#প্রেম_প্রার্থনা
#তামান্না_আঁখি
#পর্ব-২১
“দাঁড়াও।। কার অনুমতি নিয়া তোমরা দুইজন এই বাড়িতে আসছো।”
গমগমে গলার স্বর শুনে সবাই দাঁড়িয়ে পড়লো। সবার নজর গেলো বসার ঘরের দিকে। সেখানে দাঁড়িয়ে আছেন কামরুজ্জামান। তার চোখ মুখ কঠিন।
সাজেদা বেগম এগিয়ে এসে বললেন-
“এইটা কি কও কামরুল? বাড়ির ছেলে মেয়ে বাড়িতে আসলে অনুমতি লাগব কেন?”
“লাগব ভাবি। এরা অনেক বড় অপরাধের অপরাধী।”
রাজিয়া বেগম অবাক হয়ে গেলেন। তিনি প্রশ্ন করলেন-
“কিসের অপরাধী? কি কও এসব?”
কামরুজ্জামান আর বেশি কিছু বলতে পারলেন না। বসার ঘর থেকে শাহজাহান আলীর স্বর ভেসে আসলো-
“কামরুল ওদের ঘরে আসতে দে।”
কামরুজ্জামান দরজা থেকে সরে গিয়ে বসার ঘরের সোফায় বসে পড়লেন। ফরহাদ আর স্মৃতি মাথা নিচু করে দাঁড়িয়ে আছে এখনো। সাজেদা বেগম ওদেরকে নিয়ে বসার ঘরে ঢুকলেন। তারপর স্বামীর দিকে তাকিয়ে বললেন-
“এসব কি কয় কামরুল? ছেলে মেয়ে দুইটা এত দিন পরে আসছে এখনো কি তারার উপরে রাগ কইরা থাকবা তোমরা?”
শাহজাহান আলী সোফায় হেলান দিয়ে বসলেন। ফরহাদ আর স্মৃতির দিকে তাকিয়ে বললেন-
” গ্রামের এই অবস্থায় তোমরারে আসতে না করা হইছিলো। তোমরা কাওরে না জানায়া গ্রামে ঢুকছো। যদি কোনো বিপদ ঘটত তখন কি করতা? ”
ফরহাদ নিচের দিকে তাকিয়ে বলল-
“মেলায় সবার সাথে যা হইছে তা জেনে আর না আইসা থাকতে পারলাম না।”
শাহজাহান আলী ফরহাদ এর দিকে না তাকিয়েই বললেন-
“তোমার মত ছেলের কাছ থাইকা আমি দায়িত্বজ্ঞান আশা করি না। কিন্ত গ্রামে ঢুকার আগে এইটুকু মাথায় রাখার দরকার ছিলো যে তোমার সাথে সৈয়দ বাড়ির মেয়েও আছে। আর দুই দিন আগেই মেলায় সৈয়দ বাড়ির মেয়ের উপর আক্রমণ হইছিলো।”
ফরহাদ একবার স্মৃতির দিকে তাকালো।স্মৃতি শাহজাহান আলীর দিকে এগিয়ে এলো।বলল-
“বড় চাচা, ফরহাদ ভাই আমারে ভালো ভাবেই নিয়া আসছে।”
শাহজাহান আলী স্মৃতির দিকে নরম চোখে চেয়ে বললেন-
“আমি তোরে আনার লাইগা লোক পাঠাইতাম আর দুই দিন পরেই। গ্রামের পরিস্থিতি ভাল না। একা একা গ্রামে ঢুকা উচিত হয় নাই।”
“আর হবে না বড় চাচা।”
স্মৃতি একটু এগিয়ে গেলো শাহজাহান আলীর দিকে। আড়চোখে তার বাবা কামরুজ্জামান কে দেখলো। কামরুজ্জামান কঠিন মুখ করে ফ্লোরের দিকে তাকিয়ে আছেন। স্মৃতি হাঁটু গেড়ে শাহজাহান আলীর সামনে বসলো। ধরা কন্ঠে বলল-
“তুমি কি আমার উপর রাগ কইরা আছো বড় চাচা?”
শাহজাহান আলী স্মিত হাসলেন। স্মৃতির মাথায় হাত রেখে সোজা হয়ে বসে বললেন-
“আমার বাড়ির লক্ষ্মীদের উপর রাগ করার দুঃসাহস আমার নাই রে মা। যা ঘরে গিয়া বিশ্রাম নে।”
স্মৃতি উঠে দাঁড়ালো। তার বাবার কাছে যাবে কিনা বুঝতে পারছে না। সে দাঁড়িয়ে ই রইলো। তখন ঘরে ঢুকলো ফারহানা। তার শরীরে জ্বর কিছুটা কমেছে।তাও শুয়ে ছিলো। হট্টগোল শুনে বের হয়ে এসেছে। ঘরে ঢুকেই ফারহানা চেচিয়ে উঠলো –
“ভাইয়ায়ায়ায়ায়া”
ফরহাদ বোনকে দেখে ঠোঁট মেলে হাসলো। ফারহানা কাছে আসে ফরহাদ কে জড়িয়ে ধরলো। ফরহাদ ও এক হাতে আগলে রাখলো বোনকে। ফারহানা স্মৃতিকে জড়িয়ে ধরে অভিমান নিয়ে বলল-
“একটা কল ও তো দেও না আমারে। আমার কথা কি তোমার মনে হয় না?”
“হবে না কেন হয় তো!!”
ফরহাদ গলা খাকারি দিলো। কামরুজ্জামান এর দিকে তাকিয়ে বলল-
“চাচা, ভালো আছো? ”
“ভাল আছি বাবা। বাড়ির ছেলে বাড়িতে আইছে এর চেয়ে খুশির কি আছে!! ”
তারপর উঠে এসে ফরহাদের কাঁধে হাত রেখে বললেন –
“আমি আব্দুল রে দিয়া তোর পছন্দের সব পাঠায়া দিতাছি। আজ তোর পছন্দমত রান্না হইব বাড়িতে।”
বলেই বাইরে বেড়িয়ে গেলেন। স্মৃতি তার বাবার যাওয়ার দিকে তাকিয়ে রইলো। তার চোখ ভর্তি পানি। তার বাবা একবারও তার দিকে তাকালো না পর্যন্ত। অথচ আগে স্মৃতির পছন্দে বাজার করে এনে বলত ” আজ আমার বড় মাইয়ার পছন্দে রান্না হইব।”
আগের কথা মনে পড়ে স্মৃতির চোখ থেকে এক ফোঁটা পানি টুপ করে পড়লো। ফরহাদ সেদিকে তাকিয়ে দীর্ঘশ্বাস ফেললো। বাবা মেয়ের মাঝখানের এই দেয়াল কি ভাংবে না? সে তার নিজের বাবার দিকে তাকালো। তার বাবা ও তার দিকে একবারও তাকায় নি।।
শাহজাহান আলী ছোট একটা শ্বাস ফেলে উঠে ঘরে চলে গেলেন। সাজেদা বেগম ওদেরকে ঘরে পাঠিয়ে দিয়ে রান্নাঘরে গেলেন। হালকা নাস্তা বানাবেন তিনি। সংগে দুই জা ও তার সাথে গেলো।
_______
শাখাওয়াত তালুকদার লোকবল নিয়ে হাসপাতলে ঢুকলেন। দলের অনেক লোক ই এখনো হাসপাতালে ভর্তি। তাদের খোঁজ খবর নিতেই তিনি এসেছেন। হাসপাতালের ওয়ার্ডে ঢুকেই তার নাক মুখ কুচকে গেলো। ভিতরে জামশেদ মজুমদার চেয়ার নিয়ে বসে চা খাচ্ছেন। তার আশে পাশে তার দলের লোকজন ভীড় করে আছে। তার মন মেজাজ খুব ই খারাপ হলো হাসপাতাল কর্তৃপক্ষের উপর। দুই বিরোধী দলের লোকজনকেই এক ওয়ার্ডে রেখেছে তারা। এইটা কেমন ফাজলামি!!! যাদের সাথে মারামারি করে হাসপাতালে ভর্তি তাদের সাথেই চিকিৎসা নিতে হচ্ছে। এর চেয়ে বড় ফাজলামি আর কি আছে?
শাখাওয়াত তালুকদার হাসপাতালের ওয়ার্ডে ঢুকলেন। ঢুকেই অন্য পাশে যেদিকে তার লোকজন রয়েছে সেদিকে গেলেন।জামশেদ মজুমদার সেদিকে তাকিয়ে চোখ ফিরিয়ে নিলো। হাতের চায়ের কাপ নামিয়ে রাখলো। মুখ টা এমন করলো যেন চা না বিষ পান করেছেন তিনি।
শাখাওয়াত তালুকদার কে দেখেই ওয়ার্ড বয় রা এগিয়ে এসে চেয়ার দিলো। কি খাবে জিজ্ঞেস করলো। তাদের হয়েছে যত জ্বালা! দুই বিরোধী দলের নেতা একই সময়ে হাসপাতালে এসেছেন। কাকে ছেড়ে কাকে সেবা করবে বুঝতে পারছে না। তার উপর ভয় আছে যদি দুজন এখানে আবার হাংগামা বাঁধিয়ে দেয়।
শাখাওয়াত তালুকদারের মেজাজ কিছু টা শান্ত হলো। ওয়ার্ড টাকে দুই ভাগে ভাগ করা হয়েছে সাদা ফিতা দিয়ে। দুই পাশে দুই দল কে রাখা হয়েছে। কারো সীমানায় কেউ যাচ্ছে না। তিনি আরাম করে বসলেন। তবে বেশি আরাম হলো না তার থেকে অল্প দূরেই পাশাপাশি জামশেদ মজুমদার বসে আছে। ঘাড় ঘুরালেই চোখাচোখি হবে। শাখাওয়াত তালুকদার শক্ত হয়ে বসে রইলেন। ওয়ার্ড বয় সবার জন্য চা নাস্তা নিয়ে আসলেন। জিজ্ঞেস করলেন-
“স্যার চায়ে চিনি বেশি হলে বলবেন চেঞ্জ করে আনব।”
শাখাওয়াত তালুকদার কিছু বলবেন এর আগেই জামশেদ মজুমদার খেক করে হেসে দিলেন। শাখাওয়াত তালুকদার ভ্রু কুচকে তাকালেন। তার দলের লোকেরাও তাকিয়ে আছে৷ জামশেদ মজুমদার হাসি থামিয়ে কৌতুকের সুরে তার দলের লোকদের কে বললেন-
“কিছু মানুষ ছোট থাইকা হুদা চিনি চাবায়া খাইয়া বড় হইছে, তাদের নাকি আবার চিনি বেশি হইয়া যাইব। পারলে চিনির ড্রাম ঢাইল্লা দে চায়ের মধ্যে তবুও কইব চিনি কম হইছে।”
শাখাওয়াত তালুকদারের মুখ শক্ত হয়ে আসলো।তিনি ঢের বুঝতে পারছেন কথাটা তাকেই বলা হয়েছে। দুই দলের লোক ই বিস্মিত হয়ে তাকিয়ে আছে। শাখাওয়াত তালুকদার চেয়ারের হাতলে হাত দিয়ে থাবা দিয়ে বললেন-
“তাও ভাল যে চিনি বেশি খাই। চিনি যারা কম খায় তাদের মতো মুখ দিয়া বিষ তো আর বাইর করি না।”
জামশেদ মজুমদার বড় বড় চোখ করে চাইলেন। কি? তার মুখ দিয়ে বিষ বের হয়? তিনি গরম কন্ঠে বললেন-
“নিজে মিষ্টি না খাইয়া মাইনষেরে খাওয়াইলে এই প্রতিদান ই পাওয়া লাগে। আমার মুখে এতই বিষ তেইলে আমার মুখের অর্ধেক খাওয়া লজেন্স খাইয়া মাইনষে এখনো বাইচ্চা আছে কেমনে এইটাই অবাকের বিষয়।”
দুই দলের লোকেরা অবাক হয়ে তাকিয়ে রইলো।৷ দুই দলের মাঝে কয়েকজন মধ্য বয়স্ক ছিল তারা মাথা দুলালো। ঘটনা সত্যি।। তারা ও এমন কথা শুনেছে।
শাখাওয়াত তালুকদার গর্জে উঠলেন-
“কি?? খোটা দেওয়া হইতাছে আমারে? আমি যে চুরি কইরা দাদীর বানানো আচার খাওয়াইছি তার বেলা কিছু না? মুরগির বড় বড় রান কার পেটে যাইত? হাহ। আমারে খোটা দেয়।”
জামশেদ মজুমদার ও ছেড়ে দিলেন না। তাচ্ছিল্য করে বললেন-
“হাহ!!!কত মাইনষের প্রেমের চিঠি বিলি করছি তার বেলা কি?বাপের দৌড়ানি খাইয়া যখন আমার বাড়িত আসত তখন রাইত বিরাতে কত রাইন্দা খাওয়াইছি। এসবের তো কৃতজ্ঞতা নাই।”
শাখাওয়াত তালুকদার ও জবাব দিতে ছাড়লেন না। এভাবে পাল্টাপাল্টি তর্ক চলতে লাগলো।দুই দলের লোকেরা একজন আরেকজনের দিকে মুখ চাওয়াচাওয়ি করতে লাগলো। তারা বিস্ময়ের চরম শিখরে পৌছে গেছে। এই দুই জাত শত্রু আবার কবে একজন আরেকজন কে খাওয়ালো?
দলের তরুণরা ভয় পেলো হাসপাতালে রোগী দেখতে এসে কি আবারো মারামারি বাঁধিয়ে দিবে নাকি। দলের পুরনোরা তেমন মাথা ঘামালো না। তারা আয়েশ করে বসে পান চাবাতে লাগলো আর দুই জন নেতার একে অন্যের কাহিনি কিচ্ছা শুনতে লাগলো। দুজনের তর্কাতর্কিতে বিভিন্ন গোপন কথাও বের হয়ে আসছে। শুনতে মজা লাগছে। অন্যরা তো আর জানে না যে এই দুই জাত শত্রু এক কালের জানে জিগার বন্ধু ছিলো।
_______
রানি বিরক্ত মুখে স্কুলের গেটে দাঁড়িয়ে আছে। চারু সেই যে গেলো আর এখনো আসছে না। কিছুক্ষন পর দেখা গেলো চারুকে। নীচের দিকে তাকিয়ে আনমনে হেঁটে হেঁটে আসছে। ভাবখানা এমন যে তার জীবনে দুঃখের শেষ নেই। রানি মুখ বাঁকালো। চারু কাছে আসতেই জিজ্ঞেস করলো –
“কই গেছিলি?”
“চোখে মুখে পানি দিছি।”
“তোর চোখ মুখ এমন লাগতাছে কেন? রাতে ঘুমাইসস না?”
চারু ক্লান্ত চোখে তাকিয়ে বলল-
“হু ঘুমাইছি। চল। ”
চারু আর রানি স্কুল গেট থেকে বের হয়ে বাড়ির পথ ধরলো।
তুহিন একটা চায়ের দোকানের বারান্দায় রাখা বেঞ্চিতে মাথার নিচে হাত রেখে চোখ বন্ধ করে শুয়ে আছে। তার চোখে সানগ্লাস। ফুরফুরে মেজাজে পা নাড়াচ্ছে সে। সজল চায়ের দোকানের বারান্দায় স্ট্যান্ড করে রাখা বাইকের উপর বসে আছে। চায়ের দোকান বন্ধ।৷ তুহিন হুট করে উঠে বসলো। চোখ থেকে সানগ্লাস খুলে সজলের দিকে তাকিয়ে বলল-
“ওই শোন। আমার প্রস্রাব চাপছে। আমি না থাকা অবস্থায় ওরা চইলা আসলে একটু আটকায়া রাখিস।”
বলেই তুহিন দোকানের পিছন দিকে যেতে লাগলো। সজল উঁকি ঝুঁকি মেরে দেখার চেষ্টা করলো তুহিনের হাতে কোনো বোতল আছে কিনা। কিন্তু দেখতে পারলো না তার আগেই তুহিন দোকানের পিছনে চলে গেলো। সজল নাক কুচকে ফেললো। এই খবিশ তুহিনকে দিয়ে তার বিশ্বাস নেই। এর আগের বার রানির সাথে যা করলো এইবার না জানি কি করে। সজল বিড়বিড় করে বলল-
“খবিশ একটা।”
তখনি চারু আর রানিকে আসতে দেখা গেলো। সজল লাফ দিয়ে বাইক থেকে নামলো। চারু আর রানির সামনে গিয়ে দাঁড়ালো। চারু ভ্রু কুচকে তাকিয়ে জিজ্ঞেস করল-
“কি সমস্যা?”
“খবিশ তুহিন নাকি তোমরারে কি কইব। একটু দাঁড়াও।”
রানি ফিক করে হেসে দিলো। চারু চোখ ছোট ছোট করে জিজ্ঞেস করল-
“কি তুহিন?”
সজল জিভ কাটলো। তড়িঘড়ি করে বলল-
“তুহিন ভাই!! তুহিন ভাই কইছে তোমরা একটু অপেক্ষা করতা।”
ততক্ষনে তুহিন বের হয়ে আসল। রানি আর চারুকে দেখে হেসে হাঁক ছাড়লো –
“আরে চালের নাড়ু যে। সুস্থ হইছো?”
চারু কিছু বলল না। তুহিন রানির দিকে তাকিয়ে চোখ মারলো। রানি সাথে সাথে চোখ সরিয়ে নিলো। তার ওইদিনের মেসেজ টার কথা মনে পড়ে গেলো। সে পণ করলো আর তাকাবে না এই ছেলের দিকে।
তুহিন একটু এগিয়ে এসে বললো-
“মহারানি একটু সামনে যাও তো চালের নাড়ুর সাথে একটু কথা আছে।”
রানি চারুর দিকে তাকালো। চারু ইশারায় রানিকে একটু সামনে যেতে বললো। রানি আর সজল দুজনই সামনে এগিয়ে গেলো। তুহিন চারুর দিকে তাকিয়ে একটা হাসি দিয়ে বলল-
“কি চালের নাড়ু, জংগলে রবিনের সাথে কেমন কাটাইলা? সাইকেল টা যে ম্যানেজ কইরা দিলাম, ওই ভ্রমন টা কেমন ছিল ওইটা বল?”
“কেমন ছিলো মানে?”
“আরে জংগলে গিয়া কি কি করলা? রবিন তোমার সাথে কথা বার্তা কতদূর আগাইলো?”
চারু খুব বিরক্ত হলো। বলল-
” রবিন ভাইর গুলি লাগছিলো । অনেক রক্ত পড়ছিলো। আমার কাঁধে ভর দিয়া বাড়ি ফিরছে।হাঁটার অবস্থায় ছিলো না। এই অবস্থায় কিসের কথা বার্তা হইব?”
তুহিন উপর নীচ মাথা ঝাড়া দিয়ে বলল-
“ধুরো, রবিন্যারে আমি ভাল রকম চিনি। ভং ধরছে।৷তোমারে বোকা পাইয়া তোমার কাঁধে ভর দিয়া বাড়িত যাওয়ার লাইগা ভং ধরছে। বুঝছো??”
“ভং ধরছে?”
“আরে হ! স্কুলে পড়াকালীন রবিন্যার মাথা ফাটায় দিছিলাম আমি। সেই ফাটা মাথা নিয়া হাসপাতালে গিয়া সেলাই কইরা একা একা বাড়িতে গেছে। তোমারে পাইয়া একটু সুযোগ নিলো আর কি।”
চারু বিস্ফোরিত চোখে তাকাল।একটা মানুশ কি করে এতটা বজ্জাত হইতে পারে? একটা গুলি লাগা মানুষকে নিয়ে এই ধরনের কথা কিভাবে বলতে পারে? আসলেই তুহিন একটা খবিশ। চারু গরম কন্ঠে বলল-
“এই সমস্ত আজাইরা কথা না কইয়া নিজের কাজ করো গিয়া।”
তুহিন রানির দিকে তাকাল তারপর চারুর দিকে তাকিয়ে বলল-
“ঠিক আছে তাইলে নিজের কাজেই গেলাম। তুমি একটু পরে আইসো রানির সাথে আমার একটু পারসোনাল কথা আছে। আর তুমি রবিন রে একটু টাইট দিও, শা*লা একটা বাট*পার।”
বলেই তুহিন বড় বড় পা ফেলে রানির দিকে এগিয়ে গেলো। চারু হতবাক হয়ে গেলো। এত খারাপ ছেলে সে দুনিয়ায় আর একটাও দেখে নাই। একটা অসুস্থ মানুষকে কতগুলা অপবাদ দিলো!!! চারু ও তুহিনের পিছু পিছু এগুলো। কিছুতেই সে রানির সাথে তুহিন কে কথা বলতে দিবে না।
তুহিন রানির কাছে গিয়ে পিছন ফিরে দেখলো চারু আসছে। তড়িঘড়ি করে চাপা স্বরে বলল-
“আজ সন্ধ্যার পরে তোমার বাড়ির পিছনে থাকবাম। বের হইয়ো। কল ধইরো কেমন? ”
পরে চারুর দিকে তাকিয়ে একটা শয়তানি হাসি দিয়ে সজলের পিছনে বাইকে উঠে চলে গেলো।
চারু এগিয়ে এসে রানিকে প্রশ্ন করল-
“খবিশ তুহিন কি কইছে তোরে?”
রানির বুক কাঁপছে। চারুর প্রশ্নে থতমত খেয়ে বলল-
“কইছে আমারে নাকি সুন্দর লাগতাছে। তোরে কি কইছে?”
“চল, যাইতে যাইতে বলি। ”
চারু আর রানি দুজনেই বাড়ির পথ ধরল।
চলবে