#পরিণয়_প্রহেলিকা
#লেখিকা_সিনথীয়া
#পর্ব_২০ (১)
– শুধু আধা ঘন্টা। এর মাঝে ফিরে আসবেন। এর বেশী সময় লাগলে আমি খুজতে চলে যাব আপনাকে। আর তারপর কি হবে সেটা নাহয়……. বোঝা গিয়েছে শৈলী?
শৈলী এমনিতেই মিহরানের স্পর্শে দিগ বেদিক হারাচ্ছে, তার ওপর এই সতর্কতাবাণীর উত্তর মুখে দেওয়া ওর পক্ষে অসম্ভব। শুধু মাথা উপর নিচ করে কোনোভাবে নিজের সম্মতি জানাতে পারলো ও।
ওমনি হাত ছেড়ে দিল মিহরান। তখনই ঠোট দুটো টিপে শৈলী নিজের কব্জির ঠিক সেই জায়গাটা নিজের অজান্তেই অপর হাত দিয়ে ঢেকে ফেললো। মিহরান লক্ষ্য করলো বিষয়টা, নিঃশব্দে হাসলো, আশপাশে তাকালো। নাহ্ কেউ দেখেনি ওদের। অবশ্য দেখলে মিহরানের সমস্যা মনে হতো না কিন্তু ও চিন্তাটা শৈলীকে নিয়ে করে। মেয়েটা বিব্রতবোধ করতো।
মিহরান এক পা পিছাতেই শৈলী খোলা দরজা দিয়ে ঝটপট বের হয়ে গেল, তবে যেতেই বাইরের আলোর রশ্মিতে মেয়েটার মুখে ছেয়ে যাওয়া লাজ নজর এড়ালো না মিহরানের। তৃপ্ত মনে নিজেকে ঘুরিয়ে ফ্যাকাল্টিদের আসরে আবার যোগ হলো সে।
শৈলীর মাথা এখনো ভনভন করছে। মিহরানের সাথে দেখা হওয়ার পর থেকেই নিজেকে স্টার জলসা সিরিয়ালের নায়িকাদের মতন লাগে ওর। এই যে, এমন ভাবে শরীরের কাঁপাকাঁপি, হৃদয়ের ধুকপুক আগে হয়নি কখনো। চেহারা এরকম আপেলের মতন লাল বা উনুনের ভাপে রাখা পিঠার মতন গরম হয় নি জীবনে। এবারই প্রথম। একদম সিক্স, সেভেনের নবনিযুক্ত ন্যাশনাল কারিকুলামের মতন নতুন।
মিহরানের ছোয়া জায়গা এখনো শৈলী ছাড়তে পারে নি। হাত দিয়ে ধরেই রেখেছে। এতে ওকে হাটার সময় দেখতে একটু অদ্ভুত লাগলেও ও ব্যাপারটাকে বিশেষ পাত্তা দিচ্ছে না। ওর কাছে মিহরানই জরুরী। এই স্পর্শই জরুরী।
ছেলেদের থাকার রেষ্টহাউসটা মূল বিল্ডিং থেকে একটু দূরে তবে রাস্তা, সামনের লনের পাশ দিয়েই আছে। ওখান দিয়ে হেটে চললো চারজন। প্রিতি আর কেয়া ছিল সামনে আর লাবন্যর সাথে পেছনে হাটছিল শৈলী। কিছুক্ষণের মধ্যেই সেই বাড়িটাতে পৌছে গেল ওরা। বাড়িটা পুরাই নির্জন ও অন্ধকার দেখে প্রথমে গায়ে কাঁটা দিয়ে উঠলো শৈলীর। কিন্তু সাথেসাথেই কানে আসলো বাজনার আওয়াজ। চোখ ঘুরিয়ে তাকালো অপরপাশে। সামনে তেমন কিছু না দেখা গেলেও বোঝা যাচ্ছে খুব কাছেই কোনো প্রোগ্রাম চলছে।
লাবন্য উৎফুল্লতার স্বরে বললো,
-কি? বললাম না? ওরা অনেক মজা করছে ওখানে। চলো কেয়া আমরাও যাই, পিয়াল ভাইয়াকে তুমি সার্প্রাইসও দিতে পারবা।
কেয়ার উত্তেজনার শেষ নেই।
– চলো চলো যাই। এই, প্রিতি শৈলী তাড়াতাড়ি চল্।
সবাই আরও কিছু কদম আগাতেই লাবন্য হঠাৎ দাড়িয়ে গেল। কিছু মনে করার অভিব্যাক্তি দেখিয়ে বললো ও,
– ওহ্ শিট। মিনহাজ, আমার কাজিন, আমাকে ওর মানিব্যাগটা রুম থেকে আনতে বলেছিল। আমার ওটা নিতে যেতে হবে।
শৈলী প্রিতি কেয়া তিনজনই দাড়িয়ে তাকায় লাবন্যর দিকে। লাবন্য তখন শৈলীর হাত টানে,
– কেয়া, প্রিতি তোমরা দুইজন আগাও সামনে। শৈলী তুমি একটু আমার সাথে চলবা? আসলে এতো নির্জন জায়গা আমার একা ভয় লাগছে।
প্রিতি প্রতিবাদ জানালো,
-আমরা সবাই ওয়েইট করি। তুমি যাও, মানিব্যাগ নিয়ে আসো।
লাবন্য মাথা নাড়ায়,
-মশা মারতে কামান দাগানোর দরকার নেই। একটা ছোট কাজের জন্য এতো মানুষের থাকার মানেই হয় না। আর আমি তো শুনলাম পিয়াল ভাইয়া মনে হয় আজকে গিটার বাজাবে। কেয়া তুমি কি ওটা মিস করতে চাও? যদি আমাদের যেতে যেতে দেরী হয়ে যায়? না শুনতে পাও গান?
এক মুহূর্ত দম নেয় লাবন্য। তবে ওদের কাউকে কথা বলার সুযোগ দেয় না। কেয়ার চেহারা দেখেই যা বোঝার বুঝে ফেলে,
-এর জন্যই বলছি প্রিতি আর কেয়া তোমরা চলে যাও। আমি আর শৈলী আসছি। আর শৈলী…তুমিও যেতে চাইলে যাও আমি একাই নাহয়…
শৈলী নড়ে ওঠে,
– না থাক, আমি আছি তোমার সাথে। প্রিতি, লাবন্য ঠিকই বলছে। তোরা দুজন চলে যা। আমার আর লাবন্যর আসতে বেশীক্ষণ লাগবে না।
প্রিতি এক পল ভেবে মাথা উপর নিচ নাড়ে। আর কথা বাড়ায় না। কেয়াকে নিয়ে সামনে হাটা দেয়। যেতে যেতে কেয়া কে বলে,
– ভাইয়াদের পার্টি হবে, এটা তুই জানতি না?
কেয়া আগের থেকেই এই বিষয়টা চিন্তা করছিল,
– আমিও তাই ভাবি, ফাজিলটা আমাকে ফোন দেয় নাই কেন? চল্ এখনই খবর নিচ্ছি ওর আমি।
……………………….
চেয়ারম্যান স্যার কথা শুরু করলে যে শেষের বাটন অন করতে ভুলে যান সেটা ডিপার্টমেন্টের সবাই জানে। তার ওপর আজ সবার ফ্রি টাইম, উনি আড্ডা চালিয়ে যাবেন বোঝাই যাচ্ছে। মিহরান এই নিয়ে তিন বার ঘড়ির দিকে তাকিয়েছে, মাত্র চৌদ্দ মিনিট পার হয়েছে শৈলীর যাওয়ার। ও আধা ঘন্টা সময় দিয়েছে যেটা পূরণ হতে এখনো দেরী আছে। মনে অস্থিরতা থাকলেও মুখে সেটা আসতে দিল না। চুপচাপ বসে রইলো মজলিশে।
…………………………
কেয়া আর প্রিতি চলে যেতেই লাবন্য শৈলীকে নিয়ে বাড়িটার দিকে আগালো। শৈলী কপাল কুচকে দেখলো একবার বাড়িটা,
– কয়েকটা রুম ছাড়া সব রুমের লাইট অফ কেন?
লাবন্য তাকায় না,
– ঐ সবাই পার্টিতে গিয়েছে তো, তাই বোধহয় নিজেদের রুমের লাইট বন্ধ রেখে গিয়েছে। আসো।
লাবন্য শৈলীকে নিয়ে নিচতলাতেই একটা রুমে ঢুকলো। লাইট জ্বালিয়ে শৈলীকে একটা চেয়ারে বসতে বললো। তারপর দরজা ভেড়ালো।
– তুমি বসো, আমি খুজি ব্যাগটা কোথায় রেখেছে।
শৈলী বসতে বসতেই লাবন্যর খোজা শুরু হলো। খাট, সুটকেস, কিছু কাপড়ের মাঝেও খুজলো ও,
– ব্যাগটা কোথায় রাখসে এই গাধাটা? আমাকে তো বললো খাটের ওপরেই আছে। দাড়াও একটা ফোন দিয়ে জিজ্ঞেস করি।
এই বলে লাবন্য নিজের ফোন বের করে কল করলো,
– ওহহো! দেখসো, ঝামেলা আসলে সব দিক দিয়েই আসে। আমার ফোনেরও ব্যালেন্স শেষ। এখন কি করি?
শৈলী নিজের ফোনটা এগিয়ে দিল,
-আমার টা দিয়ে কল দাও।
লাবন্য কৃতজ্ঞতা হাসি দিয়ে ফোনটা হাতে নিল,
– থ্যাঙ্কস শৈলী।
কল করতে গিয়ে ভ্রু কুচকায় লাবন্য,
-তোমার ফোনে সিগনাল পাওয়া যাচ্ছে না শৈলী। কল যাচ্ছে না। মনে হয় রুমের ভেতর বলে হচ্ছে এরকম। দাড়াও আমি বাইরে থেকে কথা বলে আসি, তুমি বসো।
শৈলীকে কোনো রুপ ভাব প্রকাশ করতে না দিয়েই লাবন্য বের হয়ে গেল রুম থেকে। শৈলী আবার বসে পরলো।
সাথে সাথেই ঘটে গেল দুটো কান্ড। আচমকা রুমের সব আলো নিভে ছেয়ে গেল ঘন অন্ধকার। তার পরেই বাইরে থেকে দরজা লাগানোর শব্দ আসলো।
আতঙ্কে শৈলী প্রথমে নড়তেই ভুলে গেল। পুরো শরীর যেন গাছের গুড়ির মতন জমিনের সাথে আটকে গিয়েছে। কি ঘটছে, মস্তিষ্কে ধারণ হতে কয়েক সেকেন্ড সময় লাগলো ওর। তারপর যারপর নাই উঠে অন্ধকারে দৌড় লাগালো দরজা খেয়াল করে। পেয়েও গেল দরজা, জোরে জোরে ধাক্কাতে লাগলো ও,
-কি হলো? লাবন্য, লাবন্য? কই তুমি? দরজা কে লাগালো? অন্ধকার কেন? লাবন্য?
শৈলীর গলা ফাটানো চিৎকার বাইরে স্পষ্ট শোনা যাচ্ছিলো। শোনার মানুষও ছিল। রিক, ওর বন্ধুরা আর লাবন্য কাছাকাছি দাড়ানো। শৈলীর চিৎকার এবং এক পর্যায়ে কান্না শুনে পৈশাচিক আনন্দে মেতে ছিল ওরা। পুরো বাড়ির সবাইকে পার্টিতে রিক আগেই নিয়ে গিয়েছে তাই ওদের আর শৈলীর ছাড়া আর কেউ নেই এখানে। একারণেই শৈলীর আকুতি ভরা চিৎকার আর দরজার ধাক্কা নিস্তব্ধতার মাঝে আরও জোড়ালো শোনা যাচ্ছিলো।
রিক্ এক অন্যরকম সার্থপর সুখে নিমজ্জিত তখন। এই কান্না, এই নিঃসহয়তা ও কতোদিন শৈলীর মাঝে দেখতে চেয়েছে। কিন্তু শা*লীর মনোবল এমনই শক্ত যে ওকে রিক ভাঙতে সফল হতে পারেনি। তবে আজকে পারলো সে। আজকে সে সফল…..
কিন্তু খেলা তো এখনো শুরুই হয় নি। এমন খেলা যেটা শুধু ও খেলবে, একা। অন্য কেউ এটার ভাগ পাবে না। আর সেই খেলা শুরু করতে হলে আগে এই সবকটাকে সিন থেকে আউট করতে হবে আগে। পরে রিক এসে নিজের কাজ সারবে।
রিকের চেহারার অভিব্যক্তি বদলায়, ব্যতিব্যস্ত হয়ে পরে,
– আচ্ছা অনেক হয়েছে। এখন চল্ সবাই পার্টিতে যাই।
শৈলীর কান্না ভরা আর্তনাদ এখনো শোনা যাচ্ছে দেখে লাবন্য কপাল কুচকায়,
– দশ মিনিটও তো হলো না, এখনো চিৎকার করছে ও। এটুকুতেই চলে যাব? আরেকটু মজা নেই না রিক্।
রিকের জ্বলন্ত চোখ দেখে থমকে যায় লাবন্য।
– আমি বলেছি চল্ মানে চল্। এখানের পার্টি ওভার।
– তাহলে…দরজাটা…খুলে দিয়ে আসি…
– কোন দরকার নেই। শালী থাক ওখানে। পরে দেখা যাবে এসব। এখন চল্ সবাই।
আর কারও কিছু বলার সাহস থাকলো না। সবাই রিকের সাথে বের হয়ে গেল ওখান থেকে।
……………..
রুমের ভেতর শৈলী কান্না আর চিৎকার করতে করতে শেষ হয়ে যাচ্ছিলো। অনেক্ষণ দরজা ধাক্কিয়েও যখন কোনো লাভ হলো না তখন দৌড়িয়ে ভেতরে ঢুকলো ও। অন্ধকারটা চোখে একটু সয়ে আসাতে আশপাশ অনেক খুজলো কিছু দিয়ে দরজা খোলা যায় কি না। কিন্তু কিছুই পেল না। মোবাইলটাও নেই যে কাউকে ফোন দিয়ে সাহায্য চাইবে। ফ্ল্যাশলাইটটাও কাজে লাগতো কিন্তু…
এমনি অন্ধকারে শৈলীর কখনো ভয় করে না, তবে এই পরিবেশে ভীষণ ভাবে আতঙ্কিত হয়ে পরেছে ও। বুঝতে বাকি নেই ইচ্ছাকৃতভাবে ওর সাথে এসব করা হয়েছে, এবং এটার পেছনের মূল হোতা কে তা বুঝতেও শৈলীর সমস্যা হচ্ছে না। এই বিষয়টাই ওর জন্য বিভীষিকাময় হয় দাড়িয়েছে এইমুহূর্তে। একুশ বছরের একটা মেয়ের এই পরিস্থিতির ভয়াভবহতা বোঝা কোনো কঠিন কিছু না।
হঠাৎ বিদ্যুত চমকে উঠলে রীতিমতো মতো কেঁপে ওঠে শৈলী। এই ঘন আঁধারে, নিজের অসহায়ত্ত্বের পরিহাস বিবেচনা করে ভয়ংকর কান্নায় ভেঙে পরলো ও, এখান থেকে বের হওয়ার কোনো পথ খুজে পাচ্ছে না দেখে আরও ক্লান্ত বোধ করলো। নিজের বান্ধবীদের খুব মনে পরছে। স্পষ্ট ভাবে এখন বুঝতে পারছে মাহিরা আর মিহরানের ওকে দেওয়া সতর্কবাণীর মর্ম। মিহরানের ওকে নিয়ে আজ সারাদিনের এতো বাড়াবাড়ি রকম খেয়াল রাখার কারণ এই মুহূর্তে ধরতে পেরেই ফ্লোরে বসে পরলো শৈলী। কান্না জুড়ে দিল আরো জোড়ালো ভাবে।
– ইয়া আল্লাহ্ আমাকে বাঁচান প্লিস। ইয়া মাবুদ কাউকে আমার সাহায্যে পাঠান। আমার এতো বড় ক্ষতি হতে দিয়েন না। আল্লাহ্ প্লিস আল্লাহ্ প্লিস…..
এই বলে আবার পুরো দমে দরজা ধাক্কাতে শুরু করলো ও…
………………..
ঘড়ির কাটা যখন পঁচিশ মিনিট পার করলো তখন আর মিহরান থাকতে পারলো না বসে। শৈলী এই বাড়ি থেকে কদম বের করার পর থেকেই ওর টেনশনে ভেতর ভেতর জান শেষ। যদিও এখনো পাঁচ মিনিট হাতে আছে, তারপরেও মিহরানের মন কোনোভাবেও টিকলো না। সে উঠে দাড়িয়ে চেয়ারম্যান স্যারের থেকে কিছুক্ষণের জন্য এক্সকিউস নিয়ে বের হয়ে আসলো।
বাইরে এসে মিহরান চারদিকে নজর বুলালো, তবে চোখের সীমানায় শৈলী অথবা ওর বান্ধবীদের কাউকেই পেল না। কপাল কুচকে গেল ওর। ওরা তো এখানেই হাটাহাটির কথা বলেছিল। তাহলে গেল কই?
হঠাৎ বিদ্যুৎ চমকে উঠলো জোড়ে। মেয়েদের মাঝে শুরু হলো দৌড়াদৌড়ি। এসবের মাঝেই মিহরান এগোলো সামনে। অনবরত ওর চোখ খুজে বেড়াচ্ছে এক কাঙ্ক্ষিত মুখ। কিন্তু দৃষ্টি বরাবরই ব্যর্থ হচ্ছে।
ফোয়ারার কাছে দাড়ানো দুটো মেয়ের কাছে গেল মিহরান। ওকে দেখেই মেয়েগুলো সোজা হয়ে দাড়ালো। সরাসরি ওদের প্রশ্ন করে মিহরান,
– আপনারা কেউ শৈলীকে দেখেছেন?
দুজন মেয়েই মাথা নাড়ায়,
– জ্বী স্যার দেখেছি। শৈলী, কেয়া, প্রিতি আর লাবন্য কে ছেলেদের রেস্টহাউজের দিকে যেতে দেখেছি আমরা।
ভীষণ অবাক চোখে চাইলো মিহরান। এতোটাই অবাক যে চেহারায় সেই অভিব্যক্তি স্পষ্ট ফুটে উঠলো। শৈলী ওদিকে কেন যাবে?
– আপনারা শিওর?
– জ্বী স্যার। আসলে ওখানে একটা পার্টি হচ্ছে। অনেকেই গিয়েছে, মনে হ……
মেয়েটা হতভম্ব হয়ে দেখলো ওর কথা শেষ হওয়ার তোয়াক্কা পর্যন্ত না করে মিহরান হেটে চলে গেল।
মিহরান জোর পায়ে হেটে দুই মিনিটের মাথায় পৌছালো ছেলেদের বাড়িটার সামনে। দূর থেকে অন্ধকার দেখে ওটা পাস করে চলে যেতে নিতেই কানে স্পষ্ট ভেষে আসলো দরজা পেটানোর আওয়াজ, সাথে জোরে চিৎকার।
তড়াক করে তাকালো মিহরান। শৈলীর কন্ঠ চিন্তে কোনো ভাবেই ভুল হলো না। নিমিষেই হাওয়ার বেগে দৌড়ে কাছে আসলো ও।
– কে আছো? প্লিস দরজা খোলো। হেল্প মি। সামওয়ান হেল্প মি।
শৈলীর আর্তনাদের এক একটা বর্ণ মিহরানের পালপিটিশন বাড়িয়ে দিল বহুগুণ। এক মুহূর্তও সময় নষ্ট না করে সেই দরজার সামনে যেয়ে দাড়ায় ও। তুমুল ভাবে কাঁপছে দরজাটা। আগের বাড়ি তাই সেকালের লক লাগানো যেটাতে তালা ঝোলানো যায়। এখানে অবশ্য তালা দেওয়া নেই, শুধু শক্ত করে পিতলের লক্ টা রিং এ গেঁথে দেওয়া।
মিহরান দ্রুতগতিতে লক্ টা টেনে খুলে ফেললো। শৈলীও ভেতর থেকে কারও পায়ের আওয়াজ পেয়ে প্রথমে খুশি তে উত্তেজিত হয়েছিল। কিন্তু পরে রিকের চিন্তা মাথায় আসতেই ভয়ে সিটিয়ে পরেছিল একদম।
দরজা খুললো অবশেষে। আঁধারের তিমিরে ডোবা মানবীর চোখ হঠাৎ বাইরে থেকে আসা আলোর রশ্মিতে ধাধিয়ে ওঠে। পিট পিট করে চোখ খুলার চেষ্টা করে। একজন মানব কে দোড়গোড়ায় খুজে পায়। মনে মনে দোয়া পরে এটা যেন রিক না হয়।
বাইরে থেকে মানুষটা ভেতরে প্রবেশ করে। এবার তার সুদর্শন মুখশ্রি স্পষ্ট হয় শৈলীর নিকট।
– মিহরান স্যার….
আর কিছু চিন্তায় আসে না মেয়েটার। খুশিতে, শান্তিতে না কোন অনুভূতিতে ও এক দৌড়ে প্রবল বেগে সে ঢলে পরে মিহরানের বুকে।
মিহরান আচমকা এই ঘটনায় শৈলীকে সহ একপা পিছিয়ে পরে। কিন্তু যখন শৈলী দুহাত ওর বুকের শার্ট খামচে ধরে, হাউ মাউ করে কেঁদে ওঠে তখন সৎবিধ ফেরে ওর। দুহাত দিয়ে আগলে নেয় মেয়েটাকে পরোক্ষণেই।
-শৈলী। শুনুন…আমার কথা শুনুন। কিচ্ছু হয়নি। আমি আছি তো…
– স্যার…আমি…আমাকে…এখানে…স্যার…আপনি এসে…ছেন?
শৈলীর ফুপিয়ে ফুপিয়ে বলা এক একটা কথা বিধছিল মিহরানের হৃদয়ে। মেয়েটার এই অবস্থা কল্পণাও করতে পারছিল না ও। রুমের ভেতরে চোখ পরলো মিহরানের। এই অন্ধকার, বদ্ধ জায়গায় না জানি কিভাবে এতোক্ষণ কাটিয়েছে শৈলী। আগে এখান থেকে বের হতে হবে,
– শৈলী, চলুন আগে বের…শৈলী? শৈলী?
নিজের পুরো ভর মিহরানের ওপর ছেড়ে দিয়ে শৈলী জ্ঞান হারালো।
চলবে…
এই পর্বের বাকি অংশ চেষ্টা করবো রাতেই দিতে।