পর্ব_২ #প্রেমপ্রার্থনা

0
779

#পর্ব_২
#প্রেমপ্রার্থনা

চারুর যেন এবার গলায় চিপা দিয়ে ধরল।সে তোতলিয়ে কোনোরকম বলল

“আ-আর হবে ন-না”

রবিন এইবার ধমক দিয়ে বলল-

“ছেলেটা কে অইটা বল।”

এইবার ফারহানার মা সাজেদা খাতুন বের হলেন রান্না ঘর থেকে। তিনি এতক্ষন রান্নাঘরে ছিলেন,জানতেন না চারু যে বাড়ি এসেছে। চারুকে দেখে আহাজারি করে উঠলেন তিনি।

“আসছস মা তুই!কই ছিলি রে মা। এম্নে কেউ বাড়ি ছাড়ে। ফেইল কি আর কেউ করে না। তাই বলে বাড়ি ছাড়বি।”

বড় মা য়ের গলা শুনে চারু যেন ভরসা পেল। সে ঠোঁট উলটে কান্নার অভিনয় করতে গিয়ে সত্যি সত্যিই কেঁদে ফেলল। সে জড়িয়ে ধরল সাজেদা কে। কিন্তু তাতেও সে পার পেল না। রবিন হ্যাচকা টানে তাকে দূরে সরিয়ে বলল-

“কোন ছেলের সাথে প্রেম করস ক? নাইলে থাপ্রামু এখন।।”

চারুর কান্নার দাপট বাড়ল। সে স্পষ্ট দেখল তার হায়াত শেষ এই দুনিয়ায়। তার বাবা জানলে কবর খোড়া ও হয়ে যাবে। এদিকে কান্না করেও কাজ হচ্ছে না কোনো। কেউ মায়া দয়া দেখাচ্ছ না। সে তার মায়ের দিকে তাকাল, তার মা কঠিন মুখে তার দিকেই তাকিয়ে আছে। মেয়ের কান্না নিয়ে তার কিছু আসে যায় না। চারু তার মায়ের আচরনে কষ্ট পেল। মায়েরা ত মেয়েদের বন্ধু হয় আর তার মা কিনা তার বিপদে পাশেও দাঁড়াচ্ছে না। তার চোখের পানির কোনো দাম নেই এই বাড়িতে। তার কান্না সবার কাছেই কুমিরের কান্না।

সে কান্নারত কণ্ঠে বলল-

“মাফ কইরা দেও রবিন ভাই। আর হইব না।আমি আর ওর সাথে কথা কইতাম না।”

সাজেদা খাতুন এই পর্যায়ে এসে থামাতে চাইলেন সব।বললেন-

“রবিন বাপ এহন এইসব বাদ দে। মাইয়া টা সকাল থাইকা না খাওয়া। রইদে রইদে ঘুইরা কি অবস্থা করছে নিজের। আগে ঘরে যাক। হাত মুখ ধুইয়া পরে সব হইব।”

তিনি তড়িঘড়ি করে চারু কে ঘরে পাঠালেন। চারু বড় মায়ের দিকে কৃতজ্ঞতার দৃষ্টিতে তাকাল। তার মা তাকে সাহায্য না করলেও তার বড় মা তাকে ভালবেসে রক্ষা করছে। নইলে রবিন ভাইয়ের শক্ত মার সে খেত।

রবিন আগুন গরম চোখে চারুর যাওয়া দেখল।এই মেয়েকে নিয়ে সে তিক্ত বিরক্ত। এর আগেও সে অনেক বোকা বোকা কান্ড ঘটিয়েছে। এই বার ত সীমা অতিক্রম করল। রবিন ছোট করে শ্বাস ফেলল।এই মেয়ের জন্য আজ অনেক কাজের ক্ষতি হল। এখন তাকে বাড়ি ফিরতে হবে। সে মামিদের দিকে তাকিয়ে বিদায় নিল।

রাজিয়া বেগম ডেকে বললেন-

“দুপুরে খাইয়া যা বাপ!”

রবিন ঘাড় ঘুরিয়ে বলল-

“না মামি।আরেকদিন ।আব্বা মিটিং রাখছে।আমার থাকতে হবে।”

রবিন আর দাড়াল না।বাইক স্টার্ট দিয়ে যাওয়ার পথ ধরল।হাতের কাজ রেখে মামির কথায় চারু কে খুজতে বেরিয়েছিল সে।এইবার বাড়ি গিয়ে বাকি কাজ সারবে সে।

চারু ঘরে ঢুকে দরজা বন্ধ করতে চাইল কিন্তু তার আগেই ফারহানা ধড়াম করে দরজা খুলে এসে ঢুকল। ফারহানা কে দেখে চারু মুখে বেকিয়ে অন্য দিকে ফিরে তার পড়ার টেবিলের কাছে গিয়ে এটা ওটা করতে লাগল। ফারহানা কিছুক্ষণ তাকে পরখ করে বলল-

“তর প্রেমিকের সব চিঠি পড়লাম। কি প্রেম রে!! তুই চিঠির উত্তর দেস নাই? কি উত্তর দিছস আমারে ক।”

চারু ক্ষিপ্ত চোখ মুখ নিয়ে পিছন ফিরল। এই ফারহানা র জন্য আজ তাকে এই পরিস্থিতিতে পড়তে হয়েছে। বোন হয়ে বোনের এত বড় সর্বনাশ করল।সে বলল-

“চিঠির উত্তর তোমারে বলব কেন? এইটা আমার পারসোনাল বিষয়। ”

“ওরে আমার পারসোনাল রে। তর পারসোনাল বিষয় যে এখন রবিন ভাই সহ সবাই জাইনা গেছে তার বেলা? রবিন ভাই ত চিঠি গুলাও পড়ব এখন। ”

চারু এবার তেড়ে এল ফারহানার কাছে।এসে বলল-

“তোমার জন্যই ত হইছে এমন। ছোট বইনের সাথে এমন কর‍তে পারলা তুমি? তোমার গোপন কথা ত আমি কাওরে বলি না।”

“শোন, আমি তর ভালার লাইগাই কইছি। তুই প্রেম কইরা টেস্টে ফেইল করছস। সৈয়দ বাড়ির মান সম্মান কই রাখছস তুই? এই বাড়ির মেয়ে হইয়া তর এত বড় কাজ আমি লুকায় রাখব? পরে এইটার দায় নিব কে?”

“তুমি খুব খারাপ ফারু আপু। আমারে কইলেই হইত আমি এসব ছাইড়া দিতাম। আব্বা জানলে আমারে মাইরাই ফেলব। লজ্জায় মুখ দেখাব কেম্নে বাড়ির সবাইকে।”

বলেই চারু হতাশ ভাবে দুই হাতে মুখ ঢেকে ফুপিয়ে উঠল। ফারহানা তা দেখে বিরস সুরে বলল-

“হইছে এখন নাকি কান্না থামা। এতই যখন লজ্জা তখন ভাল কইরা পড়। তাইলে যদি বাড়ির মান সম্মান বাঁচে। হুহ।”

ফারহানা মুখ ঝাড়ি দিয়ে ঘর ছেড়ে বেরিয়ে গেল। চারু ধপ করে বিছানায় বসল। তার মাথায় কিছু ঢুকছে না। তার পরিক্ষা খারাপ হয়েছে ঠিক। কিন্তু সে যে ফেল করে বসবে তা ভাবে নি। সে আর তার ছোট মাথায় চাপ নিতে পারল না। তাড়াতাড়ি ফ্রেস হয়ে খাবার খাওয়ার জন্য উঠে দাড়াল।

বিকেল গড়িয়ে সন্ধ্যা নেমেছে খানিক আগেই। চারু তার বিছানায় ফ্যানের দিকে তাকিয়ে চিত হয়ে শুয়ে আছে। পরিক্ষায় ফেল করা নিয়ে তার তেমন মাথা ব্যথা নেই।তার মাথা ব্যথা অন্য জায়গায়। সে আজ এত কসরত করে এত দূরে জংগলের পাশের মাঠে গিয়ে লুকাল তাহলে রবিন তাকে খুজে পেল কেম্নে। তার ছোট মাথায় অন্য কিছু আসল না। রবিন কে সে পছন্দ করে। কিন্ত তার হুমকিধামকি সে পছন্দ করে না মোটেও। কোথায় কিভাবে কার সাথে কথা বলতে হয় এই লোক জানে না। সে ছোট্ট নরম মনের একটা মেয়ে কই তাকে আদর করে কথা বলবে। তা না ধমকে কথা বলে। পরক্ষণেই নিজের প্রেমিকের কথা মনে পড়ল তার। লজ্জায় চোখ মুখ রাঙা হল তার। তার প্রেমিক কত ভাল! কত মিষ্টি মিষ্টি কথা বলে। কত ভাল বাসা নিয়ে তাকায়। ভুল করলে ক্ষমা চায়। একবার চারু তার প্রেমিকের সাথে টিফিন পিরিয়ডে দেখা করতে স্কুলের পছনের রেন্ট্রি গাছের নিচে গেল। সাথে ছিল প্রাণের বন্ধবি ফুফাত বোন রানি। রানি একটু দূরে দাঁড়িয়ে বরই আচার খাচ্ছিল আর পাহাড়া দিচ্ছিল । আর সে রেন্ট্রি গাছের আড়ালে অপেক্ষা করছিল। কিন্তু তার প্রেমিক এসে কথা বলার এক পর্যায়ে হুট করে হাত টেনে ধরল। চারু তৎক্ষণাৎ রাগ করে চলে এসেছিল। অনেক বার ক্ষমা চেয়েও ফিরাতে পারে নি তাকে। সে দুই দিন স্কুলেও যায় নি অভিমান করে। তবে গোপন সূত্রে সে জেনেছিল এই দুই দিন ই তার প্রেমিক পুরুষ রাস্তায় দাঁড়িয়েছে, স্কুলে তাকে না পেয়ে মুখ ভার করেছিল সারাটাক্ষন। সাথে নাকি টিফিন ও খায় নি। চারুর মন অর্ধেক গলে গিয়েছিল। মানুষ মাত্রই ভুল! সে ক্ষমা করার মন মানসিকতা নিয়ে পরদিন ঈ স্কুলে রওয়ানা দিয়েছিল। তার মন অনেক নরম। কিন্তু ক্লাসে ঢুকার পর তার বাকি অর্ধেক রাগ গলে গলে বরফ থেকে পানি হয়ে গড়িয়ে পড়ল। ব্ল্যাক বোর্ডের উপরে একটা অনেক বড় সাদা কাগজে অনেক গুলো গোলাপের পাপড়ি দিয়ে ইংরেজিতে লেখা “SORRY”, নিচে ছোট করে তার প্রেমিকের নাম লিখা। এহেন কান্ড দেখে মুহূর্তেই চারুর প্রেমিকা মন লাফিয়ে উঠেছিল। সে তখনি তার প্রেমিকের দিকে চেয়ে মুচকি হেসে বুঝিয়ে দিয়েছিল তার সন্তুষ্টির কথা।

এসব কথা ভেবেই চারু দু হাতে মুখ ঢেকে ফেলল। এই কাগজ টা তার কাছেই আছে। স্কুলের পরে সে টেবিল টেনে তার উপর উঠে দেয়াল থেকে খুলে এনেছিল কাগজ টা। সে আড়চোখে সেই কাগজের লুকায়িত জায়গায় তাকাল। ফারহানা চিঠি খুজে পেলেও কাগজ খানা পায় নি। চিঠির কথা মনে পড়েই আরেক দফা মন খারাপ হল তার। কত সুন্দর কবিতা, ছন্দ ছিল চিঠিতে। প্রতি রাতে ঘুমানোর আগে সে লুকিয়ে লুকিয়ে পড়ত আর মুচকি হাসত। কিন্তু এখন সে কি নিয়ে থাকবে? সে ত একটা চিঠির ও জবাব দিতে পারল না। চিঠি যে নিয়ে গেল এবার জবাব দিবে কিভাবে সে?

এসব ভাবনার মাঝে ই ঘরের দরজা ধরাম করে খুলে ঘরে ঢুকল তার ছোট কাকার ছেলে রনি। সে এইবার ক্লাস থ্রিতে। শ্যামলা তার গায়ের রং। অনেক টা রবিনের মত দেখতে শ্যামবর্ণের হয়েছে বলে রবিনের নামের সাথে মিলিয়ে তার নাম রাখা হয়েছে ” রনি”। তার হাতে একটা আধ খাওয়া বিস্কুট। বাকিটা মুখে চিবাতে চিবাতে ঘরে ঢুকেছে সে। চারু ভ্রু কুচকে তাকিয়ে উঠে বসল। চরম বিরক্ত হল সে। সহবত শিক্ষা বলে কি কিছু নেই এই ছেলের? এইভাবে নক না করে কোনো মেয়ের ঘরে যে ঢুকতে নেই সে কি জানে না?

চারু তেতো মুখে বলল-
“না জিগায়া ঘরে ঢুকছস কেন? কোনো শিক্ষা দীক্ষা নাই?”

রনি একটা শয়তানি হাসি দিয়ে গাল ভরা বিস্কুট নিয়ে বলল-

‘আমার শিক্ষা পরে হইব। তোমারে চাচ্চু ডাকে। রবিন ভাই তোমার প্রেমিক রে ধইরা লইয়া আইছে। প্রেম কইরা ফেইল করছ, তাই তোমাদের বিয়ে পড়ায়া দিব”।

চলবে

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here