#হৃদয়জুড়ে_প্রেয়সীর_আভাস (২)
#পর্ব_০৩
#মোহনা_হক
মুখ বেজার হয়ে এলো তিনজনের। আজ আর এখানে বসে আড্ডা দেওয়া হবে না। রুয়াত, নিমি দুজন ইনিমার দিকে তাকিয়ে আছে। এখানে ইনিমা সবার বড়। সেই একমাত্র ভরসা। হয়তো তার কথায় আয়াজ রাজিও হয়ে যেতে পারে। নাহয় আজ রাতের আড্ডা মিস হয়ে যাবে। প্রচন্ড বিরক্ত রুয়াত। এমন মোমেন্টে এরকম লোকের আগমনে রাগ হচ্ছে। নিজে তো কথা বার্তা বলেই না আবার অন্যের কথা বলা বা আড্ডা দেওয়াতে সমস্যা হচ্ছে তার। এতো বেশি বিরক্ত লাগছে রুয়াতের। না পারছে কিছু বলছে না পারছে চুপচাপ সয়ে নিতে। ইনিমা তার ভাইয়ের ভয়ে আমতা আমতা করে বলে-
-‘ভাইয়া আজকের রাতটা শুধু। দয়া করে এমনটি বলো না। আমরা অনেক আস্তে আস্তে কথা বলবো। এমন ভাবে কথা বলবো যেনো কেউ শুনতে না পায়। তুমি গিয়ে শুয়ে থাকো।’
চক্ষু ছোট ছোট হয়ে এলো আয়াজের। এখনো একই ভাবে দাঁড়িয়ে আছে। যেনো প্রতিজ্ঞা করেছে আজ এভাবেই রাত পাড়ি দিবে। নিমি বড় করে ঘোমটা টানে। তার এই মুখ আয়াজ কে দেখাতে অনিচ্ছুক। কি যে লজ্জা দিয়েছিলো তাকে। ভুলেও তো এই মুখ কখনো স্বইচ্ছায় দেখাবে না।
-‘আমার কথা কি এই তিনজনের একজনের ও কানে যায়নি? তোমরা কথা বলবে আর আমার রুম পর্যন্ত শোনা যাবে ওরকমটা হবে না। যেতে বলেছি এখান থেকে আমি।’
ঢোক গিলে ইনিমা। রুয়াতের মন চাচ্ছে আয়াজ কে ধরে ইচ্ছেমতো বকতে। এমন মানুষ সত্যিই বিরক্তিকর। শুধুমাত্র ভদ্রতার খাতিরে চুপ মেরে বসে আছে। আয়াজের জায়গায় আরহাম হলে এতক্ষনে তিনজন মিলে পিটিয়ে ভাগিয়ে দিত। বড়সড় নিঃশ্বাস টানে ইনিমা। ভাইয়ের মুখে মুখে কথা বলেনি কখনো। আজ কেমন কেমন লাগছে। বেশ সাহস আনে মনের ভিতর। একদম সোজাসাপটা বললো-
-‘বলেছি না ভাইয়া আস্তে আস্তে বলবো। এমন করো না। তোমার রুম কি কারো রুমেই কথার আওয়াজ যাবে না। তুমি গিয়ে ঘুমিয়ে পড়ো না!’
-‘এক কথা কয়বার বলতে হবে আমায়? আমি কি বাবা বা মা কাউকে ডাকবো?’
শেষের কথাটি দাঁতে দাঁত চেপে বলে আয়াজ। ইনিমা সাথে সাথে মাথা নাড়ায় দুদিকে। অর্থাৎ বলা লাগবে না। রুয়াত আর নিমির হাত ধরে হুড়োহুড়ি করে রুমে চলে আসে। কেইবা এমন মানুষের সাথে এখন তর্ক করতে যাবে? সে কি এসবের মর্ম বুঝবে? মন দিল বলতে কিছু নেই। আর না আছে ছোট বোনদের জন্য খানিকটা স্নেহ। সুযোগ পেলেই বকাঝকা শুরু করে দেয়। এ কেমন ব’দঅভ্যাস? রুমে এসে ইনিমা, রুয়াত, নিমি কেউই কথা বলেনি। রাত একটার উপর বাজে। রুমে এসে তিনজন ঘুমিয়ে যায়। একবার সেখানে গিয়ে বকা দিয়েছে, এবার এই রুমে এসে বকা দিতেও সময় নিবে না আয়াজ। আর রুয়াত ও কথা বলতে চায় নি। আড্ডা দিতে মন সায় দিচ্ছে না এখন আর। বকা খেয়েই মন ভরে গিয়েছে।
(*)
ফজলুল চৌধুরী বাগানে পানি দিচ্ছেন। আজ শুক্রবার থাকায় সবাই বাড়িতেই রয়েছেন। এই দিনে একটু রেস্ট করেন তারা। মাহের চৌধুরী ও আজ কারখানায় যাবেন না। রূহানের ও আজ স্কুল বন্ধ। সকালে দেরি করেই ঘুম থেকে উঠে রুয়াত। পাশ ফিরে দেখে দু’জন দু পাশে নিশ্চিন্তে ঘুমাচ্ছে। নিমির হাত পা ছড়িয়ে ছিটিয়ে ঘুমানোর অভ্যাস। রুয়াতের গায়ে হাত পা তুলে ঘুমাচ্ছে। নিমির পা সরিয়ে দেয় রুয়াত। অতঃপর ফ্রেশ হতে চলে যায়। প্রতিদিনের রান্নাবান্না মায়া চৌধুরী, জেবা, মেহরুবা করে থাকে। আজও তার ব্যাতিক্রম কিছু হয়নি। রুয়াত ফ্রেশ হয়ে এসে দেখে নিমি এবং ইনিমা এখনও ঘুমাচ্ছে। ব্যালকনি দিয়ে দেখা যাচ্ছে ফজলুল চৌধুরী গাছে পানি দিচ্ছেন। রুয়াত দৌড়ে সেখানটায় যায়। ফজলুল চৌধুরীর পাশে গিয়ে দাঁড়ায়। রুয়াত কে দেখামাত্র মুচকি হাসি দেয় তিনি।
-‘ঘুম হয়েছে রুয়াত?’
রুয়াত হাসে মুচকি।
-‘জ্বী বড় বাবা।’
-‘আচ্ছা। ইনিমা এখনো উঠেনি? কাল রাতে কি জেগে ছিলে নাকি সবাই?’
-‘আপু ঘুমাচ্ছে। আমরা সবার খাওয়া দাওয়া শেষ হওয়ার পর ঘুমিয়ে গিয়েছিলাম। আয়াজ ভাইয়া কাল বকেছে। এর পর থেকে একটুও চোখ খোলা রাখিনি। ঘুমিয়ে পড়েছিলাম।’
ফজলুল চৌধুরীর দৃষ্টি গাছের দিকে। সেথায় তাকিয়ে থেকেই কথা বলছেন রুয়াতের সাথে। আর এক হাতে পানি দিচ্ছেন।
-‘ওহ্ তাই বলো।’
-‘নাস্তা করেছেন বড় বাবা?’
-‘নাহ্। তোমার বড় মা মাত্রই চা দিয়ে গেলো। নাস্তা খাবো একটু পর। তুমি বাসায় যাও। হ্যাঁ?’
রুয়াত মাথা নাড়িয়ে বলে-
-‘আচ্ছা।’
বাসার ভিতরে চলে আসে রুয়াত। রান্নাঘরের দিকে পা বাড়ায়। মাঝেমধ্যে হাঁপিয়ে যায় এই পুরো বাড়িটায় হাঁটতে গেলে। ফজলুল চৌধুরী, হান্নান চৌধুরী আর মাহের চৌধুরী মিলে বাড়িটা করেছেন। তিন ভাইয়ের অক্লান্ত পরিশ্রমের পর পুরো বাড়িটা করতে সক্ষম হয়েছেন। তাই কেউই আর আলাদা হয়নি। হান্নান চৌধুরী মারা যাওয়ার পর ও কেউ আলাদা হয়ে যায়নি। সবাই ঠিক আগের মতোই আছেন। রান্নাঘরের একপাশে রুয়াত এসে দাঁড়ায়। যে যার মতো কাজে ব্যস্ত। জেবার নজর রুয়াতের দিকে।
-‘ইনিমা নিমি কেউই উঠেনি ঘুম থেকে?’
-‘না মেজো মা। ওরা এখনো ঘুমাচ্ছে।’
-‘তুই উঠে পড়লি যে এতো তাড়াতাড়ি?’
-‘জানোই তো একবার আমার ঘুম ভেঙ্গে গেলে আর ঘুম আসে না। তাই আর শুয়ে থাকিনি। উঠে পড়েছি।’
মেহরুবা রুটি বানাতে ব্যস্ত। রুয়াত একটু উঁকি দেয় তার মায়ের দিকে। অতঃপর তার রুমে ফেরত যাওয়ার জন্য পা চালায়। কিন্তু মাঝপথেই হলো বিপদ। আয়াজের শক্ত শরীরের সাথে ধাক্কা খেয়ে ছিটকে দূরে সরে যায় রুয়াত। লোকটার মুখে গম্ভীর ভাব ভাস্যমান। এ যেনো মুখ থেকে সরেই না। ভয়ে চোখ তুলে তাকায় আয়াজের দিকে। স্বাভাবিক ভাবে দাঁড়িয়ে আছে সে।
-‘তোমার চোখ কোঁথায় থাকে?’
রুয়াত বুঝতে পারছে না কি উত্তর দিবে। আশে পাশে তাকায় কেউই নেই এখানে। কিছু না বলে যে উত্তর না দিয়ে দৌড় দিবে সে উপায় ও নেই। সামনেই তো আয়াজ দাঁড়িয়ে আছে। রুয়াত নিজেকে তটস্থ করে।
-‘দুঃখিত ভাইয়া আমি দেখতে পাইনি। আসলে নিচের দিকে তাকিয়ে হাঁটছিলাম তো।’
ভ্রু কুচকায় আয়াজ। গমগমে সুরে বলে-
-‘কখনো কখনো সামনের দিকে তাকিতেও হাঁটতে হয়। আজ আমার সাথে ধাক্কা খেয়েছো আবার দেখা যাবে কার সাথে না কার সাথে ধাক্কা খাও। দৃষ্টি নিচু থেকে উঁচু করো।’
-‘আমি দুঃখিত বলেছি তো।’
কথাটি শুনলো না আয়াজ। দ্রুত পা চালিয়ে চলে যায় সেখান থেকে। রুয়াত বে’ক্ক’লের মতো চেয়ে আছে। তাকে যে বকেনি সকাল সকাল এটাই বেশি। রুয়াত তার রুমে চলে আসে। ইনিমা আর নিমি কে তুলে দেয়।
(*)
বিকেলে বাড়িতে অনেক লোকজন আসে। আজ আর আয়াজ তার অফিসে বা বাহিরে কোঁথাও যায়নি। বিধায় বাড়িতে কিছু সংখ্যক লোক এসেছে। ইনিমা আর নিমি তারা বসে বসে গল্প করছে। তাদের মাঝে রুয়াত ঘুমিয়ে আছে। হঠাৎ কথা বলতে বলতে ঘুম এসে যায়। এই সময়টা তে আলসেমি লাগে ভীষণ। রুয়াত ঘুমানোর পর ও ইনিমা আর নিমি কথা কন্টিনিউ করছে। এতো কথা আসলে কোঁথায় থেকে আসে তাদের? ঘুম থেকে উঠার পর প্রায় সন্ধ্যা সন্ধ্যা হয়ে যায়। রুয়াত রুম থেকে বের হয়ে আসে। মুলত পানি খাওয়ার জন্য এসেছে বাহিরে। বাসায় যে এতো মানুষ আছে তা জানা নেই। লিভিং রুমের অপর পাশে আয়াজের সেই রুম। যেখানে সে পলিটিক্যাল কোনো মিটিং অথবা কাজ করে। নিচে কেউই নেই। রুয়াত পানি খেয়ে চলে আসে। আশেপাশে তাকানোর মতো মন নেই। তীব্র মাথা ব্যাথায় সব কিছুই অসহ্য লাগছে।
.
ইনিমার কোলে মাথা রেখে রুয়াত শুয়ে আছে। সে রুয়াতের চুল টেনে দিচ্ছে সে। খুব শান্তি লাগছে তার। মাথা ব্যাথায় প্রায় পাগল হয়ে গিয়েছিলো। ছটফট করেছিলো অনেক্ক্ষণ যাবত। ইনিমা কে বলার পর পরই ইনিমা রুয়াতের চুল গুলো টেনে দেয়। মাথায় খানিকটা ঔষধ লাগিয়ে দেয়। এখন একটু আরাম লাগছে রুয়াতের। জেবার রুমে গিয়েছে নিমি। এখনো আসেনি। ইনিমার থেকে শুনেছে আজ বাসায় কিছু লোকজন এসেছে। রুয়াত উঠে বসে। মাথা ব্যাথা এখন অনেক কম। হঠাৎ আয়াজের আগমন ঘটে। ইনিমা দাঁড়ায় বেড থেকে নেমে। রুয়াত জড়সড় হয়ে বসে।
-‘রুয়াত তুমি জানতে না আজ বাসায় কিছু লোক এসেছিলো? না জানার ও কথা নয়। জানার পর ও কেনো রুমের বাহিরে পা দিলে? তোমাদের একবার মানা করেছি না বাহির থেকে কেউ এলে রুমে থাকবে। এক কথা কতবার রিপিট করতে হবে? তোমার তো কানে কোনো সমস্যা নেই তাহলে কি আমার কথা শুনতে অসুবিধা হয়েছে? মনে রাখতে ভুলে যাও তাইনা! এতোবার বলার পর ও ভুলে যাও কিভাবে? নাকি তোমার খোমা অন্য কাউকে না দেখাতে পারলে ভালো লাগে না সেটা বলো। এখন তো বলবে তোমাকে আমি খুব ইনসাল্ট করে কথা বলি শুধুমাত্র তোমার কাজে এসব বলি। এর বাহিরে না তোমার সাথে আমার বিন্দুমাত্র কথা হয়। আর তোমাকে কিভাবে আমি বিশ্বাস করবো? তুমি আর নিমি যেভাবে আমার কথা বার বার অমান্য করেছো সেখান থেকে তোমায় আমি মোটেও বিশ্বাস করি না।’
আশ্চর্য হয়ে রুয়াত তাকিয়ে আছে। আয়াজের সম্পুর্ণ কথাটি সঠিক নয়। তবে এটা ঠিক আয়াজ রুয়াত, আর নিমি কে অনেকবার বলেছিলো বাড়িতে কোনো বাহিরের লোকজন আসলে যেনো রুমেই থাকে। যদিও ইচ্ছে করেই প্রতিবার বাহিরে যেতো কিন্তু আজ সে একটু ও ইচ্ছে করে বাহিরে যায় নি। ইনিমা কিছু বলছে না। শুধু শুনে যাচ্ছে। আয়াজ একবার ইনিমার দিকে তাকিয়ে আবার রুয়াতের দিকে তাকায়। আর কিছু না বলেই রুম ত্যাগ করে। আজকের কথাগুলো একদম ছুরির মতো আঘাত করেছে রুয়াতের মন। কোনো উত্তর না শুনেই আয়াজ তো চলে গিয়েছে। ইনিমার ও ভীষণ খারাপ লেগেছে। এটা সম্পুর্ণ ভুলের মধ্যে হয়েছে জিনিসটা। এভাবে তার ভাইয়ের কথা বলাটি ও ঠিক হয়নি। নিশ্চয়ই রুয়াত কষ্ট পেয়েছে। ইনিমা রুয়াত কে স্বান্তনা দেওয়ার জন্য তার পাশে গিয়ে বসে। রুয়াত বুঝেছে এখন ইনিমা কিছু বলবে। হয়তো সে তার ভাইয়ের হয়ে সরি বলবে কিন্তু এসব শোনার ইচ্ছে নেই। রুয়াত উঠে রুম থেকে বের হয়ে যায়।
.
প্রিতমের ভুলবশত নজর পড়ে রুয়াতের দিকে। হুট করে চোখ পড়লেও সে আর সে দৃষ্টি সরাতে পারেনি। ঘুম থেকে উঠে আসা রুয়াত কে দেখে থমকে যায়। মুখে কোনোরূপ হাসি ছিলো না। শুধু ছিলো বিরক্তিতে নাক মুখ কুচকানো। অগোছালো চুল। চেয়েও চোখ সরাতে পারেনি। চৌধুরী বাড়িতে এসেছে আয়াজের জন্য। আয়াজের দলের সাথেই কাজ করে। কিছু সময় আয়াজ খেয়াল করেছে প্রিতম অন্যমনষ্ক হয়ে তাকিয়ে আছে। তার দৃষ্টি অনুসরণ করে দেখে প্রিতমের নজর রুয়াতের দিকে। মুখটা ততবেশি স্পষ্ট বোঝা যায় না। শুধু একপাশ দেখা যায়। এসব আর আয়াজের সহ্য হলো না। কাঠকাঠ গলায় বললো-
-‘প্রিতম তুমি অন্যের ভবিষ্যতের দিকে না তাকিয়ে নিজের দিক ভাবো। কাজে আরও মনোযোগী হও। নাহয় কাজ করার দরকার নেই। তুমি বের হয়ে যেতে পারো।’
সবার দৃষ্টি আয়াজ আর প্রিতমের দিকে। কিছুটা ইতস্তত বোধ করলো প্রিতম। নিচুস্তর স্বরে বলে-
-‘সরি স্যার।’
আবারও কাজ শুরু করে আয়াজ। যতোবার প্রিতমের দিকে তাকায় ততবারই প্রিতম মাথা নিচু করে ফেলে। প্রিতমের উপর চাপা রাগ একটুও কমেনি। বরং তা বেড়ে গিয়েছে। পরিস্থিতির কারণে আয়াজ শুধু চুপ ছিলো।
.
ছাদে রূহান আর রুয়াত এক পাশে বসে আছে। রূহান বার বার জিগ্যেস করছে কেনো তার আপুর মন খারাপ। কিন্তু রুয়াত বরাবরের মতো চুপচাপ। কথা বলতে ইচ্ছে করছে না। এক সময়ে রূহান চুপ হয়ে যায়। মেহরুবার থেকে বলে তারা দু’জন ছাদে এসেছে। তাই আর চিন্তা নেই।
-‘রূহান তোমাকে ছোট মা ডাকছে।’
চিরচেনা পুরুষালী কণ্ঠস্বর শুনে রূহান রুয়াত পেছনে তাকায়। আয়াজ কে এই মুহুর্তে এখানে দেখে কিছুটা অবাক হয়। রুয়াত বসা থেকে উঠে দাঁড়ায়। রূহান নিচে যাওয়ার জন্য উদ্যত হয়। ভাইয়ের পেছন পেছন রুয়াত ও যাওয়ার জন্য পা বাড়ালে আবার সেই কন্ঠস্বর শুনে থেমে যায়। একটু রাগী স্বরে আয়াজ বলে-
-‘রূহান কে যেতে বলেছে। তার বোন কে নয়। রূহান ভাইয়া তুমি নিচে যাও। রুয়াতের সাথে আমার কিছু কথা আছে।’
থেমে যায় রুয়াতের পা। রূহান একবার তার বোনের দিকে তাকিয়ে চলে যায়। একেবারে আয়াজের বিপরীতে রুয়াত দাঁড়িয়ে। কোনো রকম অভদ্রতা না দেখিয়ে দাঁড়িয়ে আছে। পিলারে ঠেস দিয়ে দাঁড়ায় আয়াজ।
-‘রুয়াত আমার পাশাপাশি এসে দাঁড়াও।’
মোটেও জায়গা পরিবর্তন করলো না রুয়াত। সে আগের জায়গায়ই আছে। মন কে শক্ত করে। কণ্ঠে গম্ভীরতা এনে বলে-
-‘আপনার কিছু বলার থাকলে বলুন। আমি নিচে যাবো। কাজ আছে আমার।’
আয়াজ হাসে। এখন রুয়াতের কোনো কাজ নেই। আয়াজ কে এড়িয়ে যাওয়ার জন্য এটা বলেছে। এ ব্যাপারে কোনো সন্দেহ নেই। আয়াজ সিগারেট ধরায়। ভাবলেশহীন হয়ে মুখ উঁচু করে ধোঁয়া উড়িয়ে দেয় উপরে।
-‘আমি এক পিলারে দাঁড়িয়েছি না? তুমি অপরটায় দাঁড়াও। একটার থেকে আরেকটার দূরত্ব অনেক বেশি। সমস্যা নেই। আমার কথা না শুনলে সত্যি বলছি ছাদ থেকে ফেলে দিবো। আর আয়াজ ত্বায়ীম চৌধুরী মিথ্যে বলে না। এ বিষয়ে তুমি ভালো করেই অবগত।’
রুয়াতের মনেহচ্ছে এটা হালকার উপর ঝাপসা হুমকি দিয়ে দিলো আয়াজ। পিলারের পাশে এসে দাঁড়িয়েছে। একবার আয়াজের দিকে তাকিয়ে চোখ সরিয়ে নেয়। কিন্তু আয়াজ সামনের দিকে তাকিয়ে আছে। বার বার সিগারেট টানছে।
-‘প্রথমেই বলছি আজকের জন্য সরি। আমি জানিনি যে তুমি আজ নির্দোষ ছিলে। ইনিমা আমায় সব বলেছে। তবে এ কথা চিরন্তন সত্য যে আপনার উপর কেউ নজর দিলে তার দৃষ্টিক্ষমতা কেড়ে নিতেও দু’বার ভাববো না। হোক সেটা শুভ দৃষ্টি।’
প্রথমত রুয়াত হতভম্ব যে আয়াজ সরি বলেছে। এটা অবিশ্বাস্য! কারণ সব সময় দেখেছে আয়াজের দোষ থাকলেও আয়াজ কখনো সরি বলেনি। উলটো সরি বলিয়েছে। দ্বিতীয়ত রুয়াতের প্রতি এতো কেয়ার দেখে একটু থমকে যায়। এ কথাটা রুয়াত অপ্রাসঙ্গিক বলে ধরে নিলো। হয়তো তার জায়গায় নিমি বা ইনিমা হলে এটাই বলতো। কথাটিতে গুরুত্ব দিলো না এতোবেশি।
-‘আচ্ছা আমি নিচে যাই। আর আপনার কথায় তেমন কিছু মনে করিনি তবে আমার ভীষণ খারাপ লেগেছিলো। পরের বার কিছু বলার আগে ভেবেচিন্তে বলবেন।’
আয়াজ তার হাত থেকে সিগারেট ফেলে দেয়। রুয়াতের হাত ধরে বলে-
-‘সেজন্য সরি বলা। চলো আমি ও নিচে যাবো।’
রুয়াত আয়াজের থেকে হাত নিজের হাত ছুটানোর চেষ্টা করে। অপ্রস্তুত হয়ে বলে-
-‘আমার হাত ছেড়ে দিন।’
আয়াজ একবার সেদিকটায় তাকায়। পরক্ষণেই বলে-
-‘হাত ছুটানোর চেষ্টা করো না। আমি আর তুমি প্রেমিক প্রেমিকা নই যে কেউ আমাদের দেখে কিছু বলবে। না সন্দেহ করবে। তুমি নিঃসন্দেহে আসতে পারো এভাবে।’
#চলবে….
[আসসালামু আলাইকুম। সর্বপ্রথম ক্ষমা চেয়ে নিচ্ছি যে কাল গল্প দিইনি তার জন্য। কাল সারাদিন কারেন্ট ছিল না তাই দিতে পারিনি। আয়াজ আর রুয়াত কে কেমন লাগছে জানাবেন। আমার ভুলত্রুটি ক্ষমার দৃষ্টিতে দেখবেন।]