#আবার_প্রেম_হোক
#নুসরাত_জাহান_মিম
০৭.
অমৃতা পালিয়ে যাবার আগমুহূর্তে তার বিছানার পাশে রাখা টেবিলে একটি কাগজ ভাজ করে সন্তপর্ণে রেখে যাওয়ার উদ্দেশ্যে হাত বাড়াতেই নজরে আসে তার আর তার মা-বোনের সাথে কাটানো একটি সুন্দরতম মুহূর্তের ফ্রেমবন্দী ছবি।ছবিটি দেখে মুখে হাসি ফুটে উঠে তার।মুহূর্তেই যেনো মিলিয়েও যায় সেই হাসিটুকু।চোখেমুখে ভীড় করে অনুতাপের ছোয়ারা।ছবিটার দিকে করুন দৃষ্টিতে তাকিয়ে দীর্ঘশ্বাস ফেলে মনে মনে বলে,
“আমি সত্যিই খুব লজ্জিত মা।এছাড়া যে আর উপায় নেই!”
বলেই বোরকা পরে একটা ওড়না মাথায় পেচিয়ে, মুখে মাস্ক লাগিয়ে বের হয় এক অজানা গন্তব্যে।সে জানেনা তার নেওয়া এই সিদ্ধান্ত কতটুকু যুক্তিযুক্ত হবে।তবুও তার দৃঢ় বিশ্বাস আজকের নেওয়া এই সিদ্ধান্ত আগামীর শ্রেষ্ঠতম সিদ্ধান্তের একটি হবে।এই ভাবনা মন আর মস্তিষ্কে ধারণ করে প্রথমবারের মতো নিজ গন্ডি পেরিয়ে অচেনা এক শহরে দ্বিধাহীনভাবে চললো অমৃতা,পাশে তার এক বুক ভরসার স্থল,তার প্রেমিক পুরুষকে নিয়ে।
চাঁদের রুমের দরজায় অনবরত কেউ ঠকঠক আওয়াজ তুলেই যাচ্ছে।বেশ বিরক্তবোধ করে চাঁদ উঠে এসে দরজা খুলতেই তার খালাকে দেখে বলে,
“খালামনি?”
তিনি চাঁদকে উপেক্ষা করে রুমে ঢুকে শব্দ করে বলে যাচ্ছেন,
“অমি?অমি মা?কোথায় তুই?সবাই তোর অপেক্ষা করছে যে।বিয়ে পড়িয়ে ঢাকার উদ্দেশ্যে বেরুবেওতো?”
চাঁদ অবাক হয়ে বলে,
“অমিকে খুজছো কেন খালামনি?ওতো এখানে নেই”
চাঁদের খালা ভ্রু কুচকে বললেন,
“নেই মানে?আমরা সবাই স্পষ্ট দেখেছি ও তোর পিছু এসেছে”
“আমার পিছু এসেছে?কই নাতো!আসলে রুমে আসবেনা কেনো?”
“আসেনি মানে?”
“সত্যিই আসেনি।কিছু হয়েছে খালামনি?”
“এতোকিছু করার পরেও বলছিস কিছু হয়েছে কিনা?ছেলেরা যে এখনো বিয়েটা করাতে চাচ্ছে এটাইতো সাত কপালের ভাগ্য।মেয়েটাকে এখন কোথায় খুজবো আমি?এই তুই ওকে কোথায় রেখেছিস বলতো?”
চাঁদ ভড়!কে বলে,
“কোথায় রেখেছি মানে?কিসব বলছো খালামনি?আমি অমিকে কোথায় রাখবো?”
চাঁদের খালা চিন্তাগ্রস্ত হয়ে বলেন,
“দেখ মা আমি জানিনা জামাইর সাথে তোর কি হয়েছে বা তাকে কি করে চিনিস।দয়া করে আমার মেয়েটাকে কোথায় লুকিয়েছিস বলে দে।বিয়েটা হতে দে প্লিজ!আমি তোর কাছে হা…”
চাঁদ সাথে সাথে তার খালার হাত ধরে ফেলে বলে,
“ছি খালামনি এসব কী?দেখো।এখানে তাকাও। আমার দিকে তাকাও”
বলেই চোখের চশমাটা খুলে পাশে রেখে দু’হাতে তার খালার হাত ধরে তার দিকে মলিন দৃষ্টি নিক্ষেপ করে বলে,
“আমার চোখ দুটোর দিকে তাকাও খালামনি।দেখো।দেখে বলো এ চোখে কি হিং!সে বা কোনোপ্রকার রাগ দেখতে পাচ্ছো?যেই বোনটাকে ছোট থেকে আপন বোনের তুলনায় এতটুকু স্নেহও কম দেইনি, তার জীবনের এতো সুন্দর মুহুর্ত আমি নষ্ট করে দেবো?কোনোকিছু না জেনে বা ভেবে আমি এমনটা করবো?যে খালামনিকে মায়ের মতো ভালোবাসি তার সম্মান নিয়ে এরকম বা!জে কাজ তোমাদের চাঁদবুড়ি করবে খালামনি?তোমার মন কি তাই বলে?”
চোখে অশ্রু নিয়ে চাঁদের খালা বলেন,
“নারে মা!না।আমি জানি তুই না জেনে কোনো কিছুই করিস না।এমন বি!চ্ছি!রি কাজ তুই করবিনা এও জানি।তবে মায়ের মন তো?কতকিছুই বলে।তোর এই খালামনিকে মাফ করে দিস মা?তখন তোকে ওভাবে না বললে… ”
“আমি বুঝতে পেরেছিলাম খালামনি।তোমার মুখে আমার জন্য যতো বি!ষা*ক্ত বাক্যই বেরুক না কেনো চোখ আর মন যে অন্যকিছুই বলে তা আমি ঢের বুঝতে পারি।বেশি সময় নেই।চলো অমিকে খুজি।হঠাৎ কোথায় যাবে?”
হাপাতে হাপাতে নিমৃতা চাঁদের রুমে এসে তার মা আর চাঁদকে দেখে বলে,
“পুরো বাড়ি খুজেছি মা।আপুকে কোথাও পাচ্ছিনা।চাঁদ আপু আর আপুর রুমটাই বাকি এখন শুধু”
“চাঁদের রুমে নেই।ওর রুমেই চল”
“চলো”
বলেই তিনজনে একসাথে চিন্তিত ভঙ্গিতে অমৃতার রুমের দিকে এগোয়।
অমৃতার রুমে আসতেই তারা দেখতে পায় অমৃতার পরনের সকল গয়না বিছানার উপর রাখা আর বারান্দার দরজাটা খোলা।নিমৃতা আর চাঁদ সেদিকেই যায়।গিয়ে দেখতে পায় এক ওড়নার সাথে কয়েকটা ওড়না বাধা আর গ্রিলের সাথে সেটাকে দড়ির মতো করে বেধে নিচের দিকে রাখা।বেশি উচু নয় বলে যে বেশ সহজেই নিচে নামা যাবে তা সুনিশ্চিত।কেনোনা অমৃতাদের বাড়িটা এক তলা বিশিষ্টই।নিমৃতা চাঁদের দিকে তাকিয়ে বলে,
“আপু!আপু কি পালালো?কেনো পালালো?”
চাঁদ নিমৃতার দিকে তাকিয়ে ভা!ঙা গলায় বলে,
“আম..আমি জানিনা।চল খালামনিকে বলতে হবে”
চিন্তিত ভঙ্গিতে রুমে এসে দেখলো তার খালা একটা কাগজের দিকে তাকিয়ে চোখে জল নিয়েও হাসছেন।চাঁদ কিছু বুঝতে না পেরে বলে,
“খালামনি অমি…”
চাঁদের কথাকে তার খালা ই সম্পূর্ণ করেন,
“পালিয়ে গেছে?”
নিমৃতা পলক ঝাপটে বলে,
“তুমি কি করে জানো?”
“চিঠিতে পড়েছি”
চাঁদ সামনে এসে বলে,
“দেখি কী লিখা এতে?”
চাঁদের খালা কাগজটা ভাজ করতে করতে বলেন,
“মেয়েটা মান সম্মান সব খুই!য়ে দিলোরে!”
“মানে?”
“বয়ফ্রেন্ডের সাথে পা!লি!য়ে!ছে।পা*লা*বেই যখন বিয়েতে রাজি হলো কেন?”
চাঁদ ভ!ড়!কে বলে,
“বয়ফ্রেন্ডের সাথে?সত্যিই পা!লালো?আমাকেতো বলেছিলো তোমাদের সিদ্ধান্তকে মেনে নিয়ে সুখী হওয়ার চেষ্টা করবে।যার জন্যই আমি এই বিয়েটার বি*রু*দ্ধে প্রথমে কিছুই বলিনি”
তীক্ষ্ম দৃষ্টি চাঁদের দিকে নিক্ষেপ করে তার খালা বলেন,
“তুই ওর প্রেমের ব্যাপারে জানতি?”
দৃষ্টি নত করে চাঁদ বলে,
“আ’ম সরি খালামনি”
তাচ্ছিল্যের সুরে তিনি বলেন,
“সবাই সবটা জানে।জানিনা কেবল আমি!এই হলো আমার মেয়েরা!”
নিমৃতা বলে,
“মা তুমি…”
গ*র্জে উঠে চাঁদের খালা বলেন,
“একদম চু*প!আরেকটা কথাও শুনতে চাইনা আমি”
চাঁদ করুন চোখে তাকিয়ে বলে,
“খালামনি নিমু কিছু জানেনা।ওকে বকো না প্লিজ”
চাঁদের খালা রুম থেকে বেরুতে বেরুতে বলেন,
“কী করবো না করবো সেটা এখন আমার বিষয়।কেউ কোনোপ্রকার নাক গ!লা!বি না”
বলেই ক্ষিপ্র গতিতে ছুটেন বিয়ের আসরে।পিছু নেয় চাঁদ আর নিমৃতাও।
“অমৃতাকে কোথাও খুজে পাওয়া যাচ্ছেনা।ক্ষমা করবেন বিয়েটা হওয়া সম্ভব না।আপনারা বরং আসুন”
বলেই মাথা নত করে ফেললেন অমৃতার মা।
প্রণয়ের ফুপি তে*তে উঠে বলেন,
“বিয়ে হবেনা আর আসুন মানে?ছেলেখেলা পেয়েছেন নাকি হ্যা?যখন যার যেভাবে ইচ্ছা অপ!মান করে যাচ্ছেন।বোনঝিকে দিয়ে অ!পমা!ন করিয়ে স্বাদ মেটেনি?এখন বলছেন মেয়েকে পাচ্ছেন না?”
চাঁদের খালা মাথা নিচু রেখেই বলেন,
“পুরো বাড়ি খুজেছি কোথাও অমি নেই।এই মুহুর্তে বিয়েটা কি করে করাবো বলবেন আপা?”
“কী করবেন মানে?মেয়েকে খুজবেন খুজে আনবেন।যদি না মেয়ে কোনো ছেলের সাথে পা!লা!য় তো”
চাঁদকে দেখে প্রণয়ের চাচি সামনে এসে বলেন,
“এই মেয়েই হয়তো মেয়েকে কোথাও লুকিয়েছে।এই মেয়ে সমস্যা কী তোমার?আমাদের ছেলেকে অপ!মান করে পেট ভরেনি?এখন আবার নাটক শুরু করেছো?”
চাঁদ কিছু বলার পূর্বেই চাঁদের খালা বলেন,
“মেয়েটা কোথায় গেছে জানিনা।হঠাৎ এমন কেনো করলো বুঝতে পারছিনা।দয়া করে আপনারা আমাদের বিষয়টা বুঝার চেষ্টা করুন।মেয়ে ছাড়াতো বিয়ে করানো যাবেনা।আমরা সত্যিই খুব লজ্জিত”
হঠাৎ করেই পুরুষালি গম্ভীর কন্ঠে চমকে উঠে সকলে,
“কে বলেছে মেয়ে নেই?দু-দুটো মেয়ে সামনে দাঁড়িয়ে আছে আপনি তাও বলছেন মেয়ে নেই?একজন অবশ্য খুবই ছোট,আমার সাথে যাবেনা।তবে অপরজনকে বিয়ের উপযুক্ত বলেই মনে হচ্ছে”
চমকে তাকায় চাঁদ প্রণয়ের দিকে।চাঁদের মা সামনে এসে বলেন,
“কি বলতে চাইছো তুমি?”
খানিকটা কেশে প্রণয় বলে,
“এটাই যে,যার জন্য আমার বিয়েটা ভা!ঙ!তে চলছে তাকে দিয়েই আমি তা জোড়া লাগাতে চাই শাশুড়ী আম্মু”
নিমৃতা অবাক হয়ে বলে,
“ভাইয়া আপনি অমিপুর বদলে চাঁদ আপুকে চাচ্ছেন?”
প্রণয় ভাবলেশহীনভাবে বলে,
“সেরকমই অনেকটা।”
চাঁদের বাবা বললেন,
“তোমাকে দেখে যথেষ্ট ভদ্রই মনে হয়।তবে এরকম চিন্তাভাবনা দেখে আমি অসন্তুষ্ট হচ্ছি”
প্রণয় চাঁদের বাবার সামনে এসে বলে,
“অসন্তুষ্ট হবেন না আব্বু।আপনার মেয়ে ঢামেকে পড়তো এটা অজানা নয় কারোরই।আর আমাকে যে সে ভালোকরেই চেনে তাও নিশ্চয়ই এতক্ষণে বুঝেছেন।অমৃতা বিয়েটা করবেনা বলেই হয়তো পালা!লো।আর আপনার মেয়েওতো চেয়েছে যাতে ওর সাথে আমার বিয়েটা না হয়।কেনো জানেন?যাতে করে আপনার মেয়েই আমার স্ত্রী হয়।আমি কেবল তার ইচ্ছেটাই পূরণ করতে চাচ্ছি”
এরূপ কথা শুনে ভ!ড়!কা!নো দৃষ্টি নিক্ষেপ করে চাঁদ প্রণয়ের দিকে।আর প্রণয়কে আবারও বলতে শুনে,
“আর বিশ্বাস করুন তাকে কোনোপ্রকার অযত্নে রাখা হবেনা।আমার মা-বাবা নিজ মেয়ের মতোই আদর করবেন বলেই আমার বিশ্বাস”
চাঁদের বাবা গম্ভীরভাবে বললেন,
“তুমি হঠাৎ আমার মেয়েকে কেনো বিয়ে করতে চাচ্ছো?”
“বোনকে ভা!গি!য়ে দিয়ে আমার সম্মান টা নষ্ট করলোনা?সাথে আপনাদেরও।আমি সবার সম্মান ধরে রাখতে চাই বলেই প্রস্তাব দিলাম।আম্মু আব্বুকে একটু বুঝান না প্লিজ”
শেষের কথাটা চাঁদের মায়ের দিকে তাকিয়েই বললো প্রণয়।প্রণয়ের এভাবে চাঁদের বাবা-মাকে আব্বু-আম্মু ডাকাতে সেখানে উপস্থিত সকলেই ভড়!কালো।বিশেষ করে প্রণয়ের নিজ পরিবার।
চাঁদের মা হাসফাস করে বললেন,
“দেখো বাবা এভাবে না জেনে মেয়েকে হঠাৎ বিয়ে…”
প্রণয় চাঁদের মা’কে থামিয়ে দিয়ে বলে,
“না জেনে কি করে আম্মু?’ছেলে যেকোনো মেয়ের জন্যই পার্ফেক্ট।সচক্ষে না দেখলে এটা আমি বিশ্বাস ই করতাম না।’একটু আগে এ কথাটা আমি আপনার মুখেই শুনেছি।আমাতে সমস্যা কোথায়?”
চাঁদের মায়ের পরিবর্তে চাঁদের বাবা বললেন,
“তুমি আমায় আর চৈত্রের মা’কে যেভাবে আব্বু আম্মু বলে আপন করে নিচ্ছো ঠিক সেভাবেই আমাদের মেয়েটাকে বিয়ে করে নিয়ে ভালোবাসতে পারবে তো নাকি হুজুগের বশেই বলছো?”
প্রণয় নির্দ্বিধায় বললো,
“আমি মনে করি বিয়ে যেহেতু একটা পবিত্র বন্ধন,এতে আল্লাহর বরকত থাকে।সেহেতু আল্লাহই সবটা ঠিক করে দেবেন অবশ্যই”
চাঁদের বাবা বললেন,
“আমি আমার পরিবারের সাথে আলাপ করে জানাচ্ছি”
“আপনাকে শ্বশুর বানানোর অপেক্ষায় বসে রইলাম আব্বু”
চাঁদের রুমে সকলে উপস্থিত হতেই চাঁদকে সবাই জেঁ!কে ধরে।কেনো সে অমৃতাকে পা!লা!তে সাহায্য করলো।চাঁদের পরিবর্তে তার খালা বললেন,
“অমিকে চাঁদ পালা!তে কোনো সাহায্যই করেনি।অমি নিজেই পালিয়েছে।ওর বয়ফ্রেন্ডের সাথে।মেয়েটা নাক কা*টি!য়ে ছাড়লো।ভাগ্যিস সবাই ভেবেছে চাঁদের জন্য মেয়েটা নেই।নাহলে কেলে*ঙ্কা*রি হয়ে যেতো”
চাঁদের মা বললেন,
“তাহলে এখন কি করবো?”
চাঁদের খালা বললেন,
“ছেলে কিন্তু ভালোই আপা।তুই চাঁদকে দিয়ে দে।এতে করে অমির ব্যাপারটা ধামাচাপা দেওয়া যাবে”
বিস্ফোরিত নয়নে চাঁদ তাকায় তার খালার দিকে।তাকিয়ে থেকে বলে,
“তুমি এমনটা কী করে বলছো খালামনি।ঐ ছেলেকে বিয়ে করার প্রশ্নই আসেনা”
কারোর কিছু বলার পূর্বেই চাঁদের বাবা সকলকে উদ্দেশ্য করে বলেন,
“তোমরা বাইরে যাও।আমার মেয়ের সাথে আমার একান্ত কিছু কথা আছে।কেউ দ্বিতীয়বার প্রশ্ন করবেনা কেনো বাইরে যেতে বলেছি।যেতে বলেছি মানে যাবে।”
এ কথা শুনে কেউই সেখানে থাকার প্রয়োজনবোধ করলোনা।দরজার সামনে সকলে যেতেই একটা ছায়া সেখান থেকে সরে পড়লো। চাঁদের বাবা দরজা আটকে দিয়ে ভেতরে এসে চাঁদের সম্মুখে দাড়িয়ে বলেন,
“ছেলে কি কোনো নে/শাপানি করে মা?”
চাঁদ বাবার দিকে ভ্রু কুচকে তাকিয়ে বলে,
“এ কথা কেনো বলছো আব্বু?”
“যা জিজ্ঞেস করেছি উত্তর দাও”
“না।করেনা”
“ছেলের নিশ্চয়ই চরিত্রে সমস্যা আছে।মেয়ে নিয়ে ঘুরে বেড়ায়?”
চাঁদ ভ্রু কুচকে বলে,
“এসব কি বলছো আব্বু।এমনটা কেনো হবে”
“তাহলে অবশ্যই বড়দের সম্মান করেনা।বড়লোকি ভাব দেখায়?”
“এগুলো কেনো বলছো আব্বু?”
“বুঝেছি নিশ্চয়ই ভু*য়ো ডাক্তার?”
“কিসব বলছো!সে এগুলোর কিছুইনা”
এবার বেশ শান্ত ভঙ্গিতেই চাঁদের বাবা ইহাদুল ইসলাম বললেন,
“তাহলে সমস্যা কোথায় মা?তুই কেনো বিয়েটা করতে চাচ্ছিস না?”
এ কথার উত্তরে আর কিছুই বলতে পারলোনা চাঁদ।দৃষ্টি নত করতে নিলেই ইহাদুল ইসলাম বলেন,
“দৃষ্টি নত করলেই মেয়ের দৃষ্টি পড়তে পারবোনা এতোটা অবুঝ বাবাও আমি নই।আমি জানিনা ছেলেটাকে তুই কিভাবে চিনিস বা তোর কে হয়।তোদের সম্পর্ক কী।কেনোইবা হুট করে ভাইয়ের সাথে এতো দূর পাড়ি জমিয়েছিস।তবে কিছুটা হলেও আজ আন্দাজ করতে পারছি হয়তো।ছেলেটার মধ্যে কোনো ভে!জা!ল নেই রে মা।একজন বাবার থেকে বেশি তার মেয়েকে কেউ ভালোবাসতে পারেনা।পারবেওনা। তবে ছেলেটার চোখে তোর জন্য আমি ভালোবাসার বিশাল সমুদ্র দেখতে পেয়েছি।হয়তো সবাইকে বোঝাচ্ছে বিয়ে ভেঙে যাওয়ায় তোকে বিয়ে করবে বা প্র*তি*শো*ধপ্রবণ তবে আমার কেনো যেনো মনে হচ্ছে তোকে বিয়ে করার জন্যই ছেলেটা এতদূর এসেছে।নাহলে অপরিচিত কারো বাবা-মা’কে এভাবে অনায়াসে আম্মু-আব্বু ডাকা যায়না রে মা।আর তুই যত ঘৃ*ণা মূলক কথাই তার বি!রু*দ্ধে বলিস না কেন তোর চোখেও যে তার জন্য মায়াটা আমি দেখেছি।এইযে তাকে নিয়ে বাজে কথা বলায় তোর চোখে ক্রো!ধ স্পষ্ট এটা নিয়ে কী বলবি বল?”
চাঁদকে চুপ করতে দেখে ইহাদুল ইসলাম বলেন,
“কি হলো বল”
চাঁদ ইতস্তত করতে করতে বললো,
“আ..আসলে আব্বু আমি এ বিষয় নিয়ে হয়তো ক্লিয়ারলি বলতে পারবোনা তবে তাকে বিয়ে করতে পারবোনা যে!”
“কী সমস্যা?”
“তাতে সমস্যা নেই।সমস্যা আমাতে।আমি তার উপযুক্ত নই”
“ক*ষি*য়ে থা!প্প!ড় লাগাবো একটা!আমার চাঁদ মেয়ে ঐ আকাশের চাঁদের চেয়েও অপরূপ।ঐ চাঁদের চেয়েও আমার মায়ের মন বিশাল!সে কেনো উপযুক্ত হবেনা?”
“আব্বু…”
“তুই এটা মানিসতো যে বাবা-মায়ের সিদ্ধান্ত ক্ষেত্র বিশেষ বাদে অন্যথায় সন্তানের জন্য খারাপ হতে পারেনা?”
“হিম”
“তাহলে আজও এই বাবাকে ভরসা কর।দেখবি তোর বা তার কারোরই খা!রাপ হবেনা”
“আব্বু তুমি…”
“ছেলেবেলায় উপরের দিকে ছু!ড়!লে যেভাবে বিশ্বাস করতে আব্বু ধরেই ফেলবো আজও সেভাবে আব্বুর আশ্বাসে বিশ্বাস করে বিয়েটা করে নেওয়া যায়না মা?”
এ কথার পরে চাঁদ আর দ্বিমত করতে পারেনি।সবটা মেনে নিয়েছে।বাইরে এসে সকলের মত নেয়ার পর চাঁদের গায়ে জড়ানো হয় মেরুন রঙের এক ভারী শাড়ি যেটা প্রণয় নিজেই এনেছে।তার কাছে এ শাড়ি কি করে এলো বা সে এটা কেনো এনেছে জিজ্ঞেস করার মতো সাহস কারোরই নেই।তাই এর উত্তর অজানাই থেকে গেলো।চাঁদকে সাজানো হলো প্রণয়ের বঁধুরূপে।আংটিবদল হলো দুজনের।প্রণয়ের কথানুযায়ী চাঁদের হাতে প্রণয়ের নামের মেহেদীও দেওয়া হলো।এমনকি তাদের দুজনকে হলুদও লাগানো হলো ছোটখাটোভাবে।সবটাই প্রণয়ের ইচ্ছানুযায়ী।সকলে বিস্মিত,স্তম্ভিত এবং চূড়ান্তভাবে অবাক!ছেলেটা যেনো চাঁদকে বিয়ে করতেই এসেছে।চাঁদ না করেছে অমত না দেখিয়েছে আগ্রহ।সে ছিলো পুরোটা সময়ে নির্বাক,ভাবলেশহীন।অতঃপর বা*ধা বি!প!ত্তি পেরিয়ে দুজনের মাঝে বিয়ে নামক পবিত্র বন্ধন সৃষ্টি হলো।কয়েক ঘন্টার ব্যবধানে ভীষণ কাছে চলে এলো তারা,একে অপরের থেকে ভীষণ দূরে সরে গিয়েছিলো যারা।কাছে এসেও মনের দূরত্ব দীর্ঘই রয়ে গেলো।তবুও কি তাদের আবার প্রেম হবে?
To be continued…