#অন্যরকম_ভালোবাসা
পর্ব১১
#মৌমিতা_শবনাম
নিরব মনির সাথে কথা বলেছে কালকে একটা কাজ শেষ করেই মনি বাংলাদেশে ফিরবে। মনি এখন বাংলাদেশের বাহিরে গেছে একটা কাজে। নিরবের চিন্তা হচ্ছে কাল তো মনি বিয়ের আগে আসতে পারবে না তাহলে বিয়েটা আটকাবে কি করে। এটা নিয়ে কিছুক্ষণ চিন্তা করে নিরব আবার বলে উঠে, –” কোনো ব্যাপার না হয়ে যাক বিয়ে আবার ডিভোর্স ও হয়ে যাবে। ”
নিরব রিক্সা নিয়ে নিজের বাড়ির দিকে রওনা দিল সে। তন্নিকে পাবে এই আনন্দে তার নাচতে ইচ্ছে করছে। যখন সে তন্নিকে বিয়ে করে আনবে একটা বড় করে পার্টি দিবে।
———–
সকাল ১০ টা বাজে চারিদিকে সবাই ব্যস্ত। তন্নি নিজের রুমে একা বসে আছে। মনটা কেমন যেন করছে। কোনো ঝামেলা হবে না তো নিরবের সকল প্ল্যান জানার জন্য সে বৃষ্টিকে সহ্য করতো। কিন্তু নিরব কি করতে চলছে সেটাই তো বৃষ্টি জানে না। যা হবার হয়েছে সে তার নতুন জীবনে বৃষ্টি বা নিরবের কারো ছায়া পড়তে দিবো না।
এসব ভাবতে ভাবতে আবার কলটা বেজে ওঠে। তন্নি ফোনের দিকে তাকিয়ে দেখে বৃষ্টি। বিরক্ত হয় সে আর কতো সহ্য করতে হবে এদের। ফোন রিসিভ করে কানে ধরে বলতে থাকে, –” প্লিজ তোর পায়ে পড়ি আমাকে আর কল দিস নাহ। তোরা দুজন আমাকে একটু শান্তিতে থাকতে দে।”
তখন ফোনের ওপাশ থেকে নিরব বলে ওঠে, –% থাকবে তো শান্তিতে তুমি আর আমি শান্তিতে থাকবো। আর এখন থেকে বৃষ্টি আর কল দিয়ে তোমায় বিরক্ত করবে নাহ। আমাকে ছেড়ে দিতে বলে জ্বালাতো অনেক তাই নাহ।”
তন্নি দাঁতে দাঁত চিপে বলল– ” তোর সাহস কি করে হলো আমায় কল দেওয়ার!”
নিরব বেহায়া হাসি দিয়ে বলে,–” আমি দেই নও তো বৃষ্টি দিয়েছিল আমি শুধু ওর কাছ থেকে ফোনটা নিয়ে কথা বলছি সোনা।”
নিরবের কথায় কপাল কুচকে ফেলে। কান থেকে ফোনটা সরিয়ে এক আঁচড়ে ফোনটা ভেঙে ফেলে। কি চাই এই দুইজন কেন তার পিছু ছাড়ছে না। তখনই দরজা টেলে রুমে ঢুকেন তুষার সাহেব। তুষার সাহেবকে দেখে তন্নি নিজেকে কন্ট্রোল করে নেয়। তন্নি মুখে হাসি নিয়ে বলে, –” বাবা তুমি!”
তুষার সাহেব মেয়ের দিকে তাকিয়ে হেসে বলে,–” হ্যা আসলাম তোর সাথে গল্প করতে একটু।”
তন্নি তার বাবাকে বসার জায়গা করে দিয়ে তার পাশে সেও বসে। তুষার সাহেব তন্নির মাথায় হাত দিয়ে বলে,–” মা আমায় ক্ষমা করে দিস আমার ভুলের জন্য তুই এতো কষ্ট সহ্য করেছিস।”
তন্নি সাথে সাথে বলে,–” কি বলছো এসব বাবা তুমি কোনো ভুল করো নি তুমি তো আর জানতে না ও এমন হবে। ”
তুষার সাহেব মেয়েকে আরো কিছু বলতে যাবে তখন পার্লার থেকে লোক চলে আসে তাকে সাজাতে। তুষার সাহেব ঘড়ির দিকে তাকিয়ে দেখে ১ টা বাজে। উনি মুচকি হেসে বলে, –” দেখ তো এখন কয়টা বেজে গেছে কিভাবে যে সময়টা চলে যাচ্ছে। ”
তন্নিও হালকা হাসলো। দুজনের চোখেই পানি চিকচিক করছে। তুষার সাহেব বেশিক্ষণ থাকলেন নাহ এখানে চলে গেলেন বেরিয়ে। এখানে থাকলে চোখের পানি ধরে রাখতে পারবে না।
———
নিরব বেরিয়ে যাচ্ছিল বাসা থেকে তখন বৃষ্টি তার সামনে এসে দাঁড়ায়। নিরব বিরক্ত নিয়ে তার দিকে তাকায়। বৃষ্টি আকুতি ভরা চোখ নিয়ে বলে,–” প্লিজ তোমার সাথে কিছু কথা আছে। ”
নিরব গম্ভীর গলায় বলে, –” আমার হাতে তোমার ফালতু কথা শোনার মতো সময় নেই।”
বৃষ্টি অসহায় চোখ করে তাকায়। নিরব তা পাত্তা না দিয়ে চলে যেতে নিলেই বৃষ্টি ওর হাত ধরে বলে, –” প্লিজ এটা খুব দরকার বলা।”
নিরব হাত ঝাড়ি মেরে ফেলে দিয়ে বলে– ” রাতে এসে শুনবো।”
এই বলে বড় বড় পা ফেলে সে চলে যায়। বৃষ্টির খুব আফসোস হয় এখন। কেন যে সে তন্নির সংসারটা ভাঙতে গিয়েছিল এখন তো তার নিজের সংসারে ফাটল ধরেছে। এখন আর আফসোস করে কি লাভ কর্ম ফল তো পেতেই হবে।
————–
বিদায় শব্দটা খুবই যন্ত্রণাদায়ক। তন্নির বিদায় ঘনিয়ে এসেছে। তাকে যে এখন বাবার বাড়ি ছেড়ে রওনা দিতে হবে শ্বশুর বাড়ির পথে। বিয়েটা সুষ্ঠু ভাবেই সম্পুর্ন হয়েছে তাদের। তন্নির চোখে পানি জমেছে এখনই যেন টুপ করে পানি গাল বেয়ে গড়িয়ে পড়বে। তুষার সাহেব মেয়ের হাত রাদের হাতে সঁপে দিয়ে বলে– ” আমার মেয়েটাকে দেখে রেখো ও খুব সহজ সরল।”
তুষার সাহেব নিশ্চিন্ত হলেন কোনো বাধা বিপত্তি ছাড়াই বিয়েটা সম্পূর্ণ হয়েছে। তন্নির বিদায়ের পালা মিশমি আচল দিয়ে মুখ ঢেকে কান্না করছেন। তুষার সাহেব নিজেকে শক্ত করে রেখেছেন। তন্নি কাঁদছে মা বাবাকে ছেড়ে যেতে ইচ্ছে করছে না।
অবশেষে তারা রওনা দিল রাদের বাসার উদ্দেশ্যে। তন্নি সিটে হেলান দিয়ে চোখ বন্ধ করে বসে আছে তার কোলে গুটিশুটি মেরে শুয়ে ঘুমিয়ে আছে রাইদা আর তার দুইপাশে র এক পাশে বসে আছে রাদ অপর পাশে রিধি। বাসায় পৌঁছাতে তাদের ৩০ মিনিটের মতো লাগে।
দরজার সামনে দাড়িয়ে আছে রাদ আর তন্নি। রিধি ভিতরে গেছে বরণ ডালা আনতে। ৫ মিনিট পর রিধি বরণ ডালা এনে ওদের দুজনকে বরণ করে ভিতরে নিয়ে আসে।
———————
নিরব এয়ারপোর্টে বসে আছে মনির অপেক্ষায়। ১১:৩০ এ ফ্লাইট ল্যান্ড করবে। ঘড়ির দিকে তাকিয়ে দেখে ১১:২৫ বাজে। নিরব বিরক্তির নি:শ্বাস ছাড়ে। ৫ মিনিট সময়ও এখন ৫ ঘন্টার সমান মনে হচ্ছে। তন্নি আর রাদের বিয়ে হয়ে গেছে মনে হতেই কপাল কুচকে ফেলে নিরব।
মনি মাত্রই ফ্লাইট থেকে নেমেছে। একটা লোককে পায়চারি করতে দেখে। পড়নে তার টি-শার্ট আর প্যান্ট। মনি ঐ লোকটার কাছে গিয়ে বলে,–” আপনি কি নিরব?”
মেয়েলি গলা পেয়ে পিছনে তাকায় নিরব। শর্ট ড্রেস পড়া চুলের কালার বাদামী পড়নে হাই হিল। নিরব বলল,–” হ্যা আমি নিরব।”
মনি হালকা হেসে তার দিকে হাত বাড়িয়ে দিয়ে বলে– ” আমি মনি।”
নিরবও হাত মেলায়। মনির লাগেজ গুলো নিয়ে নিরব বলে,–” চলুন হোটেলে যাবেন। ”
মনি বলল,–” না না আগে চলুন রাদ আর তন্নির বিয়ে ভাঙতে হবে। ”
নিরব ত্যাড়া ভাবে বলে,–” ওহ তাই আপনি ওদের বিয়ে ভাঙবেন এই আশায় ওরা বিয়ে আটকিয়ে রেখে বসে আছে তাই নাহ?”
মনি বুঝতে না পেরে বলে,–” মানে?”
নিরব দীর্ঘশ্বাস ফেলে বলে– ” ওদের বিয়ে হয়ে গেছে। ”
মনি চিৎকার দিয়ে বলে,–” হোয়াট তাহলে আমার এখানে এসে ফাইদা হলো কি তাহলে?”
নিরব বলল,–” আস্তে আমার কাছে প্ল্যান আছে চলুন হোটেলে ঐখানে বসেই বলবো সব।”
মনি আর কিছু বলল না নিরবের পিছু পিছু যেতে লাগলো। মনি ৩ বছর আগে রাদকে ছেড়ে চলে গিয়েছিল তার নতুন বয়ফ্রেন্ড এর জন্য কিন্তু সেই বয়ফ্রেন্ড তার সাথে রুমডেট করার পর তাকে ছেড়ে চলে যায় পরে রাদের কাছে ফিরতে চাইলেও সে তাকে গ্রহণ করে নি। কয়েকদিন আগে একটা কাজে দেশের বাহিরে গেছে তো এর মাঝে এতো কিছু হয়ে গেছে।
——————–
রাদ আর তন্নি ছাদে দাড়িয়ে আছে। আজ তার মনে ভীষণ শান্তি লাগছে। রাদের বুকে মাথা রেখে দাড়িয়ে আছে তন্নি কেমন একটা যেন শান্তি লাগছে। তবে কি সে রাদকে ভালোবাসতে শুরু করেছে।
এসব ভাবছিল তখন রাদ বলল,–” তুমি খুশি তো মিসেস তন্নি।”
তন্নি হালকা হেসে বলে, –” হুম অনেক খুশি।”
রাদ জিজ্ঞেস করল, –” ক্লান্ত লাগছে?”
তন্নি চোখ দুটো ছোট করে মাথাটা নাড়িয়ে বলে, –” একটু একটু।”
তন্নির এমন কথা বলার ধরণ দেখে আরেক দফা ফিদা হয়ে যায় রাদ। এই এক অন্যরকম অনুভূতি, অন্যরকম ভালোলাগা কাজ করছে। তন্নি আর রাদ দুজনই রুমে চলে আসে। তন্নি অস্বস্তি ফিল করছে দেখে রাদ বলে,–” নো প্রবলেম আমি সোফায় শুয়ে পড়ছি তুমি বিছানায় শুয়ে পড়ো কাল থেকে রাইদাও থাকবে তোমার সাথে।”
তন্নি কিছু বলল নাহ তার শরীর ভীষণ ক্লান্ত। চোখ দুটো বিশ্রাম চাচ্ছে। রাদ বিছানা থেকে বালিশ নিয়ে সোফায় শুয়ে পড়ে। তন্নি হালকা ফ্রেশ হয়ে এসে বিছানায় শুয়ে পড়ে। বিছানায় গা এলিয়ে দিতেই ঘুম তার চোখে ভর করে। সে ঘুমে তলিয়ে যায়। তন্নি ঘুমিয়ে যাওয়ার পর রাদ উঠে এসে তন্নির পাশে বসে। এক ধ্যানে তাকিয়ে আছে সে তন্নির দিকে। মনটা আজ ভীষণ শান্তি লাগছে ইচ্ছে করছে বুকে জড়িয়ে ঘুমাতে কিন্তু তন্নির মনে তো ওর জন্য কোনো ফিলিংস নেই তাই সে আনার গিয়ে সোফায় শুয়ে পড়ে।
চলবে