আবার_প্রেম_হোক #নুসরাত_জাহান_মিম ৮৬.

0
814

#আবার_প্রেম_হোক
#নুসরাত_জাহান_মিম

৮৬.
মাস পাঁচেক পর,
অপারেশন থিয়েটারের বাইরে দাঁড়িয়ে আছে চাঁদ।এসেছে মিনিট দশেক পূর্বেই।এখনো প্রণয় আর ফায়ানকে আসতে না দেখে পাশে থাকা এক চেয়ারে গিয়ে বসে লম্বা শ্বাস ফেলে চোখজোড়া বন্ধ করে মনে মনে বেশ কয়েক ধরণের সূরাহ পড়তে আরম্ভ করে সে।অতঃপর স্ট্রেচারের শব্দ শুনতে পেয়ে চোখ খুলে বসা থেকে দাঁড়িয়ে পড়ে চাঁদ।সামনে তার প্রণয় আর ফায়ানকে দেখে দীর্ঘশ্বাস ফেলে তাদের সঙ্গে ওটির ভেতর ঢুকে দরজা আটকে দেয়।ভেতরে এসে তিনজনই তাদের সবুজ রঙা ডাক্তারী পোশাক পরিধান করে মুখে মাস্ক এবং হাতে গ্লাভস পরতে আরম্ভ করে।পরা শেষে প্রণয় অরণের বাহুর কাছ ঘেষে দাঁড়িয়ে পর্যবেক্ষণ করতে লাগে সকলকিছুই।ফায়ান সর্বপ্রথম অরণের মুখে লাগানো অক্সিজেন মাস্কটা খুলে পাশে রাখে আর চাঁদ একটা ইঞ্জেকশনে ঔষধ ভরে পুশ করে অরণের ঘাড়ের কাছটায়।ইঞ্জেকশন পুশ করার পর চাঁদ ফায়ানকে ধীরকন্ঠে বলে,

“আমার বেশ ভয় লাগছে ফায়ান”

হাতে ধা!রালো এক ছুরি নিতে নিতে ফায়ান বলে,

“চিন্তা করোও না।দেখি কী হয় এবং আল্লাহ কী করেন।তিনি অবশ্যই পরম করুনাময়।আর যেহেতু অরণ ভাইয়া কখনো কারো ক্ষ*তি করেননি অবশ্যই আল্লাহও তার ক্ষ*তি করবেন না”
.
.
.
.
.
.
.
.
.
ঘন্টা দুয়েক পর চাঁদ যখন অরণের ব্রেইনের পাশ ঘেষে কাপা কাপা হাতে কে!চি নিতে লাগে তখনই প্রণয় গম্ভীরভাবে বলে,

“ডোন্ট ওরি চাঁদ।বি স্ট্রং!আমি জানি,এটা কেবল আপনি এবং আপনিই পারবেন।আপনি অবশ্যই পারবেন”

প্রণয়ের কথা শুনে তার পানে না তাকিয়েই লম্বা শ্বাস নিয়ে নিজেকে ফের প্রস্তুত করে অরণের মাথার উন্মুক্ত খু*লির উপর দিয়ে ভেতর দিকটায় কেচি প্রবেশ করিয়ে ছোট্ট কিলটা বেশ সাবধানতার সহিত আস্তে করে বের করে শব্দ করেই স্টিলের প্লেটে রাখে চাঁদ।অতঃপর ঘনঘন শ্বাস নেয় সে।লোমকূপসমূহ দাঁড়িয়ে গিয়েছে তৎক্ষণাৎ,হৃদস্পন্দন তীব্র থেকে তীব্রতর হয়েছে।চোখে অশ্রুরা ভীড় জমিয়েছে যেনো।নিজেকে সামলে নাক টেনে ঢোক গিলে ফের অপারেশনে ধ্যানমগ্ন হয় চাঁদ।ফায়ান কিছুক্ষণ খুলির ভেতর দিকটায় তাকিয়ে কিছু একটা পর্যবেক্ষণ করে নিজেও অপারেশনে মনোযোগী হয়।

আরও ঘন্টা দেড়েক পর শেষ সেলাইটা অরণের মাথায় দিয়ে ফোস করে শ্বাস ছেড়ে আঁখি জোড়া বন্ধ করে চাঁদ।টুপ করে তার গাল বেয়ে গড়িয়ে পড়ে দু’এক ফোটা নোনাজলও।আর ফায়ান চাঁদের দিকে তাকিয়ে তার পরিস্থিতি বুঝতে পেরে নিজেই অরণের মাথা পুরোটা ব্যান্ডেজ করতে তৎপর হয়।মিনিট দুয়েক পর চোখ খুলে অরণের পানে চেয়ে চাঁদও ফায়ানের সাহায্য করতে আরম্ভ করে।এবং ব্যান্ডেজ শেষে আরও কিছু কাজ সেরে ধপ করেই ফ্লোরে বসে পড়ে চাঁদ।বসে ঘনঘন শ্বাস নেয় সে।তাকে বসতে দেখে ফায়ান তার নিকট এগোনোর পূর্বেই প্রণয় চাঁদের দুই বাহু ছুয়ে তাকে ধরে উঠাতেই চাঁদ প্রণয়কে জাপটে ধরে কাপা কাপা কন্ঠে বলে,

“আ….আমা….আমার ভয় লাগছে প্রণয়।যদি অরণের জ্ঞান…..”

“হিশ!কিচ্ছু হবেনা।সব ঠিক হবে।চিন্তা করেনা”

“বেশ ভয় লাগছে প্রণয়।আমি জানিনা অরণের জ্ঞান ফিরতে ঠিক কতদিন লাগবে।যদি আজকের মধ্যে অথবা কালকে মধ্যে না ফের……”

চাঁদ আর প্রণয়ের দিকে একপলক চেয়ে থেকে দৃষ্টি অন্যপানে করে ফায়ান বলে,

“চিন্তা করোও না।এরকম কেসে সাধারণত দেরিতেই জ্ঞান ফেরে।আর তেমন কোনো প্রবলেমতো হয়নি।তুমিও সবটা বেশ সাবধানে করেছো।আশা করছি ভাইয়ার দ্রুতই জ্ঞান ফিরবে তবে একদিনের মধ্যে ফেরার আশা করাটা হয়তো অনুচিতই।কেনোনা এটা ছিলো বেশ সিরিয়াস ধরণের কেস”

প্রণয়ের বুক থেকে মুখ সরিয়ে ফায়ানের পানে চেয়ে চাঁদ বলে,

“আশা করছি সব ঠিক হবে ফায়ান”

“হিম চলো এখন ভাইয়াকে অবজারভেশনে রাখা প্রয়োজন”

“চলো”

বলেই তিনজনে একইসঙ্গে অরণকে সাবধানতার সহিত এক্সট্রা অবজারভেশন রুমে রাখতে নেয়।যেটা প্রণয় নিজ উদ্যোগে এই কয়েক মাসে হাসপাতাল কতৃপক্ষকে বলে ব্যবস্থা করিয়েছে।

বিকেলবেলা,
অবজারভেশন রুমে অরণের পাশে বসে আছে কেবল প্রণয়।চাঁদ আর ফায়ান গিয়েছে অন্য আরেকটা অপারেশন করতে।আর প্রণয় এক সেকেন্ডের জন্যও অরণের কাছ হতে সরেনি প্রায় ঘন্টা দুয়েকের বেশি সময় ধরেই।সে চুপচাপ নিষ্পলক অরণের পানে চেয়ে আছে।অতঃপর দীর্ঘশ্বাস ছেড়ে অরণের দিকে খানিক ঝুঁকে বলতে আরম্ভ করে,

“আমায় ক্ষমা করে দিস মামা!না জেনে কত ভুলই না করেছি?সবচাইতে বেশি ভুলটা বোধহয় আমি তোর সাথেই করে ফেলেছি।তেমন যদি না করতাম হয়তো আজ তোর জায়গায় আমি থাকতাম।এতটা কষ্ট তোকে পেতে হতোনা।তোর ক্ষমা ইহ জীবনে আদোতে পাবো কিনা জানিনারে!তবে আমার বিশ্বাস তুই আবার আগের ন্যায় হবি।হয়তো আবারও তোকে প্রাণ ভরে শ্বাস নিয়ে হাস্যোজ্জ্বল মুখশ্রী সহিত চলাফেরা করতে অথবা তোর হাসি দেখার সৌভাগ্য আমার জুটবেনা।জানিস?এই কয়েক মাসে খুব করে ভেবেছি।অনেক রকমের চেষ্টা করেছি পশুগুলোকে শা*স্তি দেবার।তবে যেই শাস্তিই তাদের দেওয়া হোক না কেনো কমই হয়ে যায় মামা!কতবার যে এই একটা ডিসিশন নিতে গিয়ে হিমশিম খেয়েছি।চাঁদের কাছে থাকার লোভ সামলাতে পারিনি।তাকে পাশে পাবার তীব্র আকাঙ্ক্ষা দুমড়ে মুচড়ে দিতে পারিনি।তবে তার সাথে হওয়া অমা!নবিক নির্যা!তন আর ধুঁকে ধুঁকে রোজ তাকে একবার করে ম!রতে দেখেছি দোস্ত।জানিস তুই?সেদিন চাঁদের সাথে হওয়া নি!র্ম!ম অত্যাচার সচক্ষে দেখেছি আমি।কি যে কষ্ট হয়েছে!তার করা আহাজারি সমূহ যখন কানে গুজেছে একবার করে আমি নিজেও ম*রে গিয়েছি ভাই।কী করে ঐ দানবটা পেরেছে আমার ফুলের মতো পবিত্র লালগোলাপটাকে এতটা অত্যাচা!রিত করতে?তার কি একটুও বুক কাপেনি রে তারই মেয়ের বয়সী একটা মেয়েকে?ছিহ!আর নোংরা সেই মহিলাটা!তাকে খোঁজার এত চেষ্টা করেছি কিন্তু পাইনি।কোনোক্রমেই পাইনি দোস্ত।কোথায় পালিয়েছে বলতো?একজন মেয়ে হয়ে কেউ কী করেইবা আরেকজনের সাথে এতটা জঘন্যরকম কাজ কর‍তে পারে?কী ভাবছিস?এতকিছু কীভাবে জানলাম অথবা বুঝলাম?শুনেছিতো চাঁদের মুখেই সবটা।তবে উপলব্ধি তেমনভাবে করা বোধহয় সেদিন হয়নি।কিন্তু কয়েক মাস আগেই একটা ভিডিও তে দেখেছি।সিসি ক্যামেরায় ধারণকৃত ভিডিও ছিলো।জানিস!সেসব দেখে আমার আত্মা নিজেইতো বারকয়েক ম*রে গিয়েছিলো।আমার চন্দ্র টার কী অবস্থা হয়েছে চিন্তা করলেই আমার দম বন্ধ হয়ে আসে দোস্ত।তুই তো কম চেষ্টা করিস নি রে।তোকেও তো ওরা ছাড়েনি।কি নি!র্ম!মভাবে তোদের উপর অত্যাচার করেছে।এসব আমি কস্মিনকালেও ভুলতে পারিনা,পারিনি এবং ভুলতে চাইও না।আমার নিষ্পাপ ফুলের গায়ে হাত দিয়ে তারা যেই পাপ করেছে সেই পাপের মাশুল কি তারা দেবেনা?এতই সহজ তা থেকে পরিত্রান পাওয়া?ইহিম!অন্তত রুহায়ের প্রণয় তা হতে দেবেনা।তাদের ধ্বংসলীলাকে ধ্বংস করে আমি নিজেই ধ্বংস হয়ে যাবো।শুধু আফসোস রয়ে যাবে আমার চাঁদটার সাথে ছোট্ট এক সংসার গড়ে তোলা আমার হবেনা।তাকে একবারের জন্যও ‘ভালোবাসি’ শব্দটা আমার বলা হলোনা।আর না তোর কাছে আমার আর মাফ চাওয়া হলো।তবে আমি বিশ্বাস করি তুই আমায় অবশ্যই ক্ষমা করবি দোস্ত।কি করবি না?আমি জানি করবি।কতকিছু আমার চাঁদটাকে বলা বাকি রে!অথচ আমি বলতে পারছিনা।আমি চাইনা সে আরেকবার ভেঙে পড়ুক।ভেঙে গুড়িয়ে যাক।আমার চাঁদটাকে তুই অরিনের মতোই স্নেহ করে দেখে রাখিস দোস্ত!তোদেরতো কত ভুলই বুঝেছি।তবে আমায় মাফ করে আমার বউটাকে ছোট্ট বোনের ন্যায় আগলে রাখিস।আমার অজান্তে তাকে এতবার বাঁচিয়েছিস,আমার বিশ্বাস আমি না থাকলেও তাকে তুই অযত্নে থাকতে দিবিনা।আমার এই সিদ্ধান্ত যতটা সঠিক ঠিক ততটাই বেঠিকও।বেঠিক কেনো জানিস?আমার চাঁদ,আমার পরিবার এবং তুই যখন জানবি একদমই সহ্য করতে পারবিনা।এবং এর পরিণতি জেনেও আমি পিছু হটতে পারছিনা,হবোও না।শেষবারের ন্যায় আমায় মাফ করে দিস?আর মিরাকে যত্নে রাখিস,মেয়েটাকে খুব করে ভালোবাসিস।নিজের জন্য না হলেও ওর জন্য ওকে তুই ভালোবাসিস।নিজেরও যত্ন নিস,আমি তোকে ভালোবাসি বন্ধু”

অতঃপর অরণের ব্যান্ডেজ করা মাথায় হাত রাখতে গিয়েও রাখেনা প্রণয়।লম্বা শ্বাস ফেলতেই এক ফোটা অশ্রু অরণের গালে গড়িয়ে পড়ে।সঙ্গে সঙ্গেই প্রণয় তা মুছে ফেলে।কেউ কি দেখেছে?দেখেনি।অতঃপর ফোস করে শ্বাস ফেলে চুপচাপ বসে থাকে অরণের পাশেই।বুকে অসহনীয় য!ন্ত্রণা হচ্ছে।এই যন্ত্রণা কি নিজের প্রা!ণ হারিয়ে ফেলার?নাকি তার প্রাণের চেয়েও অত্যধিক আকাঙ্ক্ষিত প্রাণেশ্বরীকে হারিয়ে ফেলার?জবাব মেলেনা প্রণয়ের।সে একধ্যানে চেয়ে থাকে ফ্লোরপানে।

মিনিট পাঁচেকের মাঝেই চাঁদ আর ফায়ান অবজারভেশন রুমে এসে হাজির হয়।চাঁদ হাতে খাবার নিয়ে প্রণয়ের পাশে এক চেয়ার টেনে আরেকটা চেয়ার ফায়ানকে দিয়ে নিজেও বসতে বসতে প্রণয়কে বলে,

“কিছু কি খেয়েছেন?এখনও তো খাননি।আসুন একসাথে খাবো”

চাঁদের কথায় তার পানে কয়েক মুহুর্ত চেয়ে থেকে ছোট্ট করেই শ্বাস ফেলে প্রণয় বলে,

“একটা আবদার করি চাঁদ?রাখবেন?”

প্রণয়ের কথা শুনে খাবারের বক্স খুলতে খুলতেই চাঁদ বলে,

“আবদার কেনো করবেন?আপনি বলুন আমি অবশ্যই রাখবো”

অতঃপর একটা বক্স ফায়ানের দিকে এগিয়ে দিয়ে আরেকটা প্রণয়ের দিকে দিতে নিলেই প্রণয় বলে,

“খাইয়ে দেবেন প্লিজ?হাতটা বেশ ব্যথা করছে”

কপাল কুচকে চাঁদ জিজ্ঞেস করে,

“হাতে কী হয়েছে?”

“বিশেষ কিছুনা।খাওয়ার অজুহাত মাত্র”

লম্বা শ্বাস ফেলে চাঁদ এক লোকমা ভাত প্রণয়ের মুখ বরাবর নিতেই খানিক হেসে প্রণয় তা সাদরে গ্রহণ করে।আর ফায়ান এক পলক সে পানে তাকিয়ে দৃষ্টি বক্সের পানে দিয়ে বেশ সময় লাগিয়েই মুখের খাবার চিবিয়ে ঢোক গিলে।

খাওয়া শেষে প্রণয়ের ঠোটজোড়া পানি দ্বারা ধুয়ে গায়ের ওড়না দিয়ে মুছে দেয় চাঁদ।আর প্রণয় কিয়ৎক্ষণ চুপচাপ বসে চেয়ার থেকে উঠতে উঠতে চাঁদকে বলে,

“আমি তাহলে বের হই চন্দ্র।আর শুনুন এক মিনিটের জন্যও অরণকে একা ছাড়বেন না।আমি চাইনা এত কষ্টের পর ফের কোনো অঘ!টন ঘটুক”

“কোথায় যাবেন?আপনিও না থাকবেন?”

“একটু কাজ পড়ে গেছে।যেতেই হবে”

চেয়ার থেকে দাঁড়িয়ে চাঁদ বলে,

“কী কাজ?”

অন্যপানে চেয়ে দীর্ঘশ্বাস ফেলে প্রণয় বলে,

“বেশ জরুরী কাজ চন্দ্রময়ী।যা না করলে ম*রেও হৃদয় দগ্ধতায় পু*ড়বে”

কপাল কুচকে চাঁদ বলে,

“কী বললেন?আজেবাজে বকবেন না একদম!রোজকার আপনার এত ভারী ভারী শব্দ আমার বুঝে আসেনা।আপনি জলদি আসবেন।আমি অত কিছু বুঝিনা”

বলেই ঠোট ফুলিয়ে দু’হাত বগলদাবা করে অন্যপানে চায় চাঁদ।তা দেখে মৃদু হেসে চাঁদকে নিজের সাথে মিশিয়ে প্রণয় বলে,

“এখনও আপনাকে সেই অষ্টাদশী ই লাগে চন্দ্র যার প্রেমে প্রথমবারের ন্যায় পড়ে ঠিক এভাবেই অনাকাঙ্ক্ষিতভাবে চুমু খেয়েছিলো আপনারই গম্ভীর মানব”

বলেই আলতো করে চাঁদের গালে চুমু খেয়ে চাঁদের চোখে চোখ রেখে ভরাট কন্ঠে ফের প্রণয় বলে,

“আপনি কেবল আমার থাকবেন তো চন্দ্রময়ী?”

চোখ ছোট ছোট করে প্রণয়ের পানে চেয়ে কপাল কুচকে চাঁদ বলে,

“কীসব বলছেন?আমিতো আপনার ই”

চাঁদের কথা শুনে বেশ গাঢ় করে চাঁদের কপালের মাঝ বরাবর চুম্বন এঁকে দিয়ে প্রণয় বলে,

“হ্যা।আমার চন্দ্র,আমার চন্দ্রময়ী আমার একান্ত লালগোলাপ কেবল আমার জন্যই ফোটে”

বলেই চাঁদকে চেয়ারে বসিয়ে চলে আসতে নিলে প্রণয়ের কব্জি ধরতেই পিছু ঘুরে চায় সে।অতঃপর চাঁদ বলে,

“জলদি আসবেন কিন্তু!”

লম্বা শ্বাস ফেলে গম্ভীরভাবে প্রণয় বলে,

“হ্যা শীঘ্রই আসবো”

বলেই ফায়ানের পানে চেয়ে বলে,

“একটু বাইরে আসোতো আরফিদ”

প্রণয়ের কথা শুনে তার সাথে ফায়ানও অবজারভেশন রুমের বাইরে চলে আসে।এবং আসতেই প্রণয় দীর্ঘশ্বাস ছেড়ে বলে,

“চাঁদ আর অরণের দায়িত্ব আমি তোমায় দিয়ে গেলাম আরফিদ।তাদের সুরক্ষিত রাখার সমস্ত দায়িত্ব এখন থেকে তোমার।আর আমি জানি তুমি সেটা করবে”

“এখন থেকে মানে?”

“আমার একটু কাজ আছেতো আসতে আসতে দেরি হবে অথবা আজ নাও আসতে পারি সেজন্যই বলছি বুঝেছো?চাঁদকে বললে এখনই যেতে দিতোনা।তাই তোমায় বলছি।তাকে একটু বুঝিয়ো ঠিক আছে?”

“আচ্ছা চিন্তা করবেন না।আছি আমি”
.
.
.
.
.
.
.
.
.
.
.
.
.
.
.
.
.
.
সন্ধ্যা নেমে গিয়েছে।সূর্য ঢলে পড়ে গগণ হয়েছে অন্ধকারাচ্ছন্ন।সময় তখন রাত ঠিক আটটা।’রাজ ভিলা’ র সামনে তীক্ষ্ণ দৃষ্টি নিক্ষেপ করে চেয়ে আছে প্রণয়।পাশে আছে আহিনও।যেইনা প্রণয় ভেতরে যেতে নেয় অমনি আহিন তার হাত ধরে বাঁধা দিয়ে বলে,

“ভেতরে কেনো যাচ্ছিস?কার না কার বাড়ি”

“কার না কার বাড়ি মানে?এটা তোর বাবার সেই ভিলা”

“উপরে দেখ ‘আদিল ভিলা’ লেখা।’রাজ ভিলা’ নাতো।ভালো করে দেখ।বলেছিলাম না বিক্রি করেছে?”

“তোর কি চশমা প্রয়োজন?”

কপাল কুচকে আহিন বলে,

“চশমা কেনো লাগবে?”

“ভালো করে দেখ,দেয়ালের পাশের রঙ এবং চুন খসে আছে।ক’দিন আগেই যে এর নাম বদলানো হয়েছে বোঝাই যাচ্ছে।আর তুই বলেছিলি বারো না তেরো বছরের কথা।তাহলে কেনোই বা এটা এরকম থাকবে?শোন,সেদিন সেই জেলার তোর বাবাকে সবটা জানিয়েছে বলেই তোর বাবা ‘রাজ ভিলা’ থেকে এই ত্রাসের মহলকে ‘আদিল ভিলা’ বানিয়েছে।যাতে করে কেউ সন্দেহ না করে।বুঝেছিস?এখনও বিশ্বাস হচ্ছেনা তাইনা?সেজন্যই এনেছি।এবার মুখ ঢাক আর ভেতরে চল।গেলেই দেখতে পাবি তোর বাবার ত্রাসত্ব”

বলেই দু’জনে একইসঙ্গে কালো কাপড় দিয়ে মুখ ঢেকে ‘রাজ ভিলা’ র ভেতরে প্রবেশ করে।এবং ভেতরে ঢুকতেই গা গুলিয়ে আসে আহিনসহ প্রণয়ের।তবুও দাঁতে দাঁত চেপে তারা ভেতরে এগোয়।প্রণয় তীক্ষ্ণ দৃষ্টিতে সবকিছু পর্যবেক্ষণ করতে লাগে।এবং আশপাশে নজর বুলিয়ে কাকে যেনো খোঁজে সে।অতঃপর আচানক বেশ অশ্লীল পোশাক পরহিতা এক অল্পবয়সী মেয়ে পাশ ঘেষে দাড়াতে চাইলেই চট করে সরে দাঁড়ায় সেখান হতে।এবং আহিনকে নিয়ে পায়ের উপর পা তুলে বসে থাকা এক বয়স্ক মহিলাকে দেখে তার দিকে ধা!রালো দৃষ্টি দিয়ে এগিয়ে আসে।এবং মনে পড়ে এই সেই মহিলা যাকে সে রেকর্ডিং এ দেখেছে চাঁদকে টেনে ধরে রাখতে।গা শিরশিরিয়ে ঘিনঘিন করে উঠে নিমিষেই।পরক্ষণেই পাশে বসে থাকা কাশেম বাবুর্চিসহ সকলকে দেখার পরেও আম্বিয়ারূপী মেয়েটাকে মিনিটের পর মিনিট খুঁজে চলে তার নেত্রদ্বয়।তবে সে বরাবরই ব্যর্থ।এবং যখন সে আশপাশে নজর বুলাচ্ছিলো তখনই মাহতিম তার সামনে আসতেই গা তার ফের রি রি করে উঠে।বর্ব!র পশুগুলোকে দেখে র*ক্ত তার কেবল টগবগাচ্ছে।তবুও নিজেকে যৎ স্বাভাবিক রেখেছে।মাহতিম তাদের সামনে এসেই জিজ্ঞেস করে,

“কোন পার্টি?আর কয়ঘন্টার মা*ল লাগবে?”

মাহতিমের ঠিক মুখ বরাবর এক দলা থুতু নিক্ষেপ করতে ইচ্ছা হয় প্রণয়ের।কিন্তু নিজেকে যথেষ্ট স্বাভাবিক রাখে সে।তার বদলে জবাব দেয় আহিন,

“মা*লতো লাগবো মিঞা যেইটায় অনেক্ক্ষণ চালাইবার পারবো!মাগার এইহানে সবচাইতে সেরা মা*ল টা কেঠা?”

মাহতিমের প্রশ্ন,

“নতুন নাকি?”

“হ,এক বন্ধু কইছে এইহানে আইলে কলিজা ঠান্ডা হইবো।তো আর নিজেগো আটকাইবার পারি নাইক্কা”

গালে হাত বুলিয়ে মাহতিম বলে,

“দাড়ান আমি আসছি”

বলেই সে এগিয়ে যায় সেই মহিলাটার কাছে।কিয়ৎক্ষণ কথোপকথন করে এগিয়ে আসে দুইজনই।অতঃপর আহিনের পানে চেয়ে পান চিবুতে চিবুতে মহিলা টি বলে,

“এইখানে সবচাইতে ডিমান্ডেড কম বয়সী ভার্জিন মা*লই আছে।বয়স এই ধরেন চৌদ্দ-পনেরো।চলবো?ট্যাকা কিন্তু অনেক দেওয়া লাগবে সাহেব।সাথে আমাদের টিপ্সও”

প্রণয় কেবলই ঘনঘন শ্বাস নিচ্ছে।আহিন ফের মহিলাটিকে বলে,

“মাইয়া ভার্জিন তো?শিওর?”

“হ মামা।ভার্জিন তো আছেই সাথে বেশ রূপবতীও।বেশ তৃপ্তি পাবেন”
.
.
.
.
.
.
.
.
.
.
.
.
.
.
.
.
ঘন্টাখানেক বাদে ‘রাজ ভিলা’ থেকে বের হয়ে পকেটে এক হাত গুজে হাটতে হাটতেই আহিনকে প্রণয় বলে,

“আর কিছু জানার বাকি আছে?”

লম্বা শ্বাস ফেলে আকাশপানে চেয়ে আহিন বলে,

“আমি এইসবকিছু বন্ধ ঘোষণা করাবো।তালাবদ্ধ করবো সকলকিছু”

আহিনের কথা শুনে তার পানে চেয়ে মুখের কাপড় টান দিয়েই খুলে ফেলে প্রণয় বলে,

“তালাবদ্ধ করলেও হবেনা।আমি চাই এই মহল ভেঙে গুড়োগুড়ো হোক।এবং সবকিছু সিল করে সবাইকে বের করে দিয়ে আজ রাতের মধ্যেই এই ত্রাসের মহলকে নিজ হাতে ভাঙতে চাই আমি।জ্বা*লিয়ে আঙ্গার করবো পাপের এই রাজ্য”

রাত তখন তিনটা,
জনমানবহীন রাস্তার ওপাশে ভেঙে গুড়ো হয়ে যাওয়া প্রতিটা ইটের টুকরোর দিকে চেয়ে আছে প্রণয়।দৃষ্টি তার র*ক্তিম,ধা!রালো।এক ধ্যানে সে পানে চেয়ে আচানক সামনে যায় সেথায়।অতঃপর হাটুতে হাত রেখে খানিক ঝুঁকে ইটের গুড়ো টুকরোগুলোর পানে চেয়ে ঠান্ডাস্বরে বলে,

“আপনার অপূর্ণ কাজ আমি সম্পন্ন করলাম আমার প্রাণেশ্বরী!”

অতঃপর পকেট থেকে এক কাগজের পাতা বের করে তাতে গ্যাস লাইটার দ্বারা আগুন জ্বা*লিয়ে দূরে ছুড়ে মারলো ইটের টুকরো গুলোর উপর।এক মিনিট?দুই মিনিট?ঠিক চার মিনিট সাইত্রিশ সেকেন্ডের মাথায় দাউদাউ করে জ্ব*লে উঠলো অধিরাজ শেখের তৈরি করা পাপের মহলের ভাঙা সেই স্তূপ সমূহ।ঠোট খানিক বাকা হলো প্রণয়ের।দৃষ্টি হলো তীক্ষ্ণ,চাহনী তার প্রখর!কন্ঠনালি কাপলো মৃদু।লম্বা শ্বাস ফেলে খানিক উচ্চশব্দেই হেসে উঠলো প্রণয়।জনমানবহীন সুনসান রাস্তায় রাতের আধারে ভয়ানক শোনালো সেই কণ্ঠধ্বনি!ধূসর বর্ণের সেই বিড়ালাক্ষীজোড়ায় আগুনে পু*ড়তে থাকা ভাঙা মহলের আগুনের ফুলকির প্রতিচ্ছবি ভেসে উঠলো নিমিষেই।রক্তিম সেই দৃষ্টি,বড় বড় কালচে বর্ণের রেশম-কোমল সেই চুলসমূহ উড়লো দমকা হাওয়ায়।বাম হাত দিয়ে ঝাপটা মেরে পরণের সাদা রঙা এপ্রোণ বাতাসে উড়িয়ে দুই হাত প্যান্টের পকেটে গুজে এপ্রোণটাকে স্বেচ্ছায় উড়তে দিয়ে রাতের আধারে নিস্তব্ধ পথ ধরে হাটা ধরলো বিড়ালাক্ষী সেই মানব,উন্মাদ সেই প্রেমিক!হাসির ধ্বনি উচ্চ হলো ক্ষণেই।ধুপ!ধাপ!ধুপ ধাপ!ধুপধাপ সেই পদধ্বনি তীক্ষ্ণ হলো যেনো।

To be continued……

[বিঃদ্রঃউপন্যাসটা সম্পূর্ণ কাল্পনিক!ভুলসমূহ ক্ষমার দৃষ্টিতে দেখার অনুরোধ]

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here