#আবার_প্রেম_হোক
#নুসরাত_জাহান_মিম
৭১.
অতঃপর কাবিননামায় সাক্ষরসহ ‘কবুল’ বলার মাধ্যমে রামিমের নামে আইনত এবং শরীয়ত মোতাবেক লিখিত হলো উশ্মি।সকলেই আলহামদুলিল্লাহ পড়ে মিষ্টিমুখ করতে আরম্ভ করলো আর উশ্মির চোখ পরিপূর্ণ হলো জলে।সে একধ্যানে চেয়ে আছে শিফার পানে।অতঃপর রায়হানের দিকে তাকাতেই দৃষ্টি মেলে দুজনের।রায়হান চোখের ইশারায় তাকে জিজ্ঞেস করে কী হয়েছে?অতঃপর দুইপাশে মাথা নাড়িয়ে না সূচক জবাব দিয়ে চোখজোড়া বন্ধ করে লম্বা শ্বাস ফেলে উশ্মি।এবং সেভাবেই কিছুক্ষণ থেকে মুচকি হেসে চোখজোড়া খুলে লজ্জা পাওয়ার ভঙ্গিমায় আবারও তা কুচকে মুচকি হাসে।সাথে তার লজ্জায় র!ক্তিম হওয়া গালদুটো খানিক ফুলেও উঠে।এ কেমন লজ্জা?কিসের এত লজ্জা?রামিমকে নিজের করে পাওয়ার?নাকি তার মনোবাসনা পূর্ণ হবার?সে কি এখনো ভালোবাসে রায়হানকে?কথাখানা ভাবতেই তার চোখের সামনে ভেসে এলো রামিমের হাস্যোজ্জ্বল মুখশ্রী।অতঃপর আরও একবার লম্বা শ্বাস ফেলে মনে মনে সে বললো,
“আমি তোমায় ভালোবাসি রামিম,কেবলই তোমায়”
বলেই তার থেকে অনেকখানি দূরে বসে কাবিননামায় সাক্ষর করতে থাকা রামিমের দিকে তাকায় উশ্মি।অতঃপর মুচকি হেসে রামিমের উজ্জ্বল মুখশ্রী পানেই পলকহীন চেয়ে থাকে।রামিমও সে পাশ থেকে তিনবার ‘কবুল’ পড়ে তাদের বছর সাতেকের সম্পর্ককে বৈধ করলো।একে অপরের নামে লিখিত হলো দুজনায়।সকলে আরও একবার মিষ্টিমুখ করতে আরম্ভ করলো।আর এবার সকলকেই জনে জনে মিষ্টিমুখ করাচ্ছে রামিম আর উশ্মি দুইজনেরই ভাবি চাঁদ।
.
.
.
.
.
.
.
.
.
.
.
.
.
.
.
.
রায়হান যখন শিফার থেকে খানিক দূরত্বেই বসে ছিলো তখনই ফায়ান শিফার কাছে এসে বলে,
“কী করছো?”
“দেখতেই তো পাচ্ছেন বসে আছি”
“এভাবে বারবার আমায় না মার!লেই কি পারতেনা তুমি?”
ফায়ানের অদ্ভুত কথার আগামাথা কিছুই বুঝতে না পেরে কেবলই তার পানে তাকিয়ে থাকলো শিফা।আর ফায়ান ইশারায় তার পেছনে অল্প দূরত্বে বসে থাকা রায়হান কে দেখাতেই শিফা লজ্জা পাওয়ার ভঙ্গিমায় বললো,
“ইম…..ইম….আপ…আপনি দেখি সরুন তো যাবো”
বলে চলে যেতে নিলেই খপ করে শিফার হাত ধরে ফেলে ফায়ান।অতঃপর তার কানের কাছে ফু দিতেই হাত আলগা হয়ে আসে শিফার আর ফায়ান সুযোগ বুঝে রামিমের জুতোজোড়া শিফার কাছ থেকে নিয়ে হাত উঁচিয়ে রুবাদের দিকে তা দেখিয়ে খানিকটা উচ্চস্বরেই বলে,
“জুতা পেয়ে গেছি গাইজ”
অতঃপর শিফার কানের কাছে গিয়ে ফিসফিসিয়ে বলে,
“এখন তুমি আমার পেছন পেছন জুতো নেওয়ার জন্য ঘুরবে অ্যাজ লাইক মাধুরী ঘুরেছিলো সালমানের পেছনে”
কপাল খানিক কুচকে শিফাও ফিসফিসিয়ে বলে,
“কিন্তু কেনো?”
“তোমার চাঁদ ভাবিই বলেছে হুবুহু ওদের মতো করতে।এখন কেনো এসব বলেছে সে আমি জানিনা”
বলেই ফায়ান আরও একবার শিফার কানের কাছে ফু দিয়ে চোখ মা!রে তাকে।অতঃপর ফায়ান দৌড় দিতেই শিফাও তার পিছু দৌড়াতে দৌড়াতে বলে,
“এই দাড়ান!দাড়ান বলছি”
চেচিয়েই ফায়ানের পিছু দৌড়াতে লাগে শিফা।দুজনে একে অপরকে বেশ আনন্দের সহিত ধাওয়া করছে যা স্পষ্ট নজরে আসে রায়হানের।এতক্ষণ যাবৎ ফায়ান আর শিফার প্রতিটা কার্যকলাপ সূক্ষ্মভাবে পর্যবেক্ষণ করেছে সে।যেই না ফায়ান শিফার ঘাড়ের কাছে মুখ নিয়ে কথা বলে তাকে চোখ মা!রলো ওমনি রায়হানের হাত আপনাআপনি মুষ্টিবদ্ধ হলো।দাঁতে দাঁত চেপে সে কেবলই সবটা দেখে যাচ্ছে।শিফা আর ফায়ানের এরূপ মেলামেশা তার পছন্দ হচ্ছেনা।হলুদের দিন থেকেই সে সবটা দেখছে।কিন্তু কিছুই বলতে বা করতে পারছেনা।কী অধিকারেই বা বলবে অথবা করবে?কে হয় সে?না শিফা তার কাজিন না অন্য কিছু।তবে শিফার সাথে অন্য কারো ঘনিষ্ঠতা তার কেনো পছন্দ হচ্ছেনা সে নিজেও বুঝতে পারছেনা।বেশ বিরক্তি নিয়েই ফায়ান-শিফার পানে চেয়ে হাটা ধরলো সে ছাদের উদ্দেশ্যে।আপাতত রাগ সংবরণ করার জন্য একা থাকা লাগবে,যা তার একান্তই ব্যক্তিগত সময়।
অতঃপর বিদায়ের পালা,
সারাক্ষণ আমেজে থাকলেও কঠোর ব্যক্তিত্বের উশ্মিও শেষে এসে কান্নায় ভে!ঙে পড়লো।ঠোট কামড়ে কান্না আটকাবার প্রয়াস করছে তবে বারবারই সে ব্যর্থ হচ্ছে।বিয়ে নামক বন্ধন বুঝি এমনই?এক দীর্ঘ সুতায় আবদ্ধ বন্ধন ভেঙে নতুন সুতোয় আজন্মের জন্য তৈরি হওয়া বন্ধন জোড়া লাগাতে গিয়ে একটু আধটু নিজেকেই ক্ষ*ত হতে হয়?হঠাৎ ই চাঁদ এসে উশ্মিকে জড়িয়ে ধরলো।অতঃপর চাঁদের বুকে মাথা রেখে হাউমাউ করে কেদে উঠলো উশ্মি।উশ্মির মাথায় কেবলই হাত বুলাচ্ছে চাঁদ।বারবার তাকে বারণ করছে কাদতে।তবুও উশ্মির যেনো কেনো বাঁধবাঁধা নেই আজ।সে মন উজাড় করে কাদছে।উশ্মির এরূপ কান্নার বেগ দেখে রামিম আর না পেরে বেশ গম্ভীরভাবে বললো,
“ওকে কান্না থামাতে বলো চাঁদ,এক্ষুনি বলো।যার চোখে কখনো এক বিন্দু অশ্রু দেখিনি,তাকে এভাবে দেখে আমার বুকে পী!ড়া হচ্ছে।ওকে থামাও,থামাও প্লিজ”
রামিমের দিকে অসহায় দৃষ্টি নিক্ষেপ করে চাঁদ বলে,
“আমি বিষয়টা দেখছি ভাইয়া”
অতঃপর উশ্মিকে বলে,
“তুমি আমার সাথে একটু এসো”
বলেই উশ্মিকে ধরে নিজের রুমে নিতে নিতে সবাইকে উদ্দেশ্য করে বলে,
“আমি উশ্মিকে ফ্রেশ করিয়ে আনছি এক্ষুনি”
.
.
.
.
.
.
.
.
.
চাঁদ আর প্রণয়ের বেডরুমের বিছানার উপর বেশ কিনারেই বসে আছে উশ্মি।চাঁদ রুমের দরজা আটকে তার জন্য জগ থেকে এক গ্লাস পানি নিয়ে তার পাশে বসে।অতঃপর পানির গ্লাস টুকু এগিয়ে দেয় তার পানে।উশ্মি গ্লাস হাতে নিয়েই লম্বা শ্বাস ফেলে আস্তে আস্তে পুরো গ্লাসই শেষ করে চুপচাপ মাথা নিচু করে বসে থাকে।আর চাঁদ মৃদু হেসে বলে,
“জানো উশ্মি?প্রণয় আর আমার যখন বিয়ে হলো এর ঠিক ঘন্টা দেড়েক আগেও আমি জানতাম না যাকে সর্বদা হৃদয়ে লালিত করেছি সে একদিন সত্যি সত্যিই আমার হবে”
চাঁদের কথা শুনে তার পানে তাকায় উশ্মি।উশ্মিকে নিজের পানে তাকাতে দেখে চাঁদ ফের বলে,
“অদ্ভুত হলেও এটাই সত্যি যে সেদিন তোমার ভাই আমায়ই বিয়ে করতে গিয়েছিলো অথচ দেখো আমি জানতামও না ভাগ্য আমায় তার কাছেই এনে দাড় করাবে যার কাছ থেকে আমি আজ থেকে প্রায় সাড়ে পাঁচ বছর আগে পালিয়ে গিয়েছিলাম।জানো উশ্মি?আমি না?খুব দুঃখ নিয়েই এ শহর ছেড়েছিলাম।এত দুঃখ,এত য!ন্ত্রণা,এত আ!র্তনাদ আর সহ্য করা সম্ভব হচ্ছিলোনা আমার পক্ষে।আর না গিয়েও উপায় ছিলোনা।তখন তোমার ভাই আমায় এক আকাশ পরিমাণ অবিশ্বাসের দেখা মিলিয়েছিলো।তবুও আমি কেবল তাকেই ভালোবেসেছিলাম।হয়তো সত্যিই তাকে ভালোবেসেছিলাম যার দরুন তাকে আবার পেয়েছি।তবে বিশ্বাস করো তোমার ভাইকে আমি এখন একদমই চাইনা।আমি তার থেকে তখনও পালিয়ে এসেছি,এখনও মুক্তি চাচ্ছি।তুমি কি আমায় তা দেওয়াবে না উশ্মি?”
“কিন্তু কেনো ভাবি ভাইয়া কী করেছে?”
দীর্ঘশ্বাস ফেলে চাঁদ বলে,
“হায়রে!তোমার সুখের দিনে কি বিলাপ শুরু করলাম বলোতো!তো আমি যেটা বলছিলাম।যেদিন আমাদের বিয়ে হলো।মনে না ছিলো কোনো আনন্দ,না কোনোপ্রকার বেদনা।কেমন যেনো যান্ত্রিকতায় ছেয়ে গেছিলো দিনটা।যে যেভাবে বলেছে সেভাবেই করেছি।অতঃপর তোমারই মতো করে দুই শব্দের ‘চাঁদ’ লিখে আর মুখে তিনবার ‘কবুল’ বলে আমিও তোমার ভাইয়ের হলাম।দেখো ভালো কিন্তু দুজনই দুজনের স্বামীকে বাসি অথচ তুমি তা প্রকাশ করতে পারছো আর আমি পারছিনা।এবং আমি চাইওনা তোমার ভাই জানুক আজও আমি কেবল তাকেই ভালোবাসি।ভালোবাসার পরেও আমি তার থেকেই মুক্তি চাই উশ্মি।কিছুটা তার জন্য,কিছুটা আমার জন্য।আর তাই তোমায় বলছি রায়হান ভাইয়াকে যদি ভালো বেসেও থাকো প্লিজ রামিম ভাইয়াকে কষ্ট দিওনা উশ্মি!একজনকে জেলাস ফিল করাতে গিয়ে বিয়ের ডিসিশ…..”
চাঁদের কথার মাঝপথেই উশ্মি বলে,
“ছি ভাবি!আমি রায়হানকে এখন আর ভালোবাসিনা।আমি তাকে ভালোবাসা ছেড়েছি আজ থেকে ঠিক পাঁচ বছর আগে।হ্যা তুমি হয়তো জানো আমার আর রামিমের সম্পর্ক নয় বছরের তবে তা সত্যি নয়।আর আমি চাই এ মিথ্যেটা কখনোই প্রকাশ্যে না আসুক।তুমি আমার কথা রাখবে তো ভাবি?”
“রাখবো তবে তোমায় বলতে হবে কেনো সেদিন তুমি রায়হান ভাইয়াকে ধো*কা দিয়েছিলে”
লম্বা শ্বাস ফেলে উশ্মি বলে,
“সে কথা আমি তোমায় বলতে পারবোনা ভাবি,সরি”
“যদি বলি সে কথা আমি জানি?”
কপাল কুচকে উশ্মি বলে,
“আমি আর আমার আল্লাহ ব্যতীত সে খবরতো কেউ রাখেনি,জানেও না।আমি জানাইনি কাউকে।এমনকি রামিমকেও না।তুমি কীভাবে জানবে?”
মৃদু হেসে চাঁদ বলে,
“হাসালে মেয়ে।জানো?আমার এক বিশেষ গুন আছে,অন্তর্নিহিত গুন বলতে পারো।মানুষের চোখ পড়া”
উশ্মিও খানিক হেসে চাঁদের চোখে চোখ রেখে বললো,
“তা আমার চোখে কী পড়লে ভাবি?কিছু কি আদোতে পড়তে পারলে?”
উশ্মির চোখে চোখ রেখেই চাঁদও বলে,
“হ্যা পড়লাম তো,অনেককিছুই পড়লাম।এই চোখে বিশাল দুঃখের পরিমাণ,সেই সাথে এক চাপা বোঝাও আছে”
“কিসের?”
“তুমি শিফার জন্য রায়হান ভাইয়াকে ছেড়েছিলে তাইনা?”
চাঁদের কথায় বিস্ময়ে উশ্মির চোখ বড় হয়ে স্থির হয়ে যায় চাঁদ পানেই।অতঃপর দৃষ্টি ঘোলাটে হয়ে আসতেই সে আবারও শুনতে পায় চাঁদের দৃঢ় কন্ঠস্বর,
“শিফা রায়হান ভাইয়াকে পছন্দ করতো আর সেজন্যই তুমি তাকে ছেড়েছিলে কেবলই শিফার জন্য।আমি ঠিক কিনা?”
চাঁদের প্রশ্নের জবাবে লম্বা শ্বাস ফেলে উশ্মি বলে,
“কীভাবে জেনেছো জানিনা তবে পুরোটা জানতে পারোনি।অল্প বিদ্যা যেমন ভয়ংকর তেমনি অল্প জানতে পারাও ভয়ংকর।সে দরুনই পুরোটা বলছি এবং আশা রাখছি এতবছর যে সত্য কেবল নিজ হৃদ মাঝারে রেখেছিলাম তা তোমার হৃদয়ে তালাবদ্ধভাবে আটকে থাকবে”
“কথা দিলাম।চাঁদের নিজের ম!রণ হলেও তার দেওয়া কথা কখনোই মর!বেনা”
ফের দীর্ঘশ্বাস ফেলে উশ্মি বলে,
“সত্যিটা তিক্ত হলেও এটাই সত্যি যে আমি রায়হানকে প্রচন্ড ভালোবাসতাম।বললাম না?পাঁচবছর আগেই তাকে ভালোবাসা ছেড়ে দিলাম,অথচ তার সাথে আমার ব্রেকাপ হয়েছিলো নয় বছর আগে।হ্যা ভাবি!ঠিক চার বছর!চারটা বছর লেগেছিলো তাকে ভালোবাসা ছাড়তে।কেনো ছেড়েছি?হ্যা আমি শিফার জন্যই ছেড়েছিলাম তবে তা আংশিক সত্য।পুরো সত্যিটা হলো রায়হান আমাকে কখনোই ভালোবাসেনি।সে একচুয়ালি আমার সাথে শুধু রিলেশনই রেখেছে,ভালো কখনোই বাসেনি।কেনো এমনটা বলছি তাই ভাবছোনা?সেটাও বলছি।সে সবসময়ই আমায় এক বন্দি জীবনে আটকে রেখেছিলো।তার গন্ডি পেরিয়ে আমি যেনো আর কোথাও যেতে না পারি।তবে তাতেই সন্তুষ্ট থাকার চেষ্টা করেছিলাম কিন্তু শেষমেশ না?আমি আর পারলাম না ভাবি।সে আমায় কতশত অপমান যে করেছে!ঐ অপমানগুলো আমি আর নিতে পারলাম না।তার উপর জানতে পারি শিফা নাকি রায়হানের উপর ক্রাশড।মেয়েটার তখন মনে হয় বারো বছর হবে।প্রায়শই দেখতাম আমার আর রায়হানকে একসাথে দেখলে মনমরা লাগে ওকে,বেশ অসহায় দৃষ্টিতে আমাদের পানে চেয়ে থাকতো।মেয়েটার মলিন মুখশ্রী আমার সহ্য হতোনা মোটেও।এই শিফা,রুবা আর রিদিকে আমি প্রচন্ড ভালোবাসি ভাবি।আমার নিজেরতো ছোট বোন নেই সেই দরুনই বলতে পারো।তো যেহেতু রায়হানের সাথে আমার বনিবনা হচ্ছিলোনা তাই আমি সিদ্ধান্ত নিয়েছিলাম শিফার জন্য তাকে রেখে দেবো।আমি চেয়েছিলাম রায়হান শিফার হোক।মেয়েটা তার ভালোবাসা পাক।রায়হানতো আমায় ভালোবাসতে পারেনি যদি শিফাকে বাসলোই!এবং এসব কারণেই রায়হানকে মিথ্যা বলে ছেড়েছিলাম।তাতে হেল্প করেছিলো রামিম।তখন সবাইকে বলেছিলাম আমরা একে অপরকে ভালোবাসি অথচ রামিম আমায় দুচোখেও দেখতে পারতোনা।আর আমাদের মধ্যে রিলেশন হওয়া?সেতো একেবারেই আকাশ কুসুম!কিন্তু সবার সামনে অভিনয় করতে গিয়ে একসময় আমি সিদ্ধান্ত নেই নিজেকে আরেকটা সুযোগ দেই।যদি রামিমের দ্বারাই রায়হানকে ভুলা যায়!তো বছর দুয়েক পর রামিমকে একটু আকটু পটাতে পেরে রিলেশনে গেলাম।প্রথম এক বছর আমিই বেশ ইফোর্ট দিলাম অথচ ভালো কিন্তু তাকে বাসতাম না।তো ঐ ইফোর্ট দিতে দিতে যখন দেখলাম রামিমের ফিরতি ইফোর্ট পাচ্ছিনা তখন হাল ছেড়ে দিলাম।তারপরের বছর রামিম সত্যিই আমায় প্রোপোজ করে বসলো।জানতে পারলাম এই তিন বছরে নাকি সে না চাইতেও ভালোবেসে ফেলেছে আমায়।প্রথমে বিশ্বাস করতে চাইনি।তার সাথেও বেশ বাজে ব্যবহার করেছিলাম।অথচ ছেলেটা সত্যিই আমায় ভালোবেসেছিলো।এবং অবশেষে আমাদের প্রণয় শুরু হলো।প্রেমে পড়লাম দুজনে।আবার প্রেম হলো আমার।আর তারপর থেকে রায়হানকে আর ভালোবাসিনা।ভালোবাসা সম্ভব হয়নি।রামিমের যত্ন,ভালোবাসা,সম্মান,বিশ্বাস সবকিছুই ছিলো রায়হানকে যতটা ভালোবেসেছিলাম আমি তারও ঊর্ধ্বে।অতঃপর সত্যি সত্যিই আমার প্রেম হলো।আবার প্রেম হলো ভাবি।রামিমের সাথেই হলো।আর দেখো বিগত পাঁচ বছর ধরে আমি কেবল রামিমকেই ভালোবাসি।শুধুই আমার রামিম,আমার সদ্য হওয়া স্বামীকে।রায়হানকে দেখলে আমার আফসোস ছাড়া আর কিছুই হয়না।খুব চেয়েছিলাম শিফার সাথে তার যেনো কিছু হয়।অথচ দেখো কিছুই হলোনা।এর জন্যই আমি মূলত তাড়াহুড়ার মধ্যেই বিয়েটা করলাম।যাতে করে রায়হান মুভ অন করুক।অ্যান্ড দেখো আমাদের তিনজনের সব ঠিকঠাক হয়ে এসেছে কেবল শিফা আর রায়হানেরই কিছু হলোনা”
লম্বা শ্বাস ফেলে মৃদু হেসে চাঁদ বলে,
“শিফার ভাগ্যে যদি রায়হান ভাইয়া থাকে তাহলে তারা অবশ্যই একে অপরের হবে।আমি বা তুমি চাইলেই তাদের এক হওয়া থেকে আটকাতে পারবোনা।আবার যদি তাদের ভাগ্যে মিলন না থাকে তো শত চেষ্টা করেও তাদের মেলাতে পারবোনা।সবটা ভাগ্যের উপর ছেড়ে দিয়ে নিজের সাংসারিক আর নতুন জীবনে ধ্যানমগ্ন হও”
“তবে আমি তোমাদের সত্যিটা জানতে চাই ভাবি।যদি প্রণয় ভাইয়া তোমার সাথে সত্যিই এমন কিছু করে থাকে যা অনুচিত আমিও কথা দিচ্ছি তোমাকে ডি!ভোর্স আমি দেওয়াবোই”
ম্লান হেসে চাঁদ বলে,
“অনুচিত সে বা আমি কেউই করিনি,ভাগ্য করেছে।যাক সেসব।সময় হলে আমিই তোমায় সবটা জানাবো।আর তুমি সম্ভব হলে ডিভো!র্স পেপার টা রেডি রেখো”
“সত্যি সত্যি ডিভো!র্স দেবে ভাইয়াকে?”
লম্বা শ্বাস ফেলে চাঁদ বলে,
“হিম”
“ভাই যদি না দেয়?”
“তোমার ভাই দিতে বাধ্য এবং দেবেও”
“এতটা শিওর কী করে?”
“আমি তোমার ভাইয়ের নীলবিষ।যে বি!ষ সে স্বেচ্ছায় করেছে পান!”
To be continued…..