#আন্তঃনগরের_ভালবাসা
লেখকঃ আবির খান
পর্বঃ ০৭
আমি যেই ল্যাপটপ অফ করে উঠে পিছনে ঘুরে তাকাই আমি পুরো ‘থ’ হয়ে যাই। একটা বেশ সুন্দরী মেয়ে আমার সামনে দাঁড়িয়ে আছে। আমাকেই দেখছে। আমি তাকে আমার রুমে দেখে পুরো হকচকিয়ে যাই৷ কে এই মেয়ে? আমি কিছু বলার আগেই মেয়েটা বলে উঠে,
~ এতক্ষণ যাবৎ দাঁড়িয়ে আছি আপনি একবারও টের পাননি?
— দুঃখিত। পাইনি। কিন্তু আপনি কে?
~ কেন মরিয়ম বলেনি কিছু?
— ওহ! আপনি তাহলে ওর বেস্ট ফ্রেন্ড..
~ জি। আমি জান্নাত৷ ওর একমাত্র বেস্ট ফ্রেন্ড।
বলেই ও আমাকে দেখছিল। কিছুক্ষণ দেখে বলে,
~ আপনি তাহলে ওর নতুন ভাই?
— জি।
~ আমাকে আপনি করে বলছেন কেন? আমি আপনার অনেক ছোট। তুমি করে বলেন।
আমি জান্নাতের কথা শুনে ভ্যাবাচ্যাকা খেয়ে যাই। কিরকম মেয়েটা, প্রথম দেখাতেই কিভাবে কথা বলছে আমার সাথে। আমি বললাম,
— সরি। আমি সবাইকে তুমি করে বলতে পারি না৷
~ তাহলে তুই করে বইলেন। হাহা।
জান্নাত হাসছিল। মেয়েটার হাসিটা মনমাতানো। হাসির কারণে খেয়াল করলাম মেয়েটার গালে টোল পড়ে। যেটার জন্য ওকে আরও বেশি সুন্দরী লাগছিল। কিন্তু ওর সুন্দরতা আমাকে স্পর্শ করে নি। আমি গম্ভীর কণ্ঠে বললাম,
— দেখুন আমি আপনাকে আপনি করেই বলবো। আর এখন যদি কিছু মনে না করেন তাহলে একটু বাইরে যান। আমি গোসলে যাবো। জুমার নামাজ আছে।
জান্নাত আমার কথা শুনে হা করে তাকিয়ে থাকে। তারপর ভ্রুকুচকে বলে,
~ যাচ্ছি যাচ্ছি। ভাগাতে হবে না৷ এহ আসছে…আমার মতো সুন্দরীকে পাত্তা দিল না। দেখাচ্ছি মজা৷
এসব গুনগুনিয়ে বলে হনহন করে চলে গেল। আমি ঠিক মতো শুনলাম না কি বলতে বলতে গেল। তবে ও যাওয়াতে হাপ ছেড়ে বাঁচলাম। এরপর দ্রুত সাওয়ার নিতে চলে গেলাম। কারণ নামাজে যেতে হবে৷ আমার সাথে রাগ করে জান্নাত যেই রুম থেকে বের হয় সাথে সাথেই মরিয়মের সাথে দেখা হয়। মরিয়ম জান্নাতকে রাগী ভাবে দেখে জিজ্ঞেস করে,
~ কিরে চেতে আছিস কেন? কি হয়েছে?
~ তোর ভাইটা আস্ত একটা ফালতু। আমাকে রীতিমতো মতো ভাগিয়ে দিল রুম থেকে। পঁচা, ফালতু, লম্বু…
জান্নাতের কথা শুনে মরিয়ম হেসে দেয়। হাসতে হাসতে জান্নাতকে নিয়ে ওর রুমে যায়। দুজন বসে মরিয়ম বলে,
~ ভাইয়া এমনি। তার মেয়েদের প্রতি তেমন কোন আকর্ষণ নেই।
জান্নাত মুখে হাত দিয়ে আস্তে করে বলে,
~ তাহলে তোর ভাই কি ওরকম নাকি?
~ যাহ! দুষ্টু। আমার ভাই ওরকম কিছু না। আসলে ভাইয়া যখন ভার্সিটিতে পড়তো তখন তার নাকি একটা মেয়েকে পছন্দ হয়েছিল। মেয়েটা নাকি তার সাথে ভালো ব্যবহার করতো, তার সাথে পড়াশোনা করতো। ভাইয়ার কাছ থেকে অনেক হেল্প নিত পড়াশোনার জন্য৷ দুজন একসাথে অনেক সময় কাটাতো। ভাইয়া ভেবেছিলো ওই মেয়েটাও বোধহয় তাকে পছন্দ করে৷ তাই একদিন ঠিক করে সে তার মনের কথাটা বলবে৷ কিন্তু আমাদের আশেপাশের মানুষ গুলো যে মুখোশ ধারী সেটা ভাইয়া স্বপ্নেও ভাবে নি। ভাইয়া যেদিন সাহস করে তার মনের কথাটা বলতে যাবে ঠিক সেদিন সে আড়ালে দাঁড়িয়ে শোনে মেয়েটা তার ফ্রেন্ডসদের বলছে, “আরে তোরা পাগল নাকি! আমি ওই হাত ভাঙা অটিস্টিক ছেলের সাথে প্রেম করবো? অসম্ভব! ওর সাথে আমি মিশি কজ ওর মেধা ভালো। আমার পড়াশোনায় অনেক হেল্প হয়। নাহলে ওর সাথে আমি জীবনেও কথা বলতাম না৷” ভাইয়া এগুলো শুনে খুব কষ্ট পায়। এরপর থেকে সে আর কোন দিন ভাবে নি কোন মেয়ে তাকে পছন্দ করবে কিংবা ভালবাসবে৷ তার হাতের সমস্যার জন্য জীবনের প্রতি ধাপেই তাকে অনেক কষ্ট পেতে হয়েছে। তাই আমরা যতটা পারি ওনাকে সাপোর্ট করি।
জান্নাত মরিয়মের কথা শুনে চুপ হয়ে যায়। ও ভেবেই পাচ্ছে না একটা মানুষ এত কষ্ট নিয়ে কিভাবে জীবন যাপন করে৷ ও যতই আবিরের সম্পর্কে জানছে, ওর মাঝে আবিরকে নিয়ে একটা আলাদা কৌতূহল সৃষ্টি হচ্ছে। জান্নাত মনে মনে এও ভাবে, যে আজ পর্যন্ত এমন কোন ছেলে নেই যে ওকে দেখে পাগল হয়ে যায় নি। তার জিএফ থাকা স্বত্ত্বেও। সেখানে একটু আগে আবিরের চোখে ও কোন প্রকার আকর্ষণ দেখেনি। বরং দেখেছে অস্বস্তি। জান্নাত মিষ্টি একটা হাসি দিয়ে বলে,
~ তোর ভাইটা আসলেই অনেক ভালো। সত্যি বলতে হয়েছে কি, আজ পর্যন্ত আমাকে কেউ কখনো এভাবে পাত্তা না দিয়ে তাড়িয়ে দেয় নি। তোর ভাইটা এমন করায় রাগ চলে এসেছিলো। কিন্তু কে ভেবেছিলো এমনটা করার পিছনেও একটা কারণ আছে।
~ আচ্ছা বাবা আর রাগ করিস না৷ আমি ভাইয়ার হয়ে সরি বলছি। চল আম্মুর কাছে যাবি।
~ আচ্ছা চল।
এরপর জান্নাতকে নিয়ে মরিয়ম ওর মায়ের কাছে যায়৷ জান্নাতকে দেখে তিনি অনেক কথা বলেন। অনেক কিছু জিজ্ঞেস করেন। হাসি ঠাট্টা করেন৷ জান্নাত পাশে দাঁড়িয়ে কথা বলছিল আর মরিয়ম এবং ওর মা মিলে রান্না করছিল। সাথে সার্ভেন্টরাতো আছেই। জান্নাত জিজ্ঞেস করে,
~ আচ্ছা আণ্টি আপনারা কেন ওনাকে এত বিশ্বাস করলেন? আবার আপনাদের সাথে থাকতেও দিলেন৷ সেতো মিথ্যার আশ্রয়ও নিতে পারে।
মরিয়মের মা একটু হেসে বললেন,
~ আবির তো নিজ ইচ্ছায় এখানে আসে নি মামনী। ওকে তোমার আঙ্কেল নিয়ে এসেছে। সে কিন্তু যেই সেই লোক না৷ সে সহজে কাউকে বিশ্বাস করে না। তোমার আঙ্কেল জেনে শুনে বুঝেই আবিরকে এনেছেন৷ এরপর যখন আমাদের সাথে পরিচয় করিয়ে দিল আমিও প্রথমে রাজি হইনি। পরে ওর সবকিছু শোনার পর নিজেকে আর আটকে রাখতে পারিনি৷ জীবনে ছেলে সন্তানের একটা খুব ইচ্ছা ছিল। বাবা-মার শেষ বয়সের আশ্রয়স্থল কিন্তু ছেলের কাছেই হয় মেয়ের কাছে না। তারপর এই যে মরিয়ম, ওকে রেখে যদি আমরা কাল চলে যাই কে ওকে দেখে রাখবে বলো? ওর হাজবেন্ড যদি ওর সব কিছু নিয়ে ওকে তাড়িয়ে দেয় তাহলে আমার মেয়েটা কোথায় যাবে? ওর তো কোন অভিভাবক থাকবে না। তাই একটা ছেলের খুব দরকার ছিল। অনেক চেয়েছিলাম আল্লাহর কাছে। কিন্তু আল্লাহ আমার গর্ভে না দিলেও অন্যভাবে ঠিকই তিনি পাঠিয়ে দিয়েছেন। আবিরের চোখে আমি কোন লোভ লালসা কিংবা আমাদের ক্ষতি করবে এমন কিছু দেখি নি। আমি শুধু দেখেছি, ছেলেটা একটু আশ্রয় চায়। তাই ওকে ওর নতুন মায়ের বুকে আশ্রয় দিয়েছি। আমাদের বিশাল বড়ো সম্পত্তি, বিজনেস থাকা স্বত্ত্বেও ও নিজে কিছু করার জন্য দৌড়াচ্ছে। এরকম ছেলে কই পাওয়া যাবে বলো?
জান্নাত এতক্ষণ মন দিয়ে মরিয়মের মায়ের কথা শুনছিল। তারপর ও একটু ভেবে বলে,
~ ঠিকই বলেছেন আণ্টি। এভাবে আমি ভেবে দেখেনি।
~ আবির অনেক ভালো একটা ছেলে। ওর আপন পরিবার অনেক মূল্যবান কিছু হারিয়েছে। আমি হাজার শুকরিয়া জানাই মহান আল্লাহকে, যে তিঁনি আমাদেরকে ওকে দিয়েছেন৷ নাহলে ছেলেটা যে কি করতো? কোথায় যেত? কি খেতো? হয়তো ওর জীবনটা শেষই হয়ে যেত।
~ জি।
এদিকে আমি রেডি হয়ে বাবার সাথে নামাজে গেলাম। নামাজ শেষ করে একসাথে বাসায় এসে সবাই একসাথে খেতে বসলাম। আজকে জান্নাতের জন্য আর আমার জন্যও স্পেশাল ভাবে রান্না করেছে মা। মায়ের হাতের রান্না আমার এখন সবচেয়ে প্রিয়। মরিয়ম সবাইকে খাবার বেড়ে দিল। আমি মরিয়মকে আমার পাশে বসিয়ে আমি ওকে বেড়ে দিলাম। তারপর সবাই একসাথে খাওয়া শুরু করলাম। কিছুক্ষণ খাওয়ার পর মা জান্নাতকে জিজ্ঞেস করলেন,
~ মামনী রান্না কেমন হয়েছে?
~ অনেক ভালো আণ্টি। আম্মুর পরে আপনার রান্নাই আমার সবচেয়ে পছন্দের।
~ বাহ! এরপর আসলে অবশ্য তোমার আব্বু আম্মুকে সাথে নিয়ে আসবে৷
~ জি আণ্টি।
~ মরিয়ম আবিরকে আরেকটা রোস্ট দে।
— না না মা লাগবে না। বাবাকে দেও।
— আরে তুই নে। দাঁড়া আমি দিচ্ছি।
বাবা আমাকে জোর করে আরেকটা রোস্ট দেন। আমি আর কি করবো খেয়ে নেই৷ খেতে খেতে একটা বিষয় খেয়াল করলাম জান্নাত আমার দিকে আড়চোখে তাকিয়ে ছিল অনেক বার। একবার তো পুরো চোখাচোখিই হয়। জানি না ও কি দেখছিল। মনে হয় আমার বাম হাত দিয়ে খাওয়া দেখছিল। মাঝে মাঝে মা আমাকে খাইয়ে দেয়৷ কিন্তু বড়ো হয়েছি। তাই নিজের যে হাতটা আছে সেটা দিয়েই খাওয়ার চেষ্টা করি। মানে চামচ দিয়ে খাই। মরিয়ম আমাকে হাড্ডি থেকে মাংস ছাড়িয়ে দেয়। আবার কখনো বাবা মাছ বেছে দেন। আবার কখনো মা নিজ হাত সব মাখিয়ে আমাকে খাইয়ে দেন। সত্যিই এমন বাবা-মা আর বোন পাওয়া ভাগ্যের ব্যাপার। যাই হোক এভাবে দুপুরের খাওয়া দাওয়া শেষ হলে আমি আমার রুমে চলে যাই। আর বাকিরা বাকিদের রুমে। ঘড়িতে তিনটা নাগাদ বাজে। বেডে বসে হেলান দিয়ে একটু ফোন চালাচ্ছিলাম। চালাতে চালাতে কখন যেন ঘুমিয়ে যাই। ঘুম ভাঙে আজানের শব্দে। দ্রুত উঠে ওজু করে রওনা হই নামাজে৷ সাথে বাবাও ছিল। নামাজ শেষ করে বাসায় এসে একটা চাকরি রিলেটেড বই নিয়ে ছাদে চলে যাই। ভাবি নিরিবিলি পড়তে পারবো। কিন্তু একি! ছাদে উঠে দেখি জান্নাত দাঁড়িয়ে আছে। আমার পায়ের শব্দ পেয়ে ও দ্রুত পিছনে তাকিয়ে আমাকে দেখে বলে,
~ ওহ আপনি! কি আমাকেও ভয় দেখানোর ইচ্ছা ছিল নাকি? হুম?
আমি কিছু না বলেই উলটা পায়ে নিচে চলে যেতে নিচ্ছিলাম। কিন্তু জান্নাত থামালো।
~ এই এই কোথায় যাচ্ছেন। দাঁড়ান, এদিকে আসেন কথা আছে।
আমি নিরুপায় হয়ে আস্তে আস্তে ওর কাছে গিয়ে দাঁড়ালাম। কিন্তু ওর মুখের দিকে তাকালাম না। ইচ্ছা হচ্ছিলো না তাকাতে। জান্নাত হাসিমাখা মুখে বলে,
~ সকালের জন্য সরি। আমি একটু দুষ্টু তো তাই উলটা পালটা বলি। আপনি প্লিজ মাইন্ড করবেন না।
আমি এবার ওর দিকে তাকালাম। মুচকি একটা হাসি আমিও দিয়ে বললাম,
— না না আমিও সরি। আসলে নামাজের জন্য দেরি হচ্ছিলো তাই ওভাবে তখন আপনাকে…
~ আরে সমস্যা নেই। আসলে আমি তো ভেবেছিলাম আপনি কোন কু মতলবে এখানে এসেছেন। কিন্তু এখন মনে হচ্ছে আমি ভুল। যাই হোক, আপনি কখনো মন খারাপ করবেন না। আপনি যথেষ্ট পার্ফেক্ট।
— ধন্যবাদ।
~ আচ্ছা আপনি পড়ুন আমি বরং নিচে যাই। আসলে মরিয়ম ঘুমাচ্ছিলো ত তাই উপরে আসলাম।
— ওহ! তাহলে আপনিই থাকুন আমি বরং নিচে যাই।
~ না না সমস্যা নেই। আমি এখন চলে যাবো বাসায়। তাই নিচে ত যেতেই হবে।
— ওহ!
~ আসি তাহলে ভালো থাকবেন।
— আপনিও।
বলেই জান্নাত চলে যায়। আমি বসে পড়ায় মন দি৷ খেয়াল করি নি যে জান্নাত এবার উঁকি মেরে আমায় দেখেছিল। এরপর জান্নাত সবার কাছ থেকে বিদায় নিয়ে চলে যায়। সেদিনের পর আমি নতুন কিছু চাকরি খুঁজি কিন্তু পাই না৷ এদিকে দেখতে দেখতে আমার আগের পরীক্ষা দেওয়া ৫ টি কোম্পানির রেজাল্ট ক্রমান্বয়ে প্রকাশ পায়। অবিশ্বাস্য হলেও সত্যি যে আমি প্রতিটি কোম্পানির পরীক্ষায় টিকি। এবার ইন্টারভিউ এর পালা। ৭,৯,১০,১৪ এবং ১৮ তারিখ এই পাঁচ দিনে মোট পাঁচটি ইন্টারভিউ৷ আমি যথাক্রমে ৭,৯.১০ এবং ১৪ তারিখ গিয়ে ইন্টারভিউ দিয়ে আসি। সবাই আমাকে রিজেক্ট করে। আমার রেজাল্টের জন্য না, আমার এই অপদার্থ হাতের জন। ভীষণ ভাবে ভেঙে পড়ি। বাবা-মা বোন অনেক বুঝিয়ে সাহস দেন৷ বলেন লাস্ট ইন্টারভিউটায় যেন যাই৷ আমি তাদের কথা মতো গেলাম।
অন্যদিকে জান্নাতের ভার্সিটিতে,
আজ ক্লাস শেষ হলে সবাই বেরিয়ে যাচ্ছিলো কিন্তু নিলয় জান্নাতকে অপেক্ষা করতে বলে ক্লাসেই। সবাই গেলে নিলয় আস্তে আস্তে জান্নাতের কাছে এসে বলে,
— জান্নাত আজ আর বেশি দেরি করবো না৷ আমার পক্ষে আর অপেক্ষা করা সম্ভবই না। জান্নাত আমি তোমাকে অনেক বেশি ভালবেসে ফেলেছি। নিজের থেকেও বেশি। আমি তোমার জন্য সব করতে পারি। তুমি কি আমার জিএফ হবে? (হাঁটু গিড়ে বসে একটা গোলাপ ফুল এগিয়ে দিয়ে)
জান্নাত নিলয়ের দিকে কিছুক্ষণ তাকিয়ে থাকে। কিচ্ছু বলে না। তারপর ও আস্তে একটু সামনে ঝুকে নিলয়কে ধরে উঠে দাঁড় করালো। তারপর একটা মুচকি হাসি দিয়ে বলল,
~ সরি নিলয় আমি পারবো না। কারণ আমার একটা মানুষকে অনেক পছন্দ হয়েছে। জানি না তাকে পাবো কিনা৷ কিন্তু আমি আশা ছাড়বো না। তুমি আমার বন্ধু হয়ে থাকলে আমি এই গোলাপটা গ্রহণ করতে পারি৷
নিলয় মাথা নিচু করে। কিছুক্ষণ চুপচাপ দাঁড়িয়ে থেকে গোলাপটা মাটিতে ছুড়ে ফেলে ক্লাস থেকে বেড়িয়ে যায়৷ জান্নাত হাসে আর মনে মনে ভাবে, যে ছেলের কাছে বন্ধুত্বই মূল্যহীন তার কাছে ভালবাসাটা কত দামী সেটা এই পড়ে থাকা গোলাপটা দেখলেই বুঝা যাচ্ছে। জান্নাতও বেরিয়ে যায় ক্লাস থেকে। বাইরে এসে গাড়ি নিয়ে সোজা বাসার দিকেই যাচ্ছিলো। আজ মরিয়ম আসে নি। কারণ ওর ভাই মানে আবিরের নাকি আজ লাস্ট একটা ইন্টারভিউ আছে। আগের গুলো থেকে আবিরকে বাদ দিয়েছে সেটাও জান্নাত জানে৷ এবং কেন দিয়েছে তাও। তাই মরিয়ম আজ আসে নি। জান্নাতেরও মনটা খারাপ সাথে চিন্তা হচ্ছিল আবির আজকে পারবে কিনা৷ হঠাৎই ও বাইরে জানালা দিয়ে তাকাতেই দেখে আবির ফুটপাতে বসে আছে একা। জায়গাটা নির্জন। মানে এলাকার ভিতরের বড়ো গলি। মাঝে মাঝে প্রাইভেট গাড়ি কিংবা রিকশা চলে। জান্নাত মুহূর্তেই ওর ড্রাইভারকে গাড়ি থামাতে বলে। গাড়ি থামলে ও নেমে দ্রুত আবিরের কাছে যায়। আর বলে,
~ একি! আপনি এখানে বসে আছেন যে? কি হয়েছে? ইন্টারভিউ দিতে যান নি?
আবির জান্নাতের কথা শুনে ওর দিকে তাকায়। জান্নাত দেখে আবিরের চোখ ভরা পানি। মানে আবির কাঁদছে। একটা পুরুষ মানুষ ঠিক তখনই কাঁদে যখন সে প্রচন্ড কষ্ট পায়। জান্নাত কোন কিছু না ভেবে আবিরের বাম পাশে গিয়ে ওকে ধরে উঠিয়ে জোর করেই গাড়িতে বসিয়ে সোজা একটা জায়গায় চলে যায়। তারপর…
চলবে…?
(প্রথমেই দুঃখিত সবার কাছে। কারণ গল্প দিতে দুদিন দেরি হলো। আসলে আমি অনেকটা ব্যস্ত হয়ে যাওয়ায় এই সমস্যাটা হয়েছে। আশা করি আর এমন হবে না ইনশাআল্লাহ।)
সবার ভালো সাড়া চাই তাহলে খুব তাড়াতাড়ি পরবর্তী পর্ব দেওয়া হবে। আর কেমন লেগেছে জানাবেন কিন্তু। আগের এবং পরবর্তী পর্বের লিংক কমেন্ট দেওয়া হবে। ধন্যবাদ।