হৃদয়জুড়ে_প্রেয়সীর_আভাস (২) #পর্ব_১৮ #মোহনা_হক

0
294

#হৃদয়জুড়ে_প্রেয়সীর_আভাস (২)
#পর্ব_১৮
#মোহনা_হক

চৌধুরী বাড়ির সকলে গ্রামে এসেছে। কিছুদিন ধরে রাহীম চৌধুরী আর আয়েশা চৌধুরী কল দিয়েই যাচ্ছিলো সবাই কে। কিন্তু কেউই তেমন আসার জন্য রাজি হয়নি। আয়াজ সকল কে রাজি করিয়ে তারপর গ্রামে পাঠিয়েছে। মাহের চৌধুরী আর আয়াজ আসেনি। ফজলুল চৌধুরী কে জোর করে পাঠিয়ে দিয়েছে। আজ চারদিন যাবত তারা এসেছে গ্রামে। এখনো আয়াজ আর মাহের চৌধুরীর আসার খবর নেই। পুকুরের পাশের এক খোলামেলা জায়গায় বসে আলাপ আলোচনা শুরু করেছে ইনিমা, নিমি, আরহাম আর রুয়াত। সঙ্গে রূহান ও রয়েছে। কিন্তু সে কোন কথা বলছে না। আবার কারো কথাও শুনছে না। রুয়াতের ফোনে কার্টুন দেখতে ব্যস্ত।

-‘আচ্ছা ইনিমা আপু আয়াজ ভাইয়া আসবে না? সবাইকে তো ওনিই জোর করে পাঠিয়েছে এখন ওনি আসবেন না?’

নিমির কথায় ইনিমার চুপ হয়ে অন্য দিকে তাকিয়ে আছে। রুয়াত আর আরহাম উত্তর জানার জন্য খুব আগ্রহ দৃষ্টিতে তাকায়। কিন্তু তার উত্তর দেওয়ার খবর নেই। অন্যমনষ্ক হয়ে তাকিয়ে আছে। নিমি হালকা হাতে ঝাঁকুনি দিলো ইনিমার হাতে। চকিত নজরে সে তিনজনের দিকে তাকায়।

-‘কি হয়েছে তোদের? এভাবে সবাই আমার দিকে তাকিয়ে আছিস কেনো? আর নিমি হাতে ধাক্কা দিয়েছিলি কেনো?’

ইনিমার কথা শুনে নিমি থ মেরে বসে থাকে কিছুক্ষণ। তাহলে তার কথার এক অংশ ও ইনিমা শোনেনি। এরকম ভাবে নিমি কে তাকিয়ে থাকতে দেখে ইনিমা বিরক্তিকর শব্দ করে।

-‘আপু নিমি বলেছিলো আয়াজ ভাই আসবে কিনা! এটুকুই বলেছে।’

রুয়াত উত্তর দিলো। সে আগেই বুঝেছে নিমি এখন কিছুই বলবে না। ইনিমার কথা শুনেই থম মেরে বসে আছে। খানিকটা হাসে আরহাম।

-‘ওহ্। কিন্তু রুয়াত তুই জানিস না? ভাইয়ার সাথে কথা হয়নি বুঝি তোর?’

ভ্যাবাচ্যাকা খেয়ে যায় রুয়াত। পাশ ফিরে আরহামের দিকে তাকায়। সে খুব মনোযোগ সহকারে তাকিয়ে আছে। সেদিন বকা দেওয়ার পর থেকে রুয়াতের আর আয়াজের সাথে কথা হয়নি। কারণ আয়াজ তার কাজে ব্যস্ত হয়ে পড়ে। সাতসকালে বাসা থেকে বের হলে অনেক রাতে বাড়ি ফিরতো। যখন সবাই ঘুমিয়ে পড়তো তখন। সারাদিন আয়াজের কোনো খোঁজ খবর পাওয়া যেতো না। এত পরিমাণ ব্যস্ত ছিলো কাজ নিয়ে। তাই আর রুয়াতের সাথে ও কথা হয়নি আয়াজের। কিছু না ভেবেই রুয়াত বলে-

-‘না আপু। ওনার সাথে আমার কোনো কথা হয়নি এ কয়েকদিনে।’

-‘ভাইয়া বলেছে আসবে। তবে কবে তা বলেনি। মায়ের কাছ থেকে শুনেছি ভাইয়ার এখন কাজের চাপ বেশি। জানি না কবে আসবে।’

রুয়াত আর কিছু বললো না। তার চিন্তা কিছুটা হলেও কমেছে এখন। কারণ কয়েকদিন আয়াজ কোনো কথা বলেনি তার সাথে। আয়াজ কেমন আছে? কি কারণে যোগাযোগ করছে না এগুলো নিয়েই একটু আধটু চিন্তায় ছিলো। এখন তার চিন্তা একটু হলেও কমেছে। কাজ সবারই থাকে। আর তাদের সম্পর্ক এমন কোনো পর্যায়ে যায়নি যে একদম খোঁজ খবর নেওয়াই লাগবে। এবার মনে অস্থিরতা সৃষ্টি হলেও ইচ্ছে করেই কল দেয়নি রুয়াত। নিজের খারাপ লাগাটাকে দমনের চেষ্টা করেছে। একবার আয়াজের কাছে কল দিয়ে কেঁদেছিলো। নিমি যে পরিমাণে তাকে এক কথা বারবার শুনিয়েছে। সে থেকে ঠিক করেছে অন্তত আয়াজ কে আর কল দিবে না। পুকুরের পাশে আরও কিছুক্ষণ বসে বসে তারা চারজন মিলে কথা বলে। আজকে নিমি যথেষ্ট চুপ হয়ে আছে। কিন্তু আরহাম চুপ নেই। সে তার মতো কথা বলছে। আসলে দু ভাই বোন অনেক কথা বলে। এটা মিথ্যে নয়। তবে যখন একজন যখন কথা বলা শুরু করে আরেক জনের তা স সহ্য হয়না। এগুলো ভেবেই ইনিমা মিটমিট করে হাসছে।
.
বাড়িতে হৈ হুল্লোড় আওয়াজ শোনা যাচ্ছে। বিশেষ করে রাহীম চৌধুরীর। খুব জোরে জোরে কথা বলছেন। যেহেতু এক তলা বাড়ি। আর রুম গুলোও পাশাপাশি। তাই আওয়াজ আসছে খুব স্পষ্ট ভাবে। দুপুরে খাবারের পর রুয়াত ঘুমিয়ে পড়ে। এরকম হৈ হুল্লোড় শুনে তাড়াতাড়ি করে উঠে বসে। মাথা ধরে গিয়েছে একদম। এভাবে হুটহাট চিৎকারের ফলে ঘুম ভেঙেছে তাই মাথা ব্যাথা শুরু হয়েছে। নিমি দৌড়ে আসে রুয়াতের কাছে। কোনো দিক বিবেচনা না করেই বলে উঠে,

-‘আয়াজ ভাই এসেছে। এজন্য দাদাভাই এতো চিৎকার চেচামেচি শুরু করেছে। সাথে আমার বাবা ও এসেছে। চল নিচে যাবি।’

-‘আমায় টেনে তোল। মাথা ধরেছে ভীষণ। শক্তি পাচ্ছি না।’

নিমি হাত বাড়িয়ে দেয়। রুয়াত নিমির সাহায্য নিয়ে উঠে দাঁড়ায়। কোনো মতে নিচে আসে। আয়াজ কে পেয়ে রাহীম চৌধুরী খুশিতে আত্মহারা। বাসায় এসেছে কখন কিন্তু এখনো তাকে রুমে যেতে দিচ্ছে না। রুয়াত তাড়াতাড়ি করে মেহরুবার পাশে এসে দাঁড়ায়। তার সাথে নিমিও এসেছে।
এতো সময় ধরে আয়াজের চক্ষুজোড়া শুধু তার প্রেয়সীকে খুঁজে যাচ্ছিলো। কতগুলো দিন কথা হয়নি। আবার চারদিন পর্যন্ত দেখাও হয়নি। কাজের চাপ এত বেশি থাকার কারণে একবারও যোগাযোগ করার ও সুযোগ পায়নি৷ অবশেষে এত অপেক্ষার পর প্রেয়সীর স্নিগ্ধতায় ভরা মুখখানা দেখতে পেলো। একবার তাকিয়েই দৃষ্টি সরিয়ে নেয় আয়াজ।

-‘দাদুভাই যাও যাও হাত মুখ ধুঁয়ে এসো। কতো দূর পথ এসেছো। অনেক কথা বলে ফেলেছি। তুমি এবার রুমে যাও।’

আয়াজ চারপাশে একবার তাকিয়ে রুমে চলে যায়। প্রায় পাঁচ ঘন্টার মতো জার্নি করেছে। একটু বিশ্রাম প্রয়োজন। সে তার রুমে গিয়ে ফ্রেশ হয়ে নেয়। মায়া চৌধুরী এই ফাঁকে খাবার নিয়ে আসে আয়াজের জন্য। আয়াজ ফ্রেশ হয়ে এসে দেখে মায়া চৌধুরী খাবার এনে রাখছেন। বিরক্তিমাখা স্বরে বলে-

-‘তুমি আবার কষ্ট করে খাবার নিয়ে আসতে গিয়েছো কেনো? আমিই যেতাম সেখানে।’

ছেলের পিঠে হাত বুলিয়ে দেয় মায়া চৌধুরী। হেসে উত্তর দেয়,
-‘কষ্ট হয়নি বাবা। তুই খেয়ে কিছুক্ষণের জন্য ঘুমিয়ে পড়িস। এতোদিন যে কাজের চাপ ছিলো। নিশ্চয়ই ঠিক মতো খাওয়া দাওয়া, ঘুম কিছুই হয়নি।’

আয়াজ আর কিছু বললো না। খাবার শেষ করে আবার ফোন নিয়ে বসে। কোনো একটা লোকেশন খুঁজে যাচ্ছে ক্রমশ কিন্তু কিছু পাচ্ছে না। খুব বড় সমস্যা হয়ে গিয়েছে। তার ক্ষতি করার জন্য কেউ একজন অগোচরে খুব বড় গেম খেলছে। তাকেই খোঁজার জন্য চেষ্টা করছে আয়াজ। এক পর্যায়ে ফোন রেখে আয়াজ ঘুমিয়ে পড়ে কিছু সময়ের জন্য।

(*)

বাড়ির উঠোন জুড়ে সবাই আড্ডা দিচ্ছে। সবার হাতে চায়ের কাপ। চা খাচ্ছে আর আড্ডা দিচ্ছে। মাহের চৌধুরী না আসাতে ফজলুল চৌধুরী এ কয়েকটা দিন চুপ ছিলেন। তিনি সবচেয়ে বেশি কথা বলেন মাহেরের সাথে। আর এখানে আসার পর থেকেই মায়া চৌধুরী কাজ নিয়ে ব্যস্ত হয়ে পড়েছেন। তাই একমাত্র রাহীম চৌধুরী ছাড়া ফজলুল চৌধুরী কারো সাথেই তেমন কথা বলতো না। আশপাশ থেকে মাঝেমধ্যে খুব জোরে জোরে বাতাস বইছে। তাই তারা ঠিক করেছেন উঠোনে বসেই আড্ডা দিবে। প্রায় এক ঘন্টা পর আয়াজ উঠে। বাড়ির সামনের উঠোন থেকে কথাবার্তার আওয়াজ আসছে। আয়াজ একবার চারপাশের দিকে তাকিয়ে বের হয় বাড়ি থেকে। সবার সাথে আড্ডায় যোগ দেয়। রুয়াতের পাশের চেয়ারে এসে বসে। কিছু হকচকিয়ে গেলো রুয়াত। পাশ ফিরে আয়াজের দিকে তাকায়। পকেট থেকে ফোন বের করে করে সেটাই দেখা শুরু করে। মেহরুবা কিছুক্ষণ পর আয়াজ কে এসে এক কাপ চা দিয়ে যায়। গরম ধোঁয়া ওঠা চা খাচ্ছে আর ফোন দেখছে।

-‘দাদুভাই গ্রামে তো আসলে এবার বিয়েটা সেরে ফেলো। বেশি অপেক্ষা করতে নেই আবার এসব বিষয়ে। বুড়ো হয়ে যাচ্ছো দিন দিন।’

ফজলুল চৌধুরী হতভম্ব হয়ে রাহীম চৌধুরীর দিকে তাকায়। ওনার বাবা যে এরকম কথা বলবেন বিশ্বাসই হচ্ছে না। কখনো রাহীম চৌধুরীর মুখ থেকে এসব শোনেননি। আর তিনিও বললে কখনোই ফজলুল চৌধুরীর সামনে এসব বলতেন না। কারণ তার স্ত্রী আয়েশা এসব কথা অন্তত তার ছেলেদের সামনে বলা পছন্দ করেন না। রুয়াত চেয়ার সমেত ইনিমার পাশে একটু চেপে বসে। আয়াজ ফোনের থেকে মুখ তুলে সর্বপ্রথম তার বাবার দিকে তাকায়। তিনি রুয়াতের দিকে চেয়ে আছে। রাহীম চৌধুরী পরক্ষণেই পরিস্থিতি বুঝে চুপ হয়ে যায়। ভাগ্যিস তার স্ত্রী এখানে নেই। ফজলুল চৌধুরী আর মাহের চৌধুরী উঠে বাসার ভেতরে চলে যায়। এবার একটু হাফ ছেড়ে বসে রাহীম চৌধুরী। আয়াজ ভ্রু কুচকে তাকায় তার দিকে।

-‘অপেক্ষার ফল মিঠা হয়। তাই আপাতত অপেক্ষা করছি। নিশ্চয়ই ভালো কিছু হবে।’

ইনিমা মুখে ওড়না চেপে ধরে আছে। গতবার কি যে অপমানিত হয়েছে ছোট বোনদের সামনে। এবার আর তেমন কিছুই চায় না সে। তাই মুখে ওড়না চেপে হাসাটাই ব্যাটার মনে হলো তার কাছে।

-‘তোমাকে বোঝাতে গিয়ে আমার চুল সাদা হয়ে গিয়েছে দাদুভাজ। যা বুঝলাম এতদিনে এমপি সাহেব এক কথার মানুষ। তবে তোমার বিয়ে পর্যন্ত বেঁচে থাকবো কিনা সন্দেহ দাদুভাই। আল্লাহ চাইলে থাকতে পারি। আচ্ছা তুমি চা খাও আমি আসছি।’

রাহীম চৌধুরী উঠে চলে যায়। হঠাৎ পিঠে ব্যাথা শুরু হয়েছে। বসে থাকা মুশকিল। তাই নাতি-নাতনীদের কিছু বুঝতে না দিয়েই চলে এসেছে সেখান থেকে। এইদিকে এখন সবার বড় বলতে আয়াজ ছাড়া আর কেউই নেই। সবাই এক এক করে চলে গিয়েছে। আছে শুরু রুয়াত, নিমি, আরহাম, আর ইনিমা। আপাতত শুনশান নীরবতা অবলম্বন করছে তারা। খানিকটা অবাক হয় আয়াজ। সবার মুখের দিকে তাকায় একবার একবার করে। আশ্চর্য হয়ে বললো,

-‘তোমরা যে সবাই এভাবে আছো? কোনো কথাবার্তা কিছু নেই যে? তোমরা তো এতো চুপচাপ থাকার মানুষ নও।’

আয়াজের কথাটি সবারই মোটামুটি গা’য়ে লাগলো। সে কি সোজাসাপ্টা অপমান করে দিলো সবাই কে? সে হিসেব মিলাতে ব্যস্ত আরহাম। ইনিমা অস্ফুট স্বরে বলে-

-‘কথা বলবো কিভাবে? মনে হচ্ছে সামনে বসে থাকা ছেলেটা আমার ভাই নয় এক অন্য ভিন্ন গ্রহের প্রাণী। যার সামনে কোনো কথাই বলা যায় না।’

দূর্ভাগ্যবশত আয়াজ কথাটি শুনে ফেললো। ঘাড়া বাঁকিয়ে ইনিমার দিকে তাকায়।
-‘কথা বল তোরা। আমি কিছু বলবো না। তবে এমন ভাবে বলবি যাতে আমার ডিস্টার্ব না হয়।’

মেকি হাসে নিমি। অবশেষে আয়াজ অনুমতি দিলো। এখন আর তার কথা বলতে কোনো সমস্যা নেই। ইচ্ছে মতো কথা বলতে পারবে। একপর্যায়ে নিমি বলা শুরু করলেও রুয়াত আর ইনিমা চুপ থাকেনি। আরহাম আর কিছু বললো না। কারণ মেয়ে মানুষের ফাঁদে পা দিতে চায় না। একবার না একবার হলেও আয়াজ বকা দিবে তিনজন কে। যে হারে উচ্চস্বরে কথা শুরু করেছে। আর হাসির শব্দ তো আছেই। প্রায় আধ ঘন্টার মতো আয়াজ সহ্য করেছে। হাসির আওয়াজের জন্য বারবার কাজে ব্যাঘাত ঘটেছে। আরহাম মুচকি মুচকি হেসে আয়াজের দিকে তাকাচ্ছে। এক সময় আয়াজ আর সহ্য করতে না পেরে উচ্চস্বরে বলে উঠে,

-‘তোমাদের কথা বলতে বলেছি। এতো জোরে জোরে হাসতে বলেছি?’

ব্যাস খানিকের মধ্যেই চুপ হয়ে যায় সবাই। এটা ঠিক তারা খুব জোরে জোরে হেসে ফেলেছে। আয়াজ আগেই বলেছিলো এমন ভাবে কথা বলতে যাতে তার কোনো রকম ডিস্টার্ব না হয়। আয়াজ ফোন ট্রাউজারের পকেটে পুড়ে। বিরক্তিকর শব্দ করে। অতঃপর সবার মন খারাপ দেখে আয়াজ ফের বলে-

-‘আমার কাজে ব্যাঘাত না ঘটালে আমি কখনো তোমাদের কিছু বলতাম না। এখন উঠো সবাই। গ্রামের রাস্তায় একটু হাঁটতে যাবো।’

খুশি হয়ে যায় তারা। এমনিই ঠান্ডা বাতাস বইছে চারপাশে। আর এই মুহুর্তে হাঁটতে ভীষণ ভালো লাগবে। হাঁটতে যাওয়ার জন্য রাজি হয়ে গেলো সবাই। আয়াজ সোজা হাঁটা শুরু করে। তার পেছন পেছন ইনিমা, আরহাম, রুয়াত, নিমি হাঁটছে আর কথা বলছে। এক সময় আয়াজ আস্তে হাঁটা শুরু করে। ক্রমশ পেছন দিকে যায়। সবার সাথে তাল মিলিয়ে হাঁটছে রুয়াত। কথার ধ্যানে আশেপাশে তাকানোর মতো খেয়াল নেই। ইনিমা, আরহাম, নিমি সামনের দিকে এগিয়ে গেলে আয়াজ রুয়াতের হাত টেনে ধরে। আচমকা কেউ ঠান্ডা হাত দিয়ে স্পর্শ করাতে কেঁপে ওঠে রুয়াত। এক প্রকার ভয় পেয়ে যায়। কারণ সে ও তাদের সাথে কথা বলছিলো আর হাঁটছিলো। তাই হঠাৎ কেউ হাত স্পর্শ করাতে ভয় পেয়ে যায়। এক হাত রুয়াতের মাথায় রেখে আয়াজ বলে-

-‘আরে প্রেয়সী আমিই তো। ভয় পেলে কেনো?’

শান্ত হয় রুয়াত। চোখ খুলে আয়াজ কে দেখে ভয় কিছুটা কমে। সঙ্গে সঙ্গে হাত ছুটানোর চেষ্টা করে। আয়াজ ছাড়লো না বরং আরও শক্ত করে রুয়াতের হাত মুঠোয় পুড়ে।

-‘হাত ছুটানোর চেষ্টা করো না। আমি ছাড়বো না। আরও শক্ত করে ধরবো। পরে ব্যাথা পাবে কিন্তু। অনেক তো ওদের সাথে হেঁটেছো এবার আমার সাথে হাঁটো। আমিও একটু উপভোগ করি পরিবেশটা।’

রুয়াত মিহি কন্ঠে বলে-
-‘ওরা দেখলে কি ভাববে? আশ্চর্য হাত ছাড়ুন।’

ভাবলেশহীন হয়ে আয়াজ বললো,
-‘কিছু ভাববে না। সে সুযোগ দিবো না। তোমার সুবিধার জন্যই ওরা দেখার আগে হাত ছেড়ে দিবো। সমস্যা নেই। চলো এখন।’

রুয়াত সামনে তাকিয়ে দেখে তারা অনেকদূর হেঁটে চলে গিয়েছে। আয়াজ সেদিক পাত্তা না দিয়ে রুয়াতের হাত ধরে হাঁটা শুরু করে।

-‘তুমি রাগ করে আছো তাইনা?’

সহসা রুয়াত উত্তর দেয়,
-‘কেনো এটা মনে হলো আপনার?’

-‘ওই যে এতদিন খোঁজ নেইনি। সেজন্য বললাম আরকি। আমি তো খোঁজ খবর না নিলে আবার কান্নাকাটি শুরু করো। তা এবার কি কেঁদেছো? কোঁথায় কেঁদেছো? সবার সামনে নাকি ওয়াশরুমে?’

থতমত খেয়ে যায় রুয়াত। মাথা তুলে আয়াজের দিকে তাকায়।
-‘বা’জে কথা বলবেন না। আমি মোটেও কাঁদিনি। বড় মা বলেছে আপনি কাজে ব্যস্ত আছেন।’

নিঃশব্দে হাসে আয়াজ।
-‘ওহ এজন্যই কাঁদোনি। বুঝেছি।’

রুয়াত আর কিছু বললো না। আয়াজ ফের বলে উঠে,
-‘মন খারাপ প্রেয়সী?’

-‘না।’

-‘তাহলে?’

-‘আপনি সব সময় আমাদের বকাবকি করেন কেনো? ওদিন একবার বকেছিলেন। ভাগ্যিস আপনার চিৎকার করে কথা বলা কেউ শোনেনি। নাহয় কি যে হতো! আজ আবারও বকেছেন। একে তো নিজেই বলেছেন কথা বলতে তার উপর জোরে জোরে কথা বলাতে রেগে গিয়েছেন।’

এটুকু বলেই রুয়াত মুখ ফিরিয়ে নেয়। আয়াজ মাথা নিচু করে প্রেয়সীর পানে চায় একবার।

-‘ওদিন বকা দেওয়ার কারণ ছিলো মধ্য রাতে হরর মুভি দেখে তোমরা সর্বপ্রথম চিৎকার দিয়েছো। তাই বকেছি। আজকে ও বকার কারণ ছিলো। আগেই বলেছিলাম এমন ভাবে কথা বলবে যাতে আমার কাজের ডিস্টার্ব না হয়। তোমরা তো তা করলে না বরং উল্টো জোরে জোরে হাসাহাসি শুরু করে দিয়েছো। কতবার যে আমার কাজের ব্যাঘাত ঘটেছে জানো?’

নিজের ভুল বুঝতে পেরে রুয়াত চুপ হয়ে যায়। না বুঝেই লোকটাকে দোষ দিয়ে দিলো। এখন তো নিজের কথায় নিজেই লজ্জা পেয়েছে। তাই এই মুহুর্তে চুপ থাকাটাকে বেশি প্রাধান্য দিলো।

-‘আসলে আমার বকা দেওয়ার মাঝেও ভালোবাসা আছে। কিন্তু সেটা প্রেয়সী বুঝতে পারে না।’

আয়াজের এরূপ কথায় ফিক করে হেসে দেয় রুয়াত। তবে তা কোনো শব্দ ছাড়া। আয়াজ ঠিকই তা উপলব্ধি করতে পেরেছে। এমতবস্থায় আয়াজের ফোনে কল আসে। ফোনে নাম্বার দেখেই সবার আগে রুয়াতের দিকে তাকায়। অধর কামড়ে কিছু একটা ভাবে। অতঃপর বলে উঠে,

-‘তুমি ওদের কাছে যাও। আমার কল এসেছে। ভয় পেও না। আমি তাকিয়ে আছি। তুমি ওদের কাছে যাওয়ার পরপরই কল রিসিভ করবো।’

রুয়াত কিছু না ভেবে দ্রুত পায়ে হেঁটে নিমির কাছে চলে যায়। তারা একবারের জন্য ও রুয়াত কে জিগ্যেস করেনি যে রুয়াত কোঁথায় ছিলো এতক্ষণ। তাদের খেয়ালই ছিলো না। এক পাশে দাঁড়ায় চারজন। একটু দূরেই আয়াজ কথা বলছে। রুয়াত সেদিকটায় চেয়ে আছে। এক সময় ইনিমা পাঠায় আয়াজের কাছে রুয়াত কে। কখন বাসায় যাবে জিগ্যেস করার জন্য। গুটিশুটি পায়ে রুয়াত আয়াজের কাছে দাঁড়ায়। দূর্ভাগ্যবশত আয়াজের কাঙ্খিত গোপন কথার একটি লাইন শুনে ফেলে। যেখানে আয়াজ সজ্ঞানে বলেছিলো-

-‘ওকে খুঁজে পাওয়ার পর ইচ্ছে মতো পেটাবে। যাতে হাত পায়ের প্রতিটি হাড় ভেঙে যায়। তারপর আমি নিজ হাতেই তাকে মেরে ফেলবো।’

কথাটি শুনে থরথর করে কেঁপে ওঠে রুয়াত। আয়াজ মানুষ মারবে? বিশ্বাস হচ্ছে না তার। শরীরের প্রতিটি অঙ্গ কেঁপে ওঠছে বারংবার। চোখ দিয়ে পানি পড়ছে অনবরত। আয়াজ কিছু একটার শব্দ শুনে চমকে পেছন ফিরে তাকায়। রুয়াত কে দেখে অবাক হয়ে যায়। তাড়াতাড়ি করে কল কেঁটে ফোন পকেটে পুড়ে। অস্ফুট স্বরে রুয়াত বলে উঠে,

-‘আপনি মানুষ খুন করেন এমপি সাহেব?’

#চলবে…

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here