#আনন্দ_অশ্রু
#পর্ব_৩
#লেখনীতে_ওয়াসেনাথ_আসফি
আমার অনেক লম্বা লম্বা চুল ছিলো, চুলে বেশি তেল লাগতো বলে ফুফু কেটে ছোট করে দিছে।
মুখটা মলিন করে কথাটা বললো মায়া। চোঁখের কোণে অশ্রু জমাট বেঁধে আছে যে কোন সময় বাঁধ ভেঙ্গে পরবে।
মায়ার কথা শুনে রেহান কী বলবে ভেবে পাচ্ছে না। মায়া নিচের দিকে মুখ করে দাঁড়িয়ে আছে রেহান কী ভেবে যেনো মায়াকে তার দিকে তাকাতে বললো কিন্তু মায়া তাকালো না। মায়া নিজ ইচ্ছায় তাকায়নি বলে রেহান মায়ার দুই গালে হাত রেখে মায়ার মুখটা উচুঁ করলো, মায়ার মুখটা দেখে রেহান খুব অবাক হলো, এতো টুকু একটা মেয়ে নিজের কষ্ট গুলো লুকিয়ে নিঃশব্দে কাদঁছে। ওর বয়সী মেয়েরা সামান্য একটু আঘাত পেলেই কান্না করে বাড়ী মাথায় তুলে দেয় আর এই মেয়েটা কত শক্ত। এতো অল্প বয়সে নিজের কষ্ট লুকাতে শিখে গেছে। মায়াকে স্বাভাবিক করতে রেহান বলে,
শোনো মায়াকন্যা, আমার কিন্তু লম্বা চুল খুব পছন্দ কাল আমি তোমাকে মার্কেটে নিয়ে যাবো, লম্বা চুল বানাতে যা যা প্রয়োজন সব কিনে দিবো সাত বছরের মধ্যে তুমি তোমার চুল লম্বা করবে সাত বছর পর যেনো আমি তোমাকে কেশোবতী বলে ডাকতে পারি বুঝছো। আর তোমার নাম বদলাতে হবে।
রেহানের মুখে নাম বদলানোর কথা শুনে ঝড়ের গতিতে মায়া বলে,
কেনো আমার নাম বদলাতে হবে কেনো কত সুন্দর আমার নাম আসফিয়া হাসনাত মায়া।
মায়ার কথায় রেহান একটু হাসে তার পর আবার বলে, হুমম নামটা সুন্দর কিন্তু সবাই তোমাকে যে নামে ডাকে আমি তোমায় সেই নামে ডাকতে চাই না আমি তোমায় অন্য নামে ডাকবো।
কেনো অন্য নামে ডাকবেন আপনিও সবার মতো মায়া বলে ডাকবেন।
সবার সাথে আমার তুলনা দিও না ছোট্ট মেয়ে কোনো একদিন এই তুলনার জন্য আফসোস করবে। এখন আমি যা বলি সেটা শোনো, আমি তোমাকে আসু বলে ডাকবো আর তুমি আমাকে বন্ধু বলে ডাকবে। আমি ছাড়া তোমাকে যেনো কেউ আসু বলে না ডাকে আর আমি ছাড়া আর কোনো ছেলে বন্ধু বানাবে না ঠিক আছে।
ঠিক আছে বানাবো না, শুধু নীতুল আর আনামের সাথে বন্ধু করবো।
মায়ার কথা শুনে হূ হা করে হাসতে শুরু করলো রেহান মায়া ভীতু মুখ করে দাঁড়িয়ে আছে আর ভাবছে সে এমন কি বললো যে রেহান এমন করে হাসছে। ভয়ে ভয়ে মায়া আবার বলে,
এইভাবে হাসছেন কেনো আপনি কী পাগল হয়ে গেছেন পাগলেরা এমন করে হাসে। আমি দেখেছি আমাদের বাড়ির পাশে চায়ের দোকানে একটা পাগল বসে থাকতো তাকে কিছু বললেও হাসে না বললেও হাসে। এখন আপনাকে সেই পাগলের মতো লাগছে।
মায়ার কথায় রেহানের হাসি বন্ধ হয়ে যায় আর মায়াকে ভয় দেখানোর জন্য বলে, আমি তো পাগল তুমি জানো না। একবার একটা ছোট মেয়ে আমার কথা শুনেনি বলে ওকে আমাদের বাড়ির ছাদ থেকে নিচে ফেলে দিছিলাম। এখন যদি তুমি আমার কথা না শুনো তাহলে আমি তোমাকেও ছাদ থেকে ফেলে দিবো।
ছাদ থেকে ফেলে দেওয়ার কথা শুনে মায়া খুব ভয় পেয়ে যায় খপ করে রেহানের হাত ধরে বলতে শুরু করে,
আমাকে ছাদ ছাদ থেকে ফেলবেন না আমি আপনার সব কথা শুনবো, ঠিক মতো পড়তে বসবো, খাওয়া দাওয়া করবো, খেলবো, হাসবো, লম্বা চুল রাখবো, কান্না করবো না, কোনো কাজ করবো না, আপনি ছাড়া কোনো ছেলে বন্ধু রাখবো না আর আপনি আসু বলে ডাকলে ছুটে আপনার কাছে চলে আসবো। আপনার সব কথা মেনে চলবো তাও আপনি আমাকে ছাদ থেকে ফেলে দিবেন না।
মায়ার কথায় আবারও হাসি পেলো রেহানের কিন্তু এইবার সে হাসলো না বরং আরো কঠিন করে বলে, ঠিক আছে তুমি যখন বলছো আমার সব কথা মেনে চলবে তাহলে আর তোমাকে ছাদ থেকে ফেলে দিবো না। এখন যাও বাধ্য মেয়ের মতো হাত মুখ ধুয়ে শুয়ে পরো। কাল আবার সকালে তাড়াতাড়ি উঠতে হবে।
মায়া রেহানের কথা মতো হাত মুখ ধুয়ে বিছনায় শুতে যায় তখন আবার রেহান ধমক দিয়ে বলে, এখানে শুতে আসছো কেনো। আজ থেকে তুমি নাফিসার সাথে ঘুমাবে।
কেনো এতো দিন তো এই ঘরেই ঘুমিয়েছি তাহলে আজ থেকে কেনো নাফুর সাথে ঘুমাবো?
কারণ আমার বাইরে সোফায় ঘুমাতে অসুবিধা হয় তাই আর এখন যদি তুমি আমার কথা না শোনো তাহলে এখনি তোমাকে ছাদ থেকে ফেলে দিবো, সবাই ঘুমাচ্ছে কেউ তোমাকে বাঁচাতে আসবে না।
ওফফ বলেইতো হয় এক সপ্তাহ সোফায় শুতে শুতে আপনার কোমড় বাঁকা হয়ে গেছে তাই আপনার এখন বিছনায় শুতে ইচ্ছে করছে। কথায় কথায় শুধু হুমকি দেন কেনো পাগল লোক একটা।
এক দমে কথা গুলো বলে দৌড়ে রুম থেকে বেরিয়ে গেলো মায়া আর রেহান তাকিয়ে আছে দরজার দিকে দরজা লাগিয়ে দিয়ে খাটের ওপর বসে হাসছে রেহান আর বলছে,
তোমাকে এখনও অনেকটা পথ চলতে হবে তাই এই বিয়ের কোনো প্রভাব আমি তোমার ওপর পরতে দেবো না। তুমি এখনও অনেক ছোট তাই তোমাকে আমি আমার কোনো মায়ায় ফেলবো না। তুমি তোমার আগামীর পথে একা একা হাঁটবে সেই পথে বাঁধা এলে আমি সেই বাঁধা মোকাবেলা করবো তুমি হোচট খেলে আমি তোমায় শক্ত হাতে আগলে নিবো ক্লান্ত হলে নিম গাছের মতো ঠান্ডা ছায়া দিয়ে তোমার ক্লান্তি দূর করে আবারো পথ চলার সাহস দিবো কিন্তু কখনোই তোমার চলার পথের বাধা হবো না।
কথা গুলো বলে একটা দীর্ঘশ্বাস ছেড়ে চলে গেলো ওয়াশরুমে ফ্রেশ হয়ে বিছনায় গা এলিয়ে দিল আর পারি জমালো ঘুমের রাজ্যে।
ফযরের নামাজ শেষ করে মায়া রহিমা বানুর ঘরে যায় কোরআন শরীফ চাইতে, ঘরে ঢুকে দেখে রহিমা বানু চোঁখে চশমা পরে কোরআন তিলাওয়াত করছে আস্তে আস্তে মায়া রহিমা বানুর পাশে গিয়ে বসে রহিমা বানু মায়া কে দেখে কোরআন পড়া থামায় আর জিজ্ঞেস করে, ছোটো বউ তুমি আমার ঘরের, কিছু কইবা?
না, আম্মা কিছু বলবো না আমি আপনার কাছে কোরআন শরীফ চাইতে আসছিলাম। আসে দেখি আপনি কোরআন পড়ছেন তাই আপনার পাশে বসে আপনার তিলাওয়াত শুনছি।
ছোট বউ, তুমি কী কুরআন শরীফ পড়তে পারো?
হ্যাঁ, আম্মা পাড়ি।
এইটা খুব ভালো কথা তুমি কুরআন পড়তে পারো, আজকে তোমার পড়তে হইবো না আমি পড়ি তুমি শুনো। কাল থাইকা তুমি আমারে পইড়া শুনাইবা।
মায়া রহিমা বানুর কথায় সায় জানালো। রহিমা বানু কুরআন শরীফ তিলাওয়াত করছে আর মায়া পাশে বসে শুনছে কোরআন তিলাওয়াত শুনতে শুনতে মায়া রহিমা বানুর কোলে মাথা রেখে ঘুমিয়ে পড়ে। মায়া ঘুমিয়ে আছে বলে রহিমা বানু কুরআন পড়া শেষ করে আর নড়াচড়া করেনি ঠায় বসে আছে।
নাস্তার টেবিলে সবাই উপস্থিত কিন্তু রহিমা বানু আর মায়া এখনও নাস্তা করতে আসে নি তাই তানজিল রহিমা বানুর ঘরে তাকে ডাকতে আসে। তানজিল কে আসতে দেখে রহিমা বানু হাতের ইশারায় আস্তে কথা বলতে বলে। তানজিল ইশারা বুঝে আস্তে আস্তে রহিমা বানুর কাছে আসে আর বলে,
আম্মা নাস্তার সময় হয়ে গেছে আসুন আপনার ওষুধেরও সময় হয়ে গেছে আর মায়ার আজকে স্কুলের প্রথম দিন লেট করে গেলে বিষয়টা ভালো দেখাবে না।
বড় বউ, মাইয়াডার ওপর আমার মায়া জন্মায় গেছে, সেই ফজরের নামাজ পইড়া আমার কাছে আইছে আর আমার কোলে পইড়া ঘুমাইয়া গেছে। মাইয়াটার চেহারা টা দেখলে খুব মায়া লাগে।
আম্মা আপনি সেই ভোর বেলা থেকে এভাবে বসে আছেন আপনার হাঁটুর ব্যাথা তো আবার বেরে যাবে।
এই কথাটা একটু জোরে করে বলে ফেলে তানজিল, আচমকা জোরে কথা বলার শব্দ পেয়ে ধড়ফড়িয়ে উঠে মায়া আর বলতে থাকে,
আমাকে ছাদ থেকে ফেলে দিবেন না আমি সময় মতো স্কুলে যাবো আমাকে একটা সুযোগ দিন বন্ধু।
মায়ার কথা শুনে তানজিল মায়াকে শান্ত করে বলে, মায়া এখনও অনেক সময় বাকি আছে স্কুলের তুমি ভয় পেও না আর কেউ তোমাকে ছাদ থেকে ফেলে দিবে না তুমি শান্ত হও।
মায়া কাদোকাদো হয়ে বলে, বন্ধু বলছে আমি যদি তার কথা না শুনি তাহলে বন্ধু আমাকে ছাদ থেকে ফেলে দিবে।
তোমার কোন বন্ধু এই কথা বলেছে তোমাকে শুনি কার এতো সাহস আমাদের মায়াকন্যা কে ছাদ থেকে ফেলে দিবে কার এত বড় বুকের পাটা?
কে আবার আপনার,,,
মায়া আরো কিছু বলবে তার আগে রেহানের ডাক মায়ার কানে পৌঁছায়।
আসু, আসু, আসুওওও
ওইযে বন্ধু ডাকছে এই বলে মায়া দৌঁড়ে গিয়ে রেহানের সামনে দাঁড়ায়। মায়ার দৌড় দেখে তানজিল রহিমা বানুকে ধরে উঠিয়ে বাইরে নিয়ে আসে বাইরের এসে দেখে মায়া যেই বন্ধুর কথা বলছিলো সেই বন্ধু আর কেউ না রেহান। তানজিল রেহানকে জিজ্ঞেস করে,
রেহান তুই মায়াকে ছাদ থেকে ফেলে দেওয়ার ভয় কেনো দেখাইছিস জানিস মেয়েটা কতো ভয় পাইছে।
রেহান তানজিলের দিকে একবার তাকিয়ে আবার মায়ার দিকে তাকায়, তুমি যদি দশ মিনিটের মধ্যে রেডি না হও তাহলে সত্যি সত্যি তোমাকে ছাদ থেকে ফেলে দিবো।
রেহানের কথা শেষ হওয়ার আগেই মায়া দৌঁড়ে রুমে চলে যায়। তারপর রেহান সবাইকে সবটা বুঝিয়ে বলে, কেনো মায়া রেহানকে বন্ধু ডাকে আর কেনো ছাদ থেকে ফেলে দেওয়ার ভয় দেখিয়েছে।
মায়া রেডি হয়ে বাইরে আসে এসে সবার মুখ দেখে নাফিসার পাশে বসে পরে নাফিসার কানের কাছে মুখ নিয়ে বলে, নাফু এই পাগল লোকটা কী সবাইকে ছাদ থেকে ফেলে দেওয়ার হুমকি দিছে নাকী সবাই এমন মুখ করে আছে কেনো?
ছোটো কাকা বলছে যদি খাওয়া বাদ দিয়ে গল্প করি তাহলে তোকে আর আমাকে এক সাথে বেধে ছাদ থেকে ফেলে দিবে।
নাফিসার কথা শুনে মায়া আর কোনো কথা না বলে খাবারের দিকে চেয়ে খাওয়া শুরু করে নাফিসা আর মায়ার কান্ড দেখে সবাই মিট মিট করে হাসছে কিন্তু কোনো শব্দ করছে না।
#চলবে………………….
গল্পটি সম্পর্কে (রিভিউ) আলোচনা সমালোচনা করুন এই গ্রুপে।(যেকোনো গল্প খুজতে আমাদের গ্রুপটি ব্যবহার করতে পারেন)
গ্রুপ লিঙ্ক👇
https://www.facebook.com/groups/273212672043679/?ref=share_group_link