#আবার_প্রেম_হোক (২য় খন্ড)
#নুসরাত_জাহান_মিম
১৮.
“আমি তোমার ভাইকে পছন্দ করি ভাবি”
আচানক রুবার মৌনতা ভাঙতেই অবিশ্বাস্যনীয় দৃষ্টি সহিত তার পানে চাইতে বাধ্য হয় চাঁদ।অতঃপর কপাল কুচকে রেখেই প্রশ্ন করে,
“কার কথা বললে?”
খানিক কেশে চাঁদ হতে দৃষ্টি সরিয়ে ইতস্তত করতে করতে রুবা জবাব দেয়,
“তোমার ভাইয়ের কথা বলেছি।মিস্টার চৈত্রের”
এবারে কপাল মাত্রাতিরিক্ত কুচকে কিয়ৎক্ষণ রুবার পানে চেয়ে থাকে চাঁদ।অতঃপর দৃষ্টি অন্যদিকে করে বেশ গম্ভীরকন্ঠে শুধায়,
“তুমি কার সামনে কী কথা বলছো জানো?”
বেশ সাবলীল জবাব রুবার,
“হ্যা জানিতো।আমার ভাবির সামনে আমার পছন্দের বিষয় তাকে জানাচ্ছি”
“তবে কার কথা বলছো সে খবর আছে?”
“অবশ্যই আছে।আমি আমার ভাবির ভাইয়ের কথা বলছি।অর্থাৎ আমার বেয়াই”
“দেখো রুবা,তুমি বিষয়টাকে যতটা সহজভাবে দেখছো ততটা সহজ কিন্তু তা না”
“তোমার ভাই যে বেশ জটিল তা আমি জানি”
“কিন্তু ভাই তোমায় পছন্দ করেনা।ছোট বোনের ননদ ছাড়া অন্য কোনো দৃষ্টিতে ভাই তোমায় আদোতে দেখেছে বলে আমার মনে হয়না”
“তাও জানি”
ফের কিয়ৎক্ষণ চুপ থাকে চাঁদ।অতঃপর গম্ভীরকন্ঠে বলে,
“ভালোবাসা ততটা সহজভাবে হয়না রুবা”
“সেজন্যইতো আমি তোমার ভাইকে পছন্দ করি বলেছি।একবারও কিন্তু ভালোবাসার কথা বলিনি ভাবি”
আকস্মিক মোবাইলের রিংটোন বেজে উঠতেই ধ্যান ভাঙে চাঁদের।এতক্ষণ যাবৎ বিছানার উপর বসে গত তিনদিন পূর্বে রুবার সহিত তার কিছু অদ্ভুত আলাপন নিয়েই চিন্তা করছিলো চাঁদ।বিষয়টা তার কাছে বেশ জটিলই মনে হয়।একদিকে তার ননদ অপরদিকে বড়বোনের চেয়েও বেশি ভালোবাসার মানুষ।দু’জনের অনুভূতি সম্পর্কেই সে অবগত।মাঝেমধ্যে ভাইয়ের অগোছালো জীবনটা সে গোছাতে চাইলেও রূপার ন্যায় কোনো মেয়ে তার ভাইয়ের জীবনে ফের আসুক বলে চাঁদ চায়না।আর রুবা অথবা রিহা দু’জনের একজনও তার ভাইকে ভালোবাসে বলেও মনে হয়না চাঁদের।তাই সে এই বিষয়ে নিশ্চিত তার ভাই এ দু’জনের একজনকে নিয়েও কিছু কস্মিনকালেও ভাববেনা।মোবাইলের রিংটোন বেজে বেজে কেটে গিয়ে ফের বাজতেই তা রিসিভ করে কানে লাগায় চাঁদ।অতঃপর অপর পাশ থেকে ভেসে আসে পূর্ণতার উদ্বিগ্ন কন্ঠস্বর,
“হ্যালো চাঁদ?রিহাকে খুঁজে পেয়েছি।ওর অবস্থা তেমন একটা ভালো না চোট পেয়েছে।তুমি বরং জলদি আসো।তোমার কথা বারবার বলছে।প্রেগন্যান্সি নিয়েই কিছু বলছে।তবে শুধু তোমাকেই বলতে চাচ্ছে।তুমি উজানকে নিয়ে বরং এখনই বের হয়ে যাও।এড্রেস আমি মেসেজ করে দিচ্ছি।হারি চাঁদ।দেরি করো না”
নিজ বক্তব্য পেশ করে কল কাটে পূর্ণতা।
বিগত পাঁচদিন ধরে রিহাকে কোথাও খুঁজে পাওয়া যাচ্ছেনা।রিহাকে শেষবারের ন্যায় চাঁদের সাথেই দেখা গিয়েছিলো।এরপর যে মোবাইল কানে দিয়ে সে বের হলো আর তার দেখা মেলেনি।হঠাৎ পূর্ণতার রিহাকে খুঁজে পাওয়া তার উপর আবার প্রেগন্যান্সি নিয়ে রিহা কিছু বলতে চাচ্ছে,জিনিসগুলো স্বাভাবিক মনে হয়না চাঁদের।সেদিনও রিহা তাড়াহুড়োয় এলো।আকস্মিক তার আল্ট্রাসনোগ্রাফিও করলো।রিপোর্ট নিয়ে কোথাও চলে গিয়ে গায়েবই হয়ে গেলো একধরনের।আর তার খোঁজ পাওয়া গেলোনা।না চাঁদকে সে রিপোর্টের ব্যাপারে কিছু বলেছে।চাঁদের মনে সন্দেহ তখনই বেঁধেছে যখন সে রিহাকে বিচলিত দেখেছে।তবে কি সত্যি সত্যি প্রেগন্যান্সিতে জটিলতা আছে তার?বাচ্চার কিছু হয়ে যাবেনা তো?শেষ সময়ে এসে বাচ্চার ক্ষ*তি হলে চাঁদ সেটা মানতে পারবেনা।জীবনেতো বহু কিছু খুইয়েছে এবারে বাচ্চাটাকে খোয়ানো তার পক্ষে সম্ভব না।আর গতবার প্রণয়ও এভাবেই উধাও হয়ে আকস্মিক এমনকিছু কাজ করে ফেলেছে যার জন্য এখনো তার মাশুল দিতে হচ্ছে।রিহার সাথে এমন খারাপ কিছু হোক চাঁদ তা কখনোই চায়না।অতএব তাকে যেতেই হবে।রিহা আর তার বাচ্চার জন্য তাকে অবশ্যই যেতে হবে।সে যাবে,কারো কোনো ক্ষ*তি সে হতে দেবেনা।সিদ্ধান্তে অটল থেকে মিরের ফোনে রিহার খবর সম্পর্কে মেসেজ পাঠায় চাঁদ।তাকে দ্রুত সেই স্থানে যেতেও নির্দেশনা দেয়।মিরকে পাঠানো মেসেজটা একে একে রিহার সকল বন্ধুবান্ধবদের মাঝে ফরওয়ার্ড করে নিজে উজানের সহিত রওয়ানা হয় পূর্ণতার পাঠানো এড্রেসে।
.
.
.
.
.
.
.
.
.
.
.
.
.
.
.
.
.
“দেখ পূর্ণ কাজগুলো তুই মোটেও ঠিক করছিস না।তুই চাঁদকে এ অবস্থায় কেনো মিথ্যা বলে আনাচ্ছিস?তুই চাচ্ছিস টা কী বলবি?”
বেশ বিরক্ত হয়েই গাড়ি চালাতে চালাতে পূর্ণতা বলে,
“দেখ রিহু তুই আমার বেস্টফ্রেন্ড,তো তোর সাথে খারাপ কিছু করার কোনোপ্রকারের ইচ্ছাই আমার নেই।আমি করবোও না।তবে এই চাঁদের ওকালতি বন্ধ কর।তোর মুখে ওর চিন্তা আমি টলারেট করতে পারছিনা”
“চাঁদের সাথে সমস্যা টা কোথায়?”
গাড়ি ডান দিকে বাকিয়ে পূর্ণতা সামনের দিকে তীক্ষ্ণ দৃষ্টি নিক্ষেপ করে রিহাকে বলে,
“সমস্যা তো সেই শুরু থেকেই!এই মেয়ে আমার প্রণয়ের জীবনে আসলো কেন?আমার প্রণয়কে ও পুরোপুরি এলোমেলো করে দিয়েছে।বা*স্টার্ডটার জন্য জেলে পর্যন্ত গিয়ে আছে।স্টিল ওরা হ্যাপি কাপল।বাট হোয়াই?”
হকচকিয়ে রিহা পূর্ণতার পানে চেয়ে প্রশ্ন করে,
“তু….তুই প্রণয়কে পছন্দ করিস?”
“ভালোবাসি আমি ওকে”
“কিন্তু কখনোতো……”
রিহাকে মাঝপথে থামিয়ে নিজেই বলে পূর্ণতা,
“কখনো বুঝতে পারিস নি তাইতো?কীভাবে বুঝবি?ঐ চাঁদকে বোন বলে বলে তো মুখে ফ্যানা তুলে ফেলেছিস।ঐ মেয়ে তোদের সবার উপর কী জাদু করেছে বলবি?তোরা কেনো ওকে ছাড়া কিছুই বুঝিস না?তুই না আমার বেস্টফ্রেন্ড?তুইও কেনো আমায় বুঝলিনা রিহু?আমি প্রণয়কে ভালোবাসি এটা তুই কখনোই বুঝিস নি।অথচ মিরু সেই শুরু থেকে জানতো আমি প্রণয়কে ভালোবাসি।এমনকি অরণ আর মিরও।জানতিনা শুধু তুই,রবিন আর প্রণয় নিজেই।প্রণয়তো কখনো বোঝার চেষ্টাই করেনি।শেষমেশ ঐ চারচোখা মেয়ের প্রেমেই ওকে পড়তে হলো?পড়লো তো পড়লো ওর জন্য কেন এতগুলা খু*ন করে ফা!সিতে ঝুলেও ও অতটা খুশি?ঐ মেয়ে!ঐ মেয়েকে আমি সর্বোচ্চ ঘৃণা করি”
“দা….দেখ….দেখ পূর্ণ।আমি বুঝতে পারছি তুই প্রণয়ের জন্য ডেসপারেট।কিন্তু ওরা তো এক হয়েই গেছে।তাছাড়া প্রণয় কোনোদিনই আমাদের তিনজনের কাউকেই বন্ধু আর বোন ব্যতীত অন্য নজরে দেখেনি”
হুংকার ছাড়ে পূর্ণতা,
“ওর বোনের নজরের কোনো প্রয়োজন আমার নেই!”
“পূর্ণ তুই বোঝার চেষ্টা কর।তুই নাহয় চাঁদকেই ঘৃণা করিস।কিন্তু বাচ্চাটা?বাচ্চাটা তোর কী ক্ষ*তি করেছে?তুই বাচ্চাকে কেনো পয়জন দিয়েছিস?তোর কোনো আইডিয়াও আছে বাচ্চাটার কত বড় ক্ষ*তি তুই করেছিস?এক কথায় তুই বাচ্চাটাকে তিলে তিলে খু*ন করছিস পূর্ণ”
ঠোট খানিক বাকিয়ে রিহার পানে আড়চোখে চেয়ে গাড়ির স্পিড বাড়াতে বাড়াতে পূর্ণতা বলে,
“অবশ্যই আইডিয়া আছে রিহু বেইবি।আমিতো এটাই চেয়েছি।চাঁদ আর প্রণয়ের শেষাংশ নষ্ট হোক আমি তাই চেয়েছি।ওদের কোনো অংশই আমি এই পৃথিবীতে থাকতে দেবোনা।আমি চাঁদজড়িত সমস্ত কিছু ঘৃণা করি।ইচ অ্যান্ড এভ্রিথিং রিহু!আই জাস্ট হেইট দ্যাট গার্ল ফ্রম দ্যা ভেরি বিগেনিং অফ আওয়ার ফার্স্ট মিটিং।যেদিন প্রণয় অপরিচিত এক মেয়েকে প্রথমবারের ন্যায় চুমু খেয়েছিলো,ঠিক সেদিন থেকেই ঐ মেয়েকে আমার অপছন্দ।চাঁদের অংশতো থাকবেনা ই।ঐ চাঁদও থাকবেনা।আমি চাঁদ আর প্রণয়কে এক হতে দেবোনা,একসাথে থাকার সুযোগটুকু পর্যন্ত তাদের দেবোনা”
“পূর্ণ তোর মাথা নষ্ট হয়ে গিয়েছে!তুই একজন ডাক্তার হয়ে মানুষ খু*ন করার কথা বলছিস?”
.
.
.
.
.
.
.
.
.
.
.
.
.
.
.
.
.
.
.
.
.
.
.
.
.
.
.
“প্রণয় ভাইয়াকে রিহা আপুর ব্যাপারে কিছু জানান নি?”
ফায়ানের প্রশ্নের জবাবে অরণ তাকে জানায়,
“না বলিনি কিছু”
“কেনো?”
“আমরা ওকে আর টেনশন দিতে চাচ্ছিনা”
“আপনার কী মনে হয়?হঠাৎ আপু কোথায় যেতে পারে?অরিন ইনভেস্টিগেট করছে এখনো?”
“কোনোকিছুরই আইডিয়া করতে পারছিনা।কারণ কলেজ লাইফে ওদের সাথেই বেশিরভাগ সময় অতিবাহিত হতো।যার বিন্দু পরিমাণও এখন হয়না।আর রিহা সেদিন আমাদের সাথেই ছিলো।আমি ওকে বলেছিলামও আমি তোকে দিয়ে আসি।কিন্তু ও একাই গেলো।পরে নাকি চাঁদের কাছে গেছে।ওর আল্ট্রাসনো করতে।কিন্তু এত রাতে মেশিন টেশিন নিয়ে গিয়ে এসব কেনো করবে?চাঁদ রিলেটেড কিছু একটা তো হবেই।তবে আমি বুঝতে পারছিনা সেটা।চাঁদের সাথে কথা বলাটা জরুরী।তোমার কথা হয়েছিলো?”
“বাচ্চা রিলেটেড কিছু একটা হয়তো হতে পারে।চাঁদের সাথে কথা হয়না অনেকদিনই”
অরণ ফায়ানকে কিছু বলতে নিলেই অরণের ফোনে কল আসে মিরের।কপাল কুচকে অরণ তা রিসিভ করে মিরের কথা শুনে হকচকিয়ে ফোনে থেকেই বলে,
“হা?হ্যা……যা….যা তোরা আমি আসছি।আচ্ছা দ্রুত যা,চাঁদকে একা এভাবে ঠিক হয়নি।একটু জলদি যা।হ্যা আমি ঐ পথেই,আসছি”
অরণের মুখভঙ্গি হঠাৎ পরিবর্তনে ভড়কায় ফায়ান।সে দ্রুত প্রশ্ন করে,
“কী হয়েছে ভাইয়া?চাঁদের কী বললেন?”
ফায়ানের কাধে হাত রেখে অরণ বলে,
“তাড়াতাড়ি চলো”
অতঃপর দু’জনই পা বাড়ায় কলেজ ক্যান্টিনের বাইরে।
.
.
.
.
.
.
.
.
.
.
.
.
.
.
.
.
.
.
.
.
চাঁদ আর উজান পূর্ণতার পাঠানো এড্রেসে এসে দাড়াতেই দেখতে পায় সেখানে আগে থেকেই মির,মিরা আর রবিন দাঁড়িয়ে আছে।চাঁদ আর উজানকে গাড়ি থেকে নামতে দেখে তাদের নিকট এগিয়ে যায় মিরা।অতঃপর চাঁদকে ধরে গাড়ির দিকে হেলান দিয়ে দাড় করিয়ে বলে,
“এখানেই দাড়াও”
রবিন চাঁদের সম্মুখে দাঁড়িয়ে বলে,
“পূর্ণ বা রিহুতো এখনো আসেনি চাঁদ”
মিরা অস্থির ভঙ্গিমায় বলে,
“আমার মন কখন যাবৎ বেশ অশান্তির মধ্য দিয়ে যাচ্ছে।আই জাস্ট হোপ…….”
মিরার কথা সম্পূর্ণ হবার পূর্বেই অরণ তাদের নিকট এগিয়ে আসতে আসতে বলে,
“বাজে বকিস না”
অরণের সাথে ফায়ানও এগোয় তাদের পানে তবে তার দৃষ্টি চাঁদেতে নিবদ্ধ।মেয়েটা এখনো তেমনই আছে যেমনটা পূর্বে ছিলো।বর্তমানে কেবল পেটটুকুই ফুলেছে।তবে বেশ ক্লান্ত,অবিশ্রান্ত লাগছে।মায়া হয় ফায়ানের।বুকে ব্যথা অনুভূত হয়।নিজের অনুভূতিকে সামলে সে মিরের পানে এগিয়ে এসে তার পাশেই দাঁড়ায়।অতঃপর চাঁদের পানে চেয়ে প্রশ্ন করে,
“এই অবস্থায় এত তাড়াহুড়ো করে আসাটা খুব জরুরী ছিলো?আমরা সবাই আসলেইতো হতো না?”
“রিহাপু আমার প্রেগন্যান্সি নিয়ে কিছু বলতে চেয়েছে ফায়ান”
মিরার প্রশ্ন,
“প্রেগন্যান্সি?”
চাঁদ জবাব দেয়,
“হ্যা আপু।সেদিন রিহাপু আমার আলট্রা করে গিয়েছিলো।তোমাদের জানিয়েছিলাম তো”
মিরা খানিক চিন্তিত হয়ে বলে,
“হ্যা বলেছিলে।তবে সত্যি সত্যিই কি কোনো প্রবলেম আছে?”
লম্বা শ্বাস টেনে চাঁদ বলে,
“আপাতত তাই মনে হচ্ছে।সেদিনও রিহাপু চিন্তিত ছিলো”
রবিন চাঁদকে বলে,
“রিহা তোমার কিছু রিপোর্ট আনতেই আমাদের রেখে চলে এসেছিলো চাঁদ।আই থিংক রিপোর্টে এমন কিছু ছিলো যার জন্য তোমার আলট্রা করাটা জরুরী ছিলো”
গম্ভীরস্বরে মুখ খোলে মির,
“তবে প্রশ্ন এখনো থেকেই যায়”
উজান জিজ্ঞেস করে,
“কীসের প্রশ্ন ভাইয়া?”
জবাব আসে অরণের কাছ হতে,
“এটাই যে সেদিন রিহা আলট্রা স্ক্যানে কী এমন দেখেছিলো”
.
.
.
.
.
.
.
.
.
.
.
.
.
.
.
ধানমণ্ডির রাস্তাগুলো পার হতে নিলে আকস্মিক গাড়ির দরজা খুলে রাস্তার পাশের গাছের আড়ালে ঝোপের মাঝে লাফ দিয়েই পড়ে রিহা।হাত তার বাধা।স্পিডে চলা গাড়ি হতে লাফ দেওয়া চারটেখানি কথা না।বেশ জখম প্রাপ্ত হয় সে।তবুও ছুটে চলেছে প্রাণপনে।গাড়ির স্পিড বেশি থাকায় অনেকখানি পথ যাওয়ার পর পূর্ণতার মনে হয় সে কোনোকিছু পড়ার শব্দ পেয়েছে।অতঃপর কপাল কুচকে পাশে তাকাতেই রিহাকে দেখতে না পেয়ে গাড়ির গতি কমিয়ে ইউ টার্ন নেয়।এত বড় রাস্তার কোন ভাগে মেয়েটা পড়েছে?অথবা পালালোই কোথায়?ভাবতে ভাবতে আশপাশের সবজায়গায় রিহাকে খুঁজে কোথাও না পেয়ে দাঁতে দাঁত চেপে চোখজোড়া বন্ধ করে গর্জায় পূর্ণতা,
“ইউ!”
অতঃপর ফের গাড়িতে উঠে স্পিড আরও বাড়ায়।উদ্দেশ্য ধাণমন্ডির পুকুরপাড়।
অনেকখানি পথ দৌড়ে এসে অবশেষে রবীন্দ্র সরবোরের গেইটের কাছে নিজ বন্ধুমহলসহ চাঁদকে দেখে আত্মা জুড়ায় রিহার।মুখে হাসি ফোটে।আরও জোরে দৌড়ায় সে তাদের নিকট যাওয়ার উদ্দেশ্যে।মেয়েটাকে যে করেই হোক বিপদমুক্ত করতে হবে।পথিমধ্যে দৌড়াতে দৌড়াতেই হাতের বাঁধন খুলতে সক্ষম হয়েছিলো রিহা।কেনোনা হাত শক্ত করে বাঁধলেও সম্মুখ দিয়েই বেঁধেছিলো পূর্ণতা।রিহা চাঁদের নিকট চেয়ে থেকে হাতের ইশারা করতে করতেই চেচায় উচ্চস্বরে,
“চাঁদ?এই চাঁদ?চাঁদ?”
আকস্মিক পরিচিত কোনো কন্ঠস্বর পেতেই সকলে আওয়াজ মোতাবেক সে পানে চাইতেই নজরে আসে র*ক্তাক্ত রিহার দৌড়ে তাদের নিকট ছুটে আসার দৃশ্য।কিয়ৎক্ষণ স্তব্ধ হয়ে রিহার পানেই তাকিয়ে থাকে সকলে।চাঁদ দৌড়ানোর চেষ্টা করে এগোয় রিহার পানে।রিহা হাতের ইশারায় বারণ করতে করতে বলে,
“না না!ঐখানেই,ঐখানেই ওদের সাথে দাড়াও চাঁদ”
রিহার কথায় থেমে যায় চাঁদের চরণ যুগল।রাস্তার পাশে এসে পড়েছে বলে চাঁদকে পেছনে নিতে তার নিকট এগোয় ফায়ান।কিন্তু মুহুর্তের মাঝেই অতিরিক্ত গতিতে চলন্ত এক প্রাইভেট কার তাদের দিকে ধেয়ে আসছে দেখে ফায়ানকে টান দেয় মির।চোখের পলকে রাস্তার মাঝে ছিটকে গড়াগড়ি খেতে দেখা যায় এক মেয়েলি র*ক্তাক্ত দেহখানা।ছটফটায় সে কিয়ৎক্ষণ।র*ক্তে রঞ্জিত হয় পাকা সড়ক।চোখ খুলেই ‘চাঁদ’ বলে চেচায় মিরা।উচ্চস্বরে চাঁদের নাম ধরে ডাকে ফায়ানও।অতঃপর আকস্মিক শোনা যায় এক মেয়েলি গগণবিদারী আ!র্ত!নাদ,
“রিহাপু!”
কি যে করুন শোনালো সেই কন্ঠধ্বনি!ঠিক যেনো সেইদিন যেদিন চাঁদ তার সর্বস্ব খুইয়েছিলো।অতঃপর ভারী পেট নিয়েই ছুটে চলে চাঁদ রিহার র*ক্তাক্ত দেহের পানে।এখনো মেয়েটা ছটফটাচ্ছে।ঘাড় বেকে আছে চাঁদের বিপরীত পাশে।অতঃপর চাঁদসহ বন্ধুমহল সকলের আ!র্তনাদই কানে ভাসে রিহার।শেষবারের ন্যায় তাদের দেখার জন্য হৃদয় ব্যাকুল হয়।ঘাড় বহু কষ্টে ঘোরায় সে।অতঃপর চোখ খুলে সে পানে চাইতেই দেখে দৌড়ে চাঁদই প্রথম তার শায়রে বসেছে।রিহার পানে চেয়ে ক্রন্দনরতবস্থায়ই তার গালে আলতো থাপড়িয়ে তাকে ডাকছে বারংবার।পিছু আসছে তার বন্ধুমহল।সকলের মাঝে প্রণয় আর পূর্ণতার আবছা ঝলকও দেখতে পায় রিহা।পূর্ণ হলো রিহার বন্ধুমহল।হৃদয় শীতল হলো তার,চোখ জুড়ালো।রিহা জানে প্রণয় আর পূর্ণতা তার হ্যালুসিনেশন তারপরেও সে প্রশান্তির হাসি হাসে।মৃদু বাকে তার ঠোট।পরিশেষে চাঁদের পানে চেয়ে নিজ হাসি গাঢ় করে রিহা।র*ক্তসমূহ চোখের ভেতর প্রবেশ করতেই দৃষ্টি ঘোলাটে হয় তার।অতঃপর ফের চোখ খোলার চেষ্টা করে হাসে রিহা।বহু কষ্টে বাম হাত উঁচিয়ে চাঁদের গাল বরাবর রেখে কোনোকিছু বলার চেষ্টা করেও বলতে পারেনা রিহা।চেয়ে থাকে চাঁদের পানে নির্নিমেষ।অবশেষে হাত তার শব্দ করেই পড়ে যায় চাঁদের কোলজুড়ে।সঙ্গে সঙ্গে ধরণী কাপানো আ!র্তনাদ করে মিরা।রিহার কাছে বসে জড়িয়ে নেয় বুকের মাঝে প্রাণের চেয়েও অত্যাধিক প্রিয় তার বান্ধবীকে।এরূপই এক দৃশ্য পূর্বেও সে দেখেছে,ঠিক বছর সাতেক পূর্বে।তার কোল জুড়েই হাতখানা পড়েছিলো অরণের।ভয়ংকর হৃদয় কাপে মিরার।রিহাকে দু’হাতে শক্ত করে বুকে চেপে ফের আর্তনাদ করে সে,
“রিহা?এই রিহারে!”
To be continued……
[বিঃদ্রঃগল্পটা সম্পূর্ণ কাল্পনিক]