ফানাহ্ 🖤 #পর্বসংখ্যা_৫২ #হুমাইরা_হাসান | শেষাংশ |

0
688

#ফানাহ্ 🖤
#পর্বসংখ্যা_৫২
#হুমাইরা_হাসান
| শেষাংশ |

– সারাদিন কোথায় ছিলেন?

মেহরাজ ক্লান্ত চেহারায় ঘাড়টা কিঞ্চিৎ বাঁকিয়ে তাকায়। ওকে প্রশ্নকারীর চোখ মুখের কৌতূহলী চাহনি দেখে মৃদু হাসে। কি চমৎকার সেই হাসি! মোহরের সমস্ত চিত্তে শিথিলতা ছড়িয়ে দেয়। হাজারো মন খারাপেও যে মানুষ’টা ওর দিকে তাকিয়ে একফালি অকৃত্রিম হাসি দেয় এতে যে একবুক তৃপ্তি সারা বদনে খেলে যায় এটা কি হাসির মালিকটা আদৌ জানে?

– কাজ ছিলো বিবিজান।

বলে ব্লেজার টা খুলে গলার টাই ঢিলে করতে থাকে। মোহর এগিয়ে এসে পানির গ্লাসটা মেহরাজের হাতে ধরিয়ে দিয়ে নিজেই গলার টাই খুলে নিয়ে পাশে রাখলো। মেহরাজ এক নিঃশ্বাসে গ্লাসভর্তি পানি শেষ করে, গ্লাসটা নামিয়ে রেখে মোহরের হাতদুটো নিজের হাতের মুঠোয় আগলে নিয়ে বলল,

– ফুফু এসেছিল আজ?

– হু

মোহর নিজের হাতদুটো ছাড়িয়ে নিয়ে মেহরাজের শার্টের বোতামে রেখে নিছক স্বাভাবিক ভঙ্গিমায় বলল,

– আমার জন্য নাকি তার ছেলের হাত ভে’ঙেছে সেই প্রতিশোধ নিবে বললেন।

মেহরাজ মোহরের নতজানু মুখটা দেখে স্মিত হাসলো। দু’কদম সরে বিছানাতে বসে নিজের উরুর উপরে মোহরে টেনে বসালো। চিকন আঙুল গুলো ধরে আবারও নিজের শার্টের বোতামে রেখে নিজ হাত দুটোকে বাড়িয়ে দিল কোমরের ভাঁজে। নমনীয় গলায় বলল,

– তাই আমার বিবির চিন্তা হাতটা ভা’ঙায় তার দোষটা কোথায়। তাই তো?

– চিন্তা নয়, প্রশ্ন। একটা প্রশ্নই করবো

মেহরাজ চোখের ইশারায় অনুমতি সূচক অভিব্যক্তি দিলে মোহর মন্থর গলায় বলল,

– সেদিন রাতে আপনার বুকে ছুরির আ’ঘাতের জন্য দায়ী কোনো ছিনতাইকারী নয় বরং নোমান,তাই তো?

মেহরাজ অনিমেষ তাকিয়ে রইলো মোহরের নতমস্তক আনন পানে। কতো শান্ত, নম্র, স্বাভাবিক ভাবেই প্রশ্ন’টা করে বসলো। যেখানে ও নিজের মস্তিষ্ক খাটিয়ে ইতোমধ্যে উত্তর টা খুঁজে নিয়েছে।

– আপনি কি আমার স্বীকারোক্তি চাচ্ছেন, নাকি লয়্যালটি?

– যেমনটা ভাববেন।

শার্টের বোতাম গুলো এক এক করে সবগুলো আস্তেধীরে খুলে এবার পরিপূর্ণ দৃষ্টি মেলে তাকালো মোহর। মেহরাজ মোহরের ঘাড়ের পেছনে হাত রেখে ওকে নিজের কাছে টেনে এনে কপালের মাঝ বরাবর চুমু দিলো, বেশ গভীর ভাবে। তারপর মাথাটা বুকের সাথে চেপে ধরে বলল,

– আমাকে ভরসা করেননা মোহ?

– শুধুমাত্র আপনাকেই।

মোহরের ছোট্ট জবাবে প্রসারিত হলো পুরু অধরযুগল, প্রশান্ত বুকটার মাঝে প্রাণপ্রিয়াকে মিশিয়ে রেখেই বলল,

– তবে আর কিছু শোনার দরকার নেই। শুধু জেনে রাখুন যে হাত আপনার দিকে খারাপ উদ্দেশ্যে আগাবে, তাকে আমি আস্ত রাখবো না সে যেই হোক।

মোহর নিঃশব্দে হজম করে নিলো মেহরাজের ভীষণ শাণিত, ধারালো শব্দগুলো। সন্দেহ তো ওর সেদিনই হয়েছিল যেদিন মেহরাজের শরীরে ক্ষতের চেয়েও রক্তের পরিমাণ অনেক বেশিই দেখেছিল। যেখানে এটা স্পষ্টত যে মেহরাজের শরীরে লেগে থাকা রক্ত অন্য কারো। অথচ মেহরাজের ভাষ্যমতে ছিনতাইকারী ওকেই আ’ঘাত করে পালিয়েছে!
তবে এই ব্যাপারটাকে আর গাঢ় করলো না মোহর। মুখ তুলে মেহরাজের দিকে তাকিয়ে বলল,

– ফ্রেশ হয়ে আসুন। আমি খাবার দেই।

মেহরাজ মোহরের মুখের দিকে তাকিয়ে হুট করেই একটা অনাকাঙ্ক্ষিত ব্যাপারে প্রশ্ন করে বসলো,

– আপনার কপালের দাগটা কিসের মোহ?

আচমকা এমন প্রশ্নে বেশ বিব্রত হলেও ভড়কালো না। কপালের একদম মাঝ বরাবর ছোট কালো দাগটা সবারই আগে চোখে পড়ে। মোহর বলল,

– ছোট বেলায় লেগেছিল কিছুতে। সেই থেকেই এমন দাগ পড়ে গেছে।

মেহরাজ কিয়ৎকাল অপলক তাকিয়ে থেকে মুখটা এগিয়ে নিয়ে ঠিক ললাটের দাগটার উপরেই ওষ্ঠদ্বয় চেপে ধরলো। দীর্ঘক্ষণ সেভাবে থেকে সোজা হয়ে বলল,

– হয়তো এইটারই কমতি ছিলো, সৃষ্টিকর্তা পরে পূরণ করে দিয়েছেন।

– মানে?

– মানে এই দাগটা আপনার সৌন্দর্যের বড়ো একটা অংশ। আর আমার আদরের খোরাক। ধরে দিন এই দাগটা আমার ঠোঁটের স্পর্শ পাওয়ার জন্যেই জন্মেছে।

বলে আবারও ঠোঁট ছুঁইয়ে দিলো। মোহরকে সরিয়ে উঠে ওয়াশরুমের দিকে ঢুকে পড়লো। মোহর আনমনা হয়ে বেশ কিছু সময় বসে থেকে নিজেই নিজের কপালে হাত রাখলো। যে দাগটা এতদিন ওর একটা খুঁত হিসেবে জেনে এসেছে, তাকেই মেহরাজ নিজের আদরের খোরাক বানিয়ে নিলো, অদ্ভুত না? ভালোবাসা একটু বেশিই অদ্ভুত বোধ হয়!

•••

অন্যমনস্ক হয়ে রাস্তার একপাশ ধরে হেঁটে চলেছে। শুভ্র, সুশ্রী মুখটা জুড়ে মলিনতা,বিষাদের ভয়াবহ রাজত্ব। এলোমেলো কদমে একপা একপা করে এগোচ্ছে। মনটা একটু বেশিই খারাপ শ্রীতমার। কিন্তু কেনো খারাপ! ও তো এটাই চাচ্ছিল অভিমন্যুর থেকে পিছু ছাড়াতে, ওই লোকটার মুখটাও আর না দেখতে। ঠিক তাই তো হলো, অভি আজ দুটো দিন ওর সামনেও আসেনি। অথচ ওর মনে হচ্ছে কতদিন লোকটা ওকে জ্বালাচ্ছে না। তারচেয়েও বেশি দীর্ঘ মনে হচ্ছে ওই মানুষ দুটোর থেকে দূরত্বের। কয়েকদিনেই আপন হয়ে ওঠা মানুষ দুটোকে ও আর যাই হোক মন থেকে ভালোবেসেছে। সেই মানুষ গুলোর কথা খুব বেশিই মনে পড়ছে। আচ্ছা ও কি খুব অন্যায় করেছে? পিতামাতা তূল্য মানুষ দুটোর মুখের দিকে চেয়ে মিথ্যে নাটক টা করে গেলেই বোধ করি ভালো হতো! নাকি নাটক করতে করতে তাদের ইচ্ছেকে ঠাঁই দিয়ে অভিমন্যুকে নিজের জীবনের জুড়ে নিতে!
বিরক্তিতে মুখ দিয়ে চ জাতীয় শব্দ করলো শ্রীতমা। অস্থির মনটা খুব বেশিই আজগুবি চিন্তাভাবনা জুড়েছে। এমনটা তো হওয়ার না। একবার একজনকে নিজের জীবনে জুড়ে যা কিছু সহ্য করেছে, এরপরে আর কখনও ভালোবাসার ইচ্ছে হবে কিনা জানা নেই ওর৷ সেই বিভৎস, যন্ত্রণাময় দিন গুলো। অশ্রুভেজা নির্ঘুম রাত্রিগুলো কিভাবে পার করেছে তা একমাত্র শ্রীতমা আর ওর ভগবান’ই জানে। আর নাহ, ও সারাটা জীবন নাহয় ভালোবাসার সুখ বাদেই কাটিয়ে দেবে, তবে বেদনার ক্ষত নিয়ে নাহ।
নিজেকে সামলে অযাচিত চিন্তাগুলো সযত্নে এড়িয়ে দ্রুতপায়ে হাঁটতে লাগলো। এমনিতেই আজ অনেক দেরী করে ফেলেছে। এই সন্ধ্যা হলো বলে।
হাঁটার পথেই রাস্তায় মন্দিরটা পরে, একবার ভাবলো যাবে না, আরেকবার কি একটা ভাবতেই গেটের দিকে এগিয়ে গেলো। সন্ধ্যা আরতি টা নিয়ে আসলে মন্দ হয়না। তবে মন্দিরে ঢোকবার আগে প্রবেশ পথেই পা দুটো থমকে গেলো৷ সামনা-সামনি দাঁড়িয়ে চোখাচোখি হতেই মেকি হাসলো শ্রীতমা, মনটা যেন হুট করেই ভালো হয়ে গেলো সামনের ব্যক্তির চেহারা দেখে।

– কেমন আছেন আন্টি? আপনি কখন এসেছিলেন।

– এইতো একটু আগেই।

ছোট জবাব দিয়েই ক্ষান্ত হয়ে গেলেন মাধুর্য ব্যানার্জি। শ্রীতমা অবাক হলো বেশ। সাথে বুকের ভেতর একটা ভয় ও হলো, এভাবে তো কখনও কথা বলেনা মাধুর্য! তিনি তো দেখা হলেই প্রাণখোলা হেসে জড়িয়ে ধরেন, তবে আজ!

– আপনার শরীর ঠিক আছে তো আন্টি?

– হ্যাঁ ভালো। এখন বাসায় ফিরতে হবে

শ্রীতমার বেশ খারাপ লাগলো। চেনাজানা মুখটা যে ওকে এড়িয়ে যাচ্ছে সেটা ব্যবহারেই স্পষ্ট। ওউ ধপ করে নিভে যাওয়া প্রদীপের মতো চুপ করে গেলো। মাধুর্য শ্রীতমাকে পাশ কাটিয়ে চলে যেতে নিলে শ্রীতমা ব্যস্ত স্বরে বলল,

– আ আপনি কি আমার উপর রেগে আছেন আন্টি?

– রাগ? কিসের রাগ?

– আপনি আমাকে এড়িয়ে যাচ্ছেন কেনো আন্টি?

প্রশ্নটা করতে ওর বুকটা ফেটে গেলো যেন। কি অদ্ভুত! এতো কষ্ট লাগছে কেনো ওর? অপরিচিত মানুষ গুলোর সাথে দুদিনের পরিচয়েই এতটা টান,মায়া লাগছে ওর। মাধুর্য ব্যানার্জি খুব স্বাভাবিক ভঙ্গিমায় বললেন,

– এড়িয়ে যাবো কেনো। এইতো কথা বললাম। আর আমি দুদিনের চেনা একজন মানুষ, কথা না বললেও বা কি। রাস্তায় তো কতো মানুষের সাথেই দেখা হয় সবার সাথেই কি দাঁড়িয়ে গল্প করবে তুমি?

শ্রীতমার চোখটা ওর অজান্তেই ভরে এলো। ওর এই ব্যাথাতুর মুখটা দেখে ভদ্রমহিলাও আর শক্ত থাকতে পারলেনা । দ্রুত পায়ে সরে যেতে নিলে শ্রীতমা বলল,

– আপনি আমায় ভুল বুঝছেন আন্টি।

– আমি তোমাকে ভুল বুঝিনি মা। আসলে ভুল তো আমরা করেছি। নিজের ছেলের উপর বিয়ের জন্য একটু বেশিই চাপ দিয়ে ফেলেছিলাম,তাই হয়তো এমন একটা মিথ্যে নাটক দেখতে হলো। আসলে কি জানো আমাদের খুব শখ ছিল একটা কন্যাসন্তানের। কিন্তু ভগবান হয়তো চাননি,তাই পাইনি। কিন্তু বাবা মায়ের মন কি আর তা মানে। নিজের গর্ভে না ধরতে পারলেও ছেলের বউ করে একটা মেয়েসন্তান আনতে চেয়েছিলাম। তাই তো তোমাকে দুদিন দেখেই এতো ভালোবেসে ফেলেছিলাম। আমার ছেলেটা আবার এমনি যতই রাগ দেখাক আসলে খুব বোকা জানো তো। তা না হলে এই দুইদিনেও আমাকে সত্য টা বলতে পারেনি। সে তো ভাগ্যিস আমি সেদিন তোমাকে খাবার টিফিন করে দেবো বলে পিছু পিছুই আসছিলাম। তখনই সবটা শুনে না নিলা তো আজও মিথ্যে আশা নিয়ে ঘর সাজাতাম আমরা বুড়া-বুড়ি।

বলে দীর্ঘশ্বাস ছাড়লেন। শ্রীতমার নতমস্তকে তাকিয়ে স্মিত হেসে ওর মাথায় হাত রেখে বললেন,

– তোমাকে নিয়ে আমাদের কোনো অভিযোগ নেই। সুখে থাকো আশীর্বাদ করি। আর বালাটা আমি তোমায় ছেলের বউ হিসেবে না, নিজের মেয়ে হিসেবে দিয়েছি। ওটা তোমার কাছেই রেখো। আসছি

বলে আর একটা মুহুর্তও দাঁড়ালেন না। শ্রীতমা পাথরমূর্তির মতো স্থির হয়ে রইলো। শুধু রইলো না স্থির চোখজোড়া। দৃষ্টি ঝাপসা করে অশ্রুতে ভিজিয়ে দিলো। নিজেকে আজ ওর খুব বড়ো অপরাধী মনে হচ্ছে, নিষ্পাপ মনের দুটো মানুষকে এভাবে কষ্ট দিলো ও? ওদের মুখের দিকে তাকিয়ে নাহয় নাটকই করতো। ক্ষতি কি, তাতে যদি বাবা মায়ের ছায়াতল আর প্রাণভরা আশীর্বাদ পাওয়া যায়!

•••

– আমাকে এখান থেকে কবে বের করবেন মামা। এখানে আমি আর একদিন ও থাকতে চাইনা।

– চুপ কর। তোর মুখ টেনে ছি’ড়ে ফেলবো কুলাঙ্গার, জানোয়ার। লজ্জা করছে না আমাকে এই কথা বলতে? আমার মেয়ের সর্বনাশ করে আমাকেই বলছিল বের করাতে! মাঝখানে যদি এই কোটি টাকার হিসেব না থাকতো তাহলে আমি নিজে হাতে তোকে খু’ন করতাম শু**র।

গারদের ভারী দেওয়াল গুলোতে বারি খেয়ে প্রতিধ্বনিত হয়ে উঠলো আরহাম মুর্তজার চাপা হুংকার। ছোটখাটো ঝুপড়ি খোপটার আরেক কোণায় চাদর মুড়ি দিয়ে শুয়ে আছে একটা অল্পবয়সী ছেলে। চাপা ধমকানিটা শুনে চাদরের ফাঁক দিয়ে চোখ দু’টো বের করে উঁকি দিয়ে আবারও ঢেকে নিলো। নোমান সেদিকে একবার তাকিয়ে খিটমিট করে তাকালো আরহামের মুখের দিকে। আরহাম আবারও খেঁকিয়ে উঠে বলল,

– মেয়ে মানুষে তোর মন ভরে না? আমি বারবার করে নিষেধ করেছিলাম মেহরাজের বউয়ের দিকে তাকাবি না, তবুও ও বাড়িতে ঢোকার পর থেকেই তোর কা’মড় লেগে গেলো। ওখান থেকে দূর করেও হলো না তুই রাস্তায় ধরে বসলি। কি পেয়েছিস বল? নেড়ি শেয়ালের মতো পালিয়ে পালিয়েই তো থাকলি। যাকে মোকাবিলা করার মুরোদ নেই তার জিনিসে হাত দিতে যাস কোন কলিজায়! আবার সেসবেও হয়নি তুই আমার মেয়ের সাথে নোংরামি করেছিস খচ্চ’রের জাত!

– মামা মুখ সামলে কথা বলো। না জেনে বুঝেই আমাকে দোষারোপ করবা না বলে দিচ্ছি। হ্যাঁ আমি মানছি মোহরের দিকে শুরু থেকেই আমার নজর ছিলো, বহুবার চেষ্টাও করেছি ওকে পাওয়ার। তাই তিয়াসা যখন প্রস্তাব দিয়ে বসলো আমি নাকচ করতে পারিনি। কিন্তু তা বলে সাঞ্জের ক্ষতি আমি চাইনি।

– ক্ষতি চাসনি তাহলে এসব কি? আমার বাচ্চা মেয়েটার কি হাল করেছিস তুই।

– বাচ্চা বোলো না তো। ও যথেষ্ট বড়ো হয়েছে। আর আমি একা ওর কিছুই করিনি। মা’লপানি খেয়ে টাল হয়ে ছিলাম। সেই অবস্থায় ও নিজেই আমার ঘরে এসেছিলো। আমায় ভালোবাসে সে কথা বলতে, আমি নিষেধ করেছিলাম। বললাম ঘর থেকে চলে যা, তবুও শুনলো না। ফ্যাসফ্যাস করে কাঁদতে লাগলো। এমনিতেই মাথা ঠিক নেই, মোহরকে বারবার হাতের কাছে পেয়েও ছুঁতে পারিনা।জিদ চড়েছিল, নেশার ঘোরে ওর উপর ঝাপিয়ে পড়েছি, ও নিজেও কোনো বাঁধা দেয়নি। এখানে আমার একার দোষটা কোথায়।

কথা শেষ হওয়ার সাথে সাথে প্রচণ্ড জোরে একটা শব্দ হলো। ভারী হাতের একটা তামাশা গালের উপর পেয়ে চোখ ঘোলা হয়ে এলো নোমানের। টলমল পায়ে থপ করে মেঝেতে বসলে আরহাম দাঁত কিড়মিড়িয়ে বললেন,

– আমার সামনে দাঁড়িয়ে আমার মেয়ের নামে এসব বলতে বুক কাঁপছে না? শা’লা কু’ত্তার বাচ্চা। এবার পচে ম’র এখানে। এখান থেকে তোকে আদৌ বের করতে পারবো কি না জানি নাহ।

– মামা। একথা বলবা না। আমাকে মা’রো কা’টো যাই করো এখান থেকে বের করো। না তো আমি . .

– ভিজিটিং আওয়ার শেষ। আপনি এক্ষুনি বেরিয়ে আসুন স্যার চলে এলো বলে

কনস্টেবলের আগমনে বাকি কথাটুকু শেষ করতে পারলো না নোমান। আরহাম নোমানের দিকে এক পলক আড়চোখে তাকিয়ে বেরিয়ে এলো। পকেটে হাত গুঁজে হাজার টাকার নোট বের করে কনস্টেবলের বুকপকেটে গুঁজে দিয়ে বললেন,

– মুখ যত বন্ধ রাখবে পকেট তত গরম হবে।

বলে রোগা পাতলা ছেলেটার পিঠ চা’পড়ে বেরিয়ে গেলেন।

.
.
.
চলমান

©Humu_❤️

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here