#মন_কেমনের_বৃষ্টি
#পর্ব_২৮
#পুষ্পিতা_প্রিমা
বাসায় একসাথে রিপ ইশা দুজনই ফিরল। ইশা তখন হাঁপানো অবস্থায়। বুকে হাত দিয়ে চোখ বন্ধ করে শ্বাস নিল। চোখ খুলার আগে পরী শান্তস্বরে গলা উঁচিয়ে আদুরে কন্ঠে ডাকল,
‘ ইশশশশআআআআআআ…
রিপের কোলে তখন পরী। পরী তাকাল রিপের মুখের দিকে। ফিপি তার দিকে তাকাচ্ছে না কেন?
ইশা হাঁপাতে হাঁপাতে অনেকসময় পার হওয়ার পর চোখ তুলে দেখল রিপকে। রিপের চোখ তার আগে থেকেই অন্যদিকে নিবদ্ধ। পরী ঠোঁট টানল আবার। ডাকল, ফিপপপি……
ইশা ধীরে ধীরে তার অশ্রুসজল নয়নে তাকাল মেয়ের দিকে। আজ কি তার সুখ-দুঃখের দিন একসাথে? তার চোখ কি ঠিক দেখছে। কাঁপাকাঁপা পায়ে ইশা পরীর দিকে এগোয়। এক হাত বাড়িয়ে ছুঁতে চায় পরীর গাল। ছোঁয়ার আগেই সে ডুকরে উঠে। এক আকাশ ভালোবাসা, আদর,স্নেহ, মমতা মিশিয়ে ডাকল,
‘ মাআআআআআ……
পরী কেন যেন চুপ হয়ে তাকিয়ে রইল ইশার দিকে। গড়গড় করে কেঁদে দিল ইশা। বোধহয় ছেলেটি ও। তা কি করে হয় ছেলেরা কি কাঁদে?
সাথে সাথে রিপ পরীকে নামিয়ে দেয় কোল থেকে। দাঁড়ায় না আর। চলে যায়। তার যাওয়ার পানে তাকিয়ে অশ্রু ঝড়াতে থাকা অবস্থায় আচমকা পরী টান দেয় ইশার ওড়না ধরে। গালের একপাশে আঙুল দিয়ে চেপে কান্নাস্বরে চিকন গলায় বলে ,,,,
‘ পাপ্পি……
ইশা বসে হাঁটুহেড়ে। পাশে নিজের কাঁধে ঝুলানো ব্যাগটি রাখে। ইশার কিছু করতে হয়না। পরী এসেই জাপটে ধরে ইশাকে। গলা জড়িয়ে ধরে এমনভাবে,, যেন কতকাল দেখেনি। ফিপপির প্রতি অত মায়া অত টান কি দেখাতে আছে?
ইশা মেয়েকে নিজের সাথে চেপে ধরে কাঁদল। বলল, তোর বাবার মত তুই ও ভালোবাসবি। তারপর ছেড়ে দূরে চলে যাবি। সেজন্য আমাকে ও যেতে হবে। আমি ও যাব। এবার শাস্তি আমি দেব।
পরী কিছু বুঝেনা। ইশার ঘাড়ে মাথা রেখে সিক্ত কন্ঠে ডাকে,
‘ আমমমমমমা……
ইশা মুখ তুলে দেখে পরীকে। ছোট্টছোট্ট গাল দুটো আঁকড়ে ধরে আদর দেয়। পরী তার পুরো গাল,মুখ হাত,দেখিয়ে দেখিয়ে বলে, ফিফফফফি দুক্কু। এতততো এতততো পাপ্পি।
ইশা কান্নার মাঝে ও হাসে। ছোট্টছোট্ট আঙুলগুলোতে আদর দেয়। পরী দেখিয়ে দেয় তার কপাল, তার নাক, তার ঠোঁট। ইশা ও মেয়ের আবদার ফেলেনা। মেয়ে তো বেশি কিছু চাইছেনা। মাঝরাতে ঘুম থেকে উঠে তার ঘুম নষ্ট করছেনা। তার অসুস্থতার সময় কোলে নিয়ে তো তাকে বসে থাকতে হয়না। গোসল করাতে হয়না,খাওয়ানোর মতো ঝামেলা পোহাতে হয়না। শুধু একটু আদর করে দিতে হয়। স্নেহ, ভালোবাসা, মমতার স্পর্শ এঁকে দিতে হয়। মা টা ও তার কষ্ট বোঝে। মায়ের কাছ থেকে বেশি কিছু চায়না। সে ও বোধহয় বোঝে তার মা বড়ই অভাগী।
পরী আঙুল পেছনে দেখিয়ে কি কতগুলো যেন বলল তার ভাষায়। ইশা বুঝল না। বলল, কি বলছ মা কিছুই তো বুঝিনা। কোথায় ছিলে তুমি এতদিন।
পরী নাক কামড়ে ধরল ইশার। হেসে বলল, আমমমমমা………
ইশা ও হাসল। বলল, মা ব্যাথা পাচ্ছি তো। ছাড়ো।
পরী ইশার মুখ ধরল। আঙুল দিয়ে আঁকিবুকি করল। ইশার চুলে হাত দিল চুলগুলো টেনে গালে দিতে চাইল। ইশা পরীর হাতের শক্ত মুঠো থেকে চুলগুলো ছাড়াতে চাইল। বলল, চুল কেউ গালে দেয়। এসব বাজে অভ্যাস কবে হয়েছে মা?
পরী তারকাজে ব্যস্ত। ইশার চুল এবার দুহাতের মুঠো দিয়ে শক্ত করে ধরল। ইশা ছাড়িয়ে ও নিতে পারছেনা। নড়তে ও পারছেনা। পরী তাকে ধমক দিয়ে বলে, ফিপপপি ভোববব।
ইশা হতাশ হয়ে বসে পড়ে। বলে, যা ইচ্ছে করো দেখি,, কেমন খেতে পারো । রাক্ষসী মেয়ে একটা। সবগুলো গালে দেয়।
পরী তার চুল টেনে গালে দিতে গিয়ে থেমে যায়। ডাকে, পাপপপপপপপপপা…………..
স্বাভাবিক কন্ঠ নয় পরীর। কান্নামাখা ঝিরঝিরে কন্ঠস্বর। ঠোঁট টেনে সাথে কেঁদে দিল পরী। রিক এগিয়ে এলোনা। শুধু চেয়ে রইল মা টাকে। কে বলবে এতগুলো দিন এই মা টাকে ছাড়া সে খেয়েছে। পড়েছে। ঘুমিয়েছে। রিক তার জায়গায় দাঁড়িয়ে রইল শুধু। কেন জানি এগোনোর সাহস হলোনা। বুকের ভেতর বহুদিন পর একটু শান্তি এল। স্বস্তি এল। তার মা ফিরেছে আবার তার ছোট্ট কুটিরে।
আজ থেকে খান বাড়ি আবার ও হেসেখেলে উঠবে। পরী ছুটে যায় রিকের দিকে। কোলে নেওয়ার জন্য হাত বাড়িয়ে দৌড়ে যায় পরী। রিক নিচু হয়ে কোলে তুলে নেয় পরীকে। পরী যেন চেপে গেল। আর মুখ তুলল না। রিক চোখবন্ধ করে অনুভব করল তার মায়ের আদুরে স্পর্শ। এই স্পর্শগুলোতে কত মায়া জড়ানো। কত ভালোবাসা জড়ানো। রিক আজ বুক ফুলিয়ে বলতে পারবে সে পেরেছে বাবা হয়ে উঠতে। বাবার জায়গা নিতে। সে সন্তানহীন বাবা নয়। তার একটা মেয়ে আছে। তার একটা পিচ্চি মা আছে। আর সেই মা তাকে ভালোবাসে। সত্যিই তো কেউ যদি খুব কাছ থেকে দেখত তাহলে বুঝতে পারত ছোট্ট মেয়েটির ঠোঁটের সাথে হাসছে তার চোখদুটো। আর সেই সুন্দর আখিঁযুগল বেয়ে গড়িয়ে পড়ছে জল। সেই জল বাবাকে এতদিন দুচোখে না দেখার। দুহাতে না ছোঁয়ার। বাবার আদর না পাওয়ার। বাবার বুকে না ঘুমানোর। বাবার কোলে না চড়ার। বাবার হাতে না খাওয়ার।
প্রায় কত মিনিট পার হলো কে জানে? বাবা মেয়ে চুপ করে রইল অনেকক্ষণ। চারপাশে সুনসান নীরবতা। ইশা শুধু চোখমেলে চেয়ে রইল বাবা মেয়ের পানে।
এই বড়দা না থাকলে আজকের পরী ও থাকত না। এই বড়দার কারণে আজ পরী বেঁচে আছে। এই পরীর মানেটাই তাই বড়দা। উপরওয়ালা বোধহয় বড়দার জন্যই পাঠিয়েছে পরীকে। যে এত ভালোবাসে পরীকে, সেই পরী কি করে তাকে ভালো না বেসে থাকবে? পরী ও বোধহয় জানে এই বাবাটাই তার পৃথিবী। কিভাবে জড়িয়ে ধরে আছে? কিভাবে লেপ্টে আছে? কিভাবে ভালোবেসে আদর দিচ্ছে। কিভাবে ভালোবেসে আবদার করছে চকলেটস। কত আবদার অনুনয় মিশিয়ে পকেটে হাত ডুকিয়ে দিয়েছে। রিক তো হেসে দিল,বোধহয় কাঁদল। নীরবে!
রিক বলল, পকেটে চকলেটস তো প্রত্যেকদিন ভর্তি করে রাখি মা। কখন মা আসবে। পকেটে হাত ডুকিয়ে দেবে? চকলেটস না পেলে তো কাঁদবে তাই না।
পরী দুহাত ভর্তি চকলেটস তুলে নেয়। মাথা হেলিয়ে দুলিয়ে বলে, পাপপপা চককো লিলি,,,,
মুনাকে দেখেই পুরো ড্রয়িংরুম ফাটিয়ে চেঁচিয়ে উঠে পরী। মুনা তখন ব্যস্ত। রিপের কথামতো পরীর খিদে পেয়েছে। মুনার চোখে জল টলমল করছে। কিন্তু তারপর ও সে চোখতুলে পরীর দিকে তাকাল না। ছোট্ট ছোট্ট করে ভাত মেখে পরীর মুখের কাছে দিয়ে বলল, কতদিন না খেয়ে থেকেছ মা? খিদে পেয়েছে খুব?
পরী চুপচাপ গালে নিল। মুনা নিচের দিকে তাকিয়ে তাকিয়ে ভাত মেখে দিল পরীর দিকে। পরীর রাগ লাগল, কষ্ট লাগল। রিকের ঘাড়ে এমনভাবে মুখ চেপে ধরল আর তুলল না। কেউ উঠাতে পারল না। শক্ত হয়ে চেপে ধরল। মুনা আদুরে কন্ঠে ডাকল, মা মামমম খাবে না? আর দুটো খাও। কতদিন খাওয়ায়নি তোমাকে? কার হাতে খেয়েছ এতদিন?
পুরো একটা রাত বন্দী ছিল পরী ওই রুমটাতে। খিদে তো লাগবেই। বেলা বারোটা হলে ও কেউ তাকে খাইয়ে দেয়নি। শেষমেশ জামাল খাওয়াতে নিয়ে গেলে ও খাওয়া হয়ে উঠেনি। পরী ঢকঢক করে মুনার হাতে পানি খেল। সামনের দিকটা পানি পড়ে ভিজে গেল। পরী মুনার দিকে তাকাল না। হিঁচকি তুলে কেঁদে রিককে জড়িয়ে ধরে মিনমিন কন্ঠে বলল, মামমমমা……….
মামমমা কেন তাকে কোলে নিচ্ছে না।
রিক শুনল কিন্তু বাকি কেউ শুনল না। মুনা চেয়ে রইল রিকের দিকে। কোলে নিয়েছে আর দেওয়ার নাম নেই। তার ও তো কোলে নিতে ইচ্ছে হয়। আদর করতে ইচ্ছে হয়। মুনা চোখ নামিয়ে চলে যাওয়ার জন্য পা বাড়াল। রিক চাপাস্বরে ডাকল, মুনা পরীকে নেবে না?
মুনা শেষ করতে দিলনা রিককে। পরীকে ছুঁতেই পরী ঘাড় ঘুরিয়ে তাকাল মুনার দিকে। মুনা বুঝতে পারল মেয়ের অভিমান। পরী জাপটে ধরল তাকে। গালে নরম গালগুলো ঘষে ডাকল,,,, মামমমমমমা,,,,
মুনা কান্নাহাসিতে একত্রে ভাসল। গাল বেয়ে যেন অশ্রু গড়াল। কতদিন ছুইনি মেয়েকে। কতদিন বুকে নিয়ে ঘুমোয়নি। কতদিন ঘুম পাড়ায়নি। কতদিন আদর করেনি ঘুমন্ত মুখটাতে। ছোট্টছোট্ট হাত পা গুলোর মাইর ও কতদিন খাওয়া হয়নি। শুকিয়ে গেছে মা টা। কেউ ভালো করে খাওয়ায়নি বোধহয়।
জহির মিয়া আর তালহা বেগমের কোলে ও ঝাপ দিল পরী। অনেকদিন পর প্রাণ খুলে হাসল। পুরো বাড়িটা ও তার সাথে হাসল। সবার সাথে খেলল পরী। হলুদ রঙের ফ্রক গায়ে দিল। মাথার দুপাশে ঝুটি বাধা। পুরো বাড়ি খালি পায়ে দৌড়াল। লুকোচুরি খেলল রিকের সাথে। দৌড় খেলা খেলল। সবাইকে হাসিখুশি দেখা গেল। সবাই আগের মতো রয়ে গেল।
কিন্তু সিড়ির রেলিং ধরে নিচে এসে দাঁড়ানো ছেলেটিকে দেখে পরী চুপ হয়ে গেল। রিইইইই কেন পাল্টে গেল? কেন এত চুপচাপ হয়ে গেল? কেন এমন গোমড়ামুখো হয়ে গেল? কেন তার সাথে হাসছে না? কেন তার সাথে কথা বলছে না? কেন খেলছে না?
কেন পরী মা বলে ঘনঘন ডেকে উঠছে না?
রিপ অদ্ভুতভাবে দেখল পরীকে। আজ সে আগাগোড়া পর্যবেক্ষণ করল পরীকে। এই ছোট্ট মেয়েটিকে তো সে মা ডেকেছে। সত্যিই তার মা। ছোট মা। কতশত আবদার ভাসে মা টার মুখে। কতশত বায়না। এই মা টার দিক থেকে কি মুখ ফিরিয়ে নেওয়া আদৌ কখনো সম্ভব?
দূরে দাঁড়িয়ে রিপের দিকে অসহায় হয়ে তাকিয়ে থাকা মেয়েটিকে রিপের আজ বড্ড অসহায় লাগছে। সত্যিই তো সে অসহায়। নিজের সন্তান তাকে মা ডাকেনা। রাতে তার বুকে ঘুমোয়না। সে খাওয়ায় না। ঘুম পাড়াতে পারেনা। কিন্তু তারপর ও রিপের আবার মেয়েটিকে বড্ড পাষাণ ও মনে হলো। জিজ্ঞেস করতে ইচ্ছে হলো,
‘ তোর ধৈর্য শক্তি কতটুকুরে ইশা? তুই এতটা ও পাষাণ, হৃদয়হীন কি করে হতে পারিস? যাকে দশ মাস দশ দিন গর্ভে লালন পালন করে পৃথিবীর আলো দেখিয়েছিস তার মুখে মা ডাকটি শুনতে ইচ্ছে করেনা তোর? ভালোবেসে বুকে জড়িয়ে ধরে রাখতে ইচ্ছে করেনা। তার সাথে সারাক্ষণ সময় কাটাতে ইচ্ছে করেনা। অমন একটা মেয়ের দিক থেকে কে মুখ ফিরিয়ে নিতে পারে? তুই পারিস। কারণ তুই পাষাণ। একটা ছোট্ট বাচ্চার প্রতি যেখানে তোর মায়া জন্মায় না সেখানে আমি কোথাকার ছাই। তোর জায়গায় আমি থাকলে দুনিয়া উলটপালট হয়ে গেলে ও আমার মা টাকে আমি কখনোই ছাড়তাম না। আমি যা খেতাম তাকে ও তাই খাওয়াতাম। বুকের মধ্যিখানে রেখে ঘুম পাড়াতাম। আমার পৃথিবীটা সাজাতাম পরী নামটা দিয়ে। কিন্তু তুই সবখানেই ব্যর্থ। সবখানেই তোর অসহায়ত্ব। আমার কষ্ট হয় রে। তোর কষ্ট আমার সহ্য হয়না। আমার বুকে জ্বালাপোড়া করে। আমি তো সব মেনে নিয়েছি, তোকে হারিয়ে ফেলেছি। কিন্তু তুই কেন ভালো নেইরে ইশু? তোর কষ্ট গুলো দেখলে আমার ভালো থাকার ইচ্ছে গুলো দুমড়েমুচড়ে যায়। ইচ্ছে গুলো মরে যায়। আমার আর ভালো থাকতে ইচ্ছে করেনা। আমি তো তোর মাঝেই আমার ভালো থাকাটা খুঁজেছি। সেই তুই নিজে ভালো থাকতে পারলি না,আমাকে ও মারলি। ভালো থাকতে দিলি না আমায়। আঘাতে আঘাতে মারলি। আর কত মারবি। তুই একটু ভালো থাক না এবার। একটু ভালো থাক। আমাকে একটু,,শুধু একটুখানি ভালো রাখ। আমার ও যে ভালো থাকতে ইচ্ছে হয়।
_______________________
আলিয়া প্রায় চেঁচিয়ে কাঁদল এবার। কতদিন পর তার গাল বেয়ে জল গড়াল রাইনা আর মিনু কেউ বলতে পারল না। কেউ ফিরছেনা তার কাছে। না নিজের ছেলে আদি? না নাতনী পরী? আজিজ চৌধুরী কি এবার তার দুর্বলতা নিয়ে খেলছে না? কোথায় রেখেছে পরীকে?
সময় পার হলো অনেকক্ষণ। মাথা নিচু করে বাড়িতেম পা রাখল আজিজ চৌধুরী। বলল,
‘ লিয়া আমি জামালের হাতে দিয়েছিলাম আদিশাকে। তাকে পেলাম না ওই ফ্ল্যাটে। সাথে আদিশাকে ও।
আলিয়া হাউমাউ করে কেঁদে উঠল। বলল, দূর হও আমার সামনে থেকে। কাল রাত থেকে আদিশা কিচ্ছু খাইনি তার তো এতক্ষণে খিদে পাওয়ার কথা। আমি ভেবেছিলাম এখন ও আসলে নিজ হাতে খাওয়াব। একটা বাচ্চা মেয়েকে তুমি না খাইয়ে রেখেছ আজিজ।
আজিজ চৌধুরী নতবদনে দাঁড়িয়ে থাকল। সত্যিই তো আদিশা আদির মেয়ে। এতবড় ভুল সে কি করে করল? এখন কোথায় আদিশা? কার কাছে?
আজিজ চৌধুরীর মাথায় চোরা বুদ্ধি খেলে গেল। আলিয়ার সামনাসামনি বসল। বলল,
‘ লিয়া আদি আইমির বিয়ে তো কাল পরশু। ডেট ভুলে গেছ। আইমির বাসায় অলরেডি তার চাচ্চুরা এসে গেছে। ডক্টর ইমদাদের দেখা পেয়েছিলাম আজ। বিয়েটা হয়ে যাক। এসব বাদ দাও।
আলিয়া চুপ হয়ে গেল।
‘ বিয়ে হয়ে যাবে মানে? কি করে? আদির মেয়ে আছে আজিজ। কত আদুরে, মিষ্টি একটা মেয়ে। এই দেখো এখনও বোধহয় তার গায়ের মিষ্টি সুবাস লেগে আছে আমার গায়ে। দেখো তার নরম হাতের স্পর্শ লেগে আছে আমাদের গায়ে। আমি কি করে তাকে ভুলব। সে কখনোই ভুলার নয় আজিজ। তার মায়ের সাথে অন্যায় হয়েছে। তার সাথে কি করে অন্যায় হতে দিই? আমার তাকে চাই আজিজ।
‘ কিন্তু তুমি আইমির কথা কেন ভাবছ না লিয়া? আইমি আদিকে ভালোবাসে। আইমির মন ভেঙে যাবে। আর ওই মেয়েকে আমার নিজের ছেলের বউ ভাবতেই ইচ্ছে করেনা। বংশহীন মেয়ে। জাত পাত ঠিক নেই। আমি ওই মেয়েকে মানতে পারব না। আদির জন্য আইমিই বেস্ট।
আলিয়া মুখ ঢেকে রাখে দু হাত দিয়ে। সংসার কি তুমি করবে আজিজ? শুধু আইমিকে নিয়ে ভাবছ।
আমরা যাকে বেস্ট বলছি আদির কাছে তা না ও হতে পারে।
আদি বোধহয় ওই মেয়েটাকেই ভালোবাসত। যার কথা ও আমাকে কয়েকবার বলেছিল। ইনিয়েবিনিয়ে কথার ছলে তার কথার মর্মার্থ এই দাঁড়াত মেয়েটাকে তার ভালো লাগে। শুধু ভালো লাগে নয়। খুব বেশি ভালো লাগে। আর এই ভালোলাগার আড়ালে ভালোবাসা ছিল। যা আইমি নামক শব্দটা দিয়ে আদি ঢেকে রেখেছে। নিজের মন কি চায় তা আদি বলতে পারেনা। তুমি একটিবার ভাবো একটা অপরিচিত মেয়ের কথা কেন আদি বারবার ঘুরিয়ে ফিরিয়ে আমাকে আর রাইনাকে বলবে? যেখানে অলরেডি আইমি আছে তার জীবনে। তার এইওই অভিযোগ গুলো কেন শুধু বৃষ্টিকে ঘিরে হবে? একটা অচেনা অপরিচিত মেয়ে তার দিকে না তাকালে কেন তার রাগ লাগবে? যে মেয়ের সাথে তার কোনোদিন দুদন্ড কথা হয়নি তার নাম কেন সে ঘুরিয়ে ফিরিয়ে নেবে? আদি সত্যিই তাকে ভালোবাসত। বাসে। আমরা বুঝিনি আজিজ।
আজিজ চৌধুরী বিরক্ত হয়।
‘ তুমি আবার কোন বৃষ্টির কথা বলছ লিয়া। বন্ধ করো এসব। সব দোষ তোমার ছেলের।
‘ কেন বন্ধ করব। তুমি জানো সেই বৃষ্টি মেয়েটা কে? মেয়েটার নাম বৃষ্টি নয়। মেয়েটির নাম ইশা। ইশা আফরোজা। চিনতে পারছ?
আজিজ চৌধুরী হতভম্ব চোখে তাকায়।
‘ মানে? মানেটা কি? কি করে ইশা হয়? ইশা মানে তো……
আলিয়া ব্যঙ্গ করে হাসে। বলে,
‘ আমি মা হই ছেলের। আমি ছেলের মনের কথা পুরোপুরি বুঝতে না পারলে অনেকটাই বুঝি। তুমি কি ভেবেছ যার কথা ছেলে আমাকে রূপকথার গল্পের মতো শোনায়। ছেলের মুখের বর্ণনা শুনে সেই বৃষ্টিসুন্দরীকে তো আমার দেখতে ইচ্ছে হবে না । আমি লোক রেখেছিলাম আদির পিছু পিছু। কোথায় যায়? কি করে? কোথায় মেয়েটার বাড়ি?
পরে জানতে পারলাম মেয়েটি কলেজের স্টুডেন্ট। মাতৃপিতৃহীন। আমার রাগ লেগেছিল আদির উপর। এমন একটা মেয়ের জন্য সে বৃষ্টিতে ভিজে দাঁড়িয়ে থাকে। নিজেকে কোথায় নিয়ে দাঁড় করিয়েছে আদি? এমন একটা মেয়ের কথা সে আমাকে বলে। আমি সরাসরি আদিকে জিজ্ঞেস করলাম,
‘ তুমি তাকে পছন্দ করো আদি?
আদি সেদিন শান্ত হয়ে আমার দিকে তাকিয়ে থেকেছে। বলেছে,
‘ অত কঠিন প্রশ্ন জিজ্ঞেস করতে নেই মা।
আমি রেগে থাকলাম আদির উপর। আমি যখন শুনতে চাইতাম না তার কথা সে রাইনাকে বলল সেসব কথা। রাইনাকে শোনায় তার কথা। আমি ততদিনে বুঝতে পেরেছি যে আদি ভালোবেসে ফেলেছে ওই মেয়েটিকে। কিন্তু বুঝতে পারছেনা। আদি আইমিকে ও বলত মাঝেমাঝে। আইমির মুখ থেকে যখন আমি শুনি এমন কথা তখন আদিকে বারণ করে দিলাম। ওসব কথা যাতে আইমিকে না বলে। নিজে ও বারণ করলাম। যাতে ওই মেয়েটির ত্রিসীমানায় ও তাকে আমি না দেখি। সে যাতে মেয়েটির দিকে আর ফিরে না তাকায়। মেয়েটির কথা কাউকে না বলে। বৃষ্টি নামটা উচ্চারণ না করে।
এভাবেই ধীরে ধীরে আদি ছুটে গেল আমার কাছ থেকে। আমার সাথে না ভালোভাবে কথা বলে। না আমার পাশে বসে খায়। না চোখ তুলে আমার দিকে তাকায়। শান্ত,হাসিখুশি আদি খিটখিটে মেজাজের হয়ে যায়। আমায় দেখলেই বলে, তোমার সাথে কিসের কথা মা? তুমিই বারণ করেছ তোমার সাথে যাতে কোনো কথা না বলি। বলব না কোনো কথা।
আমি চাপিয়ে দিই আদির মাথায় একটাই কথা। আইমিই তার জীবনসঙ্গী। অন্যকেউ হতেই পারেনা। তবে সে কথা আমি আদিকে ইনিয়েবিনিয়ে বুঝিয়ে বলি যে,
‘ বৃষ্টি অন্যকাউকে ভালোবাসে। ওর বিয়ে ও ঠিক আছে অন্যকোথাও। ভালোলাগাকে প্রশয় দিতে নেই আদি। বৃষ্টি কখনোই তোমার হওয়ার নই আদি। ও অন্যকাউকে ভালোবাসে। তোমাকে নয়।
এই ” অন্য কাউকে ভালোবাসে ” কথাটা বোধহয় আদি সহ্য করতে পারেনি। সারাদিন ফিরল না বাড়ি। আইমির ফোন তুলল না।
সেদিন আমি আদিকে আর খুঁজে পায়নি। তার টলমলে চোখ দেখার সুযোগ ও হয়নি আমার। মাঝরাতে উল্টাপাল্টা গাড়ি চালিয়ে গাড়ি ফেলে দিল খাদে। নিজেকে ক্ষতবিক্ষত করল আমার আর বৃষ্টির উপর অভিমান করে। আমি হয়ত সেদিন বুঝে ও বুঝে উঠতে পারিনি আদির ভালোবাসার পরিমাণের চাইতে ও অভিমানের পাল্লাটা ভারী। আমার উপর নয়, মিষ্টির উপর অভিমান করে সে সেদিন মরতে বসেছিল। সেদিনের রক্তাত্ত চেহারা আমার আজ ও মনে পড়ে। আমি ভেবেছিলাম আদি সুস্থ হয়ে উঠলে আদিকে আমি বুঝিয়ে বলব। আদি ঠিক বুঝবে। সেদিন আমি ঠিকই ধরতে পারলাম অ্যাক্সিডেন্টের কারণ।
তারপর ও না বুঝার ভান ধরে বললাম,আদি জীবন কারো জন্য থেমে থাকেনা।
কিন্তু আদি চোখ মেলে তাকাতে না তাকাতেই ডক্টর জানাল আদির সব স্মৃতি ডেমেজ হয়ে গেছে। হেমোক্যাম্পাস ক্ষতবিক্ষত হয়ে গেছে। কোনোমতে প্রাণে বেঁচে গেছে। আদি চিনতে পারল না আমায়। চিনতে পারল না তোমায়। আইমিকে ও। যাকে সে বৃষ্টির উপর অভিমান করে বলে বেড়ায়, ‘ ভালোবাসি, ভালোবাসি। সবাইকে ভুলে গেল।
পাগলের মতো আচরণ করতে লাগল। জিনিস ভাংচুর করতে লাগল। আদরের ছেলের এমন পরিণতি আমি কখনো চাইনি। আমি তার ভালো চেয়েছিলাম। কিন্তু আমার চাওয়া তার জন্য কাল হয়ে দাঁড়াল। আমি দিশেহারা হয়ে পড়লাম। মানসিক হাসপাতালে রাখার জন্য আমার মন সায় দিচ্ছিল না। আমি সিদ্ধান্ত নিলাম আদিকে বাড়িতে রেখে ট্রিটমেন্ট করব। নার্স ও রেখেছ তুমি। কিন্তু কিচ্ছু হলোনা। আদি কারো সাথে সহজ হতে পারল না। ডক্টর শুধু একটি কথাই বলেছিল, আদিকে শান্ত রাখতে হবে। মানসিক শান্তি দরকার তার। হাসিখুশি রাখতে হবে। খাবারের সাথে সাথে ঠিকমতো ঔষধ খাওয়াতে হবে। তার দেখাশোনা করার জন্য এমন কাউকে রাখা দরকার যার সাথে আদি সহজে মিশবে,হেসেখেলে দুটো কথা বলবে,যার কথা সে অক্ষরে অক্ষরে পালন করবে। শুধু আদি তার কথা মানবে তা নয়। আমার এমন কাউকে প্রয়োজন ছিল,যে নিজের সবটা দিয়ে আদিকে আগলে রাখবে।
আদির যত্ন করবে। আদিকে হাসিখুশিতে রাখবে।
আমি আর কাউকেই দেখলাম না। যে আদির এতবড় অ্যাক্সিডেন্টের জন্য দায়ী আমি তাকেই আদির দেখাশোনা করার জন্য রাখার কথা ভাবলাম। তোমাকে তার কথা জানালাম। কিন্তু সত্যিটা বলিনি। তুমি জিজ্ঞেস করেছিলে মেয়েটার খোঁজ আমি কোথায় পেয়েছিলাম। আমি সেদিন তোমাকে মিথ্যে বলেছি।
সিদ্ধান্ত তো নিলাম। কিন্তু বাঁধ সাধল ইশার মামা মামি। একটা পাগল ছেলের দেখাশোনা করার জন্য তার ভাগনীকে তারা টাকার বিনিময়ে ও দিতে রাজী নয়। তারা মুখের উপর বলে দিল,
‘ আমাদের ভাগনী নার্স না। যে একটা পাগল ছেলের দেখাশোনা করবে।
আমি হতাশ হলাম। আমাকে দেখেছিল ইশা অমন মুখে বেরিয়ে আসতে। সেদিন তার নিষ্পাপ চেহারাটা দেখে আমার গা জ্বালা করছিল। সবকিছুর জন্য দায়ী তো এই মেয়েটা। সে কি জানে?
বেশ কয়েকদিন পর আদি আর ও অসুস্থ হয়ে পড়ল। আমি আবার ও দিশেহারা হয়ে পড়লাম। আইমি বলল, আদিকে কোনোমতে স্বাভাবিক করে তুলতে হবে । তারপর ডক্টর মেহতার কাছে।
কিন্তু আদিকে স্বাভাবিক করতে তো কাউকে লাগবেই। যখন তুমি আমি কোনো পথ খুঁজে পেলাম না। তখন ইশা নিজেই রাজী হলো আদির কাছে আসতে। তবে দাসী হয়ে নয়। স্ত্রী হয়ে। যদি ও বিয়ের কথাটা আমি বলেছি তোমার অজান্তে। আমি ভয়ে ভয়ে ও ছিলাম। যদি ইশার সাথে ও দুর্ব্যবহার করে আদি। সেটা দেখার জন্য আমি আদির রুমে ছুড়ে ফেললাম ইশার একটি ছবির ফ্রেম। দু তিনদিন পার হলে ও আদি সেটা তুলল না। দেখল না। আমি আর ও চিন্তিত হয়ে পড়লাম। প্রায় তার দুইদিন পর যখন আমি আদির রুমে উঁকি দিলাম তখন দেখলাম আদি সেই ছবিটা সুন্দর করে সাজিয়ে রেখেছে তার ওয়ারড্রবের উপর। আমি আর ও নিশ্চিত হওয়ার জন্য আইমির ছবি ছুড়ে দিই তার রুমে। আদি সেটা ও তুলে নিল ঠিক। কিন্তু রাখল ইশার ছবিটার নিচে। তখন আমি নিশ্চিত হয়ে গেলাম। ইশাই পারবে আদিকে সুস্থ করতে। আদি ইশার সাথে দুর্ব্যবহার করবে না। ঠিক তাই হলো। আদি সহজ হয়ে গেল ইশার সাথে। এবার ইশা তার সামনে বৃষ্টিরূপে নয়, এল মিষ্টি রূপে। আদির আচরণ দেখে মনে হলো কত যুগ যুগ ধরে যেন চেনে আদি ইশাকে। আমি খুশি হলাম ইশার প্রতি। মেনে ও নিলাম তাকে। মনে মনে ছেলের বউয়ের আসনে বসালাম। কিন্তু দেখালাম না।
যতটুকু মায়া জন্মেছিল তার প্রতি সেটা ও উদাও হলো আইমিকে দেখে। আদির প্রতি আইমির ভালোবাসা দেখে। আইমির সাথে যে অন্যায় হচ্ছে। কিন্তু তারপর ও আমি কিচ্ছু করলাম না। আমার কাছে আদির সুস্থ হয়ে উঠাই একমাত্র লক্ষ্য ছিল। কিন্তু যা করলে সব তুমি।
মিথ্যে দলিল বানিয়ে ইশাকে আদির জীবন থেকে সরানোর ব্যবস্থা করলে। যার শাস্তি আমি পাচ্ছি আজ। ইশার সাথে অন্যায় হয়েছে। খুব অন্যায় হয়েছে। আমরা অন্ধ হয়ে গিয়েছি আজিজ। পরীর জন্য আমাদের আজ চোখ খুলেছে। কিন্তু এখন ও আমরা ভেবে যাচ্ছি। বিয়েটা আইমির সাথেই হোক। ওই বাচ্চা মেয়েটার সাথে ও তো অন্যায় হচ্ছে। আদিশার সাথে। আইমির সাথে ও তো। মেয়েটি কি জানে আদির একটি ফুটফুটে বাচ্চা মেয়ে আছে।
আজিজ চৌধুরী মাথায় হাত চেপে বসে থাকে। ইশা মেয়েটি তার মানে আগে ও ছিল আদির জীবনে? আর এই মেয়েটিই আদির অ্যাক্সিডেন্টের কারণ। কিন্তু এখন আদি কোথায়? আদি কি চাইছে? আর এখন কি সব ঠিক হওয়ার কোনো উপায় আছে? বিয়ের দিন যে ঘনিয়ে এল।
____________________
বহু প্রতীক্ষা পর আদির নাম্বার থেকে ফোন এল আলিয়ার ফোনে। কান্নার জন্য কথা বলতে পারল না আলিয়া। আদির যে একটি রাজকন্যা আছে সেই সুসংবাদটা ও দিতে পারল না। আদি কিছু শুনল না। কিছু বলতে দিলনা। আলিয়া ডেকে উঠল
‘ আদি আব্বা আমার তুমি ফিরে এসো। তোমার সাথে অনেক কথা আছে।
আদি তার মুখের জবাব দিল।
‘ আদি মারা গেছে। মৃত। দুবছর আগেই আদি মারা গেছে। এখন শুধু মাথার ভেতর একটা কথা গেঁথে নিন মিসেস চৌধুরী আপনাদের ছোট ছেলে বলতে কিচ্ছু নেই। কিচ্ছু ছিল না।
আর আজিজ চৌধুরীই বা কোথায়? আজিজ চৌধুরীর সাথে অনেক বোঝাপড়ার বাকি আছে আমার। সামান্যতম লজ্জা থাকলে আমার সামনে এসে দাঁড়াতে বলবেন।
আলিয়া চুপচাপ শোনে আদির কথা। যদি জানতে পারে আদিশা নিখোঁজ তাহলে কি করবে আদি? আদিশা এখন কোথায়?
_____________
নীরার হাতে চুড়িগুলো দেখে ইশা খিলখিল করে হাসল। বলল,
‘ চুড়িগুলোতে ও ভাগ বসিয়ে দিয়েছিস। রিপদা কার জন্য না কার জন্য কিনল। পরীকে দেখে বোধহয় চুড়ি ছুড়ে ফেলে দিয়েছিল।
নীরা ভেংচি কাটল। বলল,
‘ সর। আমার জিনিস আমি নিলাম। কার জন্য কেন কিনবে। আমার জন্যই কিনেছে। নিজে কথা বলে বলে নিজেই দাঁত বের করে হাসল নীরা। ইশা চিমটি দিল তাকে। বলল,
‘ আমার ভাই একটা রাজপুত্র। তার জন্য রাজকন্যা চাই।
নীরা হাসতে হাসতে গড়াগড়ি খেল। বলল,
‘ রাজকন্যা তোর সামনেই দাঁড়িয়ে আছে। দেখতে পাচ্ছিস না?
এডভোকেট সাহেবকে এবার প্রেমের জালে আটকে ফেলার পালা। যে কাঠখোট্টা তোর ভাই। আর কি ভাব তার হুহহহহ!
ইশা হাসল।
হাসতে হাসতে চোখ গেল কলেজ গেইটের ওপাশে। ইশা আচমকা দৌড় লাগাল। আদি ভেবেছে ইশা এখনো বের হয়নি। তাই হাতের কব্জিতে থাকা ঘড়ির দিকে তাকাতে তাকাতে অপেক্ষা করতে লাগল কলেজ গেইটের সামনে । মাত্রই গাড়ি থেকে নামল। সরাসরি খান বাড়িতে যেতে তার অস্বস্তি। অনেক কথা জমে আছে মেয়েটির সাথে।
ইশার তাড়া দেখে নীরা অবাক হলো। বলল, এভাবে দৌড়াচ্ছিস কেন ইশু?
ইশা লম্বা লম্বা পা ফেলে এগোতে এগোতে বলল,
‘ রিকশা খোঁজ।
নীরা এদিকওদিক তাকাল। বলল, তুই দাঁড়া না?
ইশা থামল। নীরাকে বলল, তুই দাঁড়িয়ে থাক। রিকশায় চলে যাস। আমি যাই।
ইশা দাঁড়াল না । জোরে হাঁটল, দৌড়াল ও। পিছু তাকিয়ে তাকিয়ে দৌড়াল। আদি এখনো এদিকওদিক তাকাচ্ছে। ইশা মুখ ঢেকে নিল ওড়না দিয়ে। ভয় নিয়ে দৌড়াতে দৌড়াতে ভয়ংকর বিপদের সম্মুখীন হলো।
একটি গাড়ির সামনাসামনি গিয়ে পড়ল। ছিটকে পড়ল দূরে। ভাগ্যিস তাড়াতাড়ি সরে গিয়েছে। ড্রাইভার বেরিয়ে এল সে গাড়ি থেকে। বলল, চোখে দেখতে পান না?
গাড়ির ভেতরের লোকটি গাড়ির কাচ নামাল। ড্রাইভারকে থামতে বলল।
ইশা হাঁপাতে হাঁপাতে বলল,
‘ দুঃখিত, আমি দেখতে পায়নি।
গাড়িটার উপর হাতের ভর দিয়ে সে দম নিল। এদিকওদিক তাকাল।
গাড়ির ভেতরের লোকটি পানির বোতল বের করে দিল। ইশা লোকটিকে না দেখে পানি খেয়ে নিল ঢকঢক করে।
থ্যাংকস বলার জন্য তাকাতেই চক্ষু তার ছানাবড়া। চোখদুটো আপনাআপনি বড় হলো। মুখ ফসকে আপনাআপনি বের হলো একটি শব্দ, স্যার আপনি?
গাড়ির ভেতরের লোকটি হাসল তার কথায়। বেশ কিছুক্ষণ চেয়ে রইল ইশার দিকে। তারপর ধীরেসুস্থে বলল,
‘ পাগল ডাক্তারকে সুস্থ করা মেয়েটি আজ কেন পাগলের মতো দৌড়াচ্ছে??
ইশা চুপ থাকল। চোখে টলমলে জল নিয়ে হাসল। কিচ্ছু বলল না।
লোকটি বলল,
‘ কেমন আছ মিষ্টি? ডক্টর ভালো আছে তোমার? আর তোমার বাচ্চাটি? কেমন আছে প্রিন্সেস?
চলবে,,