#এ_শহরে_বৃষ্টি_নামুক পর্ব ১৩
#লেখিকা_মালিহা_খান❤️
ভাতের নলাটা মুখে তুলতে গিয়েও হাত থেমে গেলো নিভ্রানের।মায়ের প্রতি চাপা রাগটা দপ করে জ্বলে উঠলো শরীরের প্রতিটি শিরায়-উপশিরায়।তবু উচ্চবাক্য করলোনা সে।যথেষ্ট শান্ত গলায় বললো,
—“এসব তোমার কাছে ইম্পোর্টেন্ট হতে পারে কিন্তু আমার কাছে না।আমার আর রাতের ব্যাপারে তুমি আর কিছু না বললেই বরং খুশি হবো।”
নাহিদা যেন আগুনের স্ফুলিঙ্গের মতো তেঁতিয়ে উঠলেন,”তাই বলে এমন একটা মেয়েকে তুই বিয়ে করবি?”
সবেমাত্র পানির গ্লাসটা ধরেছিলো নিভ্রান।নাহিদার কথায় সেটা আর মুখ পর্যন্ত নেয়া হলোনা।রাগের বশে সজোরে গ্লাসটা মেঝেতে ছুঁড়ে ফেললো।কাঁচগুলো টুকরো টুকরো হয়ে সাদা টাইলস্ পানিতে থৈ থৈ করে উঠলো।চিৎকার করে উঠলো সে,
—“কেমন মেয়ে হ্যাঁ?রাতের ব্যাপারে নূন্যতম ধারণা আছে তোমার?একবার বলেছিনা?আমার ওর কোনো কিছু নিয়ে সমস্যা নেই।বুঝতে পারছোনা তুমি?”
নাহিদা বেগম হতভম্ব হয়ে চেয়ে রইলেন ফ্লোরের দিকে।ছেলে আজ পর্যন্ত তার সাথে এভাবে কথা বলেনি।কোথাকার কোন মেয়ের জন্য সে এত বদলে গেছে।মেঝের থেকে দৃষ্টি তুলে তিনি নিভ্রানের দিকে চাইলেন।দাঁত কটমট করে বললেন,
—“ওই মেয়ের জন্য তুই আমার সাথে বেয়াদবি করছিস?তোর বাবা ঠি কই বলেছিলো তুই আসলে বড়দের মান রাখতে জানিস না।”
নিভ্রান হাত মুঠো করলো।কয়েকসেকেন্ডের ব্যবধানে সামনের প্লেটটারও স্হান হলো মাটিতে।পানির মধ্যে ঝোল ভাতের মিশ্রণে সাদা ফ্লোর বিচ্ছিরি রূপ ধারণ করল।আবার সেই পুরনো কথাবার্তা।বাবার পারিবারিক ব্যাবসার হাল ধরতে আপত্তি প্রকাশ করা নিয়ে কম ঝামেলা তো হয়নি সেবার।সেই ঘটনার রেশ ধরে সে এখন সবার থেকে আলাদা থাকে।তবু মা কিভাবে আবার সেই কথাটা তুলতে পারলো?নাহিদা আবার বললেন,
—“ওই মেয়েকে আমি কখনো মেনে নিবো না।”কন্ঠ থমথমে।
—“তোমার মানা না মানা দিয়ে আমার কিছু যায় আসেনা।”বলেই উঠে দাড়ালো নিভ্রান।নাহিদা নির্বিকার।অপমানে স্হির হয়ে আছে মুখশ্রী।স্হান ত্যাগ করার আছে নিভ্রান বললো,”ভুলে যেওনা,তোমাকেও কিন্তু বাবা গরীব ঘর থেকেই বিয়ে করে এনেছিলো।”
নিভ্রান চলে যাওয়ার পরও আরো অনেকক্ষণ ডাইনিংয়ে বসে রইলেন নাহিদা।চোখে জলন্ত আগুন।নিজের পেটে ধরা ছেলে তাকে খোঁটা দিয়ে গেলো?তাচ্ছিল্য করে হাসলেন তিনি।অবশ্য,এই বত্রিশ বছরের সাংসারিক জীবনে এ নিয়ে কম খোটা শোনেনি।শাশুড়ি যখন বেঁচে ছিলো তখন উঠতে বসতে এ নিয়েই খোঁটা শুনতে হতো।কথায় আছে,মানুষ নিজে যা পায়না,তা অন্যের পেয়ে যাওয়াটাও সহ্য করতে পারেনা।
তেমনই সে নিজে যেহেতু শাশুড়ির মমতা পায়নি তবে তার ছেলের বউ কেন পাবে?
সে যেহেতু খোঁটা শুনেছে তাহলে ওই মেয়েরও খোঁটা শুনতে হবে।সে জানে তার ছেলের একরোখা স্বভাব।দুনিয়া উল্টে গেলেও ও একবার যখন বলে দিয়েছে ওই মেয়েকে চাই মানে ওই মেয়েকেই চাই।
_____________
খুব ভোরবেলায় ঘুম ভাঙলো রাত্রির।আড়মোড়া দিয়ে বিছানা থেকে উঠেই সে টের পেলো গায়ের জামা ঘামে ভিজে চুপচুপে।ঘরে ভ্যাপসা গরম।আড়মোড়া দিয়ে উঠে বসলো সে।চুলে হাতখোঁপা করতে করতে ভাবলো,”একদিন এসির ঠান্ডা বাতাসে শুয়েই কি অভ্যাস খারাপ হয়ে গেলো?এমনেতো এই গরমেই বেশ মানিয়ে নেয়।তবে আজ এত অস্থির লাগছে কেনো?”মুখ দিয়ে বিরক্তিসূচক শব্দ বের করে আলমারি খুললো সে।গতকাল দুই টি উশনি থেকে মোট ন’হাজার টাকা হাতে এসেছে।চারহাজার দিয়ে বাজার করা আর বইপত্র কিনতে হবে আর বাকি পাঁচহাজার বাড়িভাঁড়া।ভাড়ার টাকাটা আলাদা করে রাখতেই মনে এলো,”নিভ্রান তার কাছে চারহাজার টাকা পায়।সেটাও দিতে হবে।”ফুঁস করে শ্বাস ছাড়লো রাত্রি।আলমারিটা বন্ধ করে ব্যস্ত হয়ে পড়লো বিছানা গোছাতে।
মেঝেটা ঝকঝকে।নাহিদা রাতেই সব পরিষ্কার করে রেখেছে।অফিসের জন্য বেরোনোর আগে একবার মায়ের রুমে চোখ বুলিয়ে নিলো নিভ্রান।নাহিদা তখন গভীর ঘুমে।দীর্ঘ:শ্বাস ফেললো নিভ্রান।সেই শ্বাস থেকে বেরিয়ে এলো একরাশ অনুশোচনা।গতকাল মায়ের সাথে এভাবে কথা বলাটা ঠি ক হয়নি।একদম ঠি ক হয়নি।সে ভালো করে বোঝালেই পারতো।কিন্তু রাগটা তখন এতো চড়ে গেছিলো যে কোনোভাবেই নিয়ন্ত্রন করতে পারেনি।দরজাটা আবারো নি:শব্দে আটকে দিলো সে।
______________
সন্ধ্যাটা আজ বড্ড ফিকে।হেডলাইটের টি মটিমে আলোয় রাস্তাটা কেমন ঝিমিয়ে গেছে।গাছের পাতা নড়ছেনা।আকাশে মেঘ উড়ছেনা।চাঁদও উঠেনি।বিষন্ন বাতাস একটু একটু করে ছুঁয়ে দিচ্ছে রাত্রির শীতল দেহ।
মনে মনে গুন গুন করতে করতে এগোচ্ছে রাত্রি।আজও ফেরার আগে নিভ্রানকে দেখেছে গাড়ি ভিতর বসে থাকতে।যতক্ষণ নিভ্রান সেখান থেকে যায়নি ততক্ষণ সে ও বেরোয়নি।তাই একটু দেরি হয়ে গেছে।লোকটা বড় নাছোড়বান্দা।পাক্কা চল্লিশমিনিট মূর্তির মতো গেটের দিকে চেয়েছিলো।রাত্রি আড়াল থেকে লক্ষ্য করেছে।যেন কোনোক্রমেই সে ফাঁকি দিয়ে চলে যেতে না পারে।
আনমনেই হেসে উঠলো রাত্রি।এই স্বৃতি গুলো নিয়েই তো সে দিব্যি কাটিয়ে দিতে পারবে।একটা লোক তাকে ভালোবাসতো।তার দিকে মুগ্ধ নয়নে তাকাতো।তাকে সম্মান করতো।এর থেকে সুন্দর আর কি হতে পারে?হ্যাঁ,হয়তোবা সে লোকটাকে পাবেনা।কখনো আষ্টেপিষ্টে ছুঁয়ে দিতে পারবেনা।তার স্নিগ্ধ আলিঙ্গনে পিষ্ট হতে পারবেনা তবু…তবু কোথায় যেন একটা সুখময় অনুভূতি।
কব্জিতে সজোরে টান পড়লো।চমকে উঠলো রাত্রি।স্পর্শটা তার খুব চেনা।শ্বাস আটকে পিছে ফিরলো।ভুল হয়নি,নিভ্রান দাড়িয়ে আছে।চেহারায় উপচে পড়া অভিমান।সুন্দর চোখদুটিতে কি ধ্বংসাত্বক ক্রোধ।রাত্রি মাথা নুইয়ে ফেললো।চাপা গলায় বললো,”মানুষ দেখছে।”
নিভ্রান একরত্তি নড়লোনা।হাতের চাপটা আরো তীব্র করে কাঠ কাঠ কন্ঠে বললো,
—“দেখুক।”
মাথা নিচু অবস্থায়ই ঠোঁট কাঁমড়ে ধরলো রাত্রি।হাতটা রীতিমত থেতলে যাচ্ছে।কব্জির রগগুলো থেকে বোধহয় রক্তক্ষরণ হচ্ছে।করুন শোনালো তার কন্ঠ,”লাগছে,ছাড়ুন।”
নিভ্রান বাঁধন ঢিলে করে দিলো।তবে হাত ছাড়লোনা।একবার মুখ তুলে তাকালো রাত্রি।লোকটার ক্রোধপূর্ণ চোখদুটো ভীষণ ঘোলাটে।কপালের রগগুলো স্পষ্ট।আবারো দৃষ্টি নেমে গেলো।নিভ্রান এককদম কাছে এসে দাড়ালো।অদ্ভুত স্বরে বললো,
—“আমার লাগে না?”
~চলবে~
[কয়দিন পর পরীক্ষা শুরু হবে।পড়ালেখার চাপে গল্প লেখার সময় পাচ্ছিনা।অল্প করে হলেও নিয়মিত দেয়ার চেষ্টা করছি।পর্বটা ছোট হয়েছে জানি।আগামীকাল নাহয় বড় করে পুষিয়ে দিবো।আপনারা একটু ধৈর্য ধরুন প্লিজ]