#ভালেবাসিবো_খুব_যতনে
#Ayrah_Rahman
#part_47
_________________
দেখতে দেখতে প্রেগন্যান্সির আট মাস পেরিয়ে ন’মাসে পড়লো সপ্তাহ খানিক হলো আর সপ্তাহ খানিক পর ই ডেলিভারির ডেট দেওয়া হয়েছে , শরীর টা আগের তুলনায় অনেক ভারী লাগে, হাটতে চলতে বেশ সমস্যা ও হয়, পানি তে পা দুটো ফুলে বেলুন হয়ে গেছে, আগের থেকে অনেক মোটাও হয়েছি, আয়নার সামনে দাড়ালে নিজেকে বেলুন বেলুন ফিল হয় সাথে তো মুড সুইং আছেই।
আমার আর মন্ত্রী সাহেব এর রুম দোতলা থেকে নিচ তলায় সিফট হয়েছে। এ কয়েক মাসে আমি মন্ত্রী সাহেব এর বেশ কিছু অদ্ভুত প্রশ্নের ও সম্মুখীন হলাম।
এই তো কয়েকদিন হলো,
উনি রাতে ঘুমাবার আগে বিছানা পরিষ্কার করছিলেন আর আমি সোফায় বসে উনার কাজ পর্যবেক্ষন করছিলাম। হঠাৎ উনি আমার কাছে এসে গা ঘেঁষে বসলেন,
” বউজাআআআনন”
এমন লম্বা সম্বোধনে আমি ভ্রু কুঁচকে উনার দিকে তাকালাম,
” কিছু বলবেন? ”
উনি আরেকটু গা ঘেঁষে বসে বলল,
” আচ্ছা বউজান, একটা বাচ্চা হতে দশ মাস টাইম কেন লাগবে বলো? তাহলে আমি আমার স্বপ্ন পূরন করবো কিভাবে? ”
” মানেহ এটা কেমন প্রশ্ন? ”
“শোনো একটা বাচ্চা হতে সময় লাগে দশ মাস তাহলে আরেকটা হতে মিনিমাম দশ মাস এভাবে যদি এগারো টা বাচ্চা হয় তাহলে তো এগারো বছর লাগবে, মানে একজন বড় হতে হতে আরেকজন বুড়ো হয়ে যাবে, তাহলে আমি আমার ফুটবল টিম কিভাবে বানাবো? ”
আমি বিস্ফোরণ দৃষ্টিতে উনার দিকে তাকালাম, মানেহ কি! এগারো টা বাচ্চা! একটা পালে কে? আবার এগারো টা!
আমি দাঁতে দাঁত চেপে বললাম,
” এক কাজ করেন এগারো টা লাগবে তো আপনার? ছয়টা আমার পেটে থেকে বের করবো আর বাকি পাঁচ টা আপনার পেটে দিয়ে দিবো কেমন? ”
উনি খানিকটা নড়েচড়ে উঠে কিছু টা ভেবে বললেন,
” হুমম কথা টা মন্দ বলো নি, তার চেয়ে ভালো হবে জমজ জমজ হলে, তিন বছরেই হয়ে যাবে! এগারো বছর লাগলো না সময় ও বেঁচে গেলো! ”
আমি ঠাস করে নিজের হাত দিয়ে কপালে একটা চাপড় দিয়ে বিরবির করে বললাম,
” আমার কপাল, সবই আমার কপাল, এই পাগলের পাল্লায় পড়ে আমি জানি কোন দিন সেন্টি মেন্টাল হয়ে যায়! ”
আমি সোফার কিনারায় ধরে ধীরে ধীরে উঠে দাড়ালাম, আমাকে দাঁড়াতে দেখে উনি তৎক্ষনাৎ উঠে আমাকে ধরে বিছানায় বসালেন।
আমি ধীরে ধীরে সুয়ে পড়লাম, এই পাগলের সাথে আরেকটু কথা বললে আমি সত্যি ই পাগল হয়ে যাবো।
উনি আমার পাশে সুয়ে আমার দিকে খানিকটা ঝুঁকে এসে বললেন,
” বউ ঘুমিয়ে গেছো? ”
আমি কোন উত্তর দিলাম না।
” ও বউ, কথা বলো না! ”
আমি চোখ খুলে বললাম,
” কি সমস্যা? এমন করতাছেন কেন? সারাদিন জ্বালিয়ে খায়েশ মিটে নাই? আবার রাতে জ্বালাচ্ছেন! এখন তো পার্টি অফিসেও যান না সারাদিন বাসায় বসে টই টই করে ঘুরেন আর আমাকে জ্বালান, একবার খালি আমার বাচ্চা টা বের হোক, তারপর জ্বালানি কাকে বলে আর কত প্রকার আপনাকে বুঝাবো আপনার বাচ্চা আপনার কাছে দিয়ে আমি আরাম করবো তখন বুঝবেন কত ধানে কত চাল! ”
উনি আমার হাত ধরে আঙুল নিয়ে নাড়াচাড়া করতে করতে ইনোসেন্ট ফেস করে বলল,
” বউ জান তুমি কি রাগ করছো? ”
” আমার কিন্তু প্রচন্ড রাগ হচ্ছে তাহরিম তালুকদার, আপনি সরেন আমি ঘুমাবো ”
উনি আমার মাথায় হাত বুলিয়ে দিতে দিতে বলল,
” ঠিক আছে ঠিক আছে, ঘুমাও আমি তোমার মাথায় হাত বুলিয়ে দিচ্ছি ”
উনি হাত বুলিয়ে দিতে দিতে কখন যে ঘুমিয়ে গেলাম বুঝতে ই পারি নি।
হঠাৎ মাঝ রাতে পায়ে কারো স্পর্শ পেয়ে ঘুম টা ছুটে গেলো, মাথা উচিয়ে দেখলাম, আবছা আলোতে উনি আমার পায়ের কাছে বসে কি যেন করছে।
একটা সাদা টি শার্ট আর সাদা প্যান্ট পরা, চুল গুলো এলোমেলো হয়ে আছে দেখতে পুরো বাচ্চাদের মতো লাগছে। ঝুঁকে কিছু একটা করছে।
” এইই কি করছেন আপনি এতো রাতে? ”
উনি খানিকটা মাথা উচিয়ে বললেন,
” পায়ে গরম সরিষার তেল মেজে দিচ্ছি, এ সময় ত্বক অনেক শুষ্ক আর রুক্ষ থাকে সরিষার তেল টা দিলে স্কিন আর ড্রাই হয় না, স্কিন ভালো থাকে। ”
আমি কপাল কুঁচকে বললাম,
” এই মাঝ রাতে এই অকাজ করতে ইচ্ছে হয়েছে আপনার? আসেন ঘুমান তো, রাখুন এটা ”
” তুমি ঘুমাও, আমার কাজ শেষ হলে আমিই আসবো ”
আমি দীর্ঘ শ্বাস ফেলে চোখ বন্ধ করলাম, উনার এই ছোট ছোট কাজ, ছোট্ট ছোট্ট কেয়ার গুলো আমার ভীষণ ভালো লাগে। ক’জন ই বা বোঝে এসব!
এই পর্যন্ত তো অনেক বার চেক আপ করিয়েছি ডাক্তারের কাছে কিংবা ডাক্তার বাড়িতে এসেও চেক আপ করেছে কিন্তু কোন বার ই উনি আমাকে জিজ্ঞেস করতে দেন নি যে বাচ্চা ছেলে নাকি মেয়ে। উনার মতে আল্লাহ যা খুশি হয়ে দিয়েছে তাই আলহামদুলিল্লাহ। এটা না হয় সারপ্রাইজ ই থাকুক।
উনি সারাক্ষণ বাসায় ই থাকে, কিছু কাজ থাকলে সেটা বাসায় ই করে আর বাইরের গুলো আপাতত কুশন ই সামলাচ্ছে আর কুশনের সাথে তানজিম ও মাঝে মাঝে থাকছে।
বাবা ব্যবসার কাজে অস্ট্রেলিয়ায় আছেন আর মায়ের বোন অসুস্থ হওয়াই কাল বিকেলেই গ্রামে গেছে আজ বা কাল চলে আসবে। আমাকে এই অবস্থায় রেখে মায়ের ও যেতে সায় ছিলো না। তবে বাড়িতে মন্ত্রী সাহেব আর কাজের কিছু মানুষ থাকায় উনি গেলেন।
আমি তখন নিজের ঘরে বসে বাদাম খাচ্ছিলাম আর মন্ত্রী সাহেব ড্রয়িং রুমে সোফায় বসে ল্যাপটপে কাজ করছিলো। তানজিম হয়তো মাত্র ই এসেছে বাইরে থেকে, ড্রয়িং রুমে থেকে ওর গলার আওয়াজ শোনা যাচ্ছে।
হঠাৎ পেটে চিনচিন ব্যথার উপস্থিতি টের পেলাম।
প্রথমে গুরুত্ব না দিলেও ধীরে ধীরে যেন ব্যাথা টা বেড়েই চলল। সহ্য করতে পারছি না, পেটে হাত দিয়ে নিচে বসে পড়লাম। গলা দিয়েও স্বর বের হচ্ছে না।
হাতের কাছে গ্লাস ছিলো যা ধাক্কা দিয়ে নিচে ফেলে দিতেই গ্লাস পড়ার আওয়াজে মন্ত্রী সাহেব আর তানজিম দৌড়ে আসলো।
উনি দরজা তেই থমকে গেলো, ঠিক কি করবে বুঝে উঠতে পারছে না, অনুভূতি শূন্য হয়ে দাঁড়িয়ে আছে। এদিকে আমি ব্যথায় ছটফট করছি। তানজিম দৌড়ে মন্ত্রী সাহেব এর কাছে গিয়ে বলল,
” ভাইয়া তাড়াতাড়ি ভাবি কে নিয়ে গাড়ি তে নিয়ে আসো, হসপিটালে নিয়ে যেতে হবে ”
এতোক্ষণে যেন উনার হুস ফিরলো,
দৌড়ে এসে আমাকে কোলে তুলে নিয়ে গাড়ি তে বসালেন,
আমার মাথা উনার কোলের উপরে, ব্যাথায় আমার জান যায় যায় অবস্থা।
উনি আমার হাতে হাত ঘষে গরম রাখার চেষ্টা করছে, কাতর কন্ঠে বারবার বলছে,
” বউ একটু কষ্ট করো, আরেকটু ধৈর্য ধরো এক্ষুনি পৌঁছে যাবো, একটু ”
” আমি আর পারছি না মন্ত্রী সাহেব! আমি হয়তো আর বাঁচবো না ”
” হুসসস আজাইরা কথা বলবে না বউ, তোমাকে ছাড়া আমি অসহায়, এমন কথা মুখেও আনবে না ”
আমি কাঁদতে কাঁদতে বললাম,
” আমার কিছু হয়ে গেলে আপনি আমার বাচ্চা কে আগলে রাখবেন মন্ত্রী সাহেব, আমার বাচ্চা কে মায়ের কাছে দিয়ে আপনি একটা সুন্দর মেয়ে দেখে বিয়ে করবেন কেমন? কিন্তু আমার একটা অনুরোধ রাখবেন! ”
তাহরিমের শুধু রাগ ই উঠছে কিন্তু কি করবে বেচারা, বউ কে এই মুহূর্তে কিছু বলতে ও পারছে না।
দাঁতে দাঁত চেপে বলল,
” হে বলো কি অনুরোধ! ”
আমার কাঁদতে কাঁদতে হিচ’কি উঠে গেলো,
ফুফাতে ফুফাতে বললাম,
” আপনি যাকে ইচ্ছে তাকেই বিয়ে করেন আমার কোন আপত্তি নেই তবে ( উনার বুকের দিকে ইশারা করে) এই জায়গাটা শুধু আমার, এখানে মাথা রাখার অধিকার আমার, এটা কাউকে দিয়েন না প্লিজ! ”
সামনে থেকে তানজিম বেশ শব্দ করে ই হেসো উঠলো,
লুকিং গ্লাসে তাকিয়ে বলল,
” ভাই, ভাবি জান তো সেই হিংসুক রে, তোর বউ তো এমনই হওয়া উচিত ”
তাহরিম দাঁতে দাঁত চেপে তানজিম কে উদ্দেশ্য করে বলল,
” খুব হাসি পাচ্ছে না তোর? বের করছি হাসি তোর, আমার বাচ্চার সব গুলা ডায়াপার তোরে দিয়ে পরিষ্কার করামু দাড়া ”
তানজিমের মুখ টা চুপসে গেলো এক নিমিষেই,
” এই না না ভাই, আমি আর কিছু বলব না ”
বলেই তানজিম চুপ করে গেলো।
প্রায় দশ মিনিটের মাথায় তারা হসপিটালে পৌছালো, তানজিম আগেই ফোন করে ওটি রেডি রাখতে বলেছিলো, যার জন্য ওরা হসপিটালে পৌঁছাতে ই আমাকে নিয়ে ওটিতে ঢুকে গেলো।
ওটির দরজা বন্ধ হয়ে গেলো।
তাহরিম বাইরে মাথা নিচু করে বসে আছে, তানজিম ওর পাশেই বসে আছে। মিরাকে ফোন করা হয়েছে আর কিছু ক্ষনের মাঝে ই চলে আসবে।
মেহেরিন শিকদার ও রওনা দিয়ে দিয়েছে।
” ভাইয়া টেনশন করিস না, দেখবি মা আর বাচ্চা দুজন ই সুস্থ ”
চলবে….
[ আজকের পর্বটা কেমন হ’য়েছে জানাবেন
হ্যাপি রিডিং.. ]