#চন্দ্রকিরণ
কলমে: লাবণ্য ইয়াসমিন
পর্ব:১৮
নির্জন রাত,রাস্তার দুইপাশে পাশে ঝিঝিপোকাগুলো অনবরত ডেকে চলেছে। দূর থেকে শেয়ালের ডাক ভেসে আসছে। মাথাসহ মুখ ঢেকে দুজন মাবন মানবি চৌধুরী বাড়ির গেটে সামনে এসে দাঁড়ালো। দারোয়ান ওদের দিকে চেয়ে ঘাবড়ে গেলো। হাতের রাই*ফেল তাক করে চিৎকার করতেই কণ্ঠ নামিয়ে পুরুষালী কণ্ঠে উত্তর আসলো,
> আবুল চাচা আমি আরিয়ান। পাশে আপনার বউমা। বলেছিলাম না আসবো?
দারোয়ান চাচা তাড়াতাড়ি করে সরে আসলো। ফিসফিস করে বলল,
> ভুল হয়ে গেছে বাবা। কিন্তু ভেতরে যাওয়া কি ঠিক হবে? যদি কোনো ঝামেলা হয়? সাবধানে যাবে। আমার খুব ভয় করছে।
পাশ থেকে জাহান বলে উঠলো,
> ভয়ের কিছু নেই চাচা। আমরা এখুনি ফিরে আসবো। আপনি গেট খুঁলে দিন। আর বাইরের সিসি ক্যামেরা বন্ধ আছে না?
দারোয়ান চাচা ‘হ্যাঁ’ বলে গেট খুঁলে দিলেন। আরিয়ান ওকে নিয়ে ভেতরে প্রবেশ করলো। মেয়েটা এতো নাছোড়বান্দা ধরণার বাইরে। জ্বর সঙ্গে গায়ে ব্যাথা নিয়ে জিদ করে হাসপাতাল থেকে মাঝ রাতে চৌধুরী বাড়িতে এসেছে তদন্ত করতে। আরিয়ানের নিষেধ শুনেনি। বলেছে না আসলে ও একা আসবে। আরিয়ান বাধ্য হয়ে ওকে নিয়ে মাঝরাতে কাউকে না বলে হাসপাতাল ছেড়েছে। সারা রাস্তা আফসোস করেছে কেনো যে তখন ওই কথাগুলো বলেছিলো এখন ভুগতে হচ্ছে। কপাল গুণে বউ তো আল্লাহ একটা জুটিয়ে দিয়েছে কিন্তু এতো ঝাঝ বলার বাইরে। এই বউয়ের পাল্লায় পড়ে জীবনের বারোটা বেজে যাবে। বিয়ের স্বাদ হাড়েহাড়ে মিটবে। আরিয়ানকে ভাবতে দেখে জাহান বিরক্ত হলো। ঠেলা দিয়ে বলল,
> কি হলো যাচ্ছেন না কেনো? শুনন নাচতে নেমে ঘোমটা টানার মানে হয়না। জাবির চৌধুরী আর ম্যানেজারের কক্ষ দুটো দেখতে হবে। আমার বিশ্বাস ওখানে কিছু না কিছু পাওয়া যাবে।
> কি পাওয়া যাবে সেটাইতো বুঝতে পারছি না। শেষমেশ কি আপনি দাদাজানকে সন্দেহ করছেন? বুইড়া বয়সে দুইটা বাচ্চার বাপ হবে আল্লাহ মাফ করুন। ভাবতেই কেমন লাগছে।
আরিয়ানের কথা শুনে জাহান তেড়ে আসলো। রেগে গিয়ে বলল,
> আপনার যতসব ছিঃ মার্কা চিন্তা। আমি মোটেই ওরকম কিছু সন্দেহ করছি না। সেদিন আমাকে বি*ষ দিয়েছিল কে জানেন?
> জানি।কমোলিনির ছেলে আপনাদের কাজের মেয়েটাকে টাকার লোভ দেখিয়ে বি*ষাক্ত ওষুধ দিয়ে এসেছিল। ওই ভিডিওটা আমি পাঠিয়েছিলাম। চৌধুরী বাড়িতে আমার লুকানো সিসি ক্যামেরা আছে। সাবধানে পা ফেলুন।
ওরা কথা বলতে বলতে পেছনের গেট দিয়ে ভেতরে প্রবেশ করলো। ম্যানেজার বাড়িতে নেই। চাউলের ট্রাকের সঙ্গে ঢাকায় গেছে। ফিরবে দুদিন পরে। জাহান ওর সামনে সামনে এগোচ্ছে। আবছা অন্ধকার পা ফেলতে সমস্যা হচ্ছে তাই বলল,
> আপনি পেছনে আসুন। আমাকে অনুসরণ করে হাঁটবেন। নয়তো পড়ে যাবেন। জ্বর আসে? আসুন দেখি।
আরিয়ান সামনে এগিয়ে পেছনে ফিরে ওর কপালে হাত রেখে গম্ভীর হলো। জ্বর আছে, এখনো পুরোপুরি যায়নি। মেয়ের দম আছে বলতে হয়। জাহান বিরক্ত হলো,
> এতো কথা বলছেন কেনো? ধরা পড়লে কিন্তু আপনাকে আমি ছাড়বো না। চুরি করতে এসে আহ্লাদ দেখাচ্ছেন।নির্জনে যখন থাকি তখন কোথায় থাকেন? জীবনেও একটা ঠিকঠাক চুমু খেতে পারলেন না আবার আসছেন আহ্লাদ দেখাতে। আপনি থাকুন আমি যাচ্ছি।
জাহান খেপে গিয়ে গটগট করে সামনে এগিয়ে গেলো। আরিয়ান হতভম্ব মেয়ের আচরণ দেখে। মনে হলো, এর লাজ লজ্জা নেই কেনো? বিড়বিড় করে বলল,আল্লাহ দুনিয়া থেকে কি তুমি লজ্জা উঠিয়ে নিলে? নাকি আমার বউটাই এমন নিলজ্জ? জাহান বেশ কিছুটা এগিয়ে গেছে। আরিয়ান অপেক্ষা করলোনা। ওর পিছনে দৌঁড়ে গেলো। চৌধুরী বাড়িতে মোট তিনটা বিল্ডিং মাঝখানে উঠান। পুরাতন বিল্ডিং এর দোতলায় জাবির চৌধুরী থাকেন। নিচের একটা কক্ষে ম্যানেজার থাকে। মূলত পুরাতন বিল্ডিংটা বহুকাল আগেকার তৈরী। বাড়ির বড়রা এখানে থাকে। বাকি দুইটা সারা বছর বন্ধ থাকে যখন বাইরে থেকে ছেলেমেয়েরা আসে তখন খুঁলে দেওয়া হয়। ওদের কথা মাথায় রেখে মূলত তৈরী করা। দিনদিন সদস্য বৃদ্ধি হয়েছে তাই অতিরিক্ত কক্ষের প্রয়োজন মেটাতে এই বুদ্ধি। চৌধুরীদের যৌথ পরিবার।এখনো কেউ আলাদা হয়নি। খাওয়া দাওয়া সব প্রধান ভবনে হয়ে থাকে। জাহান চুপিচুপি গিয়ে দরজার পাশে দাঁড়ালো। হাতের চাবিটা আলোগোছে ঘুরিয়ে দরজা খুঁলে ভেতরে প্রবেশ করলো।আরিয়ান ওর পেছনে আছে। ডাইনিং রুমে পিনপতন নীরবতা বিরাজ করছে। আবছা অন্ধকারে জাহান দরজা ভেজিয়ে ম্যানেজারে বন্ধ কক্ষের সামনে এসে দাঁড়ালো,
> এই কক্ষের চাবি আছে?
আরিয়ান মাথা নাড়িয়ে বলল,
> ম্যানেজার চাচা কাউকে চাবি দিয়ে যায়না। উনি নিজের কাজ নিজে করতে পছন্দ করেন।
জাহান কিছু একটা ভেবে চুলের ক্লিপ খুঁলে বিশেষ পদ্ধতিতে দরজা খুঁলে ফেললো।সময় লাগলো দুই মিনিট। আরিয়ান থম মেরে বলল,
> আপনি এটাও পারেন? কিভাবে কি? চুরির কৌশল রপ্ত করেছেন কেনো?
জাহান গম্ভীর কণ্ঠে বলল,
> ইউনিভার্সিটি থাকতে কতবার বন্ধুদের সঙ্গে এসব করেছি। প্রমাণপত্র জোগাড় করতে হলে মাঝেমাঝে চুরি করা বৈধ। আপনি খাটের নিচে দেখু আমি আলমারি দেখছি।
জাহান টানপায়ে এগিয়ে গেলো। হাতের টর্চ জ্বেলে দেখলো আলমারির সঙ্গে চাবি ঝুলছে। নিতে নিতে খেয়াল নেই হয়তো। সোনাই সোহাগা বলতে হয়। জাহান উপর নিচে ভালো করে দেখলো। কাপড় কোম্বল সব ভাজ করে রাখা। নিচে বেশ কিছু ফাইল। জাহান ফাইল গুলো দেখলো। একটা নেড়েচেড়ে দেখে চাদরে মধ্যে লুকিয়ে নিলো। কাপড় সরিয়ে আরেকটা ড্রয়ার দেখলো। চাবি দিয়ে খুঁলে ভেতরে উঁকি দিয়ে হতভম্ভ। অনেক গুলো টাকার বান্ডিল সঙ্গে পঞ্চাশটার উপরে স্বর্ণের বার। জাহান চাপা কণ্ঠে আরিয়ানকে ডাকলো। দুজনে থম মেরে দাঁড়িয়ে আছে। এতো টাকা আর স্বর্ণের বার ম্যানেজারের কক্ষে কি করছে? স্বর্ণের বার এটা বেইমানি। লোকটিকে দেখলে কেমন আলাভোলা লাগে তার পেটে পেটে এতো দুষ্ট বুদ্ধি? জাহানের মাথা ঘুরছে। বলল,
> এসবে হাত লাগানো উচিত হবে না। আপনি ফোন বের করুন। ভিডিও করি। প্রমাণ রাখতে হবে। আর একটা কাজ করুন।
আরিয়ান ফোন বের করে ভিডিও করে নিলো। তারপর বলল,
> এগুলো এভাবেই থাক। বাংলাদেশের পুলিশ কেমন জানেন না? ক বলতে কোলকাতা বুঝে যায়। বলবে আমরা ফাঁসানোর জন্য রেখেছি। রাতের আঁধারে এভাবে আসা আমাদের উচিত হয়নি।
জাহান তীব্র প্রতিবাদ করলো,
> বাজে কথা বলবেন না। এগুলো রেখে গেলে সরিয়ে ফেলবেনা তার গেরান্টি কি?
আরিয়ান ভাবলো ঠিকই বলছে। এভাবে রেখে যাওয়া রিস্ক। তাই বলল,
> একটা কাজ করি থানার দারোগার সঙ্গে আমার ভালো পরিচয় আছে। এখানে আসার আগে উনার সঙ্গে আমার কথা হয়েছিল।জানে আমরা এখানে আসবো। পুলিশ নিয়ে এখানে আসতে বলি। লুকিয়ে চুরিয়ে কতকাল চলবে বলুন? যা হবে এবার সামনে সামনে।
জাহান রাজি হলো। আরিয়ান টেক্সট করে দুজনে গেটের কাছে এগিয়ে গেলো। মিনিট পনেরো পরে পুলিশের গাড়ি এসে থামলো। আরিয়ান এগিয়ে গিয়ে আলাপ করে বলল,
> আপনারা ভেতরে গিয়ে আমাদের কথা বলবেন না। আমার বিশ্বাস এই বাড়িতে আরও অপরাধী লুকিয়ে আছে। আমি তাদেরকে ধরতে চাইছি। আপাতত ম্যানেজারের ব্যবস্থা করুন। আর ওর সঙ্গে কে কে এই কাজে জড়িত খোঁজ নিন। ম্যানেজার ঢাকায় আছে আপনারা ওখান থেকে উনাকে তুলে নিন।
আবুল বাসার বেশ সৎ এবং সদালাপী মানুষ। বেশ কিছু কেস সামলে নিয়েছেন। উনি ভরসা দিলেন,
> চিন্তা করবেন না। আমি আপনাদের সাহায্য করবো। অসংখ্য ধন্যবাদ আমাদের কাজটা আরও সহজ করে দেবার জন্য। নয়তো জানতেও পারতাম না এই লোক দুই নাম্বারি কাজের সঙ্গে জড়িত।
জাহান এগিয়ে আসলো। কিছুক্ষণ আগে হাতের কাটা জায়গায় আঘাত পেয়েছে সেখানে যন্ত্রণা করছে। মুখখানা চুপসে আছে তবুও বলল,
> আহিল চৌধুরীর নিখোঁজ হওয়ার পেছনে এই লোকটার হাত ছিল। প্রমাণ আমি কোর্টে হাজির করবো। আপনি উনার নামে কেস ফাইল করবেন। আর কমোলিনি ম্যামকে বেইমানি কাজের জন্য রাতের মধ্যে তুলে নিন। ভদ্রমহিলা বাইরে থাকলে ঝামেলা আছে। তথ্য প্রমাণের অভাব হবে না। আপনি চাইলে সকালের মধ্যে একটা কপি দেখাতে পারবো।
> জ্বী ম্যাম আমি দায়িত্ব নিয়েছি কোনো অপরাধী আর সুযোগ পাবে না। তাছাড়া আপনার বাবার সঙ্গে আমার কথা হয়েছে। চৌধুরী বাড়িতে যে নয়টা মৃ*ত্যু হয়েছিল অনুমান করা হচ্ছে সেগুলো সাধারণ মৃ*ত্যু না বরং মা*র্ডার ছিল। কেস পূণরায় সচল করা হয়েছে। আমরা চেষ্টা করছি আপনাদের ন্যায়বিচার পেতে সাহায্য করবো।
> অসংখ্য ধন্যবাদ আপনাকে। কেসটা আমি লড়বো। ব্যারিষ্টার আহিয়া খান আদরের প্রথম কেস। ইনশাআল্লাহ জিত আমারই হবে। কি বলেন?
> নিশ্চয়ই।
জাহান হাসলো। আরিয়ান ওর মুখের দিকে চেয়ে আছে। মেয়েটা হাসছে কিন্তু মুখে বিষাদের চিহ্ন। পুলিশ ভেতরে চলে যেতেই আরিয়ান ওকে নিজের দিকে টেনে নিয়ে বলল,
> আঘাত পেয়েছেন? হাত বের করুন। ঝামেলা করবেন বলে ডাক্তারকে বলে আমি হাত সামনে ঝুলিয়ে দিতে বলেছিলাম তবুও সেই ঝামেলা। বললাম আজ থাক শুনলেন না। হাত দেখি।
আরিয়ান খেঁপে উঠেছে। রাগে মুখ ফুলিয়ে ফেলল। জাহানের প্রয়োজন হলো না আরিয়ান নিজেই ওর চাদরটা সরিয়ে ব্যান্ডেজ চেক করলো। উপর পযর্ন্ত র*ক্তে ভিজে উঠেছে। সাদা কাপড় রঙিন হয়ে গেছে। আরিয়ান চোখ বন্ধ করে ফেললো। হাতটা নিজের দিকে টেনে নিয়ে বলল,
> কি করে হলো? দ্রুত আসুন।
আরিয়ান ওকে গাড়িতে তুলে নিজেও উঠে বসলো। জাহান ওর মুখের দিকে চেয়ে আছে। লোকটা ঘটঘন ঢোক গিলছে। জাহান আনমনে বলল,
> আচ্ছা একজনের ব্যথা অন্যজন কি অনুভব করতে পারে?
আরিয়ান ব্যস্ত ভঙ্গিতে ড্রাইভ করছে। রাস্তায় লোকজন নেই। গাড়ি চালাতে বিশেষ অসুবিধা হচ্ছে না। জাহানের প্রশ্ন শুনে উত্তর দিলো,
> প্রেয়সীর চোখের পানি সোজা প্রেমিকের হৃদয়ে আঘাত করে।যা আত্মা কাঁপিয়ে দিন দুনিয়া এলোমেলো করে দিতে সক্ষম। আমাদের প্রিয়জনেরা যখন কষ্টে থাকে আমরা তখন তা হৃদয় দিয়ে অনুভব করতে পারি। আপনি শুধুমাত্র আমার বৈধ দলিল বা নামমাত্র স্ত্রী না যে সেখানে ভালোবাসা নেই আছে শুধু দায়বদ্ধতা। আপনি হচ্ছেন আমার বেঁচে থাকার কারণ। আমি একদিনে আপনার প্রতি দুর্বল হয়নি। একটু একটু করে এগিয়েছি। দশটা মাস বিরহের অনলে জ্বলেপুড়ে কল্পনাতে সংসার সাজিয়েছি। আমার প্রেমহীন মরুময় জীবনের প্রথম বসন্ত আপনি। আপনার ছোঁয়া না পেলে হয়তো আজীবন মানুষের দাসত্ব গ্রহণ করে বেঁচে থাকতাম। জেনে বুঝেও চুপচাপ থেকেছি। জীবনের প্রতি কোনো টান অনুভব করিনি। এখন পাশে আপনি আছেন। মনে হয় সত্যি পৃথিবীটা অনেক সুন্দর। আপনাকে নিয়ে আমার জীবনের এই দীর্ঘ পথচলা রোমাঞ্চকর হবে। কি বলেন?
জাহান মুগ্ধ হয়ে শুনলো। তবুও কপট রাগ দেখিয়ে বলল,
> যতই প্রেমের গান শুনিয়ে পটানোর চেষ্টা করেন লাভ হবে না। দশমাস আপনি আমার ধারে কাছেও আসতে পারবেন না। দশমাস পর যা বলার বলবেন।
> পারবেন আমার থেকে দূরে থাকতে? আপনার আম্মা আমার থেকে একটা উপহার চেয়েছেন। আমি কথা দিয়েছি খুব তাড়াতাড়ি উনাকে উপহার দিয়ে খুশি করবো। আসলে আমি কারো অনুরোধ ফেলতে পারিনা।
জাহান কৌতূহলী হয়ে বলল,
> কি চেয়েছেন?
> উনার ধারণা আমাদের একটা বাচ্চা হলে আপনি আর বাইরে বাইরে ডাকাত রাণীর মতো চলাফেরা করতে পারবেন না। আপনি মহিলা সমীতির চেয়ারম্যান হয়েছেন সঙ্গে নারীদের নিয়ে সংগঠন তৈরী করেছেন। কোন এক মেয়ের শশুর বাড়ির সঙ্গে ঝামেলা করেছেন। তারা আপনার উপরে রেগে আছে। হুমকি দিয়েছে। মফস্বলের মেয়েদের পড়াশোনার সুযোগ, কর্মসংস্থানের দায়িত্ব নেন ভালো কথা তাই বলে মা*রামা*রি করবেন? আপনার কিছু হলে আমাদের কি হবে ভাবলেন না?
জাহান মুখটা গম্ভীর করে ফেললো। এসব করতে ওর ভালো লাগে। টাকার জোগান ইব্রাহিম খান নিজে দেন। বাবার মতো রাজনীতি করতে না পারলে জীবন বিথা। ওর টার্গেট এই এলাকার এমপি আসনের দিকে। ইব্রাহিম খানের পর তার জায়গায় আসতে হলে এখন থেকেই প্রস্তুতি নিতে হবে। তার জন্য যোগ্য হয়ে উঠতে হবে। যেটা ওর গোপন স্বপ্ন। এলাকার মহিলাদের জন্য ভালো কিছু করতে হলে ক্ষমতার প্রয়োজন। ক্ষমতা ছাড়া আইনের শাসন প্রতিষ্ঠা করা যাবে না। ওরা কথা বলতে বলতে হাসপাতালে পৌঁছে গেলো। নতুন করে ব্যান্ডেজ করে কক্ষে আসতে গিয়ে ভোর হয়ে আসলো। নতুন একটা ভোর, পূর্ব আকাশের রক্তিম সূর্যের আগমনে কিছু মানুষের ভাগ্য পরিবর্তন আজ নিশ্চয়ই হবে।
************
লাল টুকটুকে শাড়িতে নিজেকে সাজিয়ে নিয়েছে জাহান। পাশে আলেয়া বসে আছে। হাসপাতাল থেকে ফিরে আসার পর দুদিন গত হয়েছে। ফিরোজ মোটামুটি সুস্থ তবে হাসপাতাল থেকে এখনো ছাড়েনি। বেচারার যা অবস্থা এখনো পনেরো দিন ওখানে থাকতে হবে। নীরুর জীবনে একরাশ হতাশা নেমে এসেছে। পরীক্ষার ডেট দিয়েছে। স্বামীকে হাসপাতালে ফেলে ঢাকায় ফিরে যেতে হয়েছে। পরীক্ষা তো আর মানুষের সুযোগ সুবিধা বুঝেনা। তাছাড়া আবেগ দিয়ে জীবন চলেনা। ফিরোজ ওকে বুঝিয়ে শুনিয়ে পাঠিয়েছে। নয়তো ডাক্তার হবার স্বপ্ন আর পূরণ হবে না। ফিরোজের সঙ্গে ওর মা আর শাশুড়িমা পালা করে থাকছে। জাহান আরিয়ান দুজনে দিনের বেশিরভাগ সময় ওখানে কাটিয়ে আসে। ওর তেমন অসুবিধা হচ্ছে না। বরং সে ভালো আছে। ভিডিও কলে দলের ছেলেদের মিটিং মিছিল দেখে খবর শুনে দিন যাচ্ছে। কমোলিনি আবারও পুলিশ হেফাজতে সঙ্গে ম্যানেজার আছে। বেইমানি ব্যবসা,কিডন্যাপিং আর জালিয়াতির মামলায় ফেঁসে বেশ বেকায়দায় পড়েছে। জাহান আরও একটা সত্যি গোপন রেখেছে। সেটা জেলে গিয়ে ম্যানেজারে সামনে বলবে ভেবে রেখেছে। প্রতিবেশীর ছেলের সঙ্গে আজ ইকরার বিয়ে। বাড়িতে কোনো মহিলা নেই তাই লতিফা বানু আর উনার ননদ সবটা দেখাশোনা করছে। ঘরোয়াভাবে বিয়েটা হচ্ছে। রান্নার জন্য লোকজন এসেছে। জাহানের হাতের ব্যাথা কমেছে ব্যান্ডেজ খুঁলে দিয়েছে। আলেয়া ওকে সাজিয়ে দিয়ে বলল,
> তুই পারিস বটে। কিভাবে সবটা ভুলে গিয়ে চুপ আছিস?এইটুকু মেয়ের পেটে কি সাংঘাতিক বুদ্ধি। ভাবলেই আমার মাথায় দপ করে আগুন জ্বলে উঠছে। ফাজিল মেয়ে। তোরা দুজনেই এক।
জাহান ঠোঁটে লিপস্টিক দিতে দিতে বলল,
> দূর বাচ্চা মানুষ, ভুল করেছে ব্যাপার না। বরং ক্ষমা না করে কঠোর হলে আরও বিগড়ে যেতো। আমি ওর উপরে রেগে ছিলাম না রেগে আছি আমার বরের উপরে। ওইটা আস্ত শয়*তান। বউকে কিভাবে পাঠিয়ে দিলো ভাব?
আলেয়া মুখ বাঁকালো। শাড়ির আচল টেনে ঘোমটা দিয়ে বলল,
> যেমন দেবা তার তেমনি দেবী। মিলেমিশে একাকার। আমি যাচ্ছি।
আলেয়া বেরিয়ে গেলো। জাহান ড্রেসিং টেবিলের সামনে দাঁড়িয়ে আছে। চুলটা খোপা করে গজরা লাগানোর জন্য ঘোমটা কিছুটা ফুলে আছে। ও সেটাই ঠিক করছিল হঠাৎ কাঁধে ঠান্ডা হাতের ছোঁয়া পেয়ে চমকে উঠলো। সরে আসতে চাইলো কিন্তু পারলো না। আরিয়ান ওকে দুহাতে পেচিয়ে নিয়ে কাঁধে থুতনি রেখে আয়নার দিকে চেয়ে বলল,
> মাশাল্লাহ একেবারে বউবউ লাগছে।
জাহান বেশ লজ্জা পাচ্ছে। ওর তেমন লজ্জা টজ্জা নেই কিন্তু আজ হুট করে কোথায় থেকে যে উদয় হলো কে জানে। আরিয়ানের চোখে চোখ রাখতে পারলোনা। মাথা নাড়িয়ে বলল,
> আমি আগে থেকেই বউ।
> আমার বাড়িতে একান্ত ব্যক্তিগত কক্ষে এইভাবে আজ নতুন। এলোমেলো লাগে ঠিক গুছিয়ে বলতে পারছি না।
জাহান ছটফট করছে ছাড়িয়ে নেবার জন্য কিন্তু ও ছাড়লো না। ফিসফিস করে বলল,
> আপনি কি লজ্জা পাচ্ছেন? আল্লাহ! আমার দোয়া আল্লাহ কবুল করেছে। শেষমেশ আমার বউয়ের লজ্জা ফিরিয়ে দিয়েছেন। আমি নিশ্চয়ই নফল নামাজ পড়ে শুকরিয়া আদায় করবো। সাংঘাতিক ব্যাপার। চুমু চুমু করে মাথা আউলে দিয়ে আজ যেই সুযোগ পেয়ে কাছে এসেছি ওমনি না?
জাহান ঠোঁট কামড়ে হাসলো। লজ্জা নেই বিষয়টা একদম ভুল। আরিয়ান ওর কাছাকাছি আসেনা। তাই ভেবেছিল আর যাইহোক এই লোক ওকে কখনও লজ্জা দেওয়ার মতো কাজ করবে না। কিন্তু আজ ফেঁসে গিয়ে অবস্থা খারাপ। জাহান কৌশল অবলম্বন করলো। চিৎকার করে আলেয়াকে ডেকে উঠলো। আলেয়া কাছাকাছি ছিল আওয়াজ শুনে দৌঁড়ে আসলো। আরিয়ান চমকে উঠে কিছুটা পিছিয়ে গেলো। মানে কি বুঝতে কয়েক সেকেন্ড লেগে গেলো। বিড়বিড় করলো,ব্যারিষ্টার সাহেবার হাড়ে হাড়ে বুদ্ধি। মাথায় বুদ্ধির চারা গজিয়েছে। একে কুপোকাত করতে হলে কঠিন একটা চাল দিতে হবে”
চলবে