মন_মোহনায়_ফাগুন_হাওয়া #লেখিকা: #নুরুন্নাহার_তিথী #পর্ব_১৭

0
329

#মন_মোহনায়_ফাগুন_হাওয়া
#লেখিকা: #নুরুন্নাহার_তিথী
#পর্ব_১৭
মীরা হালকা সাজে তৈরি। শেহজাদ ও ড: আকবর রেহমানও কিছুক্ষণ আগে এসে পৌঁছেছেন। মীরার মামা, চাচারাও এসেছেন। ফ্রিশা একটু আগেই ঘুম থেকে উঠে গেছে। এখন সে মৃদুলা, নিহান ও সিয়ামের সাথে এখন খেলছে। এদিকে মীরা নিজের ঘরে দরজা এঁটে একাকি বসে আছে। সে ভীষণ সিদ্ধান্তহীনতায় ভুগছে। এখনো তো ফ্রিশার সাথে কথা হয়নি। ওর ইচ্ছে, সম্মতি বুঝে উঠতে পারেনি। যদি ফ্রিশা এতে খুশি না হয় তবে? যদি ফ্রিশা রাজি না হয় সে কী করবে? ভেবে ভেবেই অস্থির হলো। তখনি দরজায় খটখট আওয়াজ হলে উঠে দরজা খুলে সে। বাহিরে তার ছোটো ভাবি দাঁড়ানো। নিধি রম্যস্বরে বলল,

“চলো ননদী। তোমার ডাক পড়েছে।”

মীরার ওষ্ঠকোণে অজান্তেই হাসি ছড়ায়। মীরা রুম থেকে সবে বেরিয়েছে আর হুট করে ফ্রিশা এসে মীরার কোমড় পেঁচিয়ে ধরে। মীরা থমকায়। মাথায় হাত রাখে বাচ্চা মেয়েটার। এই মেয়েটার দ্বিতীয় মা হতে চলেছে সে? পারবে তো? যদি অজান্তেই কষ্ট দিয়ে ফেলে? ভয় হচ্ছে তার। হঠাৎ তার হৃদয় অজানা ভয়ে ব্যকুল হলো।
ফ্রিশা মাথা হালকা উঁচু করে খিলখিল ধ্বনিতে শুধায়,

“তুমি আমার মামনি হবে ফেইরি আন্টি?”

“মামনি?”

“ইয়াহ মামনি। দাদুমনি বলেছিল তুমি আমাকে মায়ের মতো ভালোবাসবে। তুমি আমার মা হবে। আমার সাথে থাকবে। দাদুমনিও আমাকে ভালোবাসে। তাই দাদুমনিকে আমি দাদুমনি ডাকি। তোমাকেও মামনি ডাকব।”

ফ্রিশা কী বুঝে এটা বলেছে মীরা জানেনা। তবে এতে মীরার একটুও খারাপ লাগলো না। সে মুচকি হেসে বলে,
“হুম। আমি তোমার মামনি হবো, বাচ্চা। আর ইউ হ্যাপি?”

“ইয়েস। অ্যাই অ্যাম সো হ্যাপি, মামনি।”

মীরার মন শান্ত হলো। প্রশান্তি স্থান দখল করলো ব্যকুল অস্থিরতার। নিধি মুচকি হেসে শুধায়,
“তো ফ্রিশার মামনি? এবার যাওয়া যাক?”

মীরা নিরব হাসলো। অতঃপর ফ্রিশার হাত ধরে পা বাড়ালো।

ড্রয়িংরুমে সবাই কথা বলছে কিন্তু একমাত্র শেহজাদ মাথা নিচু করে বসে আছে। এইনগেজমেন্টের তারিখটা হঠাৎ করে এগিয়ে আনার মূল কারণ সে নিজেও জানেনা। রেস্টুরেন্টে মীরার সামনে বসেই তার মনে হয়েছে এবং সে ফটাফট সেটা করেও ফেলেছে। কিন্তু এখন এর কারণ সে আবিষ্কার করতে পারছে না। তবে ফ্রিশার প্রফুল্লিত মুখশ্রী দেখে মনে হয়েছে, যা হচ্ছে আর যাই হোক খারাপ হচ্ছে না। সত্য তো এটাই যে সে বিয়েটা ফ্রিশার জন্যই করছে। তার জীবনে ভালোবাসা কখোনোই বিয়ের আগে তো আসেনি।

নিধি মীরাকে এনে শেহজাদের পাশে বসালো। মীরা আবার ফ্রিশাকে নিজেদের মাঝে বসিয়েছে। ড: আকবর রেহমান বলেন,

“সবাই এখানে রয়েছে। তাহলে রিং সিরেমনি শুরু করা যাক?”

রফিক তালুকদার হালকা হেসে সম্মতি দিলেন। মিসেস শাহিদা রিং বক্সটা শেহজাদের দিকে বাড়িয়ে দিয়ে বললেন,

“শেহজাদ, এই নাও আংটি। মীরার অনামিকায় পড়িয়ে দাও।”

শেহজাদ, মিসেস শাহিদার হাত থেকে আংটির বক্সটা নিলো। আংটির দিকে কয়েক সেকেন্ড তাকাতেই পাশে বসা ফ্রিশা মীরার হাত টেনে এগিয়ে এনে বলল,

“বাবা, নাও পড়াও।”

মীরা শেহজাদের দিকে তাকালো তদ্রুপ শেহজাদও। ফের দ্রুত দৃষ্টি নামিয়ে মীরার অনামিকায় আংটিটা পড়িয়ে দিলো। ফ্রিশা আবার বলে,
“ফেইরি আন্টি, সরি সরি। মামনি, তুমিও বাবাকে রিং পড়াও।”

শেহজাদ মেয়ের মুখে ‘মামনি’ ডাক শুনে খানিক হকচকাল। মেয়ে তার এখনি মীরাকে মায়ের দার্জা দিয়ে বসেছে। মীরাকে রিং নিধি এগিয়ে দিলো। ফ্রিশা এবার তার বাবার হাত এগিয়ে আনলো। অতঃপর মীরা নত মস্তকেই আংটি পড়িয়ে দিলো। সবাই খুব খুশি। আলহামদুলিল্লাহ পড়ছে সকলে।

———

ছাদে দাঁড়িয়ে আছে মীরা ও শেহজাদ। আঁধারে ঢাকা সুবিশাল অম্বরে ক্ষণে ক্ষণে বিদ্যুৎ খেলে যাচ্ছে। বাতাসেও কেমন শীতলতা। ঝড় হওয়ার আশঙ্কা আছে। নিরবতার ক্ষীণ সুতা কে*টে শেহজাদ প্রশ্ন করে,

“আর ইউ হ্যাপি?”

মীরার অবিচল দৃষ্টি সম্মুখে। সে অনড়ভাবে জবাব দেয়,
“ইয়াহ। এটলিস্ট ঠকে যাওয়ার সম্ভাবনা নেই।”

শেহজাদ বিস্মিত হলো। শুধালো,
“ঠকে যাওয়া মানে?”

“মানে হচ্ছে, জীবনে ঠকে যাওয়ার থেকে কষ্ট আর কিছুতে নেই।”

“এজন্যই তুমি রাদিবকে বলেছিলে, তাকে বিয়ে করার থেকে বিপত্নীক কাউকে বিয়ে করা উত্তম?”

মীরা এবার ঘাড় ঘুরালো। অন্ধকারে শেহজাদকে দেখা না গেলেও সে ভ্রুঁ কুঁচকে চেয়ে বলল,
“রাদিব আপনাকে এগুলোও বলেছে?”

“ইয়াহ।”

মীরা ঘন নিঃশ্বাস ছেড়ে বলল,
“কথাটা আমি মুখ ফসকে বলে ফেলেছিলাম। অবশ্য রাদিবের সাথে বিয়ে ঠিক হওয়ার আগেই আকবর স্যার আমাকে আপনাকে বিয়ে করা ও ফ্রিশার মা হওয়ার প্রস্তাব দিয়েছিল। আমি তখন দোটানায় ছিলাম। তাই সময় যেভাবে যা চাইছে সেভাবেই চলছিলাম। দেন আমি রিয়েলাইজ করলাম, আপনি অন্তত আমাকে ধোঁকা দিবেন না! সেই সাথে আমি একটা বাচ্চার মা হতে পারব। একটা বাচ্চাকে আগলে রাখতে পারব।”

“এত বিশ্বাস?”

হাসলো মীরা। ফের বলল,
“বিশ্বাস জিনিসটা না মন থেকে আসে।”

শেহজাদও হালকা হাসলো।
________

সময়ের পরিক্রমায় আরও এক সপ্তাহ চলে গেছে। সামনের শুক্রবার বিয়ের ডেইট ধার্য করা হয়েছে। সামনের সপ্তাহের জন্য মীরা ভার্সিটি থেকে তিন দিনের ছুটি নিয়েছে। তাই ওই তিন দিনের ক্লাস গুলো আগেই এক্সট্রা ক্লাস হিসেবে করিয়ে নিচ্ছে। এই সপ্তাহটা তার ভীষণ ব্যস্ততার মধ্যেই যাবে। স্টুডেন্টদের কুইজও নিতে হবে। মীরার কলিগ কনক ম্যাম বলেন,

“মীরা, বিয়ের আগে এত প্রেশার যে নিচ্ছো, বিয়েতে সিক হয়ে যাবে তো। আমি তো শুনলাম তুমি বৃহস্পতিবার তোমার টিউমারিক ফাংশনের দিনও ক্লাস নিবে!”

মীরা পিসি থেকে নজর হটিয়ে কনক ম্যামের দিকে একবার তাকায়। তারপর হালকা হেসে আবার কাজ করতে থাকে। মীরার আরেক কলিগ সাবিহাও সেখানে উপস্থিত। সাবিহা বলে,
“এই সময় রিল্যাক্স করতে হয়। তাহলে স্কিণে গ্লো আসে। বেশি বেশি ঘুমাতে হয়। আর তুমি কী-না এক্সট্রা প্রেশার নিচ্ছো!”

মীরা এবার পিসির সামনে থেকে চেয়ার ঘুরিয়ে বলে,
“বৃহস্পতিবার তো আমার মাত্র একটা ক্লাস। তাও সেটা সাড়ে বারোটার দিকে। ওটাকে এগিয়ে সকাল সাড়ে আটটায় এনেছি। স্টুডেন্টদের এই দিনে ক্লাস কম থাকে। তাও ওদের কয়েকজনের নাকি পরবর্তী ক্লাস দুইটার দিকে। কতোটা সময় বসে থাকবে। ওরা যে আমার জন্য এতোটা করেছে, তার জন্য আমি গ্রেটফুল। ক্লাস নিয়ে বাড়ি চলে যাব। তারপর গিয়ে শাওয়ার, নামাজ, খাওয়া শেষে ঘুম দিয়ে উঠব।”

সাবিহা অবাক হয়ে শুধায়,
“সাজবে না?”

“না। সন্ধ্যায় জাস্ট শাড়ি ও ফ্লাওয়ার অর্নামেন্ট পড়ে ছাদে চলে যাব।”

“কী বলো? ছবি উঠাবে না? সাজবে না তাতে?”

“না গো। অবশ্য রাই ও জিনিয়া এসে আমাকে না সাজিয়ে ছাড়বে না! কিন্তু পার্লার এসবে যাব না। হেবি মেইকওভার নিব না। ইভেন আমি তো ভেবেছি বিয়ের সাজেও পার্লারে যাব না!”

সাবিহা এবার মুখ বন্ধ করতেই ভুলে গেছে! সে মুখে হাত দিয়ে কনক ম্যামকে বলে,
“ম্যাম, ওর কথা শুনেছেন? কী বলছে এই মেয়ে! আমার বিয়েতে আমি যতসম্ভব বেস্ট মেইকআপ আর্টিস্টের কাছে সেজেছি। তারপরও মনে হচ্ছিলো আরেকটু সুন্দর হলে পারফেক্ট হবে।”

কনক ম্যাম হেসে বলেন,
“মীরা পুরো আমার কিয়ারার মতো। কিয়ারার হেবি মেইকওভার পছন্দই না। ওদের স্কুলের ফাংশনে যখন ডান্স করে তখন ওর ফ্রেন্ডরা একেকজন পার্লার থেকে সেজে আসে। আর কিয়ারা! এতো নরমাল সাজে যে মনে হয় এর থেকে না সাজাও ভালো। ওর মেইকআপের প্রতি এত অনীহা!”

মীরা হেসে বলে,
“আমার কিন্তু অনীহা না, ম্যাম। আমি একটু ফ্রেশ লুক চাচ্ছি। রাই ও জিনিয়াই সেটা ক্রিয়েট করে দিতে পারবে। ফাউন্ডেশনের আস্তর লাগানোর ইচ্ছে নেই। তাছাড়া যেই গরম!”

“তা ঠিক বলেছ। যতোটা সিম্পল থাকা যায়, ততোটা শান্তি লাগবে।”

সাবিহা বলে,
“আমি তোমার ফ্রেশ ব্রাইডাল লুক দেখার জন্য সো এক্সাইটেড। দেখবে আমিই সবার আগে গিয়ে বসে আছি!”

তিনজনের মধ্যে হাসির ফোয়ারা ছুটলো।

চলবে ইনশাআল্লাহ,
ভুল ত্রুটি থাকলে ক্ষমা করবেন। কপি নিষিদ্ধ।

প্রথম মলাট বই “মেঘের আড়ালে উড়োচিঠি” সংগ্রহ করতে পারেন আপনাদের পছন্দের যেকোনো বুকশপ থেকে।

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here