#প্রনয়ের_দহন
#Nusrat_Jahan_Bristy
#পর্ব_৩৮
ইশা একটা ঝিলের ধারে বসে আছে। নজর তার ঝিলের ও পাড়ে এক ঝাক সাদা বুনো হাঁসের দিকে। বুনো হাঁসগুলা একবার পানিতে নামছে তো আবার উঠছে। ভালোই উপভোগ করছে এই মুহূর্তটা ইশা। এমন সময় রিফাত হাতে করে দুটো চকলেটের পেকেট নিয়ে এসে ইশার পাশে বসে। কিন্তু তাতেও ইশার কোনো হেলদোল নেই। রিফাত ইশার চোখের দৃষ্টি নিবদ্ধ করে নিজেও বুনো হাঁস গুলার দিকে তাকিয়ে বলে।
–আপসেট।
রিফাতের কন্ঠস্বর শুনে ইশা নিজের ভাবনার জগত থেকে ফিরে এসে মাথা নাড়িয়ে না করে। রিফাত দু হাত দ্বারা মাথা ভর্তি চুল গুলা পিছনে টেলে দিয়ে বলে।
–তাহলে এমন চুপচাপ হয়ে বসে আছো কেন?
ইশা দীর্ঘ নিঃশ্বাস ছেড়ে বলে।
–বোনেরা ভাইদের রিলেশনে সাহায্য করলেও ভাইয়েরা কেন বোনদের রিলেশনে সাহায্য করে না! উল্টে তারা আরো বোনের রিলেশনটা মেনে নেয়।
রিফাত ইশার কথাটা শুনে নিচের দিকে তাকিয়ে ঠোঁট কামড়ে ধরে। কিছুক্ষণ নিরবতা পালন করে বলে।
–তুমি কি আমাদের রিলেশনটা নিয়ে টে’ন’শ’নে আছো।
–হুম।
রিফাত ইশার হাত দুটো নিজের হাত দ্বারা আবদ্ধ করে বলে।
–উপরওয়ালা যদি চায় আমরা এক হবো তাহলে নিশ্চয়ই এক হবো কিন্তু…
ইশা মুখটা কালো করে বলে।
–কিন্তু কি?
রিফাত মুচকি হাসি দিয়ে বলে।
–কিচ্ছু না।
ইশা ছোট বাচ্চাদের মতো ঠোঁট ফুলিয়ে বলে।
–মেনে নিবে তো সকলে আমাদের এই সম্পর্কটা!
রিফাত তো নিজেই জানে ভবিষ্যতে তাদের জন্য কি অপেক্ষা করছে। ইশান যদি ওদের এই সম্পর্কের কথাটা জানতে পারে তাহলে কিভাবে রিয়েক্ট করবে ভেবেই রিফাতের হৃদয়টা মুছরে উঠে। আর সবাই যদি প্রশ্ন করে বন্ধু হয়ে বন্ধুর ছোট বোনের সাথে কি করে এমন একটা সম্পর্কে জড়ালে তাহলে কি উত্তর দিবে রিফাত। তারও বা কি করার ছিলো ভালোবাসা তো আর বলে কয়ে আসে না। কিভাবে কি হয়ে গেলো নিজেই বুঝতে পারে নি। রিফাতকে চিন্তিত থাকতে দেখে ইশা বলে।
–কি হলো কথা বলছেন না কেন?
রিফাত মুচকি হেসে ইশার কপালে পড়ে থাকা চুলে গুলা সরিয়ে মাথাটা যত্ন সহকারে নিজের বা বুকে রেখে ইশার মাথায় হাত বুলাতে বুলাতে বলে।
–ভবিষ্যতে যা হবে তা ভালোর জন্যই হবে। তাই এতো দুশ্চিন্তা করে এই ছোট মাথায় এতো প্রেসার ক্রিয়েট না করলেও চলবে আপনার।
ইশা মুচকি হেসে চোখ বন্ধ করে মনে মনে বলে।
–জানি না আমার ভাগ্যে আপনি আছেন কি না। কিন্তু বিশ্বাস করুন আপনাকে ছাড়া আমি সত্যি থাকতে পারবো না। যতো কষ্ট হোক মা, বাবা আর ভাইয়াদের আমি ঠিকেই রাজি করবোই করাবো।
_______
তীর ইশানের পাশ কাটিয়ে চলে যেতে নিলেই ইশান তীরের ডান হাত চেপে ধরে গম্ভীর কন্ঠে বলে।
–এবার একটু বেশি বাড়াবাড়ি হয়ে যাচ্ছে না তীর।
তীর কোনো কথা বলে এক ঝটকায় ইশানের কাছ থেকে নিজের হাতটা ছাড়িয়ে বলে।
–এখানে বাড়াবাড়ির কিচ্ছু হয় নি আমাকে বাড়ি যেতে হবে। আমার ভালো লাগছে না।
এই কথাটা বলেই তীর হাঁটা ধরে। এতক্ষণ ইশান নিজের ক্রো’ধ’টা সংযোত করে রাখতে পারলেও আর পারছে না তীরের এমন আচরণ করা দেখে। এক প্রকার রে’গে চিৎকার করে বলে।
–তীর! স্টপ রাইট নাও। এখানেই থেমে যা আর এক পাও এগোবি না। যদি এগোস তাহলে আমার থেকে খা’রা’প কেউ আর হবে না।
ইশানের কথা শুনে তীরের পা জোড়া থমকে যায়। ভ’য়ে গলা শুকিয়ে আসছে। হৃদস্পন্দনদের গতি স্বাভাবিকের চেয়ে বেশি লাফাছে। ইশান যে ভ’য়ং’ক’র ভাবে রে’গে গেছে সেটা বুঝতে আর বাকি নেই। এখন নিশ্চয়ই রাগে তীরকে মাথার উপরে তুলে একটা আ’ছা’র মারবে। তীরের ভাবনার মাঝেই ইশান হুট করে পেছন থেকে এসে নিজের কোমড় বাঁকিয়ে এক হাত তীরের পিঠে আরেক হাত গোড়ালির নিচে রেখে তীরকে পাঁজাকোলে তুলে নেয়। ইশানের এমন করাতে তীর হ’ত’ভ’ম্ব হয়ে তাকিয়ে থাকে ইশানের মুখ পানে। ইশান চুপচাপ তীরকে ছাউনের নিচে এনে ব্রেঞ্চে বসিয়ে দেয়। তীর উঠতে নিলে ইশান হুং’কা’র দিয়ে বলে উঠে।
–একদম না! একদম উঠার চেষ্টা করবি না। আগে আমার কথা শুনবি তারপর যা হওয়ার হবে… বুঝা গেছে আমার কথা।
ইশান শেষের কথাটা অনেকটা চিৎকার করে বলে যার কারণে তীর ভ’য়ে কেঁপে উঠে অশ্রুসিক্ত নয়নে ইশানের পানে তাকায়। ইশান তীরের দিক থেকে নজর ফিরিয়ে নিয়ে নিজের কোমড়ে দু হাত রেখে চারপাশটা নজর বুলিয়ে রা’গ’টা কন্ট্রোল করার চেষ্টা করে। এতক্ষণ তীরকে ভালো করে বুঝিয়েছে এমনি কি সরিও বলেছে কিন্তু তীর যেন জোঁকের মতো লম্বাই হচ্ছে। তাই এক প্রকার বাধ্য হয়েই ইশান তীরের সাথে এমন রূ’ঢ় আচরণ করছে। তীরের ফুফানোর আওয়াজ ইশানের কর্ণ গোচর হতেই তড়িৎ বেগে তীরের পাশে বসে তীরের মুখমন্ডল নিজের দু হাত দ্বারা অবদ্ধ করে নিজের বুড়ো আঙুল দ্বারা চোখের পানি মুজিয়ে বলে।
–প্লিজ জান! এবার অন্তত চোখের পানি না ঝড়ানোর চেষ্টা কর। আমি তো তোর ক্ষমা চাইছি এরপর থেকে তোকে আমি ইগনোর করবো না প্রমিজ।
তীর কান্না মিশ্রিত কন্ঠে মাথা তুলে বলে।
–সত্যি বলছেন তো আপনি।
ইশান মুচকি হেসে মাথা নাঁড়িয়ে বলে।
–হুম! একে বারে তিন সত্যি আমি আমার তীরকে আর কখনোই ক’ষ্ট দিবো না।
–মনে থাকে যেন কথাটা।
–থাকবে ম্যাডাম অক্ষরে অক্ষরে মনে থাকবে। এখন আর কোনো কান্নাকাটি নয়। দেখ কান্না করে চোখের কাজল ছঁড়িয়ে কেমন পেত্নী সেঁজে গেছিস।
তীর চোখের নিচে নিজের আঙুল দিয়ে ঘসতে ঘসতে বলে।
–বেশি ছঁড়িয়ে গেছে কাজল।
–আমি ঠিক করে দিছি দাঁড়া।
ইশান পকেট থেকে রুমাল বের করে তীরের চোখের আশেপাশে লেগে থাকা কাজলের দাগ মুজে দিয়ে বলে।
–এবার ঠিক আছে।
তীর ইশানের কথা শুনে মুচকি হাসি দেয়। তীরের ঠোঁটের কোণে হাসি দেখে ইশানের বুকের মাঝ থেকে যেন বড় একটা পাথরের বোঝা কমলো। ইশান তপ্ত নিঃশ্বাস ছেড়ে তীরের দিকে পলকহীন ভাবে তাকিয়ে আছে। মেয়েটা কান্না করে চোখ দুটো ফুলিয়ে ফেলেছে একেবারে। দেখতে খুব আদুরে লাগছে। ইচ্ছে করছে গভীর ভাবে ছুঁয়ে দিতে। কিন্তু সেটা তো ইশান এখন করতে পারবে না তার জন্য তাকে আরো অপেক্ষা করতে হবে। কিন্তু কবে এই অপেক্ষার প্রহর শেষ হবে ইশানের। নাকি এই অপেক্ষার প্রহর সারা জীবনেও শেষ হবে না।
ইশানের এমন গভীর ভাবে তাকিয়ে থাকতে দেখে তীর লজ্জায় মাথা নুইয়ে ফেলে। মনের মাঝে অজানা ভ’য় কাজ করছে। এখানে তো ওরা দু জন ছাড়া আর কেউ নেই। ইশান যদি আবেগের দ্বারা ভুলবশত কোনো কাজ করে বসে তাহলে। কিন্তু তীরের সম্পূর্ণ বিশ্বাস আছে ইশানের উপর তাই ভ’য়’টা একটু হলেও কম লাগছে।
ইশানের হাত বাড়ানো দেখে তীর ঝাপ্টে আঁখিদ্বয় বন্ধ করে নেয়। ইশান তীরের এমন করা দেখে হেসে তীরের কপালে পড়ে থাকা আগোছালো চুলগুলা সরিয়ে দিতে দিতে হবে।
–রাগ কমেছে। যদি রাগ কমে থাকে তাহলে কেকটা কাটি।
তীর ইশানের দিকে তাকিয়ে মাথা নাড়িয়ে সায় জানায়। তীরের সায়পেয়ে ইশান তীরের হাত ধরে টেবিলের সামনে এনে দাঁড় করিয়ে বলে।
–মোমটা জ্বালিয়ে দেই দাঁড়া।
ইশান মোমটা জ্বালিয়ে দিয়ে বলে।
–এবার কেকটা কাট।
তীর হাতে ছু’রি’টা নিয়ে যেই মোমবাতিটা ফু দিয়ে নিভাতে যাবে ওমনি ইশান চিৎকার করে বলে।
–মোম নিভাবি না।
তীর ইশানের দিকে অবাক দৃষ্টিতে তাকিয়ে বলে।
–কেন?
–তোর জীবনের আলো সবসময় জ্বলে থাকুক। কখন যেন না নিভে তাই মোম বাতিটা না নিভিয়েই কেকটা কাট।
তীর ইশানকে যতো দেখছে ততই মুগ্ধ হচ্ছে। এমন একটা সুন্দর পার্সোনালিটির মানুষ কি আদোই তার যোগ্য। তীরকে এভাবে তাকিয়ে থাকতে দেখে ইশান দু ভ্রু নাচিয়ে বুঝায় কি হয়েছে? তীর ইশানের ইশারা বুঝে মাথায় নাড়িয়ে না বুঝিয়ে কেক কাটায় মনযোগ দেয়। তীর কেক কাটার পরপরেই ইশান এক টুকরো কেক নিয়ে তীরকে খাইয়ে দেয়। তীরও ইশানকে কেক খাইয়ে দেয়। কেক খাওয়ানোর সময় ইশানের ঠোঁটের সাইডে ক্রিম লেগে যায়। তা দেখে তীর ইশারা করে কিন্তু ইশান তীরের ইশারা না বুঝে বলে।
–কি হয়েছে?
–আপনার ঠোঁটের সাইডে ক্রিম লেগে আছে।
ইশান তীরের কথা শুনে টিস্যু পেপার নিয়ে ক্রিম মুজতে নিলে কিছু একটা ভেবে থেমে যায়। ইশানকে থেমে যেতে থেকে তীর বলে।
–কি হলো থেমে গেলেন কেন?
ইশান হঠাৎ করেই কোমড় বেঁকিয়ে তীরের মুখ বরাবর নিজের মুখটা এগিয়ে আনে। আচমকা ইশানকে এমন করতে দেখে তীর ভ’য়ে দু কদম পিছিয়ে গিয়ে নিচু কন্ঠে বলে।
–কি হলো?
ইশান নির্লিপ্ত কন্ঠে বলে।
–মুজে দে।
তীর ঢোক গিলে বলে।
–আমি।
–হুম।
–কিন্তু আমি কেন? এটা তো আপনেই….
–উমমম! কোনো কথা নয় আই এম ওয়েটিং।
বলেই আরেকটু এগিয়ে আনে মুখটা তীরের দিকে। তীর পড়লো এক ঝামেলাতে। ও কিভাবে ইশানের ঠোঁটে হাত রাখবে? মুজানোর সিনটা কল্পনা করতে সারা গায়ে কা’টা দিয়ে উঠে তীরের। কিন্তু ইশান যেহেতু এক বার অর্ডার দিয়ে দিয়েছে তার মানে কাজটা করতেই হবে। না হলে এখান থেকে এক পাও নড়তে পারবে না। তীর কা’পা’কা’পা হাতে টিস্যু পেপারটা হাত নিয়ে ধীরে ধীরে নিজের হাত ইশানের ঠোঁটের দিকে এগিয়ে নেয়। শ্বাস প্রশ্বাসের গতি ঘন হয়ে আসছে তীরের। মনে হচ্ছে এই বুঝি ইশান শুনে নেবে ওর নিঃশ্বাসের গতি। তীরের এমন বে’হা’ল অবস্থা দেখে ইশান মিটিমিটি হাসছে। এই একটা সামান্য কাজ করতে বলেছে তার জন্যই এই মেয়ের ম’রো ম’রো অবস্থা। এর থেকে বেশি কিছু আবদার করলে তো অ’জ্ঞা’নে’ই হয় যাবে। তীর চোখ বন্ধ করে বড় একটা নিঃশ্বাস টেনে ইশানের ঠোঁটের সাইডে ক্রিমটা মুজিয়ে হাতটা নিয়ে আসতে নিলেই ইশান খপ করে হাত ধরে ফেলে। তীর অবাক চোখে ইশানের দিকে তাকায়। ইশান তীরকে আরো অবাক করার জন্য বাঁকা হেসে তীরকে হেচকা টান মেরে নিজের কাছে এনে বলে।
–চল ডান্স করি।
তীর এই কথা শুনে ইশানের দিকে বড় বড় চোখে তাকিয়ে বলে।
–আপনি ডান্স করতে পারেন।
–কি মনে হয় তোর?
–না মানে আপনি…
–দাঁড়া একটা গান প্লে করি।
বলেই ইশান পকেট থেক ফোন বের করে একটা গান প্লে করে।
“ঠিক এমন এভাবে
তুই থেকে যা স্বভাবে
আমি বুঝেছি ক্ষতি নেই
আর তুই ছাড়া গতি নেই
ছুঁয়ে দে আঙুল
ফুঁটে যাবে ফুল, ভিজে যাবে গা
কথা দেয়া থাক
গেলে যাবি চোখের বাইরে না”
“ছুঁয়ে দে আঙুল
ফুঁটে যাবে ফুল, ভিজে যাবে গা
কথা দেয়া থাক
গেলে যাবি চোখের বাইরে না
তোরই মতো কোনও একটা কেউ
কথা দিয়ে যায়, ছায়া হয়ে যায়
তোরই মতো কোনও একটা ঢেউ
ভাসিয়ে আমায় দূরে নিয়ে যায়”
গানের তালে তালে ইশান আর তীর ডান্স করছে। ইশানের প্রত্যেকটা ছোঁয়া তীর গভীর ভাবে অনুভব করছে। এক জন আরেক জনের দিকে গভীর ভাবে তাকিয়ে আছে। মনে হচ্ছে যেন অন্য এক জগতে দু’জন হারিয়ে যাচ্ছে। ইশানের গরম নিঃশ্বাস গুলা আছরে পড়ছে তীরের মুখে। তাতে যেন তীরের ছোট হৃদয়টা ক্ষণে ক্ষণে কেঁ’পে উঠছে। ইশান তীরকে ঘুড়িয়ে নেয়। তীরের পিট গিয়ে টেকে ইশানের চাওড়া বুকে। ইশান সুযোগ পেয়ে তীরের চুলের ঘ্রাণ নিতে মেতে উঠে। এতো দিনের ইচ্ছেটা আজ পূরণ হলো যেন ইশানের।
#চলবে______
আজকের পার্টটা তেমন ভালো হয় নি। তার জন্য সরি।