#আবার_প্রেম_হোক (২য় খন্ড)
#নুসরাত_জাহান_মিম
১৭.
সময়টা শরতের শেষের দিকের।বৃষ্টির প্রকোপ কমেছে অনেকাংশ।শীত শীত আমেজ ধরণীজুড়ে।দখিনা হাওয়া বয় মাঝে মন্দে।শরৎ চলে গেলে আশ্বিনের ভারী মনঃক্ষুণ্ণ হয়।তাকেও যে চলে যেতে হবে!তার জায়গাখানা নেবে অগ্রহায়ণ।আনাগোনা হবে হেমন্তের।হেমন্ত নাকি প্রেমময়ী মাস।হেমন্তের সনে প্রেমেরও আনাগোনা ঘটে জীবনে।এ কথা ঠিক কতটুকু সত্য?আদোতে এর কোনো ভিত্তি আছেও?কোন মূর্খ প্রেমিক এই মূর্খ বার্তা প্রেরণ করেছিলো কে জানে!তবে হেমন্তের সনে রুবার জীবনেও যদি প্রেম আসে খুব কি ভুল হবে?তার প্রেমপুরুষই যদি তার হয় কোনো ভুল কি সত্যিই হবে?কেনো অবচেতন মন অসম্ভাব্য কল্পনায় নিজেকে মত্ত রাখে?মস্তিষ্কজুড়ে কেনো সেই মানবেরই আনাগোনা যাকে নিয়ে আর কোনো আকাঙ্ক্ষাই রুবা রাখতে চায়না।যাকে পাওয়ার চেষ্টাটুকুও করতে সে ভয় পায়।কেনো এই ভয়?যাকে হৃদয়ে স্থান দিয়েছে তাকে নিয়ে ভাবতেও আজকাল বড্ড যাতনা অনুভব করে অন্তঃস্থলে।চৈত্রের রিহাকে বলা সেদিনের সেই শেষের বাক্যে হৃদয় পু*ড়েছিলো,জ্বলেছিলো আঁখিজোড়া।আজ তার দশ দিন অতিবাহিত হয়ে গিয়েছে।না চৌধুরী বাড়ি গিয়েছে রুবা আর না রিদির শ্বশুরবাড়ির ধারেকাছে।ফলস্বরূপ চৈত্রের সনেও আর দেখা হয়নি।আর না পরিচিত কারো সাথে।রুবা ই চেষ্টা করেনি কারো সহিত কোনোরূপ দেখার।হোস্টেল থেকে ভার্সিটি,ভার্সিটি থেকে কোচিং অতঃপর ফের হোস্টেল এই পর্যন্তই তার নিত্যদিনকার রুটিনে পরিণত হয়েছে।দেখা সে তার অতি ঘনিষ্ঠ প্রিয় সখীদের সনেও আর করেনি।অতঃপর লম্বা শ্বাস ফেলে নিজের ভাবনা জগৎ থেকে বের হয় রুবা।হাতের ধোয়া ওঠা কফির মগে পরপর কয়েকবার চুমুক বসায় সে।অতঃপর বারান্দার বিপরীতপাশে ঘন জঙ্গলের ন্যায় স্থানে একধ্যানে পলকহীন চায়।অতঃপর কফির মগে ঠোট চেপে রেখেই মনে মনে সে শুধায়,
“আপনি আমার সর্বসুন্দর মোহ প্রেমপুরুষ।যেই মোহ আমি কখনোই কাটিয়ে উঠতে চাইনা।আমি জানি আপনি অন্যের হবেন না।যদিও বা হন,মনে মনে কেবল রুবারই রবেন”
অতঃপর সেখানে দাড়িয়েই হাতে থাকা মোবাইলের ডায়াললিস্টে গিয়ে ডায়াল করে চাঁদের নাম্বারে।কয়েকবার রিং হতেই অপরপাশ থেকে ভেসে আসে মেয়েলি চিকন কন্ঠস্বর,
“হ্যালো?”
“কেমন আছো ভাবি?আর আমার পুচকু কি খুব জ্বালায়?”
“কেমন আছি ভাবি না?পুচকুর জ্বালাতন থেকে বাঁচানোর জন্য হলেও আসা উচিত ছিলোনা তোমার?তোমাকে কত করে বলেছি এখানে চলে আসো।তোমার ভাইয়া নেই আমার সাথেই নাহয় থাকবে।শিফাকেও বলেছি সেও নাছড়বান্দা।তুমি আসলে অবশ্যই ও ও আসতো।কিন্তু তুমি তো আমার সাথে দেখাই করতে আসছোনা।হয়েছে কী?”
“আস্তে আস্তে ভাবি!আমার পুচকু হয়রান হয়ে যাবে না?”
“নাস্তা করেছো?আজ ভার্সিটি যাও নি নাকি?”
“না ভাবি যাইনি”
“শরীর খারাপ?”
দীর্ঘশ্বাস ফেলে রুবা বলে,
“মন খারাপের সাথে পাল্লা দিয়ে হয়তো শরীরও খারাপ করবে ভাবি”
“কী বলছো?তুমি এক কাজ করো বাসায় আসো।ভালো লাগবে।ক’দিন থেকে যাবে”
“আপাতত আসতে পারছিনা।তবে প্রণয় ভাইয়ার সাথে দেখা করতে চাচ্ছিলাম।তুমি কি ভাইয়ার সাথে আজ দেখা করবে?”
“তোমার ভাইয়াতো সপ্তাহে শুধু একদিন বরাদ্দ রেখেছে তার সাথে দেখা করার।পরশুই দেখা করে এসেছি।আজ গেলে…..”
“তুমি ভাইয়াকে ভয় পাচ্ছো?”
“ভয় কেনো পাবো?ভয় না,আসলে আমারও হাটাচলা করতে বেশ অসুবিধা হয়”
কন্ঠের দৃঢ়তা খানিক ধীর হয় রুবার,
“দেখাটা তো তোমার সাথেই মূলত করার ছিলাম ভাবি”
“তো বাসায় কী হলো?”
“ওখানে আসা যাবেনা”
“কেনো যাবেনা?”
রুবার নিশ্চুপতার মাঝে চাঁদই আবার বলে,
“কেনো যাবেনা হা?তোমার আসলে কী হয়েছে বলবে?কোনো সমস্যা?কেউ কি প্রবলেম করছে?”
“না না তেমন কিছুনা।আসলে ওখানেতো তোমার সাথে কতজনই দেখা করতে আসে।তোমায় তো আর একা পাবোনা”
মৃদু হেসে চাঁদ বলে,
“পাবেনা কেন?রোজ রোজ কি সবাই আসে?”
“সবাই না আসলেও কেউ না কেউ তো আসেই!”
সন্দিহান কন্ঠে চাঁদ প্রশ্ন করে,
“তুমি ঠিক কার কথা বলছো?আমি কোনো মিথ্যে শুনবোনা।সত্যিটা সরাসরিই বলবে”
লম্বা শ্বাস টেনে রুবা জবাব দেয়,
“তোমার ভাই”
“আমার ভাই?”
অতঃপর ফের বিস্মিত কন্ঠস্বর ভেসে আসে চাঁদের,
“আমার ভাইয়ের কথা বলছো তুমি?”
“হ্যা।আমি মিস্টার চৈত্রের কথাই বলছি”
“কিন্তু ভাইয়ের সাথে কী হয়েছে তোমার?কথাইতো হয়না তোমাদের।ভাইও তো কারো সাথে কথা বলেনা”
“হ্যা তোমার ভাই কারো সাথে কথা বলবে কেন?ডিরেক্ট দেখা করবে”
“মানে?”
“কিছুনা।যদি তোমার ভাই তোমার সাথে থাকে অথবা যায় আমি আসতে পারবোনা ভাবি”
কিছুক্ষণ চুপ থেকে গম্ভীরভাবেই চাঁদ বলে,
“আগামীকাল এসো।অনেকদিন ভাই আসেনা আজ আসবে বলেছিলো”
.
.
.
.
.
.
.
.
.
.
.
.
.
.
.
.
.
.
.
.
প্রণয় আর পূর্ণতা ব্যতীত তাদের বন্ধুমহলের সকলে আড্ডার আসর জমিয়েছে রবিনের বাড়ি।মূলত রবিন আর তার গার্লফ্রেন্ড অমৃতার বিয়ে ঠিক হওয়ার খুশিতেই রবিনের বাড়িতে তাদের গেট-টুগেদার।বেশ অনেক বছর পর সকলের একসাথে হওয়ায় আলাদাই এক আমেজ কাজ করছে সকলের মাঝে।তারপরেও বন্ধুমহল পূর্ণ না হওয়ায় খানিক মন খারাপের রেশও রয়েছে।রিহা আর মিরা সকলের জন্য ট্রে তে করে নাস্তা নিয়ে বিছানার উপর রাখতেই সর্বপ্রথম অরণই হালিমের বাটি হাতে নেয়।রবিন নিয়েছে নুডলস আর মিরের হাতে স্যুপের বাটি।সবকিছুই রিহা আর মিরার একা হাতের কাজ।ভ্রু যুগল কুচকে রেখেই বিছানার পাশে বসতে বসতে মিরা বলে,
“জীবনে কোনোদিন খাস নাই নাকি?তোদের এখনই দিতাম না আমি?”
রবিন নুডলসের এক চামচ মুখে নিয়ে চিবুতে চিবুতেই বলে,
“এত মেহমানদারি করা লাগবেনা।এই শা*লিতো প্রেমে পড়ে এতই দেওয়ানা হয়েছে যে আজকাল গ্রুপকলেও আসেনা।না নিজে থেকে কোনো ফোন টোন দেয়।ওর হাতের নুডলসের সৌভাগ্য জুটেছে না খেয়ে যাই কই?আসছে আমার মেহমানগিরি করতে”
মিরাও স্যুপের বাটি হাতে নিয়ে তা এক চামচ চুমুক দিয়ে বলে,
“হ্যা রে তুই চৈত্র ভাইয়ার প্রেমে পড়লিও কীভাবে?মানে এতবছর কাউকে ভালো লাগেনি হঠাৎ চাঁদের ভাইয়ের প্রতি মন আসলো কী করে তোর?”
রবিন তাল মেলায় মিরার,
“সেম কুয়েশ্চন”
মির স্যুপ খেতে খেতে ভাবলেশহীনভাবেই বলে,
“প্রেমে পড়েও কী লাভ?চৈত্র ভাই তো আর ওকে পাত্তা দেয়না”
মিরের কথায় নুডলস খেতে খেতেই চোখ রাঙায় রিহা।অতঃপর শুনতে পায় অরণের গম্ভীর কন্ঠস্বর,
“কারো প্রেমে পড়া তো আর বলে কয়ে হয়না।কখন,কীভাবে হবে আমরাতো আর জানিনা।কিন্তু আমার মনে হয়না চৈত্র ভাই রিহুকে নিয়ে আদোতে কিছু ভাবেনও!”
রবিনের প্রশ্ন,
“তোর এমন মনে হয় কেন?”
“পার্সোনালি চৈত্র ভাইকে তেমন চিনিনা আমি।তোরা যতটা তাকে জানিস অথবা দেখেছিস।তবে এই কয়মাস তার সাথে আমার যতটা পরিচয়ই হয়েছে আমার কখনোই মনে হয়নি এই লোকটা প্রেম ট্রেমে ইন্টারেস্টেড অথবা কোনো মেয়ের দিকে তাকায়ও।মানে আমারও মেয়েদের নিয়ে অত ভাবনা নেই।তারপরেও ভুলবশত চোখতো কারো না কারো উপর পড়ে যায়ই।কিন্তু চৈত্র ভাই!উনাকে আমি ইচ্ছাকৃততো কারো দিকে চোখ তুলে তাকাতে দেখিনিই।ভুল করেও কারো উপর তার চোখ পড়েনা ভাই।আর রিহাকেতো আরও আগে থেকে চিনতো।তাহলে ওর দিকে চোখ গেলে আরও আগে যাওয়ার কথা ছিলো।যায়নি মানে হি ইজ নট ইন্টারেস্টেড।রিহু তুই বরং চৈত্র ভাইকে নিয়ে ভাবা বাদ দিয়ে অন্য কাউকে বিয়েশাদির চিন্তা কর।একসাথে দু’টো বিয়ে খাই।এমনিতেও দুই শা*লার বিয়েতে ছিলাম না।দেখতে পর্যন্ত পারি নাই!রবিনের সাথে তোর বিয়েটাও সেরে ফেল।ঐ দেবদাস চৈত্র ভাইয়ের জন্য অপেক্ষা করে বুড়ি হওয়ার কী দরকার?”
অরণের প্রথম কথাগুলো ভালো লাগলেও শেষের কথাসমূহ শুনে ভ্রুযুগল মাত্রাতিরিক্ত কুঞ্চিত হয় রিহার।সে ঝটপট রাগী দৃষ্টির সহিতই অরণের দিকে তেড়ে গিয়ে তার বাহুতে বারকয়েক থা!পড়ায়।রিহা ব্যতীত অরণসহ সকলেই হেসে দেয় অরণের কথা শুনে।আর অরণ হাসতে হাসতেই রিহার কব্জি ধরে বলে,
“এই মা*র জামাইর জন্য বাঁচিয়ে রাখ খালা”
রিহা অরণের কাছে থেকে সরে আসতে আসতে বলে,
“সর শা*লা!মরণ থেকে বেঁচে আসছিস তাও তোর নাটক কমেনা না?”
মির অরণের কাধ চাপড়িয়ে বলে,
“তুই কি কিছু পো*ড়ার গন্ধ পাস অরণ?মনে হয় কারো মন টন পু*ড়ে যাচ্ছে।কী বলিস এসব?মেয়েটা নতুন নতুন প্রেমে পড়লো।আর তুই কিনা কুফা দিস?ছি ছি অরণ!ব্যাড ম্যানার্স”
অতঃপর ফের তারা হাসতে গেলেই রিহা মিরের পানে কটমট দৃষ্টি নিক্ষেপ করে দাঁতে দাঁত চেপে বলে,
“নিজেতো ভালোবেসে বিয়ে করেছিস।তাও আবার বাচ্চা মেয়ের প্রেমে পড়ে।যেইখানে এতদিন ফুপি ডাক শোনার কথা ছিলো সেখান…… ”
বলতে বলতেই থামে রিহা।ভুলবশত ভুল জায়গায় ভুল কথা সে বলে ফেলেছিলো।ভাগ্যিস শেষ পথে থেমেছে!নাহয় এতক্ষণে কপালে তার শনি ছিলো।ভাবতে ভাবতেই ঢোক গিলে মিরের পানে চায় রিহা।অতঃপর তার কুঞ্চিত ললাট নজরে আসতেই আমতা আমতা করে বলে,
“কী আমার প্যাঁচাল পারছিস তোরা?বিয়েতো রবিনের ওদের নিয়ে বল কিছু!অমি ভাবিতো চাঁদের খালাতো বোন।এই অরণ তুই জানিস অমি ভাবির সাথেই প্রণয় আর এই রবিন্না মিলে বিয়ের নাটক সাজিয়ে চাঁদকে প্ল্যান ট্ল্যান করে বিয়ে করেছিলো”
রিহার পরপর গম্ভীরভাবে মির বলে,
“কথা ঘুরাবিনা রিহা।কী কথা বলছিলিস তুই?”
কপাল কুচকে অজানা থাকার চেষ্টায় রিহা বলে,
“কোন কথা?”
“কোন কথা জানিসনা না?”
“দেখ মির!রিদিকে কিছু বলবিনা।এমনিতেই মেয়েটা বেশ লাজুক আর তোকে খুব ভয় পায়।যদি ওকে কিছু বলেছিস তো খবর আছে তোর!”
কপাল অতিরিক্ত কুচকে মির প্রশ্ন করে,
“তুই রিদির সাথে এসব ব্যাপারে কথা বলিস?”
“তোর মতো সবাইকে খা*টাশ মনে করিস বেকুব?আমার চেম্বারে এসেছিলো।তখন কথায় কথায়…..”
রিহাকে থামিয়ে মির প্রশ্ন করে,
“তোর চেম্বারে গিয়েছিলো কেন?”
কপাল কুচকে রিহা প্রশ্ন করে,
“তুই জানিস না?”
তখনই মিরা বলে,
“আসলে সেদিন রুবা এত তাড়াহুড়োয় রিদুকে নিয়ে যায় যে আমি তোকে বলতে ভুলে গিয়েছিলাম।রিদু যেদিন সেন্সলেস হলো সেদিনেরই কথা”
মির আর কিছু বলেনা।গম্ভীরভাবে বসে থাকে।সবাইকে মৌন দেখে অরণই কথা বাড়ায়,
“তো রিহু কী বলছিলিস?অমৃতা ভাবি চাঁদের বোন?কেমন বোন?”
রবিন জবাব দেয়,
“খালাতো বোন”
“বড় নাকি ছোট?”
এবারে জবাব দেয় রিহা,
“ছোট”
কপাল কুচকে হালিম শেষ করতে করতেই অরণ বলে,
“তাহলেতো দেখা যায় চাঁদেরও ছোট।আর এই শা*লার জন্য এই ছোট মেয়েকে ভাবি ডাকা লাগছে?”
রবিন অরণের পানে চেয়ে ট্রে হতে হালিমের বাটি নিয়ে এক চামচ মুখে পুড়তে পুড়তে বলে,
“তো বলা লাগলে বলবি না?”
রবিনের পানে তীক্ষ্ণ দৃষ্টি নিক্ষেপ করে অরণ বলে,
“আমিও কোনো পুচকে পাচকে বিয়ে করবো।তারপর বলিস তোরা ভাবি”
আকস্মিক রিহা প্রশ্ন করে,
“তুই বিয়ে করবি সিরিয়াসলি?”
রিহাকে খোচা মেরে অরণ বলে,
“কেন তোর ঐ দেবদাসের মতো বিয়ে না করে দেবদাস থেকে বুড়ো হবো নাকি?”
“দেখ অরণ!মেজাজ খারাপ করবিনা”
রবিনও কটাক্ষ করে,
“ইশ যেই না ঢং!যেনো এখনই বিয়ে করছে সে”
অরণও রিহার পানে চেয়ে শান্তস্বরে বলে,
“দেখ রিহা তোর ভালোর জন্য বলছি।অযথাই সময় নষ্ট করছিস।তোর এক মাসের অলরেডি দশ দিন চলে গিয়েছে কিন্তু চৈত্র ভাই তোর দিকে তাকায় পর্যন্ত না।তার জন্য বসে থাকবি তুই?যে তোর কদরই করেনা তার পেছনে সময় নষ্ট করার মানে হয় বল?”
রিহা বিরক্ত হয়ে বলে,
“ঐ লোকের মতো কথা বলিস নাতো অরণ!এমনিতেই আমাকে এড়িয়ে চলতে খুব পছন্দ তার।তার উপর সেদিন মিথ্যা বলে রেস্টুরেন্টে নেওয়ায় অতিরিক্তই রেগেছে।চাঁদকে নিয়ে মিথ্যা বলেছি বলে কথা পর্যন্ত বলছেনা।নেগেটিভ কথাবার্তা আর ভালো লাগছেনা।থাম”
একইসঙ্গে মির এবং মিরা বলে উঠে,
“এড়িয়েতো সব মেয়েকেই চলে।তুই বেশি ভাবছিস।তাছাড়া অরণের কথায় যুক্তি আছে”
“অনেকটা পাগলের কাছে শান্ত থাকার আবদার আরকি!যে নিজ জীবনে যা ফলাতে পারেনা,অন্যকে উপদেশ দেওয়া কি খুব দরকার?”
মিরার কথায় তৎক্ষনাৎ তার পানে চাইতে বাধ্য হয় অরণ।কথাটা যে তাকে উদ্দেশ্য করেই বলা হয়েছে আর কেউ না বুঝলেও অরণ আর মির ঠিকই বুঝেছে।তবে মির ভাবলেশহীন আর অরণ গম্ভীর।প্রসঙ্গ পাল্টাতে রবিন বলে,
“তোরা সেসব বাদ দে।পূর্ণকে বলেছিলাম,শা*লি যেনো সময়ই পায়না।মানে ওর এত কীসের কাজ বুঝিনা।রিহাও তো একই সেক্টরে।তো ওর এত কী?”
তাদের আরও কিছুক্ষণ আড্ডার মাঝে হঠাৎ ই রিহা বলে,
“আচ্ছা শোন অনেক্ক্ষণ তো থাকলাম।এবার আমি উঠি কাজ আছে”
রবিন বিরক্ত হয়ে বলে,
“ঐ যে!আবারও কাজ।মানে তোরা দুইটা কী প্রমাণ করিস আমরা বেকার?কোনো কাজ করিনা?”
রবিনের কাধে হাত রেখে রবিনকে এক পাশ দিয়ে জড়িয়ে রিহা বলে,
“আরে মামা!সেটা কখন বললাম?আসলে কাজটা আর্জেন্ট,যেতে হবে”
কপাল কুচকে মিরা প্রশ্ন করে,
“কী কাজ এখন তোর?”
মিরও বলে,
“আজতো আমরা সবাই ছুটি নিয়েছি,তো?”
রিহা দীর্ঘশ্বাস ফেলে বলে,
“আসলে চাঁদের কিছু রিপোর্ট ছিলো।সেগুলো কয়েকদিন আগেই আনার ছিলাম কিন্তু ব্যস্ততার জন্য আনা হয়নি।কালও সময়ের জন্য যেতে পারিনি।আজ আবার তোরা ডাকলি,ভুলেই গিয়েছিলাম প্রায়।পূর্ণর কথা বলায় মনে পড়লো।যাই রে দোস্ত!বেশ দরকার।যেতেই হবে।রাগীস না প্লিজ।থাকলাম তো সারাদিন”
অরণ বিছানা ছাড়তে ছাড়তে বলে,
“চল তোকে দিয়ে আসি আমি”
“না লাগবেনা।সামনেই যেতে পারবো।তোরা আড্ডা দে।আর আমায় আপডেট জানাস”
অতঃপর রিহা তার ব্যাগ হাতে যেতে নিলেই মিরা তাকে কাছে ডাকে।রিহা আসতেই তাকে মাঝে রেখে বাকি চারজন একে অপরকে জাপটে ধরে।সুখের অশ্রু জমে চোখের কোনে রিহার।সেও সব বন্ধুকে দু’হাতে জড়িয়ে বলে,
“তোরা আমার প্রাণ।তোদের ছাড়া আমি একেবারেই নিশ্চল”
.
.
.
.
.
.
.
.
.
.
.
.
.
.
.
.
.
রিহা এসেছে তার পরিচিত এক হাসপাতালে।মূলত এখানেই সে চাঁদের রক্ত আর ইউরাইন পরীক্ষা করতে দিয়ে গিয়েছিলো।সাথে চাঁদকে যেই ঔষধটা পূর্ণতা দিয়েছিলো সেটাও দিয়ে গেছে।কেনোনা সে যতবার নিজেদের ওখানে পরীক্ষাগুলো করিয়েছিলো ফলাফল হিসেবে পজিটিভ জিনিসই পেয়েছে।কিন্তু সেদিন চাঁদকে সেই ঔষধটা খেতে দেখে খানিক সন্দেহ জেগেছিলো মনে।প্রণয়ের চিন্তাকে সে গাঢ়ভাবে দেখতে আরম্ভ করে।এক কেজি পর্যন্ত ওজন না বাড়ার কারণ কী?বাচ্চার ওজনই তো দেড় থেকে দুই কেজি থাকার কথা।তাহলে?যদি বাচ্চার ওজন নাই বাড়ে তবে পেট ফুলছে কী করে?আল্ট্রাসনোতেও তো বাচ্চার প্রতিবিম্ব রিহা দেখেছে।সবকিছুইতো নরমাল আছে।তাইতো রিপোর্টে দেখেছিলো।তাহলে সমস্যা টা আসলে কোথায়?ওজন কেনো বাড়ছেনা?তাছাড়া ইদানীং চাঁদ বেশ শুকাচ্ছেও।জিনিসগুলো বেশ ভাবায় তাকে।তাই সে পূর্ণতার সাথেও আর কথা বলেনি।তাকে না জানিয়েই কাজগুলো সে করেছে।চাঁদকেও জানায়নি রিহা।শুধু শুধুই চিন্তা করবে বলে।চেয়ারের উপর বসে থেকেই নানান জিনিস ভাবতে ভাবতে হৃদস্পন্দন বাড়ে খানিক রিহার।দুশ্চিন্তারা হানা দেয় মন,মস্তিষ্কে।বিভিন্ন উল্টাপাল্টা খারাপ ইঙ্গিত মনে আসছে।তারপরেও নিজেকে সামলাচ্ছে রিহা।হিসাব নিকাশ মেলানোর চেষ্টা করছে।সবকিছু এতটা পেঁচানো,এত জটিল কী করে হয়?কিছুতেই কিছু মেলানো যাচ্ছেনা।অতঃপর মাথা চেপে ধরে ফ্লোর পানে চোখবন্ধবস্থায়ই ঘাড় নিচু করে রাখে রিহা।মিনিট পাঁচেকের মাঝেই তার নাম ধরে ডাকা হলে সে সামনে গিয়ে কয়েকটা রিপোর্ট হাতে নেয়।অতঃপর রিপোর্টগুলো দেখে কপাল কুঞ্চিত করে আস্তেধীরে সবগুলো রিপোর্ট চেক করে পরিশেষে শেষের রিপোর্টটায় নজর বুলাতেই চোখজোড়া বড় বড় হয় রিহার।তৎক্ষনাৎ ঘাম ছুটে তার।অস্থিরচিত্তে শ্বাস বাড়ে।বারংবার ঢোক গিলেও শুকানো গলা ভেজাতে পারছেনা।নিজেকে ধাতস্ত করে রিপোর্টগুলো হাতে নিয়েই নিজ চেম্বারের উদ্দেশ্যে পা বাড়ায় রিহা।
রাত তখন আটটা,
চৌধুরী বাড়ির গেইট দিয়ে ভেতরে প্রবেশ করতে গেলে চৈত্রের সাথে দেখা হয় রিহার।রিহাকে চিন্তিত আর অস্থির দেখে কোনোকিছু জিজ্ঞেস করার পূর্বেই চৈত্রকে উপেক্ষা করে রিহা বাড়ির ভেতরে ঢুকে।রিহার এরূপ ব্যবহারে খানিক ভড়কায় চৈত্র।যেই মেয়ে সর্বদা তাকে দেখলে বিনিময়ে হাসি উপহার দেয় অথবা কুশলাদি জিজ্ঞেস করে সে এতটা বিচলিত কেনো?তাকে কি খেয়াল করেনি?নাকি বেশ জরুরী কাজে এসেছে?বিষয়গুলো ভাবতে ভাবতেই বের হয়ে আসে চৈত্র।অতঃপর সমস্ত চিন্তা মাথা থেকে ঝেড়ে অগ্রসর হয় নিজ বাড়ির উদ্দেশ্যে।
হঠাৎ কোনো খবরাখবর না দিয়ে আকস্মিক রিহার আগমণে বেশ চমকায় চাঁদ।অতঃপর বিছানা থেকে উঠতে উঠতে বলে,
“আপু হঠাৎ এত রাতে?”
অস্থির ভঙ্গিতে হাপাতে হাপাতে রিহা বলে,
“উঠোনা,শুয়ে থাকো।কিছু চেকাপ করবো তোমার।জরুরী”
“কিন্তু এত রাতে?”
“সারাদিন সময় পাইনি।ওদের সাথে একটু আড্ডায় বসেছিলাম আজ”
ফের বালিশে হেলান দিতে দিতে চাঁদ বলে,
“মির ভাইয়াদের?”
“হ্যা।তুমি বরং শুয়ে পড়ো”
অতঃপর চাঁদকে স্বাভাবিক দেখে দরজার বাইরে গিয়ে দুইজন লোক নিয়ে ভেতরে আসে রিহা।তারা চাঁদের বিছানার পাশেই দূরত্ব বজায় রেখে রুমের মাঝে বড় এক মেশিন রেখে বের হয়ে যায়।আর রিহা কিছু কারসাজি শেষে দরজা আটকে দিয়ে চাঁদের নিকটে দাঁড়িয়ে তার কামিজ ধরে উঁচিয়ে রাখতেই চাঁদ প্রশ্ন করে,
“আলট্রা করবে?এত রাতে?আমায় বললে আমিই ভাইয়ের সাথে তোমার চেম্বারে যেতাম।এত কষ্ট করে সবকিছু আনলে কেনো আপু?”
চাঁদের কথা শুনে তার গালে হাত রেখে ধীরকন্ঠে মুচকি হেসে রিহা বলে,
“কষ্ট কোথায় চাঁদ?তোমার জন্য এইটুকু কষ্ট কিছুই না আমার বন্ধুর চন্দ্রময়ী,আমার ভাবি চাঁদ?নাকি ছোট্ট বোন চাঁদ?”
বলেই চাঁদের কপাল বরাবর চুমু খায় রিহা।অতঃপর গালে হাত বুলিয়ে বলে,
“চিন্তা করবেনা একদম”
বলেই মিষ্টি করে হাসে রিহা।অতঃপর চাঁদের পেটে আলতো হাতে জেল লাগিয়ে কিছুক্ষণ শুকাতে রেখে আল্ট্রাসাউন্ড স্ক্যান শুরু করে।অতঃপর মিনিট দশেক বাদে চাঁদের দিকে চেয়ে হাসতে হাসতে বলে,
“ঐদিকে ঘুরে থাকো।দেখতে হবেনা।নাহয় আবার মেয়ে হচ্ছে নাকি ছেলে জেনে যাবে”
রিহার কথায় হাসে চাঁদও।মুখে হাসি বজায় রেখেই বলে,
“চশমা ছাড়া এতদূরের জিনিস বুঝবো নাকি আপু?”
মনে মনে বেশ চিন্তিত থাকলেও মেকি হাসার চেষ্টাস্বরূপ রিহা বলে,
“তাও কথা।তবে তুমি ঐদিকেই তাকিয়ে থাকো।সাবধানের তো মার নেই!”
বলেই আবারও কিঞ্চিৎ হাসে।চাঁদও অন্যদিকে চেয়ে চোখ বুজে রাখে।আধঘন্টার মাঝে আলট্রাসনোগ্রাম শেষ হতেই সেখানে কিছুক্ষণ বসে রিহা।দ্রুতই রিপোর্ট বানায়।অতঃপর চাঁদকে বলে,
“তুমি মেশিনগুলো আমার চেম্বারে পাঠানোর ব্যবস্থা করোও।কাজ আছে আমার একটু”
প্রথমে চশমা না থাকায় ততটা খেয়াল না করলেও বর্তমানে স্পষ্ট রিহাকে একটু বেশিই অস্থির দেখে কপাল সামান্য কুঞ্চিত করে চাঁদ প্রশ্ন করে,
“কী হয়েছে আপু?স্ক্যান করে কী দেখলে তুমি?আর এত ঘামছো?খারাপ কিছু দেখেছো কি?আর রিপোর্টে কী হলো?”
নিজেকে শান্ত করার চেষ্টা করে খানিক হেসে রিহা বলে,
“না তেমন কিছুনা।আসলে জরুরী কাজ আছেতো, পেশেন্ট নিয়েই।তাই একটু চিন্তা করছিলাম।তার অবস্থা একটু ক্রিটিকাল”
“ও তাহলে যাও।মেশিনের চিন্তা করোনা”
চাঁদের কথার আর কোনো জবাব না দিয়ে এক হাতে রিপোর্ট নিয়ে অপরহাতে কাউকে কল করতে করতেই ফোন কানে ধরে বের হয় রিহা।আর চাঁদ কপাল কুচকে রেখে কেবলই চেয়ে থাকে রিহার দ্রুতগতিতে পা চালিয়ে অস্থির ভঙ্গিমায় যাওয়ার পানে।
To be continued…..
[বিঃদ্রঃগল্পটা কাল্পনিক।তাই ভুলসমূহ ক্ষমার দৃষ্টিতে দেখার অনুরোধ]