ণকুহরে আসতেই স্রুতি আশ্চর্য হয়ে বলল,

–স্মৃতি যে এতটা অসুস্থ তুমি আমাকে একটা বার জানানোর প্রয়োজন মনে করলে না! একই হসপিটালে দু’দিন থাকলাম। তোমাদের দেখতে পারলাম না আম্মু। স্মৃতি কোথায় এখন কেমন আছে? আমাকে স্মৃতির কাছে নিয়ে চলো আম্মু। স্রুতির কথায় মুনিয়া খানের মুখশ্রীতে আঁধার ঘনিয়ে এলো। মুখশ্রী কালচে বর্ণ করে বলল,

–স্মৃতি তোমাকে বোন বলে অস্বীকার করে, সে চায় না তুমি তাকে দয়া দেখাতে আসো। সে এটাও বলেছে দিয়েছে আমরা যেন তোমাকে স্মৃতির অসুস্থতার খবর না দেই৷ আমার মেয়েটার শরীর বড্ড খারাপ। আমি নতুন করে মানসিক চাপ দিয়ে, আমার মেয়েকে আরো অসুস্থ করে দিতে পারি না। তুমি স্মৃতির সামনে না গেলে খুশি হবো। তুমি যেমন আমার মেয়ে আমি তোমাকে ভালোবাসি। ঠিক তেমনই স্মৃতিও আমার মেয়ে। মা হয়ে মেয়ের খারাপ চাইতে পারি না। মায়ের কথায় বুক ভারি হয়ে আসতে শুরু করল স্রুতির। অসহায় দৃষ্টিতে মায়ের দিকে তাকিয়ে আছে। মুনিয়া বেগম আবার স্মৃতির কেবিনের মধ্যে চলে গেলেন।

আরাভ নিজের কেবিন থেকে বের হয়ে আসলো। পুরো শরীর ব্যাথায় কাবু হয়ে আছে। তবুও সে হসপিটালে থাকতে চায় না। হসপিটালের গন্ধ সে সহ্য করতে পারে না। স্মৃতি গায়ে ওড়না জড়িয়ে আরাভের সামনে দিয়ে আগে চলে গেল। আরাভ বিস্ময় নয়নে স্মৃতির যাওয়ার দিকে দৃষ্টিপাত করে আছে। অভ্রের কথায় হুস আছে আরাভের, সে আর কোনো কথা বলল না চুপচাপ বাসার উদ্দেশ্য রওনা দিয়ে দিল।

এর মাঝে আরো দু’টো দিন অতিবাহিত হয়ে যায়। আরাভ আগের থেকে একটু সুস্থ হয়েছে। স্মৃতি একদম সুস্থ হয়ে গিয়েছে। শরীরের দুর্বলতাটা কাটেনি। স্মৃতির বাবা-মা স্মৃতির প্রতি যথেষ্ট সিরিয়াস। আরাভ ফেসবুকে স্ক্রোল করছিল। এমন সময় একটি পোস্টে চোখ আঁটকে যায় আরাভের যেদিন আরাভ আর মারিশা হোটেল থেকে বের হচ্ছিল, সেদিনের একটা ছবি তুলে স্মৃতির আইডি থেকে পোস্ট করা হয়েছে। মুহুর্তের মধ্যে আরাভকে নিয়ে সমালোচনা শুরু হয়ে গেল। সবাই বাজে ভাষায় আরাভকে নিয়ে কটুক্তি করছে। তা দেখে আরাভের আঁখি জোড়া রক্তিম বর্ন ধারণ করল। সে নিয়ন্ত্রণ হারিয়ে স্মৃতিদের বাসায় চলে গেল। স্মৃতি খাবার জন্য নিচে আসছিল। এমন সময় আরাভকে তাদের বাসায় দেখে বিস্ময় নয়নে আরাভের দিকে তাকিয়ে আছে। স্মৃতিকে দেখে রাগান্বিত হয়ে বলল,

–তোমার মতো বে’য়া’দ’ব মেয়ে আমি দু’টো দেখি নাই। তোমাকে আমি অনেক ভালো ভেবে ছিলাম। সব সময় তোমার ভালো চেয়েছি। কখনো তোমার খারাপ কামনা করি নাই। তুমি এভাবে আমার সব মান সন্মান নষ্ট করে দিলে? তোমাকে আমি কোনোদিন ক্ষমা করবো না। তোমার বাবা-মা কোথায়? ডাকো তাদের তারা এসে দেখুক মেয়েকে কি শিক্ষা দিয়েছে তারা। আরাভের কথায় স্মৃতির কণ্ঠে গম্ভীরতা ফুটে উঠলো। সে কিছুটা রাগান্বিত হয়ে বলল,

–আপনি এসব কি বলছেন? আপনার মাথায় কোনো সমস্যা আছে? আমি মানছি আমি আপনাকে একটা নিষিদ্ধ প্রস্তাব দিয়েছি। তাই বলে আপনি মা-বাবা তুলে কথা বলবেন! এটা কিন্তু আমি একদম মেনে নিব না। আপনি না একজন শিক্ষক! একজন শিক্ষকের ব্যবহার এমন হতে পারে, তা আপনাকে না দেখলে কখনো জানতেই পারতাম না। আরাভ বজ্রকণ্ঠে বলে উঠলো,

–তুমি আমার আর মারিশার ছবি সোসাল মিডিয়াতে আপলোড দিয়েছে কেনো? আবার পোস্ট করে ক্যাপশন লিখে দিয়েছো, ‘বিয়ের পরের কাজ যদি বিয়ের আগে হয়ে যায়। তাহলে কি আরাভ স্যারের বিয়ে করার দরকার আছে! তোমার সাহস কি করে হয়? আমার নামে এমন বাজে কথা বলার! আমার সম্পর্কে তুমি কতটুকু জানো? তোমার বাবা-মাকে ডাকো। আমার মস্তিষ্কের রক্ত উত্তপ্ত হয়ে গিয়েছে। আরাভের কথায় স্মৃতি কিছুটা হতভম্ব হয়ে গেল। আরাভ তার নামে এসব কি বলছে? সে কখন আরাভকে নিয়ে সোসাল মিডিয়ায় পোস্ট করল? স্মৃতির মস্তিষ্ক শূন্য হয়ে পড়েছে। বুদ্ধিরা জোট বেঁধে পালিয়েছে। চিৎকার চেচামেচি শুনে স্মৃতির বাবা-মা ড্রয়িং রুমে চলে আসলো। তাদের দেখে আরাভ রাগান্বিত হয়ে বলল,

–মেয়েকে সঠিক শিক্ষা দিতে পারেননি আংকেল। আপনার মেয়ের আমি কি ক্ষতি করে ছিলাম? আপনার মেয়ের ভালো চেয়ে ছিলাম। এটাই ছিল আমার অন্যায় সে আমার নামকে কি মিথ্যা রটিয়েছে সেটা নিজের চক্ষে দেখুন। আমি আলাদা করে কিছু বলতে চাই না। আপনার মেয়ে আমার সন্মান আমাকে ফিরিয়ে দিতে পারবে। তাহলে আমার সন্মান নষ্ট করার অধিকার আপনার মেয়েকে কে দিয়েছে? বিরক্তিতে স্মৃতির মুখশ্রী কুঁচকে এলো। সে বিরক্ত মাখা কণ্ঠে বলল,

–তখন থেকে আমার নামে মিথ্যা কথা বলেই যাচ্ছেন। আমি আপনার কোনো ছবি সোসাল মিডিয়ায় পোস্ট করি নাই। তাহলে আমার নামে মিথ্যা অপবাদ দেওয়ার মানে কি? স্মৃতির কথায় আরাভ জ্বলে উঠলো। সে রাগান্বিত হয়েই বলল,

–তুমি আমাকে ভালোবাসার নিমন্ত্রণ জানিয়েছিলে। তোমার ভালোবাসা আমি গ্রহণ করি নাই। সেই রাগ থেকে তুমি আমার থেকে প্রতিশোধ নিলে, সেদিন আমাকে আর মারিশাকে হোটেলের নিচে তুমি দেখিছিলে, এর থেকে প্রমাণ হয়ে যায়। তুমিই কাজ টা করেছো। আরাভের মিথ্যা অপবাদে স্মৃতির মস্তিষ্ক টগবগ করে উঠলো। ক্রোধে বশিভূত হয়ে বলল,

–আমার এখনো বলছি আবার-ও বলছি। আমি আপনাদের ছবি সোসাল মিডিয়ায় পোস্ট করি নাই। যে করেছে একদম ঠিক কাজ করেছে। সত্যি তো বলেছে বিয়ের পরের কাজ বিয়ের আগে হয়ে গেলে কেউ বিয়ে করতে চায়। চরিত্রহীন মানুষ একটা। চরিত্রহীন মানুষকে চরিত্রহীন বলেছে এতে ভুলের কিছু দেখছি না। স্মৃতির কথা শেষ হবার সাথে সাথে আরাভ স্মৃতির গালে ক’ষে থা’প্প’ড় বসিয়ে দিল। স্মৃতি তাল সামলাতে না পেরে নিচে পড়ে যেতে নিলে স্রুতি এসে স্মৃতিকে ধরে ফেলে, স্মৃতির রাগান্বিত হয়ে বোনের দিকে তাকিয়ে আছে। আরাভ প্রহার করাতে স্মৃতি ভিষণ রকমের জেদি হয়ে উঠলো। বজ্রকণ্ঠে বলতে লাগলো,

–আপনি কোন অধিকার আমার শরীর স্পর্শ করলেন? একজন শিক্ষক হয়ে একটা ছাত্রীর সাথে অশালীন আচরণ করতে আপনার লজ্জা করল না! আপনি যেমন কর্ম করছেন। তেমনই ফল পেয়েছেন সত্যি মিথ্যা যাচাই না করে, আমাকে দোষ দেওয়ার অধিকার আপনি কোথায় পেয়েছেন? আমাকে আপনাদের সবার পুতুল বলে মনে হয়। যার যখন ইচ্ছে হবে আমাকে দোষারোপ করবেন। আমিও ভদ্র মেয়ের মতো মেনে নিব। আপনি এখন এই মুহুর্তে আমার বাসা থেকে বের না হয়ে যান। তাহলে আপনার নামে আমি নারী নি’র্যা’ত’নে’র মা’ম’লা দিব। স্মৃতির কথায় শান্ত হলো আরাভ। তার শান্ত মস্তিষ্কের টনক নড়ে, সে আর ভাবতে পারলো না। দ্রুত পায়ে স্মৃতিদের বাসা থেকে বের হয়ে গেল।

চলবে…..

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here