#মন_কেমনের_বৃষ্টি
#পর্ব_২২ ( 1ST PART )
#পুষ্পিতা_প্রিমা
আয়নার সামনে দাঁড়িয়ে রিপ গায়ের সামনে একেকটা পান্জাবী দিয়ে দেখছে। তাকে দেখতে কেমন লাগছে? একটা ও তার পছন্দ হচ্ছে না। সে চেঁচিয়ে ডাকল,
‘ এই ইশু। আমি কোনটা পড়ব? তাড়াতাড়ি আয়। দেখিয়ে দে।
রিপের ডাক শুনে মুনা চলে আসল। হাসল। বলল,
‘ সে রেডি হচ্ছে। তুই ডাকলে আসবে নাকি?
রিপ হতাশ হয়ে বসে পড়ল বিছানায়। বলল,
আমি কোনটা পড়ব?
মুনা হাসল। বলল, এই তোর প্ল্যানটা কি বলতো?
রিপ মাথা চুলকাল। বলল, আজ সেই দিনটা। সুযোগ পেলে আজ সত্যি সত্যি বলে দেব। তোমাকে বলতে ভুলে গিয়েছি।
মুনা হা করে তাকাল রিপের দিকে। রিপের পাশে ধপ করে বসে বলল, ও আল্লাহ! তুই এই সুযোগটা কাজে লাগাচ্ছিস?
রিপ হাসল। বলল, আমি বলেছি নাকি? ইশু নিজেই বলেছে সে ঘুরতে যাবে।
মুনা চিন্তিত ভঙ্গিতে বলল,
‘ তাহলে সেখানে পরী গিয়ে কি করবে?
রিপ ভাবল। ভেবে বলল, পরীর জন্যই তো যাচ্ছে ইশু। বড়দা নাকি পারমিশন দিয়েছে।
মুনা হো হো করে হেসে উঠল। বলল,
‘ আমার মেয়েকে কেন থার্ড পারসন বানাচ্ছিস ভাই। তোরা একা যাহ।
রিপ মুনার দিকে ফিরে বসল। বলল,
‘ সত্যি! কিন্তু ইশু তো পরীকে ছাড়া যাবে না।
মুনা বলল,
‘ আমি চেষ্টা করে দেখি।
দুজনের কথা শেষ করতে না করতেই হাজির হলো ইশা। কলাপাতা রঙের শাড়ি পড়ল। মাথার লম্বা চুলগুলো পিঠে পড়ে আছে। মুখে দীপ্তিময় হাসি। হাতের চুড়িগুলো টুংটাং আওয়াজ তুলছে। ইশাকে দেখে মুনা হাসল। রিপ দেখেনি। অন্যদিকে মুখ ফিরিয়ে দেখতে লাগল কোন পান্জাবীটা পড়বে। ইশা কোমরে হাত দিয়ে নাক ফুলিয়ে তাকাল।
বলল, ‘ রিপুদা তুমি এখনো শার্ট পড়ে আছ?
মুনা বলল, পরী মা কোথায় দেখে আসি। তোরা ঝগড়া কর।
ইশা কোমরে হাত দিয়ে বলল,
‘ কিছু বলছ না কেন?
রিপ পান্জাবী হাতে নিতে নিতে বলল,
‘ কোনটা পড়ব বুঝতে পারছিনা।
ইশা এগিয়ে গেল। রিপের হাত থেকে গাঢ় সোনালি রঙের পান্জাবীটা কেড়ে নিল। রিপের গায়ে দেওয়ার মত করে দিয়ে বর্ণনা দিতে লাগল। এই দেখো কেমন মানিয়েছে? কেমন সুন্দর লাগছে? খাপে খাপ মিলেছে। এ রঙের পান্জাবী পড়বে তুমি। কি সুন্দর মানিয়েছে তোমায়। এটাই পড়বে তুমি। এটাই পড়ো।
মেয়েটি যদি একটিবার চোখ তুলে দেখত তাহলে দেখতে পেত সুন্দর ছেলেটি তার সৌন্দর্যের এত বর্ণনা একটু ও শুনছেনা। সে তো বিমোহিত। সে মগ্ন তার সামনে দাঁড়ানো মেয়েটির মুখশ্রীতে। মেয়েটির নতুন রূপে। কিন্তু আফসোস মেয়েটি খেয়াল করল না। চোখ তুলে দেখল না। পরীর ডাকে হুশ ফিরল রিপের। কি কি করতে করতে সে সরে পড়ল ইশার সামনে থেকে। ছিঃ কি নির্লজ্জ সে?
এভাবে কি কেউ তাকিয়ে থাকে? ইশু কি ভাবল কে জানে? তার রিপুদা এত খারাপ?
পরীর পড়নে সাদা গোলাপি মিশেল ফ্রক। হাতে ও অন্য রঙের দুইটা ফ্রক। ইশার দিকে তাকিয়ে ফ্রক দুইটা দেখিয়ে বলল,
‘ ফিফপপপি এতততো….
ইশা পরীকে দেখে হাসল। ফিসফিস করে বলল, আমার মা।
পরী তার কথার জবাবে হাসল। বলল
‘ এততো।
ইশা আবার ডাকল, এই মা।
পরী হেসে ইশার মুখের কাছে মুখ নিয়ে বলল বলল, এমমমমাহ।
ইশা তার মুখ দুহাতে আগলে ধরে গুলুমুলু দুইগালে আদর দিয়ে বলল, আম্মা ডাকো।
পরী ইশার মতো করে ইশার দুইগাল আঁকড়ে ধরে। ইশার দুই গালে লালা লাগিয়ে দিয়ে বলে,
‘ আমমমমাহ।
খুশিতে ইশার চোখে পানি চলে আসে। সে তা আড়াল করে। পরীর কপালে চুমো দেয়। বলে
‘ তুমি জানো আমিই তোমার মা। ফিপি নয়। আর তোমার বাবা। ডক্টর…….
রিক আর মুনা ছুটে এল। রিক বলল,
‘ দেখেছিস ইশু, তিনটাই পড়বে নাকি?
ইশা হাসল। পরীর হাত থেকে ফ্রক দুইটি নেওয়ার জন্য বলল,
‘ আমাকে দাও মা। সবগুলো কিভাবে পড়বে?
পরী দিল না। ডাকল, রিইইইই মিননননি।
মিনি উড়ে এল। ডাকল, যাব। যাব।
ইশা হাসল। বলল,
‘ যাবে ঠিক আছে। এখন পরীর হাত থেকে কাপড়গুলো নিয়ে রেখে এসো পরীর ঘরে।
মিনি তাই করল। পরী হাত থেকে ঠোঁট দিয়ে কেঁড়ে নিল ফ্রকদুটো। উড়ে চলে গেল। পরী মিনির পিছু পিছু দৌড়ে গেল। ডাকল, মিননননি নান নান না।
রিক আর মুনা হাসতে হাসতে দৌড়ে গেল পরীর পিছু পিছু। পরী ভ্যা ভ্যা করে কেঁদে কেঁদে দৌড়াল মিনির পিছু পিছু।
রিপ যখন বের হয়ে এল রেডি হয়ে। ইশার হঠাৎ মনে হলো। আজ যদি ডক্টর থাকত তাদের সাথে?
রিপ বলল, কেমন লাগছে?
ইশা হাসল। রিপের পান্জাবীর কলার ঠিক করে দিয়ে বলল, সেই লাগছে। ফটো তুলে পাঠাতে হবে নীরার কাছে। বেচারি ক্রাশের উপর ক্রাশ খাবে।
রিপ রেগে তাকাল ইশার দিকে। ইশা হাসতে হাসতে চোখ বন্ধ করে নিল। আর রিপ সেই হাসির মায়াজালে আবার, হ্যা আবার ও আটকা পড়ল। কখন ছাড়া পাবে কে জানে?
_________________
পরী রিকের কোলে চড়ে নেমে এল নিচে। জহির মিয়াকে দেখার সাথে সাথে রিকের কোল থেকে নেমে এল। জহির মিয়ার সামনে তাকিয়ে দৃষ্টি আকর্ষণ করার চেষ্টা করল। দেখাতে চাইল সে নতুন জামা পড়েছে। কিন্তু জহির মিয়ার চোখের সামনে পত্রিকা। তাই পরী রাগ করল। চোখে টলমলে পানি নিয়ে রিকের দিকে তাকাল। রিক হেসে বলল, বাবা পত্রিকা সরাও। আমার মেয়েকে দেখো। বলো,সুন্দর লাগছে।
জহির মিয়া পত্রিকা সরাতেই হেসে উঠল পরী। গালের দুপাশে হাত দিয়ে এদিকওদিক ঢলতে ঢলতে বলল, দাদদদা ওয়াহ?
রিপ পান্জাবীর হাতা গুটিয়ে নিচে নামতে নামতে বলল, ওয়াহ মানে ওয়াও। আমি শিখিয়েছি।
পরী হাসল। রিপের দিকে ফিরে বলল। রিইইইইই ওয়াহ।
সবাই হাসল।
পরী দৌড়ে গেল তালহার কাছে। নিজেকে দেখিয়ে দেখিয়ে বলল, দাদ্দা ওয়াহ না?
তালহা বেগম হাসল। বলল, হ্যা আমার দাদুমণি অনেক সুন্দর। পরী তালহাকে আদর দিয়ে চলে আসল।
মুনার কাছে গিয়ে ও একই কাজ করল। মুনার পুরো গাল লালা দিয়ে ভরিয়ে দিল। ইশা যখনি নিচে নেমে আসে। পরী তার কাছে দৌড়ে যায়। বলে
‘ ফিপপি ওয়াহ।
ইশা হাসল। ফিসফিস করে বলল, আমার মা তো খুব সুন্দর। খুব কিউট।
পরী কিউট উচ্চারণ করতে চাইল। পারল না। ইশা খিলখিল করে হাসল পরীর কান্ড দেখে। যে হাসির মাঝে একজনের চোরা দৃষ্টি বারংবার ঘুরপাক খাচ্ছে। অবিরত।
রিপ চেঁচিয়ে ডাকল ইশাকে। আর কতক্ষণ। তাড়াতাড়ি আয়। মুনা এগিয়ে আসল।বলল, পরী না যাক। তোরা যাহ।
সাথে সাথে ইশার মুখ কালো হয়ে গেল। রিক তা দেখল। এগিয়ে আসল সে। মুনাকে বলল, না পরী যাক। আমি বলেছি। ইশু,, যাবে পরী।
ইশা অসহায় চোখে মুনার দিকে তাকাল। মুনা হেসে দিল। বলল, মজা করছিলাম। যাহ।
ইশা কোলে তুলে নিল পরীকে। বলল, সবাইকে টা টা দাও মা।
পরী চুপ থাকল। কাউকে টা টা দিল না। ইশা যখন দরজার কাছাকাছি আসল পরী তার কোল থেকে নামার জন্য জোরাজুরি লাগাল। ইশা অবাক হয়ে নামিয়ে দিল পরীকে। পরী দৌড়ে গেল রিকের দিকে। রিক তাকে দৌড়ে যেতে দেখে হাঁটুভেঙ্গে মেঝেতে বসে হাত বাড়িয়ে দিল। পরী শক্ত করে গলা জড়িয়ে ধরল রিকের। মিনমিন করে ডাকল, পাপপা…….
শক্তপোক্ত ব্যাক্তিত্বের রিক আজ কান্নাহাসিতে একাকার হলো। অনেকসময় প্রায় অনেকসময় পার হলে ও বাবা মেয়ের ছাড়াছাড়ি নেই। পুরো বাড়ির প্রত্যেকটা সদস্য খুশির জল ফেলল ফোঁটা ফোঁটা।
ইশা তো দরজার কাছাকাছি দাঁড়িয়ে অমন দৃশ্য দেখে হাসল। ফোনে কয়েকটা ছবি ও নিল।
পরী রিকের পুরো মুখ আদর দিতে দিতে লালা লাগিয়ে দিল। রিক ও দিল। বলল, মা টা কবে ফিরবে? একা লাগবে খুব।
পরী কাঁদতে কাঁদতে হাসল। বলল, এতততততো আমমমাহ।
রিক ও পরীর মতো করে ফ্লাইং কিস ছুড়ে বলল, আমমমমাহ।
রিপ কোলে তুলে নিল পরীকে। বলল, তোমার মেয়ে কি শ্বশুড়বাড়ি যাচ্ছে? আশ্চর্য!
রিক বলল, তাড়াতাড়ি ফিরিস। সাবধানে থাকিস।
পরী সবাইকে হাত দেখিয়ে বলল, তা, তা, তা।
মিনি খাঁচার ভেতর ডানা ঝাপটাল। বলল, তা,তা,তা।
_________________________
প্রকৃতিতে শীতল বাতাস। মৃদুমধুর হাওয়ায় উড়ছে মেয়েটির চুল। শাড়ি আঁচল স্থির, ভারী হওয়ায়। তার কিছুটা দূরে ছোট্ট মেয়েটি খেলা করছে আর দুইটা বাচ্চার সাথে। মেয়েটি দাঁড়িয়ে তা দেখছে। আর হাসছে।
দূর থেকে দাঁড়িয়ে কেউ একজন মেয়েটিকে খুব ভালোভাবে দেখছে। মনভরে দেখছে। কাছাকাছি দাঁড়িয়ে এভাবে দেখা কি আদৌ সম্ভব? ভাই নামক এক অদৃশ্য বেড়াজালে সে আটকা। এই বেড়াজাল কখন ছিড়বে। আজ তো ছেঁড়ার কথা। ইশু তো তারই ছিল। যখন সে বুঝতে শিখেছে ভালোবাসা কি? সেই দশ বছর বয়স থেকেই। ইশু তো তখন কত পিচ্চি ছিল? সারাক্ষণ রিপুদা রিপুদা বলে ঘুরে বেড়াত। এই মেয়েটাকে সে তখন থেকেই ভালোবাসে। জীবনের এই সাতাশ আটাশ বছর বয়সে এসে সে এখন ও ঠিক সেভাবেই ভালোবাসে ওই পিচ্চি ইশুকে। যদি ও ইশু পিচ্চি নেই। ইশু অনেক বড় হয়েছে। সব বুঝতে শিখেছে। হয়ত বয়সের তুলনায় একটু বেশিই বুঝে। বেশি বুঝলে ও যেটা বুঝা দরকার সেটাই বুঝেনা। তার চোখে পড়েনা কোনোকিছু। সে বুঝতে চায়না কোনোকিছু।
রিপ বেলুন বিক্রেতা থেকে একগুচ্ছ বেলুন নিল। পরী তখন ছোট্ট দুইটা বাচ্চার সাথে খেলায় মত্ত। খিলখিল করে করে হাসছে। আর বকবক করে কি কি সব বলছে তার ভাষায়। ইশা ঘুরেফিরে দেখছে পরীর কান্ড। রিপুদাটা কোথায় গেল?
রিপ বেলুন হাতে নিয়ে ডাকল পরীকে। পরী মা নিয়ে যাও। দেখো কি এনেছি। পরী ঘাড় ঘুরিয়ে তাকাল। হাতের মুঠি দিয়ে কপালের চুল সরাল ঠিক ডক্টর আদি চৌধুরী যেভাবে কপালের একপাশ হাত বুলায়। ইশা অবাক হলো। এই বাজে অভ্যাসটা কখন শিখল পরী? ডক্টর আদি চৌধুরীর সন্তান বলতে কিচ্ছু হয়না। কিচ্ছু না।
রিপ ইশার দিকে তাকাল। বলল, তোর জন্য কিনিনি। আমার মায়ের জন্য কিনেছি।
ইশা হাসল। বলল,
‘ হ্যা এখন আমাকে কি দরকার? তোমাদের তো মা একটা আছে।
পরী দৌড়ে এল। রিপের পান্জাবী টেনে ধরে বলল, রিইইইই ওততো।
রিপ পরীকে কোলে তুলে নিয়ে বেলুনের গুচ্ছ হাতে ধরিয়ে দিল। পরী খুশি হয়ে রিপের গালে গাল লাগিয়ে আদুরে কন্ঠে ডাকল রিইইই।
মুখ ফুলিয়ে তাকানো ইশার দিকে তাকিয়ে রিপ বলল,দেখেছিস আমাকে পাম দিচ্ছে।
ইশা কথা বলল না। আর এই রাগী মুখশ্রীতে স্থির দৃষ্টি নিবদ্ধ করল রিপ। ইশা ছোট ছোট চোখ করে তাকাল রিপের দিকে। রিপ হু বলে আওয়াজ করল কিন্তু চোখ সরাল না। ইশা বলল, কি হয়েছে।
রিপ কাঁপাকাঁপা হাতে একটি কাঠগোলাপ বাড়িয়ে দিল ইশার দিকে। ইশা আচমকা হেসে দিল। বলল, এটা কোথায় পেলে।
রিপ চমকাল। আমতাআমতা করতে করতে বলল,
‘ ওই ওখানে একটা গাছ ছিল। ছিড়ে নিয়েছি। তোর জন্য। নিবিনা?
ইশা কেড়ে নিল। বলল, কেন নেব না? কিন্তু ছেঁড়াটা ঠিক হয়নি।
রিপ মাথা চুলকাল। পরী ইশার হাত থেকে ফুলটা কেড়ে নিতে চাইল। ইশা দিল না। পরী জোরে আওয়াজ করে ডাকল, ফিপপি?
রিপ বলল,দেখেছিস কি ধমক?
ইশা হাসতে হাসতে বলল, দেব না তোমাকে। এটা আমার।
পরী রিপের কোল থেকে ঝাপ দিতে চাইল ইশার কোলে। ইশা দৌড়ে সরে গেল। বলল, উহুম দেব না। খুব খুব মারব তোমাকে।
পরী কাঁদার জন্য প্রস্তুতি নিচ্ছিল। তারমধ্যেই পরীর সামনে কাঠগোলাপ এনে দিল আদি। ইশা দেখেছিল কিছুআগেই। সে হাঁটতে হাঁটতে কিছুটা দূরে গিয়ে দাঁড়াল। বলল, রিপদা আমি ওখানেই আছি।
রিপ অবাক হয়ে তাকাল আদির দিকে। পরী কেড়ে নিল কাঠগোলাপ আদির হাত থেকে। ফ্লাইং কিস ছুড়ে মেরে বলল, আমমমাহ…..
আদি হাসল। বলল,বাহঃ তুমি ফ্লাইং কিস ও ছুড়তে জানো?
পরী জবাব দিলনা। কানে গুজার জন্য কানের কাছে ফুলটা নিয়ে গেল। ডাকল রিইইইইই……
রিপ বলল,কানে কিভাবে দেবে মা?
আদি হাসল। বলল, এখানে হঠাৎ। এনি অকেশন?
রিপ বলল, তুই এখানে কেন শালা? আমার কত বড় ক্ষতি করলি তুই জানিস?
আদি কৌতূহলী গলায় জিজ্ঞেস করল,’ কি করলাম আমি?
রিপ জবাব দিলনা। পরীকে নিয়ে চলে গেল। আদি সাথে সাথে পিছু ফিরে তাকাল মেয়েটার দিকে। ইশা পা ফেলতে ফেলতে চলল। কোনো বোধদয় নেই তার। অনুভব হালকা। আদি তার পিছু নিল। ডাকল,
‘ শুনছেন। কথা ছিল।
ইশা থমকাল। কিন্তু পিছু ফিরল না।
আদি দৌড়ে গেল। ইশার পাশে দাঁড়িয়ে হাঁপাতে হাঁপাতে থাকল। যখনি ইশা আড়চোখে তাকাল,তখনি সরাসরি চোখাচোখি হয়ে গেল দুজনের। অনেকক্ষণ কাটল নীরবতায়। বহুসময় পার হয়ে যাওয়ার পর আদি জিজ্ঞেস করল,
‘ কেমন আছেন?
ইশার হঠাৎ এমন প্রশ্ন শুনে প্রচন্ড হাসি পেল। কতগুলো দিনপর সে এমন প্রশ্ন শুনল নিজের স্বামীর মুখে। অদ্ভুত ব্যাপার। ইশা হাসল তবে তা দেখাল না। বলল,
‘ ডক্টরদের বলতে হয়না কেমন আছি। তারা তো চেহারা দেখলেই বুঝে যেতে পারে কেমন আছি। কেমন আছে।
আদি প্রত্যুত্তরে হাসল না। বলল,
‘ শরীর কেমন আছে তা বুঝা যায়। বুঝতে পারি। কিন্তু মন কেমন আছে সেটা তো বুঝতে পারিনা।
ইশা অবাক হয়ে ঠোঁট গোল করে বলল, ওহহ! আপনি মনের কথা বলছেন?.
আদি বলল, হ্যা।
ইশা বিশেষ পাত্তা দিল না আদিকে। আদি হাঁটতে হাঁটতে বলল,
‘ শাড়ির রংটা আপনাকে মানায়নি। কেউ বলেনি?
ইশা অবাক হলো না। স্বাভাবিক গলায় বলল, বলেছে। তবে আমি কারো কথাকে পাত্তা দিইনা। প্রয়োজন মনে করিনা।
আদি ও ইশার মতো করে ঠোঁট করে বলল, ওহহহহ। আচ্ছা।
ইশা জবাব দিল না। তার রাগ লাগল খুব।
অদ্ভুত সুন্দর নির্মল বাতাস বয়ে গেল হঠাৎ। গাছের পাতা,ফুল নড়ে উঠল।
আদি অনেকক্ষণ সময় নিয়ে বলল, আপনার কাছ থেকে কিছু চাইতে পারি? বেশি কিছুনা।
ইশা এবার অবাক হলো। বুক তার ধ্বক করে উঠল। গলা উঁচিয়ে দেখল রিপ আর পরীকে। কোথাও দেখা গেলনা। সে ছুটল সেদিকে। কিন্তু বেশিদূর এগোলো না । তার শাড়ির আঁচলে টান অনুভব হলো। ঠিক কয়েকবছর আগের মতো। ঠিক তিনবছর আগে ও ডক্টর যেভাবে শাড়ির আঁচল ধরে রাখত তার। ঠিক সেইরকম। এ মুহূর্তে সে রাগ করার মতো কিছু খুঁজে ও পেলনা। সাথে সাথে পিছু ফিরে তাকালে আদি ফেলে দিল তার শাড়ির আঁচল। বলল, সরি, সরি, আমার ভুল হয়ে…..
ইশা কিছু বলল না। আদি এগিয়ে এল। ইশার দিকে তাকিয়ে অনুনয় নিয়ে বলল,
‘ আমি জানি আপনার আমার পথ সম্পূর্ণ ভিন্ন। আপনার কাছ থেকে আমার চাওয়ার কিছুই নেই। থাকলে ও এখন সেই সুযোগ নেই। না আপনার। না আমার। আপনি অন্য কারো স্ত্রী। আর আমি ও অন্যকারো স্বামী।
আই প্রমিজ আমি জানতে চাইবা না কে আপনার স্বামী। কি করে। কোথায় থাকে। কোনো প্রশ্ন করব না। শুধু একটি হেল্প লাগবে আমার। আমার মনে হয় সেটি আপনিই পারবেন।
ইশার দুশ্চিন্তা বাড়ল। মিনি যদি দেখে ফেলে ডক্টরকে। খাঁচার ভেতর থেকে যদি ডাক দেয়?
আদি প্রশ্ন করল। আপনি কি বিরক্ত?
ইশা বলল,
‘ না। বলুন।
আদি তার সামনে এসে দাঁড়াল। কোনো ভণিতা ছাড়াই বলল,
‘ আপনি মিষ্টি নামের কাউকে চেনেন?
ইশার বুক কেঁপে উঠল। সাথে তার পুরো শরীর। সে প্রশ্নের মর্মার্থ না বুঝল না প্রথমে। মিষ্টি ডাকটি শুনে সে চমকাল। খুশি হলো। চোখে জল টলমল করে উঠল। কিন্তু যখনি বিষয়টি বোধগম্য হলো তখন সে সাথে সাথে পিছু ফিরল। চোখাচোখি সামনাসামনি হয়ে গেল আবার ও। ইশা বিড়বিড় করে জানতে চাইল,
‘ মিষ্টি?
আদি মাথা নাড়ল। বলল, হ্যা মিষ্টি। আমার ওয়াইফের নাম মিষ্টি।
ইশা চুপ থাকল। মুগ্ধ হয়ে শুনল সেই কথা।
‘ আমার ওয়াইফের নাম মিষ্টি। বাজতে লাগল সেই শব্দ কানে। আমার ওয়াইফের নাম মিষ্টি। আমার ওয়াইফের নাম মিষ্টি। ইশা যেন অন্য এক জগতে পা রাখল। ঠোঁট বিস্তৃত করে হাসল সে।
আদি অবাক হলোনা। কষ্ট পেল শুধু। যে কষ্ট পরিমাপ করা যায় না। দেখা যায় না। শোনা যায় না। সে তো এই মেয়েটির ছলছলে চোখ দেখতে চেয়েছিল। মেয়েটার ঠোঁটের হাসি নয়। কান্না দেখতে চেয়েছিল। হিংসে দেখতে চেয়েছিল। অভিমান দেখতে চেয়েছিল। কিন্তু মেয়েটি কি দেখাল তাকে? হাসি? তার হাসি পাচ্ছে?
আদি নিজের সব রাগ, অভিমান, কষ্ট লুকালো। সে জানে অনর্থক তার এসব অভিমান। তারপর ও কেন জানি অভিমান জমে গেল বুকে। এই অভিমান কখনো প্রকাশিত হওয়ার সুযোগ কি আসবে? সুযোগ চলে যাওয়ার পর হঠাৎ এমন ভাবনা আসা কি হাস্যকর নয়?
ইশা নীরবে হেসে বলল, মিঃ আদি। আপনি মিষ্টির হাজবেন্ড হয়ে তাকে চিনেন না! আর আমি কি করে চিনব? ব্যাপারটা হাস্যকর না?
আদি কি বলবে বুঝে উঠতে পারল না। শুধু বলল,
‘ আপনি ও চেনেন না তাকে? তাহলে কে চেনে?
ইশা অদ্ভুত ভাবে প্রশ্ন করে বসল।
‘ প্রশ্নটা নিজের মনকে করুন। উত্তর পেয়ে যাবেন।
আদি সরাসরি চোখ তুলে তাকাল ইশার দিকে। চকচক করা চোখ চোখে পড়ল ইশার। হয়ত সে ভুল দেখল। আদি বলল,
‘ আমার মন কথা বলেনা বৃষ্টি। বলে না। যদি বলত তাহলে আজকে নিশ্চয় বৃষ্টি হতো। মন কেমনের বৃষ্টি।
ইশা শুধু নিঃশব্দে হাসল কিংবা কাঁদল। আওয়াজ করে বলল, মিঃ চৌধুরী বৃষ্টি ঠিকই এসেছিল। কিন্তু সঠিক সময়ে আসেনি। আর এর কারণটা আমি আপনি নই কিন্তু। ভাগ্যের পরিহাস।
আদি পিছু হাঁটে দুই পা। বলে, আপনি সত্যি চেনেন না?
আপনার বয়সী কিংবা বড় কিংবা ছোট ও হতে পারে। কিন্তু চেনার কথা।
ইশার বলে দিতে ইচ্ছে হলো আপনার মিষ্টি আপনার সামনেই আছে। খুব কাছে আছে। আপনার পাশেই আছে। কিন্তু দেখছেন না। আপনি অন্ধ ডক্টর।
আদি চোখ নিচে নামিয়ে রাখে। এদিকওদিক তাকিয়ে বলে, দুঃখিত আপনাকে ডিস্টার্ব করায়।
ইশা বলল,
‘ কি জন্য খুঁজছেন তাকে?
আদি ইশার প্রশ্নে চমকাল। বলল, ‘অদ্ভুত প্রশ্ন। স্বামী তার স্ত্রীকে কেন খোঁজে?
ইশা মাথা নামিয়ে হাসল। বলল,
‘ হারাতে দিলেন কেন?
আদির কন্ঠে রাগ ধরা দিল। বলল,
‘ আমি হারাতে দেওয়ার কে? যদি সে নিজ থেকেই হারিয়ে যেতে চায়।
ইশা হাসল আওয়াজ করে। বলল,
‘ সে হারিয়ে গেল আর আপনি হারিয়ে যেতে দিলেন। যাইহোক এত কথা কেন বলছি আমি? আপনার সাথেই বা কেন কথা বলছি আমি? কে হন আপনি আমার?
আদির ভাবান্তর ঘটল একটি প্রশ্নে। কে হন আপনি আমার?
কথার বাণে ও কি কাউকে আঘাত করা যায়? যদি যায় তাহলে বলতেই হবে। ইশা মেয়েটি সেই কাজ খুব ভালোভাবে পারে। খুব সুনিপুণ ভাবে সে আঘাত করতে পারল আদিকে। আদি উত্তর দিল না সে প্রশ্নের। শুধু বলল,এই সামান্য কথা বলার জন্য কি কেউ হতে হয়?
ইশা উত্তর দিল না। হেঁটে এগিয়ে গেল। আদি তার পিছু পিছু হেঁটে গেল। বলল,
‘ মিষ্টি আপনার মতো দেখতে।
ইশা স্তব্ধ হয়ে গেল। আদি বলল, আমার মনে হয়। কারণ আমি যখন মিষ্টিকে ভাবার চেষ্টা করি তখন শুধু একটি চেহারা ভাসে। আর একটি দৃশ্য। বৃষ্টির দিনের। কেন এমন হয়?
ইশা চাপা গলায় গর্জে বলল,
‘ আপনি যান এখান থেকে।
আদি দুঃখিত গলায় বলল, আপনি বৃষ্টি, মিষ্টি নন। আর আমি মিষ্টিকেই খুঁজছি। বৃষ্টিকে নয়। তাই রাগার কোনো প্রশ্নই আসেনা। আপনি নিজেকে মিষ্টি ভাববেন না। সে মোটেও আপনার মতো স্বার্থপর নয়। সে ফিরবে আমার কাছে। কিন্তু আপনি তো……
ইশা চাপা গলায় বলল, যান। আমার সামনে আর আসবেন না। আপনাকে আমার সহ্য হচ্ছেনা। আপনাকে কোনো সাহায্য আমি করতে পারব না।
আদি পলকহীন তাকিয়ে থেকে শুনল ইশার কথা । বলল, যাচ্ছি। আর আসব না। কখনো আসব না। আপনি ও আমার সামনে পড়বেন না। কোথাও আসবেন না আপনিও। কল্পনায় ও না। পাষাণ।
নিজের মন পড়তে না পারা মানুষগুলো বোধহয় এমনই হয়। তারা বুঝে উঠতে পারেনা তারা আসলেই কি চায়?
কাকে চায়। আদি ঠাঁই দাঁড়িয়ে থাকল। ইশা এগিয়ে চলল সামনে। আজ তার খুশির দিন। তবে এই খুশির কারণে তার হাসতে ইচ্ছে করল না। চিৎকার করে কাঁদতে ইচ্ছে করল পুরো পৃথিবীকে জানিয়ে দিতে ইচ্ছে হলো সে আজ ডক্টরকে শুনতে পেয়েছে। ডক্টর তার আছে। ডক্টর তাকে ভালোবেসেছে বৃষ্টিরূপে। আজ ও ভালোবাসে মিষ্টিরূপে। রূপ দুইটা কিন্তু মানুষ তো একটা।
আখিঁজলে ভেসে ভেসে ইশা পা বাড়ায়।
আদি ও পা বাড়ায় তার উল্টো দিকে আকাশের দিকে তাকিয়ে তাকিয়ে। দূরে দাঁড়ানো রিপ ইশার কাছে এগিয়ে এল। বলল, আদি কি বলছিল?
পড়নে নীল কূর্তি, আর সাদা সেলোয়ার ওড়না পড়া মেয়েটি গাড়ি থেকে তাড়াহুড়ো করে নামল। আফাজ আহমেদ জিজ্ঞেস করল, আদি কি এখানেই? তুই সিউর ইমি? আমি কি চলে যাব?
আইমি কাঁপাকাঁপা কন্ঠে জবাব দিল,লিয়া আন্টি তো বলেছে আদি এখানেই এসেছে। তুমি চলে যাও চিন্তা করোনা। আমি বাসায় ফিরব।
এলোমেলো পায়ে হেঁটে যখন আদি আর ও সামনে এগোলো মেয়েটাকে দেখার সাথে সাথে সে থমকে দাঁড়াল। একদৃষ্টে তাকাল।
আদিকে দেখার সাথে বুক চিরে যেন স্বস্তির শ্বাস ফেলল আইমি। আদির মলিন চেহারায় হাসির ছিটেফোঁটা ও না দেখতে পেয়ে আইমির মুখটাই মলিন হয়ে গেল। আদি সোজা হয়ে দাঁড়িয়ে রইল। আইমি ধীর পায়ে এগোতে এগোতে আদির সামনে এসে জাপটে জড়িয়ে ধরল। সাথে সাথে হুড়মুড় করে কেঁদে দিয়ে বলল, আই মিসড ইউ আদি। মিসড ইউ এ লট।
আদি যেভাবে আগে ছিল ঠিক সেভাবেই দাঁড়িয়ে রইল। নড়ল না। চড়ল না। আইমি কাঁদতে কাঁদতে তার বুক ভিজিয়ে দিল। ভেজা ভেজা অনুভব হওয়ায় সে মুখ খুলল, ছাড়ো আইমি।
আইমি আর ও চেপে ধরল। বলল, আমি আগের আদিকে চাইনা। এই আদি আমার জন্য ঠিক আছে। তুমি এত চুপ কেন আদি। তুমি বাসা থেকে বেরিয়ে গেছ। কোথায় খাচ্ছ? কি করছ আমি কিচ্ছু জানিনা। তুমি যোগাযোগের সব রাস্তা বন্ধ করে রেখেছ। কিন্তু কেন আদি?
আদি শক্ত ভঙ্গিতে দাঁড়িয়ে থাকে। আইমি তাকে ছেড়ে দেয়। আদি সামনে ঘুরে। দূরে ওই শাড়ি পড়া রমণী ও দেখা গেল তার দিকে তাকাল। মেয়েটির খুশিতে কিংবা দুঃখে চোখ চকচক করল। আদি বোধহয় ভুল দেখল। আইমি আদির সামনে এসে দাঁড়ায়। বলে, কেন এত চুপ আদি। আমার কষ্ট হচ্ছে আদি।
আদি তারপর ও চুপ। কি বলবে সে? কি বলা উচিত তার। এই নিষ্ঠুর পৃথিবীর মানুষগুলো বড্ড নিষ্ঠুর। কে ভেবেছে তার কথা? মা বাবা? ওই দূরে দাঁড়ানো মেয়েটি? যে চোখের আড়াল হওয়া মাত্রই অন্যের হাত ধরেছে। কে ভেবেছে তার কথা ওই চিরকুটের মালিকিন? মিষ্টি? যে তার নিজের দায়িত্ব শেষ করে চলে গিয়েছে। আদির কথা একবার ও ভাবেনি। আইমি তাকায় আদির মুখপানে। বলে, আদি তুমি কিছু খাওনি?
আদি শুকনো হাসি উপহার দেয় আইমিকে। বলে, খেয়েছি। কারো মুখের দু একটা কথায় এমন শক্তি থাকে পেট ভরে যায়। অন্যকিছু খাওয়া লাগেনা। আমি সরি ইমি,তোমাকে এতদূর নিয়ে আসলাম।
আইমি চোখের জল মুছে নেয়। বলে, চলো আমরা পাশের রেস্টুরেন্টে যাই। খেতে খেতে কথা বলি?
আদি নড়ে না। বলে,আমার খিদে নেই ইমি।
‘ তাহলে চলো বাসায় যাবে তোমাদের। আন্টি অসুস্থ আদি।
আদি হাত ছাড়িয়ে নিল। বলল, না। যাব না।
আইমি হতাশ হলো। বলল,
‘ কেন এমন করছ আদি?
আদি চুপ থাকল।
আইমি আবার ও বলল,
‘ আমাদের বিয়ের ডেট ফিক্সড করা হয়েছে আদি। তুমি খুশি ছিলে আদি। হঠাৎ এমন আচরণের কারণ কি?
আদি কোনোকথা বলেনা। কলাপাতা রঙের শাড়ি পড়া মায়াবিনীর চলে যাওয়া দেখে সে। ঘৃণায় মুখ ফিরিয়ে নেয়। বিড়বিড় করে উচ্চারণ করে, পাষাণ।
আইমি বলে, আদি আমরা কোথাও বসি?
আর কতক্ষণ দাঁড়িয়ে থাকব? তোমার চেহারার কি অবস্থা দেখো আদি। তুমি নিজের খেয়াল রাখছ না?
এটা ওটা বলে যায় মেয়েটি অবিরত। কি আশ্চর্য! আদি আচমকা এক কাজ করে বসে। দূরের ওই মেয়েটির যাওয়ার দিকে তাকিয়ে জাপটে জড়িয়ে ধরে আইমিকে। বলে,
‘ ইমি সবাই চলে যাক কিন্তু তুমি থেকো। সবাই স্বার্থপর ইমি তুমি এমনটা কখনো হইয়ো না। সবাই খানিকক্ষণের জন্য আমার জীবনে আসে ,আবার চলে যায়। আমি ছোঁয়ার আগে। ধরার আগে। কিছু বলার আগে। তুমি যেও না ইমি। আমি ভালোবেসে ঠকে গেছি ইমি। তুমি কখনো ঠকিওনা। কখনো না। আমি না বাসলে ও তুমি আমায় ভালোবেসো। আমি কষ্ট দিলে ও তুমি আমার পাশে থেকো। আমি ছুড়ে ফেললে ও তুমি আমায় আঁকড়ে ধরে রেখো। কখনো চোখের আড়াল হয়ে গেলে মনের আড়াল করোনা। কখনো আমায় ছেড়ে যেওনা ইমি। যে পরিস্থিতি আসুক আমাকে রেখে যেওনা। তোমার সাথে রেখে দিও। নয়ত নিয়ে যেও। কিন্তু একা ছেড়ে যেওনা ইমি। তুমি আমার বুকে আছ ইমি কিন্তু তারপর ও ফাঁকা ফাঁকা লাগছে। কোথাও একটা শূন্যতা থেকে যাচ্ছে। এই শূন্যতা কেন পূরণ করতে পারছ না ইমি? কেন?
আইমি মুখ তুলে তাকায় আদির দিকে। বলে, আমি পূরণ করে দেব। কথা দিচ্ছি কখনো তোমায় ছেড়ে যাব না। তোমার সবরকম পরিস্থিতিতে আমি তোমার পাশে থাকব। তোমার মনমগজ,এই হৃদয়পিঞ্জরে শুধু ইমির বসবাস হবে। ইমিই থাকবে সেখানে। আর কেউ নয়।
চলবে,