#ভালোবাসার_ফোড়ন_২
#মিমি_মুসকান
#পর্ব_৪৮
গতকাল রাতে ইয়ান ঘুমিয়েছিল আমাদের সাথে। আমার আর আহিয়ানের মাঝে ঘুমিয়েছিল সে! অনেক রাত অবদি গল্প করেছিলাম ইয়ানের সাথে। সকালে ঘুম থেকে উঠে দেখি আহিয়ানকে জরিয়ে ধরে ইয়ান ঘুমিয়ে আছে। আহিয়ান ও গভীর ঘুমে আচ্ছন্ন। কতোটা শান্ত লাগছে উনাকে এভাবে। ইয়ান আর উনাকে দেখতে একই রকম লাগছে। খুব কিউট লাগছে দুজনকে।
আমি উঠে শাওয়ার নিয়ে এসে দেখি আহিয়ান রুম থেকে বের হচ্ছে। তার কানে ফোন ছিল কারো সাথে কথা বলছে নিশ্চিত। আমি চুল মুছতে মুছতে দরজার কাছে এসে উনার মুখ থেকে নিতি নামটা শুনলাম। কার সাথে কথা বলছে নিতির সাথে! এতোকিছুর পরও উনি নিতির সাথে কথা বলছে। একটা দীর্ঘশ্বাস ফেলে আবারো ঘরের ভিতরেই চলে এলাম। অতঃপর বিছানার পাশে বসে ইয়ানের মাথায় হাত বোলাতে থাকি। আমার ভেজা হাতের ছোঁয়া পেয়ে ইয়ান উঠে গেল। হয়তো আগেই উঠে ছিল। হাতের ছোঁয়া পেয়ে আবারো জেগে উঠল। সে এসে আমার কোলে মাথা রেখে আবারো শুয়ে পড়ল। আমি মাথায় হাত বোলাতে বোলাতে বলি,
“আরো ঘুমাবে তুমি!
সে ঘুমের মাঝেই মাথা নাড়ল। আমি তাকে বিছানায় আবারো শুইয়ে দিয়ে রুম থেকে বের হলাম। রুমের বাইরে বের হবার সময় আহিয়ান কে দেখলাম। আমি তার পাশ কাটিয়ে চলে যেতে নিলাম তখন’ই হুট করে আমার শাড়ি টান খেল। পেছনে তাকিয়ে দেখি উনি আমার শাড়ির আঁচল ধরে দাঁড়িয়ে আছে। ভ্রু কুঁচকে জিজ্ঞেস করি,
“কি করছেন?
“আমার জন্য এক কাপ চা নিয়ে আসবে বুঝলে।
“না পারবো না।
“কি বললে!
“শুনতে পান নি। চা বানাতে পারব না।
“কেন?
“কেন আবার, গতকাল যার হাত ধরে দাঁড়িয়েছিলেন তাকে বলুন চা বানিয়ে এনে খাইয়েও দিবে।
“তুমি সকাল সকাল ঝগড়া করার জন্য আর কিছু খুঁজে পেলে না।
“ওহ আচ্ছা এখন আমি বললেই তো দোষ, আর আপনি কিছু করলে তো দোষ নেই।
“তুমি ঠিক কি বলতে চাইছো।
“কি আর বলবো। যার গলা শুনে আপনার সকালের ঘুম ভাঙলো তাকে গিয়ে জিজ্ঞেস করুন না।
উনি ভ্রু কুঁচকে তাকিয়ে বলেন,
“তুমি আড়ি পেতে আমার কথা শুনছিলে।
“কথা শুনতে হলে আড়ি পাততে হয় না। আর আমি কখনো আড়ি পাতি না।
বলেই শাড়ি ছাড়িয়ে চলে যেতে নিলাম। উনি পেছন থেকে বলে উঠেন,
“ওটা আকাশের কল ছিল!
আমি চমকে উঠে পিছনে তাকিয়ে দেখি উনি রুমে চলে গেছেন। নিজের কপালে নিজেই একটা বাড়ি মেরে বলি,
“কতোটা বোকা আমি!
অতঃপর হতাশা নিয়ে রান্না ঘরে চলে আসি। উনার জন্য খুব ভালো করে এক কাপ চা বানাই। অতঃপর সেটা নিয়ে আবারো উপরের দিকে যাই।
রুমে এসে দেখি উনি রুমে নেই। ওয়াশরুম এ আছেন হয়তো। আমি চা টা টেবিলে রেখে বেলকনিতে এসে দাঁড়াই। কিছুক্ষণ বাদেই ওয়াশরুম এ দরজার খোলার শব্দ পাই। আমি জানি উনি বের হয়েছেন। তবুও আমি দাঁড়িয়ে থাকি সেখানে সেই বেলকনিতে!
খানিকক্ষণ বাদে উনি নিজেই আসেন বেলকনিতে! আমার পাশে দেওয়ালের সাথে ঠেসে দাঁড়িয়ে আমার দিকে ফিরে চায়ের কাপে চুমুক দিয়ে বলে,
“চা টা ভালো বানিয়েছ!
আমি উনার দিকে একবার তাকিয়ে আবারো সামনের দিকে তাকাই। উনি চায়ের পেয়ালায় একটু চা ঠেলে আমাকে দিয়ে বলে,
“খেয়ে দেখো অনেক মজা হয়েছে
“চা টা আমিই বানিয়েছি
“খাও তো আর নিই। খেয়ে দেখো না!
আমি মুখ ভেংচি দিয়ে পেয়ালা পা নিলাম। অতঃপর সেখান থেকেই চা খেতে লাগলাম। বাগানের দিকে তাকিয়ে আছি। সেখানে ফুল ফুটতে শুরু করেছে। উনি চা খেতে খেতে বলেন,
“জানো তো আজ আকাশ ওর মা বাবা কে নিয়ে ইতির বাসায় যাবে।
“এটাই ভালো তাদের জন্য।
“হুম তা ঠিক! কিন্তু তোমার মেজাজ এই সকাল সকাল খারাপ কেন?
আমি উনার দিকে তাকিয়ে বলি,
“সেটা আপনার না জানলেও হবে, আমার রাগের কারনটাই আপনি!
বলেই চলে এলাম সেখান থেকে!
.
ভার্সিটিতে আসার পর ইতি কে বেশ নার্ভাস দেখলাম। আকাশ ভাইয়া তো যাবে বিকালে সকালে নার্ভাস এর কারন কি! তবুও ওকে বোঝালাম।
নিতি কে ভেবেছিলাম আজ দেখবো না ভার্সিটিতে! কিন্তু না আজ সে এসেছে। তার সাথে টিনা,আনিকা ওরা সবাই। যাক এতে আমার কি? আমি ওদের পাশ কাটিয়ে চলে যেতে নিলাম তখনই নিতি বলে উঠে,
“আরে মিসেস আহিয়ান চৌধুরী যে..
নিতির কথায় থেমে গেলাম আমি। ওর দিকে তাকিয়ে দেখি সে হেসে আমার দিকেই আসছে। তার সাথে টিনা আর আনিকাও! টিনা বলে উঠে,
“বাহ মিসেস আহিয়ান চৌধুরী! নামটা কি ঠিক তোমার জন্য।
আমি হেসে বলি,
“আমার জন্য হোক আর না হোক, এটাই এখন আমার পরিচয়!
আনিকা বলে উঠে,
“তবুও তোমার মনে হয় না এটা তোমার জন্য বেমানান।
“এটা যদি তোমার কাছে মনে হয় তখন আমি কি করতে পারি।
নিতি বলে উঠে,
“এতো ভাব কেন দেখাচ্ছ তুমি। আচ্ছা তুমি ঠিক কি মনে কর নিজেকে। কি আছে তোমার! না আছে নিজের কোন ফ্যামিলি স্ট্যান্ডার্ড আর না আছে কোন রূপ। কি কারনে তোমার মনে হয় আহি তার সারাটা জীবন তোমার সাথে পার করবে। ( অতঃপর আমার দিকে ঝুঁকে বলে ) গতকাল বলেছিলে না সময় আছে, এখন আমিও বলছি সময় আছে। আহি নিজে তোমাকে তার জীবন থেকে বের করে দেবার আগে তুমি নিজ থেকে চলে যাও।
বলেই তিনজন চলে গেল। প্রচুর বিরক্ত আমি তাদের দেখে। মেজাজ পুরোটাই বিগড়ে দিল তারা আমার। সকাল থেকে কিছু কম হয় নি আমার সাথে এরপর আবার তারা। বুঝতেই পারছি না কি চায় ওরা। নাই বা থাক না আমার কিছু কিন্তু এ কারনে আমি নিজেকে কখনো ছোট মনে করে নি। আমার যা আছে তাতেই আগে যেমন সুখি ছিলাম এখনো আছি। অতঃপর একটা দীর্ঘশ্বাস ফেলে আমি সামনে হেঁটে চলে যেতে নিলাম তখন’ই কোথা থেকে সিফাত এসে উদয় হলো। হাজির হলো আরেক মাথাব্যথা!
“তুমি এখানে!
সিফাত হেসে আমার দিকে ঝুঁকে বলে,
“তুমি একা ছিলে বলে সঙ্গ দিতে এলাম।
“সেটা নিয়ে তোমার ভাবতে হবে না।
বলেই পাশ কাটিয়ে চলে যেতে নিলাম। তখন’ই হুট করেই সিফাত আবারো আমার সামনে এসে দাঁড়িয়ে বলল,
“আরে কি বলছো ভাবতে হবে না। কয়েকদিন পর’ই তো আমার ভাবতে হবে
“আমাকে নিয়ে ভাবার জন্য আমার স্বামী আছে। তুমি কেন ভাববে।
“তোমার সেই স্বামীটাই তো থাকবে না বলে মনে হচ্ছে।
“কি বলতে চাইছো।
“শুনলাম গতকাল নাকি নিতি আর তোমার স্বামী একসাথে এক রুমে ছিল।
“তো!
“তেমন কিছুই না। বলতে চাইছি তোমার স্বামী দূরে সরে যাচ্ছে তোমার থেকে।
“শেষ তোমার বলা।
“এই একটা কথাই শেষ, যে তোমার স্বামী তোমাকে ফেলে চলে গেলেও ভেবো না। আমি আছি!
আমি হেসে বলি,
“ধন্যবাদ এতোটুকু ভাবার জন্য! তবে আমার স্বামী আর আমার ব্যাপারটা আমিই দেখে নিবো! তোমার এতো চিন্তা করতে হবে না।
বলেই পাশ কাটিয়ে চলে এলাম। বুঝতে পারছি না সবার সমস্যা কি। তারা পারলেই আমাকে হেনস্তা করতে আসছে। বটগাছের নিচে বসে শাড়ির আঁচল ধরে পেঁচিয়ে যাচ্ছি। রাগ, বিরক্ত, অস্বস্তি সবই হচ্ছে! হঠাৎ মনে হল পাশে এসে কেউ বসল। তাকিয়ে দেখি উনি। উনি আমার শাড়ির আঁচলটা আমার হাত থেকে ছাড়িয়ে নিজের হাতে নিলেন। আমি বলে উঠি,
“টেনশন আমার হচ্ছে!
“আমারও হচ্ছে
“শাড়ির আঁচলটা আমার!
“শাড়ির আঁচলটা আমার ভূতনি বউ’র!
“আপনি!
“তুমি!
“উফফ বিরক্ত করবেন না তো
“করছি না তো!
“করছেন! আমাকে খুব বিরক্ত করছেন আপনি।
“বিশ্বাস করো আমিও অনেক টেনশনে আছি।
“আপনার কিসের টেনশন।
“আরে আর বলো না। আকাশ বিয়ে বিয়ে করে আমাকে টেনশনে ফেলে দিল।
“ইতি কি কম নাকি, বুঝতে পারছি না বিয়ে কি ওদের হচ্ছে না আমাদের।
“তুমি বেশি বুঝতে যেও না। এখন বলো তুমি কি নিয়ে ভাবছো।
“নিতি!
“নিতি..
“হ্যাঁ নিতি! জ্বালিয়ে মারছে আমাকে।
“কোথায় মারলো দেখি দেখি
“আপনি মজা করছেন।
“একদম না।
“আচ্ছা একটা কথা বলুন আপনার কিছু যায় আসেনা নাহ!
“কোন ব্যাপারে।
“কিছু না।
বলেই রেগে উঠে গেলাম। কি মানুষ এই লোকটা। কোন ভাবনা চিন্তা নেই। সিফাত অবদি জেনে গেল গতকালের ঘটনা। কে বলেছে এসব। নিতি আর ওর তিন কুটনি বান্ধবীরা ছাড়া আর কারা। তবুও কোন ভাবনা চিন্তা নেই। কিভাবে থাকেন উনি এতোটা শান্ত। কোনোকিছুতেই কিছু যায় আসে না উনার।
চলে যেতে নিয়েও টান খেলাম। শাড়ির আঁচল ধরে বসে আছে। আমি আঁচলটা উনার হাত থেকে ছাড়িয়ে বলি,
“আপনার বাসা না ভার্সিটি এটা!
বলেই চলে এলাম। মানসিক ভাবে সবাই অত্যাচার করছে আমাকে।
বিকালে আকাশ ভাইয়া’র পরিবার গেলো ইতির বাসায়। সেখানে আমি আর আহিয়ান দুজনেই ছিলাম। আমি ছিলাম মেয়ে পক্ষ আর আহিয়ান ছেলে। সে আকাশ ভাইয়া’র সাথে এসেছে আর আমি আগে থেকেই সেখানে ছিলাম ইতির সাথে। ওর নার্ভাসনেস কমানোর জন্য।
যদিও সব কিছু ভালো ভাবেই হলো। ইতির বাবা মা দুজনেই আকাশ ভাইয়া কে পছন্দ করল তার সাথে আকাশের মা বাবাও। এযুগে সবাই তাদের ছেলেমেয়েদের পছন্দে বিয়ে দেন এখানেও তার ব্যতিক্রম হলো না। বিয়ের তারিখ অনেকটা পিছিয়ে নেওয়া হলো। ভাইয়ার অর্নাস কমপ্লিট না হওয়া অবদি বিয়ে হবে না। অতঃপর সবাই সিদ্ধান্ত নিল আন্টি বদল করিয়ে রাখা হবে।
.
রাতে বাসায় আসার পর খুব ক্লান্ত বোধ হচ্ছিল। ইয়ান মনে হচ্ছে আম্মুর সাথে। আমি মার রুমে একবার উঁকি দিয়ে ইয়ান কে তার কোলে নিয়ে গল্প করছে। তাদের বিরক্ত না করে রুমে চলে এলাম। ফ্রেশ হয়ে এসে বেলকনিতে এসে দাঁড়ালাম। আমি আর আহিয়ান একসাথেই এসেছিলাম। উনি গাড়ি পার্ক করছিলেন আমি ততোক্ষণে ঘরে চলে আসি। কিন্তু উনি এখনো আসে নি হয়তো মা’র সাথে কথা বলছেন।
বেলকনিতে দাঁড়িয়ে স্নিগ্ধ বাতাস অনুভব করছিলাম। বাতাস ছুঁয়ে যাচ্ছিল আমায়। আমি চোখ বন্ধ করে তা অনুভব করতে লাগলাম। প্রায় অনেকক্ষণ যাবত চোখ বন্ধ করে ছিলাম। মনটা ভালো ছিল কিন্তু হঠাৎ করেই তা খারাপ হয়ে গেল। কেন জানি নিতির কথা মাথাতে চলে এলো। বজ্জাত মেয়ে একটা, একটু শান্তি দিচ্ছে না আমায়। হঠাৎ তার বলা কথাগুলো আমার মাথায় ঘুরপাক খেতে লাগল। মনটা নিমিষেই খারাপ হয়ে গেল। একটা দীর্ঘশ্বাস ফেলে আকাশের দিকে তাকিয়ে মনে মনে বলি,
“ঠিক’ই তো কি আছে আমার, কেন আহিয়ান থাকবে আমার সাথে সারাজীবন। উনি আর আমি তো আকাশ পাতার তফাৎ! আমার সাথে পারবেন তো উনি তার বাকিটা জীবন পার করতে নাকি..
আমার ভাবনায় ছেদ ঘটিয়ে সামনে একটা চায়ের কাপ নিয়ে দাঁড়িয়ে আছেন উনি। আমি উনার দিকে তাকিয়ে দেখি উনার ঠোঁটে একটা মৃদু হাসি। ইশারায় আমাকে চায়ের কাপ নিতে বলছে। তার হাতে দুটো চায়ের কাপ একটা আমার একটা উনার। আচ্ছা চা টা কে বানিয়েছে?
আমি উনার হাত থেকে চা তে চুমুক দিতেই বুঝি চা উনি বানিয়েছেন কারন এটাতে চিনি কম। বাহ উনি চা বানাতে পারেন। তাহলে কেন আমাকে দিয়ে চা বানিয়ে নেয় নিজেই তো বানাতে পারে। মন চাচ্ছিল বলি এসব কিন্তু তা আর হলো না। এসব কথা মনের মাঝেই গেধে রইল।
দুজনেই একটু পর পর চা তে চুমুক দিচ্ছি। হঠাৎ উনি বলে উঠেন,
“চা কেমন হলে বললে না তো!
“ঠিক হয়েছে তাই বলেই বলি নি!
উনি আর কিছু বললেন না। কিন্তু আমার মন চাইছে কিছু বলার জন্য। বলব না বলবা না সেটাই ভাবছি। অতঃপর একটা দীর্ঘশ্বাস ফেলে ঠিক করেই নি এটা বলব। নাহলে সারারাত ছটফট করবো আমি।
আমি স্থীর চোখে তাকিয়ে আহিয়ান কে জিজ্ঞেস করি..
“আচ্ছা আমি কি দেখতে অনেকটাই খারাপ!
আহিয়ান খানিকক্ষণ আমার দিকে তীক্ষ্ণ দৃষ্টিতে তাকিয়ে থাকে। বোধহয় প্রশ্ন টা তার কাছে অনেকটা অবান্তর লাগছে। অতঃপর মৃদু হেসে আমার গালে হাত রেখে বলে..
“তুমি আল্লাহ তায়ালা’র এক অপরূপ সৃষ্টি, যাকে অসুন্দর বলার অধিকার আমার নেই”! 🖤🌻
তবে হ্যাঁ তুমি হলে ভয়ংকর সুন্দরী কারন ভূতনি তো তাই ( আমার নাক টেনে ) বুঝলে! 😁
আমি দাঁতে দাঁত চেপে রেগে তাকিয়ে আছি উনার দিকে!
উনার উওর শুনে হাসবো না রাগ করবো ঠিক বুঝে উঠতে পারছিলাম না। কিছু না বুঝেই হুট করেই জিজ্ঞেস করি,
“তো আপনি পারবেন তো এই ভয়ংকর সুন্দরী’র সাথে নিজের বাকিটা জীবন পার করতে?
আমার প্রশ্ন উনার উপর প্রভাব ফেলেছে। উনি খানিকক্ষণ থমকে আমার দিকে তাকিয়ে থাকেন। এটার মানে কি হতে পারে। উনি কি নিজেই এটা নিয়ে বিভ্রান্ত আমার সাথে উনার বাকিটা জীবন পার করতে পারবে না। আমাকে অবাক করে দিয়ে একগাল হেসে উনি বলে উঠেন,
“ভূতনি, বেঁচে থাকার জন্য যেমন ভালোবাসার দরকার হয় তেমনি ঝগড়ার ও দরকার হয়। আর আমার ঝগড়ার একমাত্র সঙ্গী তুমি! তোমাকে ছাড়া আমার বাকিটা জীবন বোরিং ছাড়া আর কিছুই লাগবে না!
বলেই উনি চলে যেতে নিলেন। কেন জানি মনে হল কথাগুলো আমাকে সান্তনা দেবার জন্য’ই উনি বললেন। আমি পেছন থেকে বলে উঠি,
“আহিয়ান, আপনি ভালোবাসায় বিশ্বাসী!
পেছন থেকেই বলেন,
“ভালোবাসায় বিশ্বাসী কি না জানি না তবে হ্যাঁ প্রকৃতি কিন্তু ভালোবাসায় ভরপুর। তাদের মাঝে অনেক ভালোবাসা আছে এটা জানি।
“তাহলে আপনার কাছে ভালোবাসা মানে কি?
উনি সামনে ফিরে আমার দিকে তাকিয়ে বলেন,
“আমার কাছে কি মনে হয় জানো, “ভালোবাসা হলো ফুলের মতো। ফুল যখন শুকিয়ে গেলে তার পাপড়ি গুলো ঝরে পড়ে তেমনি ভালোবাসা কমে গেলে সম্পর্কেও তিক্ততা সৃষ্টি হয়”
“তাহলে আমাদের সম্পর্কে তিক্ততা সৃষ্টি হবার কারন কি?
উনি চট করে বলে উঠেন,
“কম কম ঝগড়া!
বলেই দাঁত বের করে হেসে ফেলেন। উনার হাসি দেখে আমিও হেসে ফেলি। উনার হাসিটা বরাবরই সুন্দর। আমি বলে উঠি,
“তাহলে এটার উপায় কি?
“দিনে ১২ ঘন্টা আমরা ঝগড়া করব তাহলে সব ঠিক থাকবে!
বলেই উনি বেরিয়ে গেলেন। আমি সামনে ফিরে চা তে চুমুক দিয়ে আকাশের দিকে তাকালাম। এখন মানে টা খুব সহজ আমার কাছে। উনি আমাকে কখনোই ছাড়বেন না। আমাকে ছেড়ে দিলে ঝগড়া করবেন কার সাথে। তাতে কি এটাও তো ভালো নাহ! একটা মানুষ আরেকটা মানুষ কে ভালোবাসার বন্ধনে আবদ্ধ করে রাখে আমরা না হয় ঝগড়ার বন্ধনে আবদ্ধ হবো!
#চলবে….