মেডিকেল_ক্যাম্প Part:35

0
244

35-FF:#মেডিকেল_ক্যাম্প
Part:35

…….বাহিরে খুব জড়ো বৃষ্টি শুরু না হলেও গুড়িগুড়ি বৃষ্টি পড়তে থাকে।হঠাৎ দমকা হওয়া দিতে শুরু করে।বারান্দা দিয়ে বাতাসের সাথে সাথে ঝিরিঝিরি বৃষ্টির ফোটা রুমে আঁচড়ে পড়ে….আমাদের গল্পের নায়িকা হিয়া সে কি একজায়গায় বেশিক্ষণ বসে থাকার মেয়ে…..বাহিরের ঠান্ডা হাওয়া হিয়াকে নাড়া দেয়….ওহ এসে বারান্দার গ্রিল ধরে চোখ বন্ধ করে দমকা হাওয়া গুলো গায়ে মাখে…..এমন সময় পাশের বাড়ির কাকিমা চিৎকার দিয়ে ওঠে….

কাকিমা:রিয়া এই রিয়া কোথায় গেলি…ছাদ থেকে কাপড় গুলো তুলে আন জলদি….খুব বাতাস হচ্ছে উড়ে যাবে সব নাহলে….
…….কাকিমার কথায় হিয়ার হুশ ফেরে…..
হিয়া:কাপড় হ্যা হ্যা হ্যা কাপড়….ধ্যাত কি করে ভুলে গেলাম কাকিমা আজ এক বালতি কাপড় ধুয়ে দিয়ে ছাদে নেড়ে দিয়ে এসেছে।আমাকে বললো তখন আনতে।…এখন ওগুলো ভিজে গেলে…নাহ নাহ এখনো বৃষ্টি জরে শুরু হয়নি আমাকে এক্ষুনি ছাদে যেতে হবে…..(দাত দিয়ে আঙ্গুল কামড়াতে কামড়াতে)
……হিয়া কথা গুলো বলে হন্তদন্ত হয়ে ছাদে যেতে ধরলে….
উজান:কি হলো এভাবে কোথায় যাচ্ছেন
হিয়া:ছাদে যাচ্ছি সরুন তো?
উজান:সরবো না।এখন এই বৃষ্টি তে ছাদে গিয়ে কি করবেন আপনি।(দাতঁ খিচিয়ে)
হিয়া:আরে ছাদে আমার জামা আছে
উজান:কোন জামা আমাকে বলুন আমি এনে দিচ্ছি
হিয়া:ধুরো অনেক জামা আছে…সারুন তো আপনি…
…..হিয়া উজান কে পাশ কাটিয়ে ছাদে চলে যায়….
উজান:মিস মিএ ওয়েট…হিয়া…হিয়া আমিও যাবো আপনার সাথে….হিয়া….
…….ছাদে যেনো বাতাসের বেগ প্রচন্ড।আকাশে এক পাশে সাদা মেঘ তো এক পাশে ঘন কালো আধার।সাথে হালকা ফোটা ফোটা বৃষ্টি……
উজান:আপনি কি মানে, মনে মনে পন করেই নিয়েছেন যে এ জীবনে কখনো আমার কোনো কথা আপনি শুনবেন না….
হিয়া:জামা গুলো দেখুন তো এগুলো এ দুটে আমার নতুন জামা আপনি চিনতেন।পারতেন এগুলো চিনে তুলে আনতে।পড়ে তো সেই আমাকেই আবার আসতে হতো……
উজান:হয়েছে তোলা এবার আসুন।
হিয়া:আপনি কি হ্যা মানুষ না রোবট এতো সুন্দর একটা ওয়েদার এতো সুন্দর বাতাস আসছে আর আপনি খালি রুমে যাইযাই করছেন।
উজান:তা বেশ কি করবো আমি এখানে..
হিয়া:নিন এগুলো ধরে থাকুন হাতে….আমি একটু ওপাশে থেকে বাতাস খেয়ে আসি…
উজান:যা মন চায় করুন…
……….
উজান:হিয়া বৃষ্টি বাড়ছে রুমে চলুন…
হিয়া:যান আপনি আমি বৃষ্টিতে ভিজবো এমনিতেও এখনো স্নান করি নাই…..(ওপাশ থেকে চিৎকার করে)
উজান:(গিয়ে হিয়ার হাত ধরে)এক্ষুনি নিচে নামবেন আপনি আমার সাথে।এমনিতে হালকা ভিজে গেছেন…এর পর জ্বর আসলে…
হিয়া:আসবেনা জ্বর।এমন করছেন কেনো।আমার সাথে থাকতে ভালো লাগছে না বুঝি।ওহ বুঝতে পারছি মৃন ম্যাম এর কথা মনে পড়ছে আপনার তাই না…(চোখ পাকিয়ে)
উজান:না..তবে মনে হচ্ছে আপনাকে কিছু মনে করিয়ে দিতে হবে..
হিয়া:একদম কথা ঘোরাবেন না।জানি জানি সব জানি আমি….তা মৃন ম্যাম কেও নিয়ে আসতেন আপনার সাথে….
উজান:মৃন এর বিয়ে হয়ে গেছে।ওহ এখন ওর হাসবেন্ড এর সাথে ইতালি থাকে….
হিয়া:কি!আপনি কি বলছেন ভেবে বলছেন তো।উনি তো আপনাকে বিয়ে করবে বলে সাথে করে নিয়ে গেলো ইউ এস।তো আপনাকে ছেড়ে দিয়ে পারলো অন্য কাউকে বিয়ে করতে..
উজান:আপনি পারলে মৃন কেনো পারবে না।
হিয়া:এই আপনি না আমাকে একদম কথা শোনাবেন না বলে দিচ্ছি।
উজান:শোনাবো না তার আগে নিচে চলুন…
……….হিয়া উজান কে ভেংচি কেটে সামনের দিকে গিয়ে দুহাত মেলে চোখ বন্ধ করে উপরের দিকে চেয়ে বৃষ্টির ফোটা গায়ে মাখে…….আর আমাদের গল্পের নায়ক উজান সেই একি ভাবে আগের মতো হাতে এক গোছা কাপড় নিয়ে দাড়িয়ে দাড়িয়ে হিয়াকে দেখে…..
“”””দিল কা দাড়িয়া বেহি গ্যায়া”””
“””ইশক ইবাদত বান হি গ্যায়া””””
“””খুদকো মুঝে তো সওপ দে”””
“””মেরি জারুরাত তু বান গ্যায়া”””
………..
উজান:হয়েছে এবার।চলুন।আমার রান্না করতে দেড়ি হয়ে যাচ্ছে হিয়া….
হিয়া:আচ্ছা চলুন…দিন ওগুলো আমায়…
উজান:লাগবে না আপনি নিজে আগে সাবধানে সিড়ি দিয়ে নামুন…
…হিয়ার মনে আবার দুষ্টু বুদ্ধি চেপে বসে…উজানের কোলে উঠার… কিন্তু এখন আর কি বলেই উজান এর কলে উঠবে..আগে তো মন চাইলেই উঠতে পারতো এখন তো সেই সুযোগ নেই…
হিয়া:পুচকোঁ এতো দিন পর তোর বাবাকে পেয়েছি।উঠবো না কোলে ওনার তা কি হয়…একটু বুদ্ধি দে না তুই।কি বাহানা বের করি…

হিয়া:আআআ স্যার…
উজান:হিয়া হিয়া কি হলো পড়ে গেলেন কি করে..
হিয়া:জানি না স্যার কিভাবে যেনো পা টা উল্টে গেলো….ওহ কি ভীষন ব্যাথা করছে এই পা টায় বুলি…কাকিমা…ঠাম্মি ও হো ও কি ব্যাথা করছে।ইসস
উজান:আরে বুলি কে মা কে ডেকে কি হবে।কোথায় লেগেছে দেখতে দিন আমায়…দেখি কোথায় লেগেছে…কোথায় এখান টায় এখানে…
হিয়া:হুম এখানে।ইসস ভীষন ব্যাথা করছে।আমি এখন নিচে যাবো কিভাবে…আআ কি ধরেছে।
উজান:চুপ করুন আমি নিয়ে যাচ্ছি আপনাকে।আগে দেখতে দিন ভালোকরে।চুপ করুন…আবার কাদেঁ…বলছি তো কিচ্ছু হবে না…
….উজান কাপড় গুলো কাধে নিয়ে হিয়াকে কোলে তুলে সিড়ি দিয়ে নামতে ধরে।হিয়া দু হাত দিয়ে উজানের গলা জরিয়ে….
হিয়া:মনেমনে(দেখলি তো পুচকু আমি কিভাবে বাহানা বের করে উজান স্যার এর কোলে উঠলাম।আর উনি নিজেকে যে এতো স্মার্ট ভাবে পারলো বুঝতে,পারলো না তো।কি বোকা তোর বাবা টা ইসস)

“””মে ত্যানু ছামঝাবা কি”””
“””না তেরে বিনা”””
“”””লাগতা জি…তু কি জানে প্যায়ার মেরা”””
“””মে কারা ইনতেজার তেরা”””
“””তু দিল তু জান মেরি…মে ত্যানু ছামঝা বা কি””””

….উজান এসে হিয়াকে বিছানায় শুইয়ে দিতেদিতে….

উজান:আমার কোলে চড়তে এতো ভালো লাগে আপনার।একটা ভালো কোনো বাহান বের করলেও তো পারতেন…(ইয়েন ফানি বুম বুম)
হিয়া:ইয়ে ইয়ে আপনি আপনি কি বলতে চাইছেন আমি এই এই আপনার কোলে ওঠার জন্য এসব করেছি…মোটেই না…আমার সত্যি সত্যি লেগেছিলো….(চোখমুখ পাকিয়ে)
উজান:খালি নাটক ….নিন বসে বসে এসব ওল্টোপাল্টা বুদ্ধি মাথা থেকে বের করে কাপড় গুলো যেগুলো শুকিয়ে গেছে ওগুলো গুছিয়ে রাখুন আর বাকি গুলো বারান্দায় মেলে দিন…

………..রান্না ঘরে উজান খিচুড়ি বসিয়ে দিয়ে।বেগুন ভাজার জন্য বেগুন কেটে হলুদ মরিচ লবন মাখছিলো…আর ওর অজান্তে ওর নাকে মুখে কিছু মাখানো মশলা লেগে যায়…এদিকে হিয়ার বড্ড খিদে পেলে ও রান্না ঘরে এসে উজানের সাদা মুখে মশলার রঙ বেরঙরের ডিজাইন দেখে উন্মাদ গুলোর মতো হেসে পড়ে…..

উজান:কি হলো আপনি এভাবে হাসছেন কেনো..?…..স্টপ ইট হিয়া……আবার হাসছে….হিয়া(চিৎকার করে রাগে…)
হিয়া:আপনার আপনার মুখে…(হিয়া আবার হেসে দেয়…)
উজান:কি আমার মুখে…কোথায়…কি…
……উজান হাত দিয়ে ওর মুখ দেখতে গিয়ে আরো মশলা মাখে…হিয়ার কেলকেলানি হাসি তে ওর খেয়ালি নাই ওর হাতে মশলা লাগানো ছিলো..
হিয়া:আরে আরে আরে করছেন কি…থামুন আমি আসছি….(হিয়া আবার হেসে দেয়)
উজান:আগে আপনি আপনার এই হাসি টা বন্ধ করুন প্লিজ আমার ভীষন ইরিটেট লাগছে…ডিসগাস্টিং….
হিয়া:কই দেখি এদিকে আসুন…
…..হিয়া গিয়ে ওর ওড়না দিয়ে উজানের মুখে লাগা মশলা গুলো মুছে দেয়…আর উজান ফ্যাল ফ্যাল করে হিয়ার দিকে তাকিয়ে থাকে….

“””হে উড়ি উড়ি”””
“””হে খাবো কি পাড়ি”””
“”হে আঙ্গআরি খিলি”””
“””হে ছাড়ি রাতে গায়ি”””
“””খামোখা ছের দূ তো ভি তো ত্যাংক হোতি হে”””
“””খামোখা চুম্মলু তো ভি তো ত্যাংক হোতি হে”””

হিয়া:কি হ্যা আপনি…এভাবে কেউ রান্না করে…নিন হয়ে গেছে…পারলে মুখ টা একটু ধুয়ে আসুন না হলে ওরে জ্বালা করবে….
উজান:এজন্য এতো হাসি পাচ্ছিলো আপনার।ইডিয়ট……
হিয়া:শুধু আমার না আমার পুচকুর ও অনেক হাসি পাচ্ছিলো..(পেটে হাত দিয়ে..)…হিয়া আবার হাসে।

উজান:তাই…তা আপনার পুচকু ও বুঝি আপনার মতো ইডিয়ট…
হিয়া:(কপট রেগে গিয়ে)কি কি বললেন আমার পুচকু না মোটেও আমার মতো ইডিয়ট না ওহ তো আপনার মতো ইন্টিলিজেন্ট হবে বুঝলেন…(এটা বলে হিয়া জিভে কামড় দেয়…)…ইয়ে মানে ঔ ইয়ে আসলে ওর বাবার মতো…আপনার মতো না…
উজান:হুম বুঝলাম কার মতো…যাই হোক এখানে কিসের জন্য এসেছেন।কি চাই..
হিয়া:আমার না খুব খিদে পেয়েছে…কিছু আছে খাওয়ার…..
……উজান হিয়াকে দুটো আপেল কেটে দিয়ে খেতে বলে….উজান বেগুন গুলো প্যানে ছেড়ে দেয়…হিয়া পাশেই দাড়িয়ে আপেল গুলো খেতে খেতে উজানের সাথে বক বক করতে থাকে…

হিয়া:মৃন ম্যাম বিয়ে করে নিলো আপনার কষ্ট হলো না…
উজান:কষ্ট কেনো হতে যাবে….দেখি দূরে গিয়ে দাড়ান না একটু তেল ছিটায় আসবে….
হিয়া:আপনাকে খাইয়ে দেই এক পিচ…
উজান:না….তা আপনার হাসবেন্ড কে তো দেখলাম না সকাল থেকে ফোন করে একবারো আপনার কোনো খোজঁ নিলো…
হিয়া:ইয়ে মানে ওর না আজকে সকালে অনেক গুলো ওটি ছিলো তাই হয়তো…
উজান:তাই না..তা আপনার হাসবেন্ড কি এর মধ্যে আসবে না কলকাতা…
হিয়া:কেনো আমার হাসবেন্ড আসবে কি আসবে না আপনি জেনে কি করবেন…
উজান:না আছি যখন আর কদিন।ভাবলাম আপনার হাসবেন্ড এলে দেখা করে নেই একবার। এতো প্রশংসা করছেন আপনি আপনার হাসবেন্ড এর দেখতে ইচ্ছে করছে খুব…
হিয়া:(মনমনে)ইচ্ছে করে আমাকে জ্বালানোরর জন্য এসব করছেন উনি..কেনো যে কাকিমা এনাকে এখানে রেখে গেলো…
উজান:কি হলো চুপ করে আছেন যে…
হিয়া:কোথায় না তো।আর ওহ না অনেক বিজি আসতে পারবে না।আর ওর সাথে দেখা করার কোনো কি দরকার আছে আপনার…..এটা নিন…আমি স্নান এ গেলাম….এসে যেনো দেখি সব রান্না হয়ে গেছে…
উজান:যান..তবে আজ ওয়েদার ঠান্ডা বেশিক্ষণ স্নানে থাকার দরকার নেই…..
হিয়া:হিয়া আবার একটা ভেংচি কেটে চলে যায়..
উজান:ইডিয়ট…
…..হিয়া স্নান এ যায়।এদিকে উজানের সব রান্না শেষ…ওহ ফ্রেশ হয়ে রুমে গিয়ে সোফায় হেলান দিয়ে কিছুটা বিশ্রাম নেয়।এর মধ্যে হিয়া আসে স্নান করে..চুল দিয়ে তখনো টপ টপ করে পানি পড়ছে মেঝেতে….হিয়া এসে টাওয়াল টা বিছানায় ফেলে দেয়…….
উজান:এটা কি করলেন আপনি…ভেজা টাওয়াল টা ওভাবে বিছানায় রাখার জিনিস…
হিয়া:এই শুনুন আপনি না আমাকে শেখাতে আসবেন না আমি কি করবো আর না করবো।এটা আমার বাড়ি আমার যেখানে জিনিস রাখার আমি রাখবো…
উজান:চারটে মাস আমি ছিলাম না দেখে আপনার বড্ড পাখনা গজিয়েছে…সাহস বেড়ে গেছে…
হিয়া:হ্যা বেড়েছে তো…
উজান:একদম আমার মুখের উপর তর্ক করবেন না হিয়া….(হঠাৎ মেঝেতে উজানের চোখ গেলে ওহ দেখতে পারে হিয়ার চুল মোছা হয়নি ভালো করে। এখনো পানি ঝরছে….)
আর এসব কি আপনাকে বারবার আমি বলছি ঠান্ডা লেগে যাবে তারপরো আপনি..
হিয়া:কি করলাম আবার আমি..বৃষ্টিতে গোসল করতে দিলেন না…স্নান ও তাড়াতাড়ি করে আসলাম…এখন আবার কি…
উজান:আপনি কি কিছু করেন নাকি আবার…এদিকে আসুন….
…..উজান টাওয়াল টা নিয়ে,হিয়াকে বিছানায় বসে দিয়ে হিয়ার চুল গুলো মুছে দিতে থাকে…….

“”””তুঝকো মে রাখলু বাহা””””
“”””যাহা পে কাহি হো না মেরা একিন”””
“”মে জো তেরা না হুয়া””””
“””কিছি কা নেহি কিছি কা নেহি”””

হিয়ার মাথায় টাওয়াল পেচিয়ে দিয়ে…

উজান:নিন এবার গিয়ে চুপচাপ ওখানে গিয়ে শুয়ে থাকুন।আমি আসছি…
হিয়া:আপনি স্নান করবেন না..?
উজান:স্নান করে পড়বো টা কি…
হিয়া:দাড়ান….
……….হিয়া গিয়ে আলমারি থেকে একটা শার্ট আর জিংকস নিয়ে আসে…..
হিয়া:এই নিন….
উজান:এসব আপনার কাছে…!
হিয়া:হ্যা মানে ঔ কাকিমা রাখতে দিয়েছিলো তাই…
উজান:তাই না….(হিয়ার কোমড় ধরে কাছে টেনে এনে…..)
হিয়া:এসব এসব কি করছেন।আপনি ভুলে যাচ্ছেন হ্যা আমি কিন্তু এখন অন্য কারো…
উজান:(হিয়ার গাল গুলো নাড়তে নাড়তে)হলেন না হয় অন্য কারো।একদিন তো আমার ছিলেন.
হিয়া:ছিলাম।এখন আর নাই…..
উজান:(হিয়ার মাথা থেকে টাওয়াল টা খুলে)যান গিয়ে শুয়ে পড়ুন আমি এসে খাবার দিচ্ছি….
………হিয়া গিয়ে বিছানায় বসে টিভি ওন করে…বাহিরে খুব ঝড় শুরু হয়…ঘুটঘুটে অন্ধকার….উজান স্নান ছেড়ে এসে…

উজান:পড়াশুনা তো কিচ্ছু নেই আপনার ঔ এক জিনিস করে বের হোন…সকাল থেকে টিভির সামনে এভাবে না আপনি জীবনেও ফাইনাল ইয়ায় টপকাতে পারবেন না….
হিয়া:দেখা যাবে….
……….
উজান:হিয়া….হিয়া….খেতে আসুন….হিয়া….সব বেড়ে দিছি আমি…..হিয়া….
হিয়া:এদিকে নিয়ে আসুন না…স্যার…
উজান:না আপনি এদিকে আসুন…
হিয়া:না আপনি এখানে বেড়ে সব নিয়ে আসুন….
উজান:হিয়া আমার চেচাঁতে ভালো লাগছে না…ঔষধ খেতে দেড়ি হয়ে যাচ্ছে….হিয়া….
………..উজান দু প্লেটে ওর আর হিয়ার জন্য সব বেড়ে টিভির রুমে নিয়ে আসে…….
উজান:আপনি তো আপনি কথা শুনবেন না।তো শুনবেনই না।
হিয়া:এনেছেন…দাড়ান দাড়ান…আমি কিছু বিছিয়ে দেই আগে…..
…..উজান আর হিয়া বিছানায় বসে খেতে শুরু করে……
হিয়া:একটা কাচা পেয়াজ কেটে আনলে না খুব ভালো হতো…
উজান:আমি পারবো না।আমার আর এ্যানার্জি নেই…
হিয়া:ঠিক আছে আপনাকে আনতে হবে না আমি কেটে আনছি…আপনার জন্য আনবো…
উজান:না আমি ওসব কাচা পেয়াজ টেয়াজ খাই না আপনি জানেন ভালো করে….
হিয়া:বেশ আমি আমার জন্যই আনছি তাহলে..
…..হিয়া পেয়াজ কাটতে গেলে ওর হাত ফোস করে কেটে যায়…আর এক নিমিষে মেঝে রক্তের ছিটায় ভরে যায়….
হিয়া:আআ
উজান:কি হলো আবার….চেঁচাচ্ছেন কেনো
হিয়া:না স্যার কে বলা দেখা যাবে না।আমাকে তাহলে বকতে বকতে শেষ করবে…..
উজান:হিয়া?
হিয়া:না না কিছু হয়নি আপনি শুরু করুন আমি আসছি….কি করি আমি এখন বেন্ডেজ বেন্ডজ কোথায়….ওসব তো বুলি গুছিয়ে রাখে….এখন কোথায় খুজি…
উজান:কি করছে উনি।এতোক্ষন লাগে একটা পেয়াজ কাটতে….হিয়া হিয়া……কি করছেন কি এখানে দাড়িয়ে দিড়িয়ে।হয়নি পেয়াজ কাটা….
……..হিয়ার হাতে চোখ পড়লে….
উজান:হিয়া….এসব এসব কি করে হলো…কি হ্যা আপনি…আমাকে ডাকবেন না…
হিয়া:পেয়াজ টা কাটতে গিয়ে…
উজান:হোয়াট…আমারি ভুল হয়েছে আমার আপনাকে না পাঠিয়ে নিজে এসে…..খুব ব্ল্যাড বের হয়েছে না….ব্যাথা করছে খুব….দেখি দেখি এদিকে আসুন…..
হিয়া:কিছু হয়নি আমার। আপনি এতো ব্যাস্ত কেনো হচ্ছেন আমি ঠিক আছি….
উজান:দেখতেই তো পাচ্ছি কি ঠিক আছেন আপনি…ব্যান্ডেজ কোথায় থাকে আমাকে বলুন…
হিয়া:ওগুলো বুলির রুমে থাকে…কোথায় যে আছে এখন….
…….উজান গিয়ে বুলির রুম থেকে ব্যান্ডেজ এনে হিয়াকে ব্যান্ডেজ করে দিয়ে রুমে নিয়ে আসে….
উজান:মা ঠিকি বলে আপনাকে একা রাখা একদমই ঠিক না।হিয়া আপনি কবে বড়ো হবেন।এখন আর আপনি একা নন এতো বার করে কেনো বলতে হয় আপনাকে কথা টা।
হিয়া:ঠিক আছে আর হবে না।আসুন একসাথে আগে খাবার টা খাই……
উজান:ওয়েট।আমি খাইয়ে দিচ্ছি আপনাকে।
হিয়া:আমি পারবো।
উজান:হাত কেটে গেছে তারপরো বলছেন পারবেন!
হিয়া:আচ্ছা ঠিক আছে দিন খাইয়ে….
…..উজান হিয়াকে খাইয়ে দিতে থাকে আর হিয়া ঠাকুমারঝুড়ির মতো জমে থাকা এই চারমাসের গল্প গুলো চালু করে দেয়….

“””””হতে পারি রোদ্দুর হতে পারি বৃষ্টি “””
“””হতে পারি জানলার এ হাওয়া ওহ তোমারি জন্য””
“””হতে পারি ডাকনাম হতে পারি বদনাম”””
“””হতে পারি সত্যি তোমারি জন্য”””
“””শুধু তুমি চাও যদি সাজাবো আবার নদি”””
“””এসেছি হাজার বারনে”””
“””শুধু তোমারি জন্য…শুধু তোমারি জন্য””””
………
উজান:নিন হয়ে গেছে।এবার এই পানি টা নিন সাথে এই ঔষধ দুটো খেয়ে নিন…
হিয়া:হুম…
উজান:আমি এগুলো রেখে আসছি…
……হিয়া ঔষধ গুলো খেয়ে বিছানায় এসে শুতে না শুতেই কারেন্ট চলে যায়…বাহিরের ঘুটেঘুটে অন্ধকার আর দমকা হাওয়ায় বারান্দার পর্দা উড়ছে।সাথে বজ্রপাতের বিকট শব্দ…

হিয়া:যাহ কারেন্ট চলে গেলো তো…স্যার উজান স্যার স্যার কোথায় আপনি খুব ভয় করছে তো…স্যার
উজান:এভাবে ষাড় এর মতে চেঁচাচ্ছেন কেনো।যেখানে আছেন ওখানে বসে থাকুন…আমি আসছি……কি যে বাড়ি একটা টর্চ মোম কিচ্ছু নেই…
হিয়া:স্যার…
উজান:বললাম না আসছি।মোম কোথায়?টর্চ নেই?..
হিয়া:আমি জানি না ওগুলো কোথায়।ওসব বুলি গুছিয়ে রাখে।ওকে ফোন দিয়ে শুনুন…
…..হিয়া ভয়ে উঠে দাড়ায়।উজান ফোনের টর্চ ওন করে হিয়ার কাছে আসে…

উজান:বাড়িতে কোথায় কি জিনিস থাকে আপনি জানেন না…
হিয়া:আরে আমি সারাদিন কতো পড়াশুনো করি,পুচকু কে সময় দেই,কলেজ করি আমার
কি আর সময় আছে বলুন ওসব দেখে রাখার..

উজান:পড়াশুনা করেন আপনি আমাকে সেটা বিশ্বাস করতে বলছেন।বিকেল হতে চললো একটা বই নিয়ে বসেছিলেন একবারো আজ….
হিয়া:ওহ তো আপনি আছেন জন্যই….
উজান:আর কতো এক্সকিউজ দিবেন আপনি…

…..হিয়া সামনে এগুতে ধরলে নিচে কিসের সাথে একটা ধাক্কা খেয়ে উজানের গায়ের উপর দিয়ে দুজনে বিছানায় ধপাস করে পড়ে যায়…

হিয়া:আউচ আআ
উজান:হিয়া লাগেনি তো আপনার আপনি ঠিক আছেন তো।
হিয়া:নাহ আমি ঠিক আছি…
…..হঠাৎ মোড়ে একটা গাছে বিকট আওয়াজ করে বিদ্যুৎ পড়ে….ভয় পেয়ে হিয়া উজান কে সপাটে জরিয়ে ধরে…
উজান:এতো ভয় কেনো পেলেন আমি আছি তো..
হিয়া:কারেন্ট না পর্যন্ত এখানে থাকুন প্লিজ…
উজান:(মনে মনে)আমি তো এভাবে আপনাকে সবসময় আমার বুকে আগলে রাখতে চাই হিয়া……ঠিক আছে আমি আছি..দাড়ান বালিশে মাথা টা দিয়ে নেই….
উজান:আচ্ছা হিয়া আপনার পরীক্ষার আর কতোদিন আছে…
হিয়া:কিসের পরীক্ষা
উজান:ফাইনাল ইয়ায় এর
হিয়া:এখনো অনেক টাইম আছে সাত মাসের মতো…কেনো?
উজান:না এমনি।আচ্ছা বাবুর কতো মাস হলো..
হিয়া:তৃনা ম্যাম এর হিসাবে ধরলে আজ চারমাস ৬দিন হবে..বলুন না কেনো…?
উজান:না আপনি ঘুম দিন একটু।আমি আছি আপনাকে ধরে….
….হিয়া উজানের বুকে মুখ গুজে দিলে কিছুক্ষণ পর ঘুমিয়ে পড়ে….
উজান:মনেমনে(তাহলে হিসাব করলে বাবু হওয়ার পর হিয়া আরো দুমাসের মতো পাবে পরীক্ষার জন্য তৈরি হতে….এ কদিন ওনাকে নিয়ে আমাকে বসতে হবে না হলে শেষের দিকে আমি সবটা শেষ করে উঠতে পারবো না….আর হিয়ার কোনোভাবে ইয়ায়র গ্যাপ যাক আমি চাই না…)
……উজান হিয়ার মাথায় হাত বুলাতে বুলাতে হিয়ার সাথে ওই ও ঘুমিয়ে পড়ে….বাহিরের থম থম পরিবেশ।বারান্দা থেকে আসা ঠান্ডা বাতাস।আজ কতোদিন পর হিয়া আবার তার উজান স্যার এর বুকে মাথা গুজেঁ শান্তিতে ঘুমোচ্ছিলো…

….রাত ৭:৩০দিক হিয়ার খিদে পেলে ঘুম ভেঙ্গে যায়।হিয়া নড়ে উঠলে উজানের ও ঘুম ভাঙ্গে…তোতোক্ষনে কারেন্ট এসে গিয়ে ঘর আলোকিত….
উজান:উঠে গেছেন…
হিয়া:হ্যা খিদে পেয়েছে…
উজান:আপনার না পুচকুর…?
হিয়া:(হিয়া হেসে দেয়)দুজনের….
উজান:ঠিক আছে আপনি হাত মুখ ধুয়ে নিন আমি নাস্তা নিয়ে আসছি….
…..হিয়া ফ্রেশ হয়ে এসে আবার টিভির সামনে বসলে উজান এসে রিমোট নিয়ে টিভি ওফ করে দেয়…
হিয়া:(কপট রেগে গিয়ে)টিভি টা কেনো ওফ করলেন।ওন করুন এক্ষুনি ওন করুন বলছি।
উজান:অনেক হয়েছে সারাদিন টিভি দেখা।নাস্তা টা খেয়ে নিয়ে ফাইনাল ইয়ায় এর বই গুলো নিয়ে আসুন আমি একটু দেখি কি কি শেষ করেছেন এই কটা মাস….
হিয়া:আমি আজকে পড়বো না।আমি প্রতিদিন পড়ি বিশ্বাস না হলে বাবা কে ফোন করুন বাবা বলে দেবে….কিন্তু আমি আজকে পড়বো না….
উজান:শেট আপ….যা বলছি তা করুন….খেয়ে নিন তাড়াতাড়ি…..
….খাওয়া হলে উজান কয়েকটা বই নিয়ে হিয়াকে পড়াতে বসায়…..
হিয়া:(মনেমনে)পুচকু দেখলি তো তোর বাবা কেমন।তুই তোর বাবার মতো হবি না তো।আমাকে জ্বালাবি না তো…এতোদিন পর আজ দুজনে একসাথে…চলেই তো যাবে দুদিন পর…আজকের দিন টা কি না পড়ালে হতে না…
উজান:যাক এটা জেনে ভালো লাগলো।এ অবস্থা তেও আপনি আপনার পড়া টা ভালো করে চালিয়ে গেছেন…
হিয়া:শুনুন স্যার আমি না একটা মেয়ে।আর একটা মেয়ে কি কি পারে তার কোনো ধারনা নেই আপনার।আমিও দেখি দিবো একটা মেয়ে কিভাবে সন্তান জন্ম দিয়েও তার কিছুদিন পর এমবিবিএস ফাইনাল ইয়ায় এ্যাটেন্ড করে…
উজান:সময় আসলে দেখা যাবে…এখন এটা আমাকে পড়ে দিন তো….
হিয়া:আপনি দু ঘন্টা ধরে আমাকে পড়াচ্ছেন আমি কিছু বলি নি।কিন্তু এখন এখন আর আমি পড়বো না….
…..হিয়া উঠে গিয়ে বারান্দায় চলে যায়।ঝড় কমলেও দমকা হাওয়া এখনো আছে…
উজান:হিয়া হিয়া….
হিয়া:আমি এখন এখানে কিছু ক্ষন বাতাস খাবো।একটু মাথা টা রিলাক্স করবো।তারপর যদি মন চায় তখন গিয়ে ওটা পড়া কম্পিলিট করে দিবো…
উজান:ঠিক আছে….
হিয়া:আচ্ছা একটা কথা বলি।
উজান:বলুন?
হিয়া:মৃন ম্যাম তো বিয়ে করে নিলো।আপনি বিয়ে করবেন না…
উজান:কেনো করবো না।মৃন নেই তো কি হলো নিলীমা তো আছে…আর নিলীমা আমার ছোট বেলার বন্ধু আমাদের মাঝে কেমিস্ট্রি টাই অন্য রকম…(হিয়াকে রাগানোর জন্য)

……হঠাৎ উজানের কথা গুলো কোথায় যেনো গিয়ে হিয়ার খুব খারাপ লাগে।হিয়ার বুক ফেটে কান্না চলে আসে……
উজান:আর তাছাড়া আমাদের টিউলিপের সাথে ওদের একটা শেয়ার এর ব্যাপার আছে।আর আমি তো ভেবেছি বিয়ের পর আমি আর নিলীমা গিয়ে ইউ এস এ তেই সেটেল হয়ে নিবো।ওখানে একটা সুন্দর সংসার হবে আমাদের।আর দেখুন তো আজ ওয়েদার টাও কতো সুন্দর।এ রকম ওয়েদারে তো আপনাকে চাইলেও আমি জোরায় ধরতে ভালোবাসতে পারবো না আপনি তো এখন অন্য কারো।বিয়ের পর আমি নিলীমা এভাবে এক বারান্দায় একসাথে…

…….হিয়া এবার হাউমাউ করে কেদেঁ ফেলে…
উজান:হিয়া…….হিয়া আপনি কাঁদছেন।হিয়া প্লিজ।কি হলো।আমি কিছু করেছি।ব্যাথা….ব্যাথা হচ্ছে কোথাও।আমাকে বলুন কেনো কাঁদছেন আপনি।কষ্ট হচ্ছে। হিয়া….

…….হিয়া গিয়ে উজানের শার্টের কলার ধরে ওর কাছে টেনে এনে উজানের ঠোটে ওর ঠোট ডুবিয়ে দেয়…হিয়া উজানকে এমন ভাবে শক্ত করে জরিয়ে ধরে যেটায় হিয়ার নখের আঘাতে উজানের পিঠে আছড়ে ভরে যায়।উজানো নিজেকে সামলাতে না পেরে হিয়াকে শক্ত করে জরিয়ে ধরে….মনে হয় যেনো বুকের এই রক্ত মাংস হাড় হাড্ডি গুলো না থাকলে দুজন দুজন কে নিজেদের কলিজায় ঢুকিয়ে নিতো…
…….বজ্রপাত এর হালকা শব্দ।হালকা বিদ্যুৎ এর ঝলকানি…সাথে রাতের দমকা হাওয়া।

“””খামোসিয়া আওয়াজ হে”””
“””তুম ছুননে তো আও কাভি”””
“””ছু কার তুমহে”””
“”””খিল যায়ে বো যারা ইনকো সামহালো আভি”””

অনেক অনেক অনেক ক্ষণ পর হিয়া উজান কে ছেড়ে দেয়…হিয়ার চোখ ভর্তি পানি।কি হলো উজান কিছু বুঝতে পারছে না।হিয়ায় চোখ গুলো লাল হয়ে ফুলে গেছে…
উজান:হিয়া আপনি কাঁদছেন কেনো আমার কষ্ট হচ্ছে..
…..হিয়া দৌড়ে বাথরুমে গিয়ে গেট লক করে দিয়ে হাউমাউ করে কাঁদতে শুরু করে….উজান হিয়ার পেছন পেছন এসে…
উজান:হিয়া কি হলো হিয়া…হিয়া দরজা টা খুলুন না হিয়া।আপনি এভাবে কাঁদছেন কেনো…..হিয়া আমার কষ্ট হচ্ছে…..হিয়া খুলুন না দরজা টা… হিয়া….কি কি করেছি আমি।নিলীমার কথা বললাম বলে আপনার খারাপ লাগছে….হিয়া….আর হবে না হিয়া….আমি তো শুধু মজা করছিলাম….হিয়া….প্লিজ হিয়া আমার খুব কষ্ট হচ্ছে….হিয়া আপনার উজান স্যার এর খুব কষ্ট হচ্ছে….হিয়া প্লিজ একবার গেট টা খুলুন…ঠিক আছে গেট খুলতে হবে না…কিন্তু কান্না টা থামান..আপনি জানেন না আপনি কাঁদলে আমি সহ্য করতে পারি না…হিয়া আমার বুক টা শেষ হয়ে যাচ্ছে প্লিজ চুপ করুন….
……হিয়ার কান্নার আওয়াজ উজানের বুক টা ছিড়ে শেষ হয়ে যায়___

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here