#ভালোবাসার_ফোড়ন_২
#মিমি_মুসকান
#পর্ব_৪৯ ( #বোর্নাস_পার্ট )
আংটি বদল! সেও এক বিশাল আয়োজন। দুই পরিবার’ই বিশেষ আয়োজন করছে তার। তাদের পদক্ষেপ দেখে আমি নিজেই বুঝতে পারছি না তাদের বিয়ে হচ্ছে না তার আংটি বদল!
আংটি বদলের অনুষ্ঠান আকাশ ভাইয়া’র বাড়িতে হবে। আহিয়ান খুব খাটছে এজন্য। এর মাঝেই একদিন আমরা চারজন একসাথে শপিং করতে গিয়েছিলাম। তাদের আংটি কেনা থেকে শুরু করে সব কিছুই কিনতে হলো সেদিন। আমি শুধু ইতির শপিং নিয়েই ব্যস্ত ছিলাম নিজের তেমন কিছু কেনা হয়। তবুও বাড়িতে ফেরার সময় গাড়িতে অনেক শপিং দেখলাম। প্রথমে ভাবলাম এগুলো সব’ই উনার! কিন্তু না উনি আমাকে বলেন আমার জন্য ও শপিং করেছেন উনি!
কিন্তু আগ্রহ করে কিছুই দেখে নি আমি। অতঃপর যেদিন অনুষ্ঠান ছিল সেদিন এক এক করে ব্যাগ থেকে সব বের করছি। কিন্তু মনে হচ্ছে পুরো দোকান উঠিয়ে এনেছেন। এতোগুলো শাড়ি কেন এনেছেন। অনুষ্ঠান তো একদিনের শাড়ি একটাই হলেই তো চলতো। কিন্তু এখানে ৫ টা শাড়ি আর প্রত্যেক শাড়ির রঙের সাথেই মিলিয়ে টি শার্ট! এই টি শার্ট কেন? উনি কি টি শার্ট পড়ে যাবেন নাকি, কি অদ্ভুত লোক! এসব চিন্তা ভাবনা বাদ দিয়ে এর মাঝে শুধু একটা শাড়ি খুলে দেখলাম। যাক এতোটুকু বুঝতে পরেছেন উনি বেশি কাজ করা শাড়ি আমি পরি না। তাই সব শাড়ির কাজ অনেকটা হালকা দেখতেও সুন্দর। উনার পছন্দ সুন্দর!
হঠাৎ করেই পায়ের কাছে নরম কিছু ছিল। আমি নিচের দিকে তাকিয়ে দেখি পিকু। এর মান এখন’ই ইয়ান আসছে। বলতে বলতে সে চলেও এলো। বিছানার উপর এতো শাড়ি দেখে সে হা করে তাকিয়ে রইল। বলে উঠে,
“ভূতনি আম্মু! এতো শাড়ি তুমি কি করবে?
“পড়বো মানে এখান থেকেই একটা পড়বো।
“তোমরা কোথাও যাবে।
“হুম! কেন তুমি জানো না তোমাকে না বললাম। আমার বেস্ট ফ্রেন্ড এর এনগেজমেন্ট এ যাবো। তুমি যাবে আমাদের সাথে।
“কিন্তু আমি তো নানা আর নানুর সাথে দাদা দাদী’র কাছে যাবো। তুমি জানো দাদী ফোন করে বলেছে তাদের কাছে যেতে।
“ওহ আচ্ছা!
এর মাঝেই আয়ানা আপু এলো আমার ঘরে। আমি তাকে দেখে দাঁড়িয়ে রইলাম। আপু হেসে বলল,
“কখন যাবে তোমরা।
“দু ঘন্টা পর আপু।
“আচ্ছা আমরা তোমাদের পরে বের হবো তাহলে। ইয়ানের দাদী ফোন করে বলেছিল সবাই কে যেতে। আহিয়ান আর তোমাকেও বলেছিল কিন্তু তোমরা তো আজ আকাশের বাসায় যাবে।
“যেতে তো হবে আপু।
“আচ্ছা সমস্যা নেই, আরেকদিন ও যাওয়া যাবে। ইয়ান বাবা তুমি আমার সাথে আসো। ছোট আম্মু কে তৈরি হতে দাও।
“ছোট আম্মু না বলো ভূতনি আম্মু!
আপু হেসে বলে,
“আহি তোমার মাথা টা পুরো বিগড়ে দিয়েছে।
ইয়ান আমার দিকে তাকিয়ে বলে,
“ভূতনি আম্মু তুমি ওই লাল শাড়িটা পড়বে। দেখবে তোমাকে অনেনননক সুন্দর লাগবে।
আমি ছোট ছোট চোখ করে বলি,
“ভূতনি লাগবে নাহ!
“না না ভূতনিদের রানি লাগবে তোমাকে,দেখো!
ইয়ানের কথা শুনে আমি আর দুজনেই হেসে দিলাম। ইয়ান ও খিলখিলিয়ে হাসল আমাদের সাথে। তার হাসিটা আহিয়ানের মতোই!
ইয়ান আপুর সাথে চলে গেল। আমি লাল রঙের শাড়িটা রেখে বাকি সব কিছু ভাজ করে হাতে নিলাম। এর মাঝেই উনি রুমে এলেন। এসেই চট করে আমার হাত থেকে শাড়ি গুলো নিয়ে এলোমেলো করে ফেলল। বিছানায় সব ছড়িয়ে ছিটিয়ে দেখতে লাগল। আমি হা করে তাকিয়ে আছে উনার দিকে। কি করছেন উনি এসব! এতো কষ্ট করে এসব গুছালাম আর উনি এসে নিমিষেই সব এলোমেলো করে ফেলছেন। এসব কি!
কোমরে হাত দাঁড়িয়ে দাঁড়িয়ে দেখছে কোনটা পড়বে। অনেক বাচাইয়ের পর উনি একটা টি শার্ট হাতে নিলেন। লাল রঙের টি শার্ট ! অতঃপর সেই লাল রঙের শাড়িটাই আমার হাতে দিয়ে বলেন,
“তুমি এটা পড়বে।
“আমি জানি!
“তুমি জানলে কিভাবে আমি তো মাত্র পছন্দ করলাম।
“ইয়ান এটা পছন্দ করে দিয়েছিল পরার জন্য
“তাই বলো, নাহলে আমিও ভাবি তোমার আর আমার পছন্দ কবে এক হলো!
আমি রেগে শাড়ি দিয়েই উনার মাথায় বাড়ি মারলাম। উনি শাড়িটা খপ করে ধরে বলেন,
“শাড়ি টা নষ্ট করো না, যাও তৈরি হয়ে আসো।
“আপনি জানেন আমার ইচ্ছে করছে আপনার মাথা ফাটিয়ে দিতে
“কেন?
“পুরো ঘরের কি অবস্থা করেছেন সেটা দেখেছেন
“কি করেছি।
“বাজার বানিয়ে ফেলেছেন। সবজি, মাছ, আলু সব কিছু মনে হচ্ছে একসাথে।
“মানে!
“ধুর! আপনার মাথা।
বলেই চলে এলাম। এই লোকটা শুধু পারে আমাকে খাটাতে।
শাড়ি পড়ে এসে আয়ানার সামনে দাঁড়িয়ে চুল আঁচড়াতে লাগলাম। এর মাঝেই উনি চেঞ্জ করে বেরিয়ে আসলেন। কালো রঙের একটা জ্যাকেট পরা তবে জ্যাকেটের ভেতর লাল রঙের টি শার্ট। এর সাথে কালো জিন্স। এগুলো পড়ে কি যাবে নাকি উনি। আমি তৈরি হয়ে একপাশে এসে দাঁড়িয়েছি। উনি কিছু চুড়ি এনেছিলেন আমার জন্য। সেগুলোই দেখতে লাগলাম। উনি হাতে ঘড়ি পড়তে পড়তে বলেন,
“শোন! আমার ঘড়ির সাথে মিলিয়ে তুমি কিন্তু চুড়ি আর কানের দুল পড়বে।
আমি উনার কথা শুনে হাতের ঘড়ির দিকে তাকিয়ে রইলাম। এ্যা মা উনার হাতের ঘড়ি দেখি কালো রঙের! লাল শাড়ির সাথে কি কালো রঙের চুড়ি পড়বো নাকি। আমি বলে উঠি,
“কিন্তু আপনার ঘড়ি তো কালো রঙের!
“তো! তুমিও কালো রঙের চুড়ি পড়বে। দেখো আমি বোধহয় এনেছিলাম।
“সেটা তো এনেছেন কিন্তু লালের সাথে কালো।
“কথা বন্ধ করে তাড়াতাড়ি তৈরি হয়ে নিচে আসো। আমি গাড়ি নিয়ে ওয়েট করছি। যেতেও অনেক সময় লাগবে। আর জ্যাম হলে তো দেখা লাগবে না।
বলেই উনি চলে গেলেন। আমি মুখ ভেংচি দিয়ে কালো আর লাল রঙের চুড়ি গুলো একত্র করে পড়লাম। কালো রঙের দুল না থাকায় ধূসর রঙের ঝুমকা পড়লাম। অতঃপর চোখে কাজল টেনে নিচে এলে এলাম। দেখি স্যার গাড়ি সামনে দাঁড়িয়ে আছে। তার চোখে একটা সানগ্লাস! সানগ্লাস টা আমার মন কাড়ল। আমার উনার চেয়ে বেশি উনার সানগ্লাস গুলো কে ভালো লাগে।
আমাকে দেখে গাড়ি ভেতর বসলেন। আমি এসে পাশে বসলাম। অনুষ্ঠান শুরুর আগেই যেতে হবে আমাদের। আমি বার বার উনার দিকে তাকাচ্ছি। বেশ সুন্দর লাগছে উনাকে। একটু বেশিই সুন্দর লাগছে, কিন্তু ব্যাপারটা কি?
হঠাৎ উনি বলে উঠেন,
“তোমাকে কালো রঙের চুড়ি পড়তে বলেছিলাম।
“পড়েছি পড়েছি, লালের সাথে কালোও পড়েছি।
“আচ্ছা ঠিক আছে।
অতঃপর আর কোন কথা হলো না। একবার জিজ্ঞেস করতে ইচ্ছে হলো উনার কেন হঠাৎ এই ইচ্ছে হলো, কিন্তু জিজ্ঞেস করতে গিয়েও করলাম না।
.
আকাশ ভাইয়ার বাড়িতে বেশ জমজমাট আয়োজন। বাড়িতে ঢোকার পথেই আকাশ ভাইয়ার বাবা’র সাথে দেখা। তার সাথে কুশল বিনিময় করার পর আহিয়ান কে তিনি রেখে দিলেন। আমিও চলে এলাম উপরে ইতির ঘরে। তবে ইতির ঘরে আসার পথে বাড়ির লোকজন দেখে আমি খানিক ভড়কে গেলাম। সবাইকে বেশ সুন্দর লাগছে, ভারী ভারী সাজ গয়না গাটি দেখে আমি নিজেই অবাক। কে জানে এতো ভার তারা কীভাবে সহ্য করছে। আকাশ ভাইয়া’র মা কে দেখে আমি তো আরো বেশি অবাক হলাম, সাজ শাড়ি সব’ই চোখ ধাধানোর মতো। চুল গুলো খোঁপা করে তাতে ফুল আটকানো। শুধু তার নয় সবার চুলে খোঁপা করে চুল গুঁজে দেওয়া হয়েছে। তবে এদের সবার মাঝে নিজেকে একজন সাদামাটা বলেই মনে হলো।
ইতিকে দেখে অবাট হলাম না। তার সাজ বেশ হালকা। এমনেতেও সে সুন্দর বিধায় এতো সাজ সে না সাজলেও হবে। তবে আমাকে দেখে ভারী অবাক হলো। ভেবেছিল আজ হয়তো আমি ওর থেকেও বেশি সাজবো যার কিছূই হলো না।
ইতি তৈরি করে একবারে নিচে এলাম। ওর পড়নে লেহেঙ্গা। বেশ লাগছে ওকে দেখতে। ভাইয়া কে আগে থেকেই নিয়ে আসা হয়েছে। আমি ভাইয়ার পাশে তাকে বসিয়ে দেবার পর একে একে সবাই আসছে দেখা করতে। আমিও একটু সরেই দাঁড়ালাম। উনার সব বন্ধুবান্ধব কে এখন দেখতে পারছি। এর মাঝে নিতি, টিনা আর আনিকাকেও দেখতে পারছি, সাথে সিফাত। বাহ পুরো দল এখানে। কিন্তু আমার স্বামী মহাশয় কে দেখতে পারছি না। অনেক খোঁজাখুঁজি’র পর দেখা পেলাম। তাকে দেখেই আমি স্থির হয়ে দাঁড়িয়ে রইলাম।
কয়েকটা মেয়ের মাঝখানে দাঁড়িয়ে আছেন উনি। মেয়েরা একে একে বকবক করেই যাচ্ছে কিন্তু উনি যে বেশ বিরক্ত তা বোঝাই যাচ্ছে তবুও হেসে হেসে সব সহ্য করছে কিন্তু এই মেয়ে গুলো কারা আর উনি এদের মাঝেই বা কি করছেন। হঠাৎ করেই আকাশ ভাইয়া’র মা কে দেখলাম। উনি এসে আমার থিতুনি তে হাত রেখে কথা বললেন। জিজ্ঞেস ও করলেন এমন সাদামাটা কেন। আমি হেসে বলি, সাদামাটা থাকতেই আমার বেশ লাগে।
উনি হেসে আমার মাথায় হাত রাখেন। আমি বলে উঠি,
“আচ্ছা আন্টি এই মেয়ে গুলো কারা।
আন্টি হেসে বলে,
“আরে এরা! এরা তো আকাশের কাজিন। আহিয়ান তো চিনে ওদের তোমাকে পরিচয় করিয়ে দেয় নি।
“না আন্টি দেই নি।
“আচ্ছা দাঁড়াও আমি করিয়ে দিচ্ছি..
বলার সাথে সাথেই আংকেল এর আওয়াজ এলো বিধায় তাকে চলে যেতে হলো। আমি টেবিলের সাথে ঘেসে দাঁড়িয়ে উনাকে দেখছি। অবশেষে মহাশয়ের চোখ পড়ল আমার উপর। উনি আমাকে দেখেই বলেন,
“এই ভূত মানে নিহা আমাকে এক গ্লাস পানি দাও তো!
আমি টেবিলের পাশ থেকে পানির গ্লাস টা নিয়ে যাবার আগেই একটা মেয়ে উনার সামনে শরবতের গ্লাস ধরলেন। উনি বলে উঠে,
“আপু, আমি পানি খাবো।
“সমস্যা নেই শরবত খাও, ঠান্ডা শরবত খেলে ভালো লাগবে।
ততোক্ষণে আমি সামনে চলে এসেছি। উনি ঢোক গিলে বলেন,
“আসলে আপু!
এর মাঝেই আরেকটা মেয়ে উনার চুলে হাত দিয়ে বলেন,
“কি ব্যাপার বলো তো আহি, সবসময় এতো কুল কেন লাগে তোমাকে।
আমি পাশ থেকে বলে উঠি,
“নিয়মিত গোসল করে বলে!
মেয়েরা সব থমতম খেয়ে আমার দিকে তাকাল। উনি চোখ বড় বড় করে আমার দিকে তাকিয়ে আছেন। আমি কিছু বলতে যাবো এর আগেই একটা মেয়ে বলে উঠে,
“এ কে আহি!
আরেকজন বলে উঠে,
“তোমার কাজিন নাকি!
সেই মেয়ের কথায় আমি চোখ বড় বড় করে তাকিয়ে আছি। আহিয়ান হেসে বলে,
“সি ইজ মাই ওয়াইফ! আইমিন মিসেস আহিয়ান চৌধুরী!
উনার এই কথায় সব মেয়েদের মুখে অন্ধকার নেমে এলো। আমি দাঁড়িয়ে গ্লাসে পানি খেতে খেতে সবার কান্ড দেখছি। মেয়ে গুলো একবার আমার দিকে তাকাচ্ছে একবার উনার দিকে। একজন বলে উঠে,
“ও সত্যি তোমার বউ।
“তোমাকে আমি মিথ্যে মিথ্যে কেন বলব বলো।
“তুমি বিয়ে করলে কবে?
“এই কয়েকমাস হলো তবে পালিয়ে বিয়ে করেছি তো তাই তোমাদের ইনভাইট করতে পারি নি। সরি হ্যাঁ!
“না না ঠিক আছে। আমরা যাই তোমরা বরং কথা বলো।
বলেই বিরহ নিয়ে মেয়ে গুলো চলে গেল। আমি হাসছিলাম কারন তাদের মন ভেঙ্গে যাবার শব্দ আমি পেয়েছিলাম! উনি একটা দীর্ঘশ্বাস ফেলে আমার কাছে এসে বলেন,
“থ্যাংকু ভূতনি! তুমি আসায় আজ বেঁচে গেলাম।
বলেই আমার হাত থেকে পানির গ্লাস নিতে এলেন। আমি গ্লাস টা হুট করে সরিয়ে ফেলি। উনি ভ্রু কুঁচকে তাকিয়ে আছেন। আমি হেসে বলি,
“শরবত খান, ঠান্ডা শরবত! খেলে ভালো লাগবে।
বলেই পানি খেতে খেতে চলে এলাম। উনার মুখ দেখার মতো ছিল।
.
ইতির পাশে দাঁড়িয়ে ছিলাম। নিতি ওরা ঠিক আমার সামনে বিপরীত দিকে দাঁড়ানো। ইতি আমাকে বার বার সরি বলছিল। আহিয়ানের এসব ঘটনা আকাশ ভাইয়া কে বলে নি তাই আকাশ ভাইয়া নিতিদের ইনভাইট করেছে। ভালোই করেছে বলে নি। এসব না জানাই ভালো।
হঠাৎ মনে হলো আমার পাশে কেউ দাঁড়ানো। আমি তাকিয়ে দেখি উনি আমার পাশে দাঁড়ানো। তার হাত দুটো পিছনে মুখে স্নিগ্ধ হাসি। আমি ভ্রু কুঁচকে উনাকে জিজ্ঞেস করলাম। উনি হেসে আমার কানে লাল সূর্যমুখী গুঁজে দিলেন। অতঃপর আমার নাক টেনে বলেন,
“একদম ভয়ংকর সুন্দরী লাগছে!
আমি উনার কথায় মুখ ভেংচি দিয়ে সামনে তাকালাম। নিতি আমার দিকেই তাকিয়ে আছে।আহিয়ান চলে গেল আকাশ ভাইয়ার কাছে। ইতি আমাকে খোঁচা মেরে বলে,
“এতোক্ষণে বুঝলাম লাল শাড়ির সাথে কালো চুড়ি!
“মানে!
“ম্যাচিং ম্যাচিং বাহ!
আমি উনার দিকে তাকিয়ে বলি,
“এটা ম্যাচিং!
.
কিছুক্ষণ পর’ই আংটি বদলের অনুষ্ঠান শুরু হলো। আকাশ ভাইয়া ইতির অনামিকা আঙ্গুলে আংটি পরিয়ে দিলেন। অতঃপর গান বাজনা শুরু হলো। আমি তাকিয়ে
দেখি উনি হাতে গিটার নিয়ে বাজাতে শুরু করলেন। অতঃপর আমার চারপাশে এসে ঘুরে বলেন,
কৃঞ্চ আইলা রাধার কুঞ্জে
ফুলে পাইলা ভ্রমরা
কৃঞ্চ আইলা রাধার কুঞ্জে
ফুলে পাইলা ভ্রমরা
ময়ুর বেশেতে সাজুইন রাধিকা
ময়ুর বেশেতে সাজুইন রাধিকা।
( অতঃপর উনি আমার হাত ধরে ঘুরিয়ে দেন। আমি বলে উঠি… )
সোয়া চন্দন ফুলের মালা
সখিগণে লইয়া আইলা
সোয়া চন্দন ফুলের মালা
সখিগণে লইয়া আইলা
কৃঞ্চ দিলাই রাধার গলে
বাসর হইল উজালা….
বাসর হইল উজালা গো
বাসর হইল উজালা
ময়ুর বেশেতে সাজুইন রাধিকা
ময়ুর বেশেতে সাজুইন রাধিকা…
গান নাচ শেষ হলো। আবারো আরেক গান বাজতে লাগলো। আমি একপাশে দাঁড়িয়ে দেখছি। কিন্তু উনাকে আর চোখে পড়ল না। কোথায় যেন উধাও হয়ে গেলেন। আমি এসে ইতির পাশে দাঁড়ালাম। ওকে আহিয়ানের কথা জিজ্ঞেস করলাম কিন্তু সেও কিছু বলতে পারল না। অতঃপর আমি সবার মাঝে থেকে একটু বাইরে চলে এলাম।
আশপাশ উনাকে খুঁজছি। হঠাৎ মনে পড়ল ফোনের কথা। বোকার মতো না খুঁজে ফোন করলেই তো হয়। এই হচ্ছে ফোন একটা যার কথা আমার মাথায় কখনো আসে না। সেদিন ভার্সিটির অনুষ্ঠানের মাঝেও ফোনের কথা মনে এলো না। যদিও আমি খুঁজে পেয়েছিলাম।
ফোন করলাম উনাকে। ফোন বাজছে কিন্তু কেউ তুলছে না। হঠাৎ করেই আমার কানের কাছে কেউ বলে উঠে,
“ফোন করছো?
আমি লাফিয়ে উঠি, পিছনে তাকিয়ে দেখি সিফাত। তার দিকে তাকাতেই সে ফোনটা আমার দিকে ঘুরাল। আমি তাকিয়ে দেখি আহিয়ানের ফোন। এজন্য’ই ফোন ধরেছিল না উনি।
“তোমার কাছে উনার ফোন কেন?
“ভাইয়া দিয়ে গেছে,জরুরি কাজে গেছে তো যাতে ফোন ডিস্টার্ব করতে না পারে তাই আমার কাছে রেখে গেছে।
“কি জরুরী কাজ।
“জানতে চাও!
আমি সিফাতের দিকে ভ্রু কুঁচকে তাকালাম। সে আমাকে বাড়ির পিছনের বাগানের দিকে ইশারা করল।
আমি হাঁটা ধরলাম বাগানের দিকে। কি কাজে গেছেন উনি সেখানে। অতঃপর সেখানেই যেতেই আমি থমকে গেলাম। আমার কাছে মনে হলো আমার সময় সেখানেই থমকে গেছে। আমার হাত পা সব কাঁপতে লাগালো। বুকের মাঝে একধরনের ব্যাথা অনুভব করছি। আমার’ই চোখের সামনে নিতি আহিয়ানকে কিস করছে! মনে হলো মাথায় যেন আকাশ ভেঙ্গে পড়ল। অতঃপর…
#চলবে….