হৃদয়_জুড়ে_তার_ছায়া #পর্বঃ১৭ #আদওয়া_ইবশার

0
170

#হৃদয়_জুড়ে_তার_ছায়া
#পর্বঃ১৭
#আদওয়া_ইবশার

পরিস্থিতি গুমোট। পিনপতন নিরবতা বিরাজ করছে পুরো রুম জুড়ে। কারো মুখে কোনো কথা নেই। দেয়ালে দেয়ালে বারি খাচ্ছে শুধু প্রত্যেকের বুক চিরে বেড়িয়ে আসা দীর্ঘশ্বাসের শব্দটুকু। বিস্ফোরিত দৃষ্টিতে সকলেই বোবা হয়ে তাকিয়ে আছে নাদিয়ার দিকে। ব্যতিক্রম শুধু নাহিদ। শাহিনূর সাইদুর রহমানের বিশ্বাস করতে কষ্ট হচ্ছে তাদের মেয়ে এমন একটা কাজ করতে পারে। নাফিসের মনেও ভাবনার দোলাচল। সেও ভাবতে পারছেনা তার বোন এমন করতে পারে। নাদিয়ার থেকে সে মাত্র দুই বছরের বড়। পিঠাপিঠি হওয়ায় কেউ কখনো কারো থেকে এক চুল পরিমাণ কিছু গোপন রাখেনা। সারাদিন দুজন মিলে ঝগড়াঝাঁটি করার পরও দিন শেষে ঠিক একজন অপরজনের কাছে মনের কথা খুলে বলে। এক চুল পরিমাণ ঘটনাও কেউ কারো থেকে গোপন করে থাকতে পারেনা। সেখানে এতো বড় একটা কথা কিভাবে গোপন করল নাদিয়া তার থেকে? ভাবতেই বিস্ময়ের মাত্রা বেড়ে যাচ্ছে নাফিসের। শাহিনূর শান্ত ভঙ্গিতে নাহিদের পাশ থেকে ওঠে এগিয়ে যায় নাদিয়ার দিকে। এখনো বাবার বুকে মাথা রেখে শার্ট খামচে ধরে কেঁদে যাচ্ছে নাদিয়া। এক ঝটকায় মেয়েকে বাবার কাছ থেকে আলাদা করেন শাহিনূর। কঠোর দৃষ্টিতে তাকিয়ে শীতল কন্ঠে জিজ্ঞেস করেন,

“কবে থেকে চলছে এসব?”

উত্তর দেয়না নাদিয়া। মায়ের এমন রূপ দেখে ঘাবড়ে যায় অত্যাধিক। কাঁদতে কাঁদতে হেঁচকি ওঠে যাচ্ছে। মেয়ের থেকে জবাব না পেয়ে রাগ সংবরণ করতে না পেরে সপাটে এক চড় বসিয়ে দেয় গালে। চমকে ওঠে সকলেই। বিস্তারিত দৃষ্টিতে তাকিয়ে থাকে মা-মেয়ের দিকে। ঘর কাঁপিয়ে চিৎকার করেন শাহিনূর। পূণরায় প্রশ্ন করেন মেয়েকে,

“কথা বলছিস না কেন? কবে থেকে চলছে এসব? খুব বড় হয়ে গেছিস তাই না! এতোটা বড় হয়ে গেছিস যে প্রেম-ভালোবাসা পযর্ন্ত এগিয়ে গেলি অথচ কাওকে কিছু জানানোর প্রয়োজন মনে করলিনা। একবারও ভয়ে বুক কাঁপলনা? একবারও মনে হলনা নিজের ভাইয়ের বন্ধুর সাথে প্রেম করছি বিষয়টা জানাননি হলে পরিস্থিতি কি হতে পারে? একটাবার ভাবলি না বাবা-মায়ের সম্মানের কথা? শুধুমাত্র তোদের কথা ভেবে আমরা দুটো মানুষ জীবনটা কয়লা করে ফেলছি খাটতে খাটতে। না তাকিয়েছি কখনো নিজেদের চাওয়া-পাওয়ার দিকে আর না তাকিয়েছি নিজেদের শরীরের দিকে। রাত-দিন এক করে খেটেছি শুধু তোদের ভালো চেয়ে। তার বিনিময়ে এই প্রতিদান দিলি আমাদের?”

কান্না ছাড়া আর কিছুই যেন অবশিষ্ট নেই নাদিয়ার। কি জবাব দিবে মা-বাবা,ভাইকে? সত্যিই তো সে কখনো ভাবেনি তাদের কথা।আজকের এই পরিস্থিতির কথা। ভালোবাসার কাছে বিবেক অন্ধ হয়ে গেছিলো। মজে গিয়েছিল রঙিন নেশায়। অপরিনত বয়সের মন্দ দোষে একটা সম্পর্কে জড়িয়ে যাবার আগে মাথায় আসেনি কখনো এমন পরিস্থিতি আসতে পারে। জবাবদিহি করতে হবে তখন পরিবারের কাছে। একটা মাত্র মেয়ে নিয়ে অনেক আশা ছিল সাইদুর রহমান শাহিনূরের। দুটো ভাইয়ের একমাত্র ছোট বোন হওয়ায় ভাইদের ও কম স্বপ্ন ছিলনা তাকে নিয়ে। সেই মেয়েটাই আজ এতো গুলো মানুষের স্বপ্ন ভেঙে অবিশ্বাস্য এক ঘটনা ঘটিয়ে ফেলেছে। বিষয়টা হজম করা কারো পক্ষে সম্ভব হচ্ছেনা। সাইদুর রহমান অপলক তাকিয়ে আছে মেয়ের কান্নারত নত মুখের দিকে। নিস্তেজ কন্ঠে একসময় বলে ওঠে,

“তুমি আমাদের একমাত্র মেয়ে ছিলে। আমি বা তোমার মা,ভাই কেউ কখনো তোমার ভালোবাসার বাধা হয়ে দাঁড়াতাম না। বরং এটা ভেবে খুশি হতাম মেয়ে তার ভালোবাসার মানুষ খোঁজে পেয়েছে। যদি সেটা হতো তোমার পরিনত বয়সে। কিন্তু যে বয়সে দাঁড়িয়ে তুমি এমন একটা সম্পর্কে জড়িয়েছো এই বয়সে কি ভালোবাসার আসল মানে জানো তুমি? নিজের পরিবার ছাড়া বাইরের জগতটাকেই বা কতটুকু চেনো তুমি? আমি ভেবেছিলাম আমার মেয়েটা অত্যন্ত বুদ্ধিমান একটা মেয়ে। তার দ্বারা কখনো কোনো ভুল হতেই পারেনা। কিন্তু আমি ভুল। আমাকে সম্পূর্ণ মিথ্যে প্রমাণিত করে আজ এতো বড় এক সত্যের সম্মুখিন করলে। আমার আসলে এই পরিস্থিতিতে কি করা উচিৎ আমি আসলে কিছুই বুঝতে পারছিনা।”

কথাগুলো শেষ করে এক মূহুর্ত থামে সাইদুর রহমান। একে একে স্ত্রী সন্তানের পানে তাকিয়ে গম্ভীর কন্ঠে আদেশ জারি করে,

“রাত অনেক হয়েছে। যে যার রুমে ঘুমাতে যাও। ছেলেটা অনেক দূর থেকে জার্নি করে এসেছে। তোমাদের বিশ্রামের প্রয়োজন না হলেও ওর প্রয়োজন। বাকী কথা যা হবার সকালে হবে।”

আর এক মূহুর্ত দাঁড়ায়না সাইদুর রহমান। চুপচাপ শান্ত ভঙ্গিতে বেরিয়ে যায় রুম থেকে। করুণ চোখে একবার ছেলের দিকে তাকায় শাহিনূর। আবারও এগিয়ে যায় নাহিদের কাছে। মাথায় হাত বুলিয়ে অসহায় স্বরে বলে,

“ঘুমিয়ে পর আব্বা। যে আমাদের ভালোবাসার মূল্য দিতে জানেনা তার কথা ভেবে শরীর খারাপ করিস না আর। সে যখন নিজের জীবনের এতো বড় একটা সিদ্ধান্ত একাই নিতে পেরেছে তখন হয়তো আমাদের আর কোনো প্রয়োজন নেই তার। হাতে-পায়ে বড় হয়ে গেছে তো। কোলে-পিঠে করে বড় করে চোখ-কান ফুটিয়ে দিয়েছি। এবার নিজের বুঝেই তো সব করবে। সে ম’রো’ক মন চায় বাঁ’চো’ক। এমন হারামি, পাষণ্ডকে নিয়ে ভাববিনা আর।”

মায়ের শেষের কথা গুলো যেন বুকের ভিতর ছুরিকাঘাতে ক্ষতবীক্ষত করে দিয়েছে নাদিয়ার। কান্না ভুলে বিস্ফোরিত দৃষ্টিতে তাকিয়ে আছে মায়ের দিকে। সে কি এতোটাই জঘণ্য অপরাধ করে ফেলেছে যার কারণে এতো বড় একটা কথা বলতেও মায়ের বুক কাঁপলনা! ভালোবাসার এতো কষ্ট আগে জানলে এই ভালোবাসা নামক আগুনে হয়তো কখনো ঝাপ দিতোনা সে। প্রিয় মানুষ গুলোর হুট করে এমন কঠোর আচরণ সহ্য হচ্ছেনা নাদিয়ার। বুকের ভিতরটা অসহনীয় যন্ত্রণায় বারবার লাফিয়ে উঠছে তার। ইচ্ছে করছে মাটিতে গড়িয়ে কাঁদতে। অতীতের স্মৃতি গুলো মুছে ফেলার যদি কোনো দৈব শক্তি তার কাছে থাকত তাহলে হয়তো এই মুহুর্তে সে নাজিমের সাথে হওয়া সম্পর্কটা সূচনলগ্ন থেকে আজ পযর্ন্ত পুরোটাই মুছে ফেলতো। তবুও চায়তো জন্ম থেকে ছায়ার মতো পাশে থাকা প্রিয় মানুষ গুলো কষ্ট না পাক।কিন্তু আফসোস! এমন কোনো শক্তি সৃষ্টিকর্তা শুধু তাকেই না। কোনো মানুষকেই দান করেন নি।শব্দ করে ফুঁপিয়ে ওঠে নাদিয়া। অস্ফুট স্বরে বহু প্রতিক্ষার পর মুখ দিয়ে শুধু একটা শব্দই উচ্চারণ করে,

“মা!” আর কিছুই বলতে দেয়না শাহিনূর। থামিয়ে দেয় মাঝ পথেই। জলদগম্ভীর কন্ঠে বলে ওঠে,

“এতোক্ষন যখন এতোবার কিছু বলতে বলার পরও চুপ করে ছিলি, তখন না হয় এখনো চুপ করে থাক। এই মুহুর্তে তোর থেকে আর কিছুই শোনার ইচ্ছে নেই। নাটক বন্ধ করে চুপচাপ রুমে যা।”

এমন জবাবের পর আর কিছুই বলতে পারেনা নাদিয়া। অশান্ত মনে অপরাধের গ্লানি নিয়ে কাঁদতে কাঁদতেই বেড়িয়ে যায় রুম থেকে। বোনের যাবার একবার চোখ তুলে তাকায় নাহিদ। বুক ফুলিয়ে দীর্ঘশ্বাস ছাড়ে। মায়ের দিকে তাকিয়ে শান্ত স্বরে বলে,

“ওর প্রতি সবাই এতোটা কঠোর হলে হিতে বিপরীত হতে পারে মা। আবেগের বশত হয়তো আরও ভুল স্টেপ নিয়ে নিতে পারে। যাও ঘুমিয়ে পরো।”

শাহিনূরের গাল বেয়ে উষ্ণ জলের ধারা গড়িয়ে পরে অঝোর ধারায়। ছেলেকে কিছু বলতে চেয়েও পারেনা। বেড়িয়ে যায় রুম থেকে। পূণরায় এক হতাশার নিশ্বাস বেড়িয়ে আসে নাহিদের বুক চিরে। চোখ ঘুরিয়ে পাশে তাকাতেই দেখতে পায় সবাই চলে গেলেও এখনো ঠায় দাঁড়িয়ে আছে নাফিস। ভ্রু কুঁচকে নাহিদ বলে,

“তোকে কি এখন নতুন করে ইনভাইটেশন কার্ড দিয়ে রুম থেকে বেড়োনোর কথা বলতে হবে?”

একটু নড়েচড়ে দাঁড়ায় নাফিস। আমতা আমতা করে বলে,

“ভাই দেখো, তুমিও ওর বড় ভাই আমিও কিন্তু ওর বড় ভাই। কষ্ট যেমন তোমার হচ্ছে তেমন আমারও হচ্ছে। দুজনের যখন একই রকম কষ্ট তো আজকে না হয় দুজন একসাথে থেকে কষ্ট বিলাস করে নেই!”

এমন একটা মুহুর্তে এসেও ভাইয়ের মুখে এমন হাস্যকর কথা শুনে মেজাজ খারাপ হয় নাহিদের। ক্ষিপ্র কন্ঠে বলে,

“কানের নিচে কন্টিনিউয়াসলি থাপ্পড় খেতে না চাইলে চুপচাপ বের হো রুম থেকে।”

একটুও দমেনা নাফিস। বরং ভাইয়ের ধমকটাকে পাত্তা না দিয়ে দরজা লাগিয়ে হেলেদুলে এগিয়ে আসে বিছানার কাছে। বলে,

“যা ইচ্ছা করতে পারো। আই ডোন্ট মাইন্ড। বাট আজকে তোমার বিছানা ছাড়ছিনা।”

এক দিকে বন্ধুর প্রতারণা অপর দিকে বোনের প্রতারণা। আপনজনের তালিকায় থাকা দুজন মানুষের থেকে হঠাৎ এতো বড় একটা ধাক্কা পেয়ে নিশ্চয়ই ভাইয়ের মনের অবস্থা যথেষ্ট সূচনীয়। উপর থেকে নিজেকে নাহিদ যতই গম্ভীর দেখাক। ভিতরে ভিতরে ঠিক কতটা গুড়িয়ে যেতে পারে সে তার ছোট ভাই+বন্ধু হিসেবে একটু হলেও জানে নাফিস। যার কারণেই ভাইকে এই পরিস্থিতিতে একা ছাড়তে চাইছেনা। সে জানে সারাটা রাত নির্ঘুম কাটাবে নাহিদ। কাছের দুজন মানুষের বিশ্বাসঘাতকতার কথা স্বরণ করে গুমরে ম’র’বে প্রতি মুহূর্ত। নাফিস হয়তো ভাইয়ের কষ্টটা লাঘব করতে পারবেনা। কিন্তু সঙ্গ তো দিতে পারবে! এই ভেবেই নিষেধ অমান্য করেই থেকে যায় ভাইয়ের পাশে। নাহিদ’ও আর কিছুই বলেনা। বললেও হয়তো কোনো লাভ হতনা। এজন্য অযথা আর কোনো কথাও খরচ করেনি। কাটিয়ে দেয় দুই ভাই মিলেই নির্ঘুম একটা রাত্রি।

***

রাতের অন্ধকার কেটে দেখা দেয় নতুন এক স্নিগ্ধ সকাল। বাতায়নের ফুরফুরে বাতাসের উষ্ণ আলিঙ্গনে দুঃখ গুলোতে হালকা প্রলেপ তৈরি হয়। প্রকৃতিতে শীত শীত আমেজ। শহরের অলিতে গলিতে পিঠা-পুলির মো মো গন্ধ। কর্মজীবনে সদা ব্যস্ত থাকা মানুষ গুলোর মনে পিঠা-পুলি করে খাবার প্রয়াস জাগলেও
নিজেদের ব্যস্ততা কাটিয়ে অতৃপ্ত ইচ্ছেটাকে তৃপ্ত করতে পারেনা অনেকেই। নিজে বানিয়ে খাবার সাধ্য না থাকলেও জ্বিভের ডগায় পিঠা-পুলির অল্প স্বাদের ছোঁয়া পেতে সময় করে ছুটে যায় রাস্তার পাশে বাহারি পিঠার দোকান গুলোতে। শত শত মানুষের লাইন পরে যায় দোকানের সামনে। শীতের রুক্ষ প্রকৃতির মাঝে এ যেন এক মন তৃপ্ত করা খাবারের সন্ধানে বেড়োনো পথচারীদের চোখ জুড়ানো দৃশ্য। পাপড়িদের ভার্সিটির পাশেই সারি সারি পিঠার দোকান। গরম গরম ভাপা পিঠার লোভ সামলাতে না পেরে ভার্সিটিতে এসেই ঐশীকে নিয়ে ছুটেছিল দোকানে। ভীড় মাড়িয়ে দুটো ভাপা নিয়ে চলে আসার সময় চোখে পরে এক পাতিলে টসটসে রসে ডুবানো চিতই পিঠা। মনে পরে ছোট বোন পালকের বড্ড প্রিয় এই পিঠা। প্রতি বছরই রওশন আরা বাড়িতে নিয়ম করে পিঠা বানায়। কিন্তু এবার বিভিন্ন ব্যস্ততায় এখনো বানানো হয়নি। এবার না হয় প্রথমে বাইরে থেকেই কিনে নিয়ে খেয়ে দেখল রসে ডুবানো শীতের পিঠার স্বাদ। ভাবনা অনুযায়ী তিনজন খেতে পারবে এমন পরিমাণে রসে টইটুম্বুর দুটো পিঠার বাটি দুই হাতে নিয়ে বেড়িয়ে আসে ভীড় ঠেলে। ঐশীকে জানিয়ে দেয় আজকে আর ক্লাস করবেনা। ফুরফুরে মনে গেটের সামনেই দাঁড়িয়ে থাকে রিকশার অপেক্ষায়। কিছু সময় পার হতেই দূর্বার গতিতে একটা বাইক এসে সহসা থেমে যায় পাপড়ির সামনে। আচমকা ক্ষিপ্র গতিতে বাইকটাকে নিজের দিকে এগিয়ে আসতে দেখে ভয় পেয়ে যায় পাপড়ি। আসন্ন বিপদের কথা ভেবে লাফিয়ে ওঠে অন্তরাত্মা। টটস্থ ভঙ্গিতে পিছিয়ে যায় দুই-তিন পা। হাতে থাকা পিঠার বাটি গুলো একটুর জন্য নিচে পরা থেকে বেঁচে যায়। নিজের থেকে কিছুটা দূরত্বে বাইকটা থেমে যাওয়ার আওয়াজ শুনে ভয়ের তাড়নায় বন্ধ হয়ে যাওয়া চোখ দুটো ফাঁক করে পিটপিট করে তাকায়। দেখতে পায় দুটো পরিচিত মুখ। সাথে সাথেই স্বস্থির এক নিশ্বাস ছাড়ে বুক ফুলিয়ে। পাপড়িকে ভয়ে সিটিয়ে থাকতে দেখে বাইকে বসা লোক দুজন বোকা বনে যায়। কিছু না বলে শুধু তাকিয়ে থাকে ভয়ে মিইয়ে যাওয়া পাপড়ির মুখের দিকে। এক পর্যায়ে লাবিব বলে ওঠে,

“কি রে ভাই! এই মুরগির কইলজা নিয়ে বাইরে বের হও?”

লাবিবের কথাটা একদম পছন্দ হয়না পাপড়ির। একেতো একদম কাছাকাছি এভাবে বাইক এনে থামিয়েছে। যদি কোনোভাবে শরীরে লেগে যেতো এটা নিয়ে কোনো অনুতাপ নেই। তারওপর কেমন কথা বলছে!,

“এভাবে কেউ এতোটা কাছাকাছি এসে বাইক থামালে কে ভয় না পাবে? মা’রা’র প্ল্যান করেছিলেন না কি?”

হৈ হৈ করে ওঠে রাফিন। এক লাফে বাইক থেকে নেমে বলে ওঠে,

“আস্তাগফিরুল্লাহ! বন্ধুর বিয়ের ফুল ফোটার আগেই তাকে সঙ্গীহারা করে দেবার কথা ভাবতেই পারিনা আমরা। এতোটা পাষাণ এখনো হতে পারিনি বোন।”

রাফিনের কথায় পাত্তা দেয়না পাপড়ি। চোখ ছোট ছোট করে আশেপাশে তাকায়। ভাবে হয়তো নাহিদ তাদের সাথে এসেছে। আগেভাগে দূরে কোথাও হয়তো নেমে ঘাপটি মেরে পাপড়িকে লক্ষ্য করছে। বাড়িতে যাওয়ার কথা বলে ওমন গম্ভীর আচরণ করে নিশ্চয়ই কালকে রাতে তার সাথে আবার মজা করেছে।
পাপড়িকে আশেপাশে তাকাতে দেখে হতাশ হয় দুই বন্ধু। হতাশামিশ্রিত কন্ঠেই রাফিন বলে,

” এতো খোঁজে কোনো লাভ নেই ডিয়ার হবু ভাবি। আপনার ওনি আসেনি আজকে। শুধু ওনার বন্ধুরাই এসেছে।”

সরাসরি এমন কথায় একটু বোধহয় লজ্জা পায় পাপড়ি। ঘনঘন চোখের পলক ফেলে ঝটপট একটা মিথ্যে বানিয়ে বলে দেয়,

” রিকশা খুঁজছি আমি বাড়ি যাব বলে।”

মুহূর্তেই চোখ বড় বড় করে অবিশ্বাস্য কন্ঠে লাবিব বলে,

“হায় আল্লাহ! কি দিন আইলোরে রাফিন্ন্যায়া! এই মাইয়া তো দেখি বন্ধুর বউ হবার আগের আমগোরে ইগনোর করা শুরু করে দিছে। বিয়ার পর তো মনে হয় বন্ধুরেও তাবিজ কইরা আমাদের থেকে কাইড়া নিব। নাহ! এরে ভাবি করা যাইবোনা।”

এমন ভড়কে যায় পাপড়ি। চোখ বড় বড় করে কিছুক্ষণ তাকিয়ে থাকে। হড়বড় করে বলে ওঠে,

“ছিঃ ছিঃ ভাইয়া! আপনাদের আমি ইগনোর করতে যাব কেন? আপনারা আসার আগে থেকেই তো আমি এখানে রিকশার জন্য দাঁড়িয়ে ছিলাম। তাছাড়া আপনারা আমার কাছে এসেছেন না কি অন্য কোনো কাজে এসেছেন তা তো জানিনা।”

পাপড়ির কথা শেষ হতেই চোখে-মুখে দুঃখী দুঃখী ভাব ফুটিয়ে তুলে দুজনেই। ফাজলামি ছেড়ে রাফিন বলে,

“ঠেলাই পরে সকাল হতেই বাইক ছুটিয়ে কু’ত্তা’র মতো দৌড়ে তোমার কাছে আসছি বোন। ঘোর বিপদ। বিপদের ঠেলাই চোখের সামনে তুমি ছাড়া আর কাওকে দিখছিনা। একমাত্র তুমিই হয়তো পারবে এই বিপদ থেকে রক্ষা করতে আমাদের।”

চলবে….

( দেরিতে দেওয়ার জন্য দুঃখিত। আমার এক মামাতো ভাই মা’রা গেছেন বিদেশে। এখনো দেশে লা’শ আসেনি। এমন পরিস্থিতিতে আসলে গল্প লেখা সম্ভব হচ্ছেনা। তবুও যতটুকু পেরেছি দুদিন সময় নিয়ে দিয়ে দিলাম। দয়া করে কেউ কোনো অভিযোগ রাখবেন না। ভুল গুলো ক্ষমা দৃষ্টিতে দেখবেন।)

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here