#তুই_শুধু_আমার 💕
#Nusrat_Jahan_Bristy
#part_23
সালিহা বেগম আমাদের ছোট্ট রিহিকে কোলে নিয়ে বসে আছেন। বেডে শুয়ে থাকা জিসা মাকে জিঙ্গেসা করে।
–মা ভাইয়া কোথায় এখনও তো এলো না।
–এসে যাবে তুই চিন্তা করিস না।
সালিহা বেগম পিছনে তাকিয়ে দেখে জিসান কেবিনের দরজার সাথে দাঁড়িয়ে আছে।
–এই তো জিসান চলে এসেছে! কি রে এত দেরি করে আসলি যে?
–ভাইয়া তুমি কোথায় ছিলে এতক্ষন? তোমার চোখ মুখটা এমন দেখাচ্ছে না।
জিসা শোয়া থেকে উঠতে উঠতে কথাটা বলে। জিসান বোনকে শোয়া থেকে উঠতে দেখে বলে।
–আরে আরে কি করছিস কি তুই? তুই শুয়ে থাক উঠবি না একদম আমি ঠিক আছি আর তোর এখন বিশ্রামের প্রয়োজন। তাই শুধু নিজেকে নিয়ে চিন্তা কর বুঝলি।
–হুম কিন্তু!
–কোনো কিন্তু না চুপচাপ শুয়ে থাক।
সালিহা বেগম বলেন।
–জিসান তুই তর ভাগনিকে দেখবি না দেখ একদম জিসার মতো দেখতে হয়েছে তাই না।
এই পাঁচ বছরের মাঝে সাঈদ আর জিসার বিয়ে হয়ে গেছে। সালিহা বেগম জিসা আর সাঈদের নবজাতক সন্তানকে জিসানের কোলে দেয়। জিসান রিহিকে কোলে নিতেই জিসানের একটা আঙ্গুল ধরে ফেলে। রিহি জিসানের আঙ্গুল ধরতেই জিসানের অতিতের কিছু কথা মনে পড়ে যায়। আবারো ডুব দেয় অতিতের কিছু সুন্দর স্মৃতির মাঝে।
–আচ্ছা জান যখন আমার আর তোর একটা বেবি হবে তখন ও যখন আমার প্রথম একটা আঙ্গুল ধরবে তখন পৃথিবীর সব থেকে সুখী মানুষটা আমি হবো বুঝলি।
–হুম।
–কি হুম হুম করছিস কখন থেকে?
–আমার ভীষন ঘুম পাচ্ছে এখন আমি একটু ঘুমাই।
–হায়রে ঘুম তৌর এই ঘুমটাই আমারে খাইছে।
–হুম….
সাঈদের ডাকে জিসানের ধ্যান ভাঙ্গে।
–কি হলো? ভাইয়া কোথায় হারিয়ে গেলে?
এর মাঝে সালিহা বেগম বলেন।
–জানিস আমার খুব ইচ্ছা ছিল মেয়ে ছেলের নাতি নাতনি নিয়ে আমার এই বুড়ো বয়সটা কাটিয়ে দিবো কিন্তু আমার এই পোড়া কপালে এই সুখ সইলো না।
–মা প্লিজ তুমি একটু চুপ করবে! যখন যা মনে আসে তাই বলে দাও পরিস্থিতি বুঝে কথা বলো।
জিসার কথা শুনে সালিহা বেগম হাসিহাসি মুখ নিয়ে বলেন।
–হে হে সত্যি তো আজকে তো আমাদের খুশির দিন। আমাদের ঘর আলো করে যে একটা পরী এসেছে।
–ভাইয়া তুমি ঠিক আছো তো?
জিসানের কাঁধে হাত রেখে বলে।
–হে আমি ঠিক আছি।
জিসান সালিহা বেগমের কোলে রিহিকে দিয়ে কেবিন থেকে বের হয়ে বেলকনির রেলিং শক্ত করে ধরে দাঁড়িয়ে থাকে। জিসানের মনের মাঝে যে অনেক কষ্ট জমে আছে যা চাইলেও ও প্রকাশ করতে পারছে না। কারণ ও তো একজন পুরুষ মানুষ পুরুষ মানুষ চাইলেও কান্না করতে পারে না। তদের সবসময় নিজেকে শক্ত রাখতে হয়। জিসানের কাঁধে কেউ একজন এসে হাত রাখে। জিসান পাশ ফিরে তাকিয়ে দেখে সাঈদ।
–সাঈদ তুই এখানে!
–ভাইয়া আমি বুঝতে পারছি তোমার মনের কষ্টটা। কিন্তু আমরা যে কিছুই করতে পারবো না। সব কিছু আমাদের হাতের বাইরে অনেক তো খুজেছি এই পাচঁটা বছর ভাবিকে কিন্তু কোথাও পায় নি।
–সাঈদ আমি আর পারছি না ভেতরে ভেতরে আমি তিলে তিলে শেষ হয়ে যাচ্ছি। আমি এই কষ্ট আর সহ্য করতে পারছি না বুকের ভেতরটা জ্বলে পুড়ে শেষ হয়ে গেছে।
জিসান সাঈদকে জড়িয়ে ধরে। জিসান নিজের কষ্টটা আর চেপে ধরে রাখতে পারলো না মনের মাঝে।
–ভাইয়া প্লিজ তুমি শান্ত হও। তুমি ভেঙ্গে পড়লে আর বাকিরা কি করে বেঁচে থাকবে বলো। মা বাবা জিসা যে ওরা তোমার দিকেই তাকিয়ে বেঁচে আছে যদি তোমার কিছু হয়ে যায় তো ওরা কি করে থাকবে?
–হে আমাকে শক্ত থাকতে হবে ভেঙ্গে পড়লে চলবে না।
–আর দেখো ঠিক একদিন না একদিন ভাবি ফিরে আসবে আমার মন বলছে।
–জানি না তোর কথা অতোও সত্যি হবে কি না? তবে ও যেখানেই আছে ও যেন ভালো থাকে আমি এটাই চাই।
এক সপ্তাহ পর জিসান আর ওর পরিবারকে নিয়ে বিদেশ থেকে দেশে ফিরে আসে। জিসার জন্যই মুলত বিদেশে আসা হয়ে ছিল। অন্য দিকে ইশা জিসানদের আগেই দেশে ফিরে গিয়েছে।
__________
আজকে ইশার অফিসে জয়েন করার প্রথম দিন তালুকদার গ্রুপ অফ ইন্ডাস্ট্রিতে। এত বছর গুলা ইশা কখনই বের হতো না বাড়ি থেকে সবসময় নিজেকে আঁড়াল করে রেখেছে খুব বেশি প্রয়োজন হলে বাড়ি থেকে বের হতো বের হলেও বোরকা পড়ে বের হতো আর সাথে গাড়ি করে নিয়ে যেত। কিন্তু আজকে থেকে ইশাকে প্রতিদিন অফিসে যেতে হবে। আজকে থেকে ইশার জীবনের নতুন অধ্যায় শুরু।
ইশা আয়েশা বেগম আর একলাস তালুকদােকে সালাম করে বলে।
–মা বাবা আমি আসি এখন।
একলাস তালুকদার মেয়ের মাথায় হাত রেখে বলেন।
–আজকে আমার স্বপ্ন পূরন হলো আমার মেয়েটা আজকে বাবার অফিসে জয়েন করছে দোয়া করি মা তুই যেন সবসময় ভালো থাকিস।
–সাবধানে থাকিস।
–হে মা….
এর মাঝে ইশান এসে বলে।
–মাম্মাম আমি যাবো না তোমার সাথে।
–না সোনা তুমি তোমার দাদু আর দাদির সাথে থাকো আমি একটা কাজে যাচ্ছি তো। আমি খুব তাড়াতাড়ি ফিরে আসবো।
–কিন্তু তুমি বলেছিলে আমাকে আজকে নতুন খেলনা কিনে দিবে।
–খেলনা লাগবে তোমার ঠিক আছে রহিম চাচা ( কাজের লোক)মার্কেটে গিয়ে তোমার জন্য খেলনা কিনে নিয়ে আসবে।
ইশান বায়না ধরে বলল।
–নাহ তুমি আমাকে কিনে দিবে।
–আচ্ছা বাবা ঠিক আছে। আজকে তো কিনে দিতে পারবো না। কিন্তু কালকে কিনে দিবো।
–প্রমিজ করো তাহলে।
–প্রমিজ।
–ঠিক আছে।
–তাহলে মাম্মামকে বাই বাই কিসিটা দিয়ে দাও।
ইশান ইশার গাল চুমি দেয়। ইশাও ইশানের কপালে একটা চুমু দিয়ে বলে।
–তাহলে আমি এখন আসি আমার ছোট ইশান বাবা।
–হুম।
–মা বাবা আমি আসি তোমরা সাবধানে থেকো।
____
এ দিকে জিসান বসে আছে অফিসের কেবিনে। সাঈদ কেবিনের দরজা নক করে বলে।
–স্যার আসবো!
—হে হে ভিতরে আয় আর তোকে কত বার বলেছি স্যার বলে ডাকবি না আমাকে।
–সরি মনে থাকে না।
–ঠিক আছে কিসের জন্য এসেছিস সেটা বল।
–ভাইয়া আজকে আমাদের কোম্পানির সাথে দেশের যত নামকরা কোম্পানি আছে তাদের মাঝ থেকে একটা কোম্পানির সাথে এই ডিলটা ফাইনাল করতে হবে। তার জন্য আজকে একটা মিটিং রাখা হয়েছে।
–ঠিক আছে কয়টায় মিটিং।
–বিকাল চারটায়।
–ঠিক আছে।
____
ইশা অফিসের সবাই ওয়েলকাম জানায়। নিজের কেবিনে ইশা বসে আছে এমন সময় রিয়াজ ইশার পিএ দরজায় নক করে বলে।
–মে আইকাম ইন ম্যাডাম।
–ইয়েস কাম ইন।
–ম্যাডাম আজকে একটা মিটিং আছে আমাদের।
–মিটিং কিসের?
–আসলে ম্যাডাম আমাদের কোম্পানিটা নামকরা ঠিক আছে কিন্তু স্যার অসুস্থ হয়ে যাওয়ার পর পরেই কোম্পানির লস হতে শুরু করে তাই যে করেই হোক আমাদের আজকের ডিলটা ফাইনাল করতেই হবেই।
ইশা চিন্তিত হয়ে বলে।
–ওকে! তাহলে মিটিংটা কয়টায়?
–এই তো ম্যাডাম বিকাল চারটায়।
–ঠিক আছ! আপনি এখন আসতে পারেন।
–জি ম্যাডাম।
–আর হে এই ছয় মাসের যত ফাইল আছে সব ফাইল আমি একটু দেখতে চাই।
–ওকে ম্যাডাম আমি পাঠিয়ে দিবো।
_____
ইশা ফাইল চেক করছে আর ভাবছে।
–এই ছয় মাসে কোম্পানি এতটা লস হয়ে গেছে। যে করেই হোক আজকের ডিলটা আমাকে পেতেই হবে।
বিকাল চারটা……
জিসান বসে আছে মিটিং রুমে। সবাই এসে গেছে কিন্তু এখনও তালুকদার কোম্পানির এমডি আসে নি।
জিসান কিছুটা রাগী স্বরে বলে।
–সো আমরা কি মিটিং শুরু করতে পারি।
–এখন তো তালুকদার কোম্পানি থেকে কেউ আসে নি।
–তো আমি কি করবো? ওনাদের হয়তো এই ডিলটার কোনো প্রয়োজন নেই তার জন্য আসবে না আর দেরি করে আসলে ওনার সাথে আমি কোনো ডিল ফাইনাল করবো না। ওনাদের কাছে কি সময়ের কোনো দাম নেই। মিটিং এর টাইম হলো গিয়ে চারটায় আর এখন বাজে চারটা দশ আর….
ইশা মিটিং রুমের দরজা খুলে ঢুকে বলে অস্থির কন্ঠে বলে।
–সরি সরি আসলে আমাদের আসতে একটু লেইট হয়ে গেছে রাস্তায় জ্যাম ছিল তার জন্য।
জিসান পিছন ফিরে ছিল যার জন্য ইশার মুখটা এখনও দেখি নি। কিন্তু ইশার কন্ঠ শুনে জিসানের বুকের ভেতেরটা ধ্বক করে উঠে। জিসান সামনে তাকিয়ে দেখে সত্যি ইশা তার সামনে দাঁড়িয়ে আছে। ইশা জিসানকে দেখে ভীষন শকড খায় ভাবতেও পারে নি ইশা জিসানের মুখোমুখি এভাবে হতে হবে। জিসান নিজের চোখকে বিশ্বাস করতে পারছে না ইশা যে তার সামনে দাঁড়িয়ে আছে। জিসান ইশার পা দেখে মাথা পর্যন্ত দেখে। ইশার তো ভয়ে সারা শরীর ঘামছে এসি থাকা সত্ত্বেও জিসান যেভাবে ইশার দিকে তাকিয়ে আছে রাগী চোখে। জিসান সাঈদকে ইশারা করে সবাইকে মিটিং রুমে থেকে যেন নিয়ে যায়।
#চলবে