সে_প্রেমিক_নয় #Mehek_Enayya(লেখিকা) #পর্ব ১৫

1
534

#সে_প্রেমিক_নয়
#Mehek_Enayya(লেখিকা)

#পর্ব ১৫

মাথা নিচু করে বসে আছে তনুসফা শেখ। সামনেই চেয়ারে বসে আছে মন্ত্রী সাহেব। মুখে তার রাগের আভাস। তনুসফা একবার তার অ্যাসিস্ট্যান্টকে দেখে শান্ত স্বরে বলে,

-স্যার বিশ্বাস করুণ আমি মিথ্যে বলিনি। ইরান কিছুদিন আগেই বিয়ে করেছে। আমরা বাসার কেউ ওর বিয়ের বেপারে কিছুই জানি না।

-তনুসফা শেখ আপনার উচিত ছিল আপনার ভাইয়ের বিষয় সবটা জেনে আমাকে ওয়াদা দেওয়া। এখন আমার মেয়েকে যে আমি কথা দিয়েছি ওর ইরানের সাথেই বিয়ে হবে।

-স্যার ক্ষমা করে দিন আমায়।

-আমার মেয়ে আমাকে ব্ল্যাকমেল করছে ও ইরানকে ছাড়া অন্য কাউকে বিয়ে করবে না। আমি কখন আমার মেয়ের আবদার অপূরণ রাখিনি।

-স্যার আপনি যদি ইরানের জীবন থেকে ঐ মেয়েকে বের করে আপনার মেয়ের সাথে বিয়ে দিতে পারেন তাহলে আমি আপনার সাথে আছি। ঐ মেয়েকে আমারও পছন্দ নয়।

মন্ত্রী সাহেব (হাসিব আলী) আড়চোখে তনুসফার দিকে তাকায়। কণ্ঠস্বর খাঁদে ফেলে বলে,

-আপনি আমার সাথে থাকবেন?

-জি অবশ্যই স্যার।

-সত্যি তনুসফা শেখ নিজের ভাইয়ের বিরুদ্ধে যাবেন?

-না স্যার। ইরানও ঐ মেয়েকে পছন্দ করে না। শুধু কিছু কারণে ও ঐ মেয়েকে বিয়ে করেছে।

-ঠিক আছে। মেয়ের জন্য এখন অন্যের জীবন নষ্ট করব। আপনি আমাকে ঐ মেয়ের সব ডিটেলস দিয়ে দেবেন।

-আমি এখনই মেইল করছি স্যার।

-যদি গাদ্দারি করেন তাহলে আপনার ভাইয়ের চোখে আপনাকে খারাপ বানাতে আমার এক সেকেন্ডও সময় লাগবে না। তাছাড়াও নির্বাচন কিন্তু সামনে।

-বিশ্বাস করুণ স্যার।

-ঠিক আছে।

🌸🌸

হাতে কফির গ্লাস নিয়ে বেলকনিতে দাঁড়িয়ে আছে আনাবিয়া। মনোযোগ তার সামনের গাছের ডালে বসা দুইটি পাখির ওপর। চোখের নিচে কালি জমে গিয়েছে। মলিন মুখশ্রী। অগোছালো কেশগুলো অবহেলায় ঝুঁলছে। পরনে কালো পেন্ট, কালো টি-শার্ট ওপরে সাদা রঙের শার্ট। শার্টয়ের বোতাম গুলো খোলা। তার গ্রান্ডমারা রাশিয়া চলে গিয়েছে আজ দু সপ্তাহ হলো। আনাবিয়া এখন একা। সম্পূর্ণ একা। মাঝে মাঝে তার নিজেকে জেলখানার আসামী আসামী মনে হয়। সে ভালো নেই গত দুই সপ্তাহ ধরে। ইরান একটু বেশিই অত্যাচার করে তার ওপর। আর সে চেয়েও পারছে না ইরান থেকে দূরে সরে যেতে। অদ্ভুত এক বন্ধনে আটকে গিয়েছে সে। কফির মগ রাখতে রুমের ভিতরে আসে। সহসা আয়নাতে নিজেকে দেখেই চমকায় আনাবিয়া। ধীরে ধীরে সামনে এগিয়ে যায়। গলায় কালচে আঘাতের দাগ। আনাবিয়া হাত বুলায় সেই আঘাতে। সবাই তো চলে গেলো অথচ তাকে কত জঘন্য স্মৃতি দিয়ে গেলো। জোবান এইরকমটা না করলেও পারত।

গ্রান্ডমারা রাশিয়া যাওয়ার আগের দিন রাতে আনাবিয়া ঘুম ভাঙতেই দেখে পানি শেষ। তখন রাত একটা বাজে। ইরান গভীর ঘুমে মগ্ন। তাই সে-ই দরজা খুলে বের হয়। ড্রইংরুম পেরিয়ে রান্না ঘরে প্রবেশ করে। আইম দিতে দিতে পানি নিচ্ছিলো তখনই সে অনুভব করে তার কোমরে কারো শক্ত হাত। ভীত হয়ে চমকে পিছনে তাকায়। বিকৃত হাসি দিয়ে জোবান দাঁড়িয়ে আছে। আনাবিয়া তপ্ত নিঃশাস নিয়ে বলে,

-তুই এখানে কী করছিস? আমি তো ভয় পেয়ে গিয়েছিলাম।

জোবান কিছু বললো না। লোলুপ দৃষ্টিতে আনাবিয়াকে দেখতে লাগলো। আনাবিয়া বিরক্ত হয়ে বলে,

-সামনের থেকে সর।

-জানিস তো আনা আমি তোকে অনেক বেশি ভালোবাসি। তোর শরীর আমাকে ভীষণ ভাবে আকর্ষণ করে। তোকে নিয়ে আমার মাথায় অনেক উল্টোপাল্টা চিন্তা জন্ম হয়েছে আনা। এখন সেগুলোকে কিভাবে দমিয়ে রাখবো?

-ফালতু বকিস না জোবান।

আনাবিয়া পাশ কেটে যেতে নেয় কিন্তু জোবান তার হাত ধরে ফেলে। আনাবিয়া রাগের চরম পর্যায় পৌঁছে যায়। জোবানকে কিছু বলতে নেবে তার আগেই জোবান পিছনে থেকে আঁকড়ে ধরে তাকে। ঠাস শব্দ করে গ্লাস নিচে পরে যায়। আনাবিয়া রেগে পিছনে ফিরে নিজের সর্বশক্তি দিয়ে চড় মারে জোবানকে। চড় খেয়েও শান্ত হয় না জোবান। আনাবিয়ার পরিহিত শার্ট খামচে ধরে। ওপরের কয়েকটা বোতাম ছিঁড়ে যায়। রাগে ও ভয়ে আনাবিয়া এদিক সেদিক তাকায়। জোবান আনাবিয়ার গলায় মুখ ডুবায়। আনাবিয়া চিৎকার করে বলে,

-জোবান আমার সাথে নষ্টামি করবি না। ইরান তোকে মেরে ফেলবে।

জোবান উত্তর দিলো না। জোবানের গলায় একটা লকেট ছিল। ধরাধরি করতে করতে তার লকেট দিয়ে আনাবিয়ার গলায় অত্যাধিক জোরে আঘাত লাগে। ব্যাথা পেয়েও আনাবিয়া কোনো প্রতিক্রিয়া করল না। একটি করাই নিয়ে আচমকা জোবানের মাথায় বারি দেয়। ব্যাথায় কুঁকরিয়ে উঠে জোবান। আনাবিয়া ছিটকে দূরে পরে যায়।

আনাবিয়াকে রুমে না দেখে তাকে খুঁজতে খুঁজতে রুম থেকে বেরিয়ে আসে ইরান। ভ্রু কুঁচকে ড্রইংরুমে আসে। রান্নাঘর থেকে আওয়াজ শুনতেই দৌড়ে সেখানে যায়। আনাবিয়াকে বিধ্বস্ত অবস্থায় নিচে পরা দেখে ইরান তার দিকে এগিয়ে যায়। সামনেই জোবান ব্যাথায় মাথা চেপে ধরে রেখেছে। আনাবিয়াকে সম্পূর্ণ পরোক্ষ করে ইরানের বুঝতে অসুবিধা হয় না এখানে কী হচ্ছিলো। রাগে হাত মুঠি করে নেয় তেড়ে যায় জোবানের কাছে। একটার পর একটা ঘুষি দিতে থাকে জোবানের মুখে। মুখে অস্বাভাবিক বকা তো আছেই। আনাবিয়া ভীত হয়ে জড়োসড়ো হয়ে উঠে দাঁড়ায়। এতক্ষনে সবাই উপস্থিত হয়ে যায় রান্নাঘরে। আনাবিয়ার গ্রান্ডমা আশ্চর্য হয়ে যায় ইরানের ব্যবহার দেখে। লিলি আনাবিয়াকে জিজ্ঞেস করে,

-কী হয়েছে ইরান ব্রোর? সে এভাবে জোবানকে মারছে কেনো?

লুকাস ক্রিস ইরানকে ছাড়ানোর চেষ্টা করছে। ইরানের ভিতরে জানো আজ দানবের শক্তি ভর করেছে। আনাবিয়া কাঁপাকাঁপা কণ্ঠস্বরে বলে,

-জোবান আমার সাথে নোংরামি করতে নিয়েছিল।

-কী!(আনাবিয়ার গ্রান্ডমা)

-হ্যাঁ।

মারা শেষ হলে ইরান উঠে দাঁড়ায়। উস্কোখুস্ক হয়ে আনাবিয়ার সামনে এসে দাঁড়ায়। আনাবিয়ার হাত, মুখ গলা লক্ষ্য করে অস্থির হয়ে জিজ্ঞেস করে,

-আর ইউ ওকে? কোথায়ও আঘাত লেগেছে ডিয়ার?

আনাবিয়া হতবাক হয়ে যায়। কিছুক্ষন আগেই যে মানুষটি দানব ছিল এখন সে এতো অস্থির কিভাবে হয়ে গেলো। আনাবিয়া থমথমে গলায় বলে,

-ঠিক আছি।

-ওকে তো আমি মেরেই ফেলবো।

-ইরান স্টপ মাই চাইল্ড। কাল তো আমরা চলেই যাচ্ছি। ও আমাদের সাথে চলে যাবে আর মেরো না ওকে। (আনাবিয়ার দাদা)

-হ্যাঁ তুমি এখন আনাবিয়াকে নিয়ে রুমে যাও। ও ভয় পেয়েছে। ঘুমের প্রয়োজন। (দাদি)

-ঠিক আছে দাদিমা। (ইরান)

ইরান আনাবিয়ার হাত ধরে ওকে রুমে নিয়ে যায়। অশান্ত মনে সেই রাত পাড় করে দুইজন। পরেরদিন সবাই চলে যায় ইরান পারে না জোবানকে জিন্দা মাটিতে ঢুকিয়ে ফেলতে। কত বড় স্পর্ধা ঐ জা*নো*য়ারের!

-ম্যাম নিচে কিছু মানুষ এসেছে। স্যার এর সাথে নাকি বিজনেস করে।

ভৃত্যর আওয়াজে ভাবনা থেকে বেরিয়ে আসে আনাবিয়া। শান্ত কণ্ঠে বলে,

-যাও। আসছি।

কাবাড খুলে একটা কামিজ বের করে শরীরে জড়িয়ে নেয়। তারপর ওড়না সুন্দর করে গলায় পেঁচিয়ে রুম থেকে বের হয়। কয়েকজন লোক ড্রইংরুমের সোফায় বসে কিছু একটা নিয়ে কথা বলছে। সিঁড়ি দিয়ে একজন মেয়েকে নামতে দেখে তাঁদের দৃষ্টি সেখানে যায়। সবাই অবাক হয়ে তাকিয়েই রইলো আনাবিয়ার দিকে। আনাবিয়া হেঁটে তাঁদের সামনে এসে দাঁড়ায়। মুখর ভাবভঙ্গি গম্ভীর। দৃঢ কণ্ঠে জিজ্ঞেস করে,

-কারা আপনারা?

তিনজনের মধ্যে একজন লোক বলে,

-আমরা ইরান স্যারের সাথে নির্বাচন নিয়ে কিছু কথা বলতে এসেছিলাম। কিন্তু তার বাসায় অচেনা মেয়ে!

-আমি আপনাদের ইরান স্যারের কাজিন। সে এখন বাসায় নেই। দোয়েয়া করে পরে আসুন।

একজন আনাবিয়ার কথায় উপহাস স্বরে বলে,

-বাহ্! স্যার দেখি বিদেশী কাজিনকে পার্সোনালি নিজের বাসায় রাখে!

আনাবিয়ার রাগ হয়। কঠির কণ্ঠে বলে,

-জুবান সামলে কথা বলুন জনাব।

-স্যারের কাজিন হয়ে এতো দাপট! বেপারটা আশ্চর্যজনক বটে।

লোক গুলো চলে যায়। আনাবিয়া উদাসীন মনে নিজ রুমে চলে আসে। আজ লোকগুলোর কথার তার খারাপও লেগেছে আবার রাগও হয়েছে। কেনো ইরান তাকে সবার সামনে ওয়াইফ বলে পরিচয় দেয় না? কেনো সবাইকে কাজিন কাজিন বলতে হয়? তার ভালো লাগে না ইরানের কাজিন পরিচয়। সে লিগাল ওয়াইফ। তার শান, মান, এটিটিউডই থাকবে অন্যরকম।

___________________🌸

রাতে বাসায় আসে ইরান। রুমে আনাবিয়াকে না দেখে বেলকনিতে যায়। পুলে পা চুবিয়ে বসে আছে সে। ইরান কোট আর টাই খুলে আনাবিয়ার পাশে বসে পরে। ইরানকে দেখে আনাবিয়ার মুখ গোমড়া হয়ে যায়। ইরান নিজ দায়িত্বে আনাবিয়ার গলা থেকে ওড়না সরিয়ে আঘাতের দাগটা দেখে নেয়। শান্ত ভণিতায় বলে,

-অনেকটাই কমেছে।

-আচ্ছা আপনি আমার কে? আমাকে অকারণেই ছোঁয়ার অধিকার আপনাকে কে দিয়েছে?

ইরান হাসলো। দুই ঠোঁট প্রসারিত করে বলে,

-অধিকার দিতে হয় না নিজ দায়িত্বে বানিয়ে নিতে হয়। আমি কিন্তু জানি তোমার মনে ধীরে ধীরে আমার জন্য ফিলিংস জন্ম নিচ্ছে।

-হ্যাঁ বিশ্বজান্তা আপনি! ফালতু।

-ওকে ফালতুই বটে।

-আজ সকালে বাসায় কিছু লোক এসেছিল। আপনার সাথে দেখা করতে।

-বাসায় এসেছিল!

ইরান বিস্ময় হয়। আনাবিয়া বলে,

-হ্যাঁ। আপনার কাজিন রূপে আমাকে এই বাসায় দেখে উপহাস করল তারা।

-তাহলে তারা কেউই আমার চেনা নয়। হয়তো আমার কোনো শত্রু পাঠিয়েছিল তাঁদের।

-কিভাবে বুঝলেন আপনি?

-আমার পরিচিত কারো সাহস নেই আমার জিনিস নিয়ে উপহাস করার।

-ওহ।

নীরবতা বিরাজ করে দুইজনের মাঝে। আনাবিয়া আশেপাশে তাকিয়ে আমতা আমতা করে বলে,

-আমার ভালো লাগে না আপনার কাজিন হয়ে থাকতে।

-তাহলে কী হয়ে থাকতে চাও?

-আমি আপনার যা লাগি সেটা হয়েই থাকতে চাই।

-ওয়াইফ?

আনাবিয়া হ্যাঁ বোধক মাথা নারায়। ইরান মুচকি হাসে।

-তাহলে প্রেমে পরলে এবার?

-একদম না। আমার জাস্ট কাজিন হতে ভালো লাগে না।

-ঠিক আছে। আমি খুব জলদি আমাদের বিয়ের ফাঙ্কশন রাখছি।

-ফাঙ্কশন কেনো আবার?

-বড় করে একটা পার্টি হবে। সেইদিনই সবার সাথে পরিচয় করিয়ে দেবো তোমায়।

-ট্রু?

-ইয়েস।

খুশিতে চকচক করে উঠে আনাবিয়ার মুখশ্রী। উৎফুল্ল হয়ে উঠে দাঁড়ায়। গুনগুন গান গাইতে গাইতে রুমের ভিতরে চলে যায়।

>>>>চলবে।
(রাইটিং ব্লক এতো ভয়ংকর কেনো? পরিকল্পিত কাহিনী অর্ধেক ভুলেই গিয়েছি। মন চায় লেখালেখি বাদ দিয়ে দেই। ছোট পার্ট দিলাম বলে কেউ অসন্তুষ্ট হয়েন না। আসলে রেজাল্ট খারাপ হওয়ায় মন ভালো নেই। লিখতেও মন চায় না। ❤️)

1 COMMENT

  1. এই গল্পঃ কি এখানেই বন্ধ করে দিলেন?
    দেখুন সবাই অনেক আশা নিয়ে গল্পঃ পড়ে এভাবে মাজখানে বন্ধ না করে শেষ করে দিলে খুশি হতাম।

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here