#পরিণয়_প্রহেলিকা
#লেখিকা_সিনথীয়া
#পর্ব_২২
মাহিরা সন্ধ্যা থেকে শৈলীকে বেশ কয়েকবার ফোন করেছে। কিন্তু ওর বান্ধবীর জায়গায় রেকর্ডকৃত মেয়েলি আওয়াজ কথা বলছে ওর সাথে।
-দুঃখিত, আপনি যে নাম্বারে কল করেছে তা এই মুহূর্তে বন্ধ আছে। আপনি যদি…
মাহিরা কান থেকে ফোন সরালো। বিরক্ত লাগছে ওর। তার সাথে চিন্তাও হচ্ছে। শৈলী ঠিক আছে তো? একবার মনে হলো মিহরানকে ফোন দিবে। পরে আবার বাদ দিলো। যে রগচটা ওর ভাই, দেখা যাবে বড় একটা ঝাড়ি মেরে দিসে।
এসব আকাশ কুসুম ভাবতেই খাট কেঁপে ফোন বাজলো মাহিরার। শৈলী ভেবে ঘুরে তাকালেও, নিজের প্রেমিক পুরুষের নামটা ফোনে জ্বলজ্বল করতে দেখে মুচকি হাসলো ও। এই কলটাও আকাঙ্ক্ষিত ওর কাছে। ছো মেরে ফোনটা নিয়ে রিসিভ করলো মাহিরা, যেন ওপাশের মানুষটাকে অপেক্ষায় রাখতে ও নারাজ।
– হ্যালো।
– হ্যালো জান।
মাহিরা চুপ হয়ে যায়। চোখ দুটো বন্ধ করে চিরচারিত অভ্যাসে সম্মোধনটি কর্ণকুহরে শুষে নেয়। তন্ময় জানে মাহিরার নিশ্চুপ থাকার কারণ। স্নিগ্ধ এক হাসি ছড়ায় ওর ঠোটে,
– কি ব্যাপার ম্যাডাম? ভাই আসার পর থেকে আমাকে দেখি ভুলেই গিয়েছেন। কল্ দেন না, দেখাও করেন না। এই মাসুম আশিকের প্রাণটা নিয়ে ছাড়বেন তাই না?
মাহিরা খিলখিলিয়ে ওঠে। কিন্তু পরক্ষণেই আবার কপট রাগ দেখায়।
– ইশ! ভাই মনে হয় আমার একার এসেছে? তোমার তো জিগরি দোস্ত তিনি, তুমিও তো সেদিন ছাদে ভাইয়াকে পেয়ে আমার সাথে তেমন কথাই বলোনি। সেটার কি হ্যা?
তন্ময় আদুরে গলায় উত্তর দেয়,
– সরি বাবা! তুমি তো জানোই মিহরান কি জিনিস। তার বোনের সাথে তার সামনে গল্পে মশগুল হলে খেয়েই ফেলতো আমায়।
– হায় হায়! এই বুকের পাঠা নিয়ে আমার সাথে প্রেম করতে আসছো? এতো ভয় পেলে ভাইয়ার কাছে আমার হাত চাবা কেমনে?
ওপাশ দিয়ে তন্ময় ভ্রু কুচকায়,
– আমাকে কি চ্যালেঞ্জ করা হচ্ছে? তোমার কি মনে হয় আমি তোমার ভাইকে ভয় পাই? হাহ্! তন্ময়কে এখনো চিনতে পারো নাই তুমি বেইবি। তোমাকে নিজের করার জন্য তোমার ভাই তো কি, তোমার বাবা মায়ের কাছেও তোমার হাত চেতে আমার ভয় লাগবে না। দেখতে চাও সেটা? এক কাজ করি, কাল তো মিহরান ফিরছেই। কালই বাসায় আসি তোমাদের। আন্টি আঙ্কেলের সাথে কথা বলে বিয়ের ডেট ফিক্স করি, কেমন?
মাহিরা তন্ময়ের উত্তেজিত কন্ঠে পুরাই তাজ্জব বনে গেল। শান্ত শিষ্ট, সদা হাস্যজ্জ্বল তন্ময় যে এভাবেও কথা বলতে পারে ওর আগে জানা ছিল না। তবে এটা চিন্তা করেও ওর ঠোটে হাসি ফুটলো যে ছেলেটা ওকে নিয়ে তৎপর। আগেও অনেক ভাবেই বুঝেছে যদিও তারপরেও সত্যিকারের ভালোবাসা বার বার অনুভব করতে কার না ভাল লাগে?
মুখের হাসি বজায় রেখেই বললো ও,
– আচ্ছা বুঝছি, তুমি অনেক সাহসী। এখন এসব বাদ দাও। এমনিতেও এই সময় আমার বিয়ে নিয়ে কথা বলাই যাবে না। বড় আপুরই এখনো কিছু ঠিক হয় নাই, আর সেখানে আমি তো ছোট্ট শিশু।
– তো চলো মালিহার জন্য ছেলে খুজি। আমাদেরই তো বন্ধুদের মাঝে কতো ভালো ভালো পাত্র আছে। মালিহার বিয়ে হয়ে গেলেই তোমাকে নিজের করে আনবো।
– ইশ! খুব বিয়ের শখ না?
-তো হবে না? আমার বয়স দেখসো? নিজের কাছাকাছি এইজের কাউকে বিয়ে করলে এতোদিনে এক বাচ্চার তো বাপ হয়েই যেতাম।
মাহিরার খুব অভিমান হয়,
– তো যাও না। যাও, যেয়ে করো বিয়ে তোমার এইজের কারো সাথে। আমার জন্য ওয়েট করছো কেন?
– কিভাবে যাই বলো? আমার তো মাহিরা বেইবির মতন একটা বাবু চাই। যে আমার মাহির মতন কিউট হবে, চঞ্চল হবে, কথায় কথায় অভিমান করবে। অন্য কেউ কি তা দিতে পারবে?
মুহূর্তেই মাহিরার সব রাগ উধাও। সাথে ভীষণ রকমের লজ্জা ভর করলো।
– আআমি রাখি…
-কেন?
-জানিনা। গুডনাইট।
-মাহি শোন…
মাহিরা মাঝ পথেই লাইন কেটে দিল। দিয়েই লাজে ভরা হাসিতে রঙে উঠলো ওর মুখ। তন্ময়, মিহরানের কলিজার দোস্ত, আজ দু বছর ধরে হয়েছে মাহিরার ভালোবাসার মানব। মাহিরার প্রথম ক্রাশ তার তন্ময় ভাই, তখন তো ভাই ডাকতো। সেই ক্লাস এইট থেকে ওর এই চুরমার হওয়া শুরু হয়েছিল মাহির। কিন্তু প্রকাশ করার মতন তখন না ছিল বয়স আর না সাহস। তবে মাহিরা প্রতিজ্ঞাবদ্ধ ছিল নিজের সাথে। একদিন সে তন্ময়কে পছন্দের কথা জানাবেই।
সময় গড়ায়। মাহি ইন্টার শেষ করে তখন মুক্ত পাখি। এই সময় হঠাৎ তন্ময়ের সাথ পায় ও। আগে তো সবসময় যাতায়ত ছিলোই, এমনকি মিহরান বিদেশ যাওয়ার পরও মাঝে মধ্যেই তন্ময় বাসায় আসতো সবার খোজ খবর নিতে। তখন মাহিরা নিজের মনে সাহস জুগিয়ে গল্প জুড়তো ওর সাথে। প্রথমে সামাজিক আড্ডা থেকে পরে আস্তে আস্তে দুজনের কাছে আসার গল্প শুরু হয়। মাহিরা শেষ পর্যন্ত নিজের প্রতিজ্ঞা রাখতে পেরেছিল, তন্ময়কে নিজের করে নেয়ার ছলে।
…………………………….
দরজার দিকে চোখ যেতেই মিহরানকে দেখে শৈলীর দৃষ্টি শান্ত হয়ে এলো। অপলক সেদিকেই তাকিয়ে রইলো ও। এমনকি মিহরান ওর দিকেই আগাচ্ছে জেনেও চোখ সরালো না। কেমন যেন এক ঘোরের মাঝে ডুবে রইলো। প্রিতিও মিহরানকে দেখতে পেয়ে শৈলীর কনুইতে টান দিল,
– এই স্যার স্যার আসছে। সরে দাড়া।
ঘোর কাটলো শৈলীর। নিজের বর্তমান অবস্থান বুঝেই সাথে সাথে চোখ নামালো। মিহরান আসতে আসতে দুই পা পিছিয়ে জায়গা করলো। মিহরানও যেন শৈলীকে দেখেইনি এমন ভাব করে সামনে দিয়ে চলে গেল। তবে এইটুকু সময়ে শৈলীর দম আটকে যাওয়া জোগাড়, মিহরান যেতেই ফোঁস করে ছাড়লো। কেন এমন হলো ও নিজেও জানে না। ও কি ভাবছিল মিহরান ওর কাছে আসছে? শৈলী নিজেই নিজেকে ধমকায়,
– পাগল নাকি তুই? এতো মানুষের মাঝে স্যারের ঠ্যাকা পরসে তোর কাছে আসার? তুই এমন কে হইসিশ?
শেষ প্রশ্নে শৈলী থমকায়, আসলেই কি এমন কেউ না সে?
মিহরান যাওয়া পর্যন্ত ঘুরে তার দিকে প্রিতি তাকিয়েছিল। এবার কেয়া ওর কনুই তে ধাক্কা দেয়,
– এই গাধী, স্যারকে এভাবে কেন চেকআউট করছিস? ক্রাশ ট্রাশ খাইলি নাকি?
প্রিতি উজ্জ্বল হাসি দেয়,
– তা আর বলতে! ক্রাশ খেয়ে চিৎপটাং আমি অনেক আগেই। তবে শুধুই ক্রাশ, আর কিছু না।
– কেন, আর কিছু না কেন? প্রেমে পরিস নাই?
-নাহ্, প্রেমে পরতে দেই নাই বল্।
কেয়া ভ্রু কুচকায়,
– এইটা কেমন কথা? পরতে দিস নাই মানে কি?
প্রিতি এবার সরাসরি কেয়া আর শৈলীর দিকে ঘুরে দাড়ায়,
– আচ্ছা তোরাই বল্ এইটা কি ঠিক?
-কি?
– এই যে এতো সুদর্শন, লম্বা চওড়া, উচ্চ ব্যক্তিত্বশীল একজন পুরুষ মানুষকে ভার্সিটির অধ্যাপক হিসেবে চাকরি দেওয়া হয়েছে। এটা কি ঠিক? তার ক্লাসে কি পড়াশোনা ঠিক ভাবে হবে কখনো? তোরাই বল্। স্যার হতে হবে নার্ডের মতন, চোখে মোটা ফ্রেমের চশমা, দোপাটে চুল মাথার সাথে এটে থাকা, চিকন অথবা মোটা সোটা গরণের। মিহরান স্যারের মতন ফিট বডির টিচারের ক্লাসে সব মেয়েরাই হা করে তার দিকে শুধু তাকিয়ে থাকবে, চোখ দিয়ে গিলবে আর তার এ্যাটেনশন পাওয়ার আকুলতায় অধীর অপেক্ষায় থাকবে। ক্রাশ খেয়ে তো মশার মতন পরে থাকবে এদিক ওদিক। কি ঠিক বলসি কি না?
কেয়া
– তা অবশ্য ঠিক। এটা হতে পারে কিন্তু হবেই যে সেটার গ্যারান্টি কি?
– হবেই মানে? জানেমান আসো কই? অলরেডি হয়ে বসে আছে। স্যার যেই কোর্স নিচ্ছেন, সেটা তো মাঝ সেমিস্টার থেকে শুরু হলো না? ওটা তো একটা শর্ট কোর্স, কিন্তু এই মাঝ সময়েই কোর্স ফুল হয়ে গিয়েছে। এ্যান্ড গেস ওয়াট, মেয়েদের সংখ্যাই বেশী। তাহলে বোঝ আমাদের মিহরান স্যারের ডিমান্ড। সিনিয়র দুই তিন জন আপুদের কাছ থেকেই এই ইনফো গুলো পেলাম।
শৈলী প্রিতির কথাগুলো শুনে হতভম্ব। মিহরান স্যারকে নিয়ে মেয়েদের মধ্যে এতো জল্পনা কল্পনা? ও তো এতোদিন মনে করতো শুধু ও নিজেই স্যারকে পছন্দ করে, কিন্তু ঘটনা তো তা না দেখা যাচ্ছে।
হঠাৎ শৈলীর মাথায় যেন কেউ বাড়ি মারে। হুট করেই মস্তিষ্ককে নাড়া দেয় এক পরম সত্য,
– মিহরান স্যার কে অন্য মেয়েরা পছন্দ করে। মানে ওর স্বামী কে…
ঈর্ষার অনুভূতি যে জ্বালামই তা শুনেছিল শৈলী তবে বুঝলো এই মুহূর্তে। প্রিতির ওপরেও আগে মিহরানকে নিয়ে একবার এরকম একটা অনুভূতি হয়েছিল ওর, তবে এখনেরটার সামনে ওটা কিছুই না। হঠাৎ শৈলী ভীষণ গরম লাগতে শুরু করলো। যেন আগুনের লাভার ওপর বসা সে।
কেয়ার ধাক্কায় শৈলী বাস্তবে ফেরে,
– শৈলু, কি হইসে রে তোর? বার বার অন্য মনষ্ক হয়ে যাচ্ছিস কেন?
শৈলী ভাবলেশহীন চোখে তাকায়,
– ননা…আসলে…মাথা ব্যাথাটা আবার বেড়েছে। কেয়া শোন, আমার না ভালো লাগছে না। আমি রুমে যাই তোরা খেয়ে দেয়ে আস্তে ধীরে আয়।
-কিন্তু তুই ডিনার করবি না?
– না রে…কিছু খেতে ইচ্ছা করছে না আমার। একটু রেস্ট নিলে হয়তো ভালো লাগবে।
কেয়া আর প্রিতিকে চিন্তিত দেখালো। তারপর প্রিতি বললো,
-আচ্ছা একটা কাজ কর্। তুই যেয়ে রেস্ট নে। আমরা খেয়ে তোর জন্য খাবার নিয়ে আসছি।
শৈলী সম্মতি জানিয়ে সিড়ির দিকে আগালো। আজ, একটা দিনে জীবনের অনেক রঙ দেখে ফেলেছে ও। এই রাতটা পার হওয়া দরকার।
…………….
ওদিকে শৈলীর দিকে সরাসরি না তাকালেও ওর প্রতিটা পদক্ষেপ দেখছিলো মিহরান। ওর ধ্যান জ্ঞান সব কিছুই তো আজ ঐ নারীর মাঝে। শুধু কি আজ? ‘আজ থেকেই’ বলা উচিত। তবে এখন ওসব চিন্তা বাদ দিয়ে মিহরানের কপাল কুচকালো। ও স্পষ্ট দেখতে পাচ্ছে, শৈলী ডিনার না করেই ওপরে উঠে যাচ্ছে। ব্যাপারটা ভালো লাগলো না ওর। মেয়েটা এমনেই অনেক ক্লান্ত, না খেলে অসুস্থ হয়ে পরবে।
এক সময় ডিনার শেষ হলো। বৃষ্টি নিজের মন মতো ঝরেছে। আজকে বর্ষণের কোটা শেষ করে এখন আকাশ কিছুটা পরিষ্কার। খাওয়া দাওয়া শেষ করে ছেলেদের পেছনের রেস্ট হাউসে পাঠিয়ে দেওয়া হয়েছে। আর ফ্যাকাল্টিরা এবং মেয়েরা নিজ নিজ ভাবে ভেতরেই অথবা পেছনের লনে ঘোরা ফেরা করছে।
শৈলী রুমে এসে মুখ হাত ধুয়ে বিছানায় শুয়েছিল। নিজের ওপর ভারী বিরক্ত ও। কেন তখন হুট করে চলে আসলো ডিনার না করে? এখন খিদায় বেহাল দশা ওর। মিহরানের কে নিয়ে মেয়েদের মাঝের বিষয়টা নিয়ে এভাবে না রিয়্যাক্ট করলে কি হতো না? উফফ! এখন কি করবে ও? আবার নিচে নামবে? তবে দেখে তো মনে হচ্ছে ডিনার শেষ। খাওয়া থাকবেও কি না। আবার থাকলেও ও একা একা বসে খাবে কেমনে। এই প্রিতিটা গেল কই? ও না বলেছিল খাবার আনবে? ধুর একটা ফাজিলের ফাজিল ঐটা। আসল কাজে খবর নাই, শুধু এদিক ওদিকে থেকে ‘তথ্য’ কালেক্ট করতে ওস্তাদ সে।
এই সব সাত পাঁচ ভাবতে ভাবতেই হঠাৎ দরজায় নক্ শুনতে পায় শৈলী। প্রিতি ভেবে জলদি দরজা খোলে, কিন্তু একজন ওয়েটারকে দেখে অবাক হয়। হাতে তার একটা ট্রে তে খাবার দেখে অবশ্য চোখ মুখে আলো জ্বলে ওর। যাক্ প্রিতি ওর কথা মনে রেখেছে। ইশ! কতগুলো বকা দিল মেয়েটাকে। শৈলী হাসি মুখে ট্রে টা নেওয়ার জন্য হাত বাড়ায়। ওয়েটার সেটা দিতে দিতে বলে,
-এটা মিহরান স্যার পাঠিয়েছেন। সাথে এটা পাঠিয়েছেন।
চমকে যাওয়া শৈলীর হাতে খাবার সহ একটা চিরকুট দিয়ে লোকটা চলে গেল। কোনোমতে দরজা লাগিয়ে শৈলী খাবার রেখে বসলো খাটে। এতোক্ষণের ক্ষুদা আবার লুকিয়ে গেল কোথাও। জায়গা নিল কৌতুহল। ধীর গতিতে কাগজটা খুললো শৈলী,
– খাবারের একটা দানাও যেন না থাকে শৈলী। সুন্দর মতন খেয়ে বড় একটা ঘুম দিন। যদি খাবার একটাও ফেরত আসে, তাহলে আমি নিজেই আসবো আপনার রুমে। এন্ড ইউ নো আই হ্যাভ দা রাইট টু ডু সো।
চলবে।
#পরিণয়_প্রহেলিকা
#লেখিকা_সিনথীয়া
#পর্ব_২৩
– এন্ড ইউ নো আই হ্যাভ দা রাইটস টু ডু সো।
চিরকুটের শেষের লাইনটা পড়ে শৈলী একটা শুকনা ঢোক গিললো। রাইটস? ওনার কি রাই…আয় হায়! তার মানে?
নিজের মস্তিষ্কে সব কথা প্রসেস করতে পারছে না শৈলী। তাই খন্ড খন্ড হয়ে প্রশ্নগুলো বাড়ি খাচ্ছে। তবে মিহরান কোন রাইট্সের কথা বলেছে সেটা বুঝতে সময় নিলো না।
সাথেসাথেই চোখ উঠলো দেয়াল ঘড়ির দিকে। রাত ১১:১০।
ভীষণ রকম লজ্জার সাথে কপট রাগও হলো শৈলীর। দুই ঘন্টাও পুরো হলোনা তাদের বিয়ের আর মশাই স্বামীর অধিকার ইতিমধ্যেই ফলাতে শুরু করে দিয়েছেন। কি খারাপ লোক!
শৈলী খাবারের প্লেটের দিকে তাকায়। আবার চিরকুট টা পরে। আবার লজ্জায় ডোবে। এভাবে চলে কতোক্ষণ। এরপর শান্তির এক ছটাক হাসি দিয়ে খাটে বসে। খাওয়ায় মনোযোগ দেয়। খিদাটা এবার দ্বিগুন জোরে কড়া নাড়ছে যে।
শৈলীর খাবার মাঝ পথ পর্যন্ত আসতেই আবার দরজায় টোকা পরে। তার সাথে আসে এক কন্ঠস্বর,
– শৈলী? ঘুমিয়ে পরেছিস?
কেয়ার আওয়াজ চিন্তে ভুল হয় না শৈলীর। প্লেট টা বেডসাইড টেবিলে রেখে দরজা খুলতে যায়। খাবারের প্লেট হাতে প্রিতি ও পানির বোতল নিয়ে কেয়াকে দেখে হাসি চওড়া করে মুখের। এক পাশ সরে গিয়ে ওদের রুমে ঢুকতে দেয়।
– নে তোর জন্য খাবার নিয়….
বেডসাইড টেবিলের ওপর খাবারের আধো খাওয়া প্লেট দেখে মাঝপথে থমকে যায় প্রিতি,
– এই খাবার আসলো কোথা থেকে শৈলু?
শৈলী প্রিতির প্রশ্নে হকচকায়, আমতা আমতা করে,
– ঐ…আসলে…আমার ক্ষিদা লেগেছিল তাই….
– তাই খাবার আনিয়েছিস নিচ থেকে?
কেয়ার শেষ কথায় শ্বাস ফেললো শৈলী,
-হ্যা হ্যা এক ওয়েটার ভাইকে দিয়ে খাবার আনিয়েছি।
ঠোট দুটো চেঁপে টেনে হাসে প্রিতি,
-ওহহো, এখানে আমিও তো খাবার নিয়ে আসলাম। এখন ডাবল ডাবল হয়ে গেল। যাক্ যা হওয়ার ভালোর জন্য হইসে। মাঝ রাতে খিদা লাগলে গাপুস গুপুস করে খাবো। শৈলু তুই তোর প্লেটের খাবার শেষ কর,আমরা একে একে ফ্রেশ হয়ে আসি।
প্রিতির এ কথা না বললেও শৈলী খেতে বসতোই। যেই একখান ধমকি পূর্ণ চিঠি এসেছে ওর কাছে। আর না খেয়ে যায় কই? পাছে যদি ঐ মানুষটা সত্যি সত্যিই রুমে চলে আসে? রাইটস তো আছেই, থামাবার শৈলী কে?
নিজের ওপর তাচ্ছিল্যের সুরে শৈলী শেষ বাক্যটা মনে মনে আউড়ায়। তারপর চুপচাপ খেতে বসে। তবে খাওয়ার সময় ওর মন আপনাতেই ভালো হয়ে যায়। এই খাবারে আজ ও আলাদা এক তৃপ্তি খুজে পায়। রান্না মজার ছিল বলে কি? না কি আলাদা ভাবে, শুধু ওর প্লেটে ছড়ানো ছিলো কারও পরম যত্ন, সেটাই জাদু করেছে।
না চাইলেও, শৈলী বাধ্য হয় স্বীকার করতে ঘটনাটা আসলে পরের চিন্তাতেই লুকনো। একদম চেটে পুটে খাবার শেষ করে, কোনো দানা না ছেড়ে, উঠে হাত ধোয় ও।
………………………
হওয়ার কথা এখন গভীর রাত। ঘড়ির কাঁটাও তাই বলছে। কিন্তু শাহজাহান সাহেবের খামারবাড়ি বোধহয় সেটা আজ মানতে নারাজ। ভবনের ভেতরের লনের ঘাসের ওপর চলছে মেয়েদের অবিরাম আড্ডা। কোথাও কোথাও গিটারে গান বাজছে, সম্মিলিত সুর ধরেছে কোন গ্রুপ। প্রিতি আর কেয়া জোর করে শৈলীকে আবার নামিয়ে এনেছে নিচে। শৈলী অনেক বার বাধা দেওয়ার পরও শোনেনি। ভেতর ভেতর ভয় নিয়ে শৈলী নেমেছে। ওর ভয় ওর সদ্য হওয়া জীবনসঙ্গীকেই নিয়ে। বার বার সে বলে দিয়েছে শৈলীকে রেস্ট নিতে। এখন যদি ওকে এখানে দেখে তাহলে করবে টা কি সে? এমনিতেই রগচটা মানুষ, তার ওপর ওনার কথা না শুনলে ঝাড়ি বোধহয় একটাও মাটিতে পরবে না। সবার সামনে এই রাত দুপুরে অন্তত ঝাড়ি খেতে চায় না শৈলী। কিন্তু বান্ধবীদের সেটা বোঝাবে কেমনে? একবার একটু আপত্তি জানাতেই প্রিতি ক্ষ্যাক করে উঠেছিল,
– ফাজলামো করিস? আমরা কি এই রকম ফ্রিডম রোজ রোজ পাই? বান্ধবীরা, সারাটা দিন রাত একসাথে থাকার চান্স পাই এভাবে? দেখ সবাই নিচে কতো মজা করছে। কালকেই তো আবার নরমাল জীবনে ফিরে যেতে হবে। ডোন্ট বি আ স্পোয়েল্ট স্পোর্ট ইয়ার। কালকে বাসায় যেয়ে ইচ্ছা মতন ঘুমাইস কোন ডিস্টার্ব করবো না আমরা, কিন্তু এখন চল্ মেরি মা।
এতো আঁকুতির পর আর মানা করার কোনো রাস্তা থাকে? না থাকে না। তাই তো শৈলী এখন অবস্থান করছে কুচকুচ কালো অম্বরের নিচে। আশপাশে তাকিয়ে সবার দিকে চোখ বোলাচ্ছে। কিছু ফ্যাকাল্টিও নিজেদের আড্ডায় ব্যস্ত। রাকিব স্যার আর মিলা ম্যাম কে দেখা যাচ্ছে। কিন্তু মিহরান স্যার কই? নামেননি নাকি?
ওর মনের কথাই মনে হয় একজন ভলান্টিয়ার সিনিয়র আপু পড়ে ফেললেন, এমন ভাব নিয়ে রাকিব স্যারকে প্রশ্ন করলেন,
– স্যার, মিহরান স্যারকে দেখতে পাচ্ছি না। আসলে কালকে যাওয়ার ব্যাপারে কিছু প্ল্যান ডিসকাস করার ছিল ওনার সাথে। উনি নামেননি?
– না নাবিহা, মিহরান স্যারের একটু ক্লান্ত লাগছিল বলে উনি রুমে রেস্ট নিচ্ছেন। খুব জরুরি কিছু?
– ননা স্যার সমস্যা নেই। স্যার রেষ্ট নিন। আমি কালকে কথা বলে নিব।
শৈলী কাছ থেকে সবই শুনতে পেল। মনে মনে হাফ ছেড়ে বাঁচলো ও। যাক্ স্যার না দেখলেই ভালো ওকে। কিন্তু ওর সেই স্বস্তিতে গুড়ে বালি দিয়ে পেছন থেকে শুনতে পেল রাকিব স্যারের ডাক,
– আরে মিহরান ভাই! আপনি চলে আসলেন?
শৈলী চকিতে ফেরে। সোজাসুজি মিহরানের চোখে আটকা পরে ওর দৃষ্টি। মানুষটা হাটছে রাকিব স্যারের দিকে কিন্তু দেখছে শৈলীকে। এতো কাছ দিয়ে হেটে গিয়েছেন উনি যে চেহারার ক্লান্তি স্পষ্ট ধরা পরেছে শৈলীর কাছে। শৈলীর সেই মুহূর্তে ভয় ডর উধাও হয়ে ভীষণ রকম মায়া জাগে। হঠাৎ মনটা মুচড়ে উঠে। মানুষটাকে দেখেই বোঝা যাচ্ছে সে খুব টায়ার্ড। তার ওপর দিয়েও তো কম যায়নি আজ কিন্তু সেখানে তিনি পুরো টাইম শৈলীকে নিয়েই ব্যস্ততা দেখালেন। শৈলীর খাবারের খেয়াল রাখলেন, ওর ঘুমের চিন্তা করলেন। আচ্ছা উনি নিজে ঠিক মতন ডিনার করেছেন তো? কৈ শৈলী তো একবারও সেটা খোজ নিল না। খোজ নেওয়া উচিত ছিল অবশ্যই। রাইট্স তো ওরো আছে খোজ নেয়ার। শুধু অধিকারই না দায়িত্বও বটে।
মিহরান যেয়ে রাকিবের সামনে এমন ভাবে দাড়ায় যাতে শৈলীকে সরাসরি দেখতে পায় ও। শৈলী বান্ধবীদের সাথে দাড়ালেও পুরো মনোযোগ পাশে দাড়ানো টিচার্দের গ্রুপেই দিয়ে রেখেছে। রাকিব আবার মিহরানকে প্রশ্ন করে,
– কি ভাই? আপনি না বললেন আর নামবেন না, টায়ার্ড লাগছে? গোসল দিয়েই ঘুম দিবেন? তাহলে আবার নামলেন যে?
মিহরান তার চিরচারিত গম্ভীর কন্ঠে ছোট করে উত্তর দেয়,
-গরম লাগছিল রুমে, তাই।
-গোসল করার পরও গরম লাগছিলো?
-হমম।
শৈলী এবার আড়চোখে তাকায়। একটা শুকনো ঢোক গিলে, ঠোটে ঠোট টিপে, ভ্রু কুচকায়।
-রাতের বেলা গোসল দেওয়ার পর আবার গরম লাগে কিভাবে? আজ তো ওয়েদারও ঠান্ডা। তাহলে উনার গরম…কেন? শরীর বেশী খারাপ করলো নাকি?
সময় যায় কিছুক্ষণ, এর মাঝে সেই ভলান্টিয়ারও এসে মিহরানের সাথে আলোচনা করে যায়। এরপর মিহরান রাকিবের দিকে ঘুরে,
– আমি একটু পানি খেয়ে আসছি। তোমরা গল্প করো।
– ওকে ভাই।
মিহরান হেটে যায় ভবনের ভেতরে। শৈলী সব দেখে। এটাই ওনার সাথে কথা বলার উত্তম সুযোগ বুঝে বান্ধবীদের কাছ থেকে ও একটু সরে আসে। ততক্ষণে মিহরান ভবনের ভেতর হারিয়ে গিয়েছে। শৈলী দ্রুত পা চালায়।
ভেতরে ঢুকেও মানুষের আনাগোনা দেখে শৈলীর কপাল কিঞ্চিত কুচকায়। ও মনে করেছিল ভেতরে কেউ নেই। যদিও বাইরে থেকে তুলনামূলক অনেক কম মানুষ এখানে তার পরেও ওর ভালো লাগলো না। এখন এদের মাঝে ওনার সাথে কথা বলবে কিভাবে?
হলরুমের এক কর্ণারে বড় একটা টেবিলে একটা কফি মেশিন আর ওয়াটার ফিল্টার সেট করা। ওখানেই শৈলী মিহরানকে দেখতে পেল পানি খেতে। দিক বিলম্ব না করে ও নিজেও চলে এলো। পানি নেওয়ার ছলে পাশে দাড়ালো।
নিজের বাম পাশে ছায়া পরায় মিহরান একটু ফিরে। একটা মেয়ে বুঝে চোখ সরাতেই আবার দৃষ্টি ফেরায়। শৈলীকে দেখে কপাল টান টান হয়। মিহরান তাকাতেই শৈলী ঝট করে টেবিলে রাখা পানির গ্লাসের দিকে নজর দেয়। সেটা চোখে লাগে মিহরানের। হাসি পায় একটু তবে কিছু বলে না। মুখটা পরোক্ষণেই গম্ভীর করে ফেলে।
শৈলী ভেবেছিল মিহরান নিজেই ওকে দেখে কথা বলবে। এতোদিন তো তাই হয়েছে। এই কারণেই চুপ করে অপেক্ষায় ছিল ও। কিন্তু সময় পার হলেও যখন কোনো কথা আসলো না তখন শৈলী ওপরে চোখ তোলে। দেখে মিহরান কফি বানাচ্ছে নিজ গতিতে। শৈলী যে আছে যেন সেটাই তার খেয়ালে নেই। শৈলী এবার নিজের নিশ্চুপতা ভেঙে এগিয়ে আসে,
– আআপনি ডিনার করেছিলেন স্যার?
মিহরানের হাত এক পলকের জন্য থমকায়। মুখে বিরক্তি ভর করে মনে মনে ঝাড়ে, “আবার স্যার? উফ! এতো বিরক্ত লাগছে এই শব্দটা না।”
-হমম।
মিহরানের এতো ছোট একটা উত্তরে শৈলী খুব অবাক হয়। মিহরান যদিও অন্য সবার সাথে খুবই কম শব্দে কথা বলে, কিন্তু ওর সাথে সেটা কখনো করেনি। আর আজকের পর সেটা আরও আশা করা যায় না। তাহলে এখন কেন?
হঠাৎ শৈলীর মাথা বিদ্যুৎ খেলে গেল,
– ওওও…তার মানে স্যার আমার ওপর রেগে আছেন।
বুঝেই শৈলী একবার দেখে তারপর মুখ খোলে,
– আমি কফিটা বানিয়ে দিব?
মিহরান আবার হাত থামায়। মনে হয় কিছু একটা চিন্তা করে। তারপর এক পা সরে দাড়ায়। শৈলী বুঝে মুচকি হাসে। সামনে এগিয়ে মনোযোগ দিয়ে সুন্দর এক কাপ কফি বানায়। তারপর পেছন ফিরে সেটা মিহরানের হাতে দেয়।
মিহরান খুব গম্ভীর মুখে কফিটা নেয়। তা দেখে শৈলীর মনটাই খারাপ হয়ে যায়, তবে ও তো জানেই না এতোক্ষণ ওর কফি বানানোর দিকে মিহরান কি সুখ নজরে তাকিয়ে ছিল। এক চুমুক দিতেই মিহরানের চোখ কপাল ছোয়। কফিটা মারাত্মক হয়েছে।
– আপনার নাকি শরীর খারাপ লাগছিল?
মিহরানের ধ্যান ভাঙে। শৈলীর দিকে সরু চোখে পাল্টা প্রশ্ন করে,
-আপনাকে কে দিল এই তথ্য?
-কেউ না। আমি..মানে..রাকিব স্যার বলছিলেন।
-আপনাকে?
– না না আমাকে কেন বলবেন? নাবিহা আপুকে বলছিলেন। আমি পাশেই বান্ধবীদের সাথে ছিলাম। তখন শুনেছি।
– অন্যের কথোপকথন আড়ি পেতে শোনা ভালো না তা কি আপনি জানেন না।
শৈলী ঘাবড়ে উঠে। তড়িঘড়ি করে মুখ ফষ্কে বলে ফেলে,
– আপনার ব্যাপারে কথা হচ্ছিলো বলে শুনছিলাম তো, অন্য কিছু হলে জীবনেও শুনতাম না।
হুট করে কেশে উঠলো মিহরান। কফি মুখ থেকে পরে যাওয়ার জোগাড় হলো। এদিকে কি বলে ফেলেছে বুঝতে পেরে শৈলীর তো মুখে হাত। চোখের মনি কোটর থেকে বের হয়ে এখনি নিচে পরে যাবে যেন।
মিহরান অতি দ্রুত নিজেকে সামলে ফেললো। দৃষ্টিতে দুষ্টুমি ভরতে একদম সময় নিল না।
– আমার ব্যাপারে এতো আগ্রহ জাগলো কেন বলুন তো?
শৈলী রীতিমতো হাঁসফাস করছে। মাথা শুদ্ধ ঘুরঘুর করছে সব। ধুর! কথায় লাগাম দিলে কি হতো?
– বললেন না তো শৈলী?
-সস্যা…
– আমি এখনো আপনাকে পড়ানো শুরু করিনি। তাই এতো স্যার স্যার বলে মুখে ফ্যানা তোলা লাগবে না।
শৈলীর চোখ এবার কপাল ছোয়। এনার হয়েছে টা কি? স্যার না বলে কি বলবে তাকে? পড়ানো শুরু না করুক, ফ্যাকাল্টি তো হয়েছে।
– আসলে আমি…
– আপনাকে না আমি রেস্ট নিতে বলেছিলাম। আপনি তাহলে এতো রাতে নিচে কেন?
– আমি আসতে চাই নি বিশ্বাস করুন। বান্ধবীরা জোর করে এনেছে।
-হমম।
আবার দুজন চুপ। মিহরান কফির কাপে চুমুক দিল। শৈলীর লজ্জায় এখন অস্বস্থি লাগছে তাই ও ভাবলো চলে যাওয়া টাই শ্রেয় এখান থেকে।
– আমি এখন আসি। বান্ধবীরা ওয়েট করছে।
-ওকে।
– আপনি…ভালো মতন রেস্ট নিন। আপনার ওপর দিয়েও কম ধকল যায় নি তো।
– রেস্ট নিতেই তো যাচ্ছিলাম, আপনার জন্য তো সেটাও হলো না।
শৈলী মাথা ওঠায় অবাক চোখে,
– আমার জন্য? আমার জন্য কিভাবে?
– তা যদি বুঝতেন তাহলে তো হতোই। থাক্ বোঝার সময় আছে প্রচুর। এখন বান্ধবীরা মিলে এনজয় করেন। আমি আছি আশপাশে।
শৈলী মিহরানের কথার আগা মাথা কিছুই বুঝলো না। খুব কনফিউস হয়ে সামনের দিকে পা বাড়ালো ও। কিন্তু তাও দু কদম যেয়ে সারতে পারলো না।
-শৈলী।
শৈলী ঘোরার আগেই মিহরান ওর কাছে এসে পেছনে দাড়ায়। কন্ঠ খাদে নামিয়ে আউড়ায়,
– এখন থেকে রোজ সন্ধ্যায় আপনার হাতের কফি চাই আমি।
পুরোপুরি স্তব্ধ হয়ে যাওয়া এক শৈলীকে রেখে মিহরান প্রস্থান করলো। আর ফিরে তাকালো না।
……………………..
সারা রাত এপিঠ ওপিঠ করেই কাটিয়েছে শৈলী। ঘুমের লেশমাত্র আসেনি চোখে। সকালে ফজরের নামাজের পর আর খাটেই গেল না। রুমেই পায়চারি করলো। কতো কিছু যে মাথায় ঘুরছে ওর তার ঠিক নেই। এবারের ঢাকায় ফেরা এক নতুন আঙ্গিকে হবে আগের সাথে জোড়া হওয়া আরেক নতুন পরিচয়ে।
—————————-
সকাল সাড়ে আটটার দিকে ছাত্রছাত্রীরা নিজেদের বাসে উঠলো। কাল মাথায় না আসলেও সকাল থেকেই শৈলী নিজের মোবাইলের জন্য তৎপর হলো। লাবন্যর কাছে ওর মোবাইল এটা ও জানে কিন্তু মেয়েটার সামনে পর্যন্ত যেতে এখনো গাঁয়ের রক্ত টগবগ করছে। মেয়েটার চেহারা পর্যন্ত দেখার রুচি হচ্ছে না ওর। কি করবে?
ঠিক তখনই প্রিতি দৌড়ে আসলো ওর কাছে,
– কি রে শৈলী। তুই তো দেখি ভারি ভুলক্কর। নিজের ফোন রুমেই রেখে চলে আসছিস?
শৈলী যারপর নাই অবাক? ওর মোবাইল রুমে? কিভাবে? প্রিতি মোবাইলটা শৈলীর হাতে দিয়ে বললো,
– তাও ভালো যে আমি সবার পরে নামসি। সব চেক করে বের হওয়ার সময় দেখি খাটে তোর মোবাইল পরা। আন্টি ফোন দিয়েছেন কয়েকবার। লাস্টে আমি ধরেছি। তোর সাথে কথা বলতে চাচ্ছেন তাই কল দে।
শৈলীর বুঝতে আর বাকি রইলো না। নিশ্চয়ই লাবন্য সবার অগচরে রুমে যেয়ে মোবাইলটা রেখে এসেছে। রাগ শৈলীর আরও বাড়লো।
– তোমাকে তো আমি ছাড়বোনা লাবন্য। একবার ঢাকায় যেয়ে নেই। তারপর তোমার খবর নিচ্ছি দাড়াও।
সবাই উঠে গেলেও বাস চলছিল না দেখে সবার মনেই উৎসুক হয়েছিল। হঠাৎ মিহরানকে জোড়ে পায়ে বাইরে থেকে হেটে আসতে দেখে জানালার ভেতর দিয়ে শৈলী অবাক হয়। সকাল থেকেই ওনাকে দেখেনি ও। কোথায় গিয়েছিলেন বাইরে তিনি?
চলবে।