#মন_কেমনের_বৃষ্টি
#পর্ব_২১
#পুষ্পিতা_প্রিমা
তার পরের দিনই হসপিটাল থেকে ইশাকে রিলিজ দেওয়া হলো। খানিকটা সুস্থ হলে ও হাত নড়াচড়া করতে তার বেগ পেতে হলো। তার অসুস্থতার কথা শুনে নীরা আর অর্পি দেখতে এল তাকে। যদি ও নীরা বড্ড লাজুক। সে রিপের সামনে পড়তেই চায়না। তারপরে ও রিপের সামনে কয়েকবার পড়তে হলো। লজ্জা, আড়ষ্টতা তাকে ঘিরে ধরল। রিপকে দেখে মনে হচ্ছেনা সে তাদেরকে পাত্তা দিচ্ছে। দিনশেষে রাত এল। ইশা একা রুমে বসে বসে যখনি মিনুমাকে ফোন দিতে যাবে। প্লেট হাতে ডুকে পড়ল রিপ তার রুমে। গ্লাসে পানি ঢালতে ঢালতে বলল, খেয়ে নে।
ইশা নাকমুখ কুঁচকে বলল, পরীর সাথে খেয়েছি। ভাবী দুজনকে একসাথে খাইয়ে দিয়েছে। আর খাব না। খিদে নেই।
কিন্তু কে শোনে কার কথা। রিপ কথা বাড়াল না। ছোট ছোট করে ভাত মেখে ইশার দিকে বাড়িয়ে দিল। বলল, হা কর তো। ন্যাকামি ভালো লাগেনা।
ইশা মাথা নিচু করে চুপচাপ খেতে লাগল। চোখে পানি টলমল।
রিপ তার ছলছলে চোখ দেখে নিঃশব্দে হাসল। বলল,সবগুলো খাবি চুপচাপ।
ইশা ফুঁপিয়ে উঠল। কিন্তু রিপ বুঝে উঠার সাথে সাথে আবার চুপ হয়ে গেল। রিপ খাইয়ে দিল। ইশার তেষ্টা পেলে ও পানি খেল না। ঝাল লাগায় দাঁতে দাঁত চেপে রাখল। তারপর ও পানি খেলনা। রিপ ধমক দিয়ে বলল, পানি খাচ্ছিস না কেন?
ইশা এবার নীরবে কাঁদল না।
হু হু করে কেঁদে দিল। হিঁচকি তুলে কাঁদল। কিন্তু কিছু বলল না। রিপ এমন কান্ডকারখানায় ভ্যাবাচ্যাকা খেয়ে গেল। বলল,
‘ আমি এভাবে কাঁদার মতো কি বলেছি। চুপ কর।
ইশা মাথা নামিয়ে আর ও বেশি করে কাঁদল।
তারমধ্যেই পরী উঁকি দিল রুমে। লুকোচুরি খেলার মতো দরজার আড়ালে লুকিয়ে পড়ে ডাকল, রিইইইই নাই নাই।
রিপ পরীর কান্ড দেখে কিছু বলল না। কোনো আওয়াজ না পেয়ে পরী বুঝে গেল কিছু একটা হয়েছে।
রিপ ইশাকে বলল, তুই তো পরীর চাইতে ছোট বাচ্চা। আমি তো তোর ভালোর জন্যই বলেছি। তুই নিজের দিকে একবার তাকিয়ে দেখেছিস। শুটকি হয়ে যাচ্ছিস শুকিয়ে শুকিয়ে। ডক্টরের প্রেসক্রিপশনে তোর খাওয়ার কথা স্পেশাল ভাবে বলা আছে। তোর শরীর খুব দুর্বল। না খেলে তো আর ও দুর্বল হয়ে পড়বে । কিসের এত টেনশন তোর?
তুই যাতে ভালো থাকিস তার জন্য আমি কি করিনি,কি করছিনা? কিন্তু তারপর ও তোর কিন্তু উন্নতি দেখতে পাচ্ছি না। দিনদিন অবনতি।
ইশার কান্না থামল না। সে থামাতে চেয়ে ও থামতে পারছেনা। আসলেই তো এমনটা কেন হয়?
যারা একটু বেশিই ভালোবাসে তাদের আদর,স্নেহ,মায়া,মমতা হাতপুড়ে নিলে ও তাদের একটুখানি বকা আমরা সইতে পারিনা। চোখ গলে সমুদ্র নেমে আসে। ইশা হিঁচকি তুলে তুলে কাঁদল। পরী গুটিগুটি পায়ে হেঁটে এসে দাঁড়াল খাটের কাছাকাছি। কোমড়ে হাত দিল বিজ্ঞদের মতো। চোখ ছোট ছোট করে গলা কাত করে ইশার মুখ দেখার চেষ্টা করল। তারপর আবার রিপের মুখ দেখার চেষ্টা করল। এভাবে তাকে তাকাতে দেখে রিপ নীরবে হাসল। কান্নারত মেয়েটির দিকে একটিবার তাকাল। পানির গ্লাস হাতে নিয়ে এগিয়ে দিল মেয়েটির দিকে। নরম কন্ঠে বলল, কান্না থামা। আমার দেখতে ভালো লাগছেনা।
সাথে সাথে কান্না থেমে গেল ইশার। চোখ মুছে নিয়ে পানির গ্লাস হাতে নিয়ে পানি খেয়ে নিল। রিপ প্লেট রেখে আসল। ইশার পাশে বসে নিজ হাতে সব ঔষধ খাওয়াল। পরী চুপচাপ দেখল। পরে ডাকল। রিইইই ফিপপি দুক্কু?
রিপ হেসে মাথা নাড়াল। বলল, হ্যা, ফিপপি ছোট্ট বাচ্চা। তাই দুক্কু পেয়েছে।
ইশা মাথা নিচু করে বসে রইল। রিপ বলল, এভাবে বসে আছিস কেন? মুখটা বাংলা পাঁচের মতো করে রেখেছিস। হাস।
ইশা হাসার বদলে শুধু দুইবার হিঁচকি তুলল। রিপ অসহায় হয়ে তাকাল। ইশার চোখের পানি মুছে দিল। বলল, আচ্ছা ঠিক আছে,আর কখনো ওভাবে বলব না। এবার কান্না বন্ধ কর।
ইশা তাকাল রিপের দিকে। কিচ্ছুটি বলল না। রিপ শুধু দেখল তার গাল বেয়ে জল গড়াচ্ছে। সে আবার মুছে দিল সেই জল। গালের একপাশে হাতের চার আঙুল দিয়ে আলতোকরে টোকা দিয়ে বলে,
‘ আমার একটুখানি রাগ যেমন তোর কান্নার কারণ। আমার ধমক যেমন তুই সহ্য করতে পারিস না! তেমন আমি ও তোর দেওয়া আঘাত,যন্ত্রণা সইতে পারব না। আমি তো তোর মতো কাঁদতে ও পারব না। তাই ভুলে ও আমাকে আঘাত দিবি না।
কথাটিতে যে কি মেশানো ছিল ইশা জানেনা। সে আওয়াজ করে কেঁদে দিল। রিপ দাঁড়াল না। বেরিয়ে পড়ল। সে যতক্ষণ থাকবে মেয়েটি ততক্ষণ কাঁদবে।
পরী মোড়া এনে নিচে রাখল। মোড়া বেয়ে ইশার গায়ের উপর উঠে বসল। হাতের মুঠো দিয়ে ইশার দুইগাল আঁকড়ে ধরল। কাঁদোকাঁদো কন্ঠে ডাকল,আমমমমা……..
ইশা চুপ হয়ে গেল। বলল, কি?
পরী কিচ্ছু বলল না। ইশার গালের সাথে গাল লাগিয়ে রাখল। কিছুক্ষণের মধ্যে ঘুমিয়ে পড়ল। ঢলে পড়ল ইশার উপর। ইশা ঘুমন্ত মেয়েটির কপালের চুল সরিয়ে চুমু আঁকল। পুরো মুখে আদর দিল। তারপর তার পাশে শুইয়ে রেখে নিজে ও শুয়ে পড়ল। নরম তুলতুলে গায়ে হাত দিয়ে চোখ বুজতেই ঘুম নেমে এল চোখে। কিন্তু তা ছুটে গেল মুনা এসেই পরীকে কোলে নিয়ে নেওয়ায়। ইশা বহুদিন পর একটু অন্যায় আবদার করল।
‘ আজ ও আমার সাথে ঘুমোক না ভাবী?
মুনা অপ্রস্তুত হাসল। বলল, ওর মাঝরাতে খিদে পায়।
ইশা বলল,’ আমি ফিডার খাওয়াতে পারি। খাইয়েছি কয়েকবার। দাও না একবার। পারব। সত্যি।
মুনা একবার দরজার দিকে তাকাল। মলিন হেসে বলল,
‘ তোর বড়দা ? আচ্ছা আমি জিজ্ঞেস করে আসি।
ইশা বিছানা থেকে নেমে এল। ধরা কন্ঠে বলল,
‘ না না বড়দার কাছ থেকে জিজ্ঞেস করার দরকার নেই। নিয়ে যাও। আমি তো এমনিই বলছিলাম। নিয়ে যাও।
মুনা সাথে সাথে বেরিয়ে যায়। দাঁড়ায় না। ইশা অশ্রুসজল নয়নে হাসল। কাঁদতে কাদঁতে হাসল। যে কেউ দেখলে বলবে, মেয়েটি নির্ঘাত পাগল হয়ে গেছে। কিন্তু এই কাঁদাহাসা একত্রে আর বেশিক্ষণ ঠিকল না। তার কান্নায় ভারী হলো পুরো রুম। তবে সে কান্না আওয়াজ করে নয়। গুনগুনিয়ে। কেউ দেখল ও না। কেউ শুনল ও না। চারদেয়ালের ভেতরেই আটকে রইল কান্নার আওয়াজ। চোখমুখ মুছে সে বিছানার কাছে গিয়ে বসল। বালিশ তার জায়গা থেকে সরালেই উন্মুক্ত হয় সেই সাদা পান্জাবীর ঘ্রাণ। অন্যদিন হলে এই পান্জাবী দেখলে তার শান্তি লাগে, ডক্টর তো নেই,ডক্টরের এই পান্জাবীটা তো আছে। ডক্টরের স্মৃতি হিসেবে। ডক্টরের স্পর্শ হিসেবে।
কিন্তু আজ কেন জানি তার এই পান্জাবীটাকেই অসহ্য লাগছে। কেটে কুটিকুটি করতে ইচ্ছে করছে। সে ঠিক সেটাই করল। ড্রেসিং টেবিল থেকে কাঁচি নিয়ে কেটে কুচিকুচি করল পান্জাবীটাকে। নিজের এই রাগ ঝেড়ে নিল পান্জাবীটার উপর। যখনি নিজের সম্ভিৎ ফিরল,নিজের কাজেই সে নিজেই অবাক হলো। পান্জাবীর টুকরো টুকরো অংশগুলো নিজ হাতে ছুঁয়ে সে হু হু করে কেঁদে দিল। ডুকরে উঠে আবোলতাবোল বকতে লাগল। ছেঁড়া অংশগুলো হাতে নিয়ে বলল,
‘ আমার নিজের সন্তানকে আমি নিজের কাছে রাখতে পারিনা ডক্টর, শুধু আপনার জন্য। আদর করতে ও সীমা লাগে।
তাকে কোলে নিতে ও ভাবতে হয়। তাকে নিজের হাতে খাওয়াতে পারিনা আমি। শুধু আপনার জন্য। তাকে বুকে জড়িয়ে ঘুমাতে পারিনা আমি, শুধুই আপনার জন্য।
তাকে কোলে নিয়ে ঘুম পাড়াতে পারিনা শুধু আপনার জন্য।
আপনি আজ আমার পাশে থাকলে এতকিছু হতো না ডক্টর। আমাদের ছোট্ট একটি সংসার হতো। আপনি তো এটা ও জানেন না যে আপনার একটা মেয়ে আছে। আপনি জানেন না। অনুভব ও করতে পারেন না। আপনি আপনার প্রাক্তন প্রেমিকা নিয়ে ব্যস্ত। আপনি নতুন করে সংসার সাজানোর কাজে ব্যস্ত। কিন্তু মাঝখানে আমি সব কষ্ট পাচ্ছি। সব কষ্ট আমাকেই কেন পেতে হয়। সব কষ্ট আমি কেন পাই? সন্তানটা তো আপনার ও। অন্যকে মা ডাকছে,বাবা ডাকছে। আপনার তো কষ্ট হয়না ডক্টর। আপনি প্রেসক্রিপশনে কত সুন্দর করে লিখলেন নিজের সন্তানের বাবা মায়ের নাম। কত সুন্দর সেই লেখা। আপনার তাতে ও কষ্ট হলোনা। হওয়ার যে কথা নয়। তবে এবার থেকে আমি আর কষ্ট পাব না। কষ্ট এবার আপনি পাবেন। আমি কখনো আপনাকে পরীকে ছুঁতে দেব না। আপনার কাছে পরীকে কখনো যেতে দেবনা। কখনো না। আমি যেই কষ্ট পাচ্ছি তার দ্বিগুণ দেব। তার হাজারগুণ বেশি দেব।
______________________
বিছানায় যত্নসহকারে সাজানো সব শাড়ি গহনা। আইমি বালিশ নিচে দিয়ে উপুড় হয়ে শুয়ে পড়ল। ফোনের ওপাশের ছেলেটিকে বলল,
‘ আদি তোমার যেটা পছন্দ হবে আমি সেই শাড়িটাই পড়ব। আমার তো সব সুন্দর লাগছে। তোমার চয়জ কিন্তু ফাটাফাটি।
আদি নীরব হয়ে শুনল আইমির প্রত্যেকটি কথা। বলল,
‘ আমার ও সব পছন্দ, তোমার যেটা ইচ্ছে সেটাই পড়তে পারো।
আইমির কষ্ট লাগল। বলল,
‘ যেকোনো একটা বলো আদি। তুমি যেটা বলবে সেটাই ফাইনাল।
আদি ভেবে বলল,
‘ যেটা বেশি লাল টকটকে সেটাই পড়ো।
আইমি উঠে বসল। শাড়িটা হাতে নিয়ে বলল, ঠিক আছে। লালটা নিলাম।
আদি হাসল। কিন্তু কিছু বলল না। আইমি তাকে এত চুপ দেখে জিজ্ঞেস করল,
‘ কি ভাবছ?
আদি ভ্যাবাচ্যাকা খেল, বলল,
‘ না তেমন কিছুনা। ভাবছিলাম শাড়িটাতে তোমাকে কেমন লাগবে?
‘ আচ্ছা! তাহলে বলো কেমন লাগবে?
আদি হাঁটতে হাঁটতে সিড়ি বেয়ে উপরে উঠতে লাগল। বলল,
‘ সামনাসামনি দেখলে বলতে পারতাম। এখন বলতে পারছিনা।
আইমি চুপ থাকল। খানিকক্ষণ পর বলল,
‘ আচ্ছা।
আদি জানতে চাইল রাগ করেছ?
‘ না, না রাগ কেন করব? আমি কি সবসময় তোমার সাথে রাগ করি আদি?
আদি খানিকক্ষণ চুপ থেকে আবার বলল,
‘ সন্দেহ করো। রাগ নয়। সরি মিস্টেক।
আইমির কন্ঠের ধরণ পাল্টাল, বলল,
‘ তুমি এখনো রেগে আছ আদি? আমার তখন মাথা ঠিক ছিল না।
আদি প্রত্যুত্তরে হাসল। বলল,
‘ ডক্টরের শার্টে রক্ত লাগতেই পারে। আর মাতাল অবস্থায় মানুষ অনেক কিছু বলে। এসব কিছু তুমি সিরিয়াসলি নিয়েছ ইমি। আমাকে সন্দেহের চোখে দেখেছ। আদি কি ইমির কাছ থেকে এসব আশা করেছিল কখনো?
আইমির কন্ঠ ধরে আসে। অভিমানে চোখ চকচক করে। বলে,
‘ তুমি এখনো এসব মনে রেখে দিয়েছ আদি?
আমি তো মজার ছলে বলেছিলাম। সেটা বলেছি ও।
আদি দরজা ঠেলে নিজের রুমের ডুকল। বলল,
‘ মন খারাপ করোনা ইমি। আমি ও মজা করছি। টিট ফর ট্যাট।
আইমি স্বস্তি পেল। বলল,
‘ তুমি এরকম বাজে ইয়ার্কি আমার সাথে করবে না আদি। আমি রোম্যান্টিক মুডে ছিলাম। তুমি সব শেষ করে দিলে।
আদি হো হো করে হাসল। বলল,
‘ রোম্যান্টিক মুড আবার কি ইমি?
আইমি হাসল। ব্যঙ্গ করে বলল,
‘ আহারে বাবুটা কিছু জানেনা।
আদি পুরো রুম কাঁপিয়ে হাসল। বলল,
‘ হোয়াট এ সিলি ল্যাঙ্গুয়েজ ইমি?
আইমি দাঁত বের করে হাসল। বলল,
‘ বাবু বলাই যায়।
‘ আদির সাথে কখনোই যায় না ইমি। আদি শুধু বাবু নয়, আদি ডাক্তারবাবু। বাবুর আগে ডাক্তার বসালে বলাই যায়। আটকাচ্ছে কে?
দুজনই একসাথে হাসল।
আদি রুমের চারপাশে চোখ বুলাল। বলল,ইমি আমি মিনিকে খুব মিস করছি। মিনি কখন ফিরবে আমার কাছে।
আইমি চিন্তিত হয়ে বলল,
‘ মিনি কেন শুধু শুধু একটা মেয়ের সাথে চলে যাবে আদি? এটা তো রহস্যজনক।
আদি শান্ত গলায় বলল,
‘ মিনি মিষ্টির কাছে গিয়েছে ইমি। মিনি মিষ্টিকে চেনে।
আইমি এমন অনাকাঙ্ক্ষিত কথা শুনে ভড়কে গেল। বলল,
‘ আদি কে মিষ্টি? কার কথা বলছ?
আদি হাসল। বলল, সরি ইমি তুমি আমাকে বলোনি। তাই আমি ও তোমাকে সত্যিটা জানাতে বিলম্ব করলাম। তবে বলে দিয়েছি। তোমার মতো লুকিয়ে রাখিনি।
অজানা অচেনা আশঙ্কায় বুক কেঁপে উঠল আইমির। বলল,
‘ মিষ্টি নামের কেউ নেই আদি। কেউ ছিলনা তোমার জীবনে।
আদি প্রত্যুত্তরে বলল,
‘ মিথ্যে ইমি। মিষ্টি ছিল। কিন্তু এখন নেই। সে হয়ত এখন বিবাহিত। কিন্তু তখন বিবাহিত ছিলনা। একজন বিবাহিত মেয়ে কখনো অন্য একটা পরপুরুষের দেখাশোনার দায়িত্ব নেবেনা। কেন সবাই আমাকে মিথ্যে বলছে আমি জানিনা ইমি। তুমি ও মিথ্যে বলছ। কিন্তু কেন ইমি?
আইমির ফুঁপানোর আওয়াজ টের পায় আদি। বলে,
‘ কান্নার কি বললাম ইমি?
আইমি রাগ হয়। বলে,
‘ তুমি কেন মিষ্টিকে খুঁজছ আদি? কেন?
আদি নিজে ও জানেনা এর উত্তর। সে নিজে ও এমন প্রশ্নে চমকাল। আনমনা হয়ে বলল,
‘ মিষ্টি বোধহয় ডক্টরকে ভালোবাসে ইমি। মিথ্যে হতেই পারেনা।
আইমি গলার আওয়াজ বড় হলো ।
‘ আমি তোমাকে ভালোবাসি না আদি? কে মিষ্টি? কে ডক্টর? সব মিথ্যে আদি। তোমার জীবনে শুধু আমিই সত্যি।
আদি শান্ত গলায় জবাব দেয়।
‘ আমাদের বিয়ের আগে আমি সব রহস্য বের করে আনব আইমি। তোমাকে কাঁদার সুযোগ দেব না। তোমার আমার মাঝে যত লুকোচুরি চলছে সব আমি খুঁজে বের করব। কিন্তু আই প্রমিজ ইমি। আমি তোমাকে একটু ও কষ্ট দেব না ইমি। তোমাকে সত্যিই খুব ভালো রাখব।
‘ কিন্তু তুমি? তুমি ভালো থাকবেনা আদি?
আইমির প্রশ্নের জবাবে সে শুধু বলে,
‘ যদি চায়? তুমি বা সে? তবেই তো ভালো থাকব। তার আগে কি করে ইমি?
_______________________
আজিজ চৌধুরী খাবার টেবিলের প্লেট ছুড়ে মারল দূরে। রাইনা,মিনু,শানু ভয়ে কুঁকিয়ে উঠল। আজিজ চৌধুরী গর্জন করে বলল,
‘ এখানে চিঠি আসে কার হাত দিয়ে? বলো?
সবাই চুপ থাকে। আজিজ চেঁচিয়ে ডাকে,
‘ রাইনা?
রাইনা কেঁপে উঠে। মিনমিনে গলায় বলে
‘ বাবা আমি এই ওই কাজ করতে সময় ও পায়না। মা তো জানে। আমি কি করে ওসব?
আজিজ চৌধুরী মিনু আর শানুর দিকে তীক্ষ্ণ চোখে তাকালেন। প্লেট তাদের দিকে ছুড়ে মেরে বললেন,
‘ তোমরা দুজন থেকে কেউ একজন হবে। শানু তো দেখতেই পারতনা ওই মেয়েকে। নিশ্চয় এই কাজ মিনুর। তাই না?
মিনু মাথা নামানো অবস্থায় দাঁড়িয়ে থাকল। জবাব দিল না।
আলিয়া ধমক দিয়ে বললেন।
‘ সত্যিটা বলো। যদি কোনোসময় ধরা পড়ো জীবিত ফিরতে পারবে না। চৌধুরী বাড়ি থেকেই তোমার লাশ বেরোবে।
মিনু কাঁপাকাঁপা কন্ঠে বলল,
‘ আমি কিচ্ছু জানিনা। চিঠিগুলো ইশা নিজেই লিখে গিয়েছে। আর ও চিঠি এ কারণেই পাঠিয়েছে,ওই চিঠিগুলো আদি বাবার চোখে পড়ার আগেই যাতে সরিয়ে ফেলা হয়। আমি তাই করেছি। এর বেশি কিছুনা।
আজিজ চৌধুরী কিছু বলতে পারলেন না। কিন্তু মনে মনে স্বস্তি পেলেন। যাক মেয়েটা অন্তত তাকে ভয় পেয়েছে। আদি আইমির বিয়েটা এবার হওয়া বাকি। তাদের এব্রোড পাঠিয়ে দিতে পারলে আর কোনো চিন্তা নেই। যে মরার মরুক । যে বাঁচার বাঁচুক।
আজিজ চৌধুরী শান্ত হয়ে সোফায় বসার আগেই একটি অনাকাঙ্ক্ষিত ফোন পায়। ফোনটি ইমির।
আদি তো আজ বাসায় নেই। ইমির ফোন কেন?
ফোন রিসিভ করে সে কথা বলল। আর ও একটি সিদ্ধান্তে উপনীত হলো। এবার আর কাঁচা গুটি চালবে না আজিজ চৌধুরী। এবার পাকা গুটি চালতে হবে। বিয়েটা হওয়ার আগ পর্যন্ত আদিকে এসব থেকে দূরে সরিয়ে রাখতে হবে।
আজিজ চৌধুরী চেয়ার টেনে চেয়ারে বসার আগেই দেখতে পায় পকেটে হাত পুড়ে তীক্ষ্ণাগ্র দৃষ্টিতে তাকিয়ে থাকা ছেলেটিকে। ছেলেটির চোয়াল শক্ত। চোখে একরাশ অবিশ্বাস, সন্দেহ। দরজার কাছাকাছি দাঁড়ানো। কখন এল আদি? আলিয়া এগিয়ে গেল। ভয়ে তার হাত পা ঠান্ডা হলো। আদি কোনোকিছু শোনেনি তো?
আদি আলিয়া বেগমের হাত নামিয়ে নিলেন মুখ থেকে। আজিজ চৌধুরীর দিকে একবার তাকিয়ে বেশ শান্ত গলায় বলল,
‘ মিষ্টি আমার ওয়াইফ ছিল মা? এখন? এখন কি সে অন্যের ওয়াইফ? তোমরা সবাই, ইমি ও মিথ্যে বলেছ আমায়? কিন্তু কেন মা?
আজিজ চৌধুরী চাইলেন আদির সাথে কথা বলতে। কিন্তু আদি হাত দেখিয়ে বলতে বারণ করল। উগ্রস্বরে বলল,
‘ আমি থাকব না এ বাড়িতে।
ব্যস এতটুকুই। আজিজ আর আলিয়াকে কিছু বলতে দিল না সে। মিনু রাইনা নীরবে,নিঃশব্দে হাসল।
প্রায় আধ-ঘন্টা পর আদি নেমে আসল স্যুটকেস সমেত। বলল, আমি এ বাসায় থাকব না। অন্য ফ্ল্যাটে যাচ্ছি। এমন বিশ্রী মনমানসিকতার মানুষের সাথে থাকতে ইচ্ছে করছেনা। বিবেকে বাঁধছে। যেদিন মনে হবে,সত্যিটা আমাকে বলতে পারবে। সেদিন আমি এ বাসায় ফিরব।
আজিজ চৌধুরী এগিয়ে গেলেন। বললেন,
‘ তোমার খারাপ চেয়েছি এটাই বলতে চাইছ তুমি?
আদি হাসল। বলল, ভালো চেয়েছ। জানিনা আমার ভালোর জন্য আর কত কি করেছ তুমি? কতজনকে আঘাত করেছ? কতজনকে কষ্টে রেখেছ? ভালোমন্দ শিক্ষাটা তোমরাই আমাকে দেবে, সেখানে আমাকেই দিতে ইচ্ছে। দাভাইকে বা কি বলা যায়? তোমরাই তো তাকে সেই শিক্ষা দিয়েছ। ও তাই শিখেছে। এখন সব তার দোষ। যদি আমি হতাম তার মতো। দোষ কাকে দিতে মা? নিশ্চয় নিজেদের দিতে না? কপালকে দিতে। ভাগ্যকে দায়ী করতে। নয়ত নিজেরা গর্ব করতে। আমার কি মনে হয় জানো,আমি এমন হওয়ায় তোমরা অসন্তুষ্ট। আমার তো মাঝেমাঝে সন্দেহ হয় পালিত সন্তান কি সত্যিই দাভাই নাকি আমি?
আলিয়ার দুচোখ জলে টলমল করে উঠে। বলে, কি উল্টাপাল্টা বলছ আদি?
আদি এতক্ষণে চেপে রাখা রাগ দেখিয়ে দেয়। গর্জে বলে,
‘ দাভাই তোমাদের কারণেই এমন হয়েছে। তোমরাই ওকে অবহেলা করেছ। ওকে অবজ্ঞা করেছ। তাই সে এমন হয়েছে। তোমরা ওকে শেখাওনি কোনটা ভালো কোনটা খারাপ? ওকে ওর মতো চলতে দিয়েছ। ওর প্রত্যেকটা খারাপ কাজে সাপোর্ট করেছ। আমার মতো ওকে সারাক্ষণ পড়তে বলোনি। খেলতে শেখাওনি। আমার মতো ওকে ও আদর যত্ন করোনি। আমি তোমাদের সব অন্যায় দেখি বাবা। সব বুঝি। শুধু এমন একটা সময়ের অপেক্ষায় ছিলাম। আজ আর আমি চুপ থাকব না। থাকব না আমি এই বাড়িতে। এক মুহূর্ত ও না।
কেউ আটকাতে পারেনা আদিকে। আজিজ চৌধুরী হাজার অনুরোধ করে ও লাভ হয়না। আলিয়া চৌধুরী কাঁদতে থাকে। আজিজ চৌধুরীর সব রাগ গিয়ে পড়ে ওই একটি মেয়ের উপর। ওই মায়াবিনীর উপর। এবার এর শেষ দেখে ছাড়বে আজিজ চৌধুরী। বামন হয়ে চাঁদে যাওয়ার শখ একেবারে মিটিয়ে দেবে।
__________________________
পুরোবাড়ি মুখোরিত হলো পরীর খিলখিল হাসির আওয়াজে। ইশার দুচোখে পট্টি বাঁধা দেখে সে আবার ও খিলখিল করে হাসল। রিক আর জহির মিয়া কথা বলছে। রিপ পরীর সাথে মিলে ইশার সাথে কানামাছি খেলছে। রিপ পরীকে বলল, মা বলো কানামাছি ভোঁ ভোঁ।
পরী হাতের তালুতে তালু দিতে দিতে বলল,
‘ ভোবভো,ফিপপপি ভোবভো।
ইশা হাসল। বলল।
‘ আমি দেখতে পাচ্ছি রিপদা। ওখানে পরী।পরীর পাশে তুমি।
রিপ উঠে গেল। ইশার চোখের পট্টি খুলে আর ও শক্ত করে বাঁধতে গিয়ে ইশা তার হাত ধরে ফেলল। বলল, এত শক্ত করে বেঁধোনা রিপদা । ব্যাথা পায়।
রিপ চুপ থাকল কিছুক্ষণ। ইশার হাত ঝেড়ে ফেলে দিয়ে বলল,
‘ এভাবে ছুঁবিনা। ছাড়।
ইশা ভ্রুকুঞ্চন করে দাঁড়িয়ে থাকে। আশ্চর্য!
পরী ডাকে, ফিপপপি ভোবভো।
ইশা হাসে। বলে, এখন পরী কে ও দেখতে পাচ্ছি না। রিপদা তোমাকে ও দেখতে পাচ্ছি না।
রিপ বিড়বিড় করে বলল, তুই আমাকে এমনিতে ও দেখতে পাস না।
ইশা বলল, কিছু বললে?
রিপ বলে,
‘ না বলিনি। তবে বলব শীঘ্রই।
পরী ডাক দিল। রিইইইইই ভোবভো…….
রিক আর জহির মিয়া হাসল। রিক ডাক দিল, পরী মা…..কি করছ?
পরী হাসল গা নাড়িয়ে। বলল, পাপপা ভোবভো….
তারা হাসার আগেই পরী নিজেই নিজেই হাসতে মেঝেতে বসে পড়ল। তালহাকে হাত দেখিয়ে ডেকে বলে, দাদ্দাআ ভোবভো…….
ইশা ও পরীর সাথে তাল মিলিয়ে হাসল। মেঝেতে হাতের ভর দিয়ে উঠে বসল পরী । তারপর রিপের পেছনে গিয়ে ইশাকে ডাকল, ফিপফি ভোবভো। মিনি উড়ে এল। ডাকল, মিষ্টি ভো ভো।
পরী মিনিকে দেখে হাসল। হাতের তালুতে ঠোঁটে লাগিয়ে মিনির দিকে ছুড়ে মারল ফ্লাইং কিস। বলল, মিনননি আমমমমাহ।
রিক হাসল। বলল, এটা কি মা?
রিপ হাসল। বলল, দাভাই এটা আমি শিখিয়েছি। মিনিকে ফ্লাইং কিস পাঠাচ্ছে। পরী রিকের কাছাকাছি চলে আসল। বলল, পাপপা আমমমাহ।
ইশা কোমড়ে হাত দিয়ে বলল,
‘ ঠিক আছে আমি দাঁড়িয়ে থাকি তাহলে এইভাবে?
রিপ পরীকে নিয়ে গেল। বলল, না খেলা এখন থেকে শুরু। কানামাছি ভোঁ ভোঁ, যাকে পাবি তাকে ছোঁ।
পরী হাসি থামতে পারল না। ইশা বহুদূরে থাকা স্বত্বে ও রিকের কোলে এসে লুকিয়ে পড়ল। তালহার পেছনে গিয়ে লুকিয়ে পড়ল। মুনার পেছনে গিয়ে লুকিয়ে পড়ল। খিলখিল হাসিতে ফেটে পড়ল। রিপ গিয়ে সোফার এককোণায় চুপিসারে বসে থাকল। ইশা ডাকল পরী কোথায় তুমি? রিইইই কোথায়? পরী?
মুনা বলল,পরী গিয়েছে সেদিকে।
রিক বলল, পরী মায়ের কাছে গিয়েছে।
তালহা বলল,পরী রিপের কাছে। ইশা চোখ খুলে ফেলল সাথে সাথে। চিৎকার করে বলল, কোথায় পরী?
রিক উঠে গেল। বলল, এখন তো হাসছিল। সোফার পেছনে গিয়েছিল।
রিপ বলল, এখন আমার সামনেই ছিল।
ইশা ডাক দিল, পরী কোথায় তুমি? পরী মা..
রিক গর্জে উঠল। একটা ছোট্ট মেয়ে কোথায় যাচ্ছে কেউ দেখবে না। আশ্চর্য!
ইশার বুক ধ্বক করে উঠল। সে চেঁচিয়ে ডাকল,পরী?
রিক ডাকল। মুনা ডাকল। রিপ ডাকল। তালহা কাঁদাকাঁদি শুরু করে দিল। জহির মিয়া বললেন, পরী দাদুমণি কোথায় তুমি? পরী….
আশপাশ সবাই তন্নতন্ন করে খুঁজল। রিক দিশেহারা হয়ে পড়ল। মুুনা এগিয়ে এল, রিক মুনার কথায় কান দিল না। হাত দিয়ে বারণ করল কথা না বলতে।
পরী,পরী আওয়াজে ভরপুর হলো পরিবেশ। ইশা তো কেঁদেই দিল। কিন্তু তা একজন ছাড়া কেউ দেখল না। ইশা কান্নামাখা কন্ঠে ডাকল, পরী। কোথায় তুমি। পরী,,,
সবাই পাগলের মতো খু্ঁজল পরীকে। কিন্তু কেউ দেখল না।
ইশা বাইরে বের হয়ে আসল। দেখল গেইট বন্ধ। কেঁদে কেঁদে এদিকওদিক তাকাতেই দেখতে পেল হাতে কতগুলো চকলেট নিয়ে গুটিগুটি পায়ে এগিয়ে আসছে পরী। একবার হোঁচট খেয়ে পড়ল। আবার উঠল ইশাকে চকলেট দেখিয়ে বলল, ফিপপি চককো….
ইশা দৌড়ে গেল । চকলেট কেড়ে নিয়ে চড় বসাল পরীর গালে। পরী পড়ে গেল। গগনবিদারী চিৎকার দিয়ে কেঁদে উঠল। ইশা চকলেট গুলো দূরে ফেলে দিয়ে পরীকে কোলে তুলে নিল। আদর করে দিয়ে বুকের সাথে জড়িয়ে ধরল শক্ত করে। বলল, এসব তোমাকে কে দিয়েছে পরী? তুমি কেন বাসা থেকে বের হয়েছ? কেঁদোনা মা।
পরী কাঁদতে লাগল। ইশাকে হাত পা ছুড়ে মারল। কামড় বসাল কাঁধে। চুল টেনে ধরল।
রিক,মুনা,রিপ সবাই ছুটে আসল। রিক দৌড়ে আসল। পরীকে কোলে নিল এক ঝটকায়। শক্ত করে বুকের সাথে জড়িয়ে ধরে বলল, তুমি পাপাকে ছেড়ে কোথায় গিয়েছ পরী।
পরী কাঁদতে কাঁদতে দেখিয়ে দেয় ইশাকে। রিক পরীকে মুনার কাছে দিয়ে দেয়। রিপ মুনার পেছন পেছন পরীকে শান্ত করতে করতে চলে যায়। রিক ভয়ার্ত চোখে তাকায় ইশার দিকে। ইশা কাঁদে নীরবে। অসহায় হয়ে তাকায় রিকের দিকে। রিক ভয় নিয়ে বলে, ইশু তুই কেড়ে নিস না পরীকে। তুই তো আজীবনের জন্য দিয়ে দিয়েছিস। এ কথার নড়চড় করিস না ইশু। পরীকে ছাড়া আমি নিঃস্ব। ওকে আমার কাছ থেকে কেড়ে নিস না।
ইশা কাঁদতে কাঁদতে জড়িয়ে ধরে রিককে। বলে, দাভাই আমি শুধু তোমাদের ইশু হয়ে থাকতে চায়। আর কিছুনা। আমাকে কখনো অবিশ্বাস করোনা।
রিক স্বস্তি পায়। ইশার মাথায় হাত বুলিয়ে দেয়। বলে, মেরেছিস পরীকে? মেরে কি লাভ হলো? নিজেই তো ব্যাথা পেলি।
ইশা মাথা তুলে তাকায় রিকের দিকে। আবদার করে বসে, একটা দিন পরীকে আমাকে দিয়ে দেবে? শুধু একদিনের জন্য। আর কক্ষনো চাইব না।
রিক হাসল। মাথায় হাত রাখল ইশার। বলল,
‘ আচ্ছা। রাখিস তোর কাছে। কিন্তু দেখিস আমাকে আবার ফিরিয়ে দিবি। কেড়ে নিস না রে ইশু। একেবারে নিয়ে নিস না। ইশা খুশি হয়ে গেল। খুশিতে জড়িয়ে ধরল আবার রিককে। বলল, থ্যাংকস বড়দা।
রাত দশটা। ফোনকলের আওয়াজে আদির ঘুম ভাঙলে ও আদি সেই ফোন তুলল না। বিরক্ত হয়ে কেটে দিল। আবার ও ফোন এল। এবার ও সে সত্যি সত্যি কেটে দিল ফোন। আবার ও এল। আবার ও সে কাটল। শেষবার চারবারে সে ফোন তুলল। ফোন কানে দেওয়ার সাথে ফুঁপিয়ে কান্নার আওয়াজ এল। আদি বলল, আমি ব্যস্ত আছি ইমি। পরে কথা বলছি।
আইমিকে কিছু বলতে না দিয়ে আদি ফোন কেটে দেয়।
আইমি কিছু বলার সুযোগ পায়না। আদি সুযোগ দেয় না।
ডক্টর ইমদাদকে ফোন দেয় আদি। ওনি দশটায় ফ্রি হবেন বলেছিলেন। ফোন দেওয়ার সাথে সাথে ডক্টর ইমদাদ ফোন তুলেন। কুশলসংবাদ জানাজানির পর কাজের কথায় ফিরল দুজন। আদি জানতে চাইল,
‘ সবকিছু কি আর কখনোই মনে পড়া সম্ভব নয় স্যার ?
আদি প্রশ্নের জবাবে তিনি বললেন,
‘ সম্ভব। তবে যদি তোমার ব্রেনের হেমোক্যাম্পাস পুরোপুরি স্ট্রং হয়। কারণ সেসব মনে করতে গিয়ে যদি তোমার মস্তিষ্কে আবার আঘাত লাগে তাহলে চিরজীবনের জন্য তোমার স্মৃতি চলে যাবে আদি। তাই সেসব মনে না করাটাই বেটার তোমার জন্য।
আদি উৎসুক হয়ে বলল,
‘ আই থিংক আমার হেমোক্যাম্পাস পুরোপুরি স্ট্রং। এখন কি মনে করার চেষ্টা করতে পারব?
ডক্টর ইমদাদ বললেন,
‘ হ্যা। পারবে। তবে সেসব কথা তোমাকে মনে করিয়ে দিতে হবে। অনুভব করিয়ে দিতে হবে। তুমি এক কাজ করো। তোমার স্ত্রীর সাহায্য নিতে পারো। সে কেমন আছে আদি?
ভারী মিষ্টি মেয়েটা। তুমি তাকে মিষ্টি ডাকতে রাইট?
আদি থমকাল। চমকাল। বলল
‘ স্ত্রী?
মিষ্টি?
সে আমার কাছে নেই স্যার । আমি তাকে চিনিনা। কে সে? কোথায় তার বাস? আপনি চেনেন?
ডক্টর ইমদাদ হাসল। বলল,
‘ মিষ্টি ঠিক এই ভয়টাই পেয়েছিল। ঠিক তাই হলো। এত ভালোবেসেছিলে মেয়েটাকে। ভুলে গেলে? কি করে আদি? এমন ও হয়?
চলবে