#আবার_প্রেম_হোক
#নুসরাত_জাহান_মিম
০৩.
“কিসের বউ দেখাদেখি হা?আমি আপনাদের ছেলেকে ডি*ভো*র্স দেবো”
নতুন বউয়ের মুখে এরূপ বাক্য শুনে সেখানে উপস্থিত সকলে ভ*ড়*কে গেলো।সকলের দৃষ্টিই সীমাবদ্ধ হলো কেবল চাঁদের দিকে।একজন মহিলাতো বলেই ফেললেন,
“এই মেয়ের মুখেতো দেখছি কিছুই আটকায়না।বিয়ের দিনও যা নয় তাই বলেছে।আজতো আরও একধাপ এগিয়ে।এমন ছো*লা মুখের মেয়েকে বউ করে এনে বড্ড ভুল করেছেন ভাবি”
অপর একজন বললেন,
“ডি*ভো*র্সই যখন দেবে বিয়ে করেছো কেনো?নাকি অন্য কারো সাথে সেটিং আছে?”
বিস্ফোরিত নয়নে মহিলাটির দিকে তাকালো চাঁদ।ঘৃ*ণা*য় ভেতরটা ভরে যাচ্ছে।পরিবর্তনের যুগে এসেও মানুষের চিন্তাধারা এমন হতে পারে ভেবেই গা গু*লা*চ্ছে তার।ভদ্রতার খাতিরে কাউকে কিছু বলছেনা।তবে একটা পরিচিত কন্ঠস্বর ভেসে আসতেই সেদিকে তাকায় চাঁদ,
“মুখ সামলে কথা বলবেন ভাবি।ভুলে যাবেন না আপনি এ বাড়ির বড় বউয়ের নামে কথা বলছেন।আর আমাদের বউয়ের চরিত্রে কোনো প্রকার দা*গ নেই।ছেলেটা হুট করে এভাবে বিয়ে করেছে বলে বউ রে*গে আছে বৈকি!আপনারা এখন আসতে পারেন।আমরা সবাই খুব টায়ার্ড।লম্বা জার্নি করে এসেছি।আজ আর কোনো রিচুয়াল হবেনা।রিসিপশনেই বউকে দেখে নেবেন।বউমা যাও রুমে গিয়ে রেস্ট নাও।রিদি,শিফা যাও তোমাদের ভাবিকে ভাইয়ের রুমে দিয়ে এসো।”
রুবা লোকটার সামনে এসে বললো,
“মামা এটা কিন্তু ঠিক হচ্ছেনা।তুমি আমাকে যেতে বললেনা কেনো?”
প্রণয়ের বাবা জিভে কা*ম*ড় দিয়ে বললেন,
“এই যাহ!সরি রুবা মামনি।তুমিও যাও”
চাঁদ ইতস্তত করতে করতে বলেই ফেললো,
“বাবা আপনার….”
চাঁদকে বাধা দিয়ে তিনি বললেন,
“তোমার সাথে কাল কথা বলবো।আজ ঘুমোও। এমনিতেই অনেক রাত হয়েছে।তাছাড়া তোমার বিশ্রাম প্রয়োজন।আরেকটা কথা”
“জ্বি?”
“অনেক বদলে গেছো”
বলেই তিনি প্রস্থান করেন।চাঁদ করুন চোখে তার যাওয়ার পানে তাকায়।তাকিয়ে থেকেই ডুব দেয় ভাবনার জগতে,
“তোমায় যতবার দেখি ততবারই মুগ্ধ হই মা।তোমার এই প্রতিবাদী ব্যক্তিত্ব সর্বদা বজায় রেখো।অ*ন্যা*য়ের বিরুদ্ধে তোমার আওয়াজ সবসময় সোচ্চার রাখবে।কখনো কারও সামনে, বিশেষ করে অ*ন্যা*য়ের কাছে মাথা নত করবেনা।”
“আপনি সবসময় আমায় সাহস দেন আংকেল।আজ আপনার সাহায্য ব্যতীত এই ব!র্ব!র লোকদের কখনোই তাদের প্রাপ্যটুকু দিতে পারতাম না।আপনাকে ধন্যবাদ”
“আংকেলও বলছো আবার পরও করে দিচ্ছো?”
চাঁদ হেসে উত্তর দিলো,
“সরি সরি।আর পর করবোনা।আমি নিশ্চিত আপনার মা আপনাকে সুশিক্ষার পাশাপাশি স্বশিক্ষায়ও শিক্ষিত করেছেন আর তদ্রুপ আপনিও আপনার সন্তানদের করবেন”
লোকটার হাসি হঠাৎ করেই মিলিয়ে গেলো।তা দেখে চাঁদ বললো,
“কী হলো আংকেল?”
“তুমি ঠিক বলেছো মা।আমি আমার দুই ছেলেকেই চেষ্টা করি তারা যেনো কখনো বিপথে না যায়।তবে ওদের সাথে আমার সম্পর্কটা খুব একটা ঘনিষ্ঠ না।বড়টা নিজেকে সবসময় গুটিয়ে রাখে।একাকিত্ব তার খুব পছন্দের আর ছোটটা আমায় ভ*য় পায়”
“সে কী কথা আংকেল?”
“আমি সবসময় একটা মেয়ের অভাববোধ করতাম।এখন আরও বেশি করছি।আমার কাছে যদি তোমার মতোই একটা মেয়ে থাকতো!”
চাঁদ হেসে বললো,
“কে বলেছে নেই?আজ থেকে আমি ই আপনার মেয়ে।আর কখনো যেনো আমার বাবাকে আমি এমন গো!ম!ড়ামুখে না দেখি”
লোকটাও হেসে বললেন,
“তা আমার মেয়েটার নাম কী?”
“চাঁদ”
“শুধুই চাঁদ?”
“মুহাইমা বিনতে চাঁদ”
.
.
.
.
.
হঠাৎ রুবার আওয়াজে চাঁদ কেপে উঠতেই রুবা বলে,
“ভাবি আমি।রুবা?কি ভাবছিলে?সেই কখন থেকে ডাকছি”
চাঁদ বড় করে শ্বাস নিয়ে বললো,
“বিশেষ কিছুনা।বলো”
“চলো রুমে যাই”
“চলো”
চাঁদকে প্রণয়ের রুমের সামনে আনতেই সে নাক মুখ কুচকে বলে,
“এ রুমে কেনো এনেছো?”
“এখানেই তো আনার কথা!”
“আমি এই রুমে এক পা ও দেবোনা।তোমার জন্য এ বাড়িতে কোনো রুম নেই?আচ্ছা গেস্ট রুম আছে এখানে?”
শিফা বললো,
“গেস্ট রুম দিয়ে কি করবে তুমি?”
“রুমের ভিতর কি করে মানুষ?”
“মানে?”
“মানে হলো থাকবো অবশ্যই?”
“কিন্তু ভাইয়া…”
“কোনো কিন্তু না।আমি তার সাথে এক মুহুর্ত থাকতে পারবোনা।তোমাদের রুমে নিয়ে চলো নাহয় আমি ড্রয়িং রুমেই শুয়ে পড়বো”
রিদি বললো,
“এই না না ভাবি।তুমি আমাদের সাথেই চলো।আমরা যখনই এ বাড়িতে থাকি সবসময় একসাথেই থাকি একই রুমে।ওখানেই চলো।বিছানা বড় আছে।আমাদের চারজনের জায়গা হয়ে যাবে”
“চলো”
বলে পিছু ঘুরতেই প্রণয়ের মা’কে দেখতে পায়।রুবা বলে,
“কিছু লাগবে মামি?”
“না।বউমা এই শাড়িগুলো নাও।কয়েকদিন এগুলোই পরো।তোমার কাপড়তো আনা হয়নি”
চাঁদ আর দ্বিরুক্তি করলোনা।শাড়িগুলো নিয়ে বললো,
“কিন্তু আন্টি ব্লাউজ?”
“তাইতো!শিফাদের কাছ থেকে নিয়ে নিও।ওদের যেকোনো একজনের টা ঠিক লাগবে তোমার।আমি কালই তোমার মাপ নিয়ে শাড়িগুলোর ব্লাউজ বানাতে দিয়ে আসবো”
“ঠিক আছে আন্টি”
প্রণয়ের মা চাঁদের থুতনীতে হাত রেখে মোলায়েম কন্ঠে বললেন,
“তুমি আর তোমার কথাগুলোও বেশ মিষ্টি।শ্বশুরকেতো ঠিকই বাবা ডাকো।আমায় কেনো আন্টি?”
চাঁদ বেশ অস্বস্তিতে পড়ে গেলো।ইতস্তত করে বললো,
“আসলে আন্টি…”
তিনি চাঁদকে বাধা দিয়ে বললেন,
“কোনো আন্টি না।মা বলে ডাকবে।আমার কোনো মেয়ে নেই জানোতো?”
সাথে সাথে রুবা,রিদি,শিফা বললো,
“কে বলেছে মেয়ে নেই?”
প্রণয়ের মা হেসে দিয়ে বললেন,
“হ্যা তাইতো!কিন্তু আমি সবসময় চেয়েছিলাম আমার ছেলেদের বউকে মেয়ে বানিয়েই আনবো।মেয়ের মতোই রাখবো।দেখো মা সবটা কারোর ই জানা ছিলোনা।ভবিষ্যৎ তো কেউই জানেনা।তুমি আমার বড় ছেলের বউ হয়ে এসেছো।আমি জানিনা তোমাদের মাঝে ঠিক কি হয়েছে বা তোমাদের সম্পর্ক কী।তবে বর্তমানে তোমরা স্বামী-স্ত্রী।আমার ছেলের বউ।ভাগ্যকে মেনে নিয়ে তোমাকে আমি আজ থেকে আমার মেয়ে বানালাম।তুমিও সবটা মেনে নাও।আর এই মা’কে ছেড়ে যাবেনাতো?”
চাঁদ অসহায় দৃষ্টিতে তার পানে তাকিয়ে বললো,
“যাবো কি যাবোনা তাতো বলতে পারছিনা মা।তবে আমি আজন্ম আপনার মেয়ে হয়ে থাকবো।যখন পাশে চাবেন এই মেয়েকে পাবেন।কিন্তু আপনার ছেলের পাশে কখনো দেখতে চাবেন না মা।সেটা আমি পারবোনা।”
বলেই মাথা নত করে ফেললো চাঁদ।প্রণয়ের মা পুষ্পিতা জামান চাঁদকে আর ঘাটাতে চান না।তাই তাকে সহজ করতে বললেন,
“ওসব বাদ দাও।এখন যাও ফ্রেশ হয়ে আসো।আর এই ভারী শাড়িটা চেঞ্জ করে এখান থেকে পছন্দমতো পরে নাও”
বলেই তিনি চলে যেতে চাইলে চাঁদ পিছু ডাকে,
“মা?”
পুষ্পিতা জামান পিছু ঘুরে বলেন,
“হ্যা মা?”
“শাড়িগুলো কি অমির জন্য ছিলো?”
তিনি ঠোটজোড়া প্রশস্ত করে বললেন,
“তোমার শ্বশুর যা বলেছিলেন একদম ঠিক বলেছিলেন।”
“বাবা আমাকে নিয়ে কিছু বলেছেন?কী বলেছেন?”
“চাঁদ মায়ের আত্মসম্মান সবকিছুর ঊর্ধ্বে।আর সেজন্যই আমি তোমার জন্য ঢাকা আসার পথেই মার্কেট থেকে শাড়ি কিনেই ফিরেছি”
চাঁদ কৃতজ্ঞতার সহিত তাকালো তার দিকে।মনেমনে আল্লাহর কাছে শুকরিয়া আদায় করলো এমন শ্বশুর-শাশুড়ি পেয়ে।পরক্ষণেই মনে পড়লো যাকে স্বামীই মানেনা।তার বাবা-মা কি করেইবা শ্বশুর-শাশুড়ি হবেন?
সবেমাত্র সালাম ফিরিয়েছে চাঁদ।এমতাবস্থায় তার ফোনে কল আসায় রিদি ফোনটা নিয়ে দেখে ‘আর ভাইয়া’ নামে কেউ একজন ফোন দিয়েছে।তা দেখে ফোন ফোনের জায়গায় রেখে বলে,
“ভাবি ‘আর ভাইয়া’ নামের কেউ একজন কল দিয়েছে।তুমি মোনাজাত শেষ করে কল ব্যাক করো”
মোনাজাত শেষ করে কিছুক্ষণ আঙুলে গুনে কি যেনো পড়লো চাঁদ।অতঃপর মোবাইল হাতে নিতেই আবারও রিংটোন বেজে উঠলো।বাজতেই চাঁদ সেটা রিসিভ করে কাপা কাপা কন্ঠে বললো,
“হ্যা…হ্যালো?”
ওপাশ থেকে ভেসে আসলো উ*ত্তে*জি!ত কন্ঠস্বর,
“আপু প্লিজ আপু ফোনটা কেটোনা।আমার উপর রাগ করে থেকোনা প্লিজ!”
অমৃতার কন্ঠস্বর শুনে আ*ত!ঙ্কি*ত হয়ে কিছু বলার পূর্বেই নজরে আসলো প্রণয়ের তিনবোন।তাদের সামনে কিছু বলা ঠিক হবেনা ভেবে সে বললো,
“আমি তোকে পরে কল দেবো।এ নাম্বারেই পাবো কি?”
“হা…হ্যা আপু।এটাতেই পাবে।রবিনের নাম্বার এটা।আমি ওর সাথেই আছি”
“ঠিক আছে রাখছি।কাল ফ্রি হয়ে কল দেবো।তুই রেস্ট নে”
কল রাখতেই শিফা বললো,
“কে করেছে ভাবি?”
“একটা কাজিন”
রিদি বললো,
“তোমার বিয়ের ব্যাপারে জিজ্ঞেস করতে?”
“তেমন কিছুনা।ও হয়তো জানেনা বিয়ের কথা।ভালো লাগছেনা।মাথাটা ধরেছে।কফি বানানো যাবে এখন?”
রুবা বললো,
“এতো রাতে কফি খাবে?ঘুম আসবেনাতো”
“না খেলে মাথা ব্যাথায় ম^রে*ও যেতে পারি!”
রিদি বললো,
“বেশি কথা না বলে ভাবিকে কিচেন দেখিয়ে আয়”
শিফা বললো,
“দেখিয়ে আয় মানে?ভাবি একা থাকবে নাকি ওখানে?কোথায় কি আছে জানে?”
রুবা বললো,
“আমরাওতো এসে বসে থাকিনা যে জানবো”
চাঁদ বললো,
“আচ্ছা সমস্যা নেই আমি মা’কে ডেকে নেবো”
রিদি বললো,
“ফুপিকে ডেকোনা ভাবি।ফুপির জার্নি করলে শরীর খারাপ করে।ঘুমোক।তুমি চলো আমি তন্ময় ভাইকে বলে দিচ্ছি”
রিদি চাঁদকে নিয়ে তন্ময়ের রুমে আসতেই দেখতে পায় তন্ময়ের রুমে তন্ময়সহ উজান আর মির বসে আছে।রিদি তন্ময়কে বলে,
“ভাই তুই ভাবিকে নিয়ে একটু কিচেন টা বুঝিয়ে দিয়ে আয়।কফি বানাবে”
তন্ময় রিদির পেছনে দাঁড়ানো চাঁদকে দেখে বুকের বা পাশে হাত রেখে বলে,
“দিলেতো হার্টবিট মি*স করে?এভাবে শাড়ি পরে খোলা চুলে আসতে কে বলেছিলো?একজনের উপর আর কতবার ক্রাশ খাবো বলোতো ভাবি?”
চাঁদ হেসে বললো,
“ভাবিও বলছো আবার ক্রাশও খাচ্ছো ব্যাপারটা ইন্টারেস্টিং!”
তন্ময় বললো,
“চশমা পরোনি বলে চোখগুলোর গভীরতা বুঝা যাচ্ছে।এজন্যই অতিরিক্তই সুন্দর লাগছে তোমায়, যার দরুন আমি ক্রাশ খেতে বাধ্য হচ্ছি।শাড়িটা সাধারণই তবে তুমি পরায় অসাধারণ লাগছে!আমি জাস্ট ম*রে যাচ্ছি ভাবি!ইশ ভাইটা তোমায় বিয়ে না করলে আজ তুমি আমার ভাবির জায়গায় বউ হতে ধ্যাত!কেন যে তোমায় আগে দেখলাম না!”
চাঁদ কিছু বলার পূর্বেই মির বসা থেকে দাঁড়িয়ে বলে,
“বিড়ালিনী তুমি?”
পরিচিত কন্ঠস্বর কানে ভেসে আসতেই সেদিকে তাকায় চাঁদ।তাকাতেই মিরকে দেখে আঁখিজোড়া হয় অশ্রুসিক্ত।তবে নিজেকে সামলে বলে,
“কেমন আছো মিরজাফর ভাইয়া?”
মির হেসে দিয়ে বলে,
“তুমি সবাইকে যেমন রেখে গেছিলে তেমনই আছি ঘসেটি বেগম”
চাঁদ নিজেকে সামলে বললো,
“রাখা না রাখার মালিক আল্লাহ।তবে সবার মধ্যে কেবল তুমিই আমার সাথে ঠিকভাবে কথা বললে।যেটা আমি মোটেও তোমাদের কারও কাছ থেকে আশা করিনি”
বলেই চোখজোড়া লুকানোর বৃথা চেষ্টা করলো চাঁদ।তা দেখে মির বললো,
“ভাইয়ের কাছ থেকে দৃষ্টি লুকাতে চাচ্ছো?এভাবে পা*লি*য়ে না গেলে কি হতোনা বিড়ালিনী?তুমি থাকলে এভাবে সম্পর্কগুলো ছি*ন্ন হতোনা কারোরই।”
চাঁদ নিজেকে সামলাতে না পেরে মিরের সামনে গিয়ে তার হাতদুটো নিজের দু’হাতে নিয়ে ফুপিয়ে ফুপিয়ে বলতে লাগলো,
“বিশ্বাস করো ভাইয়া আমি যেতে চাইনি!পরিস্থিতির কাছে হে*রে গিয়েছিলাম আমি।সেইসাথে হারিয়েছি আরও অনেককিছু।তারপরেও ফিরে আসা আমার সাজেনা।তাছাড়া যে সম্মান করতে জানেনা সে ভালোবাসতেও জানেনা ভাইয়া”
চাঁদের চোখ মুছে দিয়ে মির বলে,
“তুমি ভুল ভাবছো চাঁদ”
“আমি সবটা ঠিকই ভাবছি ভাইয়া।অরণ কোথায়?তার সাথে চেয়েও যোগাযোগ করতে পারিনি”
মিরের কিছু বলার পূর্বেই প্রণয়ের গম্ভীর কন্ঠস্বর ভেসে আসে,
“এই মেয়েকে এখান থেকে যেতে বল তন্ময়।আর তুই কি করে ওর সাথে কথা বলছিস মির?”
মির প্রণয়ের দিকে তাকিয়ে বললো,
“এভাবেই বলছি।কেনো তোর কোনো সমস্যা?আর তুই চাঁদকে বিয়ে করেছিস কেনো?বিয়েটাতো চট্টগ্রামের কোন মেয়ের সাথে হওয়ার কথা ছিলো?এসব হলো কি করে?চাঁদ আসলো কোত্থেকে?আর সবচাইতে বড় কথা এতোবছরেও যাকে আমরা খুজে পাইনি তাকে ডিরেক্ট বিয়ে করে নিয়ে এসেছিস?বাকিরা সবটা জানে?”
উজান বললো,
“আমি বলছি তোমায় সবটা।তন্ময় যা ভাবিকে বাইরে নিয়ে যা।রিদিকেও সাথে নিস”
চাঁদ বললো,
“লাগবেনা ভাইয়া।ঘুমাতে যাচ্ছি চলো রিদি”
তন্ময় বললো,
“কিন্তু ভাবি?”
তন্ময়কে উপেক্ষা করে চাঁদ রিদির আগেই বের হয়ে গেলো।রুমে যেতেই শিফা বললো,
“কফি এনেছো?আমাদের জন্যও আনতে?”
চাঁদ জবাব দিলো,
“বানাইনি।কাল বানিয়ে দেবো তোমাদের কেমন?”
“কিন্তু তোমার মাথা ব্যাথা?”
“ঔষধ খেয়ে নিলে ঠিক হয়ে যাবে”
বলেই ব্যাগ থেকে ফার্স্ট এইড বের করে একটা ট্যাবলেট খেয়ে শুয়ে পড়লো চাঁদ।
রিদি এসে রুবা আর শিফাকে বললো,
“জানিস?প্রণয় ভাইও রুমে নেই।ভাবির সাথে নাকি থাকবেনা এক রুমে।তাই তন্ময় ভাইয়ের রুমে গেছে থাকতে।”
“কি বলিস কি?”
রুবা বললো,
“আমাদের উচিত দুজনের মাঝের সমস্যা মিটিয়ে দেওয়া”
রিদি বললো,
“এতো সহজ হবেনা।সমস্যাটা বিরাট!”
শিফা বললো,
“কি করে বুঝলি?”
“মির ভাইয়াও ভাবিকে চিনে।ভাবিও চিনে।দুজনের সম্পর্কও বেশ!যদি কিছু জানতেই হয় তো মির ভাইয়ার থেকেই জানা যাবে।আমি তন্ময় ভাইকে বলছি মির ভাইয়াকে নিয়ে আসতে”
রুবা বললো,
“ভাবির সামনে শোনা যাবেনা।তন্ময় ভাইকে বল মির ভাইয়াকে নিয়ে প্রণয় ভাইয়ার রুমে যেতে।ওটা খালিই আছে।আমরাও আসছি”
“ঠিক আছে বলছি”
প্রণয় মিরের দু’কাধে হাত রেখে ঝাকিয়ে বলছে,
“তুই সবটা জেনেও ঐ মেয়ের সাথে কথা বলছিলি?চোখের পানি মুছে দিচ্ছিলি মির?”
মির হেসে বললো,
“তুই কি রা*গছিস নাকি জেলাস হচ্ছিস বুঝতে পারছিনা মামা!”
ভ্রু কুচকে প্রণয় বললো,
“আমি কেনো জেলাস হবো?”
“যাকে তুই কখনো ছুয়েও দেখিসনি তাকে আমি ছুয়ে দিলাম বলে!”
“ওহ জাস্ট শা!টাপ মির!তুই দুনিয়ার যত মেয়ে আছে সবার সাথে ফ্লার্ট করতে পারদর্শী হলেও কেবল ঐ মেয়ের কাছে দু*র্ব*ল হয়ে যাস।এতে নতুন কী?সেতো তোর ধর্মের বোন!”
“হাহাহাহা।ধরা পড়ে গেলাম দেখি!”
“আর তাকে কে ছুয়ে দিলো কে ছোয়নি তাতে আমার কিচ্ছু যায় আসেনা”
“সত্যি ই যায় আসেনা?যার কথা বলছিস মেয়েটা কেবল তোর পুরোনো অনুভূতি না বর্তমানে তোর সহধর্মিণীও।তোর বউকে যেকেউ এসে ছুয়ে দিবে আর তুই চেয়ে চেয়ে দেখবি?”
প্রণয়ের মেজাজ ধীরে ধীরে খা|রা’প হচ্ছে।তাই মিরকে রুম থেকে বের করে বললো,
“এই তুই যা তো!তন্ময়ের রুমে গিয়ে ঘুমা।তোকে আমার রুমে আনাটাই ভুল হয়েছে।আর মিরাকে ঐ মেয়ের ব্যাপারে কিছু বলবিনা”
“যাকে ঐ মেয়ে ঐ মেয়ে করছিস সে এখন তোর ওয়াইফ”
“ওয়াইফ?কিসের ওয়াইফ?কালই ডি*ভো*র্স পেপার বানাতে দিয়ে আসবো আমি”
“ডি*ভো*র্সই যখন দিবি বিয়ে কেনো করেছিস?”
“সময় হলেই জানতে পারবি”
“আজ অরণ থাকলে আগে ক*ষি*য়ে তোর গালে চ^ড়াতো!তারপর যা বলার বলতো”
চোয়াল শ*ক্ত করে প্রণয় বললো,
“যার জন্য অরণ আমাদের মাঝে বিদ্যমান না তার ওকালতি করতে লজ্জাবোধ করেনা তোর?”
“একসময় না জেনে তোর করা ভুলগুলোর জন্য অনেক আফসোস করবি প্রণয়।তখন চেয়েও কোনোকিছু শোধরাতে পারবিনা”
“যাতো।গুড নাইট”
বলেই মিরকে বাইরে বের করে দরজা লাগিয়ে দেয় প্রণয়।বাইরে আসতেই হঠাৎ করে হাতে টান লাগতেই সেদিকে তাকায় মির। রিদিকে দেখে চুপ হয়ে যায় সে।রিদি ফিসফিসিয়ে বলে,
“চলুন আমার সাথে”
To be continued…