#তুই_শুধু_আমার 💕
#Nusrat_Jahan_Bristy
#Part_27
দেয়ালের চারপাশে শুধু ইশার ছবি। কোনো ছবিতে হাসি-মুখে রয়েছে কোনোটাতে ঠোঁট ফুলিয়ে রেখেছে কোনোটাতে কাঁদো কাঁদো মুখ করে রেখেছে। আজ থেকে পাচঁ বছর আগ পর্যন্ত জিসানের সাথে ইশা যত মুর্হূত কাটিয়েছে সেই সব ছবি দেয়ালে লাগানো। বেডের মাথার দেয়ালে আছে জিসান আর ইশার ছবি যে ছবিটাতে ইশা বসে আছে জিসানের কোলে। ইশার সব কিছু মাথার উপর দিয়ে যাচ্ছে কিছু বুঝতে পারছেনা। জিসান ইশার পেছনে এসে দাঁড়িয়ে একটা কাশি দেয়। ইশা পেছন ফিরে তাকিয়ে বলে।
–এসবের মানে কি?
–কোন সবের?
–এই ঘরে আমার ছবি কেন?
–পাঁচ বছর ধরে এই ঘরে ছবি গুলো আছে।
–আপনার স্ত্রী আপনাকে কিছু বলে নাই যে এই ছবি গুলো এই ঘরে কেন?
জিসান বিস্মিত নয়নে ইশার দিকে তাকিয়ে বলে।
–আমার স্ত্রী মানে,,, আমার স্ত্রী কেন কিছু বলবে তার ছবি গুলো এখানে থাকলে?
–কেন আপনার স্ত্রী রুহি কিছু বলে নাই আপনাকে? আমি তো রুহি আপুর বড় শত্রু। তাই রুহি আপু নিশ্চয়ই চাইবে না ওর ঘরে আমার ছবি…..
–হোয়াট? রুহি আমার স্ত্রী মানে কি বলতে চাইছিস তুই?
–আমি যাওয়ার পর আপনি রুহি আপুকে বিয়ে করেন নাই মিস্টার চৌধুরী।
–বাহ আসাধারন! তুই আমাকে এতোটা অবিশ্বাস করিস ইশু এতোটা
–অবিশ্বাস মানে….
জিসান ইশার বাহু ধরে বলে রাগী গলায় বলে।
–আসলে তুই আমাকে কোনো দিন ভালোই বাসিস নি তাই এতটা অবিশ্বাস করিস আমাকে। ভালবাসলে হয়তো এতটা অবিশ্বাস করতি না তুই আমাকে। অন্তত একবার আমাকে জিজ্ঞেস করতি আমি কেন এসব করেছি? কিন্তু না তুই আমাকে কিছু না বলেই বাড়ি ছেড়ে চলে গেলি। তাহলে আজকে হয়তো আমাদের এই দিনটা দেখতে হতো না। আমার হাত-পা না হয় বাধা ছিল কিন্তু তোর হাত-পা তো বাধা ছিলো না। তোকে আমি অনেক বার এই কথা গুলো বলতে চেয়েছিলাম কিন্তু তুই আমাকে এড়িয়ে চলতি। আমি তোকে আমার সবটুকু দিয়ে ভালোবেসে ছিলাম পাগলের মতো ভালোবেসেছি। একবারও কি আমার কথাটা ভেবে দেখেছিস আমার কি অবস্থা হতে পারে? যে লোকটা তোকে এতো কাহিণী করে বিয়ে করলো সেই লোকটা তোকে এভাবে ঠকাবে ভাবলি কি করে তুই? একটু গভীর ভাবে ভেবে দেখতি যদি তাহলে বুঝতি হয়তো কোনো কারণ ছিলো যার জন্য এমনটা করতে বাধ্য হয়েছিলাম আমি। কিন্তু তুই তো তুই। জানিস তোকে আমি এই পাঁচ বছর কোথায় কোথায় খুজেছি তার কোনো হিসাব নেই। কিন্তু তোকে আমি কোথাও খুজে পাই যে হারিয়ে যায় তাকে খুজে বের করা যায় কিন্তু যে নিজেকে লুকিয়ে রাখে তাকে খুজে বের করাটা খুব মুশকিল হয়ে যায়। আর তুই… তুই কি করে পারলি ইশানের কথাটা আমার কাছ থেকে লুকিয়ে যেতে। ও যে আমার সন্তান একবারও জানানোর প্রয়োজন বোধ করলি না।
–আমার লাগছে হাতে প্লিজ ছাড়ুন।
জিসান দাঁতে দাঁত চেপে বলে।
–লাগার জন্যই তো ধরেছি! এই পাঁচটা বছর তুই আমাকে ভেতর থেকে শেষ করে দিয়েছিস ইশা। কিন্তু আমি সেটা কাউকে বুঝতে দেয় নি। তোর জন্য আমি সারা রাত দুচোখের পাতা এক করতে পারি নি চোখ বন্ধ করলেই তোর এই চেহারাটা ভেসে উঠতো। তোর জন্য আমার মা কষ্ট পেয়েছে তুই একবারও আমার মার কথা ভাবলি না এতোটা স্বার্থপর তুই ইশা এতোটা। আর তোর সাহস কি করে হলো আমার সন্তানের পরিচয় লুকিয়ে রাখার আর এখন বলছিস আমি রুহিকে বিয়ে করেছি। ছিহ ইশা ছিহ তুই এতোটা নিচ আমি ভাবতেও পারি নি। আমার ইশুর মন মানসিকতা এতোটা নিচ ছিল না। তুই আমার ইশু হতে পারিস না তুই বদলে গেছিস ইশু তুই বদলে গেছিস তুই আর আমার আগের ইশু নোস। তুই একটা স্বার্থপর ইশা শুধু নিজের কথা ভাবিস তোর আশে পাশের লোক জন কে কি অবস্থায় থাকতে পারে সেটা তুই ভাবিস না তুই শুধু নিজের কথা চিন্তা করিস শুধু নিজের কথা।
কথাটা বলেই ইশাকে ধাক্কা দিয়ে দুরে ঢেলে দেয় জিসান। ইশার পায়ের নিচ থেকে মাটি সরে যায় জিসানের এসব কথা শুনে। ইশার চোখ বেয়ে অজান্তেই পানি গড়িয়ে পড়ে। ইশার এখন নিজের প্রতিই ঘৃণা হচ্ছে এটা ভেবে যে ওকে যে এতোটা ভালোবাসল ইশা কি না তাকেই এতো কষ্ট দিলো। জিসানকে বিশ্বাস করা দরকার ছিলো যদি এই বিশ্বাসটা পাঁচ বছর আগে করতো তাহলে হয়তো জীবনটা রঙিন হতো এতো ফ্যাকাসে হতো। ইশার হাত পা অবশ হয়ে আসে তারপরও নিজেকে সামলিয়ে বলে।
–আমি আসলে….
–চুপ একদম চুপ তোর মুখে আমি একটাও কথা শুনতে চাই নি। তোর অনেক ভুল আমি ক্ষমা করে দিয়েছি কিন্তু এই ভুলটা আমি ক্ষমা করতে পারবো না। তুই আমাকে ছেড়ে চলে গেছিলি তাই না ঠিক আছে এ বার আমি তোকে ছেড়ে চলে যাবো তখন বুঝবি ভালোবাসার মানুষটা ছেড়ে চলে গেলে কতোটা কষ্ট হয় সেটা তুই এখন টের পাবি।
ইশা ভয় পেয়ে যায় জিসানের এমন চেহারা দেখে চোখ দুটো লাল হয়ে গেছে রাগে কপালের রগটা ফুলে গেছে। হাত দুটো মুঠো বন্ধি করে রেখেছে। ইশা আর কিছু বলার সুযোগ না দিয়েই জিসান ঘর থেকে বেরিয়ে যায়। ইশা ধপ করে মেঝেতে বসে পড়ে ইশা চিৎকার করে কান্না করে দেয়।
–এটা আমি কি করে করতে পারলাম কি করে? সত্যি আমি এতটা স্বার্থপর কি করে হলাম? যে মানুষটা আমাকে এতটা ভালোবাসল তাকেই আমি কষ্ট দিলাম তাকে আমি অবিশ্বাস করলাম। আমাকে সব কিছু জানতে হবে সব কিছু ওই দিনপার্টির পরে কি হয়ে ছিলো? রুহি আপু কেন ভাইয়াকে এসব করতে বাধ্য করেছিলো?
#চলবে