আবার_প্রেম_হোক #নুসরাত_জাহান_মিম ৮১.

0
781

#আবার_প্রেম_হোক
#নুসরাত_জাহান_মিম

৮১.
“আমি চাই তুমি রিদিকে বিয়ে করো ভাইয়া”

আকস্মিক চাঁদের কথা শুনে কপালে বেশ কয়েকটা ভাজ পড়ে মিরের।সে চাঁদের পানে সেভাবে চেয়ে থেকেই বলে,

“পাগল হয়েছো?কী যা তা বলছো?”

“পাগল আমি হইনি।পাগল হয়েছো একচুয়ালি তুমি”

“এটা হাসপাতাল চাঁদ,চেচিয়োনা”

“তোমার কেবিনে চলো”

“কিন্তু?”

“কোনো কিন্তু না।আজ আমি বলবো আর তুমি শুনবে।জাস্ট কাম উইথ মি”

বলেই মিরের হাত ধরে তার কেবিনের দিকে এগোয় চাঁদ।অতঃপর কেবিনে প্রবেশ করতেই দরজা আটকে দিয়ে মিরের চেয়ারে মিরকে বসতে বলে নিজে তার সামনাসামনি রাখা চেয়ারটায় বসতে বসতে বলে,

“অনেক তো হলো লুকোচুরি?এবার নাহয় তোমার মিথ্যা খোলস থেকে বের হও ভাইয়া?”

কপাল কুচকে মির বলে,

“বুঝিয়ে বলো এক্সেক্টলি কী বলতে চাচ্ছো তুমি?”

থমথমেভাবে চাঁদ বলে,

“সবার সামনে নিজেকে খারাপ প্রিটেন্ড করিয়ে আসলে কী প্রমাণ করতে চাও তুমি?এটাই যে তুমি খুবই বাজে ছেলে?একজন প্লেবয় অথবা মারাত্মক লেভেলের প্লেবয়?”

চাঁদের কথায় খানিক হেসে শান্ত কন্ঠেই মির বলে,

“প্লেবয় তো প্লেবয়ই চাঁদ।এবং আমি যে প্লেবয় সেটা তো আজ থেকে না বহু আগে থেকেই।সেই স্কুল লাইফ থেকেই বলতে পারো।হঠাৎ এসব বলছো কেনো?”

“স্কুল লাইফে তুমি কোনো প্রেম করোনি।আমায় শেখাতে আসবেনা”

এবারে মির অপ্রস্তুত ভঙ্গিতে বলে,

“ঐতো কলেজ লাইফ থেকে”

“তুমি রিদিকে ভালোবাসো কবে থেকে সেটা বলো আগে?”

এবার মাত্রাতিরিক্ত বিরক্ত হয়ে মির বলে,

“ননস্টপ উদ্ভট কথাবার্তা বলছো কেন চাঁদ?তোমার মুখে কিন্তু এসব আজগুবি কথাবার্তা মানায় না”

“আমি মোটেও আজগুবি কথা বলছিনা।বিগত এক মাস যাবৎ সবটাই পর্যবেক্ষণ করেছি।তোমার এক্সদের সাথেও কথা বলেছি আমি।তাই বলছি কথা ঘুরিয়ে পেচিয়ে বলবেনা।যা বলবে ডিরেক্ট বলবে এবং সবকিছু সত্যি শুনতে চাই আমি”

বেশ গম্ভীরভাবেই মির বলে,

“আগে নিজের সমস্যার সমাধান করো।আপাতত যাও আমার ডিউটির সময় হয়ে যাবে”

“হলে হোক।আমি আমার প্রশ্নের উত্তর না নিয়ে যাচ্ছিনা”

এবারে মির প্রশ্ন করে,

“সে সন্ধ্যায় কী হয়েছে তুমি বলেছিলে কাউকে?বলোনি তো”

“সেসব বলার অযোগ্য বলেই বলিনি”

“আমারটাও বলার অযোগ্য তাই বলছিনা”

এবারে চাঁদ শান্ত কন্ঠে বলে,

“রিদি তোমায় ভালোবাসে ভাইয়া”

মিরও শান্ত কন্ঠে গম্ভীরভাবে বলে,

“জানি”

“তাও এমন করছো?”

“কেমন করছি?অথবা আমার কেমন করা উচিত?তুমি এসবের পেছনে কেন লেগেছো?মানে তোমার আর তোমার হাজবেন্ডের কি কারো পেছনে না লাগলে ভালো লাগেনা নাকি?”

“প্রণয়কে মাঝে দিয়ে টানবেনা”

“প্রণয়কে কিছু বললেতো তোমার সহ্য হয় না অথচ আমার বন্ধুকেই তুমি শতশত কষ্ট দিচ্ছো”

“তুমি নিজে কী করেছো?বাড়িতে জায়গা দাওনি কেনো তাকে?”

“তখন যা ভালো মনে হয়েছে করেছি।সেটা আমার আর আমার বন্ধুর ব্যাপার।মাঝে দিয়ে নাক গলাবেনা”

“তুমিও আমার আর আমার হাজবেন্ডের ব্যাপারে নাক গলাবেনা।আমি যা বলছি তা শোনো”

“কী বলবে তাড়াতাড়ি বলো”

“রিদি তোমায় ভালোবাসে আর….”

“সে আমি বহু আগে থেকেই জানি।কিন্তু এটা ওর নিছকই ভালোলাগা বৈ কিছুনা।ওর মতো শান্তশিষ্ট মেয়েকে আমার মতো প্লেবয় ডিজার্ভ করেনা।তাছাড়া ও আমার বয়সেও খুব ছোট।এসব জিনিসে ওকে আস্কারা দেবেনা চাঁদ”

“তুমি ওকে ডিজার্ভ করোনা?তাহলে কি উজান করে?”

এবারে খানিক হকচকায় মির।সে চাঁদের দিকে চেয়ে কপাল সামান্য কুঞ্চিত করে বলে,

“মাঝে দিয়ে উজান আসলো কেনো?”

“তুমি যে উজান আর রিদির বিয়ে ঠিক করা বলেই রিদির দিকে এগোচ্ছো না তা ভালো করেই জানি আমি।তবে নিজেকে কেনো সকলের সামনে খারাপ প্রমাণিত করেছো?”

“আন্দাজে ঢিল মারা বন্ধ করো চাঁদ।সবসময় ঢিল কিন্তু সঠিক জায়গায় লাগেনা।রায়হানের বেলা লাগলেও এবার আর লাগবেনা”

“রায়হান ভাইয়ার কথা তুমি কী করে জানো?”

“শিফা রায়হানকে আর রিদি আমাকে পছন্দ করে সেটা আমি আগে থেকেই জানি।এখন কীভাবে জানি সেটা জিজ্ঞেস করবেনা।আর বাচ্চা মেয়েগুলো অতিরিক্ত পাকনা।বেশি পাকনামি স্বাস্থ্যের জন্য হানিকারক সেটা না বুঝিয়ে তুমি উলটো কার সাথে কার সেটিং করা যায় সে ধান্দায় আছো?নিজের আর প্রণয়ের সম্পর্কটাকে সুযোগ দিচ্ছো না কেনো?নিজেদের মাঝেকার ভুল বোঝাবুঝি দূর করছোনা কেনো?তোমার কথাগুলো প্রণয়কে বলো আর তারটাও শোনো।দুই পক্ষ থেকেই সবটা শুনে তারপর ডিসিশন নাও।কিন্তু তুমি সেসব না করে অন্যের জীবন নিয়ে পড়ে আছো।এই স্বভাব কি যাবেনা নাকি?এত দয়ালু সাজারতো প্রয়োজন নেই”

“আমাকে নিয়ে ভাবা লাগবেনা।তুমি আমার ভাই ভাইয়া।তোমার ভালোমন্দ আমিই দেখবো।যেহেতু আমাকে ছোট বোনের মর্যাদা দিয়েছো।সে হিসেবেই তা পালন করছি।নিজের ভাইয়ের জীবনতো আর সাজাতে পারলাম না তোমার টাই নাহয় একটু গুছিয়ে দেই”

“অতো প্রয়োজন নেই।ঐ বাচ্চা মেয়ের সাথে আমার যায়না”

“বাচ্চা মেয়ে,বাচ্চা মেয়ে যে করছো অথচ সেই বাচ্চা মেয়েকেই যে মন দিয়েছো তা তোমার চোখ দেখলেই বোঝা যায়”

কথাখানা শুনতেই দৃষ্টি এলোমেলো হয় মিরের।সে খানিক কেশে বলে,

“অথচ নিজের চোখই তুমি পড়তে পারোনা”

“নিজের চোখ কী করে পড়ে জানিনা।সেসব রাখো”

“নিজের প্রসঙ্গ আসলে এভোয়েড করছো আর আমার পেছনে লেগেছো কেনো?”

“দেখো ভাইয়া,তুমি যে একটা রিলেশনও করোনি।সকলের সামনে প্রিটেন্ড করেছো তা আমি জানি।এবং প্রমাণও আছে আমার কাছে।এবার বলো এসব করে লাভটা কী হলো?”

থতমত খেয়ে মির কিছু বলতে নিলেই চাঁদ গম্ভীরভাবে বলে,

“অনেক মিথ্যা শুনেছি।আর কোনো মিথ্যা শুনতে চাচ্ছিনা”

“আমিও কিছুই বলতে চাচ্ছিনা।তুমি তোমার কাজে যাও।আমাকেও কাজ করতে দাও”

“উজান আর রিদির বিয়েটা সম্ভব না ভাইয়া।উজানের গার্লফ্রেন্ড আছে।আর মেয়েটাকেও ও বেশ ভালোবাসে।রিদিও তোমায় ভালোবাসে।তুমিও বাসো তাহলে সমস্যা কোথায়?”

হঠাৎ করেই চেয়ার ঘুরিয়ে চাঁদের দিকে পিঠ করে গম্ভীরভাবে মির বলা আরম্ভ করে,

“সমস্যা আসলে কোথাও না চাঁদ।সমস্যা আমাতে।আমি রিদির যোগ্য নই।আর রিদির সাথে আমার যায়ও না।মেয়েটা আমার থেকে দশ বছরের ছোট বুঝতে পারছো?দশ বছর!প্রণয় বা ওর কোনো ভাই ই আমাদের বিষয়টা মানবেনা।যেখানে পরিবারই ওদের বিয়ে ঠিক রেখেছে আমি আর কী বলবো অথবা কী বলা উচিত বলে তুমি মনে করো?আর রইলো রিদির ভালোবাসা।ওটা অ্যাট্রাকশন বৈ কিছুনা।ক্রাশ খেয়েছে জাস্ট,এটাকে আর যাই হোক ভালোবাসা বলেনা”

“ভালোবাসা কাকে বলে কাকে বলেনা শেখাতে আসবেনা আমায়”

“হ্যা তুমিতো ভালোবাসায় পিএইচডি করেছো তোমায় আর কীই বা শেখাবো আমি?”

“রিদি নাইনটিন প্লাস ভাইয়া ক’দিন বাদে বিশে পা দেবে।ও তোমার উপর ক্রাশ খেয়েছে নাইন না টেনে পড়াকালীন।তুমি যখন প্রায়শই প্রণয়দের বাড়ি যেতে।আর ও একবার ছুটি কাটাতে এসেছিলো তখন তোমায় দেখে”

“সেসব আমি জানি।মেয়েমানুষের নজর দেখলেই বোঝা যায় কে কীভাবে তাকাচ্ছে”

“বেশি প্লেবয়গিরি দেখাতে এসোনা।কাজের কথায় আসি।সেই তখন থেকে তোমায় পছন্দ করে এরপর এখন ক’দিন বাদে বিশে পা দেবে সেইসাথে এমবিবিএস দ্বিতীয় বর্ষেও উঠে যাবে।এখন নিশ্চিয়ই ও বাচ্চা না?আমি কিন্তু তোমার বন্ধুর প্রেমে পড়েছিলাম আঠারো বছর বয়সে।সেই তুলনায় রিদি যথেষ্ট বড়”

মস্কারা করে মির বলে,

“আমার বন্ধুর প্রেমে যে পড়েছো স্বীকার করলে তবে?”

“ইম…..মাঝে দিয়ে উল্টাপাল্টা কথা ঢুকাবেনা।রিদি তোমায় ভালোবাসে তা আমি শতভাগ শিওর”

“ভালোবাসলেই যে তাকে পাওয়া লাগবে এমন তো কোনো কথা নেই চাঁদ”

“তোমাদের সুযোগ থাকা সত্ত্বেও কেনো পাবেনা?আমার আর প্রণয়ের মতো কাহিনী করোনা।মনের অন্তরালে কথা রেখে দিয়ে পরে ভোগা সত্যিই কষ্টদায়ক।আর আমি চাইনা আমার মতো কোনোকিছু রিদির সাথে হোক।সেজন্যই বলছি বিয়েটা করো।মেয়েটাকে প্রোটেক্ট করো”

চাঁদের দিকে চেয়ার ঘুরিয়ে কপাল কুচকে মির বলে,

“প্রোটেক্ট করবো মানে?”

“ওর লাইফ ভীষণ রি*স্কে ভাইয়া।ঐ মেডিকেল সম্পর্কে এমন এমন তথ্য আছে যা তুমি জানোনা।আমি আপাতত কিছুই বলতে পারছিনা কিন্তু দু’জন যেহেতু ভালোই বাসো তাহলে সমস্যা কোথায় বিয়েতে?”

দৃষ্টি চাঁদ হতে সরিয়ে ডেস্কে রাখা পানির গ্লাসের দিকে নিক্ষেপ করে নিচুস্বরে মির বলে,

“ওর পরিবার মানবেনা চাঁদ।তাছাড়া প্রণয়ের পরিবার বা প্রণয়ও মানবেনা”

“মানবে সকলেই।তুমি বেশি ভাবছো।উজান রিদিকে কখনোই ভালোবাসেনা।ওরা দুজন একে অপরকে ভাইবোন ব্যতীত আর কিছুই ভাবেনা।শুধু শুধু সামান্য একটা জিনিস নিয়ে নিজের ক্যারেক্টারের যাচ্ছেতা অবস্থা বানিয়ে দিলে?তুমি কি পাগল?”

বেশ মৃদুকন্ঠে মির বলে,

“তুমি কিছুই জানোনা চাঁদ।আমি সত্যিই প্লেবয়।মানে হয়তো এখন না কিন্তু একসময় ছিলাম।ছিলাম বলতে কলেজ লাইফে।বাট ঐটা শুধু ফেসবুকেই সীমাবদ্ধ।প্রেম শুধু একটাই করেছিলাম তাও আবার নতুন নতুন যখন কলেজে উঠি তখন।বাট ঐটা টেকেনি।এরপর এমনিতে মেয়েদের সাথে কথা হতো কিন্তু প্রথমবারের ন্যায় যখন সেই ফোরে পড়া বাচ্চা রিদিকে কিশোরী বয়সে দেখি।কত হবে তখন?বারো কী তেরো বছর।সেভেনের শেষের দিকের কথা।এইটে উঠবে বোধহয়।প্রথমে ক্রাশ আমিও খেয়েছিলাম।বাচ্চা একটা মেয়ে।মিষ্টি আচরণ,খুব কম কথা বলে ও।ভালোলেগেছিলো কিন্তু আমাদের এজ ডিফারেন্সটা অনেক বেশি চাঁদ।সেজন্য এসবে তোয়াক্কা দিইনি। কিন্তু সেই যে মেয়েটা মনে জায়গা নিলো মানে কিছুতেই ভুলতে পারছিলাম না।তো সেটা ভোলার জন্যই আরেকটা রিলেশনে যাই আমি।তখন মেডিকেলে পড়ি।মেইবি সেকেন্ড ইয়ারে উঠে গিয়েছিলাম।ওকে ভোলার জন্যই একেরপর এক রিলেশনে জড়াই বাট ফেসবুক কেন্দ্রিকই ছিলো সব।দেখাসাক্ষাৎ কিছুইনা ফোনেও কথা বলতাম না।কিন্তু রিদিকে ভোলাই যাচ্ছিলোনা।পরে যখন বুঝলাম মেয়েটাকে ভালোবাসি তখনই প্রণয় আর রামিমের থেকে শুনি রিদি আর উজানকে ওদের ফ্যামিলি নাকি একসাথে দেখতে চায়।এতে করে মনে বেশ আ!ঘা!ত লাগে।তাছাড়া এতদিনে প্রণয়সহ সবাই জানতো মির একটা প্লেবয়।তো যেচে তো আর প্রণয় তার সুশীল বোনকে একটা প্লেবয়ের হাতে তুলে দেবেনা?রিদিও বা কি বয়সে বড় কাউকে মেনে নেবে?সেসব কারণেই প্লেবয় ট্যাগ নিজের থেকে সরাইনি।দিনকে দিন পাক্কা প্লেবয় হয়ে যাই তবে হ্যা সবই মিথ্যা ছিলো।বাচ্চা মেয়েটার প্রেমে সেই যে পড়লাম আর উঠতেই পারলাম না।কিন্তু ওর আর আমার কোনোকিছুই সম্ভব না।আমি জানি প্রণয় জেনেশুনে রিদিকে আমার হাতে তুলে দেবেনা”

“প্রণয় রিদিকে তুলে দেওয়ার কে?রিদি তোমায় ভালোবাসে তুমি বাসো।উজানও আরেকজনকে বাসে।এবার তোমাদের সকলের বিয়ে হতে কে আটকায় তাও আমি দেখে নিচ্ছি”

“পাগল হয়েছো?”

“ওহ জাস্ট শাট আপ ভাইয়া।এবার আমি যা করবো তাতে কোনোপ্রকার বাঁধা তুমি দেবেনা।কারণ তোমার বলা সবকিছুই আমার ফোনে রেকর্ডেড আছে।বেশি তিড়িংবিড়িং করবে তো তোমার ফ্রেন্ডসার্কেলে সবাইকেতো এটা শোনাবোই সেই সাথে রিদিকেও শোনাবো।তারপর তোমার ইজ্জ!ত কই থাকে দেখছি আমি”

চেয়ার থেকে দাঁড়িয়ে হকচকিয়ে মির বলে,

“এই চাঁদ‌!ঘসেটি,ঘসেটি কোথাকার!তুমি তো দেখছি সত্যিকারের ঘসেটি বেগম!এসব কিছুই করবেনা তুমি”

“কিছুই করবোনা জাস্ট বলো যে রিদিকে তুমি বিয়ে করবে এবং আজই তা করবে!”

“কী যা তা বলছো?”

মিরের প্রশ্নে নিজের ফোন মিরকে প্রদর্শন করাতে করাতে চাঁদ জিজ্ঞেস করে,

“করবে কিনা বলো?”

কপাল কুচকে মির বলে,

“তুমি এর পরিণতি কী হবে ভাবতে পারছোনা চাঁদ”

“অতোকিছু ভাবতে চাইও না।বিয়ে করো নাহয় তোমার রহস্য ফাস করে দেবো”

চোখজোড়া বুজে লম্বা শ্বাস ফেলে দুই হাত ডেস্কের উপর রেখে মির বলে,

“করবো তবে এগুলো বিষয় কাউকে বলবেনা এমনকি রিদিকেও না।আমি চাইনা রিদি জানুক আমি ওকে ভালোবাসি”

“কিন্তু কেনো?বিয়ের পরে জানলে সমস্যা কী?”

নজর চাঁদের দিকে নিক্ষেপ করে মির বলে,

“সমস্যা আছে বলেই বলছি।সময় হলে আমি নিজে থেকেই বলবো কিন্তু তুমি আপাতত কাউকেই কিছু বলবেনা।তোমার আর আমার মাঝেই বিষয়গুলো সীমিত থাকবে ওকে?”

“চিন্তা করো না ভাইয়া।এই চাঁদের পেটে যে কতজনের কত কথা লুক্কায়িত,তা কেবল আমিই জানি”
.
.
.
.
.
.
.
.
.
.
.
.
.
.
.
.
.
.
.
সকাল দশটা,
প্রত্যেক দিনের ন্যায় আজও প্রণয় চাঁদকে লুকিয়ে চুরিয়েই দেখার জন্য নিউরোলজি বিভাগে কোনো এক বাহানার দরুনই এসেছে।তার এখানে কোনো কাজ নেই তবুও সে এসেছে ইন্টার্ন ডাক্তারদের সাথে কথা বলতে।তার যেই স্বভাব সেই স্বভাবই বহাল রইলো।কোনো মেয়ে ডাক্তারের সাথেই সে কোনোরূপ কথোপকথন করলোনা।যা করলো ছেলে ডাক্তারদের সাথেই।একজন ছেলে প্রণয়কে কিছু বলতে নিলেই সে তাকে হাত দ্বারা বাঁধা প্রদান করে উদ্ভ্রান্তের ন্যায় চাঁদের সাথে মির,রিহা আর মিরাকে যেতে দেখে কপাল সামান্য কুঞ্চিত করলো।অতঃপর হুট করেই নিজেও কাউকে কিছু না বলে তাদের পিছু নিলো।

কাজী অফিসের সামনে এসে সকলকে থামতে দেখে কপাল অতিরিক্ত মাত্রায় কুচকায় প্রণয়ের।বুকের ভেতরের হৃদযন্ত্রটা বেগতিক বেড়েছে তার।ভয় হচ্ছে খানিক।চাঁদ কি সত্যি সত্যি বিয়ে কর‍তে এসেছে?সেই ছেলেটাকেই কি বিয়ে করবে সে?কিন্তু তাদেরতো ডিভো!র্স হয়নি।নাহ!তার চন্দ্রময়ীকেতো সে অন্যকারো হতে দেবেনা।এটা হতে পারেনা।নিজের রাগকে নিয়ন্ত্রণে রেখে গম্ভীরভাবেই সেও এগোলো কাজী অফিসের ভেতরে।ভেতরে গিয়ে বন্ধুবান্ধবসহ ভাইবোনদের দেখে বেশ অবাক হয় প্রণয়।এতজনকে একসাথে আনার মানে কী?কিছু জিজ্ঞেস করতে নিলেই চাঁদের পাশে সমুদ্রকে দেখে মেজাজ আরও খারাপ হয় প্রণয়ের।সে ক্ষীপ্র গতিতে সমুদ্রের দিকে এগিয়ে এসে তার কাধের দিকের বাহু ধরে নিজের দিকে ঘুরিয়ে বলে,

“সমস্যা কী?আপনায় বলেছিলাম না আমার চাঁদের থেকে দূরে থাকবেন?আপনার সাহস হলো কী করে তাকে বিয়ে করতে আসার?সে এখনও আমার স্ত্রী।ডিভো!র্স হয়নি আমাদের।আর না তাকে আমি কোনোপ্রকারের ডিভো!র্স দেবো।সো চাঁদের স্বপ্ন দেখা বন্ধ করুন।আর তোরা?তোরাই বা কী করে ওদের বিয়ে দিতে এভাবে সঙ সেজে সকলে এসেছিস?আর রিদি?রিদি এখানে কী করছে?বাচ্চাদের এখানে কীসের কাজ?”

হঠাৎ প্রণয়ের আগমনে হকচকায় সকলে।মিরের চোখেমুখে আ!তংক।এবার কী হবে কিছুই বুঝতে পারছেনা সে।চাঁদের দিকে তাকাতেই চাঁদ তাকে আস্বস্ত করে প্রণয়ের পানে চেয়ে খানিক উচ্চস্বরেই বললো,

“না মানে সমস্যা কী আপনার?স্বভাব কি কোনোদিন যাবেনা নাকি?মানে যখন যা ইচ্ছা না জেনেশুনে বলতেই হবে আপনাকে?আর আপনি এখানে কী করছেন?ফলো করে এসেছেন?”

“হ্যা ফলো করেই এসেছি।ফলো না করলেতো দেখা যেতো আপনি আমার সতীন নিয়ে এসে পড়েছেন আর আপনার সাথে মিলিত আমারই বন্ধুবান্ধবসহ ভাইবোনেরাও”

“দেখুন এবার কিন্তু বেশি বেশি হচ্ছে প্রণয়”

“আপনি কেনো বেশি বেশি করছেন?আপনার সাথে তো থাকছিনা।না থাকছি নিজের বাড়িতে।একাই থাকছি।শুধু এইটুকু চেয়েছি যে আমার নামটা আপনার পাশে থাকুক।কিন্তু আপনি এরকম করছেন কেনো?শুনুন!কোনো ডিভো!র্স হচ্ছেনা আমাদের।আমি ওসব পেপার্স ছিড়ে ফেলেছি।আমার থেকে দূরে যাওয়ার সিদ্ধান্ত পালটে ফেলুন।এ জনমে তা হচ্ছেনা,হবেনা কখনো”

চাঁদ মেজাজ খারাপ করে বলে,

“আপনি থামবেন?নিজের বাড়ি পেয়েছেন নাকি?আশেপাশে লোকজন দেখছেন না?”

সমুদ্রের দিকে চেয়ে থেকে চাঁদকে প্রণয় বলে,

“আপনি এই ছেলেটার সাথে সবসময় কী করেন?দেখুন ওসব বিয়ে টিয়ে…..”

আকস্মিক চাঁদ প্রণয়কে টেনে এনে একটা চেয়ারে বসায়।তাকে কিছু বলতে না দিয়েই হিজাবের পাশে থাকা ওড়নাটা নিয়ে প্রণয়ের হাত বাঁ!ধতে আরম্ভ করলেই প্রণয় কপাল কুঞ্চিত করে বলে,

“করছেন কী?”

“চুপ,একদম চুপ!অনেক বেশি বেশি করেন আপনি।আপনার জন্য আমার সমস্ত পরিকল্পনা ভেস্তে যাক তা আমি চাইনা”

“দেখুন আপনি বি….”

প্রণয়ের কথা সম্পূর্ণের পূর্বেই প্রণয়ের হাত বেঁ!ধে তার দিকে ঘেষে দুই হাত দ্বারা প্রণয়ের মুখ চে!পে ধরে চাঁদ বলে,

“হ্যা বিয়ে করে পুরো গোষ্ঠী উদ্ধার করে ফেলবো।আপনি এক নম্বর জামাই না?আরও তিনটা বিয়ে করবো আমি।অতঃপর ছেলেদের মতো চারটা বিয়ে ফরজ করবো।খুশি?এবার চুপ থাকুন তো”

বলেই খানিকটা আরও প্রণয়ের দিকে চেপে আসে চাঁদ।প্রণয়কে নড়তে চড়তে পর্যন্ত দিচ্ছেনা।অতঃপর কাজীর দিকে চেয়ে বলে,

“আংকেল আপনি বিয়ে পড়ানো শুরু করুন।এখন আর কেউ বাঁধা দেবেনা।এই তোমরা জলদি করো তো এই লোককে আর কতক্ষণ ধরে রাখবো আমি?”

প্রণয় এবার খানিক নড়ার চেষ্টা করলে চাঁদ বিরক্ত হয়ে বলে,

“এমন করছেন কেনো?”

প্রণয় চোখের ইশারায় জিজ্ঞেস করে কী হচ্ছে এখানে?চাঁদ দীর্ঘশ্বাস ফেলে মৃদুকন্ঠে বলে,

“সবসময়ের মতো বেশি বোঝা বন্ধ করুন প্রণয়।এখানে অবশ্যই বিয়ে হচ্ছে তবে সেটা আমার নয়।মির ভাইয়া রিদি,উজান আর ইয়ানার”

কপাল কুচকে প্রণয় কিছু বলতে চাইলে চাঁদ প্রণয়ের মুখে রাখা হাতের বাঁধন আরও শক্ত করে বলে,

“একদম চুপ বেশি কথা বলবেন না।চুপচাপ বসে থাকুন এবং যা হচ্ছে হতে দিন”

প্রণয় এবার হালকা নড়ে তার বাঁধা হাত দ্বারা চাঁদের কোমড়ে হালকা টান দিতেই টাল সামলাতে না পেরে আকস্মিক প্রণয়ের উরুর উপর বসে পড়ে চাঁদ।অতঃপর বিরক্ত হয়ে উঠতে নিলেই ওড়নার বাঁধন চট করেই খুলে চাঁদকে টেনে নিজের কোলের উপর বসাতেই চাঁদের শরীরের প্রতিটা লোমকূপ তৎক্ষনাৎ দাঁড়িয়ে যায়,দাড়ায় প্রণয়ের নিজেরও।হৃদয় থমকায় প্রণয়ের।চাঁদের নিশ্বাস যেনো গলার কাছে এসে আটকে গেছে,বাইরে নির্গত হচ্ছেনা আর!কি দমবন্ধক!র পরিস্থিতি।হাসফাস লাগছে।সেইসাথে মাত্রাতিরিক্ত লজ্জাও সে পাচ্ছে।যার দরুন প্রণয়ের মুখে দিয়ে রাখা হাতদুটো আলগা হয়ে আসে।এবং প্রণয় সুযোগ বুঝে চাঁদের হাত সরিয়ে চাঁদের কাধের উপর নিজের থুতনী রেখে কানে কানে ফিসফিসিয়ে বলে,

“কার বিয়ে হচ্ছে কার হচ্ছেনা তাতে কিছুই যায় আসেনা।আপনি কেবল আমার থাকেন তাতেই চলবে”

প্রণয়ের ফিসফিসানো সহ উষ্ণশ্বাস চাঁদের ঘাড়ে পড়তেই কিঞ্চিৎ নড়ে চড়ে উঠে সে,চোখজোড়া বন্ধ করে ঘনঘন শ্বাস নিতে গেলেই শুনতে পায় প্রণয়ের পুরোনো প্রেমময়ী এক বাক্য,

“সে যখন লজ্জায় লালরাঙা হয়,প্রণয় হয় তখন সবচাইতে বেহায়া,নির্লজ্জ পুরুষ!”

প্রণয়ের ফিসফিসানো কন্ঠস্বর,সেইসাথে উষ্ণশ্বাসের গতি যত দ্রুত হচ্ছে ততই শ্বাসরুদ্ধ হয়ে আসছে চাঁদের।শরীর অসাড় হয়ে এসেছে।নড়তে চড়তে পারছেনা,স্থির হয়ে যেনো জমে গিয়েছে চাঁদ।চোখজোড়া বন্ধ করে কেবলই ঘনঘন শ্বাস নিচ্ছে সে।
.
.
.
.
.
.
.
.
.
.
.
.
.
.
.
.
.
.
.
.
কাজী অফিস থেকে সকলেই হাসিমুখে বের হলো।তবে চুপচাপ কেবল প্রণয় আর চাঁদ।রিদিও বেশ জড়োসড়ো হয়ে চাঁদের সাথেই সেঁটে আছে।তা দেখে মৃদু হেসে চাঁদ বলে,

“এবার ভাবিকে ছেড়ে বরের কাছে যাওতো রিদু।আর মিরাপুকে নিয়ে টেনশন করোনা।বেশ ভালো ননাস পেয়েছো।তোমার শ্বশুর-শাশুড়িও আমার শ্বশুর-শাশুড়ির ন্যায়ই যথেষ্ট ভালো।সুখী এক পরিবার পাবে।এবার মিরাপুর সাথে যাওতো দেখি।আর কোনোপ্রকার চিন্তা করবেনা।সব ঠিক হবে।আমি ঠিক করে দেবো”

বলেই রিদিকে মিরা আর মিরের মাঝ বরাবর দাড় করিয়ে এগিয়ে যায় উজান আর ইয়ানার দিকে।অতঃপর ইয়ানার মাথায় হাত বুলিয়ে বলে,

“তুমিও একদম টেনশন করবেনা।নির্দ্বিধায় চৌধুরী বাড়ি যাও।সেখানে কেউই তোমায় পর করবেনা।আপন করেই নেবে।যেমনভাবে আমায় মেয়ে করে নিয়েছিলো ঠিক সেভাবে তোমায়ও নেবে।একদম চিন্তা করবেনা।রিহাপু তুমি ওদের সাথে যাও।পরে যদি সমস্যা হয় আমায় কল দিও”

রিহা জিজ্ঞেস করে,

“তুমি কোথায় যাচ্ছো?হাসপাতালে?”

“না,একটু কাজ আছে যাও তোমরা।জলদিই ফিরবো”

“ঠিক আছে সাবধানে যেও”

সকলের থেকে বিদায় নিয়ে হুট করেই মেয়েটা কোথায় যাচ্ছে?এই মেয়ের সাহসের তো কোনো ঠিক ঠিকানা নেই।এরূপ বিভিন্ন জিনিস চিন্তা করতে করতেই প্রণয়ের নজর থেকে অনেকখানি দূরে চলে গিয়েছে চাঁদ।বাকিরাও যারযার গন্তব্যে ছুটে চলেছে।আর প্রণয় ভাবতে ব্যস্ত,এই মেয়েকে আর একা ছাড়া ঠিক হবেনা।কখন কোন বিপদে পড়ে ঠিক নেই।বউ তার দুশমন তো কম জোটায়নি।আবার সামনে চলে এসেছে মিডিয়ারও।বিভিন্ন দিক থেকেই চাঁদের সংকটের আশা।তাই প্রণয় ফের পিছু নিলো চাঁদের।অতঃপর ফায়ানের বাসার সামনে আসতেই প্রণয় আড়ালে লুকালো এবং দেখলো চাঁদ ফায়ানের বাসার ভেতরেই ঢুকছে।কিন্তু ফায়ানের সাথে তার কী কাজ?অরণ?অরণ প্রাসঙ্গিক কিছু?ফায়ানও এখন অরণের সাথে দেখা করতে দেয়না প্রণয়কে।তাই বেশ হতাশ ভঙ্গিতেই চাঁদের যাওয়ার দিকে কেবল চেয়ে রইলো সে।কিছুক্ষণ সে পানে চেয়ে থেকে দীর্ঘশ্বাস ফেলে হাটা ধরলো হাসপাতালের দিকে।

ফায়ানের বাসার কাছে এসে কলিংবেল চাপতেই ফায়ানের মা এসে দরজা খুলে দিতেই চাঁদ তার সাথে সালাম আর কুশল বিনিময় করে ভেতরে ঢুকেই ফায়ানের রুমে আসে যেখানটায় অরণকে রাখা হয়েছে।ফায়ান চুপচাপ বসে আছে তার রিডিং টেবিলে,জানালাপানে মুখ করা।মৃদু কেশে চাঁদ ডাকে,

“ফায়ান?”

চাঁদের কন্ঠ শুনে সবসময়কার ন্যায় এবারও হৃদস্পন্দন তীব্র হলো ফায়ানের।সেও খানিক কেশে ঘনঘন শ্বাস মুখ দ্বারা নির্গত করে পিছু ঘুরে চাইলো।অতঃপর হাসিমুখে বললো,

“আরেএ চাঁদ?শুনলাম তুমি নাকি দুইজোড়া বিয়ে দিয়ে এলে?তা তাদের বরণ টরণের ব্যবস্থা না করে এখানে যে?”

“এসেছিতো কাজেই”

বলতে বলতেই অরণের পাশে গিয়ে দাড়ালো চাঁদ।আর ফায়ান জিজ্ঞেস করলো,

“কী কাজ?”

“অনেক কাজ বাকি ফায়ান।তন্মধ্যে অন্যতম হচ্ছে অরণের সার্জারী।আমার বেশ ভয় লাগছে।আদোতে পারবো কিনা!”

“সেজন্যইতো বলছি দু’একটা সার্জারী করে ফেলো।তাতে করে শেখাও হলো”

“আর তো কয়েক মাসই বাকি তাইনা?অরণকে দিয়েই শুরু করতে চাচ্ছি।আর আমার বিশ্বাস আমি কাউকে নিরাশ করবোনা তবে তোমার বারবার নিষেধাজ্ঞায় ভয়ও লাগছে”

“নিষেধ করছি কারণ এরকম কেস এর আগে আমি কখনোই দেখিনি।আই মিন সার্জারী তো আমিও করেছি অনেকগুলোই কিন্তু অরণ ভাইয়ার মতো কেস কোনোদিনই চোখে পড়েনি।আর যেখানে বিদেশ নিয়েও ভাইয়াকে ঠিক করা যায়নি বাংলাদেশে রেখে কীভাবে কী?”

অরণের ইসিজি রিপোর্ট দেখতে দেখতেই চাঁদ ফায়ানকে জিজ্ঞেস করে,

“বিদেশ নিয়েছে?কিন্তু কবে?”

“ওহ হ্যা তোমাকে বলা হয়নি।আমি যখন ফাইনাল ইয়ারে উঠি তখন একবার নাকি অরণ ভাইয়ার ফ্যামিলি তাকে ক্যানাডা নিয়েছিলো।সেখানে ডাক্তাররাই নাকি বলেছে বডি ডে*ড বাট হার্ট আর ব্রেইন নাকি রানিং।তারা একচুয়ালি কী বলেছে আমি তখনও কিছু বুঝিনি।এখনও মাথার উপর দিয়ে যায় সব”

চাঁদ কপাল কুচকে ইসিজি রিপোর্ট পাশের টেবিলে রেখে ফায়ানের পানে চেয়ে বলে,

“ক্যানাডা?ক্যানাডা নিয়েছিলো?কতদিন থেকেছিলো সেখানে?”

“প্রায় মাস দুয়েকের মতোই নাকি ছিলো”

“তুমি এসব জেনেছো কার থেকে?”

“অরণ ভাইয়ার বোনের থেকে”

“অরিন?”

“হ্যা”

“অরিন এখন কোথায় আছে?”

“পুলিশ ফোর্সে আছে আপাতত”

“ওরাও কি আমায়ই দায়ভার দেয় অরণের এ দশার জন্য?”

“অরণ ভাইয়ার সাথে কী হয়েছে কে করেছে এসবকিছু প্রণয় ভাইয়ার বন্ধুমহলের বাইরে আর কেউই কিছু জানেনা।বাকিদের কী বলেছে জানিনা তবে আমি জানতাম ভাইয়ার এক্সিডেন্ট হয়েছিলো।আর তোমার মনে হয়না কেউ যদি কিছু জানতো তোমায় তন্য তন্য করে খুঁজতো?আর অরিনও অবশ্যই তোমায় ছেড়ে দিতোনা অ্যাজ আ পুলিশ অফিসার”

কিছুক্ষণ ভেবে চাঁদ বললো,

“হিম তা ঠিক বলেছো।ওয়েইট!অরিন পুলিশ?তার মানে অরিনের হেল্প নিতে পারবো?”

“কীসের জন্য?”

“অরণের অপরাধী খুঁজতে”

“তার জন্য সেদিন কী হয়েছিলো সবটাই জানাতে হবে।তুমিতো আমায়ই কিছু বলোনা।না বলেছো অন্য কাউকে।অরিনকে বলবে?”

কিছুক্ষণ ভেবে চাঁদ বলে,

“আচ্ছা ওসব রাখো।ক্যানাডা ক্যানাডা‌!কোথায় যেনো শুনেছি?কে যেনো বলেছিলো ক্যানাডা সম্পর্কে”

“কে বলেছে?”

“মনে পড়ছেনা।বাট হার্ট আর ব্রেইন যদি রানিং থাকে বডি কী করে ডে*ড হয়?আর বডি ডে*ড হলে এগুলো রানিং কীভাবে থাকে?আর অরণের ইসিজি রিপোর্টও মোটামুটি ঠিকঠাক আছে।যেই পর্যন্ত একজনের হার্ট চলছে হি অর শি কান্ট ডায়।বডিও ডে*ড হতে পারেনা।তোমরা এত বড় বড় ডাক্তার।তাছাড়া সে?সে নাকি আবার কার্ডিয়াক সার্জন তো এসব প্যাঁচঘোচ ধরতে পারলোনা?নাকি শুধু আমায় কীভাবে শাস্তি দেবে সে চিন্তায় থাকতো?”

“সেসব বাদ দাও।আপাতত তোমার পড়াশুনায় মন দাও।আর তুমি কি বাদ বাকি পড়তে ক্যানাডা যাবে?অর অন্য কোনো দেশে?”

“আগে নিজের দেশের পড়াশুনা শেষ করে নেই।ওহ তোমায়তো বলা হয়নি খুব শীঘ্রই বোধহয় সার্জারীর টুকিটাকি করা পড়তে পারে”

“কীভাবে?”

“ইপ্সির শ্বশুরবাড়ি পাবনা না?”

“হ্যা”

“সেখানে আমার একটা কাজ আছে তাছাড়া পাবনা মেডিকেলেই যাওয়া হচ্ছে সার্জারীর জন্য”

“কবে যাবে?”

“এখনও ঠিকঠাক হয়নি।দেখি”

“মির ভাইয়া আর রিদির বিয়ে বিষয়টা বুঝলাম না চাঁদ?”

“বুঝাচ্ছি।কিছু কারণবশত রিদিকে মেডিকেলে একা দিতে পারছিলাম না।তাই বেশ ভেবেচিন্তেই মির ভাইয়ার সাথে আলোচনা করেছি এবং বিয়েটা দিয়েছি।রিদি এবার ভয়ডরহীন ভাবেই মেডিকেল আসবে যাবে”

“মেডিকেলে ভয় কীসের?”

“সেসব বাদ দাও”

“কিন্তু মির ভাইয়া?”

“ইম…..বাদ দাও সেসব।আমার কাছে মনে হয়েছে বিয়েটা দিলে বেটার।ভাইয়াতো ডাক্তারই,রিদিকে খাওয়াতে পড়াতে পারবেনা এমনও তো না।হতে পারে অনেকেই আমার উপর ক্ষুব্ধ থাকতে পারে কিন্তু আমি মনে করি এবার অন্তত ভুল ডিসিশন নেইনি”

“এর আগে নিয়েছিলে নাকি?”

“কতই তো নিলাম!”

“ফর এক্সামপাল?”

“প্রণয়কে ভালোবাসা ছিলো আমার জীবনের বৃহৎ ভুল।তার চাইতেও বড় ভুল ছিলো……..”

“হিম?”

“ছিলো…….ছিলো একটা।আসি এখন আমি”

“কী ভুল বললেনা তো?”

“যে ভুলের মাশুল আজ অব্দি দিচ্ছি আমি সে ভুল”

To be continued……

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here