❤️(56_57)❤️
FF: # মেডিকেল_ক্যাম্প
Part:56
মিনাক্ষীর কেবিন:
উজান:আসতে পারি
মিনাক্ষী:হুম এসো তোমারি জন্য ওয়েট করছিলাম……বসো…
উজান:কি বলবেন একটু জলদি বলুন।আমি ওপিডি ফেলে এসেছি…
মিনাক্ষী:(একটা শয়তানি হাসি দেয়)….বেশ…দেখো উজান এখন তোমার কাছে সব আছে তোমার মা আছে বাবা আছে হিয়া আছে তার উপর আবার তোমার মেয়েও আছে…আমার কে আছে বিহান ছাড়া…
উজান:(উজানের একটু হলেও খারাপ লাগে সত্যি তো মিনাক্ষী এখন একা..পাবলো জিনি ও ওর পক্ষে নেই)…..
মিনাক্ষী:কিন্তু ছোট থেকে তো আমিই তোমাকে দেখে রেখেছি।তোমার কিসে ভালো হয় তোমার জন্য কোনটা বেটার।বেস্ট স্কুল বেস্ট কলেজ সব সব তোমাকে আগে পেফার করেছি বিহান কে বাদ দিয়ে।এমনকি তুমি নিজে থেকে তো রাজিই হও নি লান্ডনে পড়তে আমি তোমাকে জোড় করে পাঠিয়ে দিয়েছি……কম ইনভেস্ট তো করি নি আমি তোমার উপর…
উজান:হুম ইনভেস্ট তো করেছেন।এখন কি সেসব ফেরত পেতে চাইছেন?
মিনাক্ষী:চাওয়া টা কি ভুল উজান।
উজান:কি চাই আপনার
মিনাক্ষী:আমার কিছু চাই না….তবে যেহেতু এই টিউলিপের ৫১%শেয়ার এখনো আমার নামে আছে তাই আমি ভেবেছি আমি এটা দিপক এর কাছে..
উজান:এক সেকেন্ড এক সেকেন্ড আপনি কি বলতে চাইছেন আপনি এই শেয়ার গুলো দেবরয় আঙ্কেল এর কাছে..
মিনাক্ষী:হুম।আমার এখন অনেক টাকার দরকার কিছু পার্সোনাল পার্পাসে তাই আমি দিপক কে বলেছি।আর দিপক ও আমাকে একটা মোটা এ্যামাউন্ট এর আশ্বাস দিয়েছে…
উজান:কতো টাকা চাই আপনার?
মিনাক্ষী:যাক বুঝতে পারছো তাহলে আমি কি চাই?
উজান:আপনার কাছে এর থেকে বেশি কিছু আমি আশাও করি না…..আপনি কি হ্যা নিজের স্বার্থের জন্য বারবার টিউলিপ কে টেনে আনেন..আপনার একটু ও বিবেকে বাধে না..
মিনাক্ষী:হয়েছে তোমার লেকচার দেওয়া….তুমি আমাকে টাকা দিয়ে দেও আর নিজেও আমার ঋৃন থেকে মুক্ত হও…
উজান:কতো চাই আপনার….
মিনাক্ষী:এই মোটে ৫কোটি
উজান:হোয়াট!!
মিনাক্ষী:হুম ৫কোটি
উজান:আপনি খুব ভালো করে জানেন আমার কাছে এতো গুলো টাকা নেই…তারপরো আপনি
মিনাক্ষী:আমার যা লাগবে আমি তাই বললাম।এখন তুমি দেখো দিতে পারবে কি না নাহলে আমাকে বাধ্য হয়ে
উজান:নাআআআ
মিনাক্ষী:তাহলে দিবে বলছো
উজান:আমি দেখছি….
উজান চলে যায়..
মিনাক্ষী:আমি জানি উজান তুমি ৫কোটি দিতে পারবে না।কিন্তু তোমার যা আছে সেটা না হয় সবটা দেও….(শয়তানি হাসি)
হিয়া উজানের রুম…
(উজান রেডি হয়ে সোফায় বসে কিছু মেইল চেক করছিলো। হিয়া স্নান করে আজ একটা চাপা হলুদ রঙ এর সুতি শাড়ি পড়েছে..চুল গুলো ভেজা..টাওয়াল দিয়ে মুছতে মুছতে বের হয়..হিয়ার চুল গুলো দিয়ে আজ অন্যরকম সি্নগ্ধ গন্ধ বের হচ্ছে..উজান মেইল চেক করাতে এতো ব্যাস্ত যে হিয়ার দিকে খেয়াল ই করে নাই…হিয়া চুল মোছার সময় চুলের পানি লেপটপের স্ক্রিন এ গিয়ে পড়লে উজান কপট রেগে গিয়ে হিয়ার দিকে রাগ হয়ে চেঁচিয়ে উঠে..কিন্তু হিয়াকে দেখে বেচারা ফুস হয়ে যায়..কপালের রগ গুলো মুখের মিষ্টি হাসিতে মিলিয়ে যায়..
উজান:হিয়া কি করছো দেখে মাথা টা তো মুছবে😡😡😡😡……হিয়া😍😍😍😍
…..(উজান নিজেকে সামলাতে না পেরে উঠে হিয়ার হাত হ্যাচকা টান দিয়ে দেওয়ালে ঠেসে ধরে..হিয়া ভয় পেয়ে যায়..)
হিয়া:কি হচ্ছে টা কি..আমি কতো ভয় পেয়েছি জানো😒
উজান:ভয় পাওয়ার কি হলো আমি ভূত না ভাল্লুক😑
হিয়া:তুমি মানুষ আমি জানি।কিন্তু আচমকা এভাবে কে ধরে আমি তো দেখলাম তুমি দিব্যি লেপটপ ঘাটছিলে…সাড়ো…গেট লাগা নাই কিন্তু😒
উজান:(উজান শাড়ির ফাক দিয়ে হিয়ার কোমড়ে হাত ঢুকায়)
হিয়া:উমহুম এসব করো না…😒
উজান:কি না…😊
হিয়া:তুমি না বললে আজ তোমার তাড়া আছে ব্যাংক না কোথায় যাবে😒
উজান:সে না হয় যাবো আগে তো এই ইমার্জেন্সি ডিউটি টা শেষ করি…😊😊😊
হিয়া:(উজানের গলায় দু হাত ঝুলিয়ে দিয়ে)…একটা জিনিস কি দেখলাম জানো তোমার ডিকশনারি তে লজ্জা শরম বলে একটা জিনিস ছিলো কিন্তু হিয়ান আসার পর লজ্জা শরম সব কিছুর মাথা খেয়েছো তুমি…😊😊😊
উজান:তাই…..😊😊😊
হিয়া:উজাজাজানননন….হিয়ান উঠে যাবে সাড়ো…😊😊😊
উজান:হিয়ান উঠবে না ওহ জানে বাবা আর মা এখন ব্যাস্ত ওদের কে ডিস্টার্ব করা যাবে না।😊😊
হিয়া:ইসস…….আমার লাগছে😒😒
উজান:আমার তো বেশ লাগছে😊😊😊
হিয়া:হিয়ানের বাবা..😒
উজান:বলো না শুনছি তো😊😊
…..(হিয়া গেটের সামন দিকে ছিলো।হুট করে বাসবি ঢুকে।উজান হিয়া কে ওভাবে দেখে বাসবি পিছন ফেরে।হিয়া বাসবি কে দেখে উজান কে ছাড়তে চেষ্টা করে কিন্তু পারে না..)
হিয়া:উজান মা😮
উজান:কোথায়😊
হিয়া:উজান সত্যি সত্যি মা আসছে😡😡
উজান:উমহুম এসব ট্রিক আর চলবে না।আমি সব বুঝি…😊😊
হিয়া:উজাজাজাজান…😡😡
…..(বাসবি হালকা কাশি দিলে উজানের হুশ ফিরে)…
উজান:(পেছন ফেরে)….মা মা তুমি😮
বাসবি:(হাসতে থাকে)
হিয়া:(ফিসফিস করে)তখন থেকে বলছি মা আসছে মা আসছে..গায়েই লাগে না কথা😡😡
উজান:একটু জোড় দিয়ে বলবে তো😡😡
হিয়া:এটাও এখন আমার দোষ😡😡
বাসবি:হয়েছে হয়েছে….হিয়া এটা মা তোকে দিতে বললো…….এটা হিয়ান উঠলে ওকে পড়িয়ে নিচে নিয়ে আসিস…😊😊
হিয়া:ঠিক আছে মা..😍
….বাসবি যেতে ধরলে গেট এর কাছে গিয়ে)
বাসবি:আর রাজা…বউকে ভালোবাসছিস আদর করছিস ঠিক আছে কিন্তু এরপর থেকে যা করবি গেট টেট লাগায় দিয়ে করিস……😂😂😂
বাসবি চলে যায়….
হিয়া:দেখলে তো সব তোমার জন্য।ছিঃ ছিঃ কি ভাবলো মা…সব সব তোমার জন্য..আমি এখন কিভাবে মার সামনো যাবো…😭😭😭
উজান:মা যখন দেখেই ফেলছে তখন😊😊
হিয়া:উজান আমি কিন্তু এবার রেগে যাবো😡😡
…উজান গিয়ে গেট লাগায় দিয়ে হিয়াকে কোলে তুলে নেয়..
উজান:রেগে যাবে।রাগ তে পারো তুমি😊😊
হিয়া:না নামাও আমাকে….😑😑
…….দুজনে আবার ভালোবাসার জগৎ এ হারিয়ে যায়…
উজান:আসতে পারি
মিনাক্ষী:এসেছো তাহলে তুমি
উজান:আমি আপনার ৫কোটি এ্যারেন্জ করতে পারি নাই কিন্তু এ ক বছর আমার যা সেভিংস হয়েছিলো এতে সবটা আছে….আমি আপনাকে বাকি টা ধীরে ধীরে দিয়ে দিবো
মিনাক্ষী:বেশ তবে তাই ভালো…(মিনাক্ষী উজানের কাছ থেকে টাকার ব্যাগ টা নিতে গেলে উজান ওকে থামিয়ে দেয়)
মিনাক্ষী:কি হলো দেও
উজান:কি গ্যারান্টি আছে আপনি এরপরো আমাকে ব্ল্যাকমেল করে টিউলিপের ক্ষতি করতে চাইবেন না।আপনার উপর সত্যি বলতে এখন বিন্দুমাত্র আমার বিশ্বাস নেই।
মিনাক্ষী:আমি তো তোমাকে বলেছি তুমি আমাকে পুরো টাকা টা দিয়ে দিলেই আমি এই ৫১%শেয়ার তোমার নামে করে দিবো।তাহলে এখন আবার
উজান:শুধু তো মুখের কথায় হবে না মিসেস মিনাক্ষী চ্যাটার্জী….এই নিন এটাতে সাইন করে দিন।
মিনাক্ষী:এটা কিসের পেপারস?
উজান:এটাতে লেখা আছে আমি আপনাকে আপাতত ৩কোটি টাকা দিচ্ছি। আর বাকি ২কোটি টাকা আপনাকে পরিশোধ করে দিলে আপনি আমার নামে টিউলিপের পুরো শেয়ার লিখে দিবেন……….নিন
মিনাক্ষী:(মনে মনে)এটা তুমি ঠিক করলে না উজান।আমার প্লান আমাকেই ঘুরিয়ে দিলে..বাট নো টেনশন বিহান তো আছে..ওর প্লান এর কাছে তোমার এই হাটুর প্লান জাস্ট বেহাল…
উজান:কি হলো নিন..
মিনাক্ষী:বেশ এতোই যখন আমাকে তুমি অবিশ্বাস করো তাহলে তাই হোক…(মিনাক্ষী পেপার গুলো নিয়ে সাইন করে দেয়..)
উজান:দিন…..আর আপনার টাকা গুলো নিন…
….উজান মিনাক্ষীর কেবিন থেকে বেরিয়ে যায়….
জীবনে এমন কিছু জিনিস থাকে যেগুলো আমাদের জীবনের সাথে এমন ভাবে জরিয়ে যায় সেগুলো কে কোনো কিছুর বিনিময়ে আমরা হারাতে চাই না।সেটা প্রিয় মানুষের দেয়া একটা গোলাপ হোক বা কোনো একটা নীল খামে মোড়ানো চিঠি বা কোনো বিশেষ জায়গা….টিউলিপ ও এমনি একটা জায়গা যেখান থেকে উজান হিয়ার পথ চলা শুরু হয়।টিউলিপের আনাচ কানাচ প্রত্যেকটা কোনা,ছাদ ছাদের সিড়ি,টিউলিপের কিচেন,উজানের গেস্ট রুম মোট কথা টিউলিপের প্রতিটা বাতাস বৃষ্টি সবকিছু উজানহিয়ার প্রেমের সাক্ষী।টিউলিপ কে হারানো মানে উজানের কাছে তাদের ভালোবাসার অস্তিত্ব হারানো।তাই উজান তার সব কিছুর বিনিময়ে টিউলিপ কে রক্ষা করার শেষ চেষ্টা চালিয়েছে….
উজান:আমাকে ক্ষমা করে দিও হিয়া।এটাই একটা উপায় ছিলো টিউলিপ কে বাচানোর আর মিনাক্ষী চ্যাটার্জীর দায় থেকে নিজেকে মুক্ত করার….আমি তোমাকে বলেছিলাম আমার যা সেভিংস সবটা তোমার আর হিয়ানের কিন্তু আজ আমার হাত অনেক টা ফাকাঁ।কিছু নেই বললেই চলে।তুমি থাকবে তো আমার পাশে হিয়া।আমি জানি তুমি থাকবে।কারন আমার চেয়ে তুমি তো বেশি এই টিউলিপ কে ভালোবাসো..হয়তো আমাকে তুমি যতোটা ভালোবাসো তার চাইতেও বেশি টিউলিপ কে ভালোবাসো।(উজান কাঁদতে কাঁদতে শেষের কথা টা বলে হেসে দেয়)
….উজান ভেবেছিলো মিনাক্ষী কে সব টা দিয়ে দিলেও কিছুদিন এর মধ্যে হয়তো ওর এই বিরাট ক্ষতি টা পুষে নিবে
FF: #মেডিকেল_ক্যাম্প
Part: 57
চ্যাটার্জী মেনশন:
সমরেশ একটা কনফারেন্স এ্যাটেন্ড করতে ২সপ্তাহের জন্য সিঙ্গাপুর গেছে।আর আজ ঠাম্মি শিলিগুড়ি তে তার বান্ধবী মৌনাক্ষীর বাড়িতে বেড়াতে যাবে…
ঠাম্মি:এই জিনি আমি যেনো কোনো অনিয়ম না দেখি এ কদিন।আমি ফিরে এসে যেনো যেমনটা দেখে যাচ্ছি তেমন টা দেখতে পাই।
জিনি:হুম ঠাম্মি হুম….
হিয়া:ঠাম্মি এই নেও তোমার লাগেজ আমি সব গুছিয়ে দিয়েছি।আর তুমি একদম নিশ্চিন্তে শিলিগুড়ি থেকে ঘুরে আসো আমরা সব সামলে নিতে পারবো….
ঠাম্মি:দেখি জিনি আমার ময়না টাকে আন তো এদিকে…(ঠাম্মি যাওয়ার আগে হিয়ান কে আদর করে নেয় কিছুক্ষণ)
পাবলো:হয়েছে হয়েছে ঠাম্মি।গাড়ি দাড়িয়ে আছে।চলো দেড়ি হয়ে যাচ্ছে
ঠাম্মি:আসছি রে…..
…..সবাই ঠাম্মিকে বিদায় দেয়….
হিয়ান হওয়ার কিছুদিন পরেই নিলীমা আর বিহান মিলে কোর্ট ম্যারেজ করে নেয়।নিলীমা এখন অনেক টা চেন্জ।এখন ওহ সত্যি মন থেকে বিহান কে নিয়ে সংসার করতে চায়।উজান হিয়ার ওয়েল উইশার হয়ে চ্যাটার্জী বাড়িতে মিলেমিশে থাকতে চায়….
বিহান আর নিলীমার রুম:
বিহান:মম মম মম।আজ মনে হয় সেই সুযোগ টা এসে গেছে।ঠাম্মি নেই বাবাও নেই আজ রাতেই
মিনাক্ষী:তোমার পাটনার জানে আজ তুমি
বিহান:ওহ কামন মম ওহ জানবে না তাই কি হয়।তুমি শুধু প্রেস মিডিয়া নিয়ে তৈরি থেকো।
মিনাক্ষী:সে তো আমি আছি।তাহলে এই কথা রইলো।রাতে কথা হচ্ছে
বিহান:ওকে মম রাখছি।আমি জাস্ট টু এক্সাইটেড উজান চ্যাটার্জীর পতন দেখার জন্য..
….এমন সময় নিলীমা হিয়ান কে কোলে নিয়ে রুমে ঢুকে…
নিলীমা:কার পতনের কথা বলছো বিহান
বিহান:আরে না না কার পতন আবার…
নিলীমা:আমি তো শুনলাম তুমি কাকে যেনো বললে
বিহান:আরে না।তুমি কি থেকে কি শুনলে।বাই দা ওয়ে তুমি নাকি আজ বাড়ি যাবে।
নিলীমা:হ্যা মা আসছে নিতে আমি দুপুরের দিকেই চলে যাবো……(না হিয়ান আর আজ দেখা হবে না পুচকু টার সাথে..আর খেলবে না কাকিয়া বাবুনিটার সাথে…)
বিহান:আচ্ছা নিলীমা একটা কথা বলি।
নিলীমা:হুম বলো
বিহান:মানে ঔ আর কি বলছি যে আর কতোদিন এভাবে দাদাভাই এর বাচ্চা নিয়ে খেলবে এবার নিজের বাচ্চা কাচ্চা নিয়ে একটু ভাবো
নিলীমা:জাস্ট শেট আপ বিহান।কখন কোথায় কি বলতে হয় আজো শিখলে না
বিহান:বিয়ের পরো এখনো আমাকে এভাবে শাসাবে তুমি দিস ইছ নট ফেরায় নিলীমা।
…..নিলীমা বিহানকে হালকা চোখ রাঙিয়ে ওর ব্যাগ টা নিয়ে নিচে নামে….
রাতের দিকে
হিয়া ব্যালকুনিতে পায়চারি করতে করতে…
হিয়া:বাহিরে এতো মেঘ ডাকছে কেনো।অসময়ের বৃষ্টি। হিয়ান টাও ঘুমিয়ে গেলো……….
কখন আসবে তুমি।ভালো লাগছে না কেনো হুট করে আমার।উজান…….না দেড়ি করলে চলবে না হিয়ানের জন্য সুজি টা বানিয়ে নেই.উঠে আবার খাবার জন্য কান্না করবে….
উজানের কেবিন:
উজান:মেট্রন ওটিরর সব রেডি
মেট্রন:হ্যা স্যার সুনয়না এলেই আমরা ওটি শুরু করতে পারি।
উজান:ওকে আপনি আর সুনয়না গিয়ে আগে পেশেন্ট এর এ্যানাছথেসিয়া টা কম্পিলিট করুন।আমি আসছি….
মেট্রন:জ্বী স্যার…
…মেট্রন চলে যায়…
স্টাফ:স্যার আসবো।আপনার কফি।
উজান:থ্যাংকস।ওখান টায় রাখুন…
স্টাফ:(টেবিলের উপর কফি মগ টা রেখে)স্যার আসছি
উজান:হুম…..
স্টাফ:স্যার আপনার কথা মতো কাজ হয়ে গেছে।আমি কফি টা ঠিক মতো উজান স্যার এর কেবিনে দিয়ে এসেছি
বিহান:ওয়েল ডান…নেও এটা রাখো…এটা তোমার বকশিশ…নেও নেও…
স্টাফ:স্যার যদি ওদিক টা একটু দেখতেন
বিহান:সব হবে।এখন আপাতত এটা নিয়ে যাও..
স্টাফ:জ্বী স্যার
বিহান:হ্যালো….এদিক থেকে সব ক্লিয়ার..এবার শুধু আসল খেলা টা শুরু হওয়া বাকি..
___:দ্যাটস গুড…হোপ ফর দা বেষ্ট
ওটি রুম:
উজান:মাথা টা এমন ঘুরছে কেনো…না না ওটির মাঝপথে আমার এভাবে দূর্বল হলে চলবে না
মেট্রন:স্যার আপনি ঠিক আছেন।আপনাকে দেখে
উজান:না আই এম ওকে।
….ওটি চলাকালীন পেশেন্ট এর পার্লস রেট কমতে থাকে…
মেট্রন:স্যার পেশেন্ট অক্সিজেন পাচ্ছে না..স্যার..উজান স্যার…
উজান:হ্যা হ্যা কিছু বললেন
মেট্রন:স্যার আপনি এরকম কেনো করছেন।আপনার মন কোথায় আজ।
…..উজান চারিদিকে ঘোলা দেখতে শুরু করে..আস্তে আস্তে উজান তার নিজের সেন্স হারিয়ে ফেলে..একটা পর্যায়ে উজান সেন্স লেস হয়ে নিচে পড়ে যায়।
মেট্রন:সুনয়না….উজান স্যার এর কি হলো…স্যার উজান স্যার….
সুনয়না:ওহ নো পেশেন্ট এর পেসার ফল্ট করছে।মিরাদী এখন এখন কি করবে এভাবে মাঝপথে…আমি আমি আমি কি অক্সিজেন লেভেল টা বাড়িয়ে দিবো..
মেট্রন:সুনয়না তুমি এখানেই থাকো।আমি জলদি গিয়ে কার্ডিওলজি বিভাগ থেকে অন্য কোনো ডক্টর কে নিয়ে আসছি…
সুনয়না:কিন্তু উজান স্যার
মেট্রন:উনি থাক।বাহিরে পেশেন্ট পার্টি বসে আছে।এখন ওনাকে এ অবস্থায় বের করলে চারটে কথা রোটবে….আমি বরং আসছি
মেট্রন গিয়ে জলদি কার্ডিওলজি বিভাগ থেকে অন্য একজন কার্ডিওলজিস্ট কে নিয়ে আসে ওটিতে
পেশেন্ট পার্টি:কি হলো।নার্স এভাবে অন্য একজন ডক্টর কে কেনো নিয়ে গেলো
পেশেন্ট পার্টি:আমি জানি না আমার কিচ্ছু ভালো লাগছে না।কি হলো আমার মেয়ে টার।এতোক্ষন লাগে নাকি ওটিতে..
পেশেন্ট পার্টি:আহা থামো তো।আমি দেখছি..
চ্যাটার্জী মেনশন:
হিয়া:যাহ পড়ে গেলো সব।আজ কি হচ্ছে আমার সাথে সকাল থেকে হাত থেকে কিছু না কিছু জিনিস পড়েই চলছে….
জিনি:কি হলো হিয়াদি
হিয়া:আর বলো না পুচকুর জন্য সুজি বানাবো পানি গুলো ঢালতে গিয়ে সব পড়ে গেলো…
জিনি:আচ্ছা আমি মুছে দিচ্ছি। তুমি দাড়াও
হিয়া:না না আমি পারবো মুছতে।জানো তো জিনি আজ না সকাল থেকে হাত থেকে কিছু না কিছু জিনিস পড়ছে।আর মনটাও সায় দিচ্ছে না।কেমন জানি অস্থির অস্থির লাগছে
জিনি:তুমিও না হিয়াদি এখন এসব কেউ বিলিভ করে নাকি।
হিয়া:হুম…
পেশেন্ট পার্টি:কি হলো এতোক্ষন তো ওটি তে লাগার কথা না।কেউ কিছু বলছেও না।
বিহান:(হালকা কাশি দিয়ে)..বলছি কি আপনাদের পেশেন্ট কি ডক্টর উজান চ্যাটার্জীর আন্ডারে ওটি তে আছে
পেশেন্ট পার্টি:হুম।দেখুন না কখন ওটি শুরু হয়েছে এতোক্ষন লাগে নাকি।জানতে চাইলে কেউ কিছু বলছেও না
বিহান:বলবে কিভাবে….উজান চ্যাটার্জী তো ওটিতে এখন ওনার সেন্সে নেই…দেখলেন না অন্য একজন ডক্টর ভেতরে গেলো।উনি তো ওটি করছে।
পেশেন্ট পার্টি:হোয়াট।এসব আপনি কি বলছেন।
বিহান:হুম সবটা সত্যি।আসলে কি ডক্টর চ্যাটার্জী নাম করা ডক্টর হলেও ঔ যে বলে না বড়োলোক দের স্বভাব।তাই ওটির আগে একটু ড্রাগ নিয়েছিলো।ড্রাগ এর ডোজ টা এতো বেশি ছিলো যে ওটি তে উনি সেন্সলেস হয়ে যান…
পেশেন্ট পার্টি:আপনার কথা যদি সত্যি হয় আর আমার বোনের যদি কিছু হয় আমি এই টিউলিপের কাউকে ছাড়বো না..
বিহান:আপনার বিশ্বাস না হলে আপনি ওটিতে গিয়ে দেখুন…
…….ঘন্টা খানেকের মধ্যে টিউলিপে একটা যুদ্ধ শুরু হয়ে যায়।পেশেন্ট পার্টির লোক গুলো যা নয় তাই বলে উজানের দিকে আঙ্গুল তুলে।মিনাক্ষীর কথা মতো প্রেস মিডিয়া সব হাজির।বড়ো করে হেড লাইন লেখার জন্য সাংবাদিক রা তৈরি।এদিকে পেশেন্ট কোনোরকম বেচেঁ ফিরে কিন্তু পেশেন্ট পার্টির লোকদের ক্ষোভ কিছু তে মেটে না..উজানের এমন আচরনে তারা সবাই শাস্তির দাবি জানায়…পেশেন্ট পার্টি যথারীতি পুলিশে কম্পেলেইন করে মামলা দার্জ করে……..
রাত ১২টার দিক উজানের সেন্স আসলে মিরাদী উজান কে ঘটনার বিবরন দেয়…উজান কথা বলার মতো শক্তি হারিয়ে ফেলে ৪বছর ডক্টরি ক্যারিয়ার এ এতো বড়ো ভুল,এতো বড়ো বদনাম উজানের ভেতর কে শেষ করে দেয়…..উজান কিছু না ভেবে তাড়াতাড়ি ফোন টা চেক করে দেখে হিয়ার অনেক গুলো মিসড কল…..
উজান:মেট্রন
মেট্রন:হ্যা স্যার বলুন
উজান:হিয়া আপনাকে ফোন দিয়েছিলো
মেট্রন:হ্যা স্যার।একটু আগে ওর সাথে আমার কথা হলো।
উজান:আপনি হিয়াকে কিছু বলেছেন এসব বিষয়ে
মেট্রন:না স্যার আমার মনে হলো আগে আপনার সাথে কথা বলে নেওয়া টা ঠিক হবে।আর হিয়ার কথা শুনে মনে হলো আজ সন্ধ্যে থেকে যা যা হলো ও এসব কিছুই জানে না।
উজান:ঠিক আছে মেট্রন।থ্যাংকস।
মেট্রন:আমি আসছি স্যার…
….মেট্রন যেতে ধরলে উজান মেট্রন কে থামিয়ে দেয়..
উজান:মিরাদী(উজান প্রথম আজ মেট্রন কে মিরাদী বলে ডাকলো)
মেট্রন:(অবাক হয়ে)..হ্যা হ্যা হ্যা স্যার বলুন
উজান:আপনিও কি বিশ্বাস করেন আমি ওটিতে যাওয়ার আগে কখনো এসব ড্রাগ নিতে পারি
মেট্রন:এই টিউলিপে আর কেউ বিশ্বাস করুক বা না করুক। আমি আপনাকে বিশ্বাস করি উজান স্যার।আমি জানি আমাদের উজান স্যার তার কাজের ব্যাপারে কতো টা সিরিয়াস।কতোটা পানচুয়াল।আপনি ভববেন না স্যার আমি সুনয়না সবাই আমরা আপনার পাশে আছি…
উজান:(একটা সম্মান সূচক মাথা নাড়ায়)
…মেট্রন চলে যায়।উজানের ফোনে হিয়ার একটা মেসেজ আসে..
হিয়া:কই গো তুমি হিয়ানের বাবা।আজ আসবে না?আমি আর কতোক্ষন জেগে থাকবো।আমার খুব ঘুম পাচ্ছে তো……
উজান:(একটা দীর্ঘ নিশ্বাস নিয়ে হিয়াকে রিপ্লাই দেয়)
“””হিয়া তুমি ঘুমায় পড়ো আমি আর আজ আসবো না…আর কাল হিয়ান কে মার কাছে রেখে, সকালের দিকে একটু জলদি টিউলিপে এসো,কথা আছে….””””
হিয়া:আজকে তোমাকে আমার এতো মনে পড়ছে আর আজই তুমি আসবে না।ঠিক আছে আগে তো ডিউটি তার পর তো অন্য কিছু নাকি।বেশ আমি কালকে সকাল সকাল আমার এই রাগি রাগি উজান স্যার কে দেখতে টিউলিপ চলে আসবো…আর হ্যা হিয়ানের বাবা কাজের ফাকেঁ সময় পেলে আমাকে আর পুচকু কে মনেমনে একটা না না দুটো গুড নাইট কিসসি দিতে ভুলো না কিন্তু……Ummmmmahhhh….
…….উজান হিয়ার মেসেজ পড়ে হাসবে না কাঁদবে বুঝে উঠতে পারে না।চোখের সামনে বারবার আজ হিয়ার থেকেও হিয়ানের মুখ টা বেশি ভেসে উঠছে।এটা যদি অনেক বাড়াবাড়ি কিছু হয় হিয়ানের ভবিষ্যৎ এর কি হবে।হিয়া হিয়া কি উজান কে মাফ করতে পারবে।এসব ভাবতে ভাবতে উজান কেঁদে দেয়……আর এদিকে হিয়া তাদের পুচকু কে জরিয়ে ঘুমিয়ে পড়ে…