আবার_প্রেম_হোক #নুসরাত_জাহান_মিম ৪৬.

0
969

#আবার_প্রেম_হোক
#নুসরাত_জাহান_মিম

৪৬.
সময় গড়াতেও সময়ের সময় লাগেনা কেনো?ভালোবাসার সুন্দর মুহুর্তগুলো এতো জলদি চলে যায় কেনো?কেনো এতো স্বল্প তার পরিসর?এইতো সেদিনই চাঁদ ফার্স্ট প্রফ দিলো।আবারও বছর গড়িয়ে মাস চারেক বাদে সেকেন্ড প্রফ চলে এসেছে।সেইসাথে মাসখানেক পরই প্রণয়েরও ফাইনাল প্রফ।অতঃপর ইন্টার্নির ঝামেলায় ব্যস্ত হয়ে পড়বে সে।আর কাছ থেকে দেখা হবেনা সেই বিড়ালাক্ষী মানবকে।তার বিড়ালাক্ষী জোড়ায় আর ডুবে থাকা যাবেনা।তার প্রেমময়ী বাক্য শোনার জন্য ব্যাকুল হৃদয় মাত্রাতিরিক্ত ব্যাকুল হয়ে থাকবে সারাক্ষণ।লোকটা আর এসে ক্ষণে ক্ষণেই তাকে তারই বরাদ্দকৃত নামে যখন-তখন ডেকে উঠবেনা।মন বড় তৃষ্ণার্ত হয়ে থাকবে প্রেমিক পুরুষটার জন্য।একবার, কেবল একবার!তার গম্ভীর কন্ঠস্বর শোনার জন্য ব্যাকুল হবে হৃদয়।ব্যাকুল হবে সে নিজেও।কেনো এতো স্বল্প হলো প্রেমময়ী মুহুর্তগুলো?এসব ভাবতে ভাবতেই ফাইনাল ইয়ারের বিদায়ানুষ্ঠানের তদারকি করছিলো চাঁদ।চাঁদকে অন্যমনস্ক দেখে ফায়ান তার পাশে বসে বলে,

“মন খারাপ চাঁদ?”

হঠাৎ ফায়ানের কন্ঠস্বর শুনে ভড়কে গিয়ে চাঁদ বলে,

“হা?হ্যা?কিছু বললে?”

“বললাম মন খারাপ কিনা তোমার?”

“হ্যা কিছুটা”

“প্রণয় ভাইয়ার জন্য?”

এ কথা শুনে চুপ করে থাকে চাঁদ।অতঃপর ফায়ানই আবার বলে,

“মন খারাপ করছো কেনো?ভাইয়াতো এই কলেজেই থাকবে।হয়তো কলেজ প্রাঙ্গনে আর তেমন আসবেনা তবে হাসপাতালেতো আসবে ঠিকই।তখন গিয়ে দেখা করতে পারবেতো।আর এমনিতেও চাইলে দেখা করতে পারবে।সমস্যা কোথায়?”

“না সমস্যা তেমন কিছুইনা।হঠাৎ করেই খারাপ লাগা কাজ করছে।মনে হচ্ছে আমি কী যেনো হারিয়ে ফেলবো।খুব বাজে আভাস”

“ওসব ভেবো না তো।যা পাচ্ছো তাতে সন্তুষ্ট থাকো।ভবিষ্যৎ ভেবে লাভ কী?তাছাড়া তুমি কিন্তু এখনও প্রণয় ভাইয়াকে জানাওনি তুমি যে তাকে ভালোবাসো”

খানিকটা লজ্জা পেয়ে দৃষ্টি নত করে টুকরি থেকে ফুল বাছাই করতে করতে চাঁদ বলে,

“জানাইনি বলে যে সে বা কেউই বুঝেনা বিষয়টাতো এমন না”

“স্বীকার না করলে প্রেম গৃহীত হবে?”

ফায়ানের পানে চেয়ে চাঁদ জিজ্ঞেস করে,

“হয় না?”

চাঁদের মাথায় হালকাভাবে আঙুলের টোকা দিয়ে ফায়ান বলে,

“বোকা মেয়ে।ভালোবাসাতো ভালোবাসাই,বলো আর নাইবা বলো।যাকে বাসো সে বুঝলেই হলো”

“আচ্ছা ফায়ান তুমি কাউকে ভালোবাসোনা?মানে এখনও বাসোনি?প্রেম-ট্রেম নিয়ে কিছু ভাবোনি নাকি?”

চাঁদের আকস্মিক প্রশ্নে ফায়ান থমকায়।দৃষ্টি অস্পষ্ট হয়ে আসে তার।নিজেকে সামলে বলে,

“এখনও ভাবিনি।তবে জীবনে প্রেম এলে তোমায়ই সবার আগে জানাবো।যদিও তুমি আমায় জানাওনি তবুও”

চাঁদ হালকা হেসে বলে,

“আমিতো কাউকেই কিছু জানাই নি।এমনকি নিজেও দ্বিধান্বিত ছিলাম।তোমায় আর কীই বলতাম”

“সেসব থাক।আমি একটা জিনিস বুঝলাম না,ফোর্থ ইয়ার থাকতে আমাদের ঘাড়েই কেনো দায়িত্ব টা পড়লো?বিদায় তো যারা ফোর্থ ইয়ারে থাকে তারা বিষয়টা দেখে তাইনা?লাস্ট ইয়ারও তো ফাইনাল ইয়ারের বিদায় প্রণয় ভাইয়েরা দিলো”

তখনই সেখানে অবনী এসে বললো,

“সবকিছুই আমাদের প্রণয় দুলাভাইয়ের প্রেমজাদু বুঝলি?”

চাঁদ আর ফায়ান একসাথে বললো,

“মানে?”

“মানে হলো গিয়ে ভাইয়া যেহেতু অলওয়েজ টপ করেছে টানা চার বছর,সে দরুনই ভাইয়ার চাওয়াতেই থার্ড ইয়ারের উপর দায়িত্ব ন্যস্ত হয়েছে।মানে আমাদের!আর সেটা কেনো জানিস না?তার প্রেয়শী যে থার্ড ইয়ারের ক্যাপ্টেন!সে ভালো করেই জানতো চাঁদের কথা শুনলে কলেজ কর্তৃপক্ষ কখনোই না করবেনা সেই দরুনই ভাইয়া চালাকি করে কাজটা করেছে”

চাঁদ কপাল কুচকে বলে,

“তুই এতোকিছু জানিস কী করে?”

ইপ্সি আর ইফাদও একসাথে ওদের সামনে আসতে আসতে বলে,

“শুধু অবু ই না।আমরাও জানি”

ফায়ান ভ্রু কুচকে বলে,

“কিন্তু কেমনে?”

ইফাদ জবাব দেয়,

“একটু আগেই ভাইয়াদের সাথে আড্ডা দিয়ে আসলাম।সেখানেই এই প্রসঙ্গে কথা হলো।সবাই প্রণয় ভাইয়ার বেশ মজাও উড়ালো”

চাঁদ উৎসুক হয়ে বললো,

“প্রণয় কিছু বলেনি?”

অবনী সুর টেনে বললো,

“ওহোওও!প্রণয় কিছু বলেনি?তোমার প্রণয় কি অতো কথা বলে নাকি খালা?”

বিরক্তি নিয়ে চাঁদ বলে,

“মস্করা করিস নাতো।এই ইফাদ বলোনা”

ইফাদ খানিকটা কেশে গলা পরিষ্কার করে বলে,

“তেমন কিছুই বলেনি।শুধু বলেছে….”

এবার ইফাদ,অবনী আর ইপ্সি বেশ অভিনয় করে একসাথেই বলে,

“জীবনতো একটাই,চন্দ্রময়ীও একটা।এই এক জীবনে লালগোলাপকে সম্পূর্ণ ফোটাতে প্রণয় যাচ্ছেতাই করবে”

ওদের কথায় চাঁদ তৎক্ষণাৎ দৃষ্টি নত করে।গাল দুটো জ্বলে যায় তার‌!কান গরম হয়ে আসে।দৃষ্টি তুলতে অক্ষম হয় যেনো।বারবার চশমা ঠেলে দিতে দিতে ফুলের টুকরি নিয়ে অন্যদিকে চলে আসে।অতঃপর চোখজোড়া বুজে ঘনঘন শ্বাস নেয়।আঁখি জোড়া বন্ধ করতেই দৃশ্যপটে ভেসে উঠে তার বিড়ালাক্ষী মানবের বিড়ালাক্ষী জোড়ার নজরকাঁড়া সেই অভূতপূর্ব হাসি!হৃদয়ে প্রশান্তি ছেয়ে গেলো চাঁদের।উত্তপ্ত হৃদয় নিমিষেই শীতল হলো।

রজনীবেলা,
বইয়ের পাতা সশব্দে উল্টাচ্ছে চাঁদ।সামনেই সেকেন্ড প্রফেশনাল এক্সাম।অথচ এই প্রফের জন্য কেবল পেয়েছে একবছর।তন্মধ্যে প্রায় ছ’মাসই চলে গেছে।রয়ে গেছে মাস তিনেক।চার মাসের মাথায়ই পরীক্ষা।অতএব খেয়ে না খেয়ে পড়তে হবে।রাত বাজে একটা পঞ্চান্ন।ড্রয়িং রুমে টেবিল লাইট জ্বালিয়েই দিব্বি পড়ছে সে।নেই কোনো ভয়ডর।অনায়াসে কলম নাড়াতে নাড়াতে পড়ছে।মনে মনেও না আবার বেশি জোরেও না।তবুও দেয়ালে বারী খেয়ে বেশ কানে লাগছে একেকটা শব্দ।খানিকটা ভূতুরে পরিবেশ হলেও চাঁদের মাঝে কোনো হেলদোল দেখা যাচ্ছেনা।সে নিজের মতো করে পড়ছে আবার পাশেই একটা খাতায় কি যেনো লিখছে।সঙ্গে আছে বিভিন্ন রঙিন কলমও।হঠাৎ করেই পাশে কারো উপস্থিতি টের পেয়ে তড়াক করে লাফিয়ে উঠে বুকে থুতু দিয়ে পাশে তাকিয়ে ভ্রু কুচকে বুকে হাত রেখে বিস্ময়ের সাথে বলে,

“ভাই তুই!”

বোনকে ধরে চেয়ারে বসিয়ে চৈত্র বলে,

“ভয় পেয়েছিস?”

লম্বা শ্বাস নিয়ে চাঁদ বলে,

“হ্যা তো পাবোনা?এমন সময় এভাবে হঠাৎ কেউ আসে?কোনো হাকডাক নেই কিছু নেই”

চাঁদের টেবিলের পাশের বিছানায় আধশোয়া হয়ে হাই তুলে চৈত্র বলে,

“আজ ভাবলাম এখানেই শুই”

কপাল কুচকে চাঁদ বলে,

“কেনো?”

“কত রাত অব্দি পড়ার ধান্দা আপনার শুনি?”

চৈত্রের প্রশ্নে থতমত খেয়ে আমতাআমতা করে চাঁদ বলে,

“এইতো আর মানে আছে কয়েকটা পেজ।শেষ হয়ে গেলেই শুয়ে পড়বো ভাই।তুই গিয়ে ঘুমা”

“পেজগুলো নিশ্চয়ই পনেরো-বিশ পেজের?”

“ইম…মানে…আসলে হয়েছে কী ভাই!কলেজে ফাইনাল ইয়ারের বিদায়।তো সবকিছুর দায়িত্ব ন্যস্ত হয়েছে আমাদের উপর।বলতে পারিস তদারকি সব আমারই করতে হচ্ছে।পড়ার তেমন একটা সময় পাচ্ছিনা।টিউশন,চাকরী,কলেজ সবকিছু মিলিয়ে এই রাত বাদে আর সময়ই হচ্ছে না।এইতো এই মাস পরেই সেকেন্ড প্রফের রুটিন দেবে।তো বুঝছিসই তো!”

“হ্যা বুঝছি”

বলেই বিছানা থেকে উঠে চাঁদের টেবিলের দিকে উঁকি দিতে দিতে চৈত্র বলে,

“দেখিতো কী বই পড়িস?কখনোতো দেখলাম না মেডিকেলে কী কী বিষয় থাকে।দেখি কী লিখা?ইম…..ফর…ফরেন্সিক মেডিসিন?”

“হ্যা”

“এটা কী বায়োলজি নিয়ে নাকি?”

“না।এগুলোতো নিজেরাই একেকটা বিষয়”

“মেডিকেলে না বলে শুধু বায়োলজি?যারা মেডিকেলে পড়ে ওরাতো ছেলেপেলেদের বায়োলজির টিউশনই বেশি করায়।তুইওতো”

“হ্যা বায়োলজি নিয়েই।কিন্তু বায়োলজি আর কেমিস্ট্রি বিভাগেরই সবগুলো বই থাকে।বিভিন্ন সেকটর আরকি।যেমন বায়োলজিতো দুইটা।ওসব থাকে ইন্টারে।আর তার মধ্যে আমাদের এমবিবিএস এ পড়তে হয় প্রাণীবিদ্যার বিভিন্ন বিষয়।তার মধ্য থেকেও আবার বিভিন্ন সেকটর আছে।ওগুলো পড়া লাগে।তাছাড়া কেমিস্ট্রির বিভিন্ন ভাগ পড়া লাগে,মেডিসিন নিয়ে স্টাডি করার জন্য।যে কোন রোগের কোন ঔষধ অথবা বলতে পারিস কী মেডিসিন দিয়ে কী হয়।প্রাথমিক চিকিৎসা হিসেবে কী কী করা যাবে।এমন আরও অনেককিছু।থার্ড ইয়ারে আছে কমিউনিটি মেডিসিন,ফরেন্সিক মেডিসিন ইত্যাদি বিষয়াদী।তার মধ্যে এখন আমি পড়ছি হলো ফরেন্সিক মেডিসিন।এই বিষয়টারও বিভিন্ন বই আছে।যেমন….. ”

বোনকে থামিয়ে দিয়ে চৈত্র বলে,

“হইছে বোইন থাম!এতো কিছু জানতে চাইনি!বাবারে বাবা!মাথা আমার আউলায় গেলো।দাড়া ঠান্ডা হয়ে নেই”

ভাইয়ের কথা শুনে মুচকি হেসে আবারও পড়ায় মনোনিবেশ করে চাঁদ।মিনিট দুয়েক বাদে আবারও চৈত্র বলে,

“মনেতো হচ্ছেনা তিন-চারটার আগে উঠবি।যা রুমে যা।আজ আমি এখানেই শুবো।কোনো বাড়তি কথা শুনতে চাচ্ছি না।গো এন্ড ডু ইওর স্টাডি অ্যান্ড দেন স্লিপ পিসফুলি,ওকে?”

চেয়ার থেকে বই আর মোবাইল নিয়ে উঠতে উঠতে চাঁদ বলে,

“জো হুকুম মেরে ভাই!”

বলেই ভাইকে একপাশ দিয়ে জড়িয়ে ধরে বলে,

“ঘুমিয়ে যাস কিন্তু!গেম টেম খেলিস না আবার।সকালে উঠতে হবে কিন্তু”

“হ্যা হ্যা ঠিক আছে আমার মা!যা তুই”

চাঁদকে ঠেলেঠুলে পাঠিয়ে দিয়ে বিছানায় আয়েশ করে শোয় চৈত্র।চাঁদ ভাইয়ের রুমে এসে টেবিলে বসে টেবিল ল্যাম্প জ্বালিয়ে আবারও পড়তে বসে।

ঘন্টাখানেক বাদে হাই তুলে ঝিমাতে ঝিমাতে বইয়ের পাতা উল্টায় চাঁদ।মাঝে মাঝে কী যেনো দাগাচ্ছে আবার লিখছেও খাতায়।এমন করতে করতে প্রায় মিনিট দশেক পর চোখের চশমা খুলে চোখ কচলিয়ে হাই তুলে বইয়ের মাঝে কলম রেখে বইটা বন্ধ করে কী যেনো ভাবে।অতঃপর মোবাইল নিয়ে দেখে ঘড়িতে তিনটা বেজে দশ মিনিট হয়েছে।সকাল আটটায় আবার ক্লাসও আছে, যেতে হবে ভেবে বই খুলে সেই পেজটা ভাজ করে কলমের মুখ লাগিয়ে বই,কলম সবকিছু নিয়ে ড্রয়িং রুমে নিজ টেবিলের সামনে গিয়ে ব্যাগে ভরে রাখে।অতঃপর ভাইয়ের দিকে তাকাতেই নজরে আসে কানে ইয়ারফোন লাগিয়ে হাতে মোবাইল নিয়েই ঘুমিয়ে পড়েছে সে।মোবাইল থেকে আলোও আসছে।তা দেখে খানিক হেসে মনে মনে বলে,

“স্বভাব আর গেলোনা!”

ভাবতে ভাবতেই ভাইয়ের কাছে গিয়ে প্রথমে মোবাইল নিয়ে লক করে বালিশের পাশে রাখে।অতঃপর কান থেকে ইয়ারফোন খুলে সেটাও পাশে রেখে হাত পা সবকিছু ঠিক করে দিয়ে বালিশ সোজা করে বালিশে ঠিকভাবে মাথা রাখিয়ে কাথা গায়ে দিইয়ে মৃদু হেসে চলে আসে রুমে।

রুমে এসেই দেখে মোবাইলে হালকাভাবে কাপছে এবং স্ক্রিনে আলোও ছড়াচ্ছে।টেবিল ল্যাম্পটা অফ করে টেবিলের ড্রয়ারে রেখে বিছানায় এসে বালিশ ঠিক করে শুতে শুতে কাথা গায়ে নিয়ে মোবাইল হাতে নিতেই দেখে মিনিট দুয়েক আগেই মেসেঞ্জারে প্রণয়ের মেসেজ,

“ঘুমিয়ে পড়েছেন চাঁদ?”

মেসেজ দেখামাত্রই মুচকি হেসে চাঁদ রিপ্লাই করে,

“ঘুমানোর প্রস্তুতিই নিচ্ছিলাম”

কয়েক সেকেন্ড বাদে রিপ্লাই আসে,

“শুয়ে পড়েছেন?”

“হ্যা।আপনি?”

“আমি এইতো বারান্দায় বসে আছি”

“সে কী!ঘুমান নি?আই মিন শোন নি?”

“ঘুম আসছিলোনা।আর আমিতো প্রতিদিন এমন তিন/চারটায় ই ঘুমাই”

“হ্যা তাতো ঘুমান।কিন্তু ক’দিন বাদেইতো ফাইনাল প্রফ”

“হ্যা”

“পড়াশুনা কতদূর?”

“আমার পড়া নিয়ে চিন্তা করা লাগবেনা মেয়ে!নিজেরটা ভাবুন।আপনারও তো এক্সাম”

“হ্যা আমিতো পড়েই আসলাম মাত্র।ঘুম পাচ্ছিলো তাই শুয়ে পড়েছি।বাকিটা কাল দেখবো”

“ডিস্টার্ব করলাম নাতো?”

“না না তেমন কিছুই না।আমার শুয়ে কিছুক্ষণ মোবাইল টেপার অভ্যাস আছে।জানেনই তো”

“আপনার কন্ঠ শোনার বড্ড নেশা জেগেছে চন্দ্র!কল দেই?”

হঠাৎ প্রণয়ের এরূপ প্রেমবাক্যে একটু বেশিই লজ্জা পায় চাঁদ।গালদুটো ভারী হয়ে আসে তার।ঢোক গিলে লম্বা শ্বাস নিয়ে কিবোর্ডে টাইপ করে বার্তা পাঠায়,

“হোয়াটসঅ্যাপে দিয়েন”

বলতে দেরি।দিতে দেরি নেই।অডিও কল দিয়েছে প্রণয়।আকস্মিক প্রণয়ের ফোনকলে কিছুটা ভয় পেয়ে যায় চাঁদ।কেনো পায় জানা নেই।অতঃপর স্ক্রিনে প্রণয়ের এক হাস্যোজ্জ্বল ছবিসহ তার নাম ভেসে উঠে ‘মি.বিড়াল’।যা দেখে আনমনেই হাসে চাঁদ।রিসিভ করে কানে লাগিয়ে বিরাট লম্বা এক শ্বাস নেয়!যার আওয়াজ স্পষ্ট শুনতে পায় প্রণয়।কী ভারী সেই নিশ্বাস!তার নিজেরও তো একই অবস্থা।অতঃপর দু’জন নিজেদেরকে সামলে নিয়ে একসাথেই বলে,

“হ্যালো?”

খানিকটা থেমে চাঁদই শুরু করে,

“জ্বি?”

প্রণয় নিম্নকন্ঠে শুধায়,

“শুয়ে পড়েছেন?”

“হ্যা তখনই।কিন্তু আপনি এতো রাতে বাইরে কেনো বসে আছেন?”

“এই যে চন্দ্রের সাথে আলাপন চলছে,চন্দ্রিমার দর্শনের সঙ্গে।কিন্তু সবচাইতে সুন্দর বিষয় কী জানেন?”

“কী?”

“জমিনের চন্দ্রের সামনে ঐ আসমানের চন্দ্রিমার তুলনাই হয়না।আমার চন্দ্রময়ী অভূতপূর্ব,অতুলনীয়।অভাবনীয়!”

খানিকটা লজ্জা পেয়ে চুপ মেরে যায় চাঁদ।তা বুঝতে পেরে প্রণয় বলে,

“সে যখন লজ্জায় লালরাঙা হয়,প্রণয় হয় তখন সবচাইতে বেহায়া,নির্লজ্জ পুরুষ!”

এ কথায় আরও বেশি লজ্জা পায় চাঁদ।গালদুটো তার ভারী হয়ে আসে।কানের থেকে ফোন খানিকটা সরিয়ে লম্বা লম্বা শ্বাস নেয় সে।যার শব্দ প্রণয়ের কর্ণকুহর হওয়া থেকে মোটেও পেছায় না।খানিকটা ঠোট বাকিয়ে আকাশপানে চেয়ে প্রণয়ও লম্বা শ্বাস নিয়ে শুধায়,

“চন্দ্র?চন্দ্রময়ী?”

প্রণয়ের আকুলতায় ভরপুর ডাকে সাড়া না দিয়ে কখনোই থাকতে পারেনা চাঁদ।আজও তার ব্যতিক্রম হলোনা।নিজেকে সামলে ফোন আবারও কানে লাগিয়ে ঘনঘন শ্বাস নিতে নিতে ভারী গলায় বলে,

“জি…জ্বি?”

“আপনাকে না নিষেধ করেছি আমার সামনে লজ্জা পেতে?”

অতঃপর সেও ভারী শ্বাস ফেলে বলে,

“আপনার লজ্জামিশ্রিত উত্তপ্ত শ্বাসে নিজের ভারসাম্য হারাই,চিত্ত ঝ!লসে যায় আমার!নিষিদ্ধ কিছু চেয়ে বসতে বাধ্য হয় হৃদয়!”

প্রণয়ের এরূপ কথা শুনে আরও বেশি উত্তেজিত হয়ে পড়ে চাঁদ।হৃদস্পন্দন তীব্র হয় তার।গালদুটো অতিরিক্ত মাত্রায় ভার হয়ে জ্ব!লে যায়।ফলস্বরূপ গালের ভেতর দিকে টান পড়ায় খানিকটা ব্যথার সৃষ্টি হয় চাঁদের।সেসব কিছুকে উপেক্ষা করে ঘনঘন শ্বাস নিয়ে ভারী কন্ঠে মৃদু কেপে বলে,

“কিন…..কিন্তু…আমি…আমিতো আপনার সামনে নেই?”

“কে বলেছে সামনে নেই?এইতো আঁখি বরাবরইতো বসে আছেন আপনি।স্নিগ্ধ,কোমলতায় ভরপুর আমার লালগোলাপ।মন যখন চায়,আপনাকে দেখতে পায়”

নিজের মাঝে আর থাকেনা চাঁদ।সে হারায় প্রণয়ের প্রেমসাগরে।ডুবে যায় সেথায়।লম্বা শ্বাস নিয়ে চোখজোড়া বন্ধ করতেই প্রথমদিন যখন তার সামনে এসে পকেটে হাত গুজে মাঠে গিটার ঠেকিয়ে তার পানে দৃষ্টিনিবদ্ধ করেছিলো প্রণয়,ঠিক সেই মুহুর্তটা দৃশ্যপটে ভেসে উঠে চাঁদের।চলে কিছুক্ষণ নীরবতার রেশ।শহরের প্রায় এক-তৃতীয়াংশেরও বেশি ঘুমে তলিয়ে গেছে।দু’একটা বাড়িতে ঝাপসা আলোর ঝলকানি দেখা যাচ্ছে বোধহয়!কিন্তু এই নীরব,নিস্তব্ধ পরিস্থিতিতে কেবল শোনা যাচ্ছে দু’পাশ থেকে ভেসে আসা দু’ মানব-মানবীর নিশ্বাসের ধ্বনি।নীরবতা কাটিয়ে হঠাৎ ই প্রণয়ের আবদার,

“পরশু খোলা চুলে আপনার প্রেমসাগরে ভাসাবেন মিস রেডরোজ?”

To be continued….

[বিঃদ্রঃদিন দুয়েক বাদেইতো ঈদ।তো একটুখানিতো ব্যস্ত থাকা পড়বেই।সেই সুবাদেই আগামীকাল এবং পরশু হয়তো গল্প দিতে পারবোনা।তবে পরশু যেহেতু ঈদ চেষ্টা করবো দেয়ার।আর যদি না দিতে পারি তবে ঈদের পরদিন ঠিক দেবো।আর হ্যা গল্পটা সম্পূর্ণ কাল্পনিক।তাই বাস্তবতার সঙ্গে মিলাতে গিয়ে গুলাবেন না কাইন্ডলি।আর সবাইকে ঈদের অগ্রীম শুভেচ্ছা।ঈদ মুবারক!]

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here