#এ_শহরে_বৃষ্টি_নামুক পর্ব ১৯
#লেখিকা_মালিহা_খান❤️
ছাত্রীকে পড়ানোর ফাঁকে ফাঁকেই জানালা দিয়ে বারবার আকাশের মতিগতি পরখ করে নিচ্ছে রাত্রি। পাথর পাথর মনটাও জানপ্রাণ দিয়ে চাইছে আজ যেনো বৃষ্টি নামে।কিন্তু মেঘ আর তার মনের কথা শুনছে কই?সে তো ভেসে ভেসে পাড়ি জমিয়েছে কোথাকার কোন শহরে।আর এদিকে মেঘবালকের ব্যক্তিগত মেঘবালিকার যে এ শহরে বৃষ্টি দরকার সেদিকে গোটা আকাশের কারো খেয়াল নেই।রাত্রি মুখ ভার করলো।বৃষ্টির সাথে আজ প্রচন্ড ঈর্ষা হচ্ছে।মানুষটার যে এই বৃষ্টি ভীষণ পছন্দের!
সন্ধ্যা ছ’টা…
রাস্তার হেডলাইট জ্বলছে নিভছে।আবার কতকগুলো একেবারেই নষ্ট।আলো নেই।কয়েকটা শুকনো পাতা বাতাসে লুঁটোপুঁটি খাচ্ছে।বৃষ্টি না হলেও বাতাস ছেড়েছে।ঠান্ডা বাতাস।চুল ওড়না এলোমেলো করে দিচ্ছে নিজ দায়িত্বে।
গেটের কাছাকাছি আসতেই রাস্তার ধারে নিভ্রানকে অপেক্ষা করতে দেখা গেলো।গায়ে সেই আকাশী শার্টটাই।ব্রাশ করা চুলগুলো বাতাসের ঝাপটায় একটু অগোছালো।রাত্রিকে দেখা মাত্রই দ্রুতপায়ে এগিয়ে এলো সে।
রাত্রির চেহারা তখন বিধস্ত,মলিনতায় ছেঁয়ে আছে।চোখ ভেঙে ঘুম পাচ্ছে।সটান হয়ে বিছানায় গা এলিয়ে দেয়াটা এখন স্বর্গীয় সুখ মনে হচ্ছে।
—“আপনাকে অসুস্থ দেখাচ্ছে রাত।জ্বর আছে?দেখি।”বলে রাত্রির গালে-গলায় নিজের ঠান্ডা হাতটা ছুঁইয়ে দিলো নিভ্রান।সেই নিবিড় ছোঁয়ায় রাত্রি কেঁপে উঠলো খানিকটা।নিভ্রানের কপালে সুক্ষ চিন্তার বলিরেখা।প্রিয়জনের অসুস্থতার বেদনা!গা টা হাল্কা গরম।তবে জ্বর উঠেনি।
রাত্রিকে কিছু বলার সুযোগ না দিয়েই সে দ্রুত একটা রিকশা থামালো।চেহারায় চাপা রাগের পরিফুস্ট আভাস।
মাথাভর্তি চুল গুলা যখন হাত দিয়ে পিছের দিকে ঠেলে দেয়া হচ্ছে কি যে সুদর্শন দেখাচ্ছে মানুষটাকে।রাত্রি চোরা চোখে তাকালো।সোজাসাপটা তাকালে তো আবার ধরা পড়ে যাবে।নিভ্রান যে তাকে ধরে ফেলেনি সেটা ভুল কথা।রাত্রিকে আড়চোখে তাকিয়ে থাকতে দেখে সে মাথা ঝুঁকিয়ে হাসি থামালো।হাত ধরে ব্যস্ত গলায় বললো,
—“উঠুন।”
রাত্রির ঘোর কাটলো।কি একটা অবস্থা!লোকটা রিকশা দাড় করিয়ে রেখে অথচ সে নাকি ফ্যাল ফ্যাল করে চেয়ে ছিলো।সে উঠে বসলো।নিভ্রান উঠলে রিকশা চলতে শুরু করলো।
লম্বা হওয়ার দরুন রিকশার হুটতোলা থাকলে মাথাটা একটু কাত করে নামিয়ে রাখতে হয় নিভ্রানের।নতুবা বারবার বারি লাগে।এই রিকশাটা বোধহয় একটু বেশিই ছোট।ফলাফল না চাইতেও রাত্রির মাথার সাইডের সাথে তার মাথা লেগে আছে।একহাত রাত্রির পিঠের পিছ দিয়ে নিয়ে রিকশার হুটের সাথে ঠেস দেয়া।মেয়েটার কপালের চুলগুলো উড়ে মুখের উপর সুড়সুড়ি দিয়ে যাচ্ছে।রাত্রি লজ্জিত ভঙ্গিতে বারবার চুল,জামা ঠি ক করে যাচ্ছে।কামিজের দু’পাশে ফাঁড়া অংশটা বাতাসের উল্টো গতিতে কোলের কাছ থেকে সরে যাচ্ছে।কি বিশ্রি অবস্থা!তার উপর লোকটা এত এত কাছে।নিশ্বাসের বহর তার উন্মুক্ত কাঁধজুড়ে।বাতাসে ঘোমটা পড়ে যাওয়ায় ওড়না নামিয়ে কাঁধের দু’পাশ দিয়ে ছেড়ে দিয়েছিলো।মনে হচ্ছে জীবনের সবচেয়ে বড় ভুল।যতবার চুল ঠি ক করছে ততবার নিভ্রানের গালে হাতের উল্টোপিঠ লেগে যাচ্ছে।লজ্জায় বুঁদ হয়ে আরো একবার চুলের গোছা কানের পিছে গুঁজলো রাত্রি।হাত কাঁপছে।নিভ্রানের স্পষ্ট টের পাচ্ছে মেয়েটার কাঁপুনি।
খুঁকখুঁক করে গলা ঝাড়লো সে।রাত্রি একটু তাকাতেই চোখাচোখি হয়ে গেলো।রাত্রিই চোখ নামিয়ে নিলো প্রথমে।নিভ্রান বারকয়েক পলক ঝাপটিয়ে সামনের দিকে তাকিয়ে গম্ভীর কন্ঠে বললো,
—“এত লজ্জার কিছু নেই।আমিই তো।”
কথাটা যেনো লজ্জা উপশমের বদলে তা আরো শক্তপোক্ত করে দিলো।রাত্রি দিরুক্তি করলোনা।তবে মনে মনে খুব চেঁচালো,”আপনি বলেই তো এত লজ্জা লাগছে।”
কেটে গেলো আরো কিছুক্ষণ।সন্ধ্যা হয়ে গেছে বিধায় চারিপাশে তেমন আলো নেই।সব আবছায়া,আলোকশূন্য।রাত্রির চোখ পড়লো নিভ্রানের পায়ের দিকে।লোকটা দিব্যি এই ক্ষত পায়ে জুতো পড়ে আছে।ব্যান্ডেজ করে দিয়েছিলো।আসার সময় খেয়াল করেনি।কে জানে সেটাও খুলে ফেলেছে কিনা?
খানিক আমতা আমতা করে সে প্রশ্ন করলো
—“আপনি এই পায়ে এভাবে ঘুরে বেড়াচ্ছেন কেনো?”
নিভ্রান আবারো উষ্ণ প্রশ্বাসের ঝড় বইয়ে দিয়ে উওর দিলো,”ব্যান্ডেজ করা আছে তো।সমস্যা নেই।”
রাত্রি শিরশির করে উঠলো।কাঁধের পাশটা মনে হচ্ছে অবশ হয়ে যাবে আজ।সাধারণ কথাটাও কেমন ভয়ংকর ঠেকছে।কথা বলা যাবেনা।কোনো কথা বলা যাবেনা।সে কথা বললে নিভ্রানও কথা বলবে।আর নিভ্রান কথা বললেই বিপদ।ঘোর শনি!তার সেই ভাবনা চিন্তাটা এক ধাক্কায় গুঁড়েবালি করে দিলো ফোনের রিংটোন।নিভ্রানের ফোন বাজছে।রাত্রি দাঁত দিয়ে ঠোঁট কামড়ে ধরলো।অদৃশ্য কোনো হাত যেনো ঠাস ঠাস করে কপাল চাপড়ে দিলো।নিভ্রান ফোনটা পকেট থেকে বের করতেই দ্রুত তার হাতের কব্জি ধরে ফেললো সে।নিভ্রান প্রশ্নাত্বক চাহনী নিক্ষেপ করতেই কাটকাট গলায় বললো,
—“আপনি ফোন ধরবেননা।”
নিভ্রানের প্রশ্ন আরো গাঢ় হলো।রাত্রি তখনো হাত ধরে আটকে রেখেছে।বিস্মিত কন্ঠে সে বললো,”কেনো?”
রাত্রি চোখ সরিয়ে বললো,”বলেছি তাই।”
নিভ্রান কিছুক্ষণ নিমীলিত,নিমজ্জিত চোখে মেয়েটাকে দেখে নিলো।তারপর সাইড বাটন চেপে রিংটন বন্ধ করে হাতটা হাঁটুর উপর নামিয়ে রাখলো।একটু সময় যেতেই আবার স্বউদ্যমে বাজতে শুরু করলো ফোন।নিভ্রান একপলক তাকালো।দ্রুত রিসিভ করে অধৈর্য গলায় বললো,
—“ইম্পর্টেন্ট কল,একটামিনিট রাত।”
রাত্রির যেনো দমবন্ধ হয়ে আসলো।নিভ্রান ব্যস্ত ভঙ্গিতে কথা বলে যাচ্ছে।বোঝা যাচ্ছে,বেশ জরুরি।আচ্ছা,সে কি এখন অজ্ঞান হয়ে যাবে?মাথা ঘোরাচ্ছে কেনো?
নিভ্রান ফোন নামালো একটু পরেই।পকেটে ঢোকাতে ঢোকাতে ঠাট্টার স্বরে বললো,
—“আপনি এতো লজ্জা পান রাত।এখনতো আমারই লজ্জা লাগছে।মনে হচ্ছে কথা বলাটাও অপরাধ।”
রাত্রি ফাঁকা ঢোক গিললো।চাপা গলায় জোর দিয়ে বললো,”অপরাধই,আপনি চুপ করুন।”
নিভ্রান দূর্বোধ্য হাসলো।দুরত্ব কমিয়ে জ্বালাময়ী কন্ঠে বললো,
—“আপনাকে লজ্জা পেলে ভীষণ সুন্দর দেখায় রাত।আপনাকে লজ্জা দেয়ার জন্য হলেও আমি এখন অনবরত কথা বলে যাবো।”
~চলবে~
[আজকে অনেক ছোট হলো।এত ছোট দিতে চাইনি তবুও দিলাম।বড় করে লিখার সময় পাইনি।]