#আবার_প্রেম_হোক
#নুসরাত_জাহান_মিম
৪৪.
“আমি ফলো করলে অস্বস্তি আর প্রণয়ের ছোয়ায় এতো স্বস্তি,কেনো নীলাম্বরী?”
“কারণ আমি তাকে ভালোবাসি মি.আহিন”
চাঁদের বলা এক বাক্য আহিনের বুকে ধারালো ছু!রির ন্যায় বিধলো যেনো।চোখজোড়া বন্ধ করে লম্বা শ্বাস নিয়ে সে বললো,
“এই তবে কারণ আমায় রিজেক্ট করার?”
“আপনাকে কখনো মেনেই নিতে পারিনি রিজেক্ট করা পরের কথা আহিন”
“এবং তার কারণটা নিশ্চয়ই প্রণয়?”
“তার প্রতি অনুভূতিতো সেই প্রথমদিন থেকেই ছিলো।একটু একটু করে বাড়তে বাড়তে আজ তা অপরিমিত”
“খুব ভালোবাসো প্রণয়কে?”
“আমি শুধু জানি এ হৃদয়জুড়ে কেবল ঐ শুদ্ধ পুরুষটাই বিরাজমান”
“প্রণয়ের মাঝে এমন কী আছে যা আমার মাঝে নেই?”
“অন্যের মাঝে যা আছে প্রণয়ের মাঝেও তাই আছে।তবে প্রণয়ের মাঝে যা আছে অন্যদের মাঝে তা নেই”
“এতো ভালোবাসা কবে থেকে?”
“সেদিন থেকেই যেদিন প্রথম ঐ বিড়ালাক্ষী মানবের দর্শন পাই”
মৃদু হেসে আহিন বলে,
“প্রণয়ের প্রতি তোমার প্রেমময়ী বাক্যগুলো আমার হৃদয় ক্ষ!তবি!ক্ষ!ত করে দিচ্ছে নীলাম্বরী”
“আপনার হৃদয় ভে!ঙেচুরে দিতেই আজ আপনার সম্মুখীন হয়েছি আমি”
“আমিতো জানতামই তুমি প্রণয়কে ভালোবাসো তবুও নিজ মুখে তার প্রতি ভালোবাসাটুকু প্রকাশ করে আমার হৃদয়টা না ভাঙলেই কি হতোনা নীলাম্বরী?”
“আমি শুধু প্রণয়ের লালগোলাপ,তার চন্দ্রময়ী এবং তারই রেডরোজ।আমায় চাঁদ বলে ডাকলেই সাচ্ছন্দ্যবোধ করবো আহিন”
“অবশ্যই চাঁদ।মিস মুহাইমা বিনতে চাঁদ”
“তাহলে কি আমি বুঝে নেবো যে আপনি আমার প্রতি আপনার অনুভূতিগুলো মে!রে দেবেন?”
“অনুভূতিতো মা!রা যায়না।তাকে কেবল আড়াল করা যায় নীলা….ইম…চাঁদ।আচ্ছা ভালো থেকো আর…”
বলেই বড় করে শ্বাস নিয়ে আবারও বলে,
“প্রণয়ের সাথে যেহেতু প্রেমটা তোমার হয়েছে ই।এই প্রেম আমরণ জীবিত থাকুক”
“মরণের পরেও তার সাথে আমার প্রেম হোক!”
মাস চারেক পর আজ চাঁদের ফার্স্ট প্রফের রেজাল্ট দেবে।এই নিয়ে তার ভয়ের যেনো অন্ত নেই।এতো ভীরের মাঝে সে সামনে যেতে পারছেনা অথবা বলা যায় সে যেতে চাচ্ছেনা।চোখজোড়া বন্ধ করে মনে মনে দোআ পড়ছে।ভয়ে আতঙ্কিত হয়ে আছে।যেকোনো মুহূর্তে যেনো হৃদপিন্ডটা ছলাৎ করে বেরিয়ে আসবে।গলা শুকিয়ে আসতে চাচ্ছে যেনো।কী করবে কিছুই বুঝতে পারছেনা।ঠিক তখনই তার পাশে প্রণয় এসে দাঁড়ায়।চোখ বন্ধ রেখেই চাঁদ উপলব্ধি করলো প্রণয়ের শরীরের ঘ্রাণ তথা তার উপস্থিতি।প্রণয় চাঁদের ডান হাতটা নিজের বাম হাতে মুষ্টিবদ্ধ করে নিয়ে তার গা ঘেষে দাঁড়িয়ে কানের কাছে মুখ ঘুরিয়ে ফিসফিসিয়ে বললো,
“এতো অস্থিরতা কেনো চন্দ্র?নিজের প্রতি আশাবাদী নন আপনি?”
প্রণয়ের ফিসফিসানো কান অব্দি পৌঁছাতেই চোখজোড়া খুলে তার পানে তাকিয়ে অসহায় দৃষ্টি দিয়ে চাঁদ বলে,
“অবশ্যই আশাবাদী।এমনকি আমি জানি অবশ্যই ভালো কিছুই হবে তবে এখানে সবাই ই বেস্ট।কার রেজাল্ট কখন কী হয় বলাতো যায়না।আর আমার থেকে সবাই যেনো একটু বেশিই এক্সপেক্ট করছে।তারা আমায় এক্সেপশনাল ভাবছে”
“এক্সেপশনালকে এক্সেপশনাল ভাবাটাইতো স্বাভাবিক মিস রেডরোজ”
“আপনি বুঝতে পারছেন না প্রণয়।সবাই ভেবে বসে আছে আমি আবারও ফার্স্ট হবো কিন্তু আমিতো দেখেছি আমার ফ্রেন্ডদের,আমার ক্লাসমেটদের ডেডিকেশন।তাই আমি যথেষ্ট নার্ভাস।আপনি হয়তো এই অনুভূতি দিয়ে পরিচিত নন”
“পরিচিত কিনা জানিনা।কখনো এমন কিছু উপলব্ধি করিনি।আমার কাছে পড়াশোনার গুরুত্ব আছে তবে ততটা নয় যতটা তা আপনার কাছে প্রাধান্য পায়।আমার কাছে পড়াশোনাটা এভারেজ লেভেলের।একচুয়ালি আমার কাছে সবকিছুই এভারেজ লাগে”
“কিন্তু প্রণয়ের প্রণয় আমার কাছে কখনো এভারেজ লাগেনি মি.বিড়াল”
“কারণ তার প্রতি কোনোকিছুই হিসাব করা যায়না,সে সর্বদাই অতুলনীয়”
তাদের কথোপকথনের মাঝে ইপ্সি আর অবনী এসে হাপাতে লাগলো।অতঃপর অবনী বলা শুরু করলো,
“তোর রেজাল্ট মাত্রই দেখে আসলাম চাঁদ”
ইপ্সি ঘনঘন শ্বাস নিয়ে বললো,
“সবার কাছেই তোর রেজাল্ট ছড়িয়ে গেছে”
তখনই ইফাদও এসে বললো,
“শুধু তুমিই জানোনা”
চাঁদ ভীত কন্ঠে বলে,
“কিসব বলছো!রেজাল্ট কি খুব খারাপ হলো?কিন্তু আমিতো ভালো এক্সাম….”
মির তাদের নিকট আসতে আসতে বলে,
“হ্যা ঘসেটি উরফে বিড়ালিনী।খুবই বাজে হয়েছে।এতোটা বাজে যে তোমার মতো আর কারোর ই রেজাল্ট এমন হয়নি”
অসহায় দৃষ্টি নিক্ষেপ করে চাঁদ বলে,
“কিন্তু ভাইয়া আমিতো…”
তখনই অরণও হাজির হয়ে প্রণয়কে উদ্দেশ্য করে বলে,
“এবারতো মেয়েটার হাত ছেড়ে দে।রেজাল্ট দেখে আসুক”
প্রণয় হকচকিয়ে চাঁদের হাত ছেড়ে দিয়ে খানিকটা কেশে বলে,
“ওদের কথা বিশ্বাস না করে নিজে গিয়ে দেখে আসুন।একেকটা ফনা তোলা সাপ”
রবিন খোচা মেরে সামনে আসতে আসতে বললো,
“এখনতো আমরা সাপসহ বিচ্ছু,ডাইনোসর আরও কত কী হবো!কিরে কী বলিস রিহু?”
রিহা রবিনকে খোচা দিয়ে বললো,
“বুঝলি মিরু?এক পাগল আরেক পাগলকে বলছে তোর মাথার তার ছেড়া”
মিরা হাসতে হাসতে বলে,
“তা যা বলেছিস!চোরে চোরে একদম মাসতুতে ভাই”
প্রণয় গম্ভীরভাবে বলে,
“রবিনের সাথে আমাকে গুলাবিনা”
মির তৎক্ষনাৎ বলে,
“ওহ হ্যা তাইতো!রবিনতো প্রকাশ্যেই জল খায়।কিন্তু তুমিতো খাও ডুবে ডুবে মামা”
প্রণয় বিরক্ত হয়ে বলে,
“চলুনতো চাঁদ আপনার রেজাল্ট দেখে আসি”
তখনই একটা মেয়ে এসে বলে,
“রেজাল্ট দেখা লাগবেনা।আমিই বলছি।পুরো কলেজই এখন চাঁদের রেজাল্ট জানে।শোনো তুমি পেয়েছো…. ”
চাঁদ তৎক্ষনাৎ দুই কান দু’হাতে চেপে ধরে খানিকটা চেচিয়েই বলে,
“না না ইলা!প্লিজ কিছু বলবেনা।আমার রেজাল্ট শুধু আমিই দেখতে চাই।কারো থেকে জানতে চাইনা।প্লিজ বলবেনা”
বলেই হনহনিয়ে সামনের দিকে এগোয়।এগিয়ে সকলকে সাইড করে নোটিশ বোর্ডে নিজের নাম খুজতে লাগে।অতঃপর পেয়েও যায়।রেজাল্ট দেখে চোখ ঝাপসা হয়ে আসে চাঁদের।সে চোখজোড়া বন্ধ করে ঢোক গিলে সেখান থেকে সরে এসে সর্বপ্রথম তার ভাইয়ের নম্বরে ডায়াল করে।তার ভাই চৈত্র ফোন রিসিভ করেই বলে,
“আমি জানি এবারেও আমার ছোটি টপ করেছে।অ্যাম আয় রাইট?”
ঘনঘন শ্বাস নিয়ে চাঁদ আটকে আটকে বলে,
“হা…হ্যা ভাই।তোর ছোটি তোদের সবার বিশ্বাস বহাল রাখতে পেরেছে!”
“আলহামদুলিল্লাহ!হ্যা ভাই অবশ্যই মিষ্টি খাওয়াবো”
“কাকে বলছিস?”
“আরেএ আমার এক কলিগ।পাশেই বসে আছে।একজন না বলতে পারিস অনেকেই।সবাই তো জানে আমার বোন টপার অফ বিডি”
“আচ্ছা ভাই তুই কাজ কর আমি আম্মু আব্বুকে কল দিচ্ছি”
“তোর দিতে হবেনা।আম্মু আব্বুকে আমি কনফারেন্সে রেখেছিলাম।তারা শুনছে সবই”
“কী?আব্বু আম্মু?এই আব্বু?তুমি শুনেছো?আম্মু তুমিও?”
চাঁদের বাবা জবাব দেন,
“হ্যা আম্মু শুনেছি।এবং আব্বুর কলিগরাও শুনেছে।এবারও মনে হচ্ছে মিষ্টি কিনতে কিনতেই আমার পকেট ফাকা হবে”
শেষের কথাটা রসিকতা করেই বলেন চাঁদের বাবা ইহাদুল ইসলাম।
চাঁদের মাও হেসে বলেন,
“আর আমার ফ্রিজ ভর্তি হবে মিষ্টির বক্স দিয়ে”
চাঁদ খুশিতে আপ্লুত হয়ে হয়ে বলে,
“তোমরা সবাই খুশিতো?”
“আলবাত সোনা মা”
চৈত্র বলে,
“আচ্ছা তাহলে রাখছি।তুই গিয়ে তোর ফ্রেন্ডদের সাথে সেলিব্রেট কর।আর ওদের রেজাল্ট কেমন হলো জানাস”
“সবারই ভালো হবে আমার বিশ্বাস”
মাস দুয়েক পরের কথা,বছরের শেষের দিক।মাসটা তখন নভেম্বরের শেষের কোঠায়।প্রণয়দের বাড়িতে আত্মীয়দের আনাগোনার ধুম পড়েছে যেনো।বেশিরভাগই প্রণয়ের কাজিনরা।সকলেই শীতের ছুটি কাটাতে প্রণয়দের বাড়িতে আড্ডা জমিয়েছে।এই একটা জায়গা ই তাদের সকলের মিলনস্থল।মজার বিষয় হচ্ছে আগে প্রণয় তাদের সাথে আড্ডায় যোগদান না করলেও এবার সকল কিছুর আয়োজন সেই করেছে।এতে করে সকলে হতবাক হলেও প্রশ্ন করার সাহস মনে জাগেনি।তবে প্রণয়ের বোনেরা ভীষণ খুশি।যে তাদের ভাই অবশেষে তাদের আপন ভাবতে পারলো বলে।সকলে মিলে ঠিক করেছে তারা তাদের পুরোনো গ্রামের বাড়িটায় যাবে শীতের প্রকোপ উদযাপন করতে।প্রণয়ের সাথে থাকবে তার বন্ধুমহলের সকলেই।যদিও চাঁদসহ তার বন্ধুবান্ধবদেরও প্রণয় বলেছিলো কিন্তু তারা আসবেনা।তাদেরও নাকি গ্রামে যাওয়ার ইচ্ছা।চাঁদও তার খালামনির বাড়ি যাবে বলে জানিয়েছে।তাই আর প্রণয় কাউকেই জোর করেনি।নিজ বন্ধুমহল আর কাজিনদের নিয়েই রওয়ানা হয়েছে।প্রণয়সহ তার বন্ধুবান্ধব এক গাড়িতে আর অপরগাড়িতে রায়হান তার ভাইবোনদের নিয়ে আসছে।যদিও সেখানে রামিম উপস্থিত তবে দুজনের মাঝে কোনোপ্রকার কথোপকথনই হয়নি।অথবা বলা যায় তারা নিজে থেকেই কথা বলেনি।বিষয়টা আর কেউ লক্ষ্য না করলেও তাদের তিনবোন ঠিকই করেছে।সবচাইতে বেশি আফসোস করেছে শিফা।কেনোনা সে জানে দুজনের বন্ধুত্বের ফাটলের কারণ।তবুও উশ্মিকে সে ভীষণ ভালোবাসে।তাইতো রায়হানকে সেই ছোট থেকেই ভালো লাগলেও কাউকেই বলেনি কখনো।এই যে আজ সে সতেরো বছরের কিশোরী তবুওতো রায়হানের প্রতি অনুভূতিগুলো কমে না গিয়ে দিনকে দিন বেড়েই চলেছে।আগে কেউ না জানলেও বর্তমানে তার দুই বান্ধবী তথা বোনেরা ঠিকই জানে তার মনের সুপ্তাবস্থার কথা।রুবা শিফার দৃষ্টি অনুসরণ করে রায়হান আর রামিমের দিকে দেখতে পেয়ে তার হাত চেপে বললো,
“কিরে কী ভাবছিস?”
দীর্ঘশ্বাস ফেলে শিফা বললো,
“তেমন কিছুই ভাবছি না রে”
“ওসব ভাবলে কিছুই ঠিক হবার নয় রে”
“ভাবিনাতো।রিদুর মন খারাপ কেন?”
শিফার কথা শুনে রিদির পানে চেয়ে রুবা ফিসফিসিয়ে রিদি আর শিফাকে শুনিয়ে শুনিয়ে বলে,
“হবে নাই বা কেন?তার প্রাণপ্রিয় যে এই গাড়িতে নেই।অপর গাড়ি করে তার হৃদয়ে ব্যথা দিয়ে চলে গেলো”
রুবার কথা শুনে কনুই দিয়ে তাকে গুতো দিয়ে রিদি বলে,
“বেশি পাকামো করিস না।যেদিন তোর প্রাণটাও কাউকে প্রিয় বানাবে না?সেদিন বুঝবি চিকনিচামেলি”
“ঐ চুপ থাক ভোবলদাস”
শিফা কপাল কুচকে বলে,
“ঝগড়া করিস নাতো।এই রিদু তুই কি সত্যিই মির ভাইয়ার উপরে ক্রাশ খেয়েছিস?মানে সত্যি?তোর থেকে কিন্তু ভাইয়া অনেক বড়”
বাকা চোখে চেয়ে রিদি বলে,
“মাত্র দশ বছরেরই তো বড় ক’দিন বাদেই আমার ষোল হয়ে যাবে সো বলতে পারিস সাড়ে নয় বছরের বড়।আর আগেকার যুগেতো পনেরো-বিষ বছরের বড় ছেলেদেরও বিয়ে করতো।ফ্যামিলি থেকে দিতো আরকি”
রুবা ঠেস মে!রে বলে,
“আর তোর মনে হয় মির ভাইয়া তোকে বিয়ে করতে বসে আছে?তোর জন্য ওয়েইট করবে?তার গার্লফ্রেন্ড নেই ভেবেছিস?”
“গার্লফ্রেন্ড থাকুক।বউতো আর না!মিরের বউতো শুধু এই রিদি ই হবে।দেখে নিস”
To be continued….