#তুই_শুধু_আমার 💕
#Nusrat_Jahan_Bristy
#Part_19
রাত সাড়ে বারোটা ইশা গভীর ঘুমে আছন্ন। ঘুমের মাঝে ইশার মনে হলো কেউ ওর পেটে শীতল হাত রেখেছে। ইশার কানের কাছে কেউ একজন নেশাভরা কন্ঠে ইশাকে ডাক দেয় ইশার বুঝতে বাকি রইল না এটা যে জিসান।
–জানএএএএ….
–প্লিজ ডির্স্টাব করো না তো শান্তিতে একটু ঘুমাতে দাও।
–এত সহজে তো তোকে ঘুমাতে দিবো না আমি জান আর আমি জানি তুই জেগে গেছিস অনেক ঘুমিয়েছিস তুই আমার ঘুম হারাম করে আর এখন তুই আমার এত কাছে থেকেও তোকে কাছে পাবো না তা কি করে হয় জান?
ইশা বুঝে গেছে জিসান কি চাইছে আজকেও জিসান ইশাকে নিয়ে পড়ি দেয় এক সুখের ঠিকানায় যেখানে শুধু আছে ভালোবাসা আর ভালোবাসা। দুটো দেহ আবারও একে ওপরের কাছে গিয়েছে।
এভাবে চলতে থাকে ইশা আর জিসানের দুষ্টু মিষ্টি ভালোবাসার দিন গুলো।
সকালে সবাই খাবার টেবিলে নাস্তা করছে। এর মাঝে সালিহা বেগম বলে।
–জিসান!
–হুম বলো।
–তুই আজকে ইশাকে আর জিসাকে নিয়ে ঘুরতে যাবি।
–কিহ??
–হুম অনেক দিন হয়েছে! ওরা ঘুরতে যাই নি তাই তুই ওদেরকে নিয়ে আজকে ঘুরতে যাবি।
–মা আমি পারবো না আমার অনেক কাজ আছে অফিসে… আর এই ঘুরতে যাওয়ার প্ল্যানটা নিশ্চয় ইশু তোমাকে দিয়েছে।
ইশা তড়িৎ বেগে বলে উঠে।
–মামনি দেখছো তোমার ছেলে সবসময় আমার উপরে সব দোষ দেয়।
–আরে ইশা কিছু বলে নাই। আমি ভাবলাম মেয়েটার নতুন বিয়ে হয়েছে। কোথাও ঘুরতেও যাওয়া হয় নি তাই.উ বললাম আর কি।
–হুম হুম সে তো দেখতেই পারছি ঘুরতে যাওয়ার প্ল্যান টা কার?
–উফফ জিসান তুই আর ওকে খোচা দিয়ে কথা বলিস না তো তুই ওদের দুজনকে নিয়ে বের হবি ব্যাস শেষ কথা।
–ওকে বিকালে রেডি থাকিস আমি তোদেরকে নিয়ে যাবো।
–ইয়য়য়য়াহুহুহ! কি মজা….
–এতো লাফার কিছু হয় নি। অফিসের কাজ না থাকলে নিয়ে যাবো ঘুরতে। তা না হলে যাবো না।
–ওকে! একবার যখন বলেছে নিয়ে যাবে তাহলে নিয়ে যাবে আমি জানি।
জিসান অফিসে চলে যায়।
বিকালে হয়ে গেছে ইশা গালে হাত দিয়ে বসে বসে ভাবছে কি ড্রেস পড়ে যাওয়া যায়। এমন সময় জিসা ইশার ঘরে এসে ইশাকর এভাবে বসে থাকতে দেখে বলে
–আরে তুমি এভাবে মুখটা বাংলার পাঁচের মতো করে বসে আছো কেন?
–ভাবছি।
কি??
–আজকে কি ড্রেস পড়ে যাবো ঘুরতে।
–আমরাও তো একেই চিন্তা কি ড্রেস পড়ে যাবো তার জন্য তো তোমার কাছে আসলাম।
ইশার পাশে বসে বলে।
–আচ্ছা জিসা একটা কাজ করি।
–কি কাজ??
–সব গুলো ড্রেস আমরা পড়ে ট্রাই করে দেখি কোন ড্রেস পড়লে আমদের সুন্দর লাগে।
–ভাবি তুমি কি পাগল হয়ে গেছো এত গুলো ড্রেস পড়ে ট্রাই করলে আমাকে আর আমার জায়গাতে পাওয়া যাবে না।
–কেন পাওয়া যাবে না?
–দেখো এত গুলো ড্রেস পড়ে ট্রাই করলে অনেক সময় খরচ হবে মোট কথা হলো এত গুলো ড্রেস এত বার চেইন্জ করে পড়াটা একটু কঠিন বিষয় হয়ে যাবে।
–হুম ঠিক বলছো এমনি তো আমার দুজন শুটকি তার উপর যদি এত গুলো ড্রেস একটার পর একটা পড়ে ট্রাই করতে থাকি তো আজকে আর ঘুরতে যেতে পারবো না। ঘরেই শুয়ে থাকতে হবে।
–সত্যি বলছো ভাবি আমাদের যা অবস্থা। আচ্ছা ভাবি চলো মাকে গিয়ে জিঙ্গেসা করি কোন ড্রেসটা পড়ে যাবো।
–হুম গুড আইডিয়া চলো তাড়াতাড়ি চলো।
ইশা আর জিসা সালিহা বেগমের ঘরে যায়।
–মামনি আসবো।
–আরে ভিতরে আয় তো তার জন্য আবার অনুমতি নিতে হয় নাকি।
–মা… একটা হেল্প করবা!
–কি?
–মামনি আসলে আমরা দুজন খুব দুটানাতে আছি।
–দুটানা কিসের দুটানা??
–আসলে মামনি আমরা কি ড্রেস পড়ে। যাবো আজকে ঘুরতে তুমি বলে দিবে।
–হে মা আমরা কিছুই বুঝতে পারছি না কি ড্রেস পড়ে যাবো।
–আমার দুই মেয়েকে যে কোনো ড্রেস পড়লেই পরির মতো লাগে বুঝলি।
–তারপরেও তুমি একটু বলে দাও।
–উফফ তোরা একটা ড্রেস পড়ে চলে যা না। আমার অনেক কাজ আছে।
–ঠিক আছে।
ইশা আর জিসা বের হয়ে আসে ঘর থেকে। জিসা বলে।
–এখন কি করবো??
–পেয়েছি বুদ্ধি।
–কি বুদ্ধি..??
–আমার সাথে তাড়াতাড়ি চলো।
ইশা আলমারিটা খুলে প্রত্যকটা ড্রেস আঙ্গুলে গুনে জিসার সামনে ওর দশটা আঙ্গুল এগিয়ে দিয়ে বলে।
–যেকোনো একটা আঙ্গুল ধরো!
–কেন???
–আরে তুমি ধরো তো।
–ঠিক আছে।
জিসা ইশার একটা আঙ্গুল ধরে।
–এই ড্রেসটা পড়ে যাবো আমি।
–বাহ তোমার মাথায় কি বুদ্ধি কি সুন্দর করে ড্রেস ঠিক করলে আমাকেও এভাবে ড্রেস ঠিক করতে হবে।
প্রায় আধ ঘন্টা ধরে জিসান আর সাঈদ দাঁড়িয়ে আছে গাড়ির সাথে হেলান দিয়ে। জিসান বিরক্তিকর ভাবে নিয়ে বলে।
–এতক্ষন লাগে মেয়েদের সাজতে।
–ভাইয়া মেয়েরা সাজতে একটু ভালোবাসে বুঝলে।তাই আজকে হয়তো ওরা দুজন একটু বেশি সাজুগুজো করছে।
–তুই কি করে জানলি মেয়েরা সাজতে ভালোবাসে?
–হা হা হা এটা পৃথিবীর সব ছেলেরাই জানে যে মেয়েরা সাজতে একটু ভালোবাসে বুঝলে। আর এর জ্বালাও জানে। আল্লাই জানে আর কতক্ষন দাঁড়িয়ে থাকতে হবে আমাদের।
জিসানের চোখ যায় দরজার সামনে একটা সাদা পরী তার সামনে এগিয়ে আসছে। ইশা একটা সাদা ড্রেস পড়েছে সামনের চুল গুলো কার্লি করা। চোখে গাঢ় কাজল ঠোঁটে হালকা লিপস্টিক মুখে তেমন মেকাপ নেই তাতেই যেন জিসানের চোখ আটকে গেছেয ইশা তেমন সুন্দর করে সাজে নি জিসানের ভয়ে। জিসান নিজের হাতটা বুকের মাঝে রাখে।
–জিসান তুই তো আজ গেলি রে।
সাঈদও তাকিয়ে দেখে জিসা তার সামনে দাঁড়িয়ে আছে। একটা মেরুন কালারের ড্রেস পড়ে। চুল গুলো ছুটি করেছে। এক হাতে রেশমি চুড়ি। মুখে তেমন মেকাপ করে নাই। আজকে জিসাকে একদম পিচ্চি পিচ্চি লাগছে।
–ভাইয়ায়ায়ায়ায়ায়া……..
ইশার ডাকে জিসানের ধ্যানে ভাঙ্গে আর সাথে সাথে বলে উঠে।
–কি হয়েছে এভাবে ষাড়ের মতো চিল্লাছিস কেন?
–কখন থেকে ডেকেই যাচ্ছি কিন্তু কোনো পাত্তাই নেই তোমার কোথায় হারিয়ে গেছো তুমি?
–কোথায় হারবো মানে। আমি দেখছিলাম তুই কতক্ষন ধরে আমাকে ডাকতে পারিস।
–ওওওওও তাই বুঝি। সে তো আমি বুঝতে পারছি।
–একদম চুপ বেশি কথা বললে ঘুরতে নিয়ে যাবো না বলে দিলাম। চুপচাপ গাড়িতে গিয়ে উঠ।
জিসা সাঈদের দিকে তাকিয়ে দেখে সাঈদ ডেবডেব করে তাকিয়ে আছে ওর দিকে। খানিকটা ভয় লাগছে যদি জিসানের সামনে এসব ধরা পরে তাহলে কেলেঙ্কারি হয়েছে। ইশা আর জিসা গাড়িতে গিয়ে উঠে বসে।
–কি রে? সাঈদ তোকে গাড়িতে উঠার জন্য ইনভাইট করতে হবে।
–ভাইয়া ভাইয়া….
–কি হয়েছে?
–ভাইয়া দেখো তোমার আর ভাবির নতুন বিয়ে হয়েছেয তার জন্য তোমাদের কিছুটা সময় একান্তে সময় কাটানো উচিত তাই না।
–কথাটা তুই ঠিক বলেছিস।
–তাই বলছিলাম আমি আর জিসা শুধু শুধু কেন কাবাব মে হাড্ডি হবো বলো। তাই তোমার দুজন এক গাড়িতে যাও আর আমার দু জন অন্য গাড়িতে।
–তাই তো আমি তো এটা ভেবে দেখি নি…….এই না হলে আমার ভাই য ইশা জিসা গাড়ি থেকে তাড়াতাড়ি নাম।
ইশা চিৎকার করে বলে।
–কেন? আমি নামবো না।
–নামতে বলছি নাম।
ইশা আর জিসা গাড়ি থেকে নামে। ইশা রাগী জিসানকে বলে।
–আমি জানতাম তুমি এটা বলবা গাড়ি থেকে নাম। লাগবে না আমাদের কে ঘুরাতে। আমরা নিজেরাই ঘুরবো এই জিসা চলো।
–আরে জান শুন না।
–কি হয়েছে? আর কি শুনবো একটু ঘুরতে চাইছি আর তুমি একটু ঘুরাতে নিয়ে যেতে পারো না। ঠিক আছে ঘুরবো না আমি তোমার সাথে।
–জান রাগ করছিস কেন আমার পুরা কথাটা না শুনেই চলে যাবি আমি তো তোকে ঘুরতে নিয়ে যাবো ই।
–তাই তাহলে গাড়ি থেকে নামতে বললে কেন???
–আরে তুই আর আমি এক গাড়িতে যাবো আর সাঈদ আর জিসা এক গাড়িতে যাবে বুঝলি।
–আলাদা গাড়িতে যাবো কেন? এক গাড়িতে গেলে সমস্যাটা কি??
–তুই কি কিছুই বুঝিস না?
ইশা অবাক হয়ে বলে।
–কি বুঝবো???
–কিছু না তুই চল আমার সাথে।
জিসান ইশার হাত ধরে গাড়িতে নিয়ে বসায় আর জিসান নিজেই ড্রাইভিং সিটে বসে গাড়ি স্টার্ট দেয়া।
এদিকে সাঈদ আর জিসা এখনও দাঁড়িয়ে আছে। জিসা মনে মনে বলে।
–এই রে কাম সারছে আজকে আমার কপালে কি আছে আল্লাই জানে।
এমন সময় সাঈদেে গম্ভীর কন্ঠ ভেসে আসে।
–কি রে? তুই কি যাবি নাকি যাবি না। নাকি আমার সাথে যাওয়ার ইচ্ছা নেই তোর।
–আমি কখন বললাম যাবো না তোমার সাথে।
–ওও যাবি! তাহলে দাঁড়িয়ে আছিস কেন?? গাড়িতে উঠ।
–হে উঠছি ( ভয় পেয়ে)
জিসা গাড়ির পিছনে উঠতে চাইলে উঠতে পারে না।
–ওই আমাকে কি তোর গাড়ির ড্রাইভার মনে হয়?
–না কেন?
–তাহলে গাড়ির পিছনে গিয়ে বসছিস কেন??? সামনে এসে বস।
–না মানে আসলে গাড়ির সামনে বসলে আমার বমি হয় তাই আমি পিছনেই বসি।
–ও মা তাই বুঝি। গাড়ির সামনে বসলে বমি হয় আমার জানটার। কিন্তু আগে জানতাম না তো তর যে বমি হয়।
–না মানে আসলে।
–চুপচাপ সামনে গিয়ে বস আর না হলে আমি তকে কোলে করে গাড়িতে বসাবো।
–না না আমি গাড়িতে নিজেই উঠছি।
–গুড।
জিসা আস্তে আস্তে করে গাড়িতে উঠে বসে। সাঈদ ড্রাইভিং সিটে গিয়ে বসে দেখে জিসা সিট বেল্ট লাগাই নি। সাঈদ সিট বেল্ট লাগানোর জন্য জিসার কাছে যেতেই জিসা ভয়ে চোখ মুখ বন্ধ করে নেয়। সাঈদ জিসার কাছ থেকে সরে এসে বলে।
–চোখটা খুল।
জিসা আস্তে আস্তে নিজের চোখ খুলে। সাঈদ জিসার মুখের সামনে গিয়ে বলে।
–কি ভেবেছিলি? আমি কিছু করে ফেলবো ভয় পাওয়ার কিছু নেই এমন কিছু করবো না যাতে করে তুই কষ্ট পাস। যা করার বিয়ের পরপরেই করবো। কি বলিস তুই?
চোখ টিপ দিয়ে বলে। জিসা তো সাঈদের কথা শুনে লজ্জায় লাল হয়ে গেছে।
–হইছে আর লজ্জা পেতে হবে না এবার আমরা যাই।
–হুম।
#চলবে