মন_কেমনের_বৃষ্টি #পর্ব_২০ #পুষ্পিতা_প্রিমা

0
356

#মন_কেমনের_বৃষ্টি
#পর্ব_২০
#পুষ্পিতা_প্রিমা

রিক আসল। বৃষ্টির ঝাপটায় সে ও ভিজে গেল। রিপকে এভাবে বসে থাকতে দেখে চমকাল। রিপের কাছাকাছি গিয়ে জানতে চাইল,
‘ এই ঝড় বৃষ্টির মাঝে তুই এখানে বসে আছিস কেন? বিদ্যুৎ চমকাচ্ছে দেখতে পাচ্ছিস না?
রিপ রিককে দেখার সাথে সাথে দাঁড়িয়ে পড়ল। বলল, ইশুকে পেলাম না আমি।
রিক ছাতা বন্ধ করে দাঁড়াল। বলল,
‘ তুই বাসায় চলে যাহ। আমি দেখছি।
রিপ খানিকটা উঁচু গলায় বলল, বাসায় গিয়ে কি করব? ইশু কোথায় সেটা তো জানলাম না এখনো?
রিকের চোখে চোখ পড়তে কন্ঠ নরম হয়ে এল রিপের। বলল, পাচ্ছিনা তাই বলেছি। ফোনটা ও বন্ধ ওর।
রিক বুঝল রিপের অবস্থা। বলল, ডক্টর আদি ফোন করে জানিয়েছেন ইশা হসপিটালে এডমিট।
রিপ চমকাল। নিজের ফোনটা হাতড়ে নিয়ে বলল, ওহ মাই গড আদিই ফোন দিচ্ছিল আমাকে?
রিক জবাব দিল না। রিপ বলল,
‘ কি হয়েছে ইশুর? কিভাবে কি হয়ে হয়েছে? মেয়েটা জ্বালিয়ে মারবে আমায়।
রিক বলল, তুই বাসায় চলে যাহ। ভেজা গায়ে আর কতক্ষণ থাকবি। জ্বর বাঁধিয়ে বসবি।
রিপ না করে উঠল। বলল, জ্বর হোক। ইশুকে জ্বালাব। শান্তি দেবনা। আমাকে একটু শান্তি দেয়না।
রিক নিঃশব্দে হাসল। বলল, তাহলে চল।
ইশার হাতে স্যালাইন। কপালে,ঠোঁটের পাশে, চোখের পাশে, গলার পাশে ছোট ছোট ব্যান্ডেজ। নিস্তেজ হয়ে পড়ে রয়েছে। মুখে ক্লান্তির ছাপ। অসুস্থতার ছাপ। অল্পসময়ে চোখের নিচে দাগ পড়ে গেছে। ভ্রু কুঞ্চন করে তার মেডিকেল রিপোর্ট দেখছে আদি। একজন নার্স তার পেছনে দাঁড়ানো। বলল, স্যার পেশেন্টের রিলেটিভস এসেছে। পারমিশন দেব।
আদি মাথা নাড়াল।
রিপ ডুকে পড়ল। আদি ঘাড় ফিরিয়ে রিপকে দেখে হাসল। বলল,
‘ ফোন কোথায় ছিল। কতবার কল দিলাম। ভেজা শার্ট পড়ে বসে আছিস কেন?
রিপ উত্তর দেয়না। নিস্তেজ হয়ে পড়ে থাকা মেয়েটির দিকে তাকিয়ে থাকে। ধীর পায়ে হেঁটে সে এগিয়ে যায়। ইশার গায়ে ধাক্কা দেয়। বলে,
‘ এই ইশু কি হয়েছে তোর? আমি তো তোকে সুস্থ দেখে গেছি। তুই আমাকে না বলে বাইরে বেরিয়েছিস কেন? এই ইশু। ওঠ।
আদি হাতে থাকা রিপোর্ট থেকে চোখ তুলে তাকায় রিপের দিকে। বলে,
‘ এখন ডাকিস না রিপ। ঘুমের ইনজেকশন দেওয়া হয়েছে।
রিপ আদির দিকে তাকিয়ে বলে,
‘ তুই ওকে কোথায় পেলি?হপ ও এভাবে কি করে আঘাত পেয়েছে? কে আঘাত করেছে?
আদি ভ্যাবাচ্যাকা খেয়ে গেল। কি বলবে সে রিপকে? রিপের জোরাজুরিতে আদি মুখ খুলল। বলল,
‘ ওনি মাথা ঘুরে পড়ে গিয়েছেন। পড়ে যাওয়ায় আঘাত পেয়েছে। বাকিটা ওনি চোখ খুললে জিজ্ঞেস করে নিস। এখন গিয়ে ফ্রেশ হয়ে নে। ড্রেস চেন্জ কর।
রিপ সন্দিগ্ধ চোখে তাকায়। বলে , ও উঠুক। তারপর।
আদি বিরক্ত হলো। এত দরদ কিসের? কিন্তু মুখ ফুটে বলতে পারল না। রিপ বলল,
‘ ওকে আজ বাসায় নিয়ে যেতে পারব না?
আদি অবাক হয়ে বলল, তুই কি পাগল রিপ? ওনাকে এখন রিলিজ দেওয়া যাবেনা। মিনিমাম দুইদিন তো লাগবে।
রিপ না করে উঠল। বলল, দুইদিন ও কি খাবে? এভাবে ঘুমোবে নাকি শুধু? দুইদিন লাগবে না। কিছুক্ষণ পর চোখ খুললে, কথা বললে আমি নিয়ে যাব ওকে।
আদি হেসে বলল,
‘ নিয়ে যাস। আমি রাখার কে?
আদি দাঁড়াল না। গটগট পায়ে হেঁটে বের হয়ে গেল। রিপ আদির যাওয়া দেখল। এত রাগ করার কি আছে? সে ভুল কি বলল? ইশু কেন এভাবে এখানে পড়ে থাকবে? রিপ ভেজা রুমাল ঝেড়ে মুখ মুছল। টুল টেনে বসল মেয়েটির মাথার পাশে। কেবিনের জানালার কপাট খুলে দিল। আবার টুলে এসে বসল। জানালা দিয়ে হুড়মুড় করে ডুকে এল ঠান্ডা বাতাস। রিপের ভেজা চুল উড়তে চাইল না। তবে অচেতন মেয়েটির কয়েকটা উড়ো চুল এসে পড়ল মুখের উপর। মেয়েটি যদি চেতন থাকত তাহলে কি বিরক্ত হতো না। হাত দিয়ে সরিয়ে দিত না?
রিপ হাত বাড়ায়। আলতোহাতে সরিয়ে দেয় চিকনচাকন কয়েকটা উড়ো চুল। মেয়েটির মাথার বালিশের কাছে হাতের ভর রাখল। মাথাটা হাতের উপর রেখে বলল,
‘ শোন আমার তেষ্টা মিটেনি রে ইশু। আমার গলা শুকিয়ে আছে এখনো। তুই কখন পানি দিবি?
কোনো আওয়াজ আসেনা মেয়েটি থেকে। রিপ হাসে। বলে,
‘ দেখ আমি ভেজা গায়ে বসে আছি। আমার জ্বর হবে, আমি তোকে জ্বালাব। মাথা টিপে দিতে বলব। গরম চা করে দিতে বলব। উলটপালট বকে তোর মাথা খাব। তখন তো তোর কষ্ট হবে। তারচাইতে ভালো তুই এখন উঠে যাহ। এভাবে শুয়ে থাকলে কি কারো ভালো লাগে? এভাবে কি আমি তোকে দেখতে অভ্যস্ত। ভালো লাগছেনা। উঠ না ইশু। আচ্ছা ঠিক আছে, উঠে বসিস না। কথা ও বলিস না। শুধু চোখ খুলে তাকা। একটু মুচকি হাস। আর কিচ্ছু চাইব না। এই ইশু উঠবিনা?
রিপের বাজে বকবকানি শুনে রিক। কেবিনের বাইরে থেকে আওয়াজ করে বলে,
‘ রিপ বাসায় যাহ। আমি আছি। যাহ। ঠান্ডা লেগে যাবে।
রিপ বিরক্তিবোধ করে। বলে,
‘ আমি থাকি। তুমি চলে যাও দাভাই। বাসায় এমনিতে ও কেউ নেই। পরী কাউকে না দেখলে কাঁদবে।
রিক বলে,
‘ কিন্তু তোর তো ঠান্ডা লাগবে?
রিপ আর জবাব দেয়না। চুপ করে বসে থাকে। তার সব রাগ গিয়ে পড়ছে এখন শুয়ে থাকা মেয়েটির উপর। মেয়েটি তাকে কিচ্ছু বলেনা। কোনোকিছু শেয়ার করেনা তার সাথে। তার হাসি কান্না গুলো ও শেয়ার করেনা। এত পর কেন সে? এতটা পর কেন ভাবে মেয়েটা তাকে? এতটা পর সে কখনো হতে চাইনা। কখনোই নয়।

______________________

পা দিয়ে ঠেলে ঝাড়ের ভেতর ফেলে দেওয়া, ধাক্কা দিয়ে ফেলে দেওয়া,মুখ হাত বেঁধে ফেলা,দমবন্ধকর সব ঘটনা পুনরায় চোখে ভাসতেই মুখ দিয়ে উদ্ভট সব শব্দ বের করল ইশা। হাতে ক্যানেল। পুরো শরীরে তীব্র যন্ত্রণায় সে চোখমুখ খিঁচে ফেলল। অনেকক্ষণ পর তার মুখ দিয়ে স্পষ্ট আওয়াজ বের হলো, ‘ মা ‘।
কি আশ্চর্য এই মা নামক শব্দটার কোনো অর্থ নেই তার কাছে। মা নামক শব্দটি তার কাছে নিছক শব্দমাত্র। তার ও তো একটা মা থাকতে পারত। তার এমন অসুস্থতার সময় শিয়রে বসে একজন মায়ের দু চোখের দু ফোটা জল পড়তে পারত। একজন মা তার জন্য উপরওয়ালার কাছে তার মঙ্গল চাইতে পারত? চোখের জলে ভেসে কপালের কাছে চুমু এঁকে ডাকতে পারত,” আমার মা, তুই খুব তাড়াতাড়ি সুস্থ হয়ে যাবি। আমি আছি তো। তোর মা আছে।
কিন্তু না এমন কেউ নেই। কেউ তার জন্য দু ফোটা চোখের জল ফেলেনা। কেউ তার মাথার শিয়রে বসে রাত জাগেনা। কেউ তাকে মা বলে ডেকে উঠেনা। নিজের মা তো কবেই ছেড়ে চলে গিয়েছে। এমনকি নিজের সন্তান ও তাকে মা ডাকেনা। তার ও তো মা ডাক শুনতে ইচ্ছে হয়। মা বলে কাউকে একবার ডাকতে ইচ্ছে হয়। ওই ছোট্ট মা টাকে যদি একবার ভালোবেসে মা বলে ডাকতে পারত,মা না থাকার কষ্টটা একটু হলে ও লাঘব হতো। কিন্তু সে ও আজ তাকে মা ডাকেনা। অন্য কাউকে মা ডাকে। অন্যকারো বুকে ঘুমায়। অন্যকারো কোলে ঘুমায়। অন্যকারো হাতে খায়। তার ও তো একটিবার ওই ছোট্ট মা টাকে জড়িয়ে ধরে ঘুমোতে ইচ্ছে হয়। একটিবার জড়িয়ে ধরে শক্ত করে বুকের মাঝে আটকে রাখতে ইচ্ছে হয়। তাকে ঘুম পাড়ানির গান শুনিয়ে ঘুম পাড়াতে ইচ্ছে হয়। কিন্তু তার হাত পা বাঁধা। সে মা ডাকতে পারেনা। মা ডাক শুনতে পারেনা। সে এতটাই অভাগী। এতটা।

আজ তার খুব করে মনে হচ্ছে আবেগের বশে নেওয়া একটি ভুল সিদ্ধান্ত তার জীবনকে আর ও দূর্বিষহ করে তুলেছে। ডক্টর কোনোদিন তার জন্য শুভাকাঙ্ক্ষী ছিল না। ডক্টরকে ভালোবাসাটাই তার জীবনের সবচাইতে বড় ভুল। যে ভুলের মাশুল তাকে এই মুহূর্তে ও দিতে হচ্ছে। চোখের কোণা বেয়ে জল তার কানের কাছে গড়ায়।
কেবিনের দরজা ঠেলে রিপ ডুকে। ইশাকেই পিটপিট করে তাকাতে দেখে তার কলিজা ঠান্ডা হয়। দৌড়ে আসে ইশার কাছে। ইশা তখন মৃদুমন্দ হাসছে। চোখের পানি মুছে নিতে বিলম্ব হওয়ায় তা দেখে ফেলে রিপ। রিপের মেজাজ খারাপ হলো। বলল,
‘ আমার কথা না শুনলে, আমার কথার বিপরীতে কোনো কাজ করলে তুই কষ্ট পাবি। তাই কোনো সিদ্ধান্ত নেওয়ার আগে আমার কথা ভাববি। নাহলে খুব খুব কষ্ট পাবি। ইশা হাসে। বলে, এখন কয়টা বাজে?
রিপ ঘড়ি দেখে বলে, ভোর পাঁচটা।
ইশা আবার ও হাসে। বলে, এজন্যই বলছি তোমার চেহারার এই হাল কেন? ঘুমোওনি সারারাত?
রিপ ধমক দিল, নিজের চিন্তা কর। আমাকে নিয়ে চিন্তা করার মানুষ আছে।
ইশা উঠে বসার চেষ্টা করে, কিন্তু পারেনা। রিপ বিরক্ত হয়ে বলে, তোকে কে উঠতে বলছে? এত বাড়াবাড়ি করিস কেন?
ইশা ক্লান্ত ভঙ্গিতে বলে,
‘ তুমি আমাকে এই অবস্থায় বকছো? কোথায় একটু মিষ্টি মিষ্টি কথা বলবে? তা না।
রিপ হাসল। হাতের প্যাকেট থেকে খাবার বের করল। বলল,
‘ বড়দা এনেছে বাসা থেকে। খাবি এখন।
ইশা না না করে বলল, পরী কি করছে?
রিপ প্যাকেট খুলতে খুলতে বলল,
‘ রিইইইই আর ফিপিকে খুঁজছে পুরোবাড়ি। আর বড়দার সাথে চলে আসতে চাইছে। রাত হয়ে গেছে তাই আনেনি। দিনের বেলা আনবে। তোকে দেখে যাবে।
ইশা এবার সর্বাত্মক চেষ্টা দিয়ে উঠে বসার চেষ্টা করে বলল,
‘ না,না পরীকে এখানে আনার কোনো দরকার নেই। আমি নিজেই যাব।
রিপ কপালে ভাঁজ ফেলে বলল,
‘ আদি বলল তোকে আর ও একটা দিন পুরোপুরি থাকতে হবে। তোর হাতে ভীষণ আঘাত লেগেছে। শরীর ও ভীষণ অসুস্থ তোর। তুই নাকি সবসময় টেনশনে থাকিস? কিসের এত টেনশন তোর বলতো? আদি বলেছে, তোকে মেন্টালি স্ট্রেসফ্রি রাখতে। আমি বুঝিনা ইশু তোকে? তুই কি লুকোচ্ছিস আমার থেকে? কেন লুকোচ্ছিস ?
ইশা নিরুত্তর তাকিয়ে থাকে রিপের দিকে। রিপ তার দুহাত নিজের দুহাতে নিয়ে বলে, আর কাউকে বিশ্বাস না কর,ভরসা না কর। যাকে রিপুদা ডেকেছিস তাকে করতে পারিস। চোখবন্ধ করে। তোর অতটুকু বিশ্বাস, ভরসাস্থল হওয়ার যোগ্যতা আমি রাখি রে ইশু। আমাকে কখনো আঘাত দিসনা। তোর দেওয়া আঘাত আমি নিতে পারব না। নয়ত কঠিন পাথর হয়ে যাব। দিস না আঘাত।
ইশা হাসে। তবে সে হাসির সাথে জল গড়ায় দুচোখ বেয়ে। জাপটে জড়িয়ে ধরে রিপকে। বলে, তুমি আমায় অতটা ও ভালোনা বাসলে পারতে রিপুদা। আমার কপালে অত সুখ সয়না। তবে, তুমি কখনো আমায় দূরে ঠেলে দিওনা। আমার আশ্রয় তুমি। আমার মাথার উপরে ছাদ হিসেবে উপরওয়ালা তোমাকে পাঠিয়েছে।
রিপ মাথায় হাত বুলিয়ে দেয় ইশার। বলে, আমি আজীবন থাকব। তুই ও থাকিস।

_____________________

পকেট থেকে ফোন তুলে নাম্বার দেখে চুপ হয়ে যায় আদি। কনফারেন্সের সময় ইমি ফোন করল। এখন কি হবে?
ডক্টর সামাদ আর রফিক আদির দিকে উৎসুক হয়ে তাকিয়ে রইল। বলল, এনি প্রবলেম মিঃ চৌধুরী।
আদি ভড়কাল। লজ্জায় পড়ে গেল। মিনমিন করে বলল, ইমির ফোন ছিল।
সামাদ আর রফিক নীরবে একে অপরের দিকে তাকিয়ে হাসল। আদি তাদের হাসির কারণ খুঁজতে যেতেই আবার ও ফোন এল ইমির। সামাদ হেসে বলল, যান ফোন সেড়ে আসুন। সবার আগে ম্যাডাম।
আদি এবার সত্যি সত্যি লজ্জায় পড়ে গেল। কিছুটা দূরে দাঁড়ানো নার্স কয়েকজন হাসল আদির কান্ড দেখে। আদি বেরিয়ে এল রুম থেকে।
ফোন কানে দিতেই ফোনের ওপাশ থেকে মেয়েলি কন্ঠস্বর ভেসে এল,
‘ ফোনটা কোথায় ছিল আপনার? কতবার ফোন দিয়েছি?
আদি হাসল। জিভে কামর দিয়ে বলল, সরি ইমি। একচুয়ালি আমি কনফারেন্সে ছিলাম।
‘ আমি এখনের কথা বলছিনা আদি। তার আগের কথা বলছি। কাল সন্ধ্যা থেকে এখন অব্ধি তুমি নিজ থেকে ও একটা ফোন দাওনি।
আদি তাড়াতাড়ি ফোন কেটে দেয়। নিজ থেকে কল ব্যাক করে বলল,
‘ এই তো দিয়েছি। নাউ হ্যাপী?
আইমি না হেসে থাকতে পারল না। বলল, তুমি আমাকে রাগতে দাওনা আদি। কেন এমন তুমি।
আদি হাঁটতে হাঁটতে নীরবে হাসল। বলল,
‘ ইমি রাগ করবে আদির উপর। ইম্পসিবল। এটা হতেই পারেনা।
আইমি ও আদির সাথে তাল মিলিয়ে হাসল। আদি বলল,
‘ ইমি তুমি ভালো আছ?
আইমি হাসল মৃদু। অদ্ভুত প্রশান্তিতে ভরে গেল মনপ্রাণ। মৃদু আওয়াজ করে বলল,
‘ এখন ভালো আছি। তুমি ভালো আছ?
কত সহজ একটা প্রশ্ন? কত ছোট্ট একটা প্রশ্ন। কিন্তু সেই প্রশ্নের উত্তর দিতে গিয়ে আদির কন্ঠ আটকে গেল। বলল,
‘ আমি ভালো ছিলাম ইমি।

_______________________

দুহাতের মধ্যে দুইটা ভ্যালেডিয়া চকলেট। ছোট্ট মেয়েটির পড়নে কালো ফ্রক। ডাগর ডাগর চোখদুটো দিয়ে দেখছে হসিপটালের সব মানুষ। কোথায় আসল সে? এরা সবাই কারা? পাপা তাকে কোথায় নিয়ে যাচ্ছে? মাম্মা কোথায়? রিইইইই কোথায়? ফিপি কোথায়?
ছোট্ট মেয়েটির ভয় হলো। রাগ লাগল। রিকের মাথায় চকলেট দিয়ে বাড়ি দিয়ে ঠোঁট টেনে ডাকল, পাপপপপা মিনননি।
রিক হাসল। বলল,
‘ এখন আমরা ফিপির কাছে যাচ্ছি।
পরীর আর ও রাগ লাগল। পাপা হাসল কেন?
সে চোখে টলমল পানি নিয়ে বসে থাকল রিকের কোলে। টু শব্দ করল না।

আর কিছুক্ষণ পড় সূর্য হেলে পড়বে পশ্চিম আকাশে। সন্ধ্যা ঘনিয়ে আসবে। ইশা চোখ বুজল কিছুক্ষণ আগে। রিপের মাথায় দুষ্টু বুদ্ধি চাপল। কোলে থাকা পরীকে ইশাকে দেখিয়ে দেয়। তারপর চুপিচাপি গিয়ে দাঁড়ায় ইশার বেডের পাশে। পরীকে ইশার পায়ের কাছে ছেড়ে দেয়।
তারপর হেসে বেরিয়ে যায় কেবিন থেকে। আড়াল হয়ে দেখে পরী ইশার কান্ড। রিকের ডাকে সে ছুটে যায়। দেখে নেয় ইশা পরীকে।ইশাকে চোখ খুলতে দেখে সে চলে যায়। পা থেকে বেয়ে বেয়ে হামগুড়ি দিয়ে পরী চলে আসে ইশার বুকের উপর। ইশা চমকায়। চিৎকার দেওয়ার আগে গালে লালা জাতীয় কিছুর টের পেয়ে পরীর দিকে তাকায়। পরী হাতের চকলেট দিয়ে ইশাকে মারতে মারতে বলে, ফিফপি চককো।
ইশা হাসল। বলল, তুমি এখানে? পরী? কি করে?
পরী চেঁচাল। ডাকল, শাআআআআআ,,
ইশা হাসিমুখে তাকাল পরীর দিকে।। ডাকল, মা?
পরী হাসল। ইশা দেখল, কালো ফ্রক গায়ে,ছোট ছোট গোল করে কাটা চুল,গোলাটে ডাগর ডাগর চোখওয়ালা মেয়েটি অসম্ভব আদুরে সুন্দর। পরী ডাকল, আমমমমমা…
এই ডাকটি পরী নিজের অজান্তে ডাকে। কিন্তু ইশা নিজের মাঝে মা স্বত্বাকে খুঁজে পায় এই ডাকে। সে ডাকে,
‘ মা। আমার পরী মা? আদিশা?
পরী খিলখিল করে হাসে।
ইশার পড়নের সাদা ঢিলেঢালা কামিজটি টানতে টানতে উঠার জন্য বলে, ডাকে, আমমমমা মিনননননি……
ইশা ও পরীর সাথে টেনে বলে, মিনননননননি,,,,
পরী রাগ করে। ইশার গালে কামড় বসানোর সুযোগ খুঁজে। ইশা সুযোগ দেয়না। এদিকওদিক নড়তে থাকে। যার কারণে পরীর আর ও রাগ বাড়ে। সে দাঁত দাঁতে গর্জে আওয়াজ করে ই ই ই ই।
ইশা হাসল। পরী ইশার গালে কামড় দেওয়ার সুযোগ খুঁজতে খুঁজতে ইশার গালে গাল লাগিয়ে আওয়াজ করতে করতে বলল, আমমমা আমমমা আমমমা………
মেয়ের রাগ,হাসি, মায়ের সুখের হাসিতে ক্রমাগত মুখোরিত হয় পুরো কেবিন। যা কেবিনের বাইরে গিয়ে ও আঘাত হানে কারো কানে।
কেবিনের পর্দা সরায় আদি। গলা উঁচিয়ে দেখতেই চোখে পড়ে আবার সেই সুন্দর দৃশ্য। ছোট্ট মেয়েটি যেন প্রতিযোগীতাই নেমেছে মায়ের মুখে কামড় বসানোর জন্য। কিন্তু পারছেনা। ইশা খিলখিল করে হেসে উঠে। বলে,পরী লুজার। পরী কিছুক্ষণ তাকিয়ে থাকে ইশার দিকে। ইশা তাকে পেটে সুড়সুড়ি দেয়। বলে, হাসো হাসো।
পরী কাতুকুতু সহ্য করতে না পেরে রাগ দেখাতে দেখাতে হাসে। ইশা যখন চরম মাত্রায় কাতুকুতু দিচ্ছে তখন পরী পুরো কেবিনরুম ফাটিয়ে হাসল।
ইশা হাসল। দুজনের হাসি মুগ্ধ নয়নে অপলক তাকিয়ে দেখতে লাগল ডক্টর আদি চৌধুরী।
দুই পা এগিয়ে কেবিনে ডুকে পড়ে। তখন ও হেসে চলেছে মা মেয়ে। ইশার দু চোখ বন্ধ। হাসলেই তার দুচোখ বন্ধ হয়ে যায়। আদি আর এগোলো না। দরজার কাছাকাছি দেয়ালে হেলান দিয়ে দাঁড়াল। এই অপূর্ব দৃশ্যটি যদি ক্যামেরাবন্দী করা যেত কেমন হতো?
বেশ খানিকক্ষণ সময় পার হয়ে যেতেই নীরব প্রাণীটির দিকে চোখ গেল ইশার। আদি ফোনে ছবি তুলেই চোখ সরাতেই চোখাচোখি দুজন বহুদিন পর।
আদি আজ হাসল না। মলিন চেহারায় ক্লান্ত চোখে চেয়ে রইল মেয়েটির দিকে। ইশার হাসি হাসি থামতে বিষণ্ণ মুখে পরিণত হলো। পরীকে শক্ত করে ধরল। পরী ফিরে তাকায় আদির দিকে। আদিকে আঙুল দেখিয়ে ইশাকে বলে,
‘ আমমমা ওতততো।
ইশা হাতে ব্যাথা অনুভব করে। তারপর ও পরীকে তার পাশে শুইয়ে দিয়ে জড়িয়ে ধরে সে উল্টোদিকে মুখ করে শোয়।
আদি হতভম্ব ইশার এমন কাজে। পরী ইশার বুকে মুখ গুজে আবার মুখ তুলে তাকায় আদির দিকে। হাতের চকলেটগুলো আদিকে দেখিয়ে বলে,,,, এতততো।
আদি পরীর চকলেট দেখে অনেকক্ষণ পর হাসল। এগিয়ে গেল নিঃশব্দে। ইশার উপর দিয়ে হাত বাড়িয়ে পরীর হাত থেকে চকলেট নিতেই পরী চকলেট শক্ত করে ধরে রেখে বলল, নান নান না…..
আদি হেসে দিল। বলল, এখন তো দিয়ে দিচ্ছিলে। দাও। দাও।
পরী মাথা নাড়ল। ঠোঁট টেনে ডাকল আমমমমা?
ইশা পরীকে শুইয়ে দিল। ফিসফিস করে বলল, চুপচাপ শুয়ে থাকো। ফিপি মারব খুব।
পরী চট করে উঠে দাঁড়াল। ইশার মুখে ঠাসস ঠাসস হাতের মুঠি দিয়ে মারল। হাতের মুঠি দিয়ে কপালের চুল সরাল। আদির দিকে হাত বাড়িয়ে চকলেট দেখিয়ে বলল, এতততততো।
আদি এবার চকলেট নিল না। পরীর তাতে ও রাগ হলো। ইশার গায়ের উপর উঠে, ইশার ব্যান্ডেজগুলো খোলার জন্য হাতের ছোট্ট ছোট্ট আঙুল দিয়ে কুটকুট করতে লাগল। ইশা আটকাল না।
যখন বিষয়টা বোধগম্য হলো আদি হাত ধরল পরীর। বলল, না, এখন না। ব্যাথা পাবে।
ইশা আচমকা আদির কথায় হেসে দিল। অন্যদিকে মুখ করে রাখল। এটা তো সামান্য ব্যাথা।
পরীকে কেন আটকাল আদি? পরীর রাগ হলো ভীষণ দুজনের উপর। সে ধীরে গাল ফুলানো শুরু করল। নাক ফুলালো। ঠোঁট ফুলাল। ঠোঁটটা এমনভাবে টানছে ইশা আদি দুজনই অবাক হয়ে তাকিয়ে রইল। ঠোঁট টানতে টানতে ঠোঁট উল্টে গেল। ভ্যা ভ্যা করে কেঁদে দুজনের মাথার চুল টেনে ধরল। আদি হাঁটুভেঙ্গে বসে পড়ল মেঝেতে। ইশা ব্যাথা পেল। পরী তারপর ও দুজনের চুল ছাড়ল না। দুজনকে একসাথে এনে চুল হাতের মুঠোয় বন্দী করে কাঁদতে লাগল। ইশা চোখ মেলে তাকায়, ততক্ষণে তার মুখের সামনে মাথায় হাত দিয়ে পরীর হাত চেপে ধরা মানুষটির মুখ ভূমিষ্ঠ হয়। উষ্ণ নিঃশ্বাস এসে পড়ে চোখেমুখে। সাথে একরাশ অভিমান। একদলা রাগ। দুচোখ ভর্তি জল। সাথে গড়ায় গড়ায় কানের দুপাশে। ইশা চোখ বন্ধ করে রাখে। পরী কাঁদতে থাকে অবিরত। ইশা আবার চোখ খুলে একটি প্রশ্নে,
‘ আপনি ভালো আছেন মিসেস. ইশা।
ইশা প্রত্যুত্তরে হাসে। মৃদু কন্ঠে বলে,
‘ দেখছেন না?
আদি বলে, দেখছি। খুব ভালো আছেন। তবে শুধু আপনি একাই ভালো আছেন। নিজে ভালো থাকলে চলেনা। সবাইকে ভালো রাখতে হয়। ভালো রাখা জানতে হয়। শিখতে হয়।
ইশা এবার জবাব দেয়না। আদি আবার ও প্রশ্ন করে, চোখের জলের কারণটা যদি জানতে পারতাম?
ইশা চুপটি মেরে তাকায় পরীর দিকে। অল্প কান্নায় তার চোখমুখের বেহাল দশা। পরী কাঁদতে কাঁদতে ঠোঁট টেনে টেনে বলে, আমমমমা………
আদি শোনে সেই ডাক। বলে, কে আমমমমা ?
পরী আঙুল দিয়ে দেখিয়ে দেয় ইশাকে। ইশার গালে তার গালের লালা লাগিয়ে বলে, আমমমমা ওততো।
আদি মাথার চুল ঠিক করে বলে, এটা ঠিক হয়নি। আমার মাথার চুল কি করে দিয়েছ পরী। ব্যাড গার্ল তুমি।
পরী ঠোঁট টেনে আবার ও কেঁদে দেয়। আদির চুল ধরে আবার ও টেনে আনে তারদিকে। গালে কামড় দেওয়ার সুযোগ খুঁজতে খুঁজতে উচ্চারণ করে, আমমমা…..
ইশা টেনে আনে পরীকে তার দিকে। বলে, শান্ত হও মা। তোমার পাপা কোথায়?
আদি ছটপট করে তার পকেটে থাকা চিরকুটটি বের করে তাড়াতাড়ি। তাতে লেখা,

‘ মিনির রাগ উঠলে তাকে ধরে রাখবেন না ডক্টর। সে ঠোকরাতে ঠোকরাতে রক্ত এনে ফেলবে। তাই সাবধানে থাকবেন।

মিষ্টি,,

ইশা আদির হাতে থাকা চিরকুটটির দিকে তাকায়। বুক ধড়ফড় করে উঠে তার। হৃৎস্পন্দন যেন থেমে গেল। কি করে চিরকুট ডক্টরের হাতে?
আদি চিরকুট থেকে চোখ তুলে তাকাল ইশার চোখের দিকে। স্বাভাবিক চোখজোড়া দেখে তার বুকে অসহ্য যন্ত্রণা হলো। চোখদুটোতে যদি বিস্ময় ছড়ানো থাকত?
এই বৃষ্টি যদি তার মিষ্টি হতো?
তাহলে কতই না ভালো হতো।
কে সত্যি তার জীবনে? তার খুব করে মনে হয় এই মেয়েটিই সত্যি। যখন চিরকুট পড়ে সে তখন মনে হয় মিষ্টিই সত্যি। যখন ইমির চোখে চোখ রাখে তখন মনে হয় ইমিই সত্যি। আসলেই কে সত্যি? এই হৃদয়সিন্ধুক কার। কে থাকে সেথায়? কে বলবে তাকে?

পরী আদিকে কামড় দিতে না পেরে ইশার দিকে এগিয়ে যায়। ইশার গলায় ব্যান্ডেজের পাশে দাঁত বসিয়ে দেয়। চোখের পানি লেপ্টে দেয়। ইশা ঠোঁট কামড়ে সহ্য করে নেয়। আদি পরীকে সরিয়ে নেয়। বলে, কি করেছ এটা?
পরী আদির কথা শোনেনা। হাত ছোড়াছুঁড়ি করে মারে আদিকে। সুযোগ পেয়ে আদির গলার পাশে কামড় বসিয়ে দেয়। আদির সহ্য হয়না। তারপরে ও সহ্য করে নিতে হয়। সব সহ্য করে নিতে হবে। সহ্য করে নেওয়াটাই এখন একমাত্র উপায়।
ইশা তাকায়না আদির দিকে। পাশ ফিরে শোয়। আদি তাকিয়ে থাকে। কোলে পরী। আদি ডাকে, মিসেস ইশা।
ইশা ফিরেনা।
আদি তারপর আবার বলে, আপনার বিয়ে কবে হয়েছে?
ইশা চুপ করে শুয়ে থাকে। আদি আবার ও বলে,
‘ কার সাথে হয়েছে?
ইশা না ফিরেই জবাব দেয়,
‘ অয়ল ইয়োর ওৌন ম্যাশিন।
আদি চোয়াল শক্ত করে তাকায় ইশার দিকে।
কোলে থাকা পরী আদির গলা ধরে চুপটি মেরে যায়। শুধু থেকে থেকে কেঁদে উঠে।
ইশা ফিরে তাকায়না কারো দিকে।
আদি তাকায় ইশার হাতটার দিকে। যে হাতের উপর সে দাঁড়িয়ে ছিল।
ইশা হাতটা তুলে চোখ মুছে নেয়। মাথায় দিয়ে রাখে। আদি চেয়ে থাকে হাতটার দিকে। আর সেই হাতে লেগে থাকা পানির দিকে।
পরীকে রেখে গটগট পায়ে হেঁটে বেরিয়ে আসে আদি। দাঁড়ায় না আর। পিছু ও ফেরেনা।

________________________

রাত দশটা। ড্রয়িংরুমে খোলাখুলি মদের বোতল হাতে আফি। রাইনা রেহানকে ঘরে পড়াচ্ছে। আফি একের পর এক মদের বোতল শেষ করছে। বাসায় আজ নেই আজিজ চৌধুরী নেই আলিয়া চৌধুরী।
ঘড়ির কাটা সাড়ে দশটা ছুঁই ছুঁই। দরজা পেরিয়ে ড্রয়িংরুমে হাসতে হাসতে এসে পড়ে আইমি,আজিজ,আলিয়া চৌধুরী। হাতে ব্যাগপ্যাক। শপিংমল থেকে এসেছে। আইমি আফিকে দেখে বলল,
‘ আন্টি আফি ভাইয়ার কারণে আমার এখানে আসতে ইচ্ছে করেনা। আমি চলে যাব। ড্রাইভারকে বলে দিন।
আজিজ চৌধুরী বলেন, আদি এখনো ফিরেনি?
আফি তাদের কথা শুনে হো হো করে হেসে উঠে। হাসতে হাসতে সোফায় গা এলিয়ে বসে থাকা আদিকে দেখিয়ে দেয়। আদি চোখ বন্ধ করে বসে আছে।
আইমি ছুটে যায় তার কাছে। বলে, আদি তুমি এখানে?
আদি খুব কষ্টে চোখ খুলে। আইমি ভড়কে যায়। বলে, আদি তুমি ও। কেন আদি?
আলিয়া আর আজিজ চৌধুরী রেগে তাকায় আফির দিকে।
আদি হেসে উঠে। আইমির কাছ থেকে নিজেকে ছাড়িয়ে নিজের রুমে চলে যায় ঢলতে ঢলতে। আইমি তার পিছু পিছু দৌড়ে।
আদি দরজা বন্ধ করে দেওয়ার আগেই আইমি দরজা ঠেলে ডুকে তার রুমে। বলে, আদি কেন তুমি ড্রিংক করেছ? তুমি বাচ্চা নও আদি।
আদি আঙুল দেখিয়ে বলে, ইমি আমার মাথা ঠিক নেই। তুমি যাও।
আইমি চেঁচিয়ে উঠে।
‘ যাব না। তুমি আগে বলো কেন ড্রিংক করেছ? কেন করেছ?
চিৎকার করে ইমি।
আদি চেপে ধরে ইমির দুইবাহু। দাঁতে দাঁত ঘর্ষণ করে। কিন্তু আইমির চোখের জল দেখে কিছু বলেনা।
বেড সাইড টেবিল লাতি দিয়ে ছুড়ে মারে। আইমি দৌড়ে গিয়ে আদিকে শান্ত হতে বলে। শক্ত করে জড়িয়ে ধরে। বলে,
‘ আদি কেন তুমি এমন করছ?
আদি চুপ হয়ে যায়। শান্ত হয়ে যায়। ইমি মাথা তুলে দেখে আদির শান্ত চোখ। সে হাসে। বলে, বলো কি হয়েছে?

আদি চুপ থাকে। বেশকিছুক্ষণ পরে আচমকা জড়িয়ে ধরে ইমিকে। নিচু হয়ে ইমির কাঁধে মাথা রেখে বলে,

‘ তুমি আমার সাথে অন্যায় করেছ ইমি। আমাকে ছেড়ে অন্য কাউকে বিয়ে করে নিয়েছ। তুমি আমার বিশ্বাস ভেঙেছ। তুমি আমাকে বুঝোনি ইমি। এর শাস্তি তুমি পাবে। আমার চাইতে ও বেশি কষ্ট তুমি পাবে। খুব কষ্ট পাবে।
আইমি হাসল। বলল,

‘ আমি বিয়ে করিনি। করব। আর সেটা তোমাকে। আজকেই তো শপিং হলো। কিন্তু তুমি গেলেনা। আর এখন বলছ, ইমি তুমি আমাকে ছেড়ে অন্য কাউকে বিয়ে করে নিয়েছ। স্টুপিড।

চলবে,

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here