#ভালোবাসিবো_খুব_যতনে
#Ayrah_Rahman
#part_15 ( জমিদার বাড়ির রহস্য ২)
ওই পদ ধ্বনি টা হঠাৎ ই থেমে গেলো , কান পেতে রইলাম কিছু শোনার জন্য কিন্তু ? কিন্তু নাহ্ আর শোনা যাচ্ছে না ,
এই জঙ্গলের ভেতরে একটা পরিত্যক্ত জমিদার বাড়িতে কে ই বা আসতে পারে , কি তার উদ্দেশ্য ? ভুত বলতে যে কিছু ই নেই সেটা তো জানি তবে এ কেমন ভুত বেশধারী মানব!
ইলু হাত পা নাড়াচাড়া করছে হয়তো মশা কামড়াচ্ছে ! বেশ ভালো ই মশা আছে এখানে , এখন মনে হচ্ছে কয়েক টা মশার কয়েল নিয়ে আসলে ভালো হলো ,
ধুর ছাতা আগে জানলে তো বিছানা পত্র সব ই নিয়ে আসতাম , কে জানত বাপু এখানে এভাবে আটকে যাবো?
মশা গুলো ও যাচ্ছে তাই , হয়তো মনে মনে বলছে ,
” আইজকা পাইছি চান্দু , জম্মের খাওন খাইয়া লমু , তোদের রক্ত দিয়াই আইজকা গোসল করমু, হু হা হা ”
এসব আজগুবি কথা চিন্তা করতে করতে ই আড় চোখে ইলুর দিকে তাকালাম ইলু এক হাতের তালু দিয়ে আরেক হাত ঘষতে ঘষতে উঠে বসলো ,
” কি হলো উঠলি কেন ? ”
আমার কথা শুনে ইলু মুখ টা কাঁদো কাঁদো বানিয়ে বলল ,
” তো উঠবো না তো কি ? ভুতের ডিনার না হলেও মশার জীবনের খাবার এক সাথে ই সাবার করতাছে , জন্মের খাবার খাইতাছে ”
আমি ভ্রু কুচকে বললাম ,
” ভুত ? ”
ও আমার দিকে আড় চোখে তাকিয়ে বলল ,
” হু সাথে পেত্নী ও ”
” আচ্ছা ইলু এমন ও তো হতে পারে ভুতেরা এই মশাদের ছদ্মবেশে এসে রক্ত খাচ্ছে! আসলে কি বলতো তোর শরীরে এমনি তেই তো রক্ত কম , ভুতের ওই ইয়া বড় বড় দাঁত দিয়ে রক্ত চুষতে কষ্ট হবে তাই হয়তো মশার ছদ্মবেশ ধরেছে
কিছু টা থেমে নির্লিপ্ত ভঙ্গিতে বললাম ,
হতেই পারে ”
বলেই আড়চোখে ইলুর দিকে তাকালাম , বেচারি একের পর এক ঢোক গিলছে আর এদিক ওদিক তাকিয়ে বারবার আমার দিকে চাপছে ,
ওর সাথে মজা করতে করতে ই হঠাৎ আবার সেই আওয়াজ কানে আসলো , এবার বোধ হয় ঘুঙুরের আওয়াজ টা বেশি আসছে বলে মনে হচ্ছে ,
আমি চুপ করে আওয়াজ শুনছি , ইলু ও এতক্ষণে শুনতে পেয়েছে , বেচারীর চেহারা রক্ত শুন্য হয়ে গেছে ভয়ে আমি ওর হাতের উপর আমার হাত রেখে মিথ্যা আশ্বাস দিয়ে বললাম ,
” ইলু তুই ভয় পাস না , এটা কোন মানুষের কাজ , আমি যখন সব বিষয়ে, সব দিক দেখছিলাম এমন একটা আর্টিক্যাল ও পড়েছি যাতে লেখা এই জমিদার বাড়ি টা অনেকে ভোগ করার জন্য মানুষের মাঝে মিথ্যা কথা ছড়িয়েছে যে এখানে ভুত আছে , আসলে এখানে কিছু ই নেই , যাস্ট এটা একটা বাড়ি নাথিং ইল’স ”
আমার কথা শুনে ইলুর মনে হয় ভয় টা কিছু টা কমছে , আসলে এসব আমি কখনোই শুনিনি , এছাড়া ওকে ভয় থেকে বের করার আর কোন উপায় ও ছিলো না তবে এটা যে একেবারে বানোয়াট তা কিন্তু না , হতেও পারে তদন্ত শেষে এটাই ঠিক হলো ”
” এই পূর্ণ এটা কিসের আওয়াজ রে ? ”
” মনে তো হচ্ছে ঘুঙুর এর ”
” আমাদের ভয় দেখানোর জন্য এটা বাজাচ্ছে না কি রে ? ”
ইলুর কথা টা যে একেবারে ফেলনা তা কিন্তু না , আমারো কেন জানি মনে হচ্ছে গভীর এক রহস্য জরিয়ে আছে এই জমিদার বাড়ি ঘিরে ,
” হুম হয়তো , চল তো! ”
আমার কথা শুনে ইলু আঁতকে উঠে বলল ,
” কোথায় ? ”
” আওয়াজের উৎস বের করতে ”
” কি দরকার বল ! ”
” তুই যাবি কি না বল , না হলে আমি একাই যাবো ”
বলেই মোম হাতে নিয়ে উঠে দাড়ালাম , আমার সাথে সাথে ইলু ও উঠে দাড়ালো ,
আমি প্যান্টের পকেটে দিয়াশলাই গুজে নিলাম , আমি হাঁটছি পিছনে পিছনে ইলু ও বের হলো , ঘর থেকে বের হয়ে মনে হচ্ছে আওয়াজ টা দোতলায় থেকে আসছে , আমি কাঠের সিড়ি বেয়ে উপরে উঠে গেলাম , পিছনে পিছনে ইলু ও , ধীর পায়ে হাটতে হাটতে বারান্দা দিয়ে এগুতে লাগলাম ,
এক এক করে ঘরের সামনে গিয়ে দাড়ায় , যেন আওয়াজ টা আসছে কি না দেখার জন্য , ধীরে ধীরে আমি আর ইলু দোতলায় একেবারে শেষ মাথায় যে বদ্ধ রুম টা সেখানে থমকে দাঁড়ালাম ,
হ্যা , আওয়াজ টা এই ঘর থেকে ই আসছে ,
আমি আলতো হাতে রুমটার দরজার হাতলে ধরলাম,
রুম টার দরজায় ধাক্কা দিলাম খোলার জন্য কিন্তু আশ্চর্য জনক ভাবে এটা খুলল না , বেশ কয়েকবার ট্রায় করলাম, নাহ্ খুলছে না , হঠাৎ মনে হলো তাল মারা না তো , হাতলের দিকে তাকিয়ে দেখলাম , বাইরে দিয়ে তালা মারা ও না তাহলে ?
তাহলে ভেতরে কি কেউ আছে ? অবাক করা হলেও সত্যি , এই দরজা টা অন্য সকল দরজা থেকে ভিন্ন , ডিজাইন টা ও অন্য রকম তাই কৌতুহল টা ও বেশি ,
বেশ কয়েক বার দরজার হাতল ধরে এদিক সেদিক করলাম কিছু তেই খুলছেনা ,
ব্যর্থ হয়ে ফিরে আসতে গিয়ে ও থমকে দাড়ালাম, ঘাড় ঘুরিয়ে দরজার দিকে তাকালাম , আমার থমকে যাওয়া দেখে ইলু ভ্রু কুচকে তাকালো আমার দিকে মোম টা ওর হাতে দিলাম ,
সূক্ষ্ম পর্যবেক্ষন করলাম দরজা টায় দু হাত দিয়ে নেড়ে চেড়ে দেখলাম , খানিকটা এগিয়ে গিয়ে পুনরায় দরজার হাতল ধরে খানিকটা উপর নিচ করে ভেতরের দিকে চাপ দিলাম ,
দরজা খুলে গেলো,
আমি বেশ খুশি হয়ে দরজা ধাক্কা দিলাম , দরজা খুলে গেলো ,
আমি হাতে মোম নিয়ে ভেতরে ঢুকলাম ,
বাট ভেতরে যা দেখলাম, সেটা কখনো কল্পনায় ও আশা করি নি ,
মোমের আবছা আলোই ভেতরে অনেক গুলো মানব কঙ্কাল ঝুলোনো দেখতে পেলাম , ঝুলোনো বললে ভুল হবে , একেকটা একেক এঙ্গেল এ রাখা , কিছু কঙ্কাল মনে হচ্ছে বসে আছে কিছু আবার মেঝেতে ছড়িয়ে আছে , পায়ের হাড্ডি এক জায়গায় তো খুলি আরেক জায়গায় , একটা কঙ্কাল দেখে বেশ অবাক হলাম , কঙ্কাল টা এমন ভাবে রেখেছে যেন তার দু হাত দিয়ে মুখ ঢেকে ঘরের এক কেনে জড়োসড়ো হয়ে বসে আছে এমন মনে হচ্ছে , ঘরে আবার একটা বিছানা আর একটা টেবিল ও রাখা , কিন্তু বেশ আশ্চর্য জনক হলো টেবিলে বই তাক তাক করে সাজানো , আমি ধীর পায়ে টেবিলের দিকে এগুলাম , এক টা বই হাতে নিতে ই দেখি ইংরেজি সাহিত্যের বই ,
বাব বাহ্ আজকাল ভুতে রাও সাহিত্য চর্চা করে নাকি?
বাকি ঘর গুলোর মতো এটা তে বিন্দু পরিমাণ ধুলো নেই , মনে হচ্ছে প্রতিদিন ই এই রুম টা কেউ পরিষ্কার করে , কারো আসা যাওয়া প্রতিনিয়ত ই হচ্ছে
কিন্তু প্রশ্ন হচ্ছে এখানে থাকে কে ? প্রায় কয়েক যুগ ধরে তো কেউ এখানে আসেই না , তাহলে ? বেশ অনেক টা রহস্য আছে তাহলে!
কিছু ক্ষন আগে যে পায়ের শব্দ টা শুনলাম এগুলো ও বা কিসের ,
তবে খটকার বিষয় হলো , বারান্দা দিয়ে আসার সময় মনে হচ্ছিলো আমার আশে পাশে ই কেউ আছে , কারো চলা ফেরা আছে , আর আমার মন কখনো মিথ্যা যুক্তি দেখায় না , তাহলে কি আমরা ছাড়াও কেউ আছে এখানে ? , ঠান্ডা বাতাস আর দমকা হাওয়ায় নাকে কেমন চেনা গন্ধ লাগছিলো , হ্যা পারফিউম এর গন্ধ , কিন্তু কথা তো এটা না কথা হলো আজকাল ভুতেরা ও কি পারফিউম ইউজ করে নাকি ? হতেও পারে আধুনিক যুগের আধুনিক ভুততত ,
কিছু একটা মনে হতেই আমি ঘাড় ঘুরিয়ে ইলুর দিকে তাকালাম ,
ও ভ্রু কুচকে তাকিয়ে আছে কঙ্কাল গুলোর দিকে ,
এগুলো কি আদৌ তেও কোন মানুষের তো ?
চলবে …
[ কেমন হয়েছে জানাবেন আর গঠন গত মন্তব্য করবেন
হ্যাপি রিডিং ]