বুকে_যে_শ্রাবণ—তার #পর্ব_২৩

0
200

#বুকে_যে_শ্রাবণ—তার
#পর্ব_২৩
#নিশাত_জাহান_নিশি

“সামান্তা তোমার নিজস্ব কোনো সম্পত্তি নয় যে তাকে পাওয়ার অধিকার শুধু তোমার। দশবার মার খাওয়ার পর যদি আমি ভুলেক্রমে একবার হলেও ওঠে দাঁড়াতে পারি তবে ভেবে নিও সেদিনই তোমার খেলা শেষ!”

থমকালো সাহিল। পিছু ঘুরে তাকিয়ে ব্যগ্র হাসল। নিজেকে বড়ো মাপের ক্ষমতাশালী লোক সাবস্ত করে শার্টের কলারটি কিঞ্চিৎ ঝাকালো। ব্যাপক ভাবসাব নিয়ে তাচ্ছিল্যের সুরে বলল,

“তোর ওঠে দাড়ানোর সমস্ত পথ আমি বন্ধ করে দিব হারপোক! তোকে মারতে আমি দশবার নিব কেন? একবারই যথেষ্ট তোকে কুপোকাত করার জন্য!”

প্রস্থান নিলো সাহিল। নিজের সম্বন্ধে উল্টা সিধা মন্তব্য শ্রবণের পরেও মিশাল ক্ষেপে যাওয়ার বদলে বরং কদাচিৎ হাসল। প্রলয়ঙ্করী রাগ ভেতরে চেপে রাখার দরুন তার মুখশ্রী রক্তিম বর্ণ ধারণ করল। কান থেকে ধোঁয়া বের হওয়ার উপক্রম হলো। রাগের প্রকোপ তার বাড়তে লাগল। শার্টের হাতা গুটিয়ে সে ভাবলেশহীনভাবে বিড়বিড় করে বলল,

“আহা। আমাকে উস্কিয়ে তুমি বিরাট বড়ো ক্ষতি করে ফেললে সাহিল ভাই! তুমি আন্দাজও করতে পারছনা তোমার সাথে আগামীতে ঠিক কী কী হতে চলছে।”

রেস্টুরেন্টের পরিবেশ এখন ভেজায় গরম। প্রিয়া চিৎকার চ্যাচাম্যাচি ও কান্নাকাটি করে রেস্টুরেন্টের কতৃপক্ষ থেকে শুরু করে সকল কাস্টমারদের একত্র করে ফেলল! ঘটনাচক্রে সাহিলকে কেউ খুঁজে না পেয়ে লিওন, সামান্তা ও সাইফাকে চারপাশ থেকে ঘিরে ধরল! মিশাল তাদের থেকে কিঞ্চিৎ দূরে অবস্থান করছে। ছক কঁষতে ব্যস্ত সে! ঘটনার আকস্মিকতায় ভয়ে নেতিয়ে রয়েছে তিনজন। সত্যিই তো এই পরিস্থিতি তাদের তৈরী। সাহিল এভাবে সবকিছু ঘেটে “ঘ” করে দিবে তা ঘুনাক্ষরেও বুঝতে পারেনি সামান্তা। প্রিয়ার গাঁয়ে হাত তোলার বিষয়টা সামান্তা নিজেও সাপোর্ট করতে পারছেনা! যেখানে সামনাসামনি কথা বলে সব মিমাংসা করা যায় সেখানে গাঁয়ে হাত তোলাটা শুধু অভদ্রতাই নয় বরং বাড়াবাড়িও বটে। হাত-পা ঝেড়ে কান্নাকাটি করে প্রিয়া চিৎকার করে উপস্থিত সবাইকে উদ্দেশ্য করে বলল,

“আপনারা তো দেখেছেন? তারা চার, পাঁচজন মিলে আমাকে কীভাবে হেনস্তা করল? তাদের দলের হয়ে তো একজন ওপেনলি আমার গাঁয়ে হাতও তুলল! একটা মেয়েকে একা পেয়ে তারা যাচ্ছে তাই করল, তার গাঁয়ে এভাবে হাত তুলল। এবার আপনারাই বলুন তাদের কি করার উচিত?”

সকলের মধ্যে একজন মাঝবয়সী লোক হঠাৎ প্রিয়ার পক্ষ হয়ে তেজী গলায় বলে উঠলেন,

“তাদের পুলিশে দেওয়া উচিৎ। প্রথম থেকেই লক্ষ্য করছিলাম তারা মেয়েটার ওপর চ্যাচাম্যাচি করছিল। রেস্টুরেন্ট কতৃপক্ষের কাছে আমাদের রিকুয়েষ্ট তাদের বিরুদ্ধে একটা স্টেপ নেওয়া উচিৎ!”

ম্যানেজারের কপাল বেয়ে ঘাম ঝরতে লাগল! থানা পুলিশ হলে তো তাদের রেস্টুরেন্টের দুর্নাম হয়ে যাবে। উপরন্তু রেস্টুরেন্টটিও তাদের নতুন। ব্যবসায় লাল বাত্তি জ্বলবে। বুঝিয়ে শুনিয়ে তিনি পরিস্থিতি শান্ত করতে চাইলেন। ইতোমধ্যেই লিওন লোকটিকে উদ্দেশ্য করে বলল,

“দেখুন ব্রাদার। মেয়েটিকে সাধু ভেবে একতরফা আমাদের দোষ দেওয়াটা বোকামি। আগে শুনেন এবং জানুন মূলত এখানে কী হয়েছে। এরপর না হয় আমাদের বিপক্ষে বলবেন।”

রেস্টুরেন্টের ম্যানেজার এবার মুখ খুললেন। পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনার তাগিদ দেখালেন। এভাবে চুপ থেকে পরিস্থিতি বিগড়ে দেওয়া যাবেনা। লিওনের কাঁধে আলতো হাত ছুঁয়ে তিনি জোরপূর্বক হেসে উপস্থিত সবাইকে উদ্দেশ্য করে বললেন,

“আমার মনে হচ্ছে এটা তাদের ব্যক্তিগত ব্যাপার। তাই তাদেরকে আমরা নিজের মতো করে ছেড়ে দিই! রেস্টুরেন্টের বাইরে গিয়ে তারা যা করার করুক। আপনারাও প্লিজ শান্ত হয়ে আপনাদের জায়গায় বসুন। আমরা আবারও পরিবেশ ঠিক করে দিচ্ছি। সাময়িক ভোগান্তির জন্য আমরা দুঃখিত।”

নিজেদের মধ্যে মিমাংসার ব্যাপারটিতে রীতিমতো নারাজ প্রিয়া। সে চায় জলকে আরও ঘোলা করতে, তার আত্নঅহংকারকে প্রশ্রয় দিতে, স্বার্থে আঘাত লাগায় প্রত্যেককে আচ্ছেমত নাকানি চুবানি খাওয়াতে। ফেসবুকে লগইন করে সে লাইভে যাওয়ার প্রস্তুতি নিলো! কাঁদো কাঁদো গলায় সবাইকে হুমকি দিয়ে বলল,

“এখনি আমি লাইভে যাচ্ছি! মুহূর্তেই লাইভটি দেশে বিদেশে ছড়িয়ে পরবে। এখানের প্রত্যেককে আমি জেলের ভাত খাওয়াব। অন্যায় দেখেও আপনারা প্রতিবাদ করছেননা। একটা অসহায় মেয়ের পক্ষে দাড়াচ্ছেন না। এটা কি অন্যায় নয়?”

আতঙ্কিত হয়ে ওঠল উপস্থিত সবাই! পুলিশের পেঁদানিকেও পাবলিক এখন এতোটা ভয় পায়না যতোটা ভয় পায় অন্যায়ভাবে ভাইরাল হওয়াকে! মান সম্মানের দফারফা হয়ে যায় তখন। মিশাল এবার পদক্ষেপ নিলো। ছক কঁষা শেষে মিশাল সবাইকে উপেক্ষা করে প্রিয়ার হাত থেকে ফোনটি কেড়ে নিলো! আপত্তি থাকা সত্ত্বেও প্রিয়ার ডান হাতটি মোলায়েমভাবে টেনে ধরে রেস্টুরেন্ট থেকে বের হয়ে গ্রাউন্ড ফ্লোরে চলে এলো! হাত ছাড়ানোর জন্য অনেক ধস্তাধস্তি করেও প্রিয়া ব্যর্থ হলো। মুখোমুখি দাড়ালো তারা দুজন। তর্জন গর্জন করে প্রিয়া কিছু বলার পূর্বেই মিশাল শান্ত মেজাজে প্রিয়াকে বুঝিয়ে বলল,

“দেখুন প্রিয়া। আপনি এখন যা করছেন সত্যিই বাড়াবাড়ি করছেন। কেঁচো খুঁড়তে গেলে কেউটে বের হয়ে আসবে তা আপনারও জানা। একতরফা দোষ কিন্তু আমাদের নয় বরং আপনারও ছিল। এর প্রমাণও কিন্তু আমাদের কাছে আছে। যা আপনি অস্বীকার করতে পারবেননা। হ্যাঁ, তবে চ’ড় মারার আগ অবধিও সব ঠিকঠাক ছিল! আমাদের দোষ তখনও অবধি ছিলনা। এবার বলুন পরিস্থিতি কী আমরা চারজন মিলে খারাপ করেছি নাকি বাকি একজন? যার হাতে আপনি চ’ড়টা খেলেন?”

সামান্তা, লিওন ও সাইফা পেছনে দাড়িয়ে। মিশাল ব্যাপারটা ঠিক কোনদিকে ঘুরাতে চাইছে তা বুঝতে বেশি বেগ পেতে হলোনা সামান্তাকে। মিশালের ছক বুঝে পাশবিক হাসল সামান্তা। পিচ্ছিল মাছ হলেও সাহিলকে এবার ছাঁই দ্বারা আষ্টেপৃষ্টে ধরা যাবে! কাজিনকে চড় মেরে রেহাই পেয়ে গেলেও সাহিল প্রিয়াকে চড় মেরে রেহাই পাবেনা! তা বেশ স্পষ্টভাবেই বুঝা যাচ্ছে।মিশালের প্ল্যান অনায়াসেই কাজে দিলো। প্রিয়া তেতে ওঠল। রাগে রি রি করে রোষাগ্নি গলায় বলল,

“ঐ একজনকে ছাড়বনা আমি। নারী নির্যাতনের মামলা আমি তার নামে ঠুকে দিব! গালে এখনও চড়ের দাগ রয়েছে। কেইস সাজাতে বেশি সময় লাগবেনা আমার।”

“যা করার করুন আপনি। তবে আমাদের চারজনকে ফাঁসাতে গেলে কিন্তু আপনি নিজেও ফেঁসে যাবেন! ভিডিওতে আপনার সকল কুকীর্তি রেকর্ড করা আছে। সো সাবধান ওকে? আমাদের চারজনকে বাদ দিয়ে বাকি একজনকে আপনি যা ইচ্ছা তা করুন আমরা তাতে নাকও গলাতে যাবনা!”

মিশালের কথা মাথায় রেখে প্রিয়া উদ্ধত হয়ে থানার উদ্দেশ্যে ছুটল! পেছন থেকে সামান্তা তালি বাজিয়ে এগিয়ে এলো মিশালের দিকে। পাশবিক আনন্দ কাজ করছে তার মধ্যে। শত্রুকে পরাস্থ করার আনন্দ। মিশালের মুখোমুখি দাড়িয়ে সামান্তা মিচকে হেসে বলল,

“বাহ্ বস বাহ্। খেলা তো ভালোই খেলে দিলেন! সিরিয়াসলি আমি প্রথমে ভাবতেই পারিনি আপনার মাথায় এই দুর্দান্ত প্ল্যান কাজ করছিল।”

শার্টের কলারটা পেছনের দিকে কিঞ্চিৎ উঁচিয়ে তুলল মিশাল। খোশমেজাজি হয়ে ক্রুর হেসে সামান্তার পানে তাকালো। বেশ ভাবসাব নিয়ে বলল,

“তোকে আমি বলেছিলাম না? সাহিলকে আমি জব্দ করব? শুধু সুযোগের অপেক্ষায় ছিলাম। আর সেই সুযোগটা কিন্তু তুই-ই তৈরি করে দিলি! ড্রামা করে সাহিলকে এরমধ্যে ফাঁসিয়ে।”

“ইশ। সাহিল ভাইকে এবার ভালোই জব্দ করা যাবে। তবে তাকে জব্দ করা কী এতোই সহজ হবে?”

খুশি হওয়ার পাশাপাশি দুঃশ্চিন্তা ও ভয় কাজ করতে লাগল সামান্তার মধ্যে। মিশাল তা আঁচ করতে পেরে সামান্তার নাক টেনে যথেষ্ট সাহস যুগিয়ে বলল,

“বি স্ট্রং এন্ড পজেটিভ ওকে? ভয় পাওয়ার কিছু নেই এখানে। আমরা তো আর প্রিয়ার সাথে থানায় গিয়ে শো হচ্ছিনা। কথায় কথায় তাকে জাস্ট পথটা দেখিয়ে দিলাম। তাছাড়া আমাদের বিরুদ্ধে তো কোনো প্রমানও নেই প্রিয়ার কাছে! এখানে অবশ্যই আমাদের প্লাস পয়েন্ট রয়েছে। সেই পরিপ্রেক্ষিতে প্রিয়া যদি এখন সাহিলের বিরুদ্ধে কোনো কেইস করেও থাকে সেখানে আমাদের কী দোষ থাকতে পারে? আমরা তো আর প্রিয়ার গাঁয়ে হাত তুলিনি তাইনা?”

মিশালের আশ্বাস পেয়ে স্বাভাবিক হলো সামান্তা। মিশাল ও সামান্তার দিকে এগিয়ে এলো লিওন। মিশালের দিকে সন্তোষজনক দৃষ্টিতে তাকিয়ে লিওন কৃতজ্ঞতা নিয়ে দুজনকেই উদ্দেশ্য করে বলল,

“থ্যাংকস তোদের দুজনকেই। আজ তোদের জন্যই আমি ডাইনিটার হাত থেকে রক্ষা পেয়েছি। আমার জীবনটাকে তোরা বাঁচিয়ে দিলি ইয়ার। তোরা আমার ঠিক কতটুকু উপকার করেছিস তা আমি ভাষায় প্রকাশ করতে পারবনা। তোদের কথা আমি মাথায় রাখব। নেক্সট টাইম তোরা কোনো বিপদে পরলে অবশ্যই আগে আমার কাছে আসবি। আমি আমার যথাসাধ্য চেষ্টা করব।”

লিওনকে জড়িয়ে ধরল মিশাল। মিহি হেসে বলল,

“ইট’স ওকে ইয়ার। বন্ধু তো বন্ধুর জন্যই। একচুয়েলি আই থিংক সামান্তার জন্যই সবকিছু সম্ভব হয়েছে। এই থ্যাংকসটা কেবল সামান্তারই প্রাপ্য।”

পাশ থেকে সামান্তা দুষ্টুমির ছলে বলে ওঠল,

“শুকনো থ্যাংকসে কাজ হবেনা আমার। ট্রিট চাই ট্রিট!”

সামান্তা ট্রিট চাইতেই লিওন আর সময় ব্যয় করলনা। সবাইকে একপ্রকার জোরাজুরি করে পাশের একটি রেস্টুরেন্টে নিয়ে গেল। মিশাল অনেকবার বাঁধ সাধার পরেও সামান্তা ধৃষ্টতা দেখিয়ে চার চারবার আইসক্রিম অর্ডার করে খেলো। গলায় টনসিলের ব্যথা না আবার নতুন করে জোঁ দিয়ে ওঠে সেই ভাবনা মিশালের বেশ হতে লাগল। তবে সামান্তা বিন্দাস! তার অসুখ নিয়ে তার নিজেরই কোনো মাথাব্যথা নেই।

______________________________

ভোর রাত প্রায় তিনটার দিকে সাহিলকে থানা থেকে ছাড়িয়ে আনলেন তমাল খান! টানা সাত ঘণ্টা তাকে আসামীর ন্যায় অতি বিচ্ছিরিভাবে জেলহাজুতে কাটাতে হয়েছে। এলাকা শুদ্ধ ছড়িয়ে পরেছে নারী নির্যাতনের মামলায় সাহিল জেলহাজুতে বন্দি! পৃথিবীর সবচেয়ে জঘন্যতম ও শক্তিশালী এই অপরাধ। শুধুমাত্র একটি চড়ের বিনিময়ে তাকে এই নিকৃষ্ট সাজা পেতে হবে তা ধারণারও বাইরে ছিল তার। প্রিয়ার সামান্য স্টেটমেন্টের ভিত্তিতে পুলিশ তাকে সাময়িকভাবে বাড়ি থেকে তুলে নিয়ে গেলেও অপরাধ যথোপযুক্তভাবে প্রমাণ না হওয়ায় পুলিশ তাকে ছেড়ে দিতে বাধ্য হয়েছে। সাজা সাত ঘণ্টার হোক কিংবা এরচেয়েও কম তার চরিত্রে তো ঠিকই দাগ লেগেছে! এলাকায় তাদের রিপুটেশন খারাপ হয়েছে। আর এই পুরো ঘটনার পেছনে কার পরোক্ষভাবে হাত রয়েছে তা সাহিলের বুঝতে বেশী জ্ঞান খরচ করতে হয়নি!

উন্মুক্ত শরীরে গাঁ থেকে টপটপ করে ঘাম ঝরছে সাহিলের। সমস্ত শরীরের রগগুলো তার টান টান হয়ে আছে। হিংস্র বাঘের ন্যায় মুখশ্রী তার। সামনে যাকে পাবে তাকেই নিমিষে খু*ন করে দেওয়ার মতো বর্তমান অবস্থা তার। ভীতসন্ত্রস্ত হয়ে নায়লা খান গ্লাসভর্তি পানি নিয়ে সাহিলের রুমে প্রবেশ করার পূর্বেই তমাল খান তার হাত থেকে গ্লাসটি ছিনিয়ে নিলেন। সাহিলের রুমে তিনি একাই প্রবেশ করলেন। গ্লাসটি তিনি সাহিলের দিকে এগিয়ে শক্ত গলায় বললেন,

“মেয়েটার বাড়ি কোথায়? তার নাম, ধাম ও ঠিকানা জানা থাকলে আমাকে দে। আচ্ছেমতো তাকে সাইজ করে আসব।”

“তার কোনো প্রয়োজন নেই। মেয়েটাকে দিয়ে যা করানো হয়েছে মেয়েটা শুধু তাই করেছে! আমার ব্যাপার আমাকে বুঝতে দাও। নাও লিভ মি এলোন প্লিজ।”

সাহিলকে একা ছেড়ে দিয়ে তমাল খান হনহনিয়ে রুম থেকে বের হয়ে গেলেন। মুহূর্তেই রাগে গজগজ করে পানিভর্তি গ্লাসটি ফ্লোরে ছুড়ে ফেলল সাহিল! বাঘের ন্যায় তর্জন গর্জন করে সে উত্তেজিত গলায় বলল,

“তুই আমার হাত থেকে বাঁচতে পারবিনা মিশাল! তোর মৃত্যু অতি সন্নিকটে! আমার হাতেই প্রাণ হারাবি তুই। পৃথিবীর কেউ তোকে বাঁচাতে পারবেনা, কেউ না।”

_____________________________

রাতের নিকষ কালো অন্ধকারে বাড়ির ভেতরেই থাকা ইয়া লম্বা নারিকেল গাছের তলায় মুখোমুখি দাড়িয়ে ইন্সপেক্টর টুটুল চৌধুরী ও মিশাল। নীরব মিশাল। ফোন ঘাটতে ব্যস্ত সে। কাউকে পাত্তা না দেওয়ার স্মার্ট তরিকা এটা! কিয়ৎক্ষণ মৌন থাকার পর রাগান্বিত টুটুল চৌধুরী এবার মুখ খুললেন। মিশালের দিকে প্রশ্ন ছুড়লেন,

“ব্যাপার কি তোর? কয়েকদিন যাবত দেখছি তুই আমার ফোন তুলছিসনা।”

প্রতিক্রিয়া দেখালো মিশাল। ফোনের থেকে দৃষ্টি সরিয়ে শার্টের কলারটা কিঞ্চিৎ ঝাকালো। এদিক ওদিক তাকিয়ে বেপরোয়া গলায় বলল,

“ব্যস্ততার কারণে তোলা হয়নি।”
“কী এমন ব্যস্ততা তোর? কাজ কাম তো তোর তেমন নেইও।”
“নিজের পরিবারকে সময় দেওয়াও একটা কাজ।”
“উঁহু। তোর চোখ তো বলছে অন্যকিছু। তুই কী এই কাজটা করতে চাইছিস না?”
“বুঝার পরেও এসব প্রশ্ন করা আমার কাছে উদ্ভট লাগে!”
“মানে কী? হুট করে তোর এই সিদ্ধান্ত?”
“মানেটা আপনারও জানা স্যার। নতুন করে আর কী বলব?”
“সেদিন কল তুলিনি বলে তাই তোর এমন সিদ্ধান্ত নেওয়া?”
“সেদিন আপনি কলটা কেন তুলেননি তা আমার বেশ ভালোভাবেই জানা হয়ে গেছে স্যার। যখনই আমার পরিশ্রমের বিনিময়ে পারিশ্রামিক নেওয়ার প্রয়োজন পরে ঠিক তখনই আপনি হয় আমার কল তুলবেননা নয় আপনার যতো রাজ্যের ব্যস্ততা ভর করে থাকে! এভাবে আর কতোদিন বলুন? বিনা পারিশ্রমে আর কতদিন? সংসার চালাতে কী এখন আমি চু*রি, ডাকা*তি করব?”

#চলবে…?

[রি-চেইক করা হয়নি। ভুলত্রুটি ক্ষমাসুন্দর দৃষ্টিতে দেখবেন।]

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here