#পরিণয়_প্রহেলিকা
#লেখিকা_সিনথীয়া
#পর্ব_৫৩
#শেষ_পর্ব
– সাহিবা…মা এদিকে আয় না বেবি। ফুপিকে আর দৌড় ঝাপ করাইস না। প্লিস বাবু।
পর্দায় আড়াল থেকে খিলখিলানো হাসি শুনেই মাহিরা বুঝে যায় সাহিবা কই। পা টিপে টিপে নিঃশব্দে কাছে যায়। পর্দা সরিয়ে মুখে বড় একা হাসি দিয়ে তুলতুলে ছোট্ট সাহিবাকে কোলে তুলে নেয়।
– এই বার পেয়েছি দুষ্টু টাকে। এতো চঞ্চল হলি কেমনে তুই বলতো? তোর বাপ মা, দুটাই তো ঠান্ডা প্রকৃতির…তাহলে?
– ও নিজের ছোট ফুফুর মতন হয়েছে বুঝছো? বেজায় চঞ্চল আর দুষ্টু।
মাহিরা মুখ বাকিয়ে পেছনে ফেরে। নিজের স্বামীর দিকে কপট রাগ দেখায়,
-আমি দুষ্টু আর চঞ্চল তাই না? তো পাশে আছো কেন? ভালো না লাগলে চলে যাও। ধরে রাখসে নাকি কেউ?
তন্ময় ততক্ষণে পাশে চলে এসেছে। সাহিবাকে মাহিরার কোল থেকে নিয়ে ওর গালে ছোট্ট একটা চুমু দিয়ে বলে,
– দেখসো সাহিবা বাবু। ফুপি তোমার কতো দুষ্টু। ইচ্ছা করে এগুলা বলে আমার থেকে দূরে যেতে চায়। সে কি জানে না তাকে ছাড়া আমার জীবন পুরাই অচল?
সাড়ে তিন বছরের সাহিবা কি বুঝলো কে জানে, তবে মাহিরা লজ্জায় হেসে দিল। মানুষটা ভীষণ লজ্জায় ফেলতে পারে ওকে। অবশ্য এতে ও বরাবরই খুব খুশি।
সাহিবা তখনই নিজের তোতলা ভাষা দিয়ে কথা বলে ওঠে,
– তময় তাত্চু, আমাকে নামাও, আমি নামবো। মাম্মার কাতে দাবো।
মাহিরা এতোক্ষণ তন্ময়ের দিকে তাকিয়ে ছিল। সাহিবার কথা শুনে মনোযোগ সরলো ওর।
– না বেবি, আপনি এখন ফুপির কাছে রেডি হবেন। মাম্মা আপনার ছোট্ট বেবি ভাইয়াটাকে রেডি করাচ্ছে। আমরা রেডি হয়ে তারপর যাব মাম্মার কাছে। দেখ তোমার তানিম আর মাহিন ভাইয়ারাও রেডি হয়ে গিয়েছে।
সাহিবা এটা শুনেই খুশি হয়ে মাহিরার কাছে চলে আসে। ওকে রেডি করাতে করাতেই তন্ময় ব্যস্ত হয়ে বললো,
-আমার জমজ রাজপুত্রদ্বয় কই। সন্ধ্যা থেকেই দেখছি না।
– তোমার দশ্যু দুই ছেলে আর জোহেবং বড় ভাইয়ার কাছে আছে। ভাইয়া সবগুলোর জন্য অনেক চকোলেট্স এনেছে। এখন কি আর কেউ ভাইয়ার পিছ ছাড়ে।
চকলেট্সের নাম শুনেই সাহিবা উত্তেজিত হয়ে গেল,
– আমিও তকলেট খাব। বলো আব্বুর কাথে দাবো।
-হ্যা মামনী যাব তো। আগে রেডি হয়ে নাও সুন্দর করে। আজকে ছোট আব্বুর এঙ্গেজমেন্ট না? আমরা ছোট মাকে নিয়ে অনেক মজা করবো না?
সাহিবা আর একটুও জ্বালাতন করলো না। লক্ষী মেয়ের মতোন চুপটি মেরে বসে রইলো যতক্ষণ না মাহিরা ওকে পুরো সাজিয়ে দিয়েছে।
তন্ময়ের সাথে সাহিবা কে পাঠিয়ে দিয়ে নিজেকে তৈরী করতে মাহিরা আলমারির কাছে যায়। নিজের জন্য রাখা শাড়িটা বের করতেই রুমে আসে মালিহা। মেহরাবের বিয়ের জন্য সবাই এই বাসায় উপস্থিত। তন্ময় সহ মাহিরা এক সপ্তাহ আগেই চলে এসেছে। মালিহা, যে এখন স্বামী সহ ক্যানাডা তে থাকে, ফিরেছে আজ দশ দিন হলো। সেই বাবুল সাহেবের বন্ধুর ছেলের সাথেই মালিহার বিয়ে হয়েছে। তবে রায়হানের ঘটনার আরও প্রায় এক বছর পর। মালিহা নিজের সম্পর্কে প্রতাড়িত হয়ে একদম ভেঙে পরেছিল মানসিক ভাবে। রায়হান কে আইনের আওয়াতায় খুব দ্রুত আনার যখন সব খোলাসা হয় তখন মালিহা নিজের মানসিক ভারসম্য হারিয়ে ফেলেছিল। যখন জানতে পেরেছিল যে রায়হান শুধু ওর আর প্রিতির সাথেই না, আরও অনেক মেয়েদের সাথেই একই সময়ে সম্পর্কে জড়িয়েছিল, তখন মালিহা পাথর বনে গিয়েছিল। সম্পর্ক, ভালোবাসা এসব থেকে পুরোপুরি বিশ্বাস উঠে গিয়েছিল ওর। তখন পুরো পরিবার একসাথে হয়ে সামলেছিল ওকে। শৈলী, মাহিরা নিজেদের রাতের ঘুম হারাম করে ওর পাশে বসে থাকতো। ঝুমা নিজের সদ্যজাত শিশু, জোহেবকে নিয়েই সময় দিত মালিহাকে। সেই বছরটা ভয়ংকর ছিল হাসান পরিবারের জন্য।
তবে যেমন ঘন কালো অন্ধকার ভেদ করে সূর্যদয় হয়, ঠিক তেমনই এই পরিবারের অন্ধকারের ঘনঘটা কেটে যায় একসময়। মালিহাকে সামলে নিতে সক্ষম হয় শৈলীরা। তার সাথে বন্ধু রুপে আগমন হয় আবেদের। পরিবারের এক অঘোষিত সদস্য হয়ে মালিহার দুঃখে ভাগ নিতে সামিল হয় ও। আস্তে ধীরে ওদের নিজেদের মাঝের বন্ধন দৃঢ় হয়। একসময় আবেদ বাধ্য করে মালিহাকে প্রেমের বাস্তব সুন্দর জগতে প্রবেশ করতে। আজ সেই বন্ধনের প্রায় চার বছর পার হয়ে গিয়েছে। এখন মালিহা নিজের পারিবারিক জীবনে খুব সুখি। দুই বছরের ফুটফুটে একটা কন্যা সন্তানের বাবা মা, ও আর আবেদ। ক্যানাডায় নিজেদের সুখের সংসার গড়ে ভালোই আছে দুজন।
মালিহা রুমে ঢুকলো হন্তদন্ত হয়ে,
-এই মাহি, সেইফটি পিন আছে রে? আমার পুরা বক্স সহ সেইফটিপিন খুজে পাচ্ছি না। আঁচলটায় লাগাবো।
মাহিরা হেসে নিজের শাড়ি রাখে।
– আসো আমি ঠিক করে দেই।
মালিহা মুচকি হেসে দ্রুত চলে আসে বোনের কাছে। মাহিরা স্বযত্নে আঁচল টা ঠিক করতে লাগে।
– শৈলী কই রে মাহি? রেডি হয়েছে ও? সিয়ামকে নিয়ে একা পারছেও কি না। ছয়মাসের বাচ্চা নিশ্চয়ই জ্বালাচ্ছে ওকে। একবার দেখে আসা দরকার ছিলো।
– তোমার মনে হয় ও একা আছে আপু? একবারও মেঝ ভাইয়াকে আশেপাশে দেখেছো কোথাও তুমি? বান্দা এই ফ্লোরেই নাই। দেখ গিয়ে বউয়ের সাথে ইটিশ পিটিশ করতেই ব্যস্ত সে।
ছোট বোনের কথায় মালিহা হাসে,
– আসলেই বউ বলতে পাগল ভাইয়া। মাশাল্লাহ্। ওদের দেখে কে বলবে যে বিয়ের প্রায় সাড়ে পাঁচ বছর পার হয়ে গিয়েছে দুজনের। এখনো আকর্ষণ একটুও ফিঁকে হয়নি। বরং আরও মনে হয় বেড়েছে। চিন্তা করা যায় মাহি, আমাদের রগচটা, শান্ত গম্ভীর মেঝ ভাইয়া, এইভাবে প্রেমে পরবে?
মাহিরাও তাল মিলায় বান্ধবীর সাথে,
– আমাদের শৈলীর মাঝে জাদু আছে বুঝছো। সেটা দিয়েই মোহিত করে রেখেছে ভাইয়াকে।
কিটকিটিয়ে হাসলো দুই বোন। সেই হাসি ছড়িয়ে পরলো পুরো ঘরময়।
……………
পুরো হাসান বাড়ি হইহট্টোগোলে ভরপুর। ছোট ছেলের বিয়ে বলে কথা। পুরো বাসা জুড়ে লাইটিং করা হয়েছে। সরগমে বেজে উঠছে চারিপাশ। শুধু ছয়তলার ছাদের স্টুডিও এ্যাপার্টমেন্টটা নিরব। একদম চুপচাপ। না হয়ে তো উপায়েও নেই। কেননা পরিবারের সবচাইতে ছোট্ট সদস্য, সবার আদরের সোনামনি, মা বাবার রাজপুত্র, সিয়াম মিহরান হাসান এখন গভীর ঘুমে আচ্ছন্ন। তার ঘুম ভাঙানো যাবে না কোনোভাবেই, মাত্রই যে ঢলে পরেছেন নিদ্রায় তিনি। শৈলী পাশে থেকে নিঃশব্দে উঠে বসে। ছেলের তুলতুলে নরম হাতের মুঠি থেকে নিজের চুলের কয়েকটা গোছা খুব সন্তর্পনে সরায়। বিনা শব্দে গভীর এক শ্বাস ছাড়ে। উফফফ! কতো কষ্টে ঘুম পারানো গেল মহোদয়কে। যতই ঘুমানোর পায়তারা করুক না কেন শৈলী, তিনি তার গোল গোল মুক্তার মতন চোখগুলো দিয়ে পিটপিট করে মায়ের দিকে তাকিয়ে থাকবে। কি দুষ্টু!
শৈলী নিজের এক হাত এখনো সরায়নি সিয়ামের বুক থেকে। আল্তো হাতে একটু একটু ট্যাপ করছে এক তালে। তখনই নিজের কাধে অতি পরিচিত এক স্পর্শে ও ফিরে তাকায়। মিহরান ঠিক ওর পেছনে দাড়ানো ওর কাধ ধরে, তবে তার দু চোখ ঘুমন্ত ছেলের দিকে নিবদ্ধ।
– ঘুমিয়েছে?
শৈলী শুধু মাথা আস্তে করে ওপর নিচ ঝাকায়। ঘুমিয়েছে।
মিহরান এইবার ঝুকে আসে। শৈলীর মাথার বাঁ পাশে আল্তো ঠোটের স্পর্শ দিয়ে নিজের এক হাত সিয়ামের বুকে রাখে। তারপর শৈলী কে ফিসফিস করে বলে,
– আমি বসছি এখানে, তুমি যেয়ে রেডি হও।
শৈলী হালকা হেসে উঠে পরে। মেকআপ আগেই করে ফেলেছিল যখন সিয়ামকে নিয়ে মিহরান বাইরে খেলছিলো। মাঝপথে রাজকুমারের মনে হয় খুদা আর ঘুম দুটোই লেগেছিল তাই তিনি তার বাবার কাছে থাকতে তখন নারাজ। মিহরান আর সামলাতে না পেরে ভেতরে আসে। শৈলী তো ওর ছেলেকে হাড়ে হাড়ে চিনে তাই কোনোভাবেই বিচলিত না হয়ে বাবুকে কোলে নিয়েই খাটে বসে পরলো। সেই বসা থেকে এইযে উঠলো এখন।
ঠিক দশ মিনিটের মাঝে শৈলী শাড়ি পরে তৈরী হয়ে গেল। ল্যাভেন্ডার আর লাইট পিংকের কম্বিনেশনে একটা শিফন জর্জেটের শাড়ি পরেছে ও। পাড়ে ভারি কাজ করা শাড়িটা একদম আনকরা। তার সাথে ম্যাচ করেই শৈলী হাল্কা তবে উজ্জ্বল মেকাপ নিয়েছে। সাথে গলায় কানে পরেছে স্টোন কাটের নেকলেস সেট। চুল গুলো নিচ থেকে বিকেলেই একটু কার্ল করে রেখেছিল, তাও সেটা কোমর ছাড়িয়েই ছড়িয়ে আছে। সব শেষে নিজের ঠোট সাজানোর জন্য একটা নিউড পিংক বেইজের লিপস্টিক বেছে নিল ও। কিন্তু সেটা খুলে লাগানোর আগেই পাশ থেকে এসে মিহরানের বলিষ্ট হাত থামিয়ে দিল ওকে।
শৈলী অবাক চোখে স্বামীর দিকে তাকায়। ওর সাথে কালার ম্যাচিং করে ল্যাভেন্ডার রঙের ওপরে হাতের কাজের একটা সিল্কের গ্লেইজি পাঞ্জাবি পরেছে মিহরান। ভীষণ রকমের আকর্ষণীয় লাগছে মানুষটাকে। শৈলীতো এই মুহূর্তেও স্বামীর ওপর আবার ক্রাশ খেল। নিজের ওপরই এখন বিরক্ত ও। এতো বছর যেয়েও সেই বাচ্চা মেয়েদের মতন সে ক্রাশ নামক বস্তু নিয়েই চুরমার হচ্ছে। তাও আবার কার ওপর? নিজেরই স্বামীর ওপর। হায় কপাল! এটা কিছু হইলো?
শৈলী মিহরানকে দেখে এসব ভাবতে ভাবতেই প্রশ্ন ছোড়ে,
– কি ব্যাপার? হাত ছাড়ো।
মিহরান কোন কথা বলে না। বরং হাতের মুষ্ঠি আরেকটু শক্ত করে কাছে টানে শৈলীকে। স্তব্দ রুমের নিস্তব্ধ পরিবেশে শৈলীর কানে ঝঙ্কার তুলে বলে ওঠে,
– আমাকে নেশা ধরাতে ওস্তাদ তুমি। নির্দয়ী মেয়ে কোথাকার।
শৈলী সম্পূর্ণ কেঁপে ওঠে। মাত্রই না ক্রাশ খেল, তারপর আবার এই বাক্য। এরপর কিভাবে সামলানো যায় নিজেকে? ততক্ষণে মিহরানের ঠোট বেশ কাছে চলে এসেছে শৈলীর অধরের। পলক ঝাপটে নয়ন বন্ধ করে শৈলী। স্বামীর প্রেমনিবেশে মত্ত হতে আপনাতেই প্রস্তুত হয় দেহ। নিজেকে মিহরানের আবেশে পায় পরক্ষণেই….
-হায় আল্লাহ্! আমরা কিছু দেখিনি দেখিনি।
চকিতেই নিজেদের মাঝ থেকে বেরিয়ে আসে শৈলী মিহরান। ধরফরিয়ে শৈলী তাকায় দরজার দিকে। মাহিরা আর নিপুন কে দেখে ভীষণ লজ্জা পেয়ে যায়। মিহরানও মনে হয় লজ্জা পেয়েছে, ছোট বেন আর শালির সামনে। তাই তো গম্ভীর মুখ নিয়ে বলে ওঠে,
– অসভ্যের দল। দরজায় নক্ করতে কি মনে থাকে না?
নিপুন আর মাহিরা খিলখিলিয়ে ওঠে। দুজনই দুষ্টুমি করে নিজেদের হাত দিয়ে চোখ ঢেকে রেখেছে। এর মধ্যেই মাহিরার আওয়াজ শোনা গেল,
– তো ভাইয়া, দরজার ভেতরেও তো লক্ আছে, সেটা বন্ধ করতে ভুলে যাও কেন? আমাদের কি দোষ বলোতো?
শৈলী মুচকি হাসি দেয় লজ্জায়। আচ্ছা মানুষের হাতে ধরা পরেছে ও। মাহিরা এখন কতদিন যে এ নিয়ে ক্ষেপাবে তার কোনো হিসেব নেই। ওর চিন্তার মাঝেই শৈলী মিহরানের কন্ঠ পায়,
– তা তোরা দুইজন দল বেধে আসলি কেন? আমাদের রোম্যান্সের বারোটা বাজাতে?
এইবার চোখ খুলে মাহিরা আর নিপুন হেসে ফেলে। নিপুন খাটের পাশে যায়। ঘুমন্ত সিয়ামকে খুব সাবধানে নিজের হাতে তুলে নিয়ে ওর জন্য রেডি করে রাখা মোবাইল কটে স্বজত্নে শুইয়ে দেয় আর বলে,
– না ভাইয়া। আমরা তো আরো এসেছি তোমার আর আপু রোম্যান্সে কোনো বিঘ্ন না ঘটুক সেই ব্যবস্থাই করতে। আমাদের জানটুস পাখিটাকে নিয়ে গেলাম। তোমরা আস্তে ধীরে আসো……নিজেদের রোম্যান্স পূর্ণ করে।
বলেই আবার খিল খিল করে ওঠে দুজন। তারপর ছোট্ট সিয়ামকে নিয়ে নিচে যাওয়ার পথ ধরে। শৈলী ওদের যাওয়া পর্যন্ত অপেক্ষায় ছিল। ওরা যেতেই মিহরানের বাহুতে একটা আল্তো কিল বসায়,
– ছোট বোন, ছোট শালি, তাদের সামনেও মুখে লাগাম থাকে না তাই না তোমার? কি ভাবলো ওরা?
মিহরানের ভাবলেশহীন জবাব,
– কি ভাববে আবার? ওরা কি ছোট নাকি? মাহিরা নিজেই দুই বাচ্চার মা। আর নিপুনেরও আক্দ হয়ে গিয়েছে। তাহলে ওদের সাথে আবার লজ্জা কিসের?
শৈলীর মুখ হা হয়ে যায়। মাটিতে ওর কথা পরতে দেয় না এই লোকটা তার আগেই তার উত্তর রেডি। নিজের বিরক্তি দেখায় শৈলী,
– দেখি সরোতো। তোমাকে আসলে বুঝিয়ে কোনো লাভ নেই। দুই দুইটা বাচ্চার বাবা হয়ে গেলা, কিন্তু এখনো দুষ্টামি কমেনি তোমার। সরো, আমাকে রেডি হতে দাও। নিচে এখনো যেতেই পারলাম না। মানুষ কি বলবে? দেবর কাম বন্ধুর বিয়ে, আর সেখানে মেঝ বউই গায়েব। হইলো কিছু? সাহিবাকেও দেখিনি সেই সন্ধ্যার পর থেকে। মেয়েটার আমার, কিছু খেয়েছে কি না কে জানে।
স্ত্রীর কথা সব শুনে মিহরান। নিজের ঠোটে লিপস্টিক লাগানো শৈলীকে পেছন দিয়ে কোমড় জড়িয়ে ধরে আয়নায় তাকায়,
-দুই টা কেন, বিশটা বাচ্চার বাবা হলেও আমি এমন দুষ্টুই থাকবো। আমার নেশা তুমি শৈলী, মাতাল তো তোমার কাছে হবোই। কেন? চাওনা আমি মাতাল হই তোমার মাঝে?
স্বামীর খাদে নামা নেশাতুর কন্ঠের প্রশ্নে শৈলী চকিতে ঘুরে মিহরানের বুকে মুখ লুকায়। চওড়া পেটানো বুকে পাঞ্জাবীর ওপর দিয়ে খামচি দিয়ে ধরে। মিহরানের জোরটা আরেকটু কাছে আসতেই নিঃশ্বাস ভারি হয়ে ওঠে শৈলীর। বাহুবন্ধনে স্তরে স্তরে গলে যায় ও। নিজের সৌভাগ্যের ওপর কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করে তখনই। কেমন এক প্রহেলিকার মাঝে তাদের পরিনয় ঘটেছিল। একেই হয়তো বলে নিয়তি, একেই হয়তো বলে আত্মার বন্ধন যা এই প্রহেলিকাময় পরিনয়কে সুন্দর একটা ভবিষ্যৎ দিয়েছে। শৈলীকে মিহরান আর মিহরানকে শৈলী দিয়েছে।
সমাপ্ত।
অনেক দিন ধরে গল্পটা লিখতে গিয়ে এখন শেষ সময় এসে ছাড়তে মন চাচ্ছিলো না। মিহরান শৈলী আর ওদের পরিবারের সাথে মিশে গিয়েছিলাম আমি। তবে ঐযে…..সবকিছুরই একটা ইতি আছে। তাই পরিনয় প্রহেলিকারও ইতি টানলাম আজ।
এই যাত্রায় আমার সাথে আপনারা সবাই ছিলেন, এখনো আছেন। অনেক আপু ভাইয়াদের আদর ভালোবাসা কুড়িয়েছি, তবে এখনো মন ভরেনি। আরও আদর ভালোবাসার লোভ আছে। তাই আজ এই গল্প নিয়ে আপনাদের মন্তব্য, অনুভুতি জানতে চাই। আশা করি আমার পাঠকরা আমাকে নিরাশ করবেন না।
আবার কিছুদিনের মধ্যেই ইনশাআল্লাহ আমি নতুন গল্প নিয়ে আসবো। এরমাঝে আমার পুরোনো গল্পগুলো গুছিয়ে পোস্ট করে দিব। ভালো থাকবেন, সুস্থ থাকবেন সবাই। আমার পেইজটা কাইন্ডলি মানুষদের মাঝে শেয়ার করে দিয়েন।
ভালোবাসা অবিরাম।