আবার_প্রেম_হোক #নুসরাত_জাহান_মিম ৭৭.(বর্ধিতাংশ)

0
799

#আবার_প্রেম_হোক
#নুসরাত_জাহান_মিম

৭৭.(বর্ধিতাংশ)
“বউকে যেহেতু এতই ভালোবাসেন ফাসালেন কেনো তবে?”

লোকটার কথা শুনে তারই পা ধরে রাখাবস্থায় চোখ তুলে তার পানে তাকায় প্রণয়।অতঃপর ঘনঘন শ্বাস ফেলে বলে,

“কিছু মিসআন্ডারস্ট্যান্ডিং হয়েছিলো”

লোকটা বেশ বিব্রতবোধ করে বলেন,

“দেখি আগে আমার পা ছাড়ুন।আমি বেশ লজ্জিতবোধ করছি মি.প্রণয়”

প্রণয় লোকটার পা জোড়া আরও শক্ত করে ধরে বলে,

“আগে বলুন আমার বউয়ের নামের কেসটা তুলে নেবেন”

তখনই লোকটার স্ত্রী এসে বলেন,

“ছেড়ে দিন ভাইয়া।আপনি নিজেই অসুস্থ”

প্রণয় এবার মহিলাটির পানে তাকিয়ে বলে,

“প্লিজ আপু চাঁদের নামের কেসটা তুলে নেন প্লিজ।আপনি নিজেওতো মেয়ে”

বেশ মলিন কন্ঠে মহিলাটি বলেন,

“এবং একজন মা ও কিন্তু আমিই ডাক্তার ভাইয়া”

হতাশার শ্বাস ত্যাগ করে প্রণয় বলে,

“আপনারা দু’জন আমার নামে কেসটা ফাইল করে আসুন কিন্তু চাঁদকে ছাড়িয়ে আনুন প্লিজ।মেয়েটা পুরো এক রাত এক দিন থেকেছে।এতটা অসহায় আজ অব্দি তাকে আমি দেখিনি।কলিজা পু*ড়ে গেছে আমার”

লোকটা জিজ্ঞেস করেন,

“কলিজা যদি পু*ড়বেই তবে পোড়ানোর মতো কাজ করলেনই কেনো?কেনো আমার ছেলেটাকে এক্সিডেন্ট করালেন?”

“আমি… আমি ইচ্ছা করে করাইনি ভাই বিশ্বাস করুন।আপনার ছেলের জায়গায় আমারই এক ফ্রেন্ডের থাকার কথা ছিলো।কিন্তু বাচ্চাটা কোথা থেকে আসলো আমি সত্যিই জানিনা।আমি একজন ডাক্তার।আমার কাজ জান বাঁচানো।কাউকে মৃ*ত্যুর মুখে ঠেলে দেওয়া নয়।আপনারা একটু বোঝার চেষ্টা করুন।চাঁদের কোনো দোষ নেই।গাড়ি ব্রেকফেইল আমিই করিয়েছিলাম।তবে বাচ্চাটার জায়গায় আমার ফ্রেন্ডের থাকার কথা ছিলো”

“আপনার ফ্রেন্ডের কিছু হয়ে গেলে?”

“হয়তো একটু আকটু সমস্যা হতো তবে সিরিয়াস কিছুই হতোনা।বাচ্চা বলেই বাচ্চাটার…..”

বলতে গিয়েও থেমে যায় প্রণয়।অতঃপর লোকটার পা ধরাবস্থায়ই দৃষ্টি নত করে দীর্ঘশ্বাস ফেললো।লোকটার স্ত্রী জিজ্ঞেস করলো,

“যাকে আপনি এত ভালোবাসেন তার সাথে কেনো এমনটা করতে গেলেন?তার আগে আমার হাজবেন্ডের পা ছাড়ুন এভাবে দেখতে চোখে বাঁঝে”

বেশ করুন কন্ঠে প্রণয় বললো,

“আগে বলুন আমার স্ত্রীকে ছাড়াতে হেল্প করবেন কিনা?”

অতি রুক্ষ কন্ঠে লোকটাও বললেন,

“যেহেতু আপনার স্ত্রীর কোনো দোষই নেই তাকে অবশ্যই আমরা ছাড়াবো তবে যদি আমাদের ছেলের কিছু হয় আপনাকে ছেড়ে দেবোনা ড.প্রণয়।আপনাকে জেলের ভাত খাইয়ে ফা!সি!তে না ঝুলিয়ে আমিও দম ফেলবোনা”

বেশ উত্তেজিত হয়ে প্রণয় বলে,

“ভাই যা ইচ্ছা হয় করবেন দরকার পড়লে এখনই আমার নামে মামলা দিন তবুও চলুন আর চাঁদের নামের কেসটা তুলুন প্লিজ!”

বেশ গম্ভীরভাবে লোকটা বললেন,

“তুলবো।পা ছাড়ুন”

লম্বা শ্বাস ফেলে প্রণয় এবার লোকটার পা ছাড়লো।পা ছাড়ার পরপরই তার স্ত্রী বললো,

“ভাইয়াকে নিয়ে সোফায় বসো নিয়ান।আমি পানি আনছি আর আমাদের দ্রুতই হাসপাতালে যেতে হবে”

প্রণয় বাঁধ সেধে বলে,

“থামুন আপু।আমার পানি লাগবেনা আপনারা জাস্ট আমার সাথে থানায় চলুন”

“আপনার অবস্থা কিন্তু বেশ করুন ভাইয়া।আপনি বসুনতো।এই নিয়ান বসাও ওনাকে”

বলেই রান্নাঘরের দিকে এগোয় সে।অতঃপর দুই গ্লাস পানি ট্রেতে করে এনে এগিয়ে দিতেই প্রণয় ইতস্তত করলেও তাকে জোর করিয়ে পানি পান করায় নিয়ান।এবং প্রণয় এতটাই পিপাসু ছিলো যে সে দুই গ্লাস পরপর এক নিশ্বাসেই শেষ করেছে।পানি খাওয়া শেষ হলো দাঁড়িয়ে থেকেই নিয়ানের স্ত্রী বলে,

“আপনার সম্পর্কে যতটুকু আমি শুনেছি।ঢাকা মেডিকেলের সব ডাক্তার একদিকে আর ড.রুহায়ের প্রণয় অন্যদিকে।এবং আপনার বেশকিছু কলেজ হিস্ট্রিও আমার জানা।আমার ছোটবোন সার্জন রুহায়ের প্রণয় বলতে পাগল।আপনার বিভিন্ন ছবি ওর রুমের দেয়ালে দেয়ালে লাগানো,ওর গ্যালারি ভর্তি কেবল আপনিই।আর আপনার জন্যই ও ডিএমসিতে ভর্তি হবার জন্য উঠে পড়ে লেগেছিলো এবং চান্স পেয়েছেও।ক’দিন বাদে ভর্তিও হবে।তবে আপনি যে ম্যারিড তা হয়তো জানেনা।ওর থেকেই আপনার কলেজ হিস্ট্রি শুনেছি।তাহলে যাকে পেয়েছেনই তার বিরুদ্ধে এমন ষড়যন্ত্র কেনো?”

বেশ তিরিক্ষি মেজাজে নিয়ান বলে,

“ওদিকে আমার ছেলে জীবন-ম!রণের সাথে পাল্লা দিয়ে চলেছে আর তুমি প্রেম-পিরিতি নিয়ে প্যাচাল পারছো ফারু?”

“আহহা!আমিও তো জানি আমার ছেলের অবস্থা খারাপ তবে মি.প্রণয়ও যা করেছেন তাতো ভালো করেননি।তিনি সেটা কেনো করেছেন?”

প্রণয় বেশ ধীরকন্ঠে বলে,

“দু’জনের মাঝে কিছু মিসআন্ডারস্ট্যান্ডিং হয়েছে যেটা একচুয়ালি খুবই পার্সোনাল।আই আম সরি আপু”

“আচ্ছা ঠিক আছে বুঝলাম।জিজ্ঞেস করবোনা কিন্তু ভুল বোঝাবুঝিটা কি এতই বড় ছিলো যে বউকে জেল অব্দি নিয়ে গেলেন?”

মাথা নিচু করে প্রণয় বলে,

“বললামই তো বলার মতো নয় আপু।আপনারা প্লিজ….”

“ওয়েইট,আই হ্যাভ আ কুয়েশ্চন ভাইয়া”

“বলুন”

“আপনার শরীরে এত ক্ষ*ত,ব্যান্ডেজ করা অথচ আপনার ওয়াইফের শরীরে কিছুই দেখলাম না।অপরাধী কি আদোতে সে নয়?নাকি নিজের বউকে বাঁচানোর জন্য আপনি?”

বেশ গম্ভীর কন্ঠে প্রণয় বলে,

“কে বলেছে চাঁদের গায়ে কোনো ক্ষ*ত নেই?অবশ্যই সেও আঘা!ত পেয়েছে।গাড়ির মধ্যে যেহেতু দু’জনই ছিলাম,দু’জনেই আ!ঘাত পেয়েছি”

“এক্সেক্টলি!আমি সেটাই বলছি।আপনার গায়েই কেনো বেশি?আপনিতো ড্রাইভ করছিলেন না?বউকে বাঁচাতে এসেছেন?অথচ সব প্রমাণ কিন্তু আপনিই দিয়েছিলেন।এখন ফ্যামিলির প্রেশারে এসে নিজের উপর আরোপ নিচ্ছেন?আপনার বউকেতো আমি ছাড়তে দিচ্ছিনা”

“আমার সম্পর্কে যেহেতু এতকিছুই জানেন তবে এটাও নিশ্চয়ই জানেন রুহায়ের প্রণয় মিথ্যা আর ধো*কা জিনিসটা অতিরিক্ত মাত্রায় অপছন্দ করে?”

হাসতে হাসতে নিয়ানের স্ত্রী বলে,

“রিল্যাক্স মি.প্রণয়।আমি একজন অ্যাডভোকেট,আই ওয়াজ জাস্ট চেকিং ইউ।আপনার ওয়াইফকে যে আপনি প্রোটেক্ট করেছেন তা আপনাকে দেখলেই বোঝা যায়।কিন্তু আমার প্রশ্ন হচ্ছে এত ভালোবাসার পরেও তারই বিরুদ্ধে কেনো এতকিছু করলেন সেটাই জানতে চাচ্ছিলাম।নাথিং এলস”

“যেই জিনিসটা সত্যিই নয়।তা বলারই কি দরকার?আমি নিজেইতো জানতে পারলাম আই ওয়াজ রং।এখন কি প্লিজ চলবেন?”

“আপনার ওয়াইফ কি পূর্বে কোনো ক্রাই!ম করেছে?এটা ছাড়া?”

প্রণয়ের কিছু বলার পূর্বেই নিয়ান বলে,

“তুমি কি থামবে ফারহানা?তোমার ওকালতি এখানেও শুরু করেছো কেনো?ছেলেটা কি একার আমার?”

কপাল কুচকে ফারহানা বলে,

“উফফো!থামো।ছেলে সুস্থ আছে।মি.প্রণয় আসার আগেই হাসপাতাল থেকে কল এসেছিলো সামিনের জ্ঞান ফিরেছে আর সে আম্মু আম্মু করছে।কিন্তু তোমাকে বলার আগেইতো প্রণয় ভাইয়া এসে পড়লেন”

বাচ্চাটার জ্ঞান ফিরেছে শুনে প্রণয়ের মলিন মুখশ্রী উজ্জ্বলতায় ভরে উঠে এবং সে বলে,

“তাহলে কি?”

ফারহানা প্রণয়কে থামিয়ে বলে,

“থামুন।আমার কথা শেষ হয়নি।আপনাদের মাঝে কী হয়েছে জানিনা।একজন হাজবেন্ড আর ওয়াইফের মাঝে বলার রাইটও আমার নেই।তবে আপনি কাজগুলো যে খুবই বাজে করেছেন তা নিশ্চয়ই আপনি নিজেও জানেন।প্রতিশোধপরায়ণ হয়ে করেন আর যেজন্যই করেন।ভুল আপনি অবশ্যই করেছেন।আমি চাইলেই আপনাকে দু’ দু’টো কেসে ফাসাতে পারি।বাট আয় ওন্ট ডু দিজ।কজ আপনার অবস্থা দেখেই বোঝা যাচ্ছে আপনি অনুতপ্ত।বউয়ের চিন্তায় আধম!রা হয়ে গেছেন।তবে আপনার ওয়াইফ কি আপনায় ক্ষ*মা করবেন?”

“আমার ওয়াইফ সেখান থেকে বের হলেই আমার চলবে।আর কিছু আপাতত লাগবেনা”

“ঠিক আছে চলুন কেস উঠিয়ে আসি”

নিয়ান কপাল কুচকে বললো,

“কিন্তু প্রমাণগুলো?আর নিউজেও তো সব ছড়াছড়ি মেইবি শেষ”

“আহ নিয়ান!তুমি বারবার কেনো ভুলে যাও তোমার বউ একজন অ্যাডভোকেট?আয় উইল হ্যান্ডেল দিজ।আপনি চলুন ভাইয়া”

প্রণয় বাঁধ সেধে বললো,

“না আপু,আমি যাবোনা।যেভাবে করলে সবটা ঠিক হয় আপনিই করুন প্লিজ”

“কেনো যাবেন না?আপনার যাওয়াটা জরুরীতো।নাহয় আপনার ওয়াইফকে ছাড়াবো কী করে?প্রমাণ সবতো আপনিই দিয়েছেন”

“সেজন্যই বলছিলাম আমার বিরুদ্ধেই মা!মলা দিন যে আমি মিথ্যা প্রমাণ দিয়ে চাঁদকে ফাসিয়েছি”

“এতে করে যে আপনার ডক্টর ডিগ্রিসমূহ বাতিল হবে তা কি আপনি জানেন না?”

“জানি”

“তারপরেও এ কথা বলছেন?”

“অতোকিছু আপাতত মাথায় আসছেনা।জাস্ট চাঁদকে ওখান থেকে বের করুন প্লিজ!”

“তো সাথেই চলুন।আপনার ডিগ্রিও যাবেনা,কিছুই হবেনা।আমি ম্যানেজ করে নেবো।বাট যেতে হবে আপনাকে”

“সরি যেতে পারবোনা”

কপাল কুচকে নিয়ান জিজ্ঞেস করে,

“কিন্তু কেনো?”

কিছুক্ষণ চুপ থেকে প্রণয় বলে,

“কারণ সে যদি জানে তাকে ছাড়ানোর পেছনে একটু হলেও আমি আছি কখনোই সে এটা মেনে নেবেনা”

“কিন্তু কেনো?যদি সে ভুল নাইবা হয় মানবেনা কেনো?”

“ওয়াইফতো আমার জানি আমি।তার আত্মসম্মানে লাগবে এমন কিছু সে কখনোই করবেনা অথবা মানবেনা”

ফারহানা তার হাজবেন্ডের সাথে বেরুতে বেরুতে বলে,

“আপনার ওয়াইফকে আরেকটা রাত হাজতেই কাটাতে হবে ভাইয়া।নাহয় সে অবশ্যই বুঝে যাবে যে আপনিই কিছু একটা করিয়েছেন।এবং আমরা রাতের মধ্যেই তাকে ছাড়ানোর ব্যবস্থা করবো।জাস্ট রাতটা কাটিয়ে সকালেই সে বের হতে পারবে।চিন্তা করবেন না”

“কিন্তু?”

“কোনো কিন্তু না।যেভাবে বলছি সেভাবেই করুন।আদারওয়াইজ প্রবলেম হবে”

“ঠিক আছে আপু।এখন হাসপাতালে যাচ্ছেন?”

মৃদু হেসে ফারহানা বলে,

“হ্যা।ছেলেকে সুস্থ-সবল না দেখলে আমারইতো প্রাণপাখি উড়াল দেবে”

তিনজনই একসাথে বেরুতে নিলে নিয়ান বেশ গম্ভীর কন্ঠে বলে,

“মাঝে দিয়ে আমার ছেলেটাকে শুধু শুধু সাফার করালেন আপনি”

নিয়ানের কথা শুনে বেশ করুন চাহনী নিক্ষেপ করে তার পানে প্রণয়।
.
.
.
.
.
.
.
.
.
.
.
.
.
.
.
.
.
.
.
রাত এগারোটা বেজে সাইত্রিশ মিনিট।সুনসান নীরব রাস্তা দিয়ে হেটে চলেছে প্রণয়।মাঝেমাঝে দু’একটা রিক্সার দেখা মিলছে।হাটতে হাটতে বেশ ক্লান্তিবোধ করছে সে।আর কিছুই ভালো লাগছেনা।গতকাল দুপুরে একসাথে চাঁদের সাথে খাওয়া হয়েছিলো বোধহয়।এরপর আর কিছুই সে খায়নি।এত এত কাহিনীর মাঝে খাওয়ার কথা সে বেমালুম ভুলে বসেছিলো কিন্তু এখন ক্ষুধায় পেট তার মুচড়িয়ে উঠছে।কিছু খাওয়ার কথা ভেবে পকেটে হাত দিতে গিয়েও সে দেয়না।অতঃপর রাস্তার ধারেই ফুটপাথের এক পাশে ক্লান্ত ভঙ্গিতে বসে পড়ে সে।বসে বসে ভাবে তার চন্দ্রময়ী কি কিছু খেয়েছে?সে কি খাবে?তার গলা দিয়ে কি আদোতে খাবার নামবে?প্রণয়ের থেকে পাওয়া এতশত দুঃখ-কষ্ট ভুলতে কি সে পারবে?আর সেখানে কী খাবারই বা দেবে?মনের ব্যথা কি কখনো চাঁদের সাড়বে?সে কি পারবে চাঁদের মনে আরও একবার জায়গা করে নিতে?আবার কি প্রেম হবে তাদের?নাকি প্রেমের সূচনার পূর্বেই বেশ নিঠুরভাবেই অপূর্ণ রবে নামহীন তাদের সেই প্রেমদ্বার?

To be continued…..

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here