#আবার_প্রেম_হোক
#নুসরাত_জাহান_মিম
২৬.
ড্রয়িংরুমে বসে টিভি দেখছিলো রুবা আর শিফা।রিদি রান্নাঘরে ছিলো চাঁদের সাথে।তিনজনই এরূপ চেচানো শুনে দরজার কাছে দৌড়ে আসে।এসেই ব্যারিস্টারি পোশাকের মেয়েটাকে দেখে তার উপর হুমড়ি খেয়ে পড়ে তারা।জাপটে ধরে তিনজনই।অতঃপর মেয়েটা হেসে বলে,
“ছাড় ছাড়!ম!রে যাবোতো”
তিনজনই ছেড়ে দেয় তৎক্ষনাৎ।রুবা কোমড়ে হাত দিয়ে নাক ফুলিয়ে বলে,
“ম!রবে তোমার দুশমন!”
খিলখিল করে হেসে দেয় মেয়েটা।অতঃপর বলে,
“দেখি সর তোরা”
বলেই মূর্তির মতো জমে থাকা রামিমের দিকে এগোয় সে।সামনে গিয়ে পা উচু করে দাঁড়িয়ে ছেলেটার বাম গালে আলতো চুমু খেয়ে বলে,
“কী জান?কেমন দিলাম হা?”
মেয়েটার কথায় সম্বিৎ ফেরে রামিমের।কপাল কুচকে বলে,
“তুমি আসবে বললে তো আমি এয়ারপোর্টই যেতাম”
“আর তোমরা যে এখানে এসে প্রণয় ভাইয়ের শ্বশুরবাড়ি ফূর্তিতে মেতে উঠেছো বলেছিলে আমায়?”
“বললে কী উড়ে চলে আসতি নাকি?”
রায়হানের কটাক্ষমূলক বানীতে পেছনে ফিরে তাকায় সবাই।অতঃপর রায়হানকে দেখে মেয়েটা মিনিট দুয়েকের ন্যায় চুপ হয়।এরই মাঝে শোনা যায় চাঁদের কন্ঠস্বর,
“ইনি কে রুবা?”
রুবা জবাব দেয়,
“আমাদের উশ্মিপু।উজান ভাইয়ের বড় বোন”
রামিম চাঁদকে বলে,
“আমার গার্লফ্রেন্ডও বলতে পারো”
কপাল কুচকে চাঁদ জিজ্ঞেস করে,
“মানে?”
উশ্মি শিফাকে জিজ্ঞেস করে,
“আমাদের ভাবি কইরে?”
শিফা স্মিত হেসে বলে,
“তোমার সামনের মেয়েটাইতো ভাবি”
শিফার কথায় চাঁদের দিকে তাকায় উশ্মি।চাঁদকে কিছুক্ষণ পর্যবেক্ষণ করে বলে,
“ভাইয়ার চয়েজ তো মারাত্মক শিফু!এজন্যই বুঝি সূদুর টেকনাফ চলে এসেছে?তা ভাবিজান আমার ভাইয়াকে কেমন লেগেছে তোমার হা?”
চাঁদ ইতস্তত করছিলো।এমন সময়ই সেখানে উপস্থিত হয় মির।মিরই চাঁদের হয়ে জবাব দেয়,
“তোমার ভাইয়া তার প্রেমিক পুরুষ উশ্মিতা”
রায়হান,রামিম,উজান আর উশ্মি একসাথেই বলে,
“কীহ!”
মির ওদের পানে তাকিয়ে বলে,
“জ্বি!”
উশ্মি মিরের সামনে এসে বলে,
“তাই নাকি মির ব্রো?ক্যাম্নে কী?”
রিহা কিছু বলতে নিলেই চাঁদ উশ্মির সামনে এসে বলে,
“দেখুন আপু…”
উশ্মি কপাল কুচকে চাঁদের দিকে তাকিয়ে বলে,
“এক্সকিউজ মি ভাবি?কে তোমার আপু হা?আমি প্রণয় ভাইয়ের থেকে তিন বছরের ছোট বুঝেছো?সেই হিসেবে আমি তোমার ননদ লাগি।নাম ধরে ডাকবে ওকে?”
“ইম…আচ্ছা।কী যেনো নাম আপনার?”
“আগে তুমি করে বলতে শেখো তারপর বলছি”
চাঁদ উশ্মির জবাব না দিয়ে ডাইনীং টেবিল থেকে পানির গ্লাসে পানি ভরে তার সামনে এসে কাধ থেকে ব্যাগ নামিয়ে দিয়ে পানি এগিয়ে বলে,
“নাও মেয়ে খাও।আর বলো নাম কী তোমার?”
মিষ্টি হেসে পানি নিয়ে আশেপাশে কিছু খুজে উশ্মি বলে,
“সোফা নেই ভাবি?”
চাঁদ ডাইনীং এর একটা চেয়ার উশ্মির দিকে এগিয়ে দিয়ে বলে,
“তোমার ভাবিরাতো বড়লোক না ব্যারিস্টার ননদিনী।এই চেয়ারটাতেই বসো নাহয়”
উশ্মি চেয়ারে বসে পানিটুকু খেয়ে বলে,
“চাঁদের মতো ভাবি পেয়েছি বড়লোক দিয়ে ঘাষ কাটার আর কীই বা দরকার ভাবিজান?আমি উশ্মি।তোমার নাম কী গো?”
চাঁদের আগে রিদিই জবাব দেয়,
“চাঁদের মতো ভাবির নামও কিন্তু চাঁদই ভাবি”
উশ্মি রিদির পানে চেয়ে বলে,
“আয়হায় বলিস কী?ভাবির নামও চাঁদ?”
রিদি জবাব দেয়,
“হ্যা ভাবি।ভাবির নাম চাঁদ”
উশ্মি কিছু বলার পূর্বে চাঁদ রিদিকে বলে,
“তুমি উশ্মিকে ভাবি বলছো কেন রিদু?”
শিফা হেসে বলে,
“কারণ উশ্মিপু রিদুর ভাবিই।ইভেন আমারও,রুবারও।সবারই”
“মানে?”
উশ্মি হেসে বললো,
“রামিমের কথাটা বিশ্বাস হয়নি তোমার?”
“রামিম ভাইয়া?ওহ!তুমি সত্যিই তার গার্লফ্রেন্ড?”
“হ্যা ভাবিজান”
রিহা উশ্মিকে বললো,
“বিয়েশাদি কবে করছো উশ্মি?ব্যারিস্টার তো হয়েই গেলে ফাইনালি”
উশ্মি রিহার দিকে চেয়ে বলে,
“তুমিতো আমারও আগে ডাক্তার হয়েছো।চাকরি-বাকরিও করছো।তুমি যেদিন করবে তারপরেই আমি করে ফেলবো আপু”
রিহা দীর্ঘশ্বাস ফেলে বলে,
“অপেক্ষাতো করতে পারবেনা মনে হয়”
“কেনো?”
“আমাদের সার্কেলের কেউই অরণ ঠিক না হওয়া অব্দি বিয়ে করবোনা”
রুবা রিহাকে বললো,
“প্রণয় ভাইয়া যে করলো?”
রিহা জবাব দেয়,
“কেনো করেছে তা আমরা কেউই জানিনা।ভেবেই নিয়েছিলাম শা*লাটা ব্রাহ্মণ হয়ে যাবে”
বলতে বলতেই হেসে দেয় রিহা।রামিম রিহাকে জিজ্ঞেস করে,
“তবে এই পরীটাকে বিয়ে করলো কিভাবে?আর মির যে বললো প্রেমিক পুরুষ?সেদিননা চাঁদ বললো ওরা প্রেম করেনি?”
মির বলে,
“আরেএ রামিম।প্রেম না করলে প্রেমিক পুরুষ হওয়া যায়না নাকি?”
উশ্মি জিজ্ঞেস করে,
“সেটা কি করে ভাইয়া?”
“তোমাদের প্রণয় ভাই আর এই ঘসেটি বেগম তো চোখে চো….”
মিরকে থামিয়ে দিয়ে চাঁদ বলে,
“আহা ভাইয়া।থামোতো তুমি।মেয়েটা জার্নি করে এলো রেস্ট নিয়ে নিক।চলো উশ্মি”
বলেই উশ্মির ব্যাগ এক হাতে আর অপরহাতে উশ্মির হাত ধরে রুমের দিকে এগোয় চাঁদ।
সন্দেহজনক চোখে উশ্মি উজানের দিকে তাকায়।তাকিয়ে কি যেনো ইশারা করে ভাইকে।উজানও উশ্মিকে ইশারায় আশ্বস্ত করে।উশ্মিকে নিয়ে চাঁদ চলে যেতেই উজান মিরকে বলে,
“মির ভাই!ভাবি এভাবে তোমায় থামিয়ে দিয়ে চলে গেলো কেনো?আর ভাই-ভাবির প্রেম ছিলো?আর আমরা জানি ও না!”
রায়হান গম্ভীরভাবে বলে,
“প্রণয় এ ব্যাপারে আমায়ও বলেনি মির”
মির রায়হানের দিকে তাকিয়ে বলে,
“এ ব্যাপারে ওতো নিজেকেই কখনো জানায়নি।বাকিদের কী জানাবে রায়হান?”
“মানে?”
“মানেটা সবাইকে রাতে বলবো ঠিক আছে?আজ কিন্তু কেউ ঘুমাবেনা বুঝেছো?এই রুবা শোনো”
রুবা মিরকে বলে,
“হ্যা ভাইয়া বলো?”
“তুমি কষ্ট করে চৈত্র ভাইকে গিয়ে জিজ্ঞেস করবে তাদের এ বাড়ির ছাদটা অনেকরাত পর্যন্ত খোলা থাকে কিনা?বা রাতে যেতে চাইলে চাবি টাবি দিতে পারবে কিনা?”
বিস্ময়ে রুবার চোখ কপালে!সে আমতা আমতা করে বলে,
“আ…আমি ভাইয়া?”
“হ্যা তুমি।কেনো সমস্যা?”
“না..নাতো!”
“আচ্ছা তাহলে জিজ্ঞেস করে আমায় জানিও”
“ঠিক আছে ভাইয়া”
রিহা কপাল কুচকে মিরকে জিজ্ঞেস করে,
“তুই ঠিক কী করতে চাচ্ছিস বলতো?”
ভাবলেশহীনভাবে মির বলে,
“কী আবার?ওদের ভাই-ভাবি লাগে ওরা।ওদের ব্যাপারে জানতেই পারে।ইটস নরমাল খালা”
“মানে তুই প্রণয়-চাঁদের ব্যাপারে সবটা জানাবি ওদের?”
“জানাবো আর কী?অলরেডি অনেকটা জেনে গেছে”
“মানে?কিভাবে?”
“তন্ময়,রুবা,শিফা আর রিদিতো প্রণয়-চাঁদের ব্যাপারে অনেককিছুই জানে।আমি জানিয়েছি”
উজান তৎক্ষণাৎ ভড়কে বলে,
“কী!তন্ময়!তুই আমায় ধোকা দিলি?তাও এভাবে?”
তন্ময় চেয়ারে বসে মোবাইলে মনোযোগ রেখেই বলে,
“তুই সেদিন আমার রুম থেকে না গেলেইতো সব শুনতে পারতি ভাই”
উজান বলে,
“সেদিন বলেছে?শিট!”
রায়হান মিরকে বলে,
“যা গেছে গেছে মির।তুমি আবারও সবটা আমাদের শোনাবে।বুঝেছো?আমিওতো জানি এই নিরামিষটা কতখানি আমিষ ছিলো”
রামিমও রায়হানের সাথে তাল মিলিয়ে বলে,
“আমারও কিন্তু প্রণয় প্রেমিক হিসেবে কেমন ছিলো জানতে ইচ্ছা করছে মির”
মির সবাইকে শংকিত কন্ঠে বলে,
“ঠিক আছে ঠিক আছে।সবাইকেই জানাবো।কিন্তু প্রণয় আর চাঁদ যেনো এ ব্যাপারে না জানে।জানলে দু’জনই আমার খবর করে দেবে”
রিহা চ!টে গিয়ে বলে,
“তোর খবরই করা উচিত!”
মির রিহার বাম বাহুতে আলতো ঘু!ষি মেরে বলে,
“সর শা*লী!ওদের যেই লম্বা কাহিনী!পুরোটা বলতে গেলে বুড়ো হয়ে যাবো।আধা তুই বলবি আধা আমি বুঝছিস?”
রিহাও মিরের বুকে কিল মে!রে বলে,
“আমার ঠ্যাকা পড়ছে হ্যা?”
রুবা,শিফা আর রিদি রিহার সামনে আসে।এরপর রিদি বাচ্চাদের মতো আবদার করে বলে,
“এমন করওনা আপু!তুমি না আমাদের মিষ্টি আপুটা?আমি জানি তুমি বলবে।উই লাভ ইউ রিহাপ্পু!”
রিহা রিদির গাল টে!নে বলে,
“ওরে!এই চুপচাপ পিচ্চিটা দেখি কথাও বলতে পারে।তোমার আবদারতো একদমই ফেলা যাচ্ছেনা রিদু।অ্যান্ড আই লাভ ইউ মোর ময়নাপাখিস”
উশ্মিকে রুমে নিয়ে এসে ওয়াশরুম দেখিয়ে চাঁদ জিজ্ঞেস করে,
“শরবত খাবে তুমি?”
“হ্যা ভাবি গরম লাগছিলো।শাওয়ার নেয়ার আগে শরবত টা খেলে ভালোই লাগতো”
“আচ্ছা বসো।আমি করে আনছি”
“ঠিক আছে ভাবিজান”
মিনিট পাঁচেক পরেই চাঁদ শরবত হাতে ফিরে আসে।আসতেই উশ্মি অবাক হয়ে বলে,
“এতো জলদি!”
চাঁদ হেসে বলে,
“হ্যা।শরবত করতে এতো টাইম লাগে নাকি?”
“আমিতো কিছুই পারিনা ভাবি।সেই যে লন্ডন গেলাম।এই আজ ফিরলাম”
চাঁদ উশ্মির পাশে বসে বলে,
“কতবছর হলো লন্ডন ছিলে?”
“ইম…এইতো আট-নয়ের মতো হলো”
চাঁদ কিছুক্ষণ ভেবে শরবতটা উশ্মির হাতে দিয়ে বলে,
“বাংলাদেশ হিসেবে ভার্সিটি ব্যাচ কোন ব্যাচ ছিলে?মানে ভার্সিটি যদি ভর্তি হতে কতো সালে হতে?”
“দাড়াও হিসাব করি।”
ইম…২০১৩ তে সম্ভবত”
“আচ্ছা তোমার পুরো নামটা যেনো কী?”
শরবত শেষ করে উশ্মি বলে,
“উশ্মিতা উশ্মি।কেনো বলোতো?এই ভাবি তুমি আবার ডিটেকটিভ শিটেকটিভ নাতো?”
চাঁদ হেসে বলে,
“না না।তেমন কিছুই না।তুমিই কি তবে ব্যারিস্টার উশ্মিতা উশ্মি?”
“হ্যা।এক মিনিট এক মিনিট।এমন কন্ঠতো আমি…”
“হিম।আমিই সেই চাঁদ”
“সমুদ্রের বেস্ট ফ্রেন্ড তুমি?মুহাইমা বিনতে চাঁদ মেয়েটা?”
“হ্যা”
কপাল কুচকে বিছানা থেকে উঠে গিয়ে আশ্চর্য হয়ে উশ্মি বলে,
“প্রণয় ভাইয়াকে ডি*ভোর্স কেনো দিতে চাও তুমি?”
To be continued….
[বিঃদ্রঃ অতোটা ভালো হয়নি বোধহয়!আপনাদের কাছে একটা প্রশ্ন।আমার জানামতে ব্যারিস্টার হতে হলে বাংলাদেশের ভার্সিটিতে সম্ভবত পড়া লাগেনা।ডিরেক্ট এব্রোড থেকেই স্টাডি করে ফেরা যায়।তেমন একটা আইডিয়া নেই এই ব্যাপারে।আমার জ্ঞানটুকু সঠিক হলে ঠিক আছে।যদি ভুল হয়ে থাকে জানাবেন কষ্ট করে।সুধরে নেবো।আর হ্যা গল্পটা সম্পূর্ণ কাল্পনিক!]