#আবার_প্রেম_হোক
#নুসরাত_জাহান_মিম
৫২.
দিন গেলো।মাস গড়ালো।কিছু সম্পর্কের পরিবর্তন ঘটলো।তো কিছু সম্পর্কে ধরলো ফাটলরেখা।জীবনটা যেনো রাতের আধারেই বদলে গেলো।এক রাতে এতো পরিবর্তন কী করে এলো?পরিবর্তন টা কি এক রাতের?নাকি মাসের পর মাস তার সুতো বুনা হয়েছিলো?জানা নেই অরণের।সে আনমনে হয়ে রাস্তা দিয়ে হাটছে,ভাবনায় হয়ে আছে বিভোর।এইতো সেদিন কতটা উৎফুল্লতার সহিত প্রিয় মানবীর বিশেষ দিনকে স্মরণীয় করার জন্য কতটা মরিয়া হয়েছিলো প্রণয় নামক তার প্রিয় বন্ধুটা।ভালোবাসার কথাটা যখন বলেই দিয়েছে প্রণয়টাও বুঝি দেখার সৌভাগ্য জুটবে ভেবে আনন্দে পুলকিত হয়েছিলো সকলে।কিন্তু সকলের ভাবনায় গুড়ো বালি দিয়ে এমন কিছু করেনা সে।সম্পূর্ণভাবে ভালোবাসার বিষয়টা অস্বীকার করে যায়।সে প্রসঙ্গে আর কোনো কথাই সে শুনতে চায়নি।সেই রাতটা স্বাভাবিক থাকলেও পরদিন থেকে নিজেকে কেমন যেনো গুটিয়ে নেয় সকলের থেকে।ছেলেটা সবসময়ই ছিলো গম্ভীর প্রকৃতির।তবে সেটা আড়ালে থেকে যেতো বন্ধুমহলের কাছে।তাদের কাছে প্রণয় ছিলো প্রাণবন্ত এক গম্ভীরমানব।আর অরণ?তার কাছেতো ছিলো খোলা বইয়ের ন্যায় উন্মুক্ত,যাকে যখন তখন চাইলেই পড়ে ফেলা যায়।বুঝে যাওয়া যায় তার চোখের ভাষা।কিন্তু এখন?এখন সবটাই যেনো বদলে যাচ্ছে অথবা গেছে!ছেলেটা আর সবার সাথে গম্ভীর থাকলেও বন্ধুবান্ধবের সাথে কখনো গম্ভীরতা দেখায়নি।তবে বর্তমানে সে সবার থেকেই নিজেকে আড়াল করেছে,দেখায় ব্যস্ততার অজুহাত।কথা হয়না কারো সাথে তেমন,দেখাও করতে চায়না।তবে হাসপাতালে আসার দরুন দেখাটা হয়েই যায়।কিন্তু অরণকে সে সূক্ষ্মভাবে এড়িয়ে চলার চেষ্টায় মত্ত।হয়তো বাকিসবার তুলনায় তার থেকেই দূরত্বটা বাড়িয়েছি অধিক!কারণ টা কী?জানা নেই অরণের।সে ভাবে,ভাবে এবং কেবলই ভাবে!কী এমন কারণ যার জন্য নিজেকে এভাবে বদলে নিলো ছেলেটা?কী এমন হলো সেই রাতে?যার দরুন এভাবে করে বদলে ফেললো নিজেকে?আসলেই কি বদলেছে?নাকি কেবলই লোক দেখানো?ভেতরে ভেতরে বন্ধুটা কি তার পু*ড়ছে দহনে?কিসের সেই দহন?বলেনা কেনো কাউকে?এমনটাতো হওয়ার কথা ছিলোনা।দুজনেতো একে অপরের আহটেই বুঝে যেতো তারা আদোতে আছে নাকি নেই সেথায়?তবে আজ কেনো এতো দূরত্ব বাড়ালো ছেলেটা?আর চাঁদ?চাঁদকে ভালোবাসার কথা প্রকাশ করেও কেনো তা অস্বীকার করলো?আর কেউ জানতোনা তবে সেতো জানতো মেয়েটাকে কি সাংঘাতিক ভালোবাসে সে!এবং তাকে এই ভালোবাসি কথাটা বলার জন্যইতো এতোগুলো মাস অবহেলার নাটক করেছে।বহুবার থমকে গিয়েও নিজেকে সামলিয়েছে শুধু সেই একটি দিনের জন্য।এসব কথা সেই রাতের দু’দিন আগে জানিয়েছিলো প্রণয় অরণকে।অতঃপর এক চিলতে হাসি ফুটেছিলো অরণের চোখেমুখে।তার আর কষ্ট করে বন্ধুকে জেলাস করাতে হয়নি।সেও চেষ্টা করেনি এমন কিছুর।তবে হঠাৎ করেই সবটা বদলালো কেনো?মেয়েটা নিশ্চয়ই কষ্টে আছে?শুষ্ক মরুভূমিতে পানি খোঁজার তেষ্টা যেমন তড়পায়,মেয়েটাও তো সেভাবেই তড়পেছিলো।অবশেষে সলিলরূপে ধরা দিয়েছিলো তারই বিড়ালাক্ষী মানব কোনো এক সুন্দরতম মেঘময় রাত্রিতে।অতঃপর?অতঃপর বারিধারা শুকিয়ে হৃদয় চরচরে মরুতে পরিণত হয়েছে আরও একবার!এবং এবার বুঝি আর কখনো সেই হৃদয়ে প্রেমের উষ্ণতা জাগবেনা।উতলা হবেনা নব্য যুবতী মেয়েটি তার প্রেমিক পুরুষের প্রেম উন্মাদনায়!প্রেম নামক বস্তুতে যার ছিলোনা বিন্দুমাত্র উৎসাহ,সেই প্রেমই হয়তো এখন তার কাছে পরিণত হবে অবিশ্বাসের অগাধে।প্রেম ধ্বংস বৈ কিছু আনেনা।তবে চাঁদ কঠোর মানবী।এতো সহজে ধ্বংসিত হয়ে পড়বেনা সে।যার জন্য প্রেম লালন করেছিলো হৃদয়ে,সেই প্রেমকেই দুম!ড়েমুচ!ড়ে দেবে মন কাননের দ্বারে।সেই দ্বার পার করে প্রেম আসবেনা কখনো জীবনে।জীবনের অংক কষে যোজন-বিয়োজন করতে করতে অরণ ভাবে একবার কি মেয়েটার খোঁজ নেয়া উচিত?বড় ভালোবাসে মেয়েটাকে।তার বোন অরিনের মতোই স্নেহ করে।সেইসাথে এক গাদা সম্মানের ছড়াছড়ি।এমন ব্যক্তিত্বের মেয়ে দু’টো দেখেনি সে।কি অবিলম্বে চলাফেরা করে!প্রায় তিন তিনটে বছর কাউকে হৃদয়ে লালিত করে হঠাৎ করেই তার অপ্রত্যাশিত ব্যবহার কি করে সহ্য করছে জানে না অরণ।ভাবতে পারেনা সে।তার সাথে এমনটা হলে হয়তো ভে!ঙে গুড়িয়ে যেতো!কি করে পারছে মেয়েটা?এতো শক্তপোক্ত কেনো হৃদযন্ত্রটা তার?এই মেয়েও কি কভু ভাঙতে পারে?ভেঙে চু!রমা!র হতে পারে?পারে কি?তার ভাবনায় ছ্যাদ ঘটে চাঁদের ফোনকলে।মাত্রই তার কথা ভাবছিলো আর সে ই ফোন দিলো।বিষয়টা ভেবেই হাসলো ছেলেটা।মনে মনে ভাবলো ‘মেয়েটার হায়াৎ আছে’ পরক্ষণেই বিষয়টাকে কুসংস্কার মনে করে মাথা থেকে ঝেড়ে ফেললো।কল রিসিভ করতেই ওপাশ থেকে ভেসে আসলো চাঁদের উত্তেজিত কন্ঠস্বর,
“অরণ!অরণ!আমি….আমি মাত্রই….মাত্রই…”
কপালে চিন্তার ভাজ পড়ে অরণের।সে জিজ্ঞেস করে,
“কী হয়েছে চাঁদ?কোনো সমস্যা?আসবো আমি?”
“হ্যা আপনি আসুন।আপনি বলেছিলেন না?আমি সত্যি আম্বিয়া আপুকে আবার দেখেছি।আমি তার পিছু নিচ্ছি জলদি আসুন”
লম্বা শ্বাস নিয়ে খানিকটা ঢোক গিলার ভঙ্গিতে অরণ বলে,
“আম…আমি আসছি।তুমি বলো কোথায় তুমি?আর শোনো খুব সাবধানে পদক্ষেপ নেবে।মেয়েটা যাতে কোনো টের না পায়”
“চিন্তা করবেন না।আমি আজিমপুরে আছি জলদি আসুন”
“আজিমপুর?আজিমপুরের কোথায়?”
ফিসফিসিয়ে চাঁদ বলে,
“আপনি…আপনি আজিমপুর কলোনির দিকে আসুন।মেয়েটা ঐদিকটায়ই যাচ্ছে।প্লিজ জলদি আসুন”
“তুমি সাবধানে থেকো আর ভয় লাগলে এগিয়ো না।ওখানেই থেমে যেও।লাইফ কিন্তু রি*স্কে নেবে না চাঁদ”
“চিন্তা করবেন না,আসুন”
বলেই কলটা কাটে চাঁদ।চাঁদ কল কাটতেই ত্রস্ত পায়ে হাটা ধরে অরণ।বেশিক্ষণ লাগবেনা যেতে।সে বর্তমানে নীলক্ষেত আছে।বড়জোড় মিনিট দশেক লাগবে।তবুও তার প্রাণপন চেষ্টা দ্রুত যাওয়ার।কি যে করবে মাথায় আসছেনা কিছু।মস্তিষ্কে ঘুরপাক খাচ্ছে কিছু অজানা আশংকা।দ্রুত পা চালায় সে।যেতে হবে তাকে।পৌঁছাতে হবে মেয়েটার কাছে।এই মেয়েটার কিছু হলে তার বন্ধু বেঁচেতো থাকবে অথচ মৃ!তের ন্যায়,সে কথা সে জানে।খানিকের জন্য মেয়েটার সাথে যদি অভিমানের পাল্লাও চলে সেই অভিমান থেকে হারিয়ে যেতে দেবেনা বন্ধুর জীবন থেকে।বন্ধুর আমানত যখন মেনেছে,আমানত রক্ষা সে অবশ্যই করবে।হোক তা নিজের জীবনের ঝুঁকির উপর দিয়েই!
ধীরপায়ে চাঁদ এগুচ্ছে মেয়েটার পিছু।কালো রঙে আবৃত মেয়েটা।হুডির সাথে হাতমোজাও পরেছে।হাতে কিসের যেনো এক বড় ব্যাগ।সন্দেহের মাত্রা দ্বিগুন হচ্ছে চাঁদের।এই মেয়েটা নিশ্চিত বড়সড় কেউ।কিয়ৎক্ষণ পূর্বেই আজিমপুরের দিকের একটা টিউশন থেকে বেরিয়েছে সে।তখনই নজরে এসেছিলো মেয়েটা।অতি সাবধানে তার পিছু নিতে নিতেই অরণকে কল দিয়েছিলো সে।বর্তমানেও যথেষ্ট বুঝেশুনে এগুচ্ছে।কিন্তু খুব সাবধানে থেকেও লাভ হলোনা চাঁদের।ব্যাগটার দিকে চেয়ে থাকতে থাকতে অসাবধানতাবশত কিছুর সাথে হোচট সে খেয়েই গেলো।অতঃপর ধপাস করে কিছু পড়ে যাওয়ার আওয়াজ হতেই আম্বিয়ারূপী মেয়েটা পিছু ঘুরে তাকালো।কিন্তু তার আগেই চাঁদ মুখ ঘুরিয়ে নিয়েছে।পায়ে ব্যথা পাওয়ার ভঙ্গিমায় পা ডলার নাটক করছে যেনো মেয়েটা বুঝতে না পারে।হয়তো কাজ হলোও।তবে মেয়েটা দ্রুতগতিতে চলা আরম্ভ করলো।চাঁদ উঠে ঘুরে তাকাতেই মেয়েটাকে আর দেখতে পেলোনা।এদিক সেদিক চাইলো।খোঁজার চেষ্টা করলো কিন্তু পেলোনা।হতাশ হয়ে কলোনির ভেতরেই এক পাশের পাকায় বসে পড়লো।বেশকিছুক্ষণ বসে থাকলো সেখানে।ভাবতে থাকলো পরবর্তীতে কি করবে,কীভাবে কী করা যায়।হঠাৎ পাশে কেউ বসতেই সেদিকে চাইলো সে।অতঃপর অরণকে দেখতেই হতাশ গলায় বললো,
“কিছুই করতে পারলাম না”
“কেনো?কী হয়েছে?”
“পড়ে গিয়েছিলাম।নাহয় মেয়েটার রহস্য অবশ্যই জানতে পারতাম”
ভয়মিশ্রিত কন্ঠে অরণ বলে,
“দেখেনি তো তোমায়?”
“দেখেছে,আমি মুখ ঘুরিয়েছিলাম।আর ব্যথা পাওয়ার অভিনয় করেছি যাতে না বুঝে”
“তারপর কি সে পালিয়ে গেলো?”
“পালাতে দেখিনি।আমি উঠে ঘুরতে ঘুরতে কোথায় যেনো গায়েব হয়ে গেলো।খুঁজেও পেলাম না”
কিছুক্ষণ চুপ থেকে অরণ গম্ভীরভাবে বললো,
“যতটা চালাক নিজেকে মনে করছো আদোতে তা নও তুমি”
“মানে?”
“মেয়েটা যদি তোমার অভিনয়ে ফেসেই যেতো তবে এতো দ্রুত পালাতো না বা গা-ঢাকা দিতোনা।নিশ্চিত সন্দেহ করেছে।তুমি শিওর হয়ে বলো,দেখেনিতো?”
“সম্ভবত দেখেনি”
“সম্ভবত কী আবার?শিওর হয়ে বলো”
“দেখার তো কথানা!”
“ঠিক আছে চলো এখান থেকে।এখানে থেকে কথা বলাও রি!স্কের”
“চলুন”
বলেই দুজনে উঠে দাঁড়ায়।কথা বলতে বলতে বের হয় কলোনি থেকে।নিজেদের মধ্যে আলোচনায় এতোটাই মশগুল ছিলো যে দু’জোড়া চোখের কবলে পড়ে গেলো অথচ জানতেও পারলোনা সে খবর বোকা ছেলেমেয়ে দু’টো।অতঃপর অরণের চাঁদকে তার বাসা অব্দি পৌঁছে দেয়া পর্যন্ত একজোড়া তীক্ষ্ণ চোখের আড়াল তারা হতে পারলোনা।জীবনে কী আসতে চলেছে তবে?কোনো অজানা বি!পদসমৃদ্ধ ঝড় নাকি অপ্রত্যাশিত কিছু যা কল্পনাতীত দুজনার?
দিন দুয়েক পর,
সেকেন্ড প্রফের রেজাল্ট পাবলিশ হবে আজ।ফার্স্ট প্রফের ক্ষেত্রে যতটা উত্তেজিত চাঁদ ছিলো।ততটা উৎফুল্লতা আজ আর নেই।সে নির্লিপ্ত ভঙ্গিতে বসে আছে ক্যাম্পাসে।বন্ধুবান্ধব পাশে আসতেই খানিক হাসলো।মেকি হাসি যাকে বলে!মনকাড়া সেই হাসিটা কোথায় মিলিয়ে গেলো?যে হাসিতে অনেকের হৃদক্ষ!রণ করতো মেয়েটা?কোথায় মিলিয়ে গেলো সেই তেজী মেয়েটা?কলেজে আসলেই সে বিষন্নতায় ছেয়ে থাকে কেনো?কী তার কারণ?কেউ জানেনা।হয়তো কেউ জানতে চায়ও না।এসব ভাবতে ভাবতেই মুচকি হেসে দীর্ঘশ্বাস ছাড়ে চাঁদ।কতটা বিষাদতাপূর্ণ সেই দীর্ঘশ্বাস তা বোঝা বড় দায়!তবুও এক পুরুষালি কন্ঠ কানে বাজতেই সে পানে তাকায় চাঁদ,
“দীর্ঘশ্বাস দুঃখ বাড়ায় বৈ কমায়না চাঁদ”
অতঃপর ঠোট প্রসারিত করে ছেলেটার পানে চেয়ে সে বলে,
“পাশে বসো ফায়ান,কথা বলি”
বুকটা ধুক করে উঠলো ফায়ানের।প্রণয় নামক পুরুষটার তার জীবনে হঠাৎ আগমনের পর থেকে তার কথা ছাড়া আর কোনো কথা কখনো মেয়েটার মুখে শোনেনি সে।তবে আজ কী বলতে চায়?নিশ্চয়ই প্রণয়ের দেয়া আঘা!তগুলোর কথাই বলবে?তবুও শুনতে চায় সে।এই মেয়েটার কন্ঠেও একপ্রকার জাদু আছে।মন ভালো করার জাদু।বাকিদের কথা জানেনা তবে তার মন ভালো করার জাদু মিশিয়েই বোধহয় মেয়েটা কথা বলে!অধীর আগ্রহে পাশে বসে ফায়ান।বসতেই চাঁদ বলে,
“বিনামূল্যে একটা উপদেশ দিতে চাই ফায়ান।নেবে কি?”
“বি*ষ দিলেও নিয়ে নেবো”
“কী?”
“মানে হ্যা নেবো।না নিতে পারলেও চেষ্টা করবো নেয়ার।বলো”
“জীবনে আর যাই করো,কারো জন্য মনে সুপ্ত অনুভূতি জাগাবেনা।এটা জঘন্য,ভীষণরকমের জঘন্য”
তৎক্ষনাৎ ফায়ানের জবাব,
“ভুল বললে”
“কীভাবে?”
“যে অনুভূতিই সুপ্ত তা জঘন্য হয় কি করে?”
চাঁদের প্রতিত্তোর করার পূর্বেই পাশে এসে বসে অরণ।অরণ বসতেই ফায়ান উঠে যেতে চাইলে চাঁদ বলে,
“উঠছো কেন?বসো”
অরণও বলে,
“উঠোনা,আড্ডা দেই।আজ না রেজাল্ট দেবে?কনফিডেন্স কেমন তোমাদের?”
ফায়ান জবাব দেয়,
“সেই আগের মতোই”
ফায়ানের জবাব পেয়ে চাঁদকে প্রশ্ন করে অরণ,
“আর তোমারটা?”
“হ্যাভ নো কনফিডেন্স” [কোনো আত্মবিশ্বাস নেই]
অরণের প্রশ্ন,
“হোয়াই?” [কেনো?]
“মন বলছে আর বাকিটা মস্তিষ্ক”
বলে আর একটুও অপেক্ষা করেনা চাঁদ।হেটে সেদিকটায় আসে যেদিকটায় আজ থেকে আরও একবছর আগে ফার্স্ট প্রফের রেজাল্টের সময় প্রণয়ের সাথে দাড়িয়েছিলো সে।ছেলেটা হাত ধরে আশ্বাস দিয়েছিলো তাকে।অথচ আজ সে একা।আশ্বাস অথবা সান্ত্বনা সে খুঁজছেনা তবুও মনের কোথাও এক তীব্র আকাঙ্ক্ষা,মানুষটা আসুক!একবার হলেও আসুক!অন্তত চোখের চাওয়া চেয়ে যাক।কিন্তু না।সে আসেনি।মিনিট দশেক দাড়ানোর পরও সে আসেনা।আর অপেক্ষা করেনা চাঁদ।রেজাল্ট দেখার উদ্দেশ্যে পা বাড়াতে নিলে পাশে এসে দাঁড়ায় কেউ।বুকের হৃদস্পন্দন তীব্র হয় চাঁদের।সে কি এসেছে?সমস্তকিছু ছাপিয়ে কি অবশেষে এলো বলে?গতবারের ন্যায় এবারও কী বলবে?
“এতো বিষন্নতা কেনো চন্দ্র?নিজের প্রতি আশাবাদী নন আপনি?”
নিজের মতো করেই প্রণয়ের বলা কথাটাকে সাজালো চাঁদ।অথচ পাশে ঘুরে অরণকে দেখে বুকে কোথাও সূক্ষ্ম ব্যথা হলো তার।আজও ছেলেটা এলোনা।তবুও কেনো হৃদয় তার প্রহর গুনে?কেনো অন্তরজুড়ে প্রতারক মানুষটার বসবাস?সে কি আদোতে প্রতারক?প্রতারণা করেছে কি তার সাথে?কিন্তু চাঁদের নিজ মনই বিষয়টার বিরোধিতা করলো।মন বললো এমন কিছুইতো লোকটা করেনি।সেই হয়তো বেশি ভেবে বসেছিলো।যার ফলস্বরূপ এখন বুকের মাঝের হিয়াটা ভীষণভাবে পু*ড়ছে।পু*ড়ে কি ছাই হওয়ার পথে?নাকি হয়েই গেছে?উত্তর পায়না সে।কোনোকিছুরই উত্তর পায়না।নিজে নিজেও কোনো উত্তর মিলিয়ে নিতে পারেনা।কোথাও যেনো সংকোচবোধ কাজ করে।আগে লোকটাকে নিয়ে কতশত কল্পনা-জল্পনা করে ফেলতো।অথচ আজ!আজ সে পারেনা সেসব।হয়তো ইচ্ছে করেই করেনা!অরণ চাঁদকে চোখ দিয়ে আশ্বাস দিতেই বিনিময়ে খানিকটা হেসে রেজাল্ট দেখতে এগোয় চাঁদ।ভীড়ের মাঝে যখন সে হারিয়ে যায় ঠিক তখনই আড়াল হতে বের হয় প্রণয়।তবুও আড়ালেই থেকে যায়।কাছে আসেনা।পাশেও আসেনা।দূর হতে কেবল দেখে যায়।
রেজাল্ট দেখে বের হতেই অরণের নজরে চাঁদের স্বাভাবিক মুখশ্রী পড়তেই কপাল কুচকায়।এই মুখশ্রীতে না আছে উৎফুল্লতা না আছে বিষন্নতা।সে বুঝতে পারেনা আদোতে হয়েছে টা কী?তাই জিজ্ঞেস করেই ফেলে,
“রেজাল্ট কেমন হলো চাঁদ?বরাবরের মতোই প্রথম তাইনা?”
খানিকটা হেসে চাঁদ বললো,
“প্রথমতো অবশ্যই কেউ না কেউ হবে এটাই নিয়ম।তবে আমি হয়েছি দ্বিতীয়”
বিস্ময়ে ঠোটজোড়া কিঞ্চিৎ ফাক হয় অরণের।তা দেখে চাঁদ বলে,
“ফায়ান প্রথম হয়েছে।আর আমি এতে ভীষণ খুশি।যাই ওকে কংগ্রেটস জানাতে হবে।আপনিও চলুন”
চাঁদের কব্জি ধরে আটকে দেয় অরণ।অতঃপর বলে,
“খুব কষ্ট লাগছে?”
ঠোট প্রসারিত করে চাঁদ বলে,
“একদমই না!”
অতঃপর পরিস্থিতি স্বাভাবিক করতে অরণের বাহুতে হালকা চাপড় দিয়ে হাসতে হাসতে বলে,
“আপনিও না!আমিতো জানতামই এমন কিছু হবে।পরীক্ষা তেমন ভালো হয়নি বলেছিলামতো আপনায়!বেশি বেশি ভাবছেন।চলুন”
অরণের হাত না ছাড়িয়েই তাকে টেনে ফায়ানকে খুঁজতে লাগে চাঁদ।আর সমস্তকিছু সাদাটে-ধূসর বর্ণের বিড়ালাক্ষীজোড়া দ্বারা মন এবং মস্তিষ্কে ধারণ করে প্রণয়।কোনো প্রতিক্রিয়া না করে আড়াল হতেই বিদায় নেয় সে।অথচ সেখানের কেউই জানলোনা সে এসেছিলো!এসেছিলো চাঁদের বিড়ালাক্ষী মানব,কোনো এক অজানা টানের সুর শুনে।কিন্তু সে কথা কারো কর্ণকুহরে গেলোনা।জানলোনা হৃদয়পো!ড়া মানবীটাও।তার প্রেমিক পুরুষ যে নীরবে এসে নীরবেই চলে গেলো ঘুনাক্ষরেও টের পেলোনা সে।অথচ এক আকাশ মন খারাপ নিয়ে প্রস্থান করলো সে স্থান।না প্রণয়ের সুপ্ত প্রেম কেউ জানলো,না জানলো চাঁদের সুপ্ত প্রেমে পাওয়া আঘা!তের ধ্বংসস্তূপ।
To be continued…..
[বিঃদ্রঃগতকাল ছোটখাটো একটা এক্সি!ডে!ন্টের স্বীকার হই।যার দরুন গল্পটা কাল দিতে পারিনি।বহু কষ্টে অনেক রাত পর্যন্ত লিখেছি।তাই আর অত রাতে দেইনি।গল্পটা কাল্পনিক।ভুলত্রুটি ক্ষমার দৃষ্টিতে দেখবেন।আর পারলে আমার জন্য দুআ করবেন]