#ভালোবাসিবো_খুব_যতনে
#Ayrah_Rahman
#part_21
_________________
” আমাদের কি পূর্ণা কে এভাবে জঙ্গলে ফেলে আসা উচিত হয়েছে ? ”
ইলমির কথায় রুদ্র ঘাড় ঘুরিয়ে ইলুর দিকে তাকালো ,
আবাদত তারা এখন বাসের মধ্যে আছে , মিনিট ১৫ হয়েছে তারা বাসে উঠেছে কিন্তু ইলমি এই প্রশ্ন মনে হয় ৩০ বার অলরেডি করে ফেলেছে ,
রুদ্র ভ্রু কুচকে বলল ,
” পূর্ণা নিরাপদেই আছে আমার ভাইয়ের সাথে আছে , তোমাকে এত চিন্তা করতে হবে না , ইডিয়ট ! ”
ইলমির শরীর টা খুব একটা ভালো লাগছে না তাই সে আর কথা না বাড়িয়ে বাসের জানালায় মাথা এলিয়ে দেয় ,
বাসের ঝাঁকি তে বারবার ওর মাথা গিয়ে জানালায় লাগছে , তাই রুদ্র ইলমির মাথা টা নিজের কাঁধের উপর রেখে শান্ত দৃষ্টিতে বাহিরে তাকালো ,
মেয়েটা বড্ড বাচ্চা স্বভাবের , ভেতরে কোন জটিলতা নেই , সাংবাদিক হয়েও এতো সহজ সরল কিভাবে হতে পারে সেটা রুদ্র ভেবে পায় না ,
_________________
” চাচা ওও ফরিদ চাচা , দেইখা যাইন , জঙ্গলার ভিত্তে তে একডা মাইয়া আর একটা পোলা আইতাছে , ওও চাচা ”
জঙ্গলের শেষ মাথায় একটা গ্রাম শুরু , এটা আমাদের শহর থেকে বেশ অনেক টা দুর , জঙ্গলে র মধ্যে দিয়ে আমায় কোলে নিয়ে হাটতে হাটতে জঙ্গলের শেষ কিনারে চলে এসেছেন মন্ত্রী সাহেব , সামনেই একটা লোকালয় দেখতে পেয়ে হাসি ফুটলো আমার মুখে , প্রায় দেড় ঘন্টা যাবত কোলে নিয়ে হাঁটছেন , উনার কি ক্লান্ত লাগছে না? আমি যে এত টা ও শুকনো তা কিন্তু না ওজন তো মাশা আল্লাহ অনেক , কিন্ত উনাকে দেখে মনে হচ্ছে না সে এত টা পথ কাউকে কোলে নিয়ে এসেছে , এসব ভাবতে ভাবতে ই হঠাৎ কারো চিৎকার শুনে আমি চমকে উঠি ,
একটা বছর ২২ কি ২৩ এর ছেলে আমাদের দিকে তাকিয়ে কাউকে ডাকছে , ফজরের আজান সেই কখন ই হয়ে গেছে , নামাজ শেষ করে সবাই বাড়ি ফিরছে ঠিক সেই সময়েই ছেলেটা এমন হাক ডাক শুরু করলো ,
উনি হাটতে হাটতে ছেলে টার সামনে গিয়ে দাড়ালো , আমাকে নামিয়ে দিয়ে আড় মোড়া ভেঙে পকেটে থেকে মাস্ক টা বের করে মুখে পড়ে নিলো , এক পলক আশে পাশে তাকিয়ে দেখে জায়গা টা একটা মসজিদের পাশেই ,
এতো ক্ষনে ছেলে টার ডাক শুনে অনেক মানুষ জড়ো হয়ে গেছে , আমি মুখ কুচকে দাঁড়িয়ে রইলাম ,
” কি হে ছোকড়া , জঙ্গলার ভিত্তে তোমরা দুজন ছেড়া ছেড়ি কিতা করো ? ”
আমি খেয়াল করলাম , একজন মাঝ বয়সী লোক মুখে আধা পাকা দাড়ি , দাড়ি তে হাত বুলাতে বুলাতে কথাটা বলল ,
” আসলে চাচা , আমরা জঙ্গলের মধ্যে পথ হারিয়ে ফেলেছিলাম ”
” হয় হয় বুঝি বুঝি , দেইখা তো মনে অইতাছে শহুরে পোলা মাইয়া , কেন আ*কামের লাইগা জঙ্গলার ভিত্তে গেছো বুঝি না মনে করছো ! শহুরে পোলাপান রে আমাগো ভালা কইরাই চিনা আছে ”
লোকটার কথা শুনে আমার আর বোঝা বাকি রইলো না উনি কি মিন করে কথা বলছে , আমি কিছু বলার জন্য মুখ খুলব তার আগেই তাহরিম তালুকদার আমার হাত চেপে ধরলেন , ইশারায় ই বোঝালেন কোন কথা না বলতে কারণ এখন আমি কথা বললে জিনিস টা উল্টে যেতে পারে ,
” দেখুন চাচা আপনি কিন্তু না জেনে অপবাদ দিচ্ছেন , আমরা একটা কাজে এসেছিলাম আর পথ হারিয়ে ফেলি জঙ্গলে ”
” তা না হয় বুঝলাম , তাইলে লগে এই মাইয়া কেডা? ”
উনি এক পলক আমার দিকে তাকিয়ে বলল ,
” ও আমার স্ত্রী ”
আমি চোখ বড়ো বড়ো করে তার দিকে তাকিয়ে আছি , বলে কি এই লোকে! আমি আবার কখন তাও বউ হলাম!
” কেমতে বিশ্বাস করুম , তোমরা যে জামাই বউ ? ”
” বিশ্বাস অবিশ্বাস আপনাদের ব্যপার সেখানে আমি কি বলতে পারি , যা হোক আমাদের সময় খুব ই স্বল্প , এখন যেতে দেন !”
বলেই উনি আমার হাত ধরে চলে আসতে নিলে ,
ভীরের মধ্যে থেকে একজন বয়স্ক লোক বলে উঠলো,
” খারাও পোলা , তোমাগো কথা আমরা বিশ্বাস করছি, হেতি তোমার বউ তাইলে বউ রে তো আবার বিয়া করুন ওই যা , তোমাগো আমরা হগ্গলে মিল্লা
ফের বিয়া দিমু ”
চারপাশে কাউকে খুঁজতে খুঁজতে হাফ ছাড়লো ,
” মতি ,, মতি রে কই গেলি ! যা তো ইমাম সাব আর কাজি রে ডাইক্কা লইয়া ”
লোকটার কথা শুনে আমি বেশ ঘাবড়ে গেলাম , উনার হাত খামচে ধরে দাঁড়িয়ে রইলাম ,
প্রায় মিনিট পাচেক পরে মতি নামের ছেলেটা একজন হুজুর আর মাঝ বয়সী এক কাজি নিয়ে আসলো ,
আমি ঘাড় ঘুরিয়ে তাহরিমের দিকে তাকালাম , উনি নির্বিকার দাঁড়িয়ে আছে ,
মসজিদ থেকে কিছু চেয়ার নিয়ে আসা হলো৷, একটায় উনাকে বসতে দেওয়া হলো , আরেকটায় আমাকে সামনে কাজি আর হুজুর ,
আমি মাথা নিচে করে বসে আছি , বলার ই বা কি আছে! এক পলক তাহরিমের দিকে তাকালাম , লোকটার মুখে কোন প্রকার এক্সপ্রেসন দেখা যাচ্ছে না , ওরা যে কাজ টা করছে ওটাতে আদৌও কি তার মত আছে ? উনি কেন ই বা মেনে নেবেন ? একটা এতিম মেয়ে কে নিজের বউ হিসেবে মানার কোন প্রশ্ন ই আসে না ! নেহাত চাপে পড়ে বিপাকে পড়ে বিয়ে টা করছে ,
কাজি সাহেব রেজিস্ট্রার খাতায় নাম তুলছে ,
আমার দিকে তাকিয়ে বলল ,
” মা তোমার নাম কি ? ”
” পূর্ণা , মিফতাহুল পূর্ণা ”
” তোমার বাবার নাম ? ”
কাজি সাহেব এর কথা শুনে আমি খানিকটা চিন্তা করে বললাম ,
” আমি এতিম , মা বাবা নেই , এতিম খানায় মানুষ ”
” ওহহ, আচ্ছা ঠিক আছে ”
এবার কাজি উনার নাম পরিচয় নিলেন ,
সব কিছু লেখা শেষে উনি খাতাটা উনার দিকে এগিয়ে দিয়ে বলল ,
” না ও বাবা এই খান টায় সইন করো “..
উনি এক পলক আমার দিকে তাকিয়ে , সাইন করে দিলেন , এবার কাজি সাহেব রেজিস্ট্রার খাতা টা আমার দিকে এগিয়ে দিলেন সাইন করে দেওয়ার জন্য ,
আমি খাতা আর কলম নিয়ে সাইন করতে গিয়েও থেমে গেলাম , এটা তো আমার জীবনের সবচেয়ে গুরুত্ব পূর্ণ সিদ্ধান্ত , আজকের দিন টা তো অন্য রকম হলেও পারতো , আমার এক পাশে মা আরেক পাশে বাবার থাকার কথা ছিলো , কিন্তু আজ ,? আজ তো কেউ নেই হাতে হাত রেখে ভরসা দেওয়ার মতো ,
এসব চিন্তা করার মাঝে দিয়েই হঠাৎ হাতে কারো স্পর্শ টের পেলাম , চোখ তুলে হাতের মালিক এর দিকে তাকালাম , উনি আমার হাতে হাত রেখে ভরসা দিচ্ছেন , আমার চোখ জলে টইটম্বুর তবুও গড়িয়ে পড়তে দিলাম না , এক হাত দিয়ে চোখ টা আলতো হাতে মুছে সাইন টা করে দিলাম ,
এবার মৌলভী সাহেব বিয়ে পড়নো শুরু করলো , প্রথমে উনাকে কবুল বলতে বলল , উনি ও সুন্দর ভাবে কবুল বলে দিল ,
তারপর ঘাড় ঘুরিয়ে আমার দিকে তাকিয়ে বলল সব কথা শেষ করে বলল ,
” বল মা কবুল ”
আমি খানিকক্ষণ চুপ থেকে ই বললাম ,
” কবুল ”
বিয়ের কার্যক্রম শেষ , সবাই আলহামদুলিল্লাহ বলে শুকরিয়া আদায় করলো , আমি ঠিক একই ভাবে পাথরের মতো বসে আছি , চারপাশে র কিছু ই যেন কানে আসছে না ,
ভেতর থেকে শুধু একটা কথা ই শোনা যাচ্ছে ,
” পূর্ণ তোর বিয়ে হয়ে গেছে , তুই এখন কারো অর্ধাঙ্গিনী , কারো বিয়ে করা বউ তুই , তোর ও এখন আপন মানুষ হয়েছে , তুই বিবাহিত পূর্ণ ,
নাউ ইউ আর মেরিড পূর্ণ ”
চলবে …
[ হেই.. কেমন হয়েছে জানাবেন , আর তাহরিম আর পূর্ণার বিয়ে টা হুট করে হয়ে গেলো , দাওয়াত রইলো, সবাই এসে বিয়ে খেয়ে যাবেন আরর গিফট আনতে একদম ভুলবেন না 😁]