আবার_প্রেম_হোক #নুসরাত_জাহান_মিম ২২.

0
1087

#আবার_প্রেম_হোক
#নুসরাত_জাহান_মিম

২২.
“একটা প্লেবয়ের জন্য চেহারার এ দশা করেছো মেয়ে?”

মিরের কথাটি শুনে চোখজোড়া বন্ধ করে ঠোট কা!ম!ড়ে রিদি শ্বাস নিয়ে বলে,

“ছাড়ুন বাইরে যাবো”

“চেহারার এই বাজে অবস্থা নিয়ে বাইরে যাবে?এরপর কেউ জিজ্ঞেস করলে কী বলবে?এটাই যে একটা প্লেবয়ের রিলেশনশিপের ব্যাপারে জেনে কেদে কে!টে অস্থির?”

রিদি কোনো জবাব দেয়না।তাই মিরই আবার বলে,

“শোনো মেয়ে,আমি এ জীবনে যতগুলো রিলেশন করেছি অতোটা বয়সও বোধহয় তোমার হয়নি।একজন প্লেবয়ের দিকে ঝুকে যাওয়ার পূর্বেই নিজেকে সংযত করো।জীবন সুন্দর হবে”

বলে আর এক মুহুর্ত দাড়ানোর প্রয়োজনবোধ করেনা মির।তৎক্ষনাৎ প্রস্থান করে।

অরণের পাশে বসে এক ধ্যানে চেয়ে চুলে হাত বুলাচ্ছে মিরা।ছেলেটা আগের তুলনায় অনেকটাই শুকিয়ে গিয়েছে।চুলগুলোও বেশ বড় হয়েছে।অরণের মাথায় বিলি কাটতে কাটতে হঠাৎ করেই চুলগুলো এলোমেলো করে দিয়ে মিরা বলে,

“কবে ঠিক হবিরে?আর কত অপেক্ষা করাবি তুই?এবার অন্তত কথা বল।একটুখানি বল?”

অতঃপর দীর্ঘশ্বাস ফেলে অরণের ক্যানোলা লাগানো হাতটা আস্তেধীরে নিজের হাতের মুঠোয় নিয়ে বলে,

“জানিস?প্রণয় বিয়ে করেছে।তাও আবার চাঁদকে।বিশ্বাস হয়?প্রথমে মিরের মুখে শুনে আমিও বিশ্বাস করিনি।কিন্তু সচক্ষে দেখার পর মানতে কষ্ট হচ্ছিলো।প্রণয় এমনটা কী করে করতে পারলো রে?যেই মেয়ের জন্য ওর বেস্ট ফ্রেন্ডের এই দশা সেই মেয়েকে ও কী করে বিয়ে করলো?যেই মেয়ের তোকে আঘা!ত করতে একটুও হাত কাপেনি তাকে বিয়ে করতে প্রণয়েরও তো বুক কাপেনি রে!একটাবার তোর কথা ওর মনে হলোনা?ও এমনটা কী করে করতে পারে অরণ?যাকে শাস্তি দেবার কথা তার সাথে দিব্যি সংসার করছে?”

আবারও থেমে অরণের কপালে-গালে হাত বুলিয়ে বলে,

“প্রমাণের অভাবে ঐ মেয়েকে সাজা দিতে পারছিনা।তবে চিন্তা করিস না একদিন ও ওর শাস্তি ঠিকই পাবে।বিধাতা ঠিকই দেবেন।তিনি ছাড় দেন কিন্তু ছেড়ে দেননা।তোর অবস্থার জন্য যারা যারা দায়ী সকলেই শাস্তি পাবে”

কারো কন্ঠস্বর পেয়ে পেছনে ঘুরে তাকায় মিরা,

“কোন মেয়ের কথা বলছেন আপু?কে অরণ ভাইয়ার এ অবস্থা করেছে?”

মিরা স্মিত হেসে বলে,

“বললে বিশ্বাস করবে?করবেনাতো।তাই না বলাই ভালো”

ছেলেটা সামনে এসে অরণকে চেক করতে করতে বলে,

“কেনো করবোনা আপু?করার মতো হলে অবশ্যই করবো।আর আপনারা যদি জানেনই কাজটা কে করেছে আপনাদের উচিত তার বিরুদ্ধে মা!মলা দায়ের করা”

“নিজের বান্ধবীকে চৌদ্দ শিকের ভেতরে দেখতে পারবেতো ফায়ান?”

ভ্রু কুচকে ছেলেটা বলে,

“বান্ধবী?কোন বান্ধবী?কার কথা বলছেন আপনি?”

“কেনো তোমার প্রিয় বান্ধবীকে এই পাঁচ বছরে একবারও মনে করোনি নাকি?”

মিরার কথা শুনে হৃদস্পন্দন দ্রুত গতিতে ওঠানামা করে ছেলেটার।ঘনঘন শ্বাস নিয়ে সে বলে,

“আপ..আপনি কার কথা বলতে চাচ্ছেন?”

“জানতাম বিশ্বাস করবেনা।অবশ্য তাতে আমার কিছু যায় আসেনা”

“যেই মেয়ে বছর পাঁচেক আগেই উধাও হয়ে গেছে সেই মেয়ে অরণ ভাইয়াকে মে!রেছে এটা বিশ্বাস করতে বলছেন আপনি আমায়?”

বিদ্রুপ হেসে মিরা বলে,

“প্রিয় মানুষের করা পা!পও পূণ্য লাগে জানোতো ফায়ান?আর রইলো উধাও হওয়ার ব্যাপার।তো এটাতো তুমিও জানো একজন খু!নি খু*ন করার পর ধরা খাওয়ার জন্য সেখানে বসে থাকবেনা?”

ছেলেটা কিছু বলার পূর্বেই একজন লোক এসে বলে,

“ড.আরফিদ ফায়ান?”

পিছু ঘুরে চিরচেনা বন্ধুকে বছরখানেক পর দেখে আবেগে দৌড়ে তাকে জড়িয়ে ধরে ফায়ান বলে,

“কেমন আছিস মামা?আর অবনীর কন্ডিশন এখন কেমন?”

ফায়ানকে একহাতে চাপর মেরে ইফাদ বলে,

“বান্ধবীর কথা জিজ্ঞেস করতে ভুলিস না শা*লা!”

ফায়ান হেসে বলে,

“আহহা বলতো!আর ডেলিভারি কবে ওর?”

“আছে আলহামদুলিল্লাহ।দেরি আছে ভাই।সবেতো দু’মাস হলো”

“ঢাকা এসে পড়েছিস একবারে?”

“আমাদের দুজনের ফ্যামিলিই ফাইনালি মেনেছে।না এসে পাড়লাম না”

ইফাদের কাধে হাত রেখে ফায়ান বললো,

“যাক ভালোই হলো।তুই একটু অপেক্ষা কর আমি আধঘন্টার মধ্যে আসছি।অবনীকে দেখিনা অনেকদিন।এখনতো আমার ভাতিজা বা ভাতিজি আসছে।এখন দেখা যেনো বাধ্যবাধকতায় এসে ঠেকেছে!না গেলেতো আর রক্ষে নেই।তোর বউ আমায় কাচা গি!লে খাবে”

ইফাদ হেসে বললো,

“আর কত অপেক্ষা করবি?এবার তোরও বিয়ে করা উচিত”

ফায়ান প্রতুত্তোর করেনা।তাই ইফাদ কিছু বলতে নিলে সামনে মিরাকে দেখে থেমে যায় সে।অতঃপর অরণের সামনে এসে মিরাকে বলে,

“অরণ ভাইয়ার কন্ডিশন আগের চেয়ে বেটার হয়েছে আপু?”

গম্ভীরভাবে মিরা বলে,

“খানিকটা”

এরপর আবারও মিরা কেশে বলে,

“তোমাদের একটা সত্যি জানা উচিত।অবশ্য তোমাদের অধিকারই আছে জানার।”

ইফাদ বলে,

“মানে?”

“তোমাদের বান্ধবীরতো বিয়ে হলো আজ দু’দিন”

ইফাদ ভ্রু কুচকে বললো,

“বান্ধবী?কোন বান্ধবী?”

“তোমাদের প্রিয় টপার বান্ধবী”

ইফাদ বিস্ময় নিয়ে বললো,

“চাঁদ?”

ফায়ান সন্দেহজনকভাবে মিরার দিকে তাকিয়ে বললো,

“চাঁদের ব্যাপারে আপনি কী করে জানেন?”

“জানারই কথা।বন্ধু কাজই করেছে এমন”

ফায়ান ভ্রু উচিয়ে বললো,

“বুঝিনি?”

“দুর্ভাগ্যবশত ঐ মেয়ে আমার বন্ধুর বউ হয়ে গেছে।যেটা আমি বা আমরা কেউই চাইনি।”

ফায়ানের শ্বাস খানিকটা আটকাচ্ছে।মস্তিষ্ক কেমন ফাকা ফাকা লাগছে।চোখের সামনে সবকিছুই ঘোলাটে হচ্ছে তার।নিজেকে সামলাতে চোখজোড়া বন্ধ করে সে।অতঃপর অনুভব করে চাঁদের প্রতি তার প্রথম ভালোলাগার সুখানুভূতি।স্মৃতির পাতায় ভেসে উঠে সেই সুন্দরতম মুহুর্তটি,যখন সে জানতোও না নীরবে নিভৃতে সবার অগোচরে এই একটি মেয়ে তার সমস্ত হৃদয় জুড়ে বিরাজমান হবে,
.
.
.
.
.
.
.
বক্ষস্থল থেকে চাঁদ সরে যেতেই টনক নড়ে ফায়ানের।নিজেকে ধাতস্থ করে চাঁদকে সে বলে,

“কী হলো বলছেন না কেনো কিছু?”

চাঁদের জবাব না পেয়ে তাকে মনোযোগ দিয়ে কোথাও তাকিয়ে থাকতে দেখে তার দৃষ্টি অনুসরণ করে সেও তাকায় সে পানে।অতঃপর নজরে আসে সাদা রঙের শার্ট পরহিত এক লম্বাটে ছেলে গিটার নিয়ে গানের সুর তুলছে।দৃষ্টি তার চাঁদেতে নিবদ্ধ,

♪♪♪…তবে তাই যদি হয়,
করি নাকো ভয়,
জানি আধার রাত ঘনিয়ে হবে সূর্যোদয়।
আমি ভেবে নিলাম,
তুমি সেই লাল গোলাপ।
যারে নিরন্তর পাহারা দেয়,
এক কাটার বাগান!…♪♪♪

To be continued….

[বিঃদ্রঃ সতেরো নম্বর পর্ব থেকে অতীত শেষ হয়েছিলো।যাদের মনে নেই আরেকবার পড়ে নেবেন।ঈদের ব্যস্ততার মাঝে এতোটুকুই লিখতে পেরেছি।দুঃখিত!সম্ভব হলে রাতে আরেকটা পর্ব দেবো বা কাল সকালে।]

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here